আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্ব_০২

0
442

(১৮+ এলার্ট, প্রাপ্তবয়স্ক মনস্কদের জন্য)
#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০২

বউভাতের অনুষ্ঠানে মানুষ আসা শুরু করেছে কিন্তু নতুন বউ এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। সকালে ইহান উঠে চলে যাওয়ার পরপরই দরজা লক করে আবার শুয়ে পড়েছে রায়া। রাতের শারীরিক অত্যা**চারের রেশ এখনো কাটেনি৷ এসবের প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত যেন তার শান্তি নেই। সকাল দশটা থেকে ইহানের মা ইরিনা বেগম এবং বোন এশা ডেকেই যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর কিন্তু রায়া কিছুতেই দরজা খুলছে না। বারোটার দিকে আর কোন উপায় না পেয়ে ইরিনা বেগম ছেলেকে কল দেন। ইহান সকাল থেকে কাজে ব্যস্ত। নিজের বিয়ের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাধেই এসে পড়েছে। মায়ের ফোন পেয়ে একটু ফাঁকা জায়গায় বেরিয়ে আসে ইহান।

” হ্যাঁ আম্মি বলো।”

” রায়া এখনো দরজা খোলেনি। পার্লার থেকে মেয়েরা এসে এগারোটা থেকে অপেক্ষা করছে। মানুষ আসা শুরু করেছে, বাড়ির এই অবস্থা দেখলে মান-সম্মানের বাকিটুকুও আর থাকবে না ইহান।”

” আমি আসছি আম্মি।”

ফোন কেটেই ইহান বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে৷ অনুষ্ঠান হলেও বাড়ির ভেতরে কোন হৈচৈ হট্টগোল নেই। সবাই বাহিরের দিকটাতেই আছে। ইহান বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই এশার সাথে দেখা হয়ে যায়। ইহানকেই ডাকতে যাচ্ছিল সে। ভাইকে দেখে আর এগোয় না। ইহান হাটতে হাটতেই বলে, ” রায়া দরজা খোলেনি এখনও?”

” না। ভেতরে গান চলছে হয়তো আমাদের কারো কথা, ডাক ভেতরে পৌঁছাচ্ছে না। ”

” আচ্ছা তুই মাকে বল রায়া এখনই দরজা খুলবে,আধাঘণ্টার মধ্যেই যেন রুমে পার্লারের মেয়েদের পাঠিয়ে দেয়।”

এশা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। ইহান নিজের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখে দরজা তখনো ভেতর থেকে আটকানো। পকেট থেকে চাবিটা বের করে দরজা আনলক করে ভেতরে প্রবেশ করে সাথে সাথে আবার দরজা বন্ধ করে দেয় ইহান। রায়া খাটে হেলান দিয়ে বসেছিল। ইহানকে দেখে রীতিমতো থতমত খেয়ে যায় সে। রায়ার মুখের অবস্থা দেখে ইহান বাঁকাহেসে বলে, ” কী ভেবেছিলি সারাটাদিন সবাই বাহিরে থেকে তোকে ডাকবে আর তুই এভাবেই বসে মজা দেখবি বড়কথা আমার সম্মান নষ্ট করবি? এটা আমি কী করে হতে দিই বল তো জান? ইহান শেখ-এর মান-সম্মান তোর হাইটের ডাবল উঁচুতে আছে লাফিয়ে লাফিয়েও ছুঁতে পারবি না। এখন জিদ না করে যা ফ্রেশ হয়ে আয়, বউ সাজতে হবে তো আবার।”

” আমি ফ্রেশ ও হব না, সাজবও না, এখান থেকে উঠবই না।”

” শরীরে এনার্জি নেই? আদর লাগবে? আগে বলবি না? ” বলেই ইহান খাটের দিকে এগিয়ে যায়।
রায়া এবার নড়েচড়ে বসে। খাটের অন্যপাশে চলে যায় সে। রায়া উচ্চস্বরে বলে ওঠে, ” একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। একদম ছোঁবেন না আমাকে।”

ইহান রায়ার পা ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে চুলের খোপা খুলে কপাল থেকে গলা পর্যন্ত আঙ্গুল বয়ে নিয়ে আসতেই রায়া ইহানের হাত খপ করে ধরে ফেলে। ইহানের দিকে কড়া মেজাজে তাকিয়ে বলে, ” বলেছি না আমাকে স্পর্শ করবেন না? অনিষ্ট করে ফেলব কিন্তু, ধ্বং*স করে দেব সবকিছু।”

ইহান হাসতে হাসতে বলে, ” আমি তো ধ্ব*ংশ হতেই বিয়ে করেছি তোকে। ইহান শেখ-এর বউ প্রলয়ঙ্কারী না হলে কি চলে? এখন বলুন ম্যাম এমনি এমনি ফ্রেশ হতে যাবেন নাকি এনার্জি লাগবে? হাফডোজে চলবে নাকি ফুউউল লাগবে?”

