#পূর্ণ__তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৭)
নাস্তার টেবিলে বসেই মনের কালো মেঘ কেটেছে তিথির।তুষার আর তন্ময়ের খুনশুঁটি,সাথে নির্মলার একটু আকটু শাসন, একটা পরিপূর্ণ পরিবারের ঝোঁকে মন খারাপ দৌড়ে পালিয়েছে। তাই বাইরে বেরিয়েছে চটপট। তুষার বায়না ধরেছিলো সাথে আসার।তন্ময়,তিথি দুজনেই চাইছিলো আসুক।কিন্তু নির্মলা দেননি।তার ঘোর আপত্তি এখানে। মনে মনে চাইছিলেন, তিথি আর তন্ময় একটু একান্তে সময় কাটাক।সেখানে বাচ্চা মানুষের গিয়ে কি কাজ? ওদেরও অসুবিধে হবে আর তুষার তো এমনিই পাঁকা এরপর আরো পেঁকে গাছ থেকে খঁসে পরবে।
তাই দুজনই বেরিয়েছে।তিথি কোঁকড়ানো চুল গুলো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকেছে উঁচু করে।পড়নে জাম রঙের চুড়িদার। মুখে স্বাজস্বজ্জার কিচ্ছু নেই। তন্ময় গাড়ির দরজা খুলে দিতেই উঠে বসলো তিথি। তন্ময় উঠে সিট বেল্ট বেঁধে দিলো ওর। স্টিয়ারিং এ হাত রেখে বলল,
‘ কোথায় যাবে বলো?
‘ তোমার ইচ্ছে।
তন্ময় গাড়ি স্টার্ট করে বলল,
‘ ওকে।মাই চয়েস।
____________
গাড়ি তখন খুলনার পিচ ঢালা রাস্তায়। বাংলাদেশের এই জায়গায় যানজট একেবারেই শূন্য। যেমন শান্ত তেমনি সুন্দর তার পরিবেশ। জানলা থেকে ধেঁয়ে আসছে হিম বাতাস। মুখ চোখ ছুঁয়ে দিচ্ছে তিথির। সিটের সাথে মাথা এলিয়ে সামনে দেখছে সে। মনে মনে হিসেব কষছে জীবনের চরম কিছু ব্যার্থতার। কি হতো যদি আজ জীবনটা হতো একটু অন্য রকম!আর পাঁচটা সন্তানের মত যদি বাবা -মাকে একসাথে পেতো? সবাই হৈহৈ করে থাকতো একসাথে।যদি আদিত্যর সাথে আজ সুখের একটা সংসার হতো? নিজের সন্তানটাও বেঁচে থাকতো হয়তো!
তন্ময় ক্ষনে ক্ষনে তিথিকে দেখছে।তিথির অন্যমনস্কতা তাকে স্পষ্ট বোঝালো সে আদিত্যর চিন্তায় মগ্ন। মগ্ন, ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রনায় কাঁতরাতে। মেয়েটাকে এর বাইরে বের করে আনার যত্র উপায় কি নেই? যখন তাদের বন্ধুত্ব ছিলো, কি হাসিখুশি প্রানবন্ত ছিলো তিথি!কথা শেষ করার আগে হেসে গড়াগড়ি খেত। তন্ময় তখন চোখ ভরে দেখতো ওর গালের ছোট্ট ডিম্পল টাকে। আঙুল দিয়ে ছুঁতে ইচ্ছে হতো খুব। অথচ অধিকারবোধ আটকে দিতো । খুব কি ক্ষতি হতো যদি তিথির জীবনে আদিত্য আসার আগেই সে আসতো?সেতো ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতো মেয়েটাকে।
দুজনের গভীর ভাবনার ইতি টেনে তিথির কাঁধব্যাগ টা কেঁপে উঠলো।ভেতরে ভাইব্রট হচ্ছে ফোন।তিথি হুশ ফিরে পেয়ে তাড়াহুড়ো করে ফোন বার করলো। স্ক্রিনে তখন আননোন নম্বর ভাসছে। তন্ময় প্রশ্ন ছুড়লো,
‘ কে?
তিথি কপাল কুঁচকে বলল,
‘ বুঝতে পারছিনা।সেভ নেই।কিন্তু পরিচিত লাগছে নম্বরটা।
‘ ধরো।দেখো কে হয়!
‘ আদি হলে?
‘ কি হবে? ধরো।
তিথি ফোন রিসিভ করে কানে ঠেকাতেই ওপাশ থেকে সাথে সাথে মেয়েলি কন্ঠে কিছু অকথ্য গালাগাল ভেসে এলো। এক মুহুর্তের জন্যে হতভম্ব হয়ে পরলো তিথি। ফোনের স্ক্রিনে একবার চেঁয়ে ভালো করে দেখলো নম্বরটা। নাহ, নম্বরটা কার মনে পরছেনা।কিন্তু এভাবে নোংরা ভাষা বলার মানে কি?
তিথি ফোন কানে ধরলো আবার।ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠটি বলল,
‘ কি?মা* কথা বলছিস না কেন?
তিথির মুখ শক্ত হয়ে এলো এবার। স্বর চিনতে পেরেছে এতক্ষনে। কড়া কন্ঠে বলল,
‘ কেন ফোন করেছো তুমি? আর এসব কেমন ব্যাবহার?
