শ্রাবণধারা” পর্ব- ০৬ (নূর নাফিসা) .

0
107

“শ্রাবণধারা”
পর্ব- ০৬
(নূর নাফিসা)
.
.
বিকেলে বৃষ্টি কমলে বারান্দায় আসে অর্পা। মাত্রই শিক্ষক পড়ার ছুটি দিয়ে বেরিয়েছে। ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো তাই সেও একটু হাওয়া লাগাতে এসেছে চোখেমুখে। এই ঘরের সামনের দিকের দুই প্রান্তে দুইটা মাঝারি আকৃতির গোলাপ গাছ। বেশ কিছু কলি থাকলেও গতকাল একটা ফুল ফুটতে দেখেছিলো। সকালেও দেখে গেছে আরেকটু বড় হয়েছে। এখন বিকেলে এসে পরিপূর্ণ দেখার ইচ্ছেটাই সে করছিলো৷ কিন্তু পরিশূন্য যে দেখতে হবে, তা ভাবেনি। আকস্মিক একটা চিৎকার করে উঠে, “আম্মু…”
পারভীন ছুটে আসে মেয়ে বুঝি পিছলে পড়েছে! পরীও খেতে বসেছিলো। চিৎকারে দৌড়ে এঁটো হাতে ছুটে আসে, চেয়ারম্যান কাকার দুলালী বুঝি কাদামাক্ত হয়েছে! কিন্তু তাকে ফেনা তুলে পরিচ্ছন্ন বেশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুয়ের উদ্দেশ্যই বৃথা। ইফতেখার ঘুমিয়েছিলো। চিৎকারে তার ঘুমটাও ভেঙেছে। মা মেয়ের চেচামেচি শুনে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় সেও।
“আমার ফুল কই?”
“কিসের ফুল?”
“আমি কালকেও দেখছি গাছে ফুল ফুটেছে। আজকে সকালেও দেখছি। আর এখন নেই।”
“নাই, তা আমি ক্যামনে বলি? আমি কি তোর ফুল খাই? বেদ্দপের বাচ্চা! অযথা চিল্লায়।”
“হু, অযথাই চিল্লাই। তুমি বুঝবা কি? গাছ তো তুমি লাগাওনি। আমার একটা মাত্র ফুল!”
কান্নাভঙ্গি ঠাঁই পায় অর্পার মুখে।
“গাছ লাগাইছোস যখন, কোলে নিয়ে বইসা থাক। ফুল ধরবো না কেউ। আমার সামনে এই ঢং করিস না। তোর বাপের সামনেই করিস।”
“আব্বু তো নেই এখন।”
“আইলেই করিস। ফাজিল কোথাকার!”
হনহনিয়ে ভেতরে চলে যায় পারভীন। শরীরে ঝাঝ কমে না অর্পার। বিরক্ত হয় মায়ের প্রতি। ক্রুদ্ধ চোখে তাকায় পরীর দিকে। পরী তাকে এভাবে তাকাতে দেখে বলে,
“আমার দিকে তাকান ক্যা এম্নে? আমি কি করছি?”
“তুই ছাড়া এই বাড়িতে আর কেউ ফুল ছেঁড়ার লোক নেই। নির্ঘাত তুই চুরি করছিস!”
“আল্লাহ! কি কয়গো! আমি ফুল ছিঁড়তে যামু ক্যা? আমি কি ফুল খাই নাকি?”
“তুই ফুল খাস না। খোপায় দেস। বিনুনিতে গাঁথস। কানের কাছে একটা ফুল দেওয়ার জন্য সারাদিন আমার কাছে, আম্মুর কাছে অনুমতি চাইতে থাকস।”
“তাইলে আপনেই কন, অনুমতি ছাড়া আমি ক্যামনে ফুল ছিঁড়মু? তা-ও আবার আপনের একমাত্র ফুল!”
“অনুমতি পাবি না বলেই চুপিচুপি ছিঁড়ে সারছিস।”
“আল্লাহ! এমন অপবাদ দিলে গজব পড়বো কইলাম। গজব। আমি ফুল তো দূর, একটা পাতা পর্যন্ত ছুইয়্যা দেহি না আজ কত্তদিন! আইছে অপবাদ দিতে!”
ঠমক নেড়ে পরীও চলে যায় ঘরে। তার ঠমকানো গলায় অর্পার সন্দেহ হয় তবে পরী ছিঁড়েনি। তবে কার এমন বদ নজর পড়লো তার গাছটার উপর! এই বাড়িতে ফুল নিয়ে খেলার লোক তো আর নেই। কোনো বাচ্চাও আসেনি। তবে আরেকটু গভীরে সন্দেহ ফেলতে গেলে আরেকজনের উপর কিছুটা অনিশ্চিত সন্দেহ আনতে পারে। অর্পা ফুসতে থাকা গলায় স্বগতোক্তি করে,
“বিপু ভাই ছিঁড়ছে তবে। আসুক না আজ বাড়ি!”