” আমি কিছুতেই রেডি হব না। ”

ইহান রায়ার কোমর জড়িয়ে ধরতেই রায়া চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। ইহান রায়ার পেটে হাত বুলিয়ে গলায় মুখ গুজে দিতেই রায়া কেঁপে ওঠে। ধাক্কা দিয়ে ইহানকে সরিয়ে দেয় সে। অসহায় চোখে ইহানের দিকে তাকায় রায়া।

” কেন করছেন এমন? আমি সত্যিই শাওনকে ভালোবাসি। ওর জায়গায় আমি কাউকে ভাবতে পারব না। রাজনৈতিক রেশারেশির কারণে আমি কেন আমার ভালোবাসাকে বলি দেব? ও কালকে আমাকে নিতে আসতো, ও আমাকে অনেক ভা…”

রায়াকে কথা শেষ করতে দেয় না ইহান। রায়ার ঠোঁটে তার রাজত্ব চলছে। রায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে এদিকে ইহান আরও শক্ত করে রায়ার হাত চেপে ধরেছে। রায়ার ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট ছোয়াতে ছোয়াতে রায়ার গলায় নেমে যায় ইহান। রায়াও তার শক্তি হারাতে চলেছে। রায়ার কোমর ধরে টেনে নিজের আরও কাছে নিয়ে আসে ইহান। ইহানের এলোমেলো আচরণে ভয় পেয়ে যায় রায়া। হঠাৎ বলে ওঠে, ” আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি, ছা-ড়ু- ন প্লি-জ।”
ইহান গলা ছেড়ে আবার ঠোঁটে হা*না দেয়। রায়া শুধু চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কিছুক্ষণ পর ইহান নিজেই রায়াকে ছেড়ে দেয়। বাহুতে ঠোঁট মুছে বলে, ” ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্যকারোর জন্য ভালোবাসার কথা শোনা যায় না। যতবার তুই ওই ছেলের কথা বলবি ততবার আমি এভাবেই তোর মুখ বন্ধ করে দেব। ”

” ছয়মাস ধরে রিলেশনে গেছি আমি। এর আগে কোথায় ছিলেন আপনি? যখন আমি কারো সাথে নিজেকে ভালো রাখতে শিখেছি তখন আপনি আপনার ভালোবাসার কথা বলছেন? যাকে ভালোবাসি তাকে ছেড়ে এখন সোজা অন্যকাউকে বিয়ে করতে হয়েছে আমাকে। পৃথিবীর সব জোর জবরদস্তি শুধু আমার ওপর।”

” ক্লাস নাইনে পড়তি তুই, তখন থেকে তোর প্রতি আমার দূর্বলতা। আমি নিশ্চয়ই তখন তোর মন নিয়ে খেলতাম না? তোর বয়স কম ছিল সেসময়ে যাকে তাকে ভালো লাগে। তোর কি মনে হয় পাশাপাশি বাড়িতে থেকে প্রেম করলে শরীর মানতো? সামলাতে পারতি আমাকে? সবকিছু তছনছ হয়ে যেত রায়া। সম্মান হারাতি, আবেগ, মায়া, ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস সব চলে যেত। আমাকেও ভালোবাসতে পারতি না তুই। কত কষ্টে নিজেকে তোর থেকে আর ভালোবাসার অনিষ্ট থেকে দূরে রেখেছি সেটা শুধু আমি জানি। যখন সময় হলো কাছে পাওয়ার, অপেক্ষা করলাম ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ না করে কয়েক বছর আর সে কি না অন্যকাউকে ভালোবাসে? ”

রায়া কান্না জড়ানো গলায় বলে, ” খুব বেশি সময় নিয়ে ফেলেছেন আপনি। আমি আপনার কাছে নিজের ইচ্ছেতে কখনো ফিরতে পারব না। আমি শাওনকে ভালোবাসি, শাওনকেই ভালোবাসব। চাইছেন তো বউ সাজি? আপনার সম্মান আজ আমি রাখছি, কে সাজাবে পাঠিয়ে দেন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

