প্রেমস্পন্দন #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্বসংখ্যা_০৮

0
160

#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০৮

” আম্মা, ও আমাকে আর কখনো ভালোবাসতে পারবে না আম্মা। নওশীন অন্যকাউকে ভালোবাসে। আমি আজ আসার সময় দুজনকে একসাথে দেখেছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল তখন।”

আদনানের মা, ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। ছেলে যে একটা মেয়ের জন্য এমন ভেঙে পড়বে সেটা তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেননি।

আদনানের মা আবিদা বেগম ছেলেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,” শোন বাবা, তোর সাথে যার জুড়ি লেখা আছে সে যেখানে যেভাবেই থাকুক না কেন সময়মত ঠিক তোর কাছে চলে আসবে। নওশীনের সাথে তোর বিয়ে লেখা থাকলে সে অবশ্যই তোর কাছেই আসবে, সে-ই তোর বউ হবে৷ সে যদি তোর ভাগ্যে না থাকে তাহলে তুই ওর জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করলেও সে তোর হবে না।”
” আম্মা, আমি নওশীনকে ভালোবাসি।”
” ভালোবাসা থাকবে স্ত্রীর জন্য। কোন পরনারীর জন্য তোমার এরকম ব্যবহার আমি মোটেও পছন্দ করছি না আদনান। তুমি বড় হয়েছ, সবকিছু বুঝতে পারো, কোনটা তোমার জন্য ভালো আর কোনটা মন্দ বুঝার জ্ঞান তোমার হয়েছে।”
” কিন্তু আম্মা…”
” আবেগকে প্রশ্রয় দিও না আদনান। আল্লাহ যা ভাগ্যে রেখেছে সেটা হবেই। তুমি তোমার পছন্দ করা মেয়ের কথা না ভেবে আমি যার কথা বলেছিলাম তার কথা ভেবে দেখো। তুমি তো এখন বাসায় এসেছ, আগামীকাল শুক্রবার। তোমার অফিসও বন্ধ, আমরা কাল তোমার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।”

” আমি এখন অন্যকাউকে নিয়ে কোনকিছু ভাবতে প্রস্তুত নই আম্মা। সবকিছু এত সহজ নয়।”
” সহজ করে নিলেই সবকিছু সহজ। তুমি যদি তোমার আবেগ, অনুভূতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারো তবে তোমাকে এটার জন্য অনেক ভুগতে হবে। আমি চাই না আমার ছেলে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের মতো এমন ব্যবহার করুক। তোমার বয়সের ছেলেরা বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চার বাবা হয়ে গেছে। তুমি এতদিন অনেক সময় নিয়েছ, আমি আর তোমাকে সময় দিতে পারব না। আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে আদনান, আমারও তো ইচ্ছে করে ছেলের বউকে নিয়ে নাতি-নাতনীদের সাথে সময় কাটাতে। তুমি রীতিমতো আমাকে এসব থেকে বঞ্চিত করছো।”

” কোনকিছু নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে করতে বোলো না আম্মা। আমাকে আর কয়েকটা দিন সময় দাও।”

আদনান মাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মায়ের রুম থেকে চলে যায়। নিজের রুমে গিয়ে দ্রুম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।

নিজের বিছানায় গিয়ে দুইহাত দিয়ে কপাল আর চোখ ঢেকে বসে বসে প্রথমদিনের সেই নওশীনের কথা ভাবতে থাকে। আফসোস করতে থাকে, কেন নওশীনের সাথে দেখা হয়েছিল তার! কেন মেয়েটাকে এত ভালো লেগেছিল তার! কেন মনে হয়েছিল এই মেয়েটাকে না পেলে সবকিছু না পাওয়া, না পাওয়া লাগবে?

দরজায় নক করার শব্দ শুনে আদনান জানতে চায়,” কে?”

