আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্ব_০৩

0
378

#আমি_দূর_হতে_তোমারে_দেখেছি
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_০৩(১৮+ এলার্ট, প্রাপ্তবয়স্ক মনস্কদের জন্য)

ইহান তাড়া পায়ে হেটে দরজাটা দ্রুম করে আটকে দেয়। ইহান এবার রায়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ” আমি পুরুষ মানুষ নই? কাউকে কিছু বললে ভেবে বলতে পারিস না? পুরুষ হতে হলে দম থাকতে হয়, ওটা আমার অনেক বেশিই আছে। আরও প্রমাণ চাই নাকি বিশ্বাস করতে?”

রায়া ইহানের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
” আপনি এগুলো আমাকে কেন বলছেন?”
” তুই-ই তো মানুষের কাছে বলে বেড়াচ্ছিস, তোকে বলব না তো কাকে বলব?”
” আমি মোটেও এরকম কিছু কাউকে বলি নি।”
” কি বলেছিস তাহলে?”
” কিছুই বলি নি আমি।”
” আমার ধৈর্য্যের পরিক্ষা নিস না রায়া। এত পরিক্ষা দিতে আমি অভ্যস্ত না।”

কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে ওঠে,” গতরাতের জন্য দুঃখিত, এরপর তোর ইচ্ছে বা অনুমতি ছাড়া আমি তোকে ছোঁব না। নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস এখন থেকে।”

ইহান কথাটা বলেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। ইহানের এমন ভোলবদলে বেশ অবাক হয় রায়া।ইহানের চলে যাওয়ার দিকে নিমিষ চেয়ে থাকে। খারাপ মানুষের ভালো রূপ মোটেও হজম হচ্ছে না তার। ইরিনা বেগম রুমে প্রবেশ করে দেখে রায়া দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ তিনি রায়ার সম্মুখে এসেই জিজ্ঞেস করেন,

” ইহান ওভাবে বেরিয়ে কেন গেল? কোন কাজ পড়ে গেছে?”
” জানি না, কিছু বলেনি।”
” আচ্ছা। ওখানে তো মনে হয় কিছু খাস নি।”
” আমার তো আহার-নিদ্রা সব গেছে বড়মা।”

ইরিনা বেগম নিম্নস্বরে বলেন, ” ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছিল। এখন অতীত ভুলে যা, ইহানের সাথে যত তাড়াতাড়ি সব ঠিকঠাক করে নিবি ততই তোর জন্য ভালো হবে। আমার ছেলেকে তো চিনিস ভীষণ জেদি আর একরোখা টাইপের। সবকিছু জলদি ঠিক করে নে৷ আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি খেয়ে শুয়ে পড়বি। ”

ইরিনা বেগম চলে যাওয়ার পরপরই রায়া দরজা আটকে চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নেয়। হঠাৎ বাড়ির কথা মনে হতেই বুকের মধ্যে কিছু একটা খঁচ করে বিধে। অনুষ্ঠানে সবাই সবার সাথে কথা বললেও তার বাড়ির কেউ তার সাথে কথা বলে নি এমনকি তার মা-ও না। মাকে সে একবার চোখের দেখাটাও দেখতে পারে নি। ওদিকে শাওনের কী অবস্থা সেটা ভেবে মন খারাপ হচ্ছে রায়ার। শাওন কি তার কলের অপেক্ষা করছে? বিয়ের কথা তো সমস্ত গ্রাম জেনে গেছে। চেয়ারম্যান শামসুজ্জামানের মেয়ের বিয়ে বলে কথা তাও আবার ইহান শেখ-এর সাথে। শাওন তাকে ভুল বুঝবে কি না সেটা নিয়ে ভাবছে রায়া। রুমের মধ্যেই পায়চারি করতে থাকে সে। ভীষণ অস্থির লাগছে তার।
দরজায় নক করার শব্দ হতেই রায়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইহান খাবার নিয়ে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রায়ার দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে, ” অনেক রাত হয়ে গেছে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। আমি পাশের রুমে আছি, রাতে কোন প্রয়োজন হলে ডাক দিলেই হবে।”

