তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল #পর্ব_২৮ #সারিকা_হোসাইন

0
193

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_২৮
#সারিকা_হোসাইন

ব্যাঙ্কক,ফুকেট

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কক এর ফুকেটের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।কিন্ত এই ফুকেট দিনের বেলায় যতোটা সুন্দর মোহনীয় রাতের বেলায় ততোটাই ভয়ংকর।একটু এদিক সেদিক হলেই ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা।
চুরি,ডাকাতি,স্মাগলিং,সে*ক্স ক্লাব,ক্যাসিনো সবকিছু গড়ে উঠেছে ফুকেট এর বাংলা রোডে।এই রোডে সন্ধ্যার পর যে কোনো ক্রাইম ঘটার চান্স থাকে আশি শতাংশের উপরে।বিদেশী পর্যটকদের জন্য বাংলা রোড কে রাতের বেলা রেড এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

টানা সাড়ে তিন ঘন্টা জার্নি করে ব্যাঙ্কক সুবর্ণ ভূমি এয়ারপোর্ট এসে পৌঁছেছে আদ্রিয়ান,সৌম্য আর মুহিত।

ইকোনোমিক টিকিটের ব্যাবস্থা না থাকায় বিজনেস ক্লাসে আসার জন্য একেকজন কে গুনতে হয়েছে সত্তর হাজার টাকা।
তাদের কে ওয়েলকাম করার জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের গাইড থাই আব্বাস।
লোকটির বয়স চল্লিশের কাছাকাছি।থাইল্যান্ড সম্পর্কে এতোই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন যে, নামের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে” থাই”

আব্বাসের সহায়তায় তারা তাদের লাগেজ নিয়ে ফুকেট এর পশ একটি হোটেল নভোটেল ফুকেট সিটি তে উঠে।
মূলত তারা এসেছে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে।রথ দেখা কলা বেঁচা যাকে বলে।
এর মাঝে সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বডি ম্যাসাজ করাতে পারলে মন্দ হয় না!

হোটেলে ঢুকে ফ্রি ওয়াইফাই কানেক্ট হতে না হতেই সৌম্য আর মুহিতের ফোনে ভিডিও কলের নোটিফিকেশন আসতে শুরু করলো।
বিভিন্ন ধরনের মেসেজ দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে পিউ আর স্বর্গ।
একটাই সতর্ক বাণী
―সাদা রঙের মেয়ে মানুষ থেকে একশত হাত দূরে।

মেজর আদ্রিয়ান বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো।কারন সে স্বাধীন।তাকে বলার মতো কেউ নেই।
তার মতে
― সিঙ্গেল লাইফ ইজ বেস্ট।
―মিঙেল হলেই যতো প্যারা।

মুহিত আর সৌম্যকে উদ্দেশ্য করে চোখ টিপে আদ্রিয়ান বলে উঠলো
―আমি বডি ম্যাসাজ ও নিবো, নাইট ক্লাবেও যাবো,আর বিচেও হাফপ্যান্ট পরে শুয়ে থাকবো।
বলেই মাথার পিছে দুই হাত ভাঁজ করে দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে থাকলো।

আদ্রিয়ান এর কথা শুনে মুহিত আর সৌম্য চোখ চাওয়া চাওয়ি করলো।কারন তারা অসহায়।তারা বউয়ের বন্দী কারাগারে।

মুহূর্তেই মুহিতের ফোন ভো ভো শব্দে কেঁপে উঠলো।
স্ক্রিনে দৃষ্টি ফেলতেই নিজের আদুরে বউয়ের নম্বর দেখে ঠোঁটের হাসি মিইয়ে গেলো।
এখনই শুরু হবে একশ একটা প্রশ্নের জবাব উত্তর।

হলোও তাই।মুহিত ফোন তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে স্বর্গ
বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো সাথে একশত বার শাশালো যাতে ছোট পোশাক পরিহিত মেয়েদের দিকে চোখ না দেয় মুহিত।
তাহলে স্বর্গ মুহিতের চোখ উপরে ফেলবে।

মুহিত শুধু আচ্ছা,আচ্ছা বলে বাধ্য বাচ্চার ন্যায় ফোন কেটে দিলো।

স্বর্গ ফোন কাটার সাথে সাথেই পিউ ফোন করলো সৌম্যের ফোনে।
ঐ একই হুমকি ধামকি।
―শালার আসামি ধরতে এসেও শান্তি নেই দেখা যাচ্ছে বলে বালিশ দিয়ে মাথা চেপে ধরলো সৌম্য।
কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে হোটেলের রুফটপ রেস্টুরেন্টে গেলো তারা।
এটাই প্রথম থাইল্যান্ড ভ্রমন তাদের।এখানকার খাওয়াদাওয়া, কৃষ্টি,কালচার কিছুই জানে না তারা।আর কতো রকম দেশে যে তাদের ভ্রমন করতে হবে সেটাও তারা জানেনা।