ইফতেখার ক্রমশই বোনের উপর বিরক্ত হয় একটা ফুলের জন্য হাউকাউ শুরু করায়। ফুল তো নয়, যেন কলিজা ছিঁড়ে নিয়ে গেছে কেউ। যার কলিজা ছিঁড়ে বদলা নেওয়া পর্যন্ত শান্তি হবে না তার। সে পুনরায় এসে বিছানায় পড়ে উপুড় হয়ে। মায়ের হাড়ি পাতিলের ঠকঠক শব্দও ঘুম কেড়ে নিচ্ছে এবার। উঠেই যেতে হবে তবে। তবুও অলসতার ভারে একটু শুয়ে থাকা।
সন্ধ্যায় বিপু বাড়ি ফিরতেই পরীর সাথে বারান্দায় দেখা। কাপড়চোপড় গুটিয়ে নিচ্ছে সে।
“ভাইজান, আইছেন?”
“কেন?”
“খাইয়া দাইয়া তাত্তাড়ি ঘুমায় থাকেন কাকায় ফেরার আগে আগে। নইলে কপালে শনি আছে।”
“শনি মানে?”
“আপনে আপার গাছের ফুল ছিঁড়ছেন না? ফুইল্লা রইছে বেডি। কাকায় আইলেই তো বিচার দিয়ে সারবো। বাপের সামনে যেই কান্দা কান্দে আমাগো কলি আপায়।”
“হোপ! আমি ফুল ছিঁড়তে যাবো কেন অযথা!”
“আল্লাহ! কয় কি! তাইলে কি ভুত আইছে বাড়িত!”
ভ্রু কুচকে ধমক দিয়ে চলে যায় বিপু। পরীর স্বগতোক্তিতে কান দেয় না। সে ভুলেই গিয়েছিলো ফুলের কথা। তবে ঘরে যেতে যেতে মনে পড়ে গেছে। আরে, ফুল তো সে-ই ছিঁড়ে নিয়েছিলো! ঘুরাফেরায় মেতে আর খেয়ালই ছিলো না। তাই আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে যায় অর্পার মুখোমুখি হওয়ার। এবং নিজেই এগিয়ে যায় অর্পার ঘরে,
“হয়েছে কি অর্পা, আমি…”
কথা শেষ করতে দেয় না বিপুকে। অর্পা আবার গলা উঁচু করেছে তাকে দেখতেই।
“আমার গাছের ফুল ছিঁড়ছো কেন?”
“আরে কথা শুন আগে। ফুলের গল্প বলে যেতে ভুলে গেছি তোকে।”
“আমি কোনো গল্প শুনবো না। আমার ফুল চাই। গাছে ফোটা ফুল।”
পাশের রুম হতে তার উঁচু গলা শুনে ইফতেখার ধমক দেয়,
“অর্পা, সামান্য বিষয়ে বাড়াবাড়ি করছো কিন্তু!”
এদিকে বিপু ব্যস্ত গল্প বলতে থাকে,
“ওই ফুলটায় ইয়া বড় এক বিছু ছিলো, জানিস? আমি তো জানি অর্পা গিয়ে ফুল ছুঁয়ে দেখে বারবার। যদি হঠাৎ বিছুতে হাত দিয়ে দিস! বিছু একটা কামড়ও দিয়ে ফেললো! কি ভয়ংকর ব্যাপার! বিছুটা বংশ বিস্তার করলেও তো তোর প্রত্যেক ফুলেই বাসা বাঁধবে। তাই ছিঁড়ে ফেলে দিছি।”
“কিহ! গাছে বিছু এলো কোত্থেকে!”
