শ্রাবণধারা” পর্ব- ০৫ (নূর নাফিসা) .

0
107

“শ্রাবণধারা”
পর্ব- ০৫
(নূর নাফিসা)
.
.
সকালে ব্যাগ ভর্তি বড় একটা রুই মাছ আর টাটকা সবজি নিয়ে এলে মজিদার প্রাণ উল্লাসিত হয়ে উঠে যেন! যেখানে সে এক কেজি, দুই কেজি করে চাল সংগ্রহ করে দোকান থেকে। মেয়েটা সেখানে গত পরশু এক বস্তা চাল নিয়ে এলো ঘরে। সে এখানে থাকছে, খাবারটা ক্রমশই বেশি লাগে। কাজেই এতোদিন দুই এক কেজির পরিবর্তে পাঁচ কেজি চালের পলি টানতো। বহুদিন পর ঘরে বস্তা উঠতেই আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়েছে মজিদা। মেয়েটা বড্ড ভালো। নিত্যকার আহার ব্যবস্থা চার গুণে ভালো কাটছে তার প্রতিদিন। আজ বাজারের ব্যাগটা হাতে দিতেই আবেগ জড়ানো গলায় বলে,
“এমনেই কাজকাম পাস না, কত্ত পয়সা খরচ করতাছোস?”
“রিজিকের মালিক আল্লাহ। যতদিন সামর্থ্যে কুলাবে, প্রয়োজনে ব্যয় করতে একদম কার্পণ্য করবো না। এইযে আপনি একটু ভালো খেতে পেরে দিনরাত হাসছেন, আমার ভালো লাগছে তো।”
“এক কালে ভাবলে মনডা কয় তুই আমারই না হওয়া মাইয়া। কিন্তু আফসোস, এই রূপ আমার নাই। তাই মাইয়া কইয়া দাবি রাখতে পারি না।”
ঈষৎ হাসি জন্মে শ্রাবণের ঠোঁটে। মজিদা মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আল্লাহ তোরে বহু ট্যাকাপয়সা দেক। ভালা একটা কাজের ব্যবস্থা শীঘ্রই কইরা দেক। খালা, তুই আমারে ঘর ভাড়া দেইছ না।”
“কেন? টাকা লাগবে না আপনার?”
“না। ট্যাকা দিয়া আমি কি করমু? এইযে খাইয়া বাঁচতাছি, জীবনকালে এইডাই একমাত্র প্রয়োজন। এইটুক ছাড়া আর ট্যাকার কোনো প্রয়োজন নাই।”
“আচ্ছা, সেটা পরে দেখা যাবে। যান যান, চুলায় আগুন দিন এবার। একটু রান্নাবান্না করে গিন্নি বেশ ধারণ করি।”
“আয়, আয়।”
ছাতা গুটিয়ে পরবর্তী প্রহরটা চুলোর পাশেই কাটিয়ে দেয় শ্রাবণ। বাইরে যখন তখন ধারার গতি বেড়ে উঠে। মজিদার ঘরের কোণে আলগা চুলায় রান্নাবান্না চলে প্রাত্যহিক। একটু সুবিধা পেলেই শুকনো ডাল, পাতা কুড়িয়ে বস্তা জমা করতে ব্যস্ত হয়ে যায় মজিদা। আগুন না পেলে খাবে কি? প্রায়ই সকাল সন্ধ্যা দুই বয়সের রমনীর মধ্যে কতরকম কেচ্ছা কাহিনীর আসর জমে যায়। শ্রাবণ বেশি আগ্রহী হয় মজিদার কিশোরী কালের গল্প শুনতে। তখনকার দিনগুলো কেমন ছিলো, রীতি রেওয়াজ কেমন চলতো, কি ছিলো যা এখন নেই। এসব গল্পই তাকে টানে বেশি। নাশতা সেরেই শ্রাবণ দুয়ারে দাঁড়ায় আকাশপানে তাকিয়ে। আকাশের কি এমন দুঃখ যে দিনরাতই কাঁদতে থাকে? তা ভেবেই হাসি এলিয়ে দেয় ঠোঁটের কোণে। মনের কোণে জন্মায় আফসোস। এইযে, জমিনের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর আয় বন্ধ হয়ে আছে মেঘের অভিমানের কারণে। তার পোষণ ভরন করবে কে? তা নিয়ে একটু ভাবনায় মত্ত থেকে বৃষ্টির গতিতে মনযোগ দেয়। এইতো, ছমছম বৃষ্টির শুরু! খালাম্মাদের উঠুনের মাটি সব পুকুরে গিয়ে জমাট বাঁধতে দেখছে প্রতিনিয়ত চোখের সামনে। ওদিকে ফসলের মাঠও ডুবে যাচ্ছে কিছু কিছু। নিচু জমি গুলো নাকি তলিয়েই যায় বর্ষায়। উঁচুতে কিছু শিরদাঁড়া হয়ে থাকে চাষীদের নিঃস্ব না করে। শ্রাবণ আষাঢ়ের সাথে খেলতে নেমে যায় বিনা পরিকল্পনায়। ওড়নাটায় মাথাসহ ঢেকে মজিদা খালার দুয়ার ছেড়ে ট্যাপা পায়ে ছুটে যায় কান্তাদের বারান্দা ধরার নিমিত্তে। বারান্দায় আশ্রিত হতেই মাথায় হাত দিয়ে দেখে আষাঢ়ে গল্প কতটুকু সিক্ত করে তুলতে পেরেছে শ্রাবণের গল্পকে। অতঃপর ঘরে উঁকি দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“চাচী, কান্তা কোথায়?”
