#পূর্ণ__তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৪)
শকুন্তলার মেজাজ তেঁতে আছে,স্বামীর ওপর। সকাল থেকে আদিত্য নিঁখোজ।লোকটাকে কত করে বলল, একটা বার খুঁজতে, রঞ্জন এর বাড়িতে যেতে,ওকে জিজ্ঞাসা করতে, কিন্তু সেলোক কিছুই করছেনা। ষাড়ের মত মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শকুন্তলার চিন্তায় মাথার রগ দাপাচ্ছে।কোনও ভাবে ছেলে আবার ওই মেয়ের কাছে না গেলে হয়! এত সুন্দর রং চং দেখে বউ এনে দিলো, তার ওপরে অল্প বয়সী, সেসব ছেড়েও যদি ছেলে তিথির কাছে যায়, তবে আর ছেলেকে ফেরানোর উপায় থাকবেনা। শকুন্তলা পায়চারি করছিলেন এতক্ষন।কথাটা ভেবে ধপ করে বসে পরলেন চেয়ারে। এই সব সমস্যার সৃষ্টি তার স্বামীর দ্বারা। তিথি যেদিন প্রথম এলো এ বাড়িতে সেদিনই ছেলেকে ঐ মেয়ের থেকে দূরে থাকতে বলা উচিত ছিলো।সেতো বলতোই,কিন্তু মাঝখান থেকে সমিরন মানা করলেন।তার মতে নও-জোয়ান ছেলে দুদিন মজা করুক,আপনা-আপনিই সরে আসবে তারপর। কিন্তু সে কি হলো? হয়নি! ছেলে এমন ভাবে ওই নিঁচু জাতের মেয়েতে মজলো, এখন আর শোধরানোর ফুরসত নেই। বিয়ের পরের দিনই বউ রেখে অন্য মেয়ের কাছে যাওয়া? হায় হায়,সংসারে একি অনা সৃষ্টি কান্ড!
‘মা ডাকছিলেন?
কথাটা শুনে দরজার দিকে তাকালেন শকুন্তলা। পুতুল দাঁড়িয়ে আছে। ছোট খাটো ফর্সা মেয়েটাকে দারুন লাগে তার। আবার পরেছে কাঁতান শাড়ি।মাথায় টেনেছে ইয়া বড় ঘোমটা। লক্ষী ঠাকুরের মতো মনে হচ্ছে । নাহ তার পছন্দ সত্যিই ভালো।শকুন্তলা একটু নড়েচড়ে বসে বললেন,
‘ এসো।
পুতুল নরম পায়ে ভেতরে এলো।শকুন্তলা বিছানা দেখিয়ে বললেন,
‘ বসো।
শ্বাশুড়ির গম্ভীর স্বরে বুক দুরুদুরু কাঁপছে পুতুলের। প্রথম প্রথম এসে আনারি হাতে কোনো ভুল করলো কি? পুতুল বসতেই শকুন্তলা উঠে গিয়ে দরজা অাটকালেন।পুতুল খানিক অবাক হলো। শকুন্তলা যত্র এসে বসলেন ওর সামনে। বিছানার ওপর। অধৈর্য কন্ঠে শুধালেন,
‘ কাল রাতে তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে?
প্রশ্নটায় ভঁড়কালো পুতুল। প্রথমে অর্থটা বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতেই লজ্জ্বা পেলো।সরাসরি উত্তর দিতে ইতস্তত করলো।মাথাটা নামিয়ে নিলো নিঁচে।শকুন্তলা বুঝে নিলেন। আস্বাস দিয়ে বললেন
‘ শোনো মা, আমি তোমার শাশুড়ি ঠিক আছে, কিন্তু এই মুহুর্তে আমাকে নিজের বন্ধু ভাবো। মায়ের কাছেও মেয়েরা অনেক কিছু বলে, তুমিও না হয় সেভাবেই বলো। আদিত্য বাড়িতে নেই বুঝলে,কোথায় গিয়েছে আন্দাজ করতে পারছো নিশ্চয়ই?