“তবে কি আকাশে থাকার কথা? বিছু তো গাছেই থাকে বলদি। লাল লাল, কালো কালো ডোরাকাটা শিং ওয়ালা বিছু।”
শুনতেই কেমন গায়ের লোম দাঁড়িয়ে উঠে অর্পার। গা শিরশির অনুভূতিতে দুহাত নেড়ে থামতে বলে বিপুকে। আর শুনবে না সে।
“ওফ্ফ! চুপ করো। চুপ করো।”
“ফুলের জন্য মন খারাপ করিস না। অনেকগুলো কলি দেখছি আমি। কাল নাহয় পরশুই ফুটে যাবে আবার।”
“যেই গাছে বিছু থাকে। ওই গাছই রাখবো না আমি। কালকেই উঠিয়ে ফেলতে বলবো বকুল কাকাকে।”
“আরে না। বিছু তো একটাই দেখেছি। কোথাও হতে এসেছিলো হয়তো। আরও দেখলে, পরে কাটিস।”
পরবর্তী দিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতেই দুপুরে বেরিয়েছিলো শ্রাবণ। কাদায় বারবার হাটাহাটি করে পায়ের জুতোটা ছিঁড়ে গেছে। কান্তার কাছ থেকে এক জোড়া পরে এসেছে নিজের জন্য জুতো কিনে নিয়ে যেতে। টানা বর্ষনে রাস্তার বালি সরে গেছে ইটের তলা হতে। কোথাও কোথাও ইটও নেমে গেছে আষাঢ়ে ঢলে। পুনরায় ঠিক করা হচ্ছে। শ্রাবণ বাজার ছুঁতেই হঠাৎ চেচামেচি শুনতে পায় রাস্তার বিপরীত পাশে বাজারের মাঝামাঝি। সেদিকে তাকিয়ে বিপুকে দেখতে পায় সে। কেমন চোখ বড় করে ক্রুদ্ধ গলায় শাসিয়ে ফরমায়েশ করছে তারই সমপ্রায় বয়সের এক ছেলেকে। ছেলেটা বলছে, সে করবে না। কি উল্টানোর উল্টাক! তাতেই যেন এমন রগরগে হয়ে যাওয়া পরিবেশ। বিপু বিঘ্ন মেজাজে যাচ্ছে তাকে প্রহার করতে। অন্যান্য দুচারজন থামানোর চেষ্টায় মত্ত। এই বিপুকে একদম ভালো লাগলো না শ্রাবণের কাছে। তার সম্মুখে আগেরবার উপস্থিত থাকা ছেলেটা ভালো ছিলো। আর এটা, খালাম্মার মুখে শোনা হাঙ্গামা তৈরির লোক। কি দরকার অল্পতে এমন উত্তেজিত হয়ে পড়া? যে কাজটা সেই লোক করছে না, সেটা অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেক। যদিও অপরিচিত লোকটার প্রতিও সে বিরক্ত। কেমন খেমটা মেজাজে ঘাউড়ামি করে যাচ্ছে। এই যে, চেয়ারম্যানের ছেলেপুলেরা যদি তাকে একত্রে ধরে। সে কি ছুটতে পারবে? উভয় পক্ষের অবস্থাই ভেজালযুক্ত। পাশের লোকেরা তাকে তাড়িয়ে দিতেই বিপু শান্ত হতে থাকে। কত বড় স্পর্ধা, তা-ই মাপে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। বাজারের পরিস্থিতি রগরগে হতেও সময় নেয় না, আবার ঘটনা যা ঘটার হুটহাট ঘটে কিছুক্ষণের মধ্যেই শান্ত হয়ে উঠে। বিপুর ব্যাপারটা অপছন্দনীয় হওয়ায় শ্রাবণ ভ্রু মাঝে সুক্ষ্ম ভাজ ফেলে পুনরায় হাঁটতে থাকে গন্তব্যের পথে। দামে কম, মানে ভালো জুতা খোঁজে দোকানে চোখ বুলিয়ে। ঘরে বাইরে সবসময় ব্যবহার করার মতো জুতা কিনতে হবে তার। যা বৃষ্টি! পানির ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত খরচাও যেন না যায়। দুই দোকান ঘুরে পছন্দসই এক জোড়া জুতা কিনে পায়ে দেয় শ্রাবণ। কান্তার জুতাটা তুলে রাখে নতুন জুতার ব্যাগে। পরক্ষণেই হাঁটতে থাকে একাকী পথে। ইচ্ছে হয় বালির চড়ে হেঁটে আসতে। কেমন হয়, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে নিজেকে বিলিয়ে দিলে? বালির মাঠে পা দিতেই মাথা হতে ছাতাটা সরিয়ে নেয় শ্রাবণ। গুটিয়ে রাখে হাতের মুঠোয়। বাতাসের ধাক্কায় মুখে এসে বিন্দু বিন্দু জমা হচ্ছে। বড্ড ভালো লাগছে শ্রাবণের। মন শীতল করা অনুভূতি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটায় মাথা ভিজবে না ঠিক, তবে মাথার উপর ওড়নাটা ভিজে যাবে নিশ্চিত। শ্রাবণ আজও এসে কাশবনের ধারে দাঁড়িয়েছে। যদিও নিচের কাশবন এসে তাকে ছুঁতে পারেনি। তবুও তাদের হেলেদুলে উঠা পরশ তার মন ছুঁয়ে নিয়েছে। মাথায় তাদের শুভ্র মেঘের অপেক্ষা। অপেক্ষা এক শুভ্র শরৎতের। বেশি ভিজে যাচ্ছে মনে হতেই পুনরায় মাথায় ছাতা তোলে শ্রাবণ। ফেরার পথে হঠাৎ সামনে উদয় হয় বিপু।
“নদী দেখছিলেন?”
“জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখছিলাম।”
“নদীর মতো আপনার জীবন?”
“শুধু আমার কেন? আপনার নয় কি?”
“কি জানি! হয়তো বা হ্যাঁ। নয়তোবা না।”
“পড়াশোনা করেন না আপনি? নাকি শেষ?”
“শেষ হওয়ার আগেই শেষ।”
“কতটুকু?”
“ডিগ্রি পাশ করছি কোনোমত ঠেলে ধাক্কিয়ে।”
“কম আর কি? যথেষ্ট হয়েছে।”
“এইটুকুও করতাম না। মা বলতো, পড়লে পড়। আজকাল পড়াশোনা না করলে নাকি বউ পাওয়া যায় না। সবদিকে শিক্ষিতের ছড়াছড়ি।”
ঈষৎ হাসে শ্রাবণ।
“মন্দ বলেননি তিনি। আসলেই তাই। হয়তোবা গ্রামে একটু কম৷ শহরে প্রচুর ছড়াছড়ি।”
“আপনি কোথায় পড়েছেন?”
“শহরে।”
“পড়া শেষ?”
“যতটুকু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।”
“আপনাদের বাসা কোথায়?”
“আমার কোনো বাসাবাড়ি নেই।”
“বড় হয়েছেন কোথায়?”
“নানা বাড়িতে। শহরেই নানা ভাড়া থাকতো।”
“আপনার বাবা মা কবে থেকে নেই?”
“ওসব নিয়ে ভাবতে গেলে আমার মন বড্ড খারাপ হয়ে যায়। অতীত জীবন অপছন্দের। আমার বর্তমান পরিচয় আমিই। এরবেশি আর না বলি। মন খারাপ রাখা আমার একদম ভালো লাগে না।”
“স্যরি।”
“আপনি এই যে আমার সাথে কথা বলছেন, কি নম্র ভদ্র শান্ত প্রশান্ত একটা ছেলে মনে হচ্ছে। অথচ একটু আগে বাজারে দেখলাম, কি নিয়ে একটু ঘাড়ামো করছিলো একজন। ক্ষেপে যাচ্ছিলেন তাকে মারতে। কি বিশ্রী লাগছিলো তখন আপনাকে, জানেন? ওই রূপটা তো ভালো দেখায় না।”
“মেজাজ সবারই কম বেশি গরম হয়। আর তা কারণবশতই হয়। আপনার হয় না?”
“হলেও কিছু মানুষ হাসিতে মেজাজকে হার মানাতে জানে। কেউবা নিরবে ঠান্ডা হতে জানে। অতি তীক্ষ্ণতাও সবর করতে জানে কেউ। আর তারাই মহান হয়।”
“হয়তো বা।”
“আপনার ধৈর্য্য শক্তি একদম কম। এমন হলে জীবনে সৌন্দর্যের চেয়ে বিপদজনক পরিবেশই বেশি দেখবেন। উত্তেজিত হয়ে পড়া মানুষের কাছে সুখ কম আসে। অভ্যাস বাদ দেন।”
“সবসময় হয় না সবকিছু। তবুও চেষ্টা করবো। এখন শীঘ্রই আমায় জবাব দেন।”
“কিসের জবাব?”
“ভুলে গেছেন? প্রস্তাবিত পত্রের জবাব। একদম এড়ানোর চেষ্টা করবেন না। তাড়াতাড়ি দিন।”
“এইযে, দেখেন৷ আপনার মধ্যে বদভ্যাস বাদ দেওয়ার চেষ্টাটুকুও নেই৷ জবাব পাওয়ার ধৈর্য্যও হারিয়ে বসেছেন। দেখেছেন?”
“আপনি অনেক প্যাচি একটা মানুষ।”
“প্যাচি আবার কি?”
“এই যে, কথা প্যাচাতে থাকেন।”
“ও, আচ্ছা। কথার প্যাচওয়ালী।”
“হ্যাঁ, তাই। আমায় কি জবাবহীন তাড়িয়ে দিবেন?”
