পূর্ন_তিথি লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি (২৮)

0
220

#পূর্ন_তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২৮)

আবার একটি নতুন ভোরের সূচনা।সব ক্লান্তি,সব ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে আগত উজ্জ্বল সূর্য।দিনের আলোয় মুখরিত ধরনী। অন্ধকারের মত কালো কাকেরা কর্কশ কন্ঠে ডাকছে জলপাই গাছের ডগায় বসে।চকচকে চেহারায় ফুটে থাকা দুটো চিকন চোখে কাজল টানলো তিথি। পড়নে কালো আর লাল রঙের মিশেলে হাফ সিল্কের শাড়িতে দারুন ফুটেছে গায়ের রং। চিকন কোমড়ের কাছ ঘেষে উঠে আসা শাড়ির আঁচল দুলছে মাটিতে। লতানো দেহের বাঁক, এখন পেয়েছে আরো আকর্ষন।অজান্তেই নিজেকে সূক্ষ্ণ ভাবে সাজিয়েছে তিথি। কপালে কুচকুচে কালো টিপ,সাথে পিঠে ছড়ানো বাদামি কোঁকড়া চুল। লম্বা বাঁকানো দেহে অপরুপ মোহমায়া ছড়িয়েছে যেন। সব পাঠ চুকিয়ে তিথি তখন সাজগোজের অবঢৌকনগুলি গুছিয়ে রাখছিলো।এমনিতেই দেরি হয়েছে অনেকটা। তন্ময় নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে? এতটা দেরি হতোনা,সুচিত্রাই দেরি করে বের হলেন আজ। এত দিন পর ছেলেকে বুকের কাছে পেয়ে বাসা থেকে বের হতেই চাচ্ছিলেন না।তাও,রোজগারের হাত, থেমে থাকলে কি চলে? তিথি সুচিত্রা যাওয়া মাত্রই সাজতে বসেছে। মায়ের সামনে সাজলে বিব্রত লাগত।মা হয়ত বুঝে যেত কার জন্যে এই স্বাজ? লজ্ব্বা লজ্ব্বা লাগতো নিশ্চয়ই!

তিথির ভাবনার ফাঁকেই স্বপ্ন ঘরে ঢুকলো।দুহাতে দুটো ললিপপ। খেয়ে মুখ থেকে জ্বিহবা লাল টকটকে করেছে পুরো। আয়নার মধ্যে ভাইকে দেখে ভ্রু কোঁচকালো তিথি।পেছন ঘুরে বলল,

‘ মেয়েদের মত লিপস্টিক লাগিয়েছিস নাকি?

স্বপ্ন কথা বললনা।ডান হাতের ললিপপটা একটু চেঁটে আবার বাম হাতের টা মুখে পুঁড়লো।তিথি বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ ক্লাশ সেভেনে পড়িস।অথচ বাচ্চাদের মত ললিপপ খাচ্ছিস।বড় হবি কবে?
স্বপ্ন ধপাস করে বিছানার ওপর বসে বলল,

‘ তোর বিয়ে হবে যেদিন,সেদিন।

তিথি মুখ কুঁচকে চেয়ে থেকে পরমুহূর্তে আবার ব্যাস্ত হলো নিজের কাজে।স্বপ্ন প্রশ্ন ছুঁড়লো,

‘ সকালে বলেছিলি না আমায় নিয়ে মেলায় যাবি, যাবিনা?

‘ যাবো। আগে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করে আয়।পুরো লাল হয়ে আছে।

‘ সে যাচ্ছি,কিন্ত তুই এত সেজেছিস কেন সোনু?

তিথি স্বপ্নের দিকে তাকালো। স্বপ্ন গোয়েন্দা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আমতা-আমতা করে বলল,

‘ কই স্বেজেছি? লিপস্টিক আর টিপ দিলে স্বাজা হয় নাকি?

‘ শাড়ি পরেছিস কেন? আদিত্য দা’র জন্যে পরেছিস তাইনা?

স্বপ্নর খুশি খুশি প্রশ্নে তিথির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে এলো। স্বপ্ন আদিত্যকে চিনলেও মাঝখানের ঘটনা গুলো যে ও জানেনা। সেতো এও জানেনা,বোনের মনের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এক কালবৈশাখী ভয়ানক ঝড়। ঝড়ের প্রভাব যে এখনও কাটেনি। কাটানোর চেষ্টা করেও হচ্ছেনা।কিছুতেই ধ্বংস লীলা কমছেনা। আস্তে করে বলল,

‘ এমনি স্বেজেছি।আদিত্যর কথা আর বলবিনা।

স্বপ্ন খানিক কৌতুহল নিয়ে বলল,
” কেন?

