“শ্রাবণধারা”
পর্ব-১৮
(নূর নাফিসা)
.
.
আরও কিছুক্ষণ কেটে যায় অপেক্ষায়। সূর্য ডুবুডুবু প্রায়। মাগরিবের সময়ও ঘনিয়ে আসছে। ঠিক এমন সময়ই ক্লান্ত শ্রাবণের ছায়াও চেয়ারম্যান বাড়িতে পড়েছে।
“আপনে আইছেন? আমি তো ভাবছি, হারাইয়াই গেছেন। ছোট ভাইজানরে মসজিদে পাঠায় দিছিলাম, মাইকিং করতে।”
শ্রাবণ বিস্মিত হয়।
“মানে!”
“হো, আপনারে পাইতাছিলাম না। তাই পাঠাইছিলাম বিজ্ঞপ্তি দিতে। একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি… ”
অভিনয় ভঙ্গিতে কণ্ঠে সুর তোলে পরী। বিপু বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে তার বিপরীতে বিরক্তিসহিত জিজ্ঞেস করে,
“আমি কখন মসজিদে গেছি?”
বিপু শুনে ফেলেছে বুঝতে পেরে জ্বিভ কেটে শ্রাবণের পিছু লুকায় পরী। পরক্ষণে বিপুর প্রত্যুত্তর করে,
“না, মানে আমি তো আপনারে যাইতে কইছিলাম। ওইটাই জানাইতাছি ভাবিরে।”
“আমি কি গেছিলাম?”
“না।”
“আগ বাড়ানো কথা বলবি, চাপায় চড় খাবি।”
শ্রাবণও কিঞ্চিৎ বিরক্তিতে তাকায় পরীর দিকে।
“তুমি যা করো না!”
ঠোঁট উল্টিয়ে বোকা বনে দাঁড়িয়ে থাকে পরী। শ্রাবণ ঘরে চলে যায়। ব্যাগটা কাঁধ থেকে রেখে বেরিয়ে আসে। হাতমুখ ধুয়। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, তাই কাপড়চোপড়গুলোও ঘরে নিয়ে যায়। পারভীন তাকে দেখেছে, কিন্তু বলেনি কিছুই। মুখটা দেখেই শ্রাবণের সন্দেহ হচ্ছে রেগে আছেন বুঝি তার উপর। তাদের দুই ভাইয়ের কাপড়চোপড় তাদের ঘরে দিতে গিয়েই দেখা পায় ইফতেখারের। খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। নিশ্চুপ থমথমে দৃষ্টিতে দেখছে শ্রাবণকেও। কাপড়চোপড় রেখে কাছে এসে দাঁড়ায় শ্রাবণ। কপালে হাত ছুঁয়ে দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করে,
“আপনার জ্বর কমেছে?”
গায়ের তাপমাত্রা স্বাভাবিক। ইফতেখারের মুখেও নেই জবাব। তবে পাল্টা প্রশ্ন ছুটে আসে তার দিকে।
“কোথায় গিয়েছিলে?”
“ইন্সটিটিউটে গেলাম। ফি পরিশোধ করে এলাম। আপনাকে বললাম না গতকালই?”
“আজ যে যাবে, তা কি বলেছো?”