মেনু কার্ড নিয়ে খাবারের নাম দেখতে থাকলো।
সৌম্য তো ভয়েই শেষ যদি পর্ক দিয়ে রান্না করে দেয়?
ভাবতেই চোখ মুখ কুঁচকে জিভ বের করে আস্তাগফিরুল্লাহ বলে উঠলো।
সৌম্যের এমন অবস্থা দেখে মুহিত জিজ্ঞেস করলো
―উজবুকের মতো আচরণ করছো কেনো ক্যাপ্টেন?
সৌম্যের উত্তর না শুনেই ওয়াইটার ডাকলো মুহিত।
মুহিত সবাইকে বোঝালো কোনটা কি খাবার আর তারা কোনটা খাবে?
সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুহিত ওর্ডার দিলো থাই স্টীম বোট,সৌম্য ভাত প্রিয় মানুষ সে ওর্ডার দিলো খাও ক্লুখ ক্রবি আর আদ্রিয়ান ওর্ডার দিলো চিকেন সাতায়।
গুগল ঘেঁটে খাবার সম্পর্কে আইডিয়া নিয়ে নিয়েছে তারা।এবার টেস্ট করার পালা।

কিছুক্ষণ পরেই তাদের অর্ডারকৃত খাবার চলে এলো।
সৌম্য ভয়ে ভয়ে খাবার মুখে তুললো।খাবার খেয়ে সে তার মন্তব্য ব্যাক্ত করলো।
―এতো কঠিন নামের কি দরকার ছিলো?চিংড়ি ভর্তা দিয়ে ভাত মাখানো বললেই তো সহজ হতো।

―বেশি কথা না বলে খাও ক্যাপ্টেন বলেই ফুটন্ত ভেজিটেবল আর চিকেন স্টক এ পাতলা স্লাইস করে কাটা মুরগির মাংস চুবালো মুহিত।

সৌম্য খেতে খেতে প্রশ্ন করলো
মেজর আপনি এখানে কোথায় খুঁজে পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত আশরাফ চৌধুরী কে?
―সন্ধ্যে নামলেই দেখতে পাবে বলেই চপ স্টিক দিয়ে ডুবানো মাংস টা তুলে মুখে পুড়লো মুহিত।
খাবার সময় বেশি কথা মুহিতের পছন্দ নয়।এজন্য সৌম্য আর ঘাটালো না বেশি।

――――
পায়ের উপর পা তুলে বসে আছেন আশরাফ চৌধুরী।পেছনে দুজন মেয়ে গরম তেল মালিসের মাধ্যমে তাকে ম্যাসাজ দিয়ে যাচ্ছে।মেয়ে গুলোকে কক্ষে নিয়ে শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে আশরাফ চৌধুরীর।কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করলেন না।
মুহিতের কথা মনে পড়তেই বিদঘুটে হেসে উঠলেন।
তার হাসিতে মেয়ে গুলো ম্যাসাজ বন্ধ করে দূরে সরে দাঁড়ালো।

―আর কিভাবে আমায় খুঁজে পাবি মেজর?
অনেক দৌড় করিয়েছিস আমাকে।এবার তোকে কি করি আমি তুই শুধু দেখ।
লাশ ধরে কাঁদার জন্য ও কোনো মানুষ পাবি না বলেই হাতে থাকা বিয়ারের ক্যান ছুড়ে মারলেন ।

মুহিত যদি কোনোভাবে এখানেও চলে আসে তবে জ্যান্ত পুতে দেবেন থাইল্যান্ডের মাটিতে।
বাংলাদেশের চাইতেও আশরাফ চৌধুরীর জন্য নির্ভরযোগ্য স্থান থাইল্যান্ড।
এখান থেকেই তার ব্যাবসা জীবনের হাতে খড়ি।
ঘুরতে আসা কতো নারী পর্যটক কে অপহরণ করে পতিতালয়ে দিয়ে দিয়েছে আশরাফ চৌধুরী তার কোনো ইয়াত্তা নেই।
বিনিময়ে হাতিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
ধীরে ধীরে পোক্ত আবাস গড়েছেন এখানে।
ছেলেটার জন্য এতোদিন দেশে ফিরে গিয়েছিলেন।
কিন্তু হারামিটা তার সব শেষ করে দিলো।