তিথি মৃদূ রেগে বলল,

‘ বলতে মানা করেছি তাই। মুখ ধুয়ে আয় যা।

স্বপ্ন গাল ফুলিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠতেই তিথি জড়িয়ে ধরলো ওকে । আদুরে স্বরে বলল,

‘ রাগ করিস না বাবু,কথা শুনলে কি বঁকা দেই বলতো!

স্বপ্ন একটু হেসে বলল,

‘ না রাগ করিনি।শাকচুন্নিরা এমন খেইখেই করে আমি জানি।

তিথি মুখ হা করতেই স্বপ্ন এক ছুটে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে। তিথি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে হেসে ফেলল তারপর। শেষ বার নিজেকে আয়নায় দেখে ঠিকঠাক করে নিয়ে ঘর থেকে বের হবে, তখনি সদর দরজায় টোকা দিলো কেউ। তিথি ভাবলো,তন্ময় এসছে। দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা টেনে খুলতেই ওপাশের লোকটাকে দেখে বিস্ময়ের রাজ্যে পা বাড়ালো। আদিত্য, হাতে এক গুচ্ছ্ব গোলাপ সমেত হাসি হাসি মুখে চেয়ে আছে। তিথির এমন সুন্দর বেশ দু চোখ ভরে দেখছে সে।চোখ জুড়ে শুধু মুগ্ধতা,কোনায় কোনায় মুগ্ধতা! এত সুন্দর কেন মেয়েটা! মা বলে তিথির চেয়ে পুতুল সুন্দরী। সমাজও বলে এই একি কথা।কিন্তু তার চোখে তো লাগেনা। তার নিকট এই মেয়ের রুপ সব কছুর উর্ধ্বে। বাকি যা কিছু, সব তুচ্ছ।সব। সব।

আদিত্যকে আশা করেনি তিথি। অবাক হয়েছে।সাথে হাতের ফুল গুলোতে হয়েছে রাগ। এই ফুল আনার কারন অজানা নেই।গত তিনটি বছর সাক্ষী সেই অবগতির। কিন্তু এখন এই আবেগ-অনুভূতির কি মানে? ভিত্তিহীন সম্পর্কের খুঁটি দোলানোর এত শখ এই লোকের! ক্ষনিকের নিরবতা ভঙ্গ করলো আদিত্য নিজেই।ফুল গুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘ শুভ ভালোবাসা দিবস তিথি।ভালোবাসি তোমায়।

দীর্ঘ পাঁচ মাস পর আদিত্যের মুখে ” ভালোবাসি” শব্দটা শুনে দুমড়ে-মুচড়ে এলো তিথির ভাঙা,পিপাসু বুক। এই শব্দটা হিরে- জহরতের চেয়েও দামি ছিলো এক সময়। সারাদিন কানের কাছে শুনতে ইচ্ছে হতো,মালা জপার মত। কিন্তু আজকের এই পরিসি্থতিতে এর কি আদৌ মূল্য রয়েছে!তিথি নিজেকেই প্রশ্ন করে।একটু হেসে ভাবল,

‘ ঠকবাজদের আবার ভালোবাসা দিবস!

আদিত্য উচ্ছ্বল কন্ঠে বলল,

‘ আমার জন্যে স্বেজেছো তাইনা?

তিথি বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে চেয়ে থাকলো।নন্দিত দৃষ্টি বিনিময় চলল অনেক মুহুর্ত। আদিত্য বড় বড় চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে তুষ্ট উত্তরের আশায়। কিন্তু ভাগ্য কি সব সময় সাথ দেয়? সব আশা পূরণ হয়? জবাবে তিথি শক্ত কন্ঠে বলল,

‘ আবার আপনি তামাশা করতে চলে এসছেন? দুদিন পরপর কি হয় আপনার? আপনাকে মানা করেছিতো,আমার ধারে-কাছে না আসতে!

আদিত্যর হাসি উবে গেলো।পরমুহূর্তে ফিঁচেল কন্ঠে বলল,

‘ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকব? ভেতরে যেতে বলবেনা?