“আমিও জানতাম না আজই যে যাবো। ঘুম থেকে উঠে দেখলাম আবহাওয়া ভালো। তাই হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম।”
“আমি বলেছিলাম, তোমাকে নিয়ে যাবো।”
শ্রাবণ একবার তার শান্ত অথচ গম্ভীর চোখদুটোতে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি নামিয়ে আনে। নরম গলায় জবাব দেয়,
“আপনি অসুস্থ, তাই একাই গেলাম। ভোরে জানিয়ে যেতেও ইচ্ছে হলো না তাই। ভাবছিলাম অসুস্থ শরীর নিয়েই না আবার যেতে চান।”
“মাকে বলে যেতে পারতে।”
“আম্মা নামাজে দাঁড়িয়েছিলো। সকাল সকাল না গেলে জ্যামে পড়তে হবে। তাই অপেক্ষা না করে তাড়াহুড়ো করে চলে গেছি।”
বিরক্তি নিংড়ে ফেলা একটা নিশ্বাস ভাসতে শোনা যায় ইফতেখারের। মুখে কোনো বাক্য জাগায় না আর। শ্রাবণও নীরব। যেন ওই মুখের প্রশ্ন পাওয়ারই অপেক্ষা আর সে তার জবাব দিতে প্রস্তুত। অথচ প্রশ্নকর্তা নীরবই। কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে আবার চোখ তুলে তাকায় ইফতেখারের চোখে। ইফতেখার তার কান্ড দেখে ঠোঁট কার্ণিশে হাসি জাগিয়ে তোলে। হেলান ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে। তার কার্ণিশ রাঙানো হাসি শ্রাবণের মুখেও হাসি এনে দেয়। মাগরিবের আজান পড়ছে। তাই নামাজের জন্য বের হবে ইফতেখার। শ্রাবণের কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বলে,
“মা রেগে আছেন। না বলে আর কোথাও যেয়ো না। বাড়ির বউ তুমি। একা যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। ঘরে যথেষ্ট মানুষ আছে সঙ্গে যাওয়ার মতো। বললেই ব্যবস্থা হয়ে যায়।”
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“মসজিদে।”
এক পা এগিয়েও ফিরে দাঁড়ায় ইফতেখার। পকেট থেকে ফোন বের করে বলে,
“তোমার ফোন নম্বর দাও। এখনই দাও।”
শ্রাবণ ফোন হাতে নিয়ে নিজেই লিখে দেয় নম্বর। ইফতেখার ফোন পুনরায় রেখে জিজ্ঞেস করে,
“ফি দিয়েছো?”
“হ্যাঁ।”
মাগরিবের নামাজের পর বাড়ি আসেন আফজাল হোসেন। নিয়ম মোতাবেক বিনা অনুমতিতেই এক কাপ আদা চা নিয়ে হাজির হয়ে যায় পরী। চায়ের কাপ হাতে নিয়েই তিনি জিজ্ঞেস করেন,
“শ্রাবণ ফিরে নাই?”
“হো, কাকা। ফিরছে। সারাদিন সূর্যের আলোতে পাই নাই, সন্ধ্যার চান্দের আলোতে ভাবিজানরে খুঁইজ্জা পাইছি। এইজন্যই নানি ওইদিন কইয়া গেছিলো, বড় ভাইজান একটা চান্দের টুকরা কুড়াইয়া আনছে।”
চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ তুলে তাকায় আফজাল হোসেন। মুখে লাগাম টানে পরী। বেরিয়ে যেতে চায়। তিনি পিছু বলে উঠেন,
“কি করে? ডাক এই ঘরে।”
“আপারেও ডাকি? তিনিও আপনের কাছে কি জানি চাইবো চাইবো মনে হইতাছে।”
“যা বললাম, তা-ই কর।”
অর্পার ঘরে এসে হাজির হয় পরী। জায়নামাজ ভাজ করে উঠে দাঁড়িয়েছে শ্রাবণ। পরী পিছু বলে,
“ভাবিজান, যাইতেন। আপনের শ্বশুর আব্বা সালাম জানাইছে।”
জায়নামাজ রেখে পাশের ঘরে যায় শ্রাবণ। সালাম দেয় শ্বশুরকে। আফজাল হোসেন জিজ্ঞেস করে,
“কই গেছিলা?”
“জ্বি, ইউনিভার্সিটির কিছু ফি বকেয়া ছিলো। পরিশোধ করে এলাম।”
“এখনো পড়তাছো?”