হঠাৎই আশরাফ চৌধুরীর কক্ষে আট জন্য থাই ছেলে প্রবেশ করলো।প্রত্যেকের উচ্চতা ছয় ফিট।সাথে মাসেল যুক্ত বডি।প্রত্যেকেই কারাতে স্পেশাল।
এবার আর শুকনো মাটিতে বসে থাকবেন না আশরাফ চৌধুরী।ওই লাফাঙ্গা মেজর কে একদম ভরসা নেই।যখন তখন তাকে পাকড়াও করতে চলে আসবে।
সেই জন্যই তো এতো আয়োজন।
গেট কিপার খলিল,মোশতাক আহমেদ এর মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা একটু হলেও আঁচ করতে পেরেছেন আশরাফ চৌধুরী।
পুলিশকে ঘোল খাওয়ানো গেলেও তাকে ভুলানো এতো সহজ নয়।
মাথার চুল বাতাসে পাকেনি তার।

এবার মুহিত কে হাতের কাছে পেলে এই ছেলে গুলোকে দিয়ে টাইট দেয়াবেন আর তিনি বসে বসে উপভোগ করবেন আর হাত তালি দিবেন।
মুহিতের চাটনী বানানো হচ্ছে ভাবতেই খুশিতে চোখ বন্ধ হয়ে এলো আশরাফ চৌধুরীর।

―――――
পৃথিবীতে মানুষের কাছ থেকে কঠিন কোনো সত্য বের করার প্রধান উপায় হচ্ছে ইমোশনাল ব্ল্যাক মিল।
মুহিত এটাই ট্রাই করেছে আহিয়ান এর উপর।
মুহিত জানতো আহিয়ানের মা নেই।তাই বলে তার মা কে আশরাফ চৌধুরী খুন করে দিয়েছে এটা মুহিত স্বপ্নেও ভাবেনি।

সহধর্মিণী হয় আত্মার আত্মা,সব চেয়ে কাছের বন্ধু,ভালো থাকার মেডিসিন।যাকে একটু রুষ্ট স্বরে কথা বললে কীয়তক্ষন বাদে নিজেরই বুকে কষ্ট অনুভূত হয়।
তাকেই কিভাবে কেউ হত্যা করতে পারে?
কতোটা জঘন্য এই আশরাফ চৌধুরী?
ভেবে উত্তর খুজে পায়না মুহিত।

ধীরে ধীরে থাইল্যান্ডের আকাশের সূর্য দিগন্তে হারাচ্ছে।সময়টা এখন গোধূলী।একটু পরেই নেমে আসবে অন্ধকার।কিন্তু বাঙলা রোড সেজে উঠবে ঝকঝকে আলোতে,চলবে দেহ ব্যাবসায়ী দের হাঁকডাক।সাথে ক্যাসিনো,বিভিন্ন ড্রাগস এর আসর আর ডাকাতি ছিনতাই।
মুহিত তৈরি হয়ে নিচ্ছে দ্রুত।
আদ্রিয়ান আর সৌম্য অসময়ে ঘুমুচ্ছে।
মুহিত আজ যাবে আহিয়ানের কথা অনুযায়ী লন্ডন বার নামক জায়গাটি তে।
আহিয়ান আশরাফ চৌধুরী সম্পর্কে সকল তথ্য হাতে কলমে মুহিতের কাছে দিয়ে গিয়েছে।
কোথায় কোথায় পাপের সাম্রাজ্য গড়েছে আশরাফ চৌধুরী সব এখন মুহিতের নখদর্পণে।
মুহিতের হাত থেকে এবার কোনো ভাবেই নিস্তার পাবেনা আশরাফ চৌধুরী।
মুহিত আজকেই এট্যাক করবে না।আজকে সে ওই জায়গায় নাম মাত্র খুঁজ লাগাতে যাবে।

কালো জিন্স প্যান্টের সাথে হাফ হাতার লোজ একটি হোয়াইট টি শার্ট পড়লো মুহিত।মুখে কালো মাস্ক লাগাতেই তাকে দেখে সে কোন দেশের মানুষ তা বোঝার উপায় থাকলো না।

