#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০৭
নোয়া,স্নেহা,প্রিতী,অনু সবাই পাশের টেবিলে গেলে অনু নুহাশের কল রিসিভ করে। নওশীন এদিক ওদিক দেখে বলে ওঠে,” তুমি কোথায়?”
ওপাশ থেকে নুহাশ বলে ওঠে,” আমি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি কোথায়? আমাকে দেখতে পাচ্ছো?”
” তুমি এই স্টেশনের রেস্টুরেন্টে চলে এসো, আমি এখানে এসে বসেছি।”
” আচ্ছা, বোসো। ”
” তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু।”
” হ্যাঁ আসছি।”
নওশীন ফোন কেটে দিতেই দেখে বাহিরে নুহাশ দৌঁড়ে রেললাইন পার হচ্ছে। কালো শার্ট পরিহিত সুদর্শন যুবক। নওশীন ভাবতে থাকে সেই প্রথমদিনের কথা। নুহাশকে যেদিন প্রথম দেখেছিল সেদিন এই ছেলেটাকে সে কতবার যে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছিল! ছেলেটাও নেহাৎ কম দেখেনি। প্রথম দেখাতেই দুজনের নম্বর আদান-প্রদান হয়েছিল। নুহাশের চেয়ে নওশীনের আগ্রহ বেশি ছিল। আজ দিয়ে দ্বিতীয়বার নওশীন নুহাশকে দেখছে। তাকে সেই প্রথমবারের মতোই চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগছে।
নুহাশ রেস্টুরেন্টের দরজা ঠেলে ভেতরে এসে নওশীনকে খুঁজতে পুরো রেস্টুরেন্টে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। নির্দিষ্ট মানুষটার ওপর গিয়ে চোখ আটকে যায়। ধীরে ধীরে এগুতে থাকে সে। নুহাশ সামনে এসে দাঁড়ালে নওশীনও দাঁড়িয়ে যায়।
নওশীনের দাঁড়ানো দেখে নুহাশ মুচকি হেসে বলে ওঠে,” তুমি দাঁড়ালে কেন? বোসো।”
নওশীন নিজের চেয়ারে বসে নুহাশকেও বসতে বলে।
নুহাশ হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে থাকে। নুহাশের হাত দিয়ে চুল ঝাড়া দেওয়া দেখে নওশীন নিজের ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে নুহাশের দিকে এগিয়ে দেয়। নুহাশ হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখে নওশীন রুমাল এগিয়ে দিয়ে বসে আছে। নুহাস হাসিমুখে নওশীনের রুমালটা নিয়ে মাথা মুছতে থাকে।
নুহাশ চুল মুছছে আর নওশীন তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নুহাশ সেটা বুঝতে পেরে নিচের দিকেই তাকিয়ে বলে ওঠে,” এভাবে তাকিয়ে কী দেখছেন মিস নিশু?”
নওশীন লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। কিছুক্ষণ পরেই আবার মাথা উঁচু করে নুহাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,” আমার ব্যক্তিগত পুরুষকে আমি দেখব না?”
” আমি তোমার ব্যক্তিগত পুরুষ নই নিশু।”
নুহাশের এমন কথায় দমে যায় নওশীন। মনে মনে একটা প্রশ্নই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, আর সেটা হচ্ছে – নুহাশ তার ব্যক্তিগত পুরুষ না?
মনের কথা জবানে আসতে বেশি দেরি হলো না। ভ্রু কুচকে সন্দিগ্ধ নজরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,” তুমি আমার ব্যক্তিগত পুরুষ নও?”
নুহাশ আগেরবারের মতোই সোজাসাপটা ‘না’ জানিয়ে দেয়। নওশীন এবার আরও জোরালোভাবে জিজ্ঞেস করে,” তবে তুমি কার ব্যক্তিগত পুরুষ? তুমি অন্যকাউকে পছন্দ করো?”
নওশীনের কথায় নুহাশ এবার হেসে ফেলে।
দুই হাতের কনুই টেবিলে ভর দিয়ে বলে,” ব্যক্তিগত পুরুষ কাকে বলে জানো?”
” কাকে বলে?”
” যার ওপর অন্য নারীর অধিকার নেই। অন্য নারী চাইলেই সেই পুরুষকে ছি*নিয়ে নিতে পারবে না। ”
” আমি কি ছি*নিয়ে নিতে দেব নাকি?”