“না, শেষ।”
“তা সবাইরে হয়রান করার দরকার কি? জানায় গেলেই পারতা।”
“সবাই যে এতোটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে, তা জানলে জানিয়েই যেতাম।”
“তোমরা শহরের মানুষ। রীতিনীতি আলাদা মনে করতে পারো। গ্রামের মানুষ অন্যরকম। পরিবারের প্রতি আলাদা টান থাকে। ঘরের লোকজন বাইরে থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়ে।”
“আসলেই? কিন্তু আমার জানামতে তো এমনটা মনে হয় না।”
মুখের উপর অস্বীকার করাটা বেয়াদবি পর্যায় গ্রহণযোগ্য হলো আফজাল হোসেনের কাছে। শ্রাবণের মুখে তাচ্ছিল্যকর জবাব অপ্রত্যাশিতও বটে। তিনি গম্ভীর চোখে তাকিয়ে থাকেন। গম্ভীর গলাতেই বলেন,
“কি মনে হয় না তোমার?”
“এই যে, আলাদা টানের কথা বললেন। গ্রামে আমার দেখা এমন কিছু পরিবার আছে, যারা ঘরের মানুষ বছর যাবত বাইরে থাকলেও খবরই রাখে না। তবে আমার এইটুকু সময় বাইরে থাকায় সবার প্রীতিটা আমারও ভালো লেগেছে। ইশ! যদি এমন গুরুত্ব সবাইকে দেওয়া হতো! যাইহোক, বাদ দেন। আরও কিছু বলবেন?”
আফজাল হোসেন একইরকম গম্ভীরতা বজায় রেখে বলেন,
“যখন ইচ্ছা, তখনই বাইরে যাইয়ো না। বউবেটির বাইরে যাওয়ার বেশিরভাগ প্রয়োজন পুরুষই করে দিতে পারে। যেটা হয়ই না, ইফতিরে সঙ্গে নিয়া যাইবা।”
“হুম।”
শ্রাবণ বের হওয়ার আগেই অর্পা প্রবেশ করেছে ঘরে। বাবার পাশে বসে বাহু জড়িয়ে আহ্লাদিত কণ্ঠে বলে,
“আব্বু, আমার এক হাজার টাকা লাগবে।”
“টাকা দিয়া কি করবা? কিছু লাগলে বলো, আনায় দেই।”
“না, টাকাই লাগবে। আমরা বান্ধবীরা একটা প্ল্যান করেছি। একটা ক্লাস পার্টি করবো। বেশিদিন তো নেই, একেকজন একেকদিকে চলে যাবে। দিবা না?”
“ক্লাস পার্টির কি দরকার? কয়দিন পর তো বিদায় অনুষ্ঠানই হইবো।”
“ধুর! বিদায় অনুষ্ঠানের সাথে পার্টির তুলনা। তুমি টাকা দিবা, ব্যাস।”
“আচ্ছা, দেখমু নে।”
“দেখবা না, না। দিবা।”
“আচ্ছা।”
রাতে বৃষ্টি হয়েছে, ভোর সতেজতার রূপ ধরে বসেছে৷ বৃষ্টিতে মুখুরিত ভুবন বাতাসের শীতল আদ্রতা গায়ের লোম দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে শ্রাবণের। গেইটের দিকে তাকিয়ে দেখে আবছা ভোরে টুপি মাথায় মসজিদ প্রাঙ্গণে ছুটে যাচ্ছে আফজাল হোসেন। এই ঘরের দরজা খোলার শব্দেই মূলত ঘুম ভেঙে গেছে শ্রাবণের। ছেলে দুটোকে ডেকে গেলেই কি পারতেন না তিনি? স্বগোতক্তি করতে করতে ব্রাশ ঠেকিয়েছে দাঁতে। পায়চারি করছে আর দাঁত মেজে যাচ্ছে। পরীটাকে ডেকেছিলো নামাজের জন্য। একবার সাড়া দিয়ে আবার ঘুমে তলিয়ে গেছে দেখা যায়। পারভীনকে ওযু করতে দেখা যাচ্ছে। বাইরের বাথরুম থেকে ইফতেখারকেও ওযু করে বের হতে দেখা যায়। উঠেছে তবে সাহেব? বারান্দায় ঝুলন্ত গামছায় হাতমুখ মুছতে এলে শ্রাবণ এগিয়ে বলে,
“বাব্বাহ! আজ ভোরে জেগে উঠলেন যেন?”