মাথায় একটা ক্যাপ পরে নিলো।পায়ে কালো বুটস।
ঠিকানা অনুযায়ী গুগল ম্যাপে পনেরো মিনিটের রাস্তা দেখাচ্ছে।
ম্যাপের রাস্তা ধরে হাটতে হাটতে মুহিত বিশ মিনিট পর পৌঁছে গেলো সেখানে। মুহিতকে ছোট ছোট পোশাক ধারী মেয়ে গুলো ম্যাসাজ ম্যাসাজ করে ডাকছে আর চোখ দিয়ে বিভিন্ন ইশারা করছে।
মাঝে মাঝে টেনে ধরার চেষ্টা করছে।
মুহিতের আর বোঝার অপেক্ষা থাকলো না যে,কিসের জন্য মেয়েগুলো ডেকে যাচ্ছে।
হাটতে হাটতে মুহিত এসে দাড়ালো একটি বার এর সামনে।যার সাইনবোর্ড এ লাইটিং এ জ্বলজ্বল করছে” লন্ডন বার ফুকেট লেখাটি।”
মুহিত কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে আশেপাশের ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করলো।এরপর বারের ভেতরে প্রবেশের জন্য পা চালালো।

বারটি তে আসতেই কোকেন এর গন্ধে পেট গুলিয়ে উঠলো মুহিতের।
বহু কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে বারের ভেতর ঢুকে গেলো।

বারের ভেতর প্রবেশ করতে মুহিতের মনে হলো সে জাহান্নামে এসে পৌঁছেছে।চার পাশে মানুষ নেশায় বুদ হয়ে আছে।ছোট ছোট কক্ষ গুলো থেকে ভেসে আসছে মেয়েদের শীৎকার আর বিশ্রী হাসির আওয়াজ।ইয়ং ছেলে গুলো সমানে নাক দিয়ে হেরোইন টেনে চলেছে।
মুহিত সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতেই দেখতে পেলো দুটো ছেলে তাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে শুধু।
মুহিত তাদের কিছুই বুঝতে না দিয়ে একটা উঁচু বার স্টুল এ গিয়ে বসলো।
কি ওর্ডার করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।এদিকে ছেলে গুলো মুহিতকে বার বার নজরে রাখছে।
মুহিত এতটুকু বুঝতে পেরেছে যে,মুহিতের চালচলন ওদের কাছে ভালো ঠেকছে না বলেই ওরা মুহিতকে নজরে রেখে বোঝার চেষ্টা করছে।

মুহিত একটা ককটেল শট ওর্ডার দিলো যা বিভিন্ন সফট ড্রিংকস এর মিশ্রনে তৈরি।
জুস সার্ভ করতেই মুহিত জুসটা হাতে নিয়ে প্রথম চুমুক দিতেই ছেলে দুটো দুপাশ থেকে এসে মুহিতের পাশে বসে গেলো।
এমন ভাবে মুহিত কে চেপে বসেছে যেনো মুহিত পালিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎই মুহিত টের পেলো তার পেটের কাছে শক্ত কিছু ধরেছে ডান পাশে থাকা ছেলেটি।
ছেলেটির মুখের দিকে তাকাতেই অস্পষ্ট ইংরেজি তে বলে উঠলো
―হেই দোন্ত মুভ।
―গিভ আস এভরিথিং ইউ হ্যাভ ,

ফিচেল হাসলো মুহিত।এমনিতেই একজন সারাক্ষন হয়রানি করে যাচ্ছে তার মধ্যে আবার এই দুজন।
মুহূর্তেই রাগে কান গরম হয়ে গেলো মুহিতের ।
রক্ত চক্ষু করে ডান পাশের ছেলেটির দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলো
―মুভ ইউও গান নাও এট ডিজ মোমেন্ট।
―আদার ওয়াইজ আ উইল কিল ইউ ব্লাডি বিচ।
মুহিতের ধমকে কেঁপে উঠলো ছেলে গুলো,সাথে আশেপাশের মানুষ তাদের তাকিয়ে দেখতে লাগলো।

ছেলেটি আরো শক্ত করে বন্দুক চেপে ধরলো মুহিতের পেটে।
তারা এতটুকু বুঝে গেছে ছেলেটা অন্য দেশের।আর এখানে কোনো ওকারেন্স ঘটালে কেউ বাঁচাতে আসবে না তাকে।
আর একা একটা মানুষ দুজনের সাথে পারবে নাকি?

