#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১০
” বাসায় ফিরে কথা বলব। ডেট করতে এসেছি, ডেটে এসে বাহিরের কারও সাথে কথা বলা অন্যা*য়।”
বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে ইহান চেয়ারে বসা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে যায়। তড়িৎগতিতে একটাই শব্দ মুখে থেকে বেরিয়ে আসে আর সেটা হচ্ছে ‘ ডেট!’
রায়া বেশ সিরিয়াসভাবে বলে, ” হ্যাঁ, ডেটে এসেছি। আপনি বাসায় ফিরলে কথা বলব।”
” কার সাথে বাহিরে গিয়েছিস? এত হেয়ালি কেন করছিস”
ইহানের কথায় সবাই শব্দ করে হেসে ফেলে। আশেপাশে মেয়েলি হাসির শব্দ পেয়ে ইহান বলে,” এশাকে নিয়ে বের হয়েছিস?”
” শুধু এশা না। বড়মা আর আম্মুও আছে।”
” তো সেটা বললেই হয়। শুধু শুধু….”
” কী ভেবেছিলেন আবার অন্য ছেলে যোগাড় করব?”
” তোর ওপর ভরসা আছে আমার। তুই শুধুই আমার।”
” আর আপনি?”
” আমি সব মেয়ের।”
রায়া এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে, ” বাড়ি আসেন আগে।” রায়া কল কেটে সবার সাথে আড্ডায় মন দেয়। ইহান সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর দুপুরে আর খেতেও বাড়ি ফিরছে না দেখে রায়া ইহানকে কল করেছিল। ইহান তখন জানিয়ে দেয় সে কাজে ব্যস্ত আছে। ঢাকা যখন একমাসের জন্য ছিল তখন সে বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে নতুন একটা বিজনেস শুরু করেছে। সেটার পিছনেই এখন সময় দিতে হচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই এখন সেই কাজের পিছনে দিতে হয়। ইহানের সাথে বের হওয়ার কথা ভাবলেও ইহানের ব্যস্ততার জন্য সে কিছু বলতে পারে নি। বিকেল হলেই মা, শাশুড়ি আর ননদকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। চারজন মিলে খাওয়া দাওয়া করে ঘুরোঘুরি করতে থাকে। চারজন মিলে এখানে ওখানে ঘুরতে ঘুরতে কারো খেয়াল নেই যে রাত দশটা বেজে গিয়েছে। ইরিনা বেগমের ফোনে কল আসলে তিনি ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখেন ঘড়িতে দশটা দশ বেজে গিয়েছে। ইহানের কল দেখে তিনি তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করেন।
” হ্যাঁ রে বাবা, বল।”
” তোমাদের ডেটিং শেষ হয়নি? বাসায় আসবে কখন? আমার ক্ষিধে পেয়েছে।”
” সময় খেয়াল ছিল না রে। এখনই ফিরছি। ফ্রিজে খাবার আছে গরম করে খেয়ে নে। ”
” আমার মাথা ধরেছে প্রচন্ড। আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম তাহলে।”
” আমরা খুব জলদি চলে আসছি।”
ইরিনা বেগম ফোন কেটে সবাইকে বাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকে। সবাই বাহিরে আর দেরি না করে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়।
____
বুধবার-
বিকেলবেলা এশা আর ইরিনা বেগম বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবেন৷ রায়া ব্যাগে সব জামাকাপড় ঠিকঠাক করে দিচ্ছে দুজনকে। রায়ার বাবা-মা, এশা এবং ইরিনা বেগম একসাথেই যাবেন সেখানে। ইরিনা বেগম নিজেদের ব্যাগ নিয়ে বাহিরে রাখতে যান।
রায়া এশার কাছে এসে বলে,” আজকের দিনটা ওখানে একটু ম্যানেজ করে নিস। আমি আর তোর ভাইয়া কাল সকালেই চলে আসব। ”
এশা মুখ গম্ভীর করে বলে, ” কাল তাড়াতাড়ি না আসলে কিন্তু আমি তোমার সাথে কথা বলব না।”
” আমি কি ইচ্ছে করে এখানে থাকছি বল? আমারও তোদের সাথে যেতে ইচ্ছে করছে। তোরা বিয়ে বাড়িতে আনন্দ করবি আর আমি এখানে একা একা রাত দশটা পর্যন্ত সময় গুণতে হবে।”
” আচ্ছা আমি তোমায় সঙ্গ দেব।”
” ওখানে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবি আমি শিওর।”
” ভুলে যাব না। মাহমুদ ভাইয়াকে দেখব, বুকে চিনচিন ব্যথা করবে আর তোমাকে মনে করব।”
” আসলেই তোর বুকে চিনচিন ব্যথা করবে এশা?”