পুতুলের বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। ভয় আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেঁপে ধরলো। শকুন্তলা আবার বললেন,
‘ বলো কাল আদি তোমায় ছুঁয়েছে।
পুতুল নিঁচের দিকে চেয়ে দুদিকে মাথা নাঁড়লো। শকুন্তলা প্রচন্ড আহত হলেন। চোখ দুটো বড় বড় করে বললেন,
‘ সেকি! কি বলছো? এক ঘরে থেকেও না?
পুতুল কালো মুখ নিয়ে এবারো মাথা নেড়ে “না” জানালো। শকুন্তলা সেকেন্ড খানেক চুপ থেকে বললেন,
‘ কি হয়েছিলো কাল রাতে?
পুতুল ঢোক গিললো একটা। কাঁপা ঠোঁট নেড়ে শুরু করলো কাল রাতের অপ্রত্যাশিত বর্ননা। সব শুনে থম মেরে বসে থাকলেন শকুন্তলা। হতাশায় মাথার রগ এলোমেলো ছুটছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
” ছেলেটাকে বোধ হয় আর ফেরানোর উপায় নেই রে!
পুতুলের মন ভারি হয়ে এলো তাৎক্ষণিক। শকুন্তলা হঠাৎই জ্বলে উঠে বললেন,
‘ কি করো টা কি? এই দুধে আলতা গায়ের রং দিয়ে হবে কি? যদি স্বামীকে আকৃষ্টই না করতে পারলে? পুরুষ মানুষ বাইরে ছুটবে তাকে ঘরে বাঁধা তো বউয়েরই কর্ম নাকি?
পুতুল চুপ করে থাকলো। শকুন্তলা দমে গেলেন। ভাবলেন
‘ মেয়ের বয়স কম।হয়তো অতশত বোঝেনা। তাই নম্র কন্ঠে ডাকলেন,
‘ শোনো,
পুতুল তাকালো।শকুন্তলা বললেন,
‘ তুমি যত পারবে আদিত্যর গা ঘেঁষে থাকবে।ও ডাকুক না ডাকুক ছুটে যাবে ওর কাছে।সব সময় পাশে পাশে ঘুরবে। যতটা পারবে পেট, পিঠ, বুক এগুলো উন্মুক্ত রাখবে বুঝেছো?
পুতুল অপ্রস্তুত কন্ঠে বলল,
‘ জ্বি।
শকুন্তলা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ জানি শাশুড়ীর মুখে এমন খোলামেলা কথা শুনতে ভালো লাগছেনা,কিন্তু আমারও কিছু করার নেই। জানোই তো!
পুতুল মৃদূ হেসে বলল,
‘ সমস্যা নেই।আপনি তো আমার ভালোই চাইছেন।আপনি চিন্তা করবেন না,আমি আপনার কথামতো সব করবো।
শকুন্তলা প্রানোচ্ছ্বল হাসলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ ঠিক আছে।ঘরে যাও এখন।
পুতুল উঠে চলে যেতে নিলে শকুন্তলা ডাকলেন আবার।বললেন,
‘ পথে তোমার শ্বশুর কে পেলে বলো একটু এ ঘরে আসতে।কথা আছে।
‘ জ্বি।
_________
আদিত্য আজকেও হতাশ।তিথিদের দরজায় আজও ঝুলছে তালা। রোদ্দুরের আলোতে চকচক করছে তালার সাদা রঙ। আদিত্যর মুখটা কালো মেঘে ঢাকলো। তিথি কি আসেনি? ওকি এখনও হাসপাতালে? কোন হাসপাতালেই বা আছে ও? এমন হাজারো প্রশ্ন মাথায় নিয়ে পকেট থেকে ফোন বার করলো আদিত্য। ডায়াল করলো তিথির নম্বরে। কয়েক বার রিং হলেও কেউ তুললোনা। আদিত্য ঘামছে।তিথি কি খুব অসুস্থ? কিভাবে ওর কাছে যাবে এখন? কার কাছ থেকে জানবে ও কোথায়? তন্ময়? সেকি বলবে? মনে হয়না।