ছেলেটির ত্যাড়ামো দেখে মুহিতের পায়ের রক্ত মাথায় উঠলো।জুসের গ্লাস টা টেবিলে রেখে খপ করে ডান পাশের ছেলের হাতের কব্জি ধরে ফেলল এবং ছেলেটির হাত মুচড়ে ভেঙে বন্দুক ওই ছেলের পেটেই তাক করলো।
এরপর গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো
―আম বেটার এট গানস শুটিং দ্যান ইউ।
―নাউ মুভ ফ্রম হেয়ার।
আচানক আক্রমণে ছেলে দুটো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, আর ডান পাশের ছেলেটি হাতের ব্যাথায় রীতিমতো চিৎকার শুরু করেছে।

এর পর মুহিত তার কোমরে গুঁজে রাখা 500 S&w magnam রিভলবার টি বের করে ছেলেদের দিকে তাক করে বলে উঠলো
―মাই রিভলবার ইজ মোর পাওয়ারফুল দ্যান ইয়ু।
ছেলে দুটি ভয়ে ভয়ে দ্রুত সরে গেলো।

মুহিত নির্বিকার ভাবে আবারো বসে রইলো।অপেক্ষা বার খালি হবার।
বার কি আর কখনো খালি হবে?
লোক সমাগম কমতে থাকার অপেক্ষা করতে লাগলো মুহিত।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর মুহিত বারের পেছনের কক্ষে যাবার রাস্তা ফাঁকা পেলো।আশেপাশে নেশায় কাতর লোকজন।
সুযোগ বুঝে মুহিত কাঙ্খিত কক্ষের দিকে হাঁটা দিলো।

নির্দিষ্ট গন্তব্যে এসে মুহিত খুঁজতে লাগলো কক্ষের নম্বর।কারণ ছোট ছোট কটেজে টাইপের অনেক গুলো রুম আছে এখানে।

রুম নম্বর ফোর জিরো ফোর।
বন্ধ রুম অবশ্যই ভেতর থেকে আটকানো ।এই রুমে যে আশরাফ চৌধুরী আছে তারই বা নিশ্চয়তা কি?
কিছুক্ষন পায়চারি করলো মুহিত।
এরপর করিডোরে রাখা একটি বড় ফুলদানির ভেতরে পকেট থেকে বের করে মিনি ক্যামেরা সেট করে দ্রুত বের হয়ে এলো।

দৌড়ে বের হতেই মুহিত দুজন সিকিউরিটির সাথে ধাক্কা খেলো
তারা এই এরিয়াতে মুহিতকে দেখে অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো
―হোয়াটস ইউর রুম নম্বর?
―শো মি ইউর কার্ড।

মুহিত কি করবে ভাবতে লাগলো।আচমকাই নেশাক্ত মানুষের মতো হেলেদুলে অস্পট করে বলে উঠলো
―আম লুকিং ফ—-র আ ওয়াশরুম হেয়ার।
লোক গুলো মুহিতের কথা বিশ্বাস করলো কারন প্রায়ই নেশায় বুদ হয়ে মানুষ এই রেস্ট্রিক্ট্রেড এরিয়াতে ঢুকে পড়ে।
সিকিউরিটি মুহিত কে আর না ঘাটিয়ে ওয়াশরুম যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিলো।
মুহিত তাদের থ্যাঙ্কস জানিয়ে দ্রুত সরে আসলো ওই জায়গা থেকে।

বারের বাইরে বেরিয়ে মুহিত আশেপাশে দৃষ্টি বোলালো।
সন্দেহ জনক কিছুই চোখে পড়লো না।এর পর সাবধানে হোটেলের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো মুহিত।

―――――
ঘরে বসে থেকে ভালো লাগছে না আশরাফ চৌধুরীর।নিজের প্রিয় হুইস্কিও নেই সেই কক্ষে।
উশখুশ করে উঠে দাঁড়ালেন আশরাফ চৌধুরী।দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন বারের অভিমুখে।

*****
রুমে আসতেই সৌম্য আর আদ্রিয়ান চেপে ধরলো মুহিতকে।তাদের না জানিয়ে কোথায় গিয়েছিলো সে?
এখানে একা একা রিস্ক নেয়া ঠিক হবে না।কারন আগের বার আশরাফ চৌধুরী মুহিতকে বড় ধরনের ক্ষতি পৌঁছিয়ে ছিলো।
সকল কে থামিয়ে মুহিত বলে উঠলো
―জাল ফেলে এলাম যাতে সময় করে মাছ টা তুলে নিতে পারি।
এর পর হাতের ফোন বের করে ক্যামেরার অপশন ঠিক করতে স্ক্রিনে প্রদর্শিত হলো কটেজের করিডোর।

তিন জনেই স্ক্রিনের উপর হামলে পড়লো।
কীয়তক্ষন বাদেই দেখা গেলো অতিকাঙ্খিত সেই ব্যাক্তিকে।
চকচকে হলো সৌম্য আর আদ্রিয়ান এর চোখ।
কপাল কুচকালো মুহিত।
―ইটজ নট ফোর জিরো ফোর?
ইটজ ফোর জিরো জিরো!

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here