রায়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ” এত চেঞ্জ! হঠাৎ এত ভালো মানুষি কেন? আপনি তো ভালো মানুষ নন।”
” ঘরের কথা বাহিরে গেলে সেটা দৃষ্টিকটু দেখায় আর সেটা যখন অন্য মানুষের মাধ্যে ঘুরেফিরে আবার ঘরের মানুষের কাছেই আসে তখন সেটা আরও বাজে দেখায়। আপাতত চাইছি না আমাদের আর কোন ঘটনা ঘটুক৷ তুই যা চাইবি তাই হবে। আমি তোর আশেপাশে আর থাকছি না। আমি যেটা বলি সেটাই করি।”

রায়ার মনে পড়ে অনুষ্ঠানে মাকে না দেখে এশার ফোন দিয়ে মাকে কল করেছিল। তার মা তার সাথে কথা বলতে চায় নি। তখন সে কান্না করে মাকে জানিয়েছিল ইহানের কথা। রায়া ভাবে ইহানকে কি তবে কেউ কিছু বলেছে? সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
” আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যবস্থা করুন আমি শা….”

ইহান খাবারের প্লেটটা পাশের ছোট টেবিলটায় রেখেই রায়ার ঠোঁট দখল করে নেয়। রায়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলে। বারন্দা দিয়ে নিমনিম বাতাস আসছে। চুলগুলো যেন রায়ার মুখে এসে আছড়ে পড়ছে। রায়াকে চোখ বন্ধ করতে দেখে ইহান আরও ক্লোজ হতে শুরু করে রায়ার। রায়া অবস্থা বেগতিক দেখে ইহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। ঘটে যাওয়া ঘটনায় ভীষণরকম অপ্রস্তত সে। ইহান এতকিছু বলার পরও যে এটা করে বসবে সেটা ধারণা করতে পারে নি সে।

রায়াকে চুপ থাকতে দেখে ইহান মুচকি হেসে বলে, ” তুই চাইলে আমরা আরও গভীর হতে পারতাম। ভেবেছিলাম তুইও আমাকে চাইছিস জন্যই বারবার ওই গর্দভটার নাম মুখে আনছিস। ওর নাম উচ্চারণ না করে আমাকে আমার কথা রাখতে সহায়তা তুই করতেই পারিস রায়া। ”
“ভালোবাসি ‘ও’কে।”
” ভালোবাসি তোকে খুব,খুউব। আমার ভালোবাসার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ,ব্যাস-ব্যাসার্ধ তুই কোনদিন পরিমাপ করতে পারবি না। গভীরতা কল্পনাও করতে পারবি না। ”
” যেটা করবই না সেটার প্রতি কোনদিন ইচ্ছেপোষণ করা বিলাসিতা।”
” ভালোবাসবি আমাকে, তুই নিজেকে যতটা ভালোবাসিস তার চেয়ে আমাকে বেশি ভালোবাসবি। আমাকে ছাড়া নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারবি না। ভালোবাসতে না পারলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে, কাছে পাবার জন্য একটু ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য ছটফট করবি। তুই ভালোবাসার ম*রনে ম*রবি, ম*রবিই, খুব বিদঘুটে হবে সেই মৃ*ত্যু। তোর জীবনে একমাত্র পুরুষ হব আমি। যে পুরুষের ভালোবাসা তোকে মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণা দেবে সেই পুরুষ আমিই। তুই আমাকেই তোর সমস্ত শরীরে যত্ন করে মাখবি। আমার গন্ধতেই তোর চারপাশ ছেয়ে থাকবে। তোর সবটা জুড়ে শুধু আমি, আমি আর আমিই থাকব,আমি-ই থাকব।”
” একসাথে দুজনকে! একসাথে দুজনকে ভালোবাসা নিশ্চয়ই সম্ভব না। আমি শুধু একজনেরই।”
” ওই যে বললাম পুরুষের ভালোবাসা তোকে মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণা দেবে সেই পুরুষ আমিই। তুই শুধু আমাকেই ভালোবাসবি। তোর সবটা জুড়ে শুধু আমি, আমি আর আমিই থাকব,আমি-ই থাকব।”