“তুমি ডাকলে তো প্রতিদিনই উঠতাম।”
“আজ কে ডেকে দিয়েছে?”
“অপেক্ষায় থাকতে থাকতে নিজে নিজেই উঠে গেছি।”
মৃদু শব্দে হাসে শ্রাবণ।
“আপনি একা থাকলে প্রতিদিনই ডেকে দিতাম, যদি আমি জাগতে পারতাম আরকি।”
“আচ্ছা।”
মাথায় টুপি দিতে দিতে সে-ও চলে যাচ্ছে মসজিদের উদ্দেশ্যে। শ্রাবণ ঘরে নামাজ আদায় করে সবার আগে রান্না ঘরে এসেছে আজ। নিত্য সকালে শ্বশুর শ্বাশুড়ি চা পান করে, জানে সে। মাঝে মাঝে তারও ভোর জমে এক কাপ চায়ে। তাই আদা চায়ের ব্যবস্থা করে নিচ্ছে নিজ হাতে। পারভীন এসেই হয়তো চা করতেন আগে। পুত্রবধূ করছে তাই হাড়িতে ভাতের চাল নিতে থাকে। পরীকেও ঘুম থেকে ডেকে যায় ফাঁকেতালে। আফজাল হোসেন বাড়ি ফিরতেই চা দিয়ে যায় শ্রাবণ। নিজেও নিয়েছে এক কাপ। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইফতেখারের উদ্দেশ্যে বলে,
“চা খাবেন আপনি?”
ইফতেখার আবার ঘুমাতে যাবে ভাবছিলো। চায়ের অফার পেতেই কি মনে করে বেরিয়ে এলো। শ্রাবণের হাতের কাপটাই নিয়ে নিয়েছে। মুচকি হেসে শ্রাবণ আরেক কাপ নিয়ে এসেছে। দুজনেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করলো কিচিরমিচির কলতানে জমে থাকা চা ভোর। কাপের শেষ অংশ চুমুকে নিয়ে ইফতেখার বললো,
“চলো, ঘুরে আসি।”
“এখন? কোথায়?”
“চলো, গেলেই তো দেখবে।”
“কাপ রেখে আসি।”
কাপ রেখে এসে জিজ্ঞেস করে,
“এভাবেই যাবো?”
“হুম, সমস্যা নেই। কেউ দেখবে না।”
হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে শ্রাবণ। সদ্য ঘুম ভাঙা চোখ কচলাতে কচলাতে পরী দরজার সামনে থেকে পিছু বলে,
“কই যান, ভাবি?”
“দেখি, তোমার ভাইজান কোথায় নিয়ে যায়।”
ইফতেখার শ্রাবণের হাত ধরে পশ্চিমে হাঁটতে শুরু করেছে। গোয়ালে কর্মরত অবস্থায় বকুল কাকাকে পাওয়া গেছে। মাত্রই এসেছেন তিনি। ইফতেখার পিছু ডেকে নৌকার চাবি ও বৈঠা চায়। শ্রাবণ বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বলে,
“নৌকা ভ্রমণে নিয়ে যাবেন?”
“কেন, যাবে না?”
“অবশ্যই।”
বৃষ্টিতে ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে নৌকা। তাই বকুল কাকা এক টুকরো কাপড় দিয়েছে সাথে, মুছে নেওয়ার জন্য। প্রথমবারের মতো আজ ইফতেখারকে বৈঠা হাতে দেখেছে শ্রাবণ। বিস্তীর্ণ বিলে নৌকার দুই প্রান্তে দুজনের বিচরণ। বাতাসের শীতল স্পর্শ আর মনে জাগা প্রণয়ের তান উভয়ই সুন্দর। আরও সুন্দর বিলের দর্শনরূপ, সদ্য প্রস্ফুটিত হওয়া সকাল। অবর্ণনীয় সুন্দর নৌকার মাঝিও। ঘাস ও লতাচ্ছাদিত প্রান্তরটুকু পেরিয়ে নৌকা পানির স্বচ্ছতা ছুঁয়ে নিতেই দুষ্টুমিযোগে শ্রাবণ পানির ছিটা দেয় ইফতেখারের মুখে। ইফতেখার হাসিমুখে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। বৈঠা ক্রিয়া থামিয়ে শার্টের বাহুতে মুখ মুছে তাকিয়ে বলে,
“আমি দিলে অর্ধেক ভিজে যাবে।”
“ইশ! আমি কি আপনাকে এতোটা ভিজিয়ে দিয়েছি?”
