প্রেমস্পন্দন #তানিয়া_মাহি(নীরু) #পর্বসংখ্যা_০৩

0
232

(মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
#প্রেমস্পন্দন
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্বসংখ্যা_০৩

নওশীন আর ইলমা হাঁটতে হাঁটতে উপজেলার সামনাসামনি আসলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,” এখন যদি দ্যি হ্যান্ডসাম আদনান সাহেবের সাথে দেখা হয়ে যায়! কেমন হবে বল তো?”
” খুব বাজে হবে ইলু৷ এসব মুখেও আনিস না৷ আমার বাড়ির বাদরগুলো এই লোককে নিয়ে খুব জ্বা*লিয়েছে রে, তুই আর জ্বা*লাস না।”
” আমার কিন্তু কালকে উনাকে দারুণ লেগেছে। যাই বলিস লোকটা কিন্তু হেব্বি হ্যান্ডসাম। ”
” ছিঃ ছিঃ ইলু, তোর না বয়ফ্রেন্ড আছে? ভালো হয়ে যা সময় থাকতে।”
” যা ইচ্ছে বল, আমি এখন মনে প্রাণে চাইছি আদনান সাহেব সামনে এসে দাঁড়াক।”

পিছনে গলা খাঁকারির আওয়াজ শুনে দুজনে দাঁড়িয়ে যায়। নওশীন আর ইলমা একে অপরকে দেখছে। পিছন থেকে ভারী গলায় কেউ বলে ওঠে, ” এই যে শুনছেন!”

নওশীন আর ইলমা দুজনই ধীরেধীরে পিছনে তাকায়। পিছনে একটা মধ্যবয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে। ইলমা পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বিরক্তিভাব নিয়ে বলে,” জি বলুন?”

সামনে দাঁড়ানো লোকটা আমতা আমতা করে বলে,” আ আসলে আমার হাতের এই কাগজগুলো ফটোকপি করতে হবে, দোকান খুঁজে পাচ্ছি না।”

নওশীন বুঝতে পারে লোকটা হয়তো এখানে নতুন। কোন কাজে আসতে পারে তাই হয়তো কিছু চিনতে পারছে না। তাই সে আঙুল দিয়ে সামনের দিকে দেখিয়ে দিয়ে বলে,” ওই যে রাস্তার ওপাশে সোজা আরেকটা যে রাস্তা দেখছেন না? ওখান দিয়ে দুই মিনিট হেটে গেলেই একই সারিতে কয়েকটা দোকান পেয়ে যাবেন।”
” ঠিক আছে। ধন্যবাদ।”

লোকটা পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই ইলমা গা ঝাঁকিয়ে দিয়ে বলে,” খেলব না, ইট’স টোটালি আনফেয়ার। আদনান স্যার কেন আসলো না….!”
” তুই উনাকে নিয়ে পড়ে থাক এখানে।” বলেই হাটা দেয় নওশীন। ইলমা উপজেলার মেইন গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক একটু তাকিয়ে কিছু দেখতে না পেয়ে নওশীনের পিছু পিছু দৌঁড় লাগায়।

নওশীন জোরে জোরে হাটছে আর বলছে,” তুই যদি আর কখনো আদনান ফাদনানরে নিয়ে কথা বলছিস তোরে আমি ড্রেনে ফেলে দিব বলে রাখলাম।”

ইলমা দৌঁড়ে নওশীনের সাথ ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,” আমার বয়ফ্রেন্ড তোরে আস্ত রাখবে না।”
” তোর বয়ফ্রেন্ডকেও আসতে বলিস, হুইল পাওডার দিয়ে দুইজনরে ডলে ডলে ধুয়ে দেব। খ*বিশ কোথাকার। একটা কথা না বলে তাড়াতাড়ি চল, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”

ইলমা আর কথা না বাড়িয়ে নওশীনের সাথে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
______

” আম্মা বউ-বরণ করতে তৈরি হও। এখানে একটা মেয়েকে প্রচন্ডরকম পছন্দ হয়েছে আমার। বাচ্চারা যেমন নিজের পছন্দের খেলনা না পেলে হাত-পা ছুড়ে কান্নাকাটি করে, ওকে না পেলে আমার ওমন অবস্থাই হবে হয়তো। আম্মা এর আগে কোন মেয়েকে তো এত ভালো লাগেনি! এই মেয়ের মধ্যে কী এমন আছে যার জন্য আমার ওকে এত পছন্দ হয়েছে! ”

ফোনের ওপাশ থেকে আদনানের মা আবিদা বেগম বলে ওঠেন,” এতদিন পর আমার ছেলে বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করেছে, এর চেয়ে ভালো খবর আর হয়ই না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আমি কি চলে আসব মেয়ে দেখতে?”