” আমার যদি এখন অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যায় তাহলে কি তুমি সেটা আটকাতে পারবে? সমাজ তোমার কথা শুনবে? তুমি কি আমার বিয়ে আটকাতে পারবে?”
” তুমি কি অন্যকাউকে বিয়ে করে নিবে? আমি যে তোমার জন্য, তোমার কথা ভেবে বিয়ে ভাঙি সেবেলায়?”
নওশীনের কথা শেষ হলে নওশীনের রুমালটা ফিরিয়ে দিয়ে বলে,” সঠিক না বুঝে, অবুঝের মতো কথা বললে তুমি। আমি বলেছি এখন যদি আমি অন্যকারো হয়ে যাই তুমি কিন্তু আটকাতে পারবে না। অথচ আমাদের যদি বিয়ে হয় তাহলে অন্যকোনো নারী আমাকে তোমার থেকে কে*ড়ে নিতে পারব না। তখন আমি তোমার ব্যক্তিগত পুরুষ হব। ব্যক্তিগত পুরুষ বা ব্যক্তিগত নারী হওয়ার একটাই ওয়ে আর সেটা হচ্ছে বিয়ে।”
” তাছাড়া ব্যক্তিগত হওয়া যায় না?”
” না, যখন তখন অন্যকারো হওয়ার সুযোগ থাকলে ব্যক্তিগত মানুষ হওয়া যায় না।”
” তাহলে কি বিয়ের কথা ভাবছেন?”
” জি ভাবছি, আপনি ভাবছেন না?”
” আপনি ভাবলে,আমার না ভেবে উপায় আছে?”
” ফাইনাল এক্সামটা হয়ে যাক। তারপর বিয়ের কথাবার্তা হবে। ”
নুহাশ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,” অনেকক্ষণ তো এসেছ। কিছু অর্ডার দাওনি?”
নওশীন ঘড়িতে সময় দেখে বলে,” খাবার কিছু অর্ডার দেওয়া হয়নি। তুমি দাও অর্ডার।”
নুহাশ নওশীনের কথামতো ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার দিয়ে দেয়। স্নেহাও ওয়েটারকে ডেকে নিজেদের জন্য খাবার অর্ডার দেয়।
নওশীন কথার মাঝেমাঝে শুধু ঘড়ি দেখছে। আধাঘন্টা আগে রেস্টুরেন্ট থেকে জানিয়েছে বিশ মিনিটের মধ্যে কেক চলে আসবে কিন্তু এখনো আসেনি দেখে সে চিন্তায় পড়ে গেছে। আদৌ কেক এসে পৌঁছবে তো সময়ের মধ্যে!
নওশীনকে বারবার ঘড়ি দেখতে আর বাহিরে তাকাতে দেখে নুহাশ বলে ওঠে,” কারো জন্য অপেক্ষা করছ?”
” না, মানে…”
” কী?”
” আসলে…”
অনু পাশে থেকে বলে ওঠে,” আসলে আপনার জন্য কেক আসতেছে, ও বলতে পারতেছে না।”
পিছন থেকে অনুর গলা শুনে নওশীন আর নুহাশ দুজনই সেদিকে তাকায়। পাশের টেবিলের সবাই খিলখিল করে হেসে ওঠে।
নুহাশ পিছন থেকে চোখ সরিয়ে নওশীনের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায়।
নওশীন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বলে,” ওরা আমার বোন।”
” আমি ভেবেছিলাম তুমি একা এসেছ৷ উনারা এসেছে, তাহলে আলাদা জায়গায় বসেছ কেন? এখানেই ডাকো।”
” ওখানেই থাকুক সমস্যা নেই।”
” বিষয়টা খারাপ দেখায় নিশু। আমরা বিবাহিত নই, আমাদের ব্যক্তিগত সময় লাগবে না।”
নুহাশ নিজেই এবার স্নেহা, প্রিতী, অনু, নোয়া সবাইকে ডাক দেয়। তারা কেউ একসাথে বসতে রাজি না হলে নুহাশ আর কিছু বলে না।
তখনই এক ওয়েটার নওশীনের কাছে এসে জানায় কেক চলে এসেছে। নওশীন কেকের ওপরের লেখাটা লিখে দিয়ে যেতে বললে লোকটা প্রস্থান ঘটায়।
নওশীন নুহাশকে উদ্দেশ্য করে বলে,” এখন থেকে কি প্রতিদিন আমাদের কথা হবে?”