বাহিরে থাকা ব্যক্তি বলে ওঠে,” সাহেব, আপনার জন্য লেবুর শরবত আনছিলাম। দরজাটা খুলেন, আমি দিয়ে চলে যাই।”

আদনান বিরক্তভাব প্রকাশ না করে বলে,” শরবত এখন লাগবে না, পরে লাগলে জানাবো।”

ওপাশ থেকে আবারও বলে ওঠে,” আম্মা আপনাকে খাইয়া লইতে কইছে।”

আদনান রেগে বলে ওঠে,” বলেছি না যে খাব না? নিয়ে যাও। আর কেউ যেন এসে আমাকে বিরক্ত না করে, সবাইকে জানিয়ে দিও। ”
” আচ্ছা, সাহেব।” বলেই ব্যক্তিটি প্রস্থান ঘটায়।

আদনান পোশাক পরিবর্তন করে গোসলের জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে। নিজেই নিজের চেহারার পরিবর্তন বুঝতে পারছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে একদিনেই। শুধু একটা রাত সে ঘুমুতে পারেনি। এই মেয়েটা তার ঘুমটাও কেড়ে নিয়েছে ভেবে নিজের জন্য আফসোস হলো আদনানের।

আয়নাতে থাকা নিজের প্রতিচ্ছবিকেই জিজ্ঞেস করে ফেলল সে,” নওশীনের জন্য অপেক্ষা করা কি ঠিক হবে এতকিছুর পরও? সে কি আদৌ ফিরবে কখনো?”
______

নুহাশের সাথে দেখা করে আসার পর প্রিতী আর অনু নিজেদের বাসায় চলে গিয়েছে। তাদের বাড়ি ফেরার জন্য মন কেমন করছিল তাই বাড়ি ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছে। বাড়িতে এখন নওশীন, স্নেহা আর নোয়া রয়েছে। দুইরুম পরেই নানা-নানির শোবার ঘর।

খাওয়া দাওয়া করে নোয়া, স্নেহা আর নওশীন নিজেদের রুমে চলে আসে।

বিছানা গুছিয়ে যে যার বিছানায় শুয়ে পড়ে। পাশে থেকে নওশীন রুমের লাইট অফ করে দেয়।

বালিশের নিচে থেকে ফোনটা বের করে নুহাশকে কল দিতে থাকে। বাড়ি ফিরে নুহাশকে টেক্সট করেছিল সে। বিকেলে কথা হয়েছে দুই মিনিট।

নুহাশের ফোন এখন বন্ধ আছে। নুহাশের সাথে প্রতিদিন কথা না হলেও তার ফোন কখনো বন্ধ পায়নি নওশীন।

নওশীন বারবার কাউকে ফোন দিচ্ছে বুঝতে পেরে নোয়া বলে ওঠে,” কিছু হয়েছে নিশু?”

নওশীন নুহাশের ফোনে আবার কল দিতে দিতে বলে,” নুহাশকে কল দিচ্ছিলাম। বিকেলে একটু কথা হয়েছিল। তখন বলল, ব্যস্ত আছি রাতে কল দিও। এখন কল দিচ্ছি কিন্তু ফোন বন্ধ। ওর ফোন কখনো বন্ধ থাকে না। আজ হঠাৎ বন্ধ কেন সেটাই বুঝতে পারছি না আমি।”

স্নেহা বলে ওঠে,” ব্যবহার দেখে তো মনেই হলো নুহাশ তোকে ভালোবাসে। আমরা আগে ভুল ছিলাম। এখন ফোন বন্ধ রাখবে কেন? তোকে খারাপ লাগলে বা প্রেমিকা হিসেবে পছন্দ না হলে তখনই বলে দিতো।”

নোয়া কিছু একটা ভেবে বলে ওঠে,” ফোন বন্ধ না করে সিম খুলে রাখেনি তো? আমার কেমন যেন খটকা লাগছে। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে নুহাশ তোকেই ভালোবাসে৷ ”

নওশীন ফোনটা রেখে নীরবস্বরে বলে,” এতগুলো দিন পর আজকে মনটা ভালো হয়েছিল। ওর বিরুদ্ধে কিছু বলে আমার মনটা খারাপ করে দিও না প্লিজ।”

নোয়া আবারো বলে ওঠে,” তোদের মিউচুয়াল পরিচিত কেউ নেই? তার কোন বন্ধুর সাথে পরিচয় আছে?”
” হ্যাঁ, আছে তো। কবির ভাইয়া, যে আমাকে রেস্টুরেন্ট আর ওই স্টেশনটার ডিটেইলস দিয়েছিল। আমি তো কিছুই চিনতাম না, উনিই ছবি দিয়েছিল। উনাকে কি নক দিব? উনি নুহাশের কাছের বন্ধু।”

স্নেহা তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,” হ্যাঁ কল দিয়ে দেখ। নুহাশ কি ইচ্ছে করে ফোন বন্ধ করেছে নাকি কিছু হয়েছে সেটা জানতে পারবি।”
” আচ্ছা তাহলে কল দেই। দেখি কী বলে। আমার মনে হচ্ছে নুহাশের কোন বিপদ হয়েছে।”

নোয়া আশ্চর্যের সাথে প্রশ্ন করে,” বিপদ? এরকম কেন মনে হলো?”