তিথি কিছু না বলে দরজা ছেড়ে এক পাশে সরে দাঁড়ালো। আদিত্য ঘরের ভেতর দুপা দিতেই কঁড়া কন্ঠে বলল,

‘ বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বললে লোকজন শুনবে,তাই ঢুকতে দিলাম।

আদিত্য মলিন হাসলো।ফুল গুলো আবার এগিয়ে দিয়ে, বড় আশা করে বলল,

‘ আমার উপহার নেবেনা?

তিথি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলে আদিত্য উত্তর পেয়ে যায় নিজের।মুখটা ছোট হয়ে আসে ভীষণ কষ্টে। ফুল গুলোকে কাঠের পুরোনো সোফার ওপর রেখে দেয়। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

‘ আসলে তুমি আমাকে প্রতিনিয়ত বোঝাচ্ছো যে তোমার চোখে আমি অপরাধি,আমার ক্ষমা নেই। কিন্তু তিথি,ভুল করলে তো ভগবানও ক্ষমা করেন। তবে তুমি কেন পারছোনা? আমিতো…

তিথি মাঝপথে তেঁতে বলল,

‘ কারন আমি ভগবান নই।আমি মানুষ। দয়া বলতে আমার শরীরে আপনার জন্যে এক চুলও অবশিষ্ট নেই আদিত্য সাহা।ভালোবাসাতো অনেক দিন আগেই বিসর্জন দিয়েছি।

আদিত্য হূট করে হাত দুটো ধরলো তিথির।করুন, ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,

‘ একবার, একবার ক্ষমা করো না তিথি।আমরা নিজেরা আলাদা হব,আলাদা জগৎ হবে আমাদের। তোমায় আমি আলাদা রাখব।সম্পূর্ণ দুনিয়া থেকে আলাদা।

তিথি বিদ্রুপাত্মক হেসে বলল,

‘ সোজা কথায় বলুন না,রক্ষিতা রাখতে চাচ্ছেন।

আদিত্য ধমকে বলল ‘ তিথি!

তিথি ঝাঁড়া মেরে হাত ছাড়িয়ে বলল,

‘ তা নয়তো কি? কি পরিচয় দেবেন আমার? একজন বিবাহিত পুরুষ, যার ঘরে বউ আছে,সে আমাকে আলাদা রাখবে কেন? কিসের স্বার্থে।আপনার মত পুরুষের উদ্দেশ্য কি হতে পারে,কতটা হতে পারে,আমি বুঝে গিয়েছি আদিত্য। আমাকে আর বোঁকা তিথি ভাববেন না।যে কিছু না ভেবেই ভালোবেসেছিল আপনাকে।কিছু না চিন্তা করেই মেনে নিয়েছিলো আপনার নাটকীয় বিয়ে,আপনার কাছে বিলিয়েছিলো নিজেকে।সেই তিথিকে আপনি সেদিনই মেরে ফেলেছেন, যেদিন পুতুলের মাথায় এই হাত দিয়ে সিঁদুর তুলেছেন আপনি।

আদিত্য তিথিকে ধরতে গেলে তিথি পিছিয়ে গেলো। ওদিকে স্বপ্ন বেরিয়েছে ওয়াশরুম ছেড়ে। বসার ঘরে আদিত্য তিথির ঝগড়া দেখেই এক দৌড়ে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো সে।

‘ তিথি একবার আমার কথা শোনো,

‘ আপনি এগোবেন না।আমার কিচ্ছু শোনার নেই।

‘ তিথি আমি পুতুল কে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছি,কিন্তু আমার সাপোর্ট কেউ করছেনা।বাবা- মা ওর হয়ে কথা বলে,পুতুল নিজেও আমাকে ছাড়বেনা।আমি কি করব বলো?

‘ ছাড়তে কে বলছে আপনাকে? বউয়ের নখের আঁচড় ঘাঁড়ে বইতে পারেন, বউকে সারাজীবন বইতে কিসের সমস্যা?

আদিত্য অপরাধি কন্ঠে বলল,

‘ ক্ষমা চাচ্ছি তিথি,সেরাতে মাথা ঠিক ছিলোনা।আর তুমিও তো আমার ওপর রাগ করে তন্ময়ের কাছে গেছিলে বলো,আমি কি কিছু বলেছি?