ইহান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রায়া সেখানেই থ’ মেরে দাঁড়িয়ে ইহানের বলা কথাগুলো ভাবছে। কথাগুলো যেন তার কানে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
_____
রায়া আর ইহানের ব্যক্তিগত সময় ছাড়া কয়েকদিন কেটে গেছে। ইহান একপ্রকার রায়াকে এড়িয়ে চলার চেষ্টায় আছে। রায়া রুমে থাকাকালীন ইহান ভুলে একবারও রুমে আসেনি। গোটা চারদিন কেটে গিয়েছে রায়া নিজের বাড়িতেও যায় নি। বাবা-মা, ভাইও একবার খোঁজ খবর অবধি নেয় নি। অভিমানের পাহাড় যেন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সঙ্গীহীনতায় কাটছে প্রতিটা প্রহর। শব্দহীন চাপা কান্না বুকে বেধে আছে। না পারছে কাউকে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে। প্রতিটা মুহুর্তে নিজেকে আবিষ্কার করছে বিধ্বস্ত রায়া হিসেবে। জীবনের সবকিছু কেমন খেই হারাতে বসেছে।
খাটে হেলান দিয়ে অতীতের কথাগুলো ভাবছিল রায়া। এমন সময় দরজায় নক করার শব্দে সেদিকে তাকিয়ে দেখে এশা দাঁড়িয়ে আছে। রায়া ইশারায় তাকে ভেতরে আসতে বলে। এশা এসে রায়ার সামনে আরাম করে বসে৷

” আম্মি কিছু টাকা দিয়েছে। শাড়ি পরে থাকতে নিশ্চয়ই তোমার অসুবিধে হচ্ছে তাই আম্মি বলল তোমাকে নিয়ে বাহিরে যেতে। তোমার যা যা লাগবে কিনে নিতে পারবে। কখন যাবে বলো?”

রায়া সোজা হয়ে বসে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার উপায় অন্তত পাওয়া গেছে ভেবে মনে মনে বেশ খুশিই হয় সে। দুজন কথাবার্তা বলে ঠিক করে সন্ধ্যায় বের হবে। কেনাকাটার সাথে সন্ধ্যার পরিবেশটাও বেশ এনজয় করা যাবে। এশা চলে গেলেই রায়া সুন্দর একটা শাড়ি পছন্দ করে আলাদা করে রেখে দেয়। ঠিক করে আজই শাওনের সাথে দেখা করবে।

রায়া আর এশা রেডি হয়ে একসাথে রুম থেকে বের হতেই দেখে ইরিনা বেগম ইহানকে খেতে দিচ্ছেন। রায়ার মনে পড়ে দুপুরে খাওয়ার সময় ইহান খাবার টেবিলে ছিল না। দুজন গিয়ে ইরিনা বেগমের সামনা-সামনি দাঁড়ায়।

রায়া ইহানের দিকে তাকিয়ে ইরিনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে,” বড়মা আসছি তাহলে আমরা। ফিরতে একটু দেরি হতে পারে। ”

ইরিনা বেগম ইহানের প্লেটে বাড়তি ভাতটুকু দিয়ে বলেন, ” মেয়েদের সন্ধ্যাপর বাহিরে থাকতে হয় না৷ বেশি দেরি করিস না। ”

ইহান প্লেটে ভাত নাড়াচাড়া করতে করতেই বলে, ” যখন আসিস সমস্যা নেই। দুজন একটু সাবধানে চলাফেরা করিস। এই এলাকার কারও সাহস নেই তোদের ক্ষতি করার। গেড়ে রেখে দেব না ওখানেই! আর এশা…”
” হ্যাঁ ভাইয়া।”
” আমার ওয়ালেটে টাকা আছে, দুজন দুইটা বোরখা কিনে নিয়ে আসবি। এরপরের বার থেকে দুজন বোরখা পরবি।”
” আচ্ছা।”