” তো করবে না? পছন্দের মানুষের বিয়েতে বুকে ব্যথা করবে না?”
” তোর অন্য ক্রাশগুলোর বিয়েতেও কি বুকে ব্যথা করবে?”
” করতেও পারে।” বলেই উচ্চশব্দে হেসে ফেলে এশা। ইরিনা বেগম এশাকে ডাকতেই এশা বলে, ” থাকো তাহলে। দরজা ভেতর থেকে ভালো করে আটকে দাও। ছাদে হয়তো আম্মির একটা শাড়ি আছে রোদে দেওয়া। মেঘ করেছে, বৃষ্টি নামবে হয়তো। তুমি বরং ওটা এনেই দরজা আটকে দাও।”
” আচ্ছা, তুই যা। শোন, সাবধানে থাকিস কিন্তু।”
” তুমিও সাবধানে থেকো আর সকাল সকাল চলে এসো।”
” ঠিক আছে।”
রায়া সবাইকে বিদায় দিতে গিয়ে গেইট থেকে বের হতেই দেখে তার বাবাকে দেখেই নিজকে পিছিয়ে নেয় রায়া। বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেইটটা বন্ধ করে ভেতরে চলে আসে। সোজা ছাদে গিয়ে যে জামাকাপড়গুলো ছিল সব নিয়ে আসে। আকাশটায় কেমন অন্যরকম আলো। আকাশ মেঘলা হলেও আলোর তীব্রতা প্রচন্ড।
রায়া রুমে এসে দেখে বিছানায় রাখা তার ফোন বাজছে। সে তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোন হাতে নিতেই দেখে ইহান কল করেছে। রায়া তাড়াতাড়ি করে কল রিসিভ করে।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইহান বলে ওঠে, ” কল দিয়েছিলি?”
” হ্যাঁ, আপনার ফিরতে ক’টা বাজবে?”
” আম্মি, এশা সবাই চলে গেছে বিয়ে বাড়িতে?”
” হ্যাঁ সবাই গেল কিছুক্ষণ আগে। ”
” একা খারাপ লাগছে?”
” আমি তো একাই থাকি সবসময়। ”
” আমি তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করছি। কল দিয়েছিলি কেন? কখন আসব এটা জানতে?”
” না। একটা প্রয়োজনে কল করেছিলাম। তবে কত দেরি হবে সেটা বলে দিলেই হবে। আপনার আসতে বেশি দেরি হলে আমিই বাহিরে চলে যাব।”
” কেন? কোন প্রয়োজন? ”
” আসলে…”
” আসলে কী?”
” আসলে আজ… ”
রায়া কিছুতেই নিজের কথাটা ইহানকে বলার সাহস পাচ্ছে না। দুপুর পর থেকেই মাথাটা কেমন ব্যথা করছে। এখন বুঝতে পারছে মাথা ব্যথার ওষুধ আনতে তার নিজেরই যাওয়া উচিৎ ছিল।
রায়াকে চুপ থাকতে দেখে ইহান বলে ওঠে, ” কিছু লাগবে? ”
” না।”
” ন্যাপকিন লাগবে?”
ইহানের প্রশ্নে বেশ লজ্জা পেয়ে যায় রায়া। ইহান কেন ওটার কথা বলল সেটা বুঝতে চেষ্টা করে। রায়া আমতা আমতা করে বলে, ” আসলে ওটাও লাগতো তবে আজই লাগবে এমন কোন ব্যাপার না। আসলে দুপুরের পর থেকে মাথাটা ব্যথা করছে আর কেমন খারাপও লাগছে।”
” আচ্ছা। ”
ইহানের আর কোন কথা শুনতে না পেয়ে ফোন কানে থেকে সরিয়ে সামনে আনতেই দেখে ইহান কল কেটে দিয়েছে। রায়া আবার কল করলেও ইহান কল রিসিভ করে না। পরপর তিনবার কল করে রায়া কিন্তু ইহান কিছুতেই কল রিসিভ করেনি।
রায়া কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নিজেই রেডি হচ্ছিল বাহিরে যাবে বলে ঠিক তখনই কলিংবেল বেজে ওঠে। এসময়ে বাসায় কারো আসার কথা না। রায়া ফোনটা হাতে নিয়েই দরজা খুলতে চলে যায়। দরজায় অন্যকেউ হলে যেন সাথে সাথে কাউকে কল করতে পারে সেই ভেবে ফোনটা নেয় সে। দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” বাহিরে কে?”