তিথি হেসে ফেলল।

‘ কি সুন্দর উদাহরণ দিলেন! আমার তন্ময়ের কাছে যাওয়াটাকে আপনি ঠিক কি বলে ব্যাখা দিতে চাচ্ছেন আমি জানিনা,জানতেও চাইনা। কিন্তু ওকে নিয়ে বলার মত যোগ্যতা, অধিকার আপনার এখন অন্তত নেই।তাও যদি বলেন আপনি আমায়, তন্ময়কে নিয়ে কিছুই বলেননি?তবে মনে করিয়ে দেই,সেবার মার্কেটের সামনে,রাস্তার মধ্যে,কত নোংরা কথা শুনিয়েছিলেন, এর মধ্যে ভুলে গেলেন?

আদিত্য ছলছল চোখে বলল,

‘ তিথি প্লিজ!

আদিত্য আবার এগোতে গেলে তিথি সরে যায়।

‘ আমি আপনাকে আমায় ছুঁতে নিষেধ করছি আদিত্য। আর একবার আমাকে ছুঁতে আসলে আমি চেঁচাবো।লোক জড়ো করে বলব,আপনি আমার সুযোগ নিতে এসছেন।

আদিত্য স্তব্ধ হয়ে বলল,

‘ তিথি!

তিথি ভেঙে আসা কন্ঠ শক্ত করে বলল,

‘ হ্যা।বেরিয়ে যান এখান থেকে।এরপর এখানে এলে আমি কিন্তু নিজেকে শেষ করে দেব।কোনো দিন আসবেন না আমার সামনে।আপনি আমার কাছে সেদিন থেকে শেষ হয়েছেন, যেদিন আমার বাচ্চাকে আমি হারিয়েছি।বুঝেছেন আপনি? বুঝেছেন?
নোংরামো আপনার একটুও কমেনা?বিয়ে করেছেন, বৌয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে এসে আবার আমাকে নিয়ে আলাদা থাকার কথা বলছেন? কবে লজ্জ্বা হবে আপনার? আমি মরলে? মরব আমি? খুশি হবেন?

আদিত্য বিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে। তিথি চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা গুলো বলছিলো।থেমে গিয়ে নিঃশ্বাস নিলো জোরে জোরে। আদিত্য শুকনো ঢোক গিলে বলল,

‘ আমার প্রস্থানেই তোমার আনন্দ? তোমার ভালো থাকা?

তিথি বলল,

‘ নিঃসন্দেহে!

কথাটার সাথে সাথে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু পরলো তিথির হাতের ওপর। আস্তে করে মুছে ফেলে বলল,

‘ আমার আশেপাশে কাপুরুষের আনাগোনা যত কম হবে,আমি তত ভালো থাকব।

আদিত্যর প্রচণ্ড কষ্ট হলো। চিল্লিয়ে কাঁদতে মন চাইলো। লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,

‘ চলে যাচ্ছি তিথি, আর আসবনা তোমার সামনে। একটা বিষয় খেয়াল করেছি জানো,যে হাসি নিয়ে তুমি দরজা খুলেছিলে আমাকে দেখার পর সেই হাসি তোমার ছিলোনা।তোমার হাসির কারন এখন আর আমি নই। তবে কি জানো,কিছু কথা বলা খুব জরুরি।নাহলে এগুলো গলায় কাঁটা বিঁধার মতন তীব্র যন্ত্রনা হবে আমার।

এটুকু বলে একটু দম নিলো আদিত্য।বলতে শুরু করলো,

‘বাবা- মা,একটা সন্তানের কাছে কি তুমি জানো তিথি।নতুন করে তোমাকে বোঝানোর দরকার নেই। সেদিন বাবার অসুস্থ মুখটা আমার কাছে এতটাই অসহায় লেগেছিলো, আমি পারিনি নিজের মনের কথা মুখে আনতে।বাবার লাশ কিভাবে দেখব আমি? আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আমি অপ্রিয় কিছু বললেই বাবা বাঁচবেন না। তাই তোমাকে ফিরিয়ে দেই।পুতুল কে বিয়ে করেছি কিনা আমি জানিনা,কারন একটা মন্ত্র ও আমি উচ্চারন করিনি।আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আমি পালাব।উঠে যাব।একবার গিয়েও ছিলাম।কিন্তু সুস্মিতা বাবার কথা বলে আবার আমায় নরম করে দেয়। হুজুগে বিয়েও করি।কিন্তু আমি পুতুল কে মানিনি। ভুলবশত মদ খেয়ে বাড়ি গিয়ে একরাতে ওকে ছুঁয়ে ফেলি।আর তারপর একদিন তোমার ওপর জেদ করে।ভাবি, আগেওতো একবার ছুঁয়েছি আজ আর নতুন কি!কিন্তু তারপর নিজের ওপর নিজের প্রচণ্ড ঘৃনা লাগতে শুরু করে।সেই সকালে আমি টানা এক ঘন্টা স্নান করেছি জানো? রঞ্জনদের বাসায় গিয়ে আবার স্নান করেছি।অস্থিরতা কাটাতে তোমার কাছে ছুটে আসি।তোমাকে মিথ্যে বলি যে আমি পুতুল কে ছুঁইনি।ভাবলাম,যদি হারিয়ে যাও।কিন্তু আমার বোঝা উচিত ছিলো,আমার তিথি সেদিনই হারিয়েছে,যেদিন আমি তাকে প্রত্যাখান করেছি।