দুজন বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ইরিনা বেগম বলে ওঠেন, ” দুজনকে সাহস দিয়ে মাথায় তুলিস না। এভাবে চলাফেরা করলে মেয়েরা খারাপ হয়ে যায়। আমি আমার মেয়েকে শাসনে রাখতে পারব কিন্তু রায়াকে কিছু বলতে গেলে খারাপ শাশুড়ী হয়ে যাব তার চেয়ে ভালো তুই-ই এসব দেখ।”
” চিন্তা করো না আম্মি। কিচ্ছু হবে না৷ আমি যতটুকু হতে দেব ততটুকুই কেউ কিছু করতে পারবে।”
_____

শপিং শেষ করে রায়া আর এশা রেস্টুরেন্টে এসে বসেছে৷ খাবারও অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে। ওয়েটার এসে জানালো দশ থেকে পনেরো মিনিট লাগবে।

রায়া হঠাৎ কিছু মনে পড়ার মতো করে বলল,” এশা আমি একটা জিনিস কিনে আনতে ভুলে গেছি। দুজন একসাথে তো আর যেতে পারব না এখন, পরে গেলেও অনেক দেরি হয়ে যাবে৷ তুই বরং এখানে বস আমি পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই চলে আসছি। তোর ফোনে এমবি আছে তো না? এমবি থাকলে তোর বসে থাকতে খারাপ লাগতো না।”

এশা ফোন টিপতে টিপতেই বলল, ” হ্যাঁ তুমি যাও, আমি এখানেই আছি। একটু তাড়াতাড়ি এসো, খেয়ে বাসায় ফিরতে হবে।”
” আমি যাব, কিনে নিয়েই চলে আসব। বেশি সময় লাগবে না। ”

এশা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে আবার ফোনে মন দেয়। রায়া নিজের সাইড ব্যাগটা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যায়। সে জানে শাওন এই সময় কোথায় থাকে। যতদিন তার সাথে এই সময়ে রাতে কথা হয়েছে ফোনে কথা বলার সময় জিজ্ঞেস করলে একই জায়গার নাম বলেছে সবসময়। রায়া তাড়াতাড়ি করে হেটে স্টলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ভেতরে কয়েকজন ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্যারাম খেলছিল। রায়া স্টলের ছোট ছেলেকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে চায় শাওন এখানে আছে কি না। ছেলেটা ভেতরে একবার দেখে জানায় শাওন ভেতরেই আছে। রায়া তার হাতে একশো টাকার নোট গুজে দিয়ে শাওনকে একবার ডেকে দিতে বলে। ছেলেটা ভেতরে চলে গেলে রায়া রাস্তার একপাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

মিনিট খানেকের মধ্যে স্টলের ভেতর থেকে লম্বাচওড়া স্বাস্থ্যবান ছেলে এক প্রকার দৌঁড়ে এসে রায়াকে জড়িয়ে ধরতে লাগলে রায়া তার বুকে হাত দিয়ে ঠেলে থামিয়ে দেয়। ছেলেটা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
রায়া অস্পষ্টভাবে বলে ওঠে, ” শাওন!”

শাওন এলোমেলোভাবেই কিছু বলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। মলিনমুখে শুধায়, ” কেমন আছো রায়া?”
রায়া কিছু বলে না। নিমিষ তাকিয়ে দেখছে শাওনকে। কতগুলো দিন কেটে গেছে দুজনের দেখা হয়নি এমনকি মুঠোফোনে বাক্য বিনিময়ও হয়নি।

রায়াকে চুপ থাকতে দেখে শাওন আবার বলে ওঠে,” তুমি তোমার শাওনকে ছেড়ে কেমন আছো? তোমার শাওনকে একবারও মনে পড়ে নি তোমার? তুমি জানো আমি তোমাকে মনে করে কত কান্না করেছি? কতবার তোমায় কল করেছি জানো তুমি?”