হ্যা একটা উপায় আছে, তিথির মা।উনি নিশ্চয়ই এখন স্কুলে? কব্জিতে বাঁধা ঘড়িতে একবার চোখ বোলালো আদিত্য। এগারোটা বাজতে চলল প্রায়। এখন গেলেই পাওয়া যাবে। কথাটা ভেবে দ্রুত পায়ে গিয়ে বাইকে বসলো। তিথির কাছে যাওয়া যে খুব জরুরি।ওই একজন ছাড়া তার অশান্ত মস্তিষ্ক কিছুতেই শান্ত হবেনা।
______
বারান্দা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে তিথি।ঠোঁটে মৃদূ হাসি। বাড়ির বাগানে ছোটাছুটি করছে তন্ময়, আর তার ছোট ভাই তুষার। তুষার সেভেনে পড়ে।দেখলে বোঝা যায়না, গাট্টাগোট্টা শরীর টাকে আরও একটু বড় লাগে। তবে ভীষণ কিউট আর নাদুস-নুদুস সে।তন্ময় বাচ্চাদের মত ছুটছে আর তাকে ধাওয়া করছে তুষার। তিথি এক ভাবে দেখছে এই দৃশ্য। কি খুনশুটি দুজনের! বুকের কোথাও ভাইটার জন্যে পু্ঁড়ছে। আজ যদি স্বপ্নটা থাকতো!ওকে শক্ত করে জড়িয়ে দু গালে চুমু খেতো আগে। অাচ্ছা,যে বোনের একটু ভাড় মুখ সহ্য হয়না, সেই বোন আজ কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়েছে, সেটা দেখলে কি করতো স্বপ্ন?
স্বপ্নের খুব ইচ্ছে,ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে। আর সেইজন্যে তো শুরু থেকে অংকে পাঁকা হতে হতো। মায়ের সামর্থ্য ছিলোনা ওকে সব বিষয়ে শিক্ষক দেয়া। ওদিকে তিথির খরচা।উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে যে অনেক খরচ তখন! একপ্রকার হিমশিম খাচ্ছিলেন সুচিত্রা৷ তাই বাধ্য হয়ে ছেলেকে পাঠিয়েছেন বাবার কাছে। অন্তত পড়াশোনার জন্যে কোনো অভাবের সম্মুখীন হতে হবেনা ছেলেটাকে। যেদিন স্বপ্ন চলে যাচ্ছিলো, কি কান্নাই না করেছিলো! তিথির কোঁমড়টা শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিলো। সে কিছুতেই যাবেনা। বারবার মিনতি করছিলো আমাকে পাঠিওনা।আমি তোমাদের ছাড়া থাকবো কি করে?
সুচিত্রা কাঁদছিলেন।কিন্তু ছেলের কাঁন্নায় মন গলেনি। সন্তানের ভালোর জন্যে একটু কঠোরতা খারাপ কিছু নয় ! ভালো ভাবে পড়াশোনা করলে স্বপ্নের ভবিষ্যত ভালো হবে। এই চিন্তায় বুকে পাথর চেঁপে একমাত্র ছেলেকে পাঠালেন সেইখানে, যেইখান থেকে ছেলে ফিরবে কিনা জানেননা। কিংবা বাবার অভিযোগ,অভিমানের প্রভাব তার ওপর পরবে কিনা তাও জানেন না। ছেলে ঠিক এইভাবে তাকে ভালো বাসবে কিনা সেটাও অজানা।তবুও পাঠিয়েছেন। সন্তান সুখে থাকুক।শান্তিতে থাকুক। এটাই কাম্য!আজ প্রায় দেড় বছর স্বপ্নকে দেখা হয়নি। বাবা সেই যে ওকে নিয়ে ঢাকা গেলেন নিজেও আর আসেননি। স্বপ্ন মাঝে মধ্যে লুকিয়ে চুরিয়ে ফোন করে ঠিকই,কিন্তু তাও মাসে একবার। এভাবে কথা বলে মন ভরে?
কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে ধ্যান ভাঙলো তিথির। পেছন ফিরলো। তন্ময়ের মা নির্মলা সাহা দাঁড়িয়ে আছেন। কাকতালীয় ভাবে তন্ময় দের টাইটেল ও আদিত্যর সাথে মিলে যায়। কিন্তু মানুষে মানুষে যেমন তফাৎ, তেমনি তফাৎ এদের মাঝেও। অাদিত্যর মা সেবার তার গোত্র শুনেই নাক কুঁচকে ছিলেন, এক গ্লাস জল অব্দি খেতে বলেননি।অথচ এই নারী সম্পূর্ন তার বিপরীত। কি সুন্দর তাকে বুকে নিয়ে আদর করেছেন, কত আদুরে ভাষায় কথা বলেন। একই গোত্র হয়েও কতটা পার্থক্য। ধরীত্রীর সবাই এক হয়না। সত্যিই হয়না।
নির্মলার উদ্দেশ্যে তিথি ঠোঁট প্রসস্থ করে হাসলো। নির্মলা বললেন,
‘ এখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো? ওদের দুষ্টুমি?
তিথি আলগা কন্ঠে বলল,
‘ জ্বি।
নির্মলা উদ্ভাসিতমুখে বললেন,
‘ ওসব ছাড়ো।ওরা সারাদিন এরকম করে। তুমি এসো আমার সাথে।
তিথির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন নির্মলা। তিথি কৌতুহলে পা মেলাচ্ছে । নির্মলা তিথিকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন,রুমের মধ্যে রাখা তুলতুলে সোফা দেখিয়ে বললেন,
‘ বসো।
তিথি বসলো। নির্মলা আলমারি খুলতে খুলতে বললেন,
‘ আজ আমার বান্ধবির বিবাহ বার্ষিকী। আমিতো জানতাম না মা তুমি আসবে, তাহলে যাওয়ার জন্যে কথা দিতাম না। এখন কথা যখন দিয়েছি ক্যান্সেল করার উপায়ও নেই। তাই যেতে হচ্ছে।
তিথি হেসে বলল,
‘ কোনো সমস্যা নেই আন্টি।আপনি যান।
‘ কোনো সমস্যা নেই বললে চলে বলো,প্রথম বার এলে, অথচ তোমাকে একা রেখে যাবো।যদিও রাত নটার মধ্যে ফিরে আসবো।এটুকু সময় পারবেনা থাকতে?
তিথি এক পাশে ঘাঁড় কাত করে বলল,
‘ জ্বি, পারবো।
নির্মলা আলমারিটা হা করে খুলে বললেন,
‘ এর মধ্যে থেকে আমায় একটা শাড়ি বেঁছে দাওতো মা। বুড়ো মানুষ বুঝে উঠছিনা।
তিথি উঠে গিয়ে নির্মলার পাশে দাঁড়ালো।কাঠের আলমারি গাঁদানো শাড়িতে। তিথি দেখতে থাকলো। কিন্তু নির্মলার মুগ্ধ চোখ তখন তিথির দিকে। এই মেয়েটাকে তার ছেলে ঠিক কতটা ভালোবাসে সেসব তার অজ্ঞাত নয়। একদিন হুট করে এসেই বলল,
‘ মা আমি তোমার জন্যে ছেলের বউ দেখেছি।
বাবা মারা যাওয়ার পর ছেলের ভাড় মুখ তার অভ্যেসে ছিলো।কিন্তু সেইদিন প্রথম দেখলো ছেলের উজ্জ্বল মুখ।তারপর থেকে সেও দিন গুনতে থাকলেন, কখন তার ছেলের পছন্দ দেখে চোখের পিপাসা মেটাবেন। যদিও তন্ময়ের গ্যালারি জুঁড়ে অসংখ্য ছবি তিথির,আর সব কটাই তার দেখা,কিন্তু সামনা সামনি এই প্রথম দেখলেন। সকালে দরজা খুলে যখন তন্ময়ের পাশে তিথিকে দেখেন এক মুহুর্তের জন্যে বিস্ময়ে জমে গেছিলেন নির্মলা। প্রথমে ভাবলেন ছেলে বোধ হয় বিয়ে করে আনলো। কিন্তু তন্ময় খুব সুন্দর করে বোঝালো , তিথিদের বাড়িতে কেউ নেই এখন,সাথে মন টাও ভালো নেই ওর, আপাতত কিছু দিন এখানেই থাকবে তাই। খুশিতে তখন আত্মহারা নির্মলা। মেয়েটা এতো মিশুকে, প্রথম কথাতেই মন জিতে নিয়েছে তার।
নির্মলার ভাবনা কাটলো তিথির ডাকে। তিথি একটা জলপাই রঙের শাড়ি দেখিয়ে বলল,
‘ এটা পরতে পারেন।আপনাকে ভীষণ সুন্দর লাগবে।
নির্মলা নিজের গায়ের সাথে মিশিয়ে বললেন,
‘ এটাতে আমাকে মানাাচ্ছে ?