“হের ঘরেই আছে।”
শ্রাবণ ভেতরে প্রবেশ করে কান্তার রুমে যায়। উদাসিনী কান্তা জানালার কাছে হাঁটু জড়িয়ে বসে বৃষ্টি দেখছে বাইরে। মনটা বড্ড খারাপ। মনের ভারে হাসতেও জানে না শ্রাবণকে দেখে। নির্লিপ্ত চোখ জোড়া কেবল ঘুরে তাকায়।
“মেঘবালিকার মনে এতো মেঘ জমা কেন? মেঘলা দিনে ভুমিতেও মেঘের ঘনঘটা করলে বৃষ্টির অভিমান হবে না বুঝি? সে তো এসেছেই শুষ্কতায় সিক্ততা আনতে।”
“ভিজছো?”
“পুরোপুরি না। ভাবলাম তোমাকে ডেকে যাই। একা ভিজতে মজা নেই।”
“আমার ইচ্ছে করছে না ভিজতে।”
“গোসল করবে না পণ করেছো?”
“ছি! ছি! গোসল ছাড়া আমি থাকতে পারি না। কাজের যত দেরিই হোক। দুই মগ পানি হলেও মাথায় ঢেলে নেই।”
“চলো তবে। দারুণ বৃষ্টি নেমেছে বাইরে। মন ভালো হয়ে যাবে, কথা দিচ্ছি।”
মলিন মুখে হাসি ধরার বৃথা চেষ্টা করে কান্তা।
“হবে না।”
শ্রাবণ হাত টেনে বলে,
“অবশ্যই হবে। মনের মালিন্যতা সব ধুয়ে যাবে। চলো তো।”
শ্রাবণের টানকে আর উপেক্ষা করতে পারে না। তার পছন্দের একজন মানুষ শ্রাবণ। অল্পতেই মিশুক ও হাসিখুশি স্বভাবের। শ্রাবণকে অনুসরণ করে কান্তাও মাথায় ওড়না তুলে নেমে গেছে উঠুনে। রাস্তা থেকে সরাসরি উঠুন দেখা যায় না। নয়তো বোরকা ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখাও মায়ের কড়া বারণ। পরিপূর্ণ পর্দা হয়তো করতে পারে না, তবে চেষ্টায় রাখে শিরিন। শ্রাবণ তাকে টেনে নিয়ে গেলেও তাই কিছু বলেনি শিরিন। বাড়িতেই তো আছে। তারা নেমে আসতেই ঝপাঝপ বৃষ্টি সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে দিতে একদম দেরি করেনি। কান্তা যেন চিন্তামগ্ন হয়ে শ্রাবণের সাথে হাঁটছে। শ্রাবণ তা লক্ষ্য করে বলে,
“এই দেখো কি কান্ড! তুমি বৃষ্টিতে ভিজে তাকেই উপেক্ষা করে মেঘ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছো। এমন মীরজাফরি করলে চলে?”
মলিন মুখে হাসি টানে কান্তা। শ্রাবণ আরও বলে,
“এইতো মীরজাফরের মুখে হাসি। একটা কথা বলো তো আমায়।”
“কি?”
“ভাগ্যের লেখক কে?”
“আল্লাহ।”
“তবে এতো ভাবো কেন ভাগ্য নিয়ে? বিয়ে ঠিক হয়েছে বলেই তো সম্পন্ন হয়ে যায়নি। আল্লাহ চাইলে তুমি ঠেকাবারও কেউ না। আল্লাহ না চাইলে তুমি জোড়া দেওয়ারও কেউ না। ঠিক বলেছি কি?”