রায়া নিচু গলায় বলে,” তুমি আমাকে সেদিন নিতে কেন আসো নি শাওন? তুমি কীভাবে পারলে আমাকে ঠকাতে? তুমি জানো আমি স্টেশনে একলা একটা মেয়ে কীভাবে ছিলাম? বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছিলাম আমি শুধু তোমার কথা ভেবে। তোমার সাথে সংসার করব বলে। অথচ আজ আমাকে অন্যকারো সংসার সামলাতে হচ্ছে। এসব তো আমি চাই নি শাওন তবে কেন আমার সাথেই ঘটলো এসব?”
” আমি তোমাকে নিতে স্টেশনে গিয়েছিলাম রায়া।”
” আমাকে না নিয়েই ফিরে গেছিলে? বুক কাঁপলো না তোমার?”
” স্টেশনের গেইটে পা রাখতেই দেখি মা’র কল। আব্বা অসুস্থ হয়ে গেছিল। তোমাকে কীভাবে নিয়ে যেতাম বলো? আমি ভেবেছিলাম তুমি বাড়ি ফিরে গেলে বিয়েটা আর হবে না। কোন না কোনভাবে বিয়েটা তুমি ভেঙে দেবে বিশ্বাস ছিল।”

রায়ার চোখ ছলছল করছে। চোখের পলক ফেলতেই দুফোঁটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। রায়া নাক টেনে গাল মুছে বলল,” বিয়ে আমি ভাঙতে পারিনি শাওন।”
” তুমি একা এসেছ এখানে? রায়া আমি তোমাকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারছি না। অন্যকেউ তোমার সাথে থাকছে ভাবলেই কান্না পায়। সে তোমাকে ছোঁয়নি তো বলো? তুমি আমারই আছো তো বলো না?”

রায়া ফুঁপিয়ে কান্না করে দেয়। কান্নাজড়ানো গলায় বলে, ” ছুঁয়েছে শাওন। ইহান আমাকে খুব বাজেভাবে ছুঁ*য়েছে।”

কিছুক্ষণ নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শাওন। রায়া কান্না করেই যাচ্ছে। শাওন কিছু একটা ভেবে চকিতে বলে ওঠে, ” রায়া তুমি আমার। সে তুমি যেরকমই হও। ইহান তোমাকে তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্পর্শ করেছে। আমি তোমাকে এক্ষুনি এখান থেকে নিয়ে যাব। আর থাকতে হবে না তোমার ওখানে। তুমি আমার সাথে আমার মানুষ হয়ে থাকবে।”

প্রিয় মানুষের মুখে এমন কথা শুনে আশার আলো দেখতে পায় রায়া। নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে, “পালিয়ে যাব শাওনের সাথে? বাবা! বাবার যে সম্মানহানি হবে। ” পরেই মনকে বুঝায় তারা কেউ তো তার কথা শোনেনি তাহলে সে কেন এত মানুষের কথা শুনবে!

রাজি হয়ে যায় রায়া৷ প্রিয় মানুষের সাথে পালিয়ে যেতে সে প্রস্তুত। ঠিক করে এক্ষুণি পালাবে তারা। কারো কথা আর ভাববে না৷ রায়ার রাজি হওয়ায় শাওন ও বেশ খুশি হয়৷

রায়ার দু’বাহু ধরে বলে, ” তুমি এখানেই দাঁড়াও। আমার বন্ধুকে ব্যবস্থা করতে বলি।”
” কীসের ব্যবস্থা করতে বলবে?”

রায়ার কথা না শুনেই ইহান একটু দূরে এসে কাউকে কল লাগায়। দূরে জ্ব*লতে থাকা লাইটের আলোয় শাওনের মুখে শয়তানি হাসি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই শাওন বলে ওঠে, ” মামা কাম তো হয়ে গেছে। আব্বার শ*ত্রুর মেয়ে বর্তমানে ইহান শেখ-এর স্ত্রী নিজে পায়ে হেটে আমার কাছে চলে আসছে। সেদিন সম্মান ডুবাইতে পারিনি তো কী হইছে আজ সব হবে। রাহাত আর নায়েককে ডাক দে। চারজন মিলে আজ মাস্তি করব, রুমটা ঠিক কর আইতাছি।”

কল রেখে রায়ার কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পিছনে ফিরতেই রায়াকে দেখে চমকে যায় শাওন। সাথে সাথে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার। রায়ার মুখে একসাথে ভয়, নিন্দা, তীব্র ঘৃণা পরিলক্ষিত।

শাওন শুকনো ঢোক গিলে বলে, ” রা রায়া তু তুমি এখানে?”

#চলবে…….

সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here