তিথি মৃদু কন্ঠে বলল,
‘ আন্টি আপনি আমার মায়ের মতই সুন্দর। যা পরবেন আপনাদের তাতেই মানায়।
নির্মলা খুশি হলেন কিনা বোঝা গেলোনা।তবে চোখ দুটো সরু করে বললেন,
‘ তাই? কিন্তু তন্ময় টা যে বলে এ রঙে আমাকে সব থেকে পঁচা দেখায়।
তিথির মুখটা চুপসে গেলো। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
‘ আমার কাছেতো ভালোই লাগলো।
নির্মলা হেসে ফেললেন।বললেন,
‘ তোমার আর তন্ময়ের পছন্দের অনেক মিল আছে। আমিতো মজা করছিলাম।তন্ময়ই আমাকে শাড়িটা এনে দিয়েছিলো।তাহলে এটাই পরি বলো?
তিথি মাথা নেঁড়ে “হ্যা জানালো।
নির্মলা কপাল কুঁচকে বললেন,
‘ আচ্ছা তুমিও চলোনা আমাদের সাথে। ভালো লাগবে।
‘ কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন ছুড়লো তন্ময়। হাঁপিয়ে গিয়েছে বেশ। আরাম করে বসলো বিছানায়৷নির্মলা ব্যাস্ত কন্ঠে বললেন,
‘ ঐ যে আজ তোর দিপ্তি আন্টির বিবাহ বার্ষিকী না? ওখানে যাবো তো আমি আর তুষার।তুইতো যাবিনা আমি জানি,তিথিকে বলছিলাম আমাদের সাথে যেতে।
তন্ময় তিথিকে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” যাবে?
তিথি একবার নির্মলার দিকে তাকালো। বয়ঃজ্যেষ্ঠা মানুষের মুখের ওপর না বলতে জ্বিভ স্বায় দিচ্ছেনা।কিন্তু অমন অপরিচিত জায়গায় গিয়ে করবে কি? তাছাড়া এই মুহুর্তে এত আনন্দ উল্লাস সহ্য করার শক্তি নেই। তন্ময় আর মা জোর করলেন বলেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও আসতে হলো এখানে । তিথির ইতস্তত বোধ যেন বুঝে নিলো তন্ময়।হেসে বলল,
‘ মা, ও গিয়ে কি করবে? ও আবার জার্নি করতে পারেনা।এসেছে তো জার্নি করে একটু রিফ্রেশমেন্ট প্রয়োজন। আসার পর বলছিলো গা গুলোচ্ছে।
তিথি অবাক হয়ে তাকালো।সে কখন বলল? আর জার্নিতে তো কোনো রকম অসুবিধেই হয়না তার। নির্মলা মুখটা চিন্তিত করে বললেন,
‘ ওমা গা গুলোচ্ছে? লেবুর শরবত বানিয়ে দেই একটু?