“হুম।”
“তবে কেন এই মন খারাপের পাত্তা দেওয়া? আরে মেয়ে, হাসতে শেখো। যা পাওয়ার, তা পেয়েও হাসার চেষ্টা করো। যা হারানোর, তা হারিয়েও হাসো। হারানোকে তোমার জন্য মঙ্গলজনক নই বলে ছেড়ে দিয়েই হাসো। দেখবে, ভালো আছো। শতভাগ ভালো।”
“তুমি এতো হাসিখুশি থাকো কিভাবে?”
“জীবন নিয়ে আফসোস করি না বলে।”
“আমারও ইচ্ছে করছে এভাবে হাসিখুশি থাকতে।”
“আগে আফসোস ছাড়ো। এবার বৃষ্টিকে ধরো। দেখি কতটুকু পারো।”
দুয়ের ফিসফিস আলাপ এখানেই শেষ হয়। এবার তাদের বৃষ্টিকে উপভোগের সময়। দুই হাতের তালু দুইদিকে আকাশমুখী করে দেয় কান্তা। তালুতে পানি জমা হলেই মন খারাপ ঠেলে দিয়ে অজান্তে হঠাৎ এক ঘুরপাক খায় উঠুনে। হঠাৎ দরজার সামনে মাকে দেখে লজ্জায় জ্বিভ কেটে ফেলে। বৃষ্টিতে নেমে নাচানাচি! শ্রাবণও খিলখিলিয়ে হেসে উঠে তার লজ্জা পাওয়া দেখে। কান্তা যে আনন্দে নাচতেও জানে, জানতো না সে। সে তো নাচতে ডেকে আনেনি। ছমছম পায়ে থৈথৈ স্রোতের বাঁধা হয়ে ভিজতে এসেছে। মেয়ে লজ্জা পাওয়ায় শিরিনও ঠোঁট কার্ণিশে হাসি এলিয়ে ভেতরে চলে যায় লজ্জা হতে মুক্তি দিতে। ঝপাঝপ বৃষ্টির শব্দে তাদের কথপোকথন তো শুনেনি কিছু, তবে মেয়ের মনটা খারাপ যাচ্ছে তা চোখে পড়েছিলো। এখন হাসতে দেখে মায়েরও মন জুড়িয়েছে যেন। চলে গেছে সংকোচহীন বৃষ্টি বিলাসের সুযোগ দিয়ে। কিন্তু কান্তা আর দ্বিতীয়বার ঘুরেনি। ক্ষণে ক্ষণেই হাসি পাচ্ছে তারও। কি করলো সে? হঠাৎ বাড়ির প্রবেশদ্বারে ছাতা নজরে পড়তেই আবার হাসির বেগ কমে এলো। বাড়িতে বাইরের মানুষ এসে গেছে, ভেজার সময় শেষ তার। দৌড়ে চলে যায় ঘরে। শ্রাবণও দেখতে পেয়েছে ছাতা মাথায় বিপুকে। তবে দৌড়ে যায়নি। দুই কদম এগিয়েছে বরং। এর বেশি যায়নি, বিপুই এগিয়েছে বলে। বিপু আজ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেছে। উঠুনের দুই ঘরের মাঝামাঝি অব্দি আসেনি যদিও। তবুও ঘন বৃষ্টিতে তাকে মুচকি হেসে এগোতে দেখে একটু বিস্ময় খেলেছে শ্রাবণের চোখেমুখে। মনে পড়ে গতকালের প্রস্তাব পত্রের কথা। বিপুর হাতে পলিথিন মোড়ানো কিছু আছে। সে এগিয়ে মৃদু গলায় শ্রাবণের উদ্দেশ্যে বলে,
“আপনাকে এই বৃষ্টির মধ্যে পেয়ে যাবো, ভাবিনি। খুব মজা করছিলেন বুঝি?”
“অবশ্যই। কিন্তু আপনি পাগল হলেন কেন এতো বৃষ্টিতে বের হওয়ার?”
“নতুন নতুন প্রেমে পড়লে মানুষ অকারণেই পাগল হয়ে যায়।”
“তাই?”
“হ্যাঁ। এটা রাখুন।”
হাতের মোড়ানো পলিটা এগিয়ে দেয় বিপু।
“কি এটা।”
“আপনার জন্য সামান্য কিছু।”
“সামান্য কিছু কেন? আমি মানুষটা কি এতোই সামান্য?”