মায়ের কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে আদনান। বসে বসে নাস্তা করছিল আর মায়ের সাথে ফোনে কথোপকথন চলছিল। মায়ের এখানে আসার কথা শুনে তড়িঘড়ি করে আদনান বলে ওঠে,” সময় হলে আমি নিজেই তোমাকে এখানে আসতে বলব আম্মা।”

আবিদা বেগম বেশ আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করে,” মেয়েটার সাথে পরিচয় হলো কীভাবে?”
” মা, এখনো পরিচয় হয় নি। আমি শুধু তাকে চিনি। আমি যে এখানকার ইউএনও, সে শুধু এটুকুই জানে। ”
” তাহলে এখন তোমার কী করা উচিৎ বলে মনে করছো?”
” তার সাথে পরিচিত হওয়াটা জরুরি বলে মনে করছি।”
” জলদি বউমা চাই।”
” আম্মা ওর ব্যক্তিগত বিষয়ে তেমন কিছুই জানি না। ডিটেইলস কিছুটা আছে আমার কাছে।”
” মেয়েটা কী করছে?”
” পড়াশোনা।”
” পড়াশোনা! কীসে পড়ছে?”
” এবার ইন্টার দেবে।”
” কী!”
” হ্যাঁ আম্মা।”
” পিচ্চি একটা মেয়ে। আমি একটা মেয়ে পছন্দ করেছিলাম। মেয়েটা বেশ ম্যাচিউর। তুমি চাইলে তাকে….”
” না আম্মা। প্লিজ তুমি এবার অন্যকারো কথা বোলো না।”
” দেখ কী হয়! আমার কোনকিছুতেই অমত নেই।”
” আচ্ছা আম্মা। রাখছি এখন।”
” আল্লাহ হাফেজ। ”

ফোন রেখে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসে আদনান। ফোনটা হাতে নিতেই দেখে থানার ওসি চারবার কল দিয়েছিল। আদনান আর এক মুহুর্ত দেরি না করে ওসি-কে কল ব্যাক করে।

রিং হতেই ওপাশ থেকে মুহুর্তের মধ্যে কল রিসিভ হয়। আদনান সাব্বিরের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান সাব্বিরের খোঁজ এখনো পাওয়া যায় নি। এখান থেকে কিছু দূরের একটা সিসিটিভিতে রাতে দেখা গেলেও এরপর আর তাকে কোথাও দেখা যায় নি। ওসি সাহেব আরও জানান তারা সন্দেহ করছে সাব্বির নিজ এলাকাতেই হয়তো লুকিয়ে আছে।

আদনান জিজ্ঞেস করে, ” এলাকা কি খুব বড়? বড় না হলে তল্লাশি চালিয়ে দেখতে পারেন। সে কিন্তু খুব ছোট কোন অপ*রাধ করে নি। ধর্ষ**ণের চেষ্টা করেছিল। মেয়েটা যদি সাহসী পদক্ষেপ না নিত তাহলে তার অবস্থা কী হতো ভাবুন একবার!”

ওসি সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠেন,” সবই বুঝতে পারছি স্যার। আমাদের ঘরেও মেয়ে আছে, বুঝি সবই।”
” যত তাড়াতাড়ি পারেন তাকে খুঁজে বের করুন।”
” জি স্যার, আমরা চেষ্টা করছি। মেয়েটার সাথে একটা ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে হতো। ভাবছি আজ কলেজে যাব।”
” ঠিক আছে। বিষয়টার সাথে যেহেতু আমি জড়িত সেহেতু আমিও উপস্থিত থাকব। কখন যাবেন, জানাবেন আমাকে।”
” স্যার, আপনি কখন ফ্রি আছেন?”
” আজ সারাদিনই।”
” ঠিক আছে স্যার। চলুন বের হই এগারোটার দিকে।”
” ওকে।”
__________