তিথি মৃদূ স্বরে বলল,
‘ না আন্টি।প্রয়োজন নেই।ঠিক হয়ে যাবে।
নির্মলা ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ তাহলে আর কি! আমরা দুজনই চলে যাই বরং।
তন্ময় বলল,
‘ হ্যা তাই করো।
নির্মলা হাতের শাড়িটাতে চোখ দিয়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললেন,
‘ এই তন্ময় জানিস, তিথিও এই শাড়িটা পছন্দ করে দিলো। তোদের পছন্দ দেখছি একদম এক।
নির্মলা শুভ্র হাসলেন।তন্ময় আড়চোখে তিথির দিকে চাইতেই তিথি চোখ নামিয়ে নিলো। তন্ময়ের বুকের বা পাশে বিদ্ধ হলো তিথির লুকোনো দৃষ্টি। মনে মনে বলল,
‘ সারাজীবন মায়ের শাড়ি পছন্দ করে দেয়ার জন্যে হলেও তোমাকে এই বাড়িতে তুলতে চাই তিথি। পছন্দের মিল যখন হলো, মনের মিলটা কবে হবে ?
কোত্থ থেকে তুষার এসে ধড়াম করে বসলো তিথির পাশে। ভারি শরীরের ওজনে সোফাটা কেঁপে উঠলো নির্নিমেষ। তিথির মনে হলো একটুর জন্যে শূন্যে উঠে যায়নি সে। তুষার হাত পা দুটো মেলে দিয়ে মাথা টা রাখলো তিথির কোলে।ক্লান্ত কন্ঠে বলল,
‘ আমাকে একটু সেবা করো তিথিদি।
তিথি হেসে ওর চুলে হাত বোলালো। নির্মলা এসে বিছানার ওপর বসলেন। তন্ময়ের পাশে৷ তন্ময় টুপ করে মাথা উঠিয়ে দিলো মায়ের কোলে। লম্বা শ্বাস টেনে বলল,
‘ আহ! মায়ের আদরের জুড়ি নেই। ইহাই এক এবং একমাত্র শান্তির জায়গা।
তুষার চট করে উঠে বসলো। দৌড়ে বিছানায় এসে মায়ের অন্য উরুর ওপর শুয়ে পরলো। তন্ময় কে অনুকরন করে বলল,
‘ আহ! আসলেই তাই।
হেসে দুই ছেলের মাথায়ই হাত বোলালেন নির্মলা ।তিথির দিকে চেয়ে বললেন,
‘ দেখলে! কি পাগলামি করে দুটোতে?
তিথি হাসলো।ঠোঁট প্রসারন করে হাসলো। তন্ময় কোলে শুয়ে থেকেই পরোখ করলো সেই হাসি।মনে মনে ঘোষণা করলো,
‘ এমন সুন্দর হাসি ধরিত্রীর বুকে দ্বিতীয় টি নেই।
হোক না হাসিটে মিথ্যে। তবুতো মেয়েটা হাসছে। সে জানে তিথির ভেতরের কাল বৈশেখি এখনও শান্ত হয়নি।সবটা দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। ঝড় থামানোর ক্ষমতা তার নেই, কিন্তু ঝড়ের প্রভাব কাটানোর চেষ্টা করতে দোষ কি?
আর তাইতো জোর জবরদস্তি করে তিথিকে নিয়ে এলো সাথে৷তার মা বড় খোশমেজাজের মানুষ ,কারো মন ভালো করতে যথেষ্ট। দুজন মিলে গল্প জুঁড়লে মন্দ হবেনা।তার ওপর তুষারের পাগলামি।তিথির মন ভালো হবে ঠিক। না হয়েই বা যাবে কোথায়? তাও কৃতজ্ঞতাবোধ তিথির মায়ের প্রতি।আদিত্যর থেকে বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েও তাকে নতুন করে বিশ্বাস করায়। সে অনুরোধ করতেই তিথিকে তার সাথে পাঠাতে রাজি হওয়ায়। এই বিশ্বাসের মূল্য সে রাখবে।প্রানপনে রাখবে।কিছুতেই অমর্যাদা করবেনা, কখনোই না।
চলবে,