“আহ! ধরুন তো। শুরুতে সামান্যই হয় সব। আর আপনি মানুষটা অসামান্যই। ধরুন। বৃষ্টি আমায় ভিজিয়ে দিচ্ছে পুরো।”
শ্রাবণ হাতে নিতেই বিপু অতিরিক্ত কিছু না বলে চলে যেতে ধরে। প্যাকেটটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে শ্রাবণ বাড়ির প্রবেশদ্বারে তাকায়। মুখ টিপে হেসে বিপুকে পিছু ডাকে,
“আতা গাছের তোতা পাখি, এদিকে আসেন।”
বিপু ফিরে আবার এগোয় তার দিকে।
“আপনি এটা কি বললেন?”
“আপনার নাম।”
“এটা আমার নাম না।”
“কিন্তু আমার এটাই ডাকতে ভালো লাগলো। যাইহোক। আপনার চকলেট, ফুল, আর কোক আপনার কাছেই রাখুন। আর আমাকে এর সমমূল্যের অর্থ প্রদান করুন।”
প্যাকেটটা পুনরায় বিপুর হাতে ধরিয়ে দেয় শ্রাবণ। বিপু নিজের হাতে তাকিয়ে থেকে বিস্মিত হয়।
“মানে?”
“মানে হচ্ছে, এইগুলোর পেছনে যা খরচ করেছেন তত টাকা আপনি আমাকে দিয়ে যেতে পারেন।”
“আশ্চর্য! টাকা কেন দিবো? আপনি কি টাকার জন্য প্রেম করবেন?”
“আপনি তবে আমাকে ফুল, চকলেট এগুলো দিচ্ছেন কেন? আমি কি চকলেটের জন্য প্রেম করবো?”
“ফুল চকলেটের সাথে টাকার তুলনা কি? এগুলো তো শখ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু উপহার, মন ভালো করার ওষুধ।”
“এই ওষুধে আমার কাজ নেই তো। চকলেট খেলে দাত নষ্ট। ফুল নিলে কালকেই ফেলে দিতে হবে। এই কোকেও আমার মন পড়ে নেই। সবই অহেতুক মনে হচ্ছে৷ তাই টাকা দিলে দেন। টাকাই আমার মন ভালো করার ওষুধ।”
“মহা মুশকিল তো! আমি টাকা আনিনি কোনো।”
“টাকা ছাড়াই প্রেম করতে এসেছেন? প্রেমিকা এখন এই বৃষ্টি বাদলায় বাদাম খাওয়ার আবদার করলে আপনি কোথায় যাবেন? যান, এগুলো যেখানে থেকে কিনেছেন৷ সেখানে ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে আসুন। আমি আপনার জন্য আরেকটু দাড়াচ্ছি এখানে।”
“ধুর! আপনার প্রেম করতে হবে না। লোভী মেয়ে একটা।”
“আমি যদি লোভী হয়ে থাকি, তবে আপনি ছ্যাচড়া। প্রেম কেন করতে আসেন?”
তার আচরণের ক্রমশই বিরক্ত একটা ভাব ফুটাতে চেয়েছে বিপু। তবুও যেন হাসি এসে যেতে চায়। আর কোনো কথা না বাড়িয়ে কপালে সামান্য বিরক্তির ভাব ধরে রাখতে চেষ্টা করে চলে যায় সে। শ্রাবণ মুখে ট্যাপা হাসি বিদ্যমান রেখে দাঁড়িয়েই থাকে। বৃষ্টিতে ভিজে। চোখ বুজে আকাশমুখী হয়ে থাকে। কপালে শিলার মতো আছড়ে পড়ে বৃষ্টির ফোঁটা। অবিরত গড়িয়ে ভিজিয়ে দেয় সর্বাঙ্গ। বৃষ্টি তার বড়ই উপভোগ্য। কাগজের নৌকা হয়ে বৃষ্টিস্রোতে ভেসে যাওয়ার মতোই উপভোগ্য। দূর হতে এক জোড়া চোখে প্রেমের বর্ষন চলে এই বর্ষাকালে। শ্রাবণ আসার আগেই শ্রাবণ ধারা চলছে তার হৃদয়পুরে। মোহিত হয়ে উঠতে উঠতে ছাতার গন্ডি হতে বেরিয়ে এসেছে এবার সে-ও৷ একই প্রহরের বাদলা, তাকেও ভিজিয়ে তুলেছে নিমেষে। বিপু আবার এগিয়ে আসে ভিজতে ভিজতে। ঠোঁটের কার্ণিশে হাসি। মুখে চাপা এক টুকরো চকলেট। সামনে কারো উপস্থিতি আন্দাজ করতেই উপভোগের মুহুর্ত হতে বেরিয়ে আসে শ্রাবণ। চোখ খুলে এবার ভেজা বিপুকে সামনে পায়। মাথার উপর কিংবা হাতে ছাতার উপস্থিতি নেই। ভিজে একাকার।
“এ কি! ছাতা কোথায় গেলো? আপনি দেখি ভেজা কাক হয়ে গেছেন।”
“আপনিও তা-ই হয়েছেন।”
“না তো। আমি ভিজতে নেমেছি। আর আপনি ভিজে গেছেন। তাই আপনি ভেজা কাক।”
“আমিও ভেজার জন্যই ছাতা ফেলে দিয়েছি। ধরুন।”
মুঠোয় চাপা টাকা হস্তান্তর করে শ্রাবণের ভেজা হাতে।
“চলবে?”