“একদম না।”
একটু থামে শ্রাবণ। পরক্ষণে বলতে থাকে,
“আসলে আমি খুব ভেবে দেখলাম, এসব প্রেম টেম কিছুই না।”
“শুরুতেই যদি কিছুই না ভেবে ছুড়ে ফেলেন, তবে কিছুটা হবে কিভাবে?”
“না, না। ঠিক তা না। প্রেম অবশ্যই অতি সম্মানের একটা বিষয় যা সম্মানিত কোনো ব্যক্তির পাওয়া উচিত, সম্মানিত কোনো সম্পর্কেই হওয়া উচিত। দু চার দিন প্রেমে জড়িয়ে থাকলাম, এরপর ভালো লাগছে না তাই ব্রেকাপ করে শেষ করে দিলাম। ভালো লাগলো তো আরেকটু মায়া বাড়ালাম। ভালো লাগছে না তাই পুনরায় ব্রেকাপ টেনে আনলাম। ভেবে দেখলাম, এই জীবনটা না আসলে সম্পূর্ণই অহেতুক। অহেতুক সময় নষ্ট, অহেতুক মায়া জড়ানো, অহেতুক গুরুত্ব দেওয়া। যার কোনো ভিত্তিই নেই।”
“তার মানে আপনি চাইছেন না প্রেম করতে।”
“অবশ্যই করবো। তবে ভিত্তিমূলক সম্পর্কে। বিয়ের পর বরের সাথে। যেখানে কোনো সংশয় আর অনিশ্চয়তার উপস্থিতি থাকবে না। এই অহেতুকি প্রেম আমায় দিয়ে হবে না।”
“ধুর! বিয়ের পর তো সংসারের মজা। প্রেমের মজা যত বিয়ের আগেই।”
“সেটাও অহেতুকি।”
“একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে না জেনে বিয়েই করবে কেন? প্রেমে জড়িয়ে থাকলেই না একে অপরকে জানবে, বুঝবে, তারপর সিদ্ধান্ত নিবে একটা মজবুত বন্ধনের।”
“আরে, এইখানেই তো আসল মজা। দুজন অপরিচিত মানুষের মধ্যে আকস্মিক একটা বন্ধন। অদ্ভুত একটা পরিচয়। একটা পবিত্রতা। ধীরে ধীরে একে অপরকে জানা। নিজেদের জন্যই জানা। নিজেদের মতো সংসার গুছিয়ে নেওয়া। দুষ্ট মিষ্টি গল্প তৈরি করা৷ তৃতীয় ব্যক্তির চোখে পড়ার ভয় নেই, কটুক্তির কারণ নেই। পছন্দটা শুরু থেকেই মজবুতভাবে গড়ে তোলা। চাইলেই ছুঁতে পারা, কাছ থেকে একে অপরকে চোখে চোখে রাখা। এরচেয়ে সুন্দর কিছু হয়? ওই দূর হতে মাথার উপর বালিশ চেপে ফোনে হাই, হ্যালো করা। দীর্ঘদিন অন্তর দেখা করা। তা-ও লোকভয় নিয়ে! ওফ্ফ! না না। আমার দ্বারা তা হবে না। জীবন আমার বড় হিসেব করে চলে। আমার প্রেমটুকু আমি একান্তই আমার মানুষটার জন্য তুলে রাখবো। অহেতুক সময় নষ্ট করতে ক্ষণস্থায়ী মায়ায় নিজেকে একদম জড়াবো না।”
গলায় হতাশা চেপে বিপু বললো,
“মিথ্যে আশা দিলেন?”
“আমি তো সম্মতিই দেইনি। মিথ্যে আশা কিভাবে দিলাম?”
“না, মানে আমার আশাটা মিথ্যে হয়ে গেলো আরকি।”
“আপনার জন্য সমবেদনা। কিন্তু আমার ডিসিশন ফাইনাল।”
“আরে ভাই, প্রেম দু চারদিনের জন্য কেন করবেন? প্রেম তো বিয়ের জন্যই করবেন।”
“এরপর বিয়েটা কোনো কারণে না হলে? মানসিকভাবে আমি তীব্র আঘাত পেলে? আমার হয়ে তখন গলায় ফাঁস দিবে কে? আপনি?”
ভাবুক ভঙ্গিতে মাথা চুলকায় বিপু। যেখানে নিজের খুঁটিই পোক্ত নয়, সেখানে তাকে আশ্বাস দিবে কি করে? হতাশাগ্রস্ত হয়ে পায়ের গতি ধীর করে ফেলে। শ্রাবণ স্বাভাবিক গতি বজায় রেখেই নিজের পথ ধরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here