নওশীন আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে বলে,” ওর ফোন কখনো বন্ধ থাকে না। আমার সাথে সম্পর্ক না রাখলে সেটা তো বলেই দিতো। এরকম ভনিতা তো করার প্রয়োজন নেই।”

নোয়া একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,” নুহাশ যদি কোন বিপদে পড়ে তাহলে দোয়া করি তার বিপদ যেন তাড়াতাড়ি কে*টে যায়। তোর কথাই যেন সত্যি হয়।”
” আমার ভালো লাগছে না, আপু। নুহাশ ঠিক আছে তো!”

স্নেহা নওশীনকে শান্ত করার চেষ্টায় বলে,” ফোন বন্ধ থাকা স্বাভাবিক। সে কোনদিন ফোন বন্ধ করেনি জন্য কি কোনদিন বন্ধ করতেও পারবে না নাকি? নিশু তুই বেশি বেশি অপেক্ষা করছিস। এখন ঘুমিয়ে পড়। কালকে কল দিয়ে দেখিস।”

স্নেহা, নোয়া আর কোন কথা না বলে নিজেরা নিজেদের মতো ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়৷ অনু আর প্রিতী না থাকায় রুমটা আজ খালি খালি লাগছে৷

নোয়া আর স্নেহার কোন কথা না বলায় নওশীন নিজেও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। ফোনটা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকে।

ভোর পাঁচটা-
সবাই প্রতিদিনের মতোই নামাজের জন্য উঠে নামাজ আদায় করে নেয়। প্রতিদিনের মতোই সবার হাটতে বের হওয়ার কথা। নওশীন নামাজ শেষ করে আবার শুয়ে পড়ে। স্নেহা বাহিরে হাটতে যাওয়ার জন্য ডাকতে এলে জানিয়ে দেয় তার শরীরটা ভালো লাগছে না তাই সে আজ বাহিরে যাবে না। নওশীনকে রেখেই সবাই সকাল সকাল হাটতে বেরিয়ে যায়। নওশীন শুয়ে শুয়ে নুহাশের কথা ভাবছিল।

এত সকালে ফোন দেওয়া উচিৎ হবে কি না সেটা ভাবতে থাকে। কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছবে, ফোন দিলে কী হবে সেসব না ভেবে ফোনটা হাতে নিয়ে পুনরায় কল দেয় সে।

ফোনে রিং হতেই নওশীনের মুখে হাসি ফুঁটে যায়। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। ফোন অন হয়েছে মানে নুহাশ ঠিক আছে এটা ভেবেই শান্তি পায় নওশীন।
দুইবার রিং হলেও ওপাশ থেকে নুহাশ কল রিসিভ করে না। নওশীন ভাবে নুহাশ হয়তো ঘুমুচ্ছে তাই কল রিসিভ করছে না। এখন ঘুম থেকে উঠলে নামাজটা পড়তে পারবে ভেবে আবার কল দিতেই শুনতে পায়- আপনার কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না…..

#চলবে……

গল্পটা রেগুলার দিতে পারছি না জন্য অনেকেই হয়তো পড়া বাদ দিয়েছেন অথবা অনেকের সামনে গল্পটা যাচ্ছে না। যারা পড়ছেন তাদের বলব আপনার একটু বেশি বেশি কমেন্ট করবেন যেন পাঠকদের সামনে গল্প যায়।

#প্রিয়তার_প্রণয় কে কে পড়েছেন? ভাবছি ওটা আগামীকাল থেকে রিপোস্ট দিব। গল্পটা এখনকার অনেকেই পড়েননি৷ #প্রেমস্পন্দন যেহেতু প্রতিদিন দিতে পারছি না তাই ওটা দিলে আপনাদের হয়তো একটু ভালো লাগবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here