“কত দিয়েছেন, আমি কিন্তু দেখিনি। তবুও বলছি, চলবে।”
টাকা মুঠোয় চাপা রেখে মুখ চেপে হাসে শ্রাবণ। বিপুও হাসে। জিজ্ঞেস করে,
“টাকা দিয়ে কি করবেন আপনি?”
“সংসার করবো।”
“সংসার কর্তাই তো তখন সংসারের টাকা দিবে।”
“মেয়েদের হাতে গোপনে কিছু সঞ্চয় রাখতে হয় না? তাই আগেভাগেই জমা করছি।”
“বেশ ভালো। এগুলোও রাখুন। আপনি না খেলে আপনার বোনকে দিবেন। সে আর দাত নষ্ট হওয়ার ভয় করবে না। মাঝে মাঝে উপকারে এগিয়ে আসবে কিছু দিলে।”
“ঠিক আছে। ধন্যবাদ। আবার আসবেন।”
“এলেই কি? বসতেও তো বলেন না।”
“যেদিন এই বাড়ির মেহমান হবেন, সেদিন বসতে বলবো। প্রেম বসে থেকে হয় না। প্রেম হয় লুকোচুরিতে। দৌড়ের উপর থেকে। প্রেমে ভয় করতে হয়। কেউ দেখে ফেলার ভয়। আমারও এখন ভয় করছে। চললাম আমি।”
ফিসফিসিয়ে কথা বলে ঘরের দিকে ছুটে যায় শ্রাবণ। ঠিক শুনতে না পেলেও, কাদায় খালি পায়ে বৃষ্টি স্রোতে তার ছুটে যাওয়ার শব্দ যেন চোখের আলোয় দূর হতেই শোনা যায়। হৃদয়ে কলতান জমা হয়। যেন মনে করতে চাইলেই প্রাণভরে শোনা যাবে। বিপুও ভেজা শরীর হতে শার্ট খুলতে খুলতে রাস্তা ধরে মাঠে যাওয়ার নিমিত্তে। বৃষ্টিতে ভিজেছে যখন, ফুটবল না খেললেই নয়। আজ অন্যরকম খুশি সে। অন্যর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভীষণ রকম খুশি। এই খুশির সূত্র ধরেই সর্বোচ্চ খুশি হওয়া পর্যন্ত যেন ছুটে যাওয়া হয়, এই প্রত্যাশা বিপুর মনে। প্রেম হোক তবে, গোপনে গোপনে।
দুই হাতে দুই ছাতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ইফতেখার দিপু। পারভীন ছেলের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে উঠুন পার হওয়া অব্দি। বারান্দায় পা রাখতেই শুধায়,
“দুই হাতে দুই ছাতা নিয়া ভিজে আসার মানে কি?”
“হঠাৎ ভিজতে ইচ্ছে হলো, এ-ই হলো ভেজার রহস্য। আর আসার সময় এই ছাতাটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিপু মাঠে চলে গেলো। এটা দুই ছাতার রহস্য।”
“ভালোই তো। ঘরে ফিরে ফিরে একেকজন আদা চা খাবি। বাইরে গিয়ে ধেইধেই নাচবি আর রহস্য নিয়ে হাজির হবি। জ্বর হইলে মাথায় পানি ঢালতে আমারে ডাকবি না, বলে দিলাম।”
“ঠিক আছে। পরের বার পরীকেই ডেকে নিবো।”
“পরীকে ডাকাও বারন।”
“পানিভর্তি বালতি নিয়ে দিলেই হবে। নিজের মাথায় নিজেই ঢালতে পারবো।”

পর্ব- ০৪
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=882183920179050&id=100051623503405&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here