নুহাশ ফোনটা রেখে বলে,” আমাদের প্রতিদিন কি আগে কখনো কথা হয়েছে?”
” আমাদের প্রতিদিন কেন কথা হয় না? মাসে দুইবার- তিনবার বা কখনো কখনো একবার। আমার সাথে তোমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না?”
” ইচ্ছে করে।”
” তাহলে কী সমস্যা?”
” আমি তোমাকে এই বিষয়টা বুঝাতে পারব না নিশু।”
” বোঝাতে হবে না শুধু কারণটা বলেন।”
” আমার এই রিলেশন আর ভালো লাগছে না। তোমাকে আমি ছাড়তেও পারব না। আমি শুধু একটা নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা করছি। আমি ভালো একটা জব পেলেই তোমাদের বাড়িতে আমার বাবাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব। এখনই যদি সব ভালোবাসা বেসে ফেলি বিয়ের পর কি করব? আমি চাই তোমার দিকে তাকানোতেও আমার সওয়াব হোক।”
নওশীন আর কিছু বলে না। বোনেদের সাথে সাথে নুহাশকে নিয়ে তার মনেও সংশয় বাসা বেধেছিল কিন্তু আজ সেটা ভেঙেচুড়ে গিয়েছে।
কেক কে*টে খাওয়া-দাওয়া করে বের হতে হতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। নুহাশ সবার সাথেই পরিচিত হয়ে নেয়। নুহাশের সম্পর্কে নোয়াসহ সবার ভুল ভেঙে যায়৷ নওশীনের সাথে তারাও নুহাশকে পছন্দ শুরু করে। চেহারা সুন্দর হলেই কেউ খারাপ হবে এমনটা সবসময় না-ও হতে পারে। ভালো-খারাপ এগুলো মনের ব্যাপার। মনের দিক দিয়ে যে ভালো তার চরিত্র ভালো, মনের দিক দিয়ে যে খারাপ তার চরিত্রও খারাপ।
বাস সাড়ে পাঁচটায় ছাড়বে। নোয়া, স্নেহা, প্রিতী,অনু বাসে উঠে বসেছে। নওশীন তখনও বাহিরে নুহাশের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। বাস ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে প্রায়।
নওশীন নুহাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,” তুমি আমার থাকবে তো?”
” কথা দিতে পারছি না। সবকিছু তো আল্লাহ ঠিক করে রেখেছে। তুমি আমার ভাগ্যে থাকলে অবশ্যই আমি তোমার থাকব নিশু।”
” আমার কেন জানি না ভয় হয় মাঝেমাঝে।”
” এটাই তো ভালোবাসা নিশু। হারানোর ভয় যদি না থাকে তাহলে সেটা ভালোবাসা হলো কীভাবে?”
” তুমি আমার হলে আমার আর কিচ্ছু লাগবে না।”
” অপেক্ষা করো আমার জন্য। ভালো কিছুই হবে ইন শা আল্লাহ। ”
” তোমার অপেক্ষায় আমি সবসময় থাকব, দেখে নিও।”
” তুমি শুধু এটা মাথায় রেখো যে নুহাশ তোমাকে ভালোবাসে। আর কাউকে তোমার আশেপাশেও আসতে দিও না নিশু। আমাকে শুধু একটু সময় দাও।”
” ভালো যেহেতু বাসি সেহেতু অপেক্ষাও করতে পারব। তুমি সবকিছুর ব্যবস্থা করো।”
নুহাশের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠবে এমন সময় বাসের ওপর পাশে মাইক্রোতে চোখ আটকে যায় নওশীনের। মাইক্রো ধীরগতিতে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে পরিচিত কাউকে দেখতে পায় সে। মনে মনে প্রশ্ন জেগে ওঠে- কে ওটা? আদনান স্যার!
#চলবে…..
ইদানীং গরমে আমার মাইগ্রেন খুব বেড়েছে। ফোনও ইউজ করতে পারছি না। আজ থেকে একদিন পরপর গল্প দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি আপনারা আগের মতোই অপেক্ষা করবেন।
যারা পড়ছেন তারা রেস্পন্স করবেন। বেশি বেশি কমেন্ট করবেন।