চেয়ারের ওপর রাখা তোয়ালে নিয়ে ইহানের সামনে থেকে চলে যায় রায়া। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে তিনজন মেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। রায়া মুচকি হেসে তাদের কাছে গিয়ে বসে।

দুইটার দিকে রায়াকে আসনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানেই দাঁড়িয়ে বন্ধুবান্ধব, পরিচিতদের সাথে কথা বলছে ইহান। রায়া চারদিকে খেয়াল করে দেখে নিজের জায়গায় বসে পড়ে। সবাই এসে ইহানের পাশাপাশি রায়ার সাথেও দেখা করে কথা বলছে।

ইহান পিছনের দিকে তাকাতেই রায়াকে দেখতে পায়। এতগুলো মানুষের মাঝেই মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে সে। একজনের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল সে তার সাথে কথা শেষ না করেই রায়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

” আমার হৃদয়হ*রণকারী তুই।”

পাশে থেকে হঠাৎ কথা বলায় বুঝতে পারে না রায়া। ইহানের দিকে বাঁকা হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” কিছু বললেন?”

” প্রলয়ঙ্কারী তুই, আমার হৃদয়ে প্রলয় ঘটিয়েছিস। হৃদয় হর*ণ করেছিস।”

” আপনার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক না। এসব অন্যকাউকে বলুন কাজে দিবে।”

” তোর সাথেই আমার প্রেমের সম্পর্ক, ভালোবাসার সম্পর্ক, সব ধরণের সম্পর্ক। ”

” খুব তাড়াতাড়ি আমি শাও….”

রায়াকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ” এখন এত মানুষের মাঝে লিপকিস নিতে পারবি? আমার কিন্তু কোন সমস্যা নেই বেইব।”

দমে যায় রায়া। আর কিছু বলার সাহস করে না। এই লোকের ওপর বিশ্বাস নেই তার। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে যা-তা করে ফেলতে পারে৷ রায়া ঘুরে অন্যদিকে তাকায়।

সবার সাথে দেখা সাক্ষাত করে অনুষ্ঠান শেষ করে নিজের রুমে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা। রায়া রুমে আসার সাথে সাথে এশা এসে দরজায় নক করে। রায়া শাড়ি খুলতে গিয়ে আবার দরজার কাছে এসে এশাকে জিজ্ঞেস করে, ” কী হয়েছে?”

” তুমি তো কিছু খাও নি তাই কাকি খাবার পাঠিয়েছে তোমার জন্য। নিয়ে আসব?”

” তোর কাকিকে বলে দে খাবারের সাথে কয়েক ফোঁটা বি*ষ যেন দিয়ে দেয়।”

” কী বলছ এসব? তুমি মাথা ঠান্ডা করো আপু দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি তো জানই ভাইয়া একটু রাগী কিন্তু খুব ভালো মানুষ। ”

” রুমে আসবি? আমি চেঞ্জ করব, ফ্রেশ হব। এত মেকাপ দিয়েছে! মুখ ভুলকাচ্ছে।”

” না, তুমি তাহলে চেঞ্জ করো। ”

” ঠিক আছে যা। কেউ ডাকলে বলবি আমি ব্যস্ত আছি।”

এশা সেখান থেকে চলে যেতেই রায়া দরজা আটকাবে এমন সময় ইহান এসে যায়। দরজা থেকেই রায়ার হাত শক্ত করে ধরে ভেতরে নিয়ে যায় ইহান। হাত শক্ত করে ধরায় রায়া ব্যথায় চিৎকার দিয়ে ওঠে। রুমের মাঝে এসে হাত ছেড়ে দেয় ইহান। রায়া ইহানের দিকে একপলক তাকাতেই খেয়াল করে ইহানের চোখ মুখ শক্ত করে আছে৷ নিশ্চয়ই কোন বিষয় নিয়ে রেগে আছে। রায়া মুচকি হাসে, করেছে তো অনেককিছুই কিন্তু কোনটার জন্য রেগে আছে কে জানে!
ইহান তাড়া পায়ে হেটে দরজাটা দ্রুম করে আটকে দেয়। ইহান এবার রায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ” আমি পুরুষ মানুষ নই? কাউকে কিছু বললে ভেবে বলতে পারিস না? পুরুষ হতে হলে দম থাকতে হয়, ওটা আমার অনেক বেশিই আছে। আরও প্রমাণ চাই নাকি বিশ্বাস করতে?”

#চলবে……..

যারা পড়ছেন তারা পেইজে ফলো দিয়ে ফেবারিট করে রাখবেন যেন পরবর্তী পর্ব প্রথমেই পেয়ে যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here