নওশীন আর ইলমা ব্রেক টাইমে ক্যাম্পাসে বসে বসে খাচ্ছিল আর গল্প করছিল। খেতে খেতে ইলমা বলে ওঠে,” তোর নুহাশ জানে কালকের ঘটনা?”
” না, বলিনি।”
” বলিস নি কেন?”
” রাতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। সকালে তো পড়তে হয় আর ‘ও’ তো সকালে ঘুম থেকে উঠে না।”
” জমিদার!”
” কী বললি?”
” জমিদার বললাম৷ শুনতে পাস নি? কানে ময়লা হয়েছে? কটনবাড কিনে নিয়ে যাস বাড়ি যাওয়ার সময়।”
” ফালতু বকিস না তো বা**ল। খাচ্ছিস খা।”

ইলমা ভেঙচি কেটে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। ইলমা সিঙারার মধ্যে থেকে একটা মশলা বের করে বলে,” তোর ওই নুহাশ হচ্ছে এই এলাচ, বিরিয়ানির মধ্যে থেকেও বিরক্ত করে আর এখন সিঙ্গারাতেও।”
” নুহাশ তোর কী করল? এই তোরা ও’কে পছন্দ করিস না কেন বল তো? জ্ব*লে? এত সুন্দর একটা বফ তোর কপালে নাই।”
” তোর ওই মাইয়া বফরে দেখলে আমার বমি আহে।”
” আমি এখান থেকে চলে যাব কিন্তু ইলমার বাচ্চা।”

দুজনের ঝগড়া, রাগারাগি চলাকালীন কলেজের এক আয়া এসে দুইজনের সামনে দাঁড়ায়। কোমরের দুইপাশে হাত দিয়ে বলে,” তোমাদের সেই কখন থেকে খুঁজছি আর তোমরা এখানে বসে বসে ঝগড়া করছ?”

নওশীন বসে বসে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা নুডলস খাচ্ছিলো। খাওয়া বন্ধ করে আয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,” কী হয়েছে? খুঁজছেন কেন?”
” কালকে তো তুমিই অজ্ঞান হয়ে গেছিলে না?”
” হ্যাঁ, কেন?”
” পুলিশ এসেছে, তোমার সাথে কথা বলবে।”
” অজ্ঞান হয়েছি জন্য পুলিশ এসেছে? আমার থেকে জ্ঞান হারানো শিখবে নাকি?”

নওশীনের কথায় ইলমা হো হো করে হেসে দেয়। আয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,” আমাকে পাগল পেয়েছ? রেস্টরুমে আসো তাড়াতাড়ি। তুমি একাই আসবে। তোমার বান্দরনীকে আনার দরকার নাই। আসো তাড়াতাড়ি, আমি গেলুম।”

আয়া চলে যেতেই নওশীন খাবারের বক্স বন্ধ করে ব্যাগে ভরে ইলমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,” তুই ক্লাসে চলে যা। আমি আসছি।”

ইলমা ব্যাগটা ধরে বলে,” ভয় পাস না। ”
” কাল অসুস্থ ছিলাম, আমি কিছু করিনি। পুলিশ দেখে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।”

নওশীন বেরিয়ে কলেজের মাঠ পেরিয়ে প্রিন্সিপালের বিল্ডিংয়ের সামনে চলে আসে। ভেতরে ঢুকবে তখনই আদনানকে দেখে নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে সামনের দিকে যেয়ে গলা ঝেড়ে সালাম দেয়।

সামনে নওশীনকে দেখেই আদনানের হৃৎস্পন্দন যেন মুহুর্তের জন্য থেমে যায়। এক পলকে সামনে দাঁড়ানো রমনীর দিকে তাকিয়ে থাকে। নওশীন আদনানের অবস্থা টের পেয়ে ঠোঁট টিপে হাসি আটকে আবার গলা খাঁকারি দিতেই আদনান একটা জোরে শ্বাস টেনে বলে, ” ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন?”

#চলবে…..

সবাই রেস্পন্স করবেন। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
রিচেক দেওয়া হয়নি, ভুল পেলে ধরিয়ে দেবেন।
যারা আমার ইবুক এখনও পড়েন নি তারা বইটই থেকে জলদি -( কাছে না এসে ভালোবাসব না) ইবুকটা কিনে ফেলুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here