বাড়িতে অনেকবার বলেছি পুতুল কে ছাড়ার কথা,কিন্তু আমার বাবা মায়ের কাছে আমার থেকে পুতুল দামি।কে জানে কেন? অনেক বলে বলে যখন ক্লান্ত হলাম,তখন বাড়িতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। সপ্তাহে দু একবার গেলেও পারি।ভেবেছিলাম, তোমার সামনে আর আসবনা।কিন্তু আজ তো ভালোবাসা দিবস, না এসে পারিনি।মনে হচ্ছিলো আজ অভিমানের পালা শেষ হবে।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,আমার ভালোবাসার চেয়ে অপরাধের পাহাড় এত উঁচু যে নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য। আমি আর চেষ্টাও করবনা তার নাগাল পেতে।শুধু বলব,ভালো থেকো।যার জন্যে আজ এই স্বাজ -স্বজ্জা সে যেন তোমায় সুখি রাখে।আদিত্য আর কাটা হবেনা তোমার রাস্তায়।বিদায় তিথি!

তিথি উল্টো ঘুরে ছিলো।আদিত্য ঘর ছেড়ে বের হওয়া মাত্রই ওভাবেই ধপ করে বসে পরলো মেঝেতে।শাড়ির আঁচল মুখে গুঁজে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তারপর। চোখে পরা কাজল গুলো নির্নিমেষ পাপড়ি বেয়ে গলে গলে পরলো।
কাঁদতে কাঁদতে বলল,

‘ ক্ষমা করতে পারছিনা তোমায়, চেয়েও পারছিনা।কি করে পারব কারো সংসার ভাঙতে? তুমি নির্দোষ হলেও আজ অন্য কারো। তাই আর এসোনা আমার জীবনে। ভুলতে চাই তোমায়।ভুলতে দাও।ভুলতে দাও তোমাকে,তোমার সমস্ত স্মৃতিকে।

____

স্বপ্ন বাড়ির পেছন থেকে এসে সামনের সঁড়কে দাঁড়িয়ে ছিলো। বড়দের কথার মধ্যে থাকতে নেই,এই শিক্ষা ভালো ভাবেই রপ্ত আছে তার। তাইতো ওভাবে চলে এলো ওখান থেকে। তন্ময় তখন গাড়ি নিয়ে আসছিলো। স্বপ্নকে রাস্তায় পায়চারি করতে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে এলো তন্ময়। হাতে তারও এক গুচ্ছ্ব তাজা গোলাপ।সাথে একটা বড় র‍্যাপিং করা বাক্স।ফুলগুলোর কিছু ফুঁটেছে,কিছু ফোঁটেনি। ঠোঁট ভর্তি হাসি নিয়ে সামনের দুষ্টু ছেলেটিকে প্রশ্ন ছুঁড়লো,

‘ এই তুমি স্বপ্ন না?

স্বপ্ন তন্ময়ের দিকে তাকালো। দু সেকেন্ড সময় নিলো তন্ময়কে চিনে উঠতে।মনে পড়লো,এই দাদা টা সে থাকাকালীন দুবার এসেছিলো বাড়িতে।হেসে জবাব দিলো,

‘ জ্বি।নমষ্কার!

‘ নমষ্কার, নমষ্কার! এখানে কি করছো? তিথি নেই বাড়িতে?

‘ আছে তো!

‘ চলো ভেতরে যাই!

তন্ময় যেতে নিলে স্বপ্ন আটকে দিয়ে বলল,

‘ না এখন যাবেননা।ভেতরে আদিত্যদা আছে।

তন্ময় চমকে তাকালো।

‘ কে আছে?

‘ আদিত্য দা,সোনুর হবু বর।

চলবে,

গল্পের জন্যে অনেক অপেক্ষা করলেন।ধন্যবাদ এইজন্যে😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here