দরজার ওপাশ থেকে ইহান ক্ষীণস্বরে বলে ওঠে,” আমি, ইহান।”
” আচ্ছা দাঁড়ান খুলছি।”
রায়া দরজা খুলে দিলেই দেখে ইহান তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সাথে বাহির থেকে তার পছন্দের খাবারও নিয়ে এসেছে৷ ইহানের দুই হাত ভর্তি এতকিছু দেখে রায়া সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে৷ এদিকে ইহান বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই।
” সর, ভেতরে ঢুকতে দিবি না? ভিজে গেছি আমি।”
রায়া দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। ইহান জিনিসগুলো নিয়েই ভেতরে প্রবেশ করে রুমের দিকে যেতে থাকে।
রায়া দরজা বন্ধ করে রুমে গিয়েই দেখে ইহান শার্ট চেঞ্জ করছে।
ইহান শার্ট পরতে পরতেই বলে, ” প্যাকেটে ওষুধ আছে খেয়ে নে তাড়াতাড়ি মাথাব্যথা কমে যাবে। সন্ধ্যা তো হয়েই গেল আমি বাড়ির লাইটগুলো অন করে আসছি।”
রায়া প্যাকেট থেকে ওষুধ বের করে গ্লাসে পানি নিয়ে খেয়ে নেয়। ইহান রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই রায়া বারান্দায় চলে যায়। বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাতটা বের করে দেয়। নিজে না ভিজতে পারলেও তার হাতখানা বৃষ্টির পানিতে ভিজে একাকার অবস্থা। রায়া এবার দুইটা হাত-ই বাহিরে বের করে দেয়। বৃষ্টির পানি নিজের দিকেই ছিটিয়ে দিতে থাকে সে।
” বৃষ্টিতে ভিজবি?”
পিছন থেকে আচমকা ইহানের এমন প্রশ্নে গ্রিলের বাহিরে থাকা হাত ভেতরে নিয়ে এসে শাড়ির আঁচলে মুছে নেয়।
ইহানের দিকে ফিরে বলে, ” এমনি একটু হাত ভেজাচ্ছিলাম।”
” তুই চাইলে নিজেকেও ভেজাতে পারিস।”
” সত্যিই!”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে চলেন ছাদে যাই। বৃষ্টিতে ভিজি, খুব মজা হবে।”
” এখন না, বিশ মিনিট অপেক্ষা কর। মাথাব্যথা কমুক আর একটু অন্ধকারও হোক। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”
” কিছু খাবি?”
” উমমম, আপনি বসুন আমি নুডলস রান্না করে আনি।”
” আচ্ছা। ”
রায়া বারান্দা থেকে যেতে লাগলে ইহান রায়াকে পিছন থেকে ডাক দেয়। রায়া আর না এগিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়।
ইহান বলে ওঠে, ” তোকে ভালোবাসি রায়া।”
রায়া ইহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” সময় সময় আপনার ভালোবাসায় আমার ভয় হয়। এত ভালোবাসা আমার সইবে তো!”
#চলবে………
কিছু কথা- গল্প কি আপনাদের খারাপ লাগছে? কারো তেমন কমেন্ট পাই না আর তাছাড়া রিচ অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন আমি গল্প দিচ্ছি কষ্ট করে তবুও আপনার গল্প পড়ে কয়েকটা কমেন্ট করছেন না। আপনারা গল্প পড়ে লাইক দেওয়ার সাথে কমেন্ট ও করবেন যেন গল্প সবার সামনে যায়। আপনারা এক্টিভ না থাকলে আমি একদিন বা দুইদিন পরপর গল্প দেব, প্রতিদিন আর দেব না। রিচ ফিরে আসলে প্রতিদিনই দেব ইন শা আল্লাহ।