“কিন্তু আমি ভেজাতেও পারি।”
শ্রাবণ হাসি ঠোঁটে চেপে পুনরায় দু’হাত স্বচ্ছ পানিতে নাড়াতে থাকে।
“এই জায়গাটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। সেদিন তোতাপাখি সাঁতার কাটতে নেমে গিয়েছিলো এখানে।”
“চলো তবে, আমরাও নেমে পড়ি।”
“আপনি নামেন।”
“আমি একা নামবো না। তোমাকে নিয়েই নামবো।”
“আমার এতো শখ জাগেনি সকাল সকাল ভিজতে।”
ইফতেখার দুষ্টু হেসে একদিকে ভর করে নৌকা হালকা কাত করে দেয়,
“ফেলে দেই?”
শ্রাবণ নৌকার দুই প্রান্ত আঁকড়ে ধরেছে সাথে সাথেই।
“ভয় পাই না আমি। ফেললে আপনাকেই তুলতে হবে।”
“এতো ভরসা?”
“প্রেম।”
দুষ্টু প্রত্যুত্তরের সাথে সাথে দৃষ্টি ডানে সরিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে শ্রাবণ। ইফতেখারও নিঃশব্দে হাসে তার দুষ্টুক্রিয়ায়। পুনরায় বৈঠা চালিয়ে যায় শাপলা বিলের দিকে। শ্রাবণ জানতে চায়,
“ওই পাশে ঘাসের পাকানো জট, এইপাশে শাপলার জট। তবে এইটুকু অংশ ফাঁকা কেন?”
“বর্ষার আগে মাটি কাটা হয়েছে এদিকে। তাই ঘাস জন্মেনি।”
“আপনাদের জমি নেই এদিকে?”
“এখানে নেই। ওদিকে আছে সব। ছেড়ে এসেছি।”
আজ শাপলা বিল ঘুমায় না। ঘুমের সময় হয়নি হয়তো এখনো। প্রতিটি ফুল শুভ্রতা ফুটিয়ে রেখেছে বিল জুড়ে। ওই দূরে আরও দুটো নৌকা লক্ষ্যনীয় হচ্ছে। ভোরের আলো ফুটতেই বাচ্চারা শাপলা কুড়াতে চলে এসেছে। কিন্তু এই দম্পতি শাপলা কুড়াতে আসেনি। এসেছে রাত জাগা এই তারাদের প্রভাতের শুভেচ্ছা জানাতে। এসেছে গল্পেসল্পে প্রণয়ের মালা গাঁথতে। শুভ্র শাপলা নৌকা ঘিরে রেখেছে চারিদিক থেকে। ইফতেখার নিজ প্রান্ত ছেড়ে ঠাঁই নিয়েছে শ্রাবণ প্রান্তে। পাশাপাশি বসে জমিয়েছে গল্পসম্ভার। স্থির নৌকায় জানছে, জানাচ্ছে নিজেদের। গল্প করতে করতে হাতে শাপলার মালা তৈরি করছে শ্রাবণ। ইফতেখার পাশ থেকে একটা কপাট মেলে রাখা পূর্ণ শাপলা নিয়ে শ্রাবণের কানে গুজে দিয়ে বললো,
“ফুটন্ত শাপলা আর আমি সবই আছে পাশে। তবে আজ কেমন লাগছে এসে?”
[তো আপনারাই বলুন, কেমন লাগছে?🥱]