ওপাশ থেকে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল,
‘ কেন ফোন করেছি জানিস না? তুই কি শুরু করেছিস এসব? আমার স্বামীকে কেঁড়ে নিতে চাইছিস আমার থেকে? লোভি, নোংরা মেয়েমানুষ।
তিথি দাঁত চেঁপে বলল,
‘ পুতুল ভদ্র ভাবে কথা বলো।আমি কিছু বলছিনা মানে এই না যে তুমি যা খুশি তাই বলবে।
‘ তুই কি বলবি হ্যা? তোর বলার আছেই বা কি? শরীর দিয়েতো আটকাতে পারিস নি আমার স্বামীকে, তাও তার পিছু ছাঁড়ছিস না?
তন্ময় গাড়ি চালানোর মাঝেও অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখছে।তিথির মুখচোখ দেখে কিছু হয়েছে মনে হলো।কিন্তু ব্যাপারটা ঠিকঠাক বোধগম্য হচ্ছেনা তার। এই পুতুল টা আবার কে?
তিথি অবাক হয়ে বলল,
‘ আমি তোমার স্বামিকে কেঁড়ে নিতে চাইছি? নাকি তোমার স্বামী দিন রাত আমায় ফোন করছে?আগে ভালো করে জেনে তারপর মানুষকে কথা শোনাবে।
পুতুল খেঁকিয়ে বলল,
‘ তোকে কথা শোনানোর কি বাকে আছে? তোদের মত মেয়েদের আমার খুব ভালো করে জানা আছে।তুই কি ভাবিস তোর জন্যে আমার বর আমায় দূরে সরিয়ে রেখেছে? না রাখেনি।উল্টে আমায় অনেক বেশি ভালোবাসছে। প্রত্যেক রাতেই ফুলসজ্জা হয় আমাদের, জানিস তো!
তিথির স্বর জমে এলো। পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে ক্ষীন কন্ঠে বলল,
‘ সেটা আমাকে বলার তো কিছু নেই।তোমরা স্বামী স্ত্রী, এসব স্বাভাবিক।আর তোমার লজ্জ্বা করেনা এসব ব্যাক্তিগত ব্যাপার অন্যের সাথে বলতে? তুমি ঠিক কি জন্যে আমায় কল করেছো বলোতো? তোমার বর তোমায় কিভাবে ভালোবাসে সেসব জানাতে?
পুতুল শাসিয়ে বলল,
‘ না, আমি তোকে সাবধান করে দিচ্ছি যাতে আমার স্বামীর আশেপাশেও তুই না ঘিষিস।খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।
তিথি হেসে বলল,
‘ এই না বললে তোমার বর তোমায় ভালোবেসে উগড়ে দিচ্ছে? তাহলে বরকে বেঁধে রাখছো না কেন?আমি শরীর দিয়ে আটকাতে পারিনি যখন তুমি আটকাও। আমি তার আশেপাশে হলেও বা কি? সব জেনেশুনে বিয়ে করার পরে অন্যের ঘাঁড়ে দোষ চাপাচ্ছো? বাহ! তোমার মত মেয়েকে-তো বাহবা দেয়া উচিত।
পুতুল চেঁতে বলল,
‘ তুই কি বলবি আমায়? তোর নিজের চরিত্রের ঠিক আছে? বিয়ের আগে বাচ্চা বানাস। তোর মাও নিশ্চয়ই এমন ছিলো নাহলে কেন কেউ মানলোনা তোকে?
তুই…
কথা শেষ করার আগেই তিথি লাইন কেটে দিলো।এমন কথা শোনাও পাপ। ঢোক গিলে আবার সিটের সাথে মাথা এলিয়ে দিলো।চোখ দুটো বুজে ফেলল তারপর তন্ময় গাড়ি সামলে তিথির দিকে ফিরলো, তিথির চোখের কার্নিশ বেয়ে চিকন রেখার মত জল পরছে দেখে তাৎক্ষণিক গাড়িতে ব্রেক কষলো তন্ময়।উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
‘ কি হয়েছে তিথি? আবার কেন কাঁদছো? এই পুতুল কে?
তিথি জলমাখা চোখে চাইলো। ভাঙা কন্ঠে বলল,
‘ আদিত্যর স্ত্রী।
তন্ময় হোচট খেল।
‘ উনি কেন ফোন করেছেন? আর উনি তোমায় চিনলেনই বা কি করে?
তিথি কালো মুখেও স্ফীত হেসে বলল ,
‘ সে অনেক কথা, মাঝরাস্তায় কিভাবে বলি?
তন্ময় উত্তর দিলোনা।চট করে গাড়ি স্টার্ট করলো আবার। একটু বাদে এক সাইডে নিয়ে থামালো।তিথি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বলল,
‘ এবার তো মাঝরাস্তায় নেই আমরা।তুমি বলো!
তিথির অদ্ভূত লাগলো তন্ময়কে। এর কি কখনও বিরক্তি আসেনা তার প্রতি?
ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ আদিত্যর বিয়ের দুদিন আগে আমি পুতুল কে ফোন করি।নম্বরটা রঞ্জন দাদার কাছে অনেক অনুরোধ করে এনেছিলাম।উনি আদিত্যর থকে চেয়ে আনেন আমার জন্যে।
তন্ময় মাঝপথে কৌতুহল নিয়ে বলল,
‘ আদিত্য জানতো? যে নম্বর টা তুমি চেয়েছিলে?
তিথি দুদিকে মাথা নেঁড়ে জানালো” না’
‘ তারপর?
‘ তারপর ফোন করলাম।পুতুল ধরলো। পরিচয় দেয়াতে ও প্রথমেই আমাকে চিনে ফেলল। হয়তো আদিত্যর মা -বোন এদের থেকে শুনেছিলো। খুবই বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘ কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।আমার সময় নেই।
আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি।হাউমাউ করে কেঁদে ওকে অনুরোধ করলাম বিয়েটা না করতে। আমাদের সন্তানের কথা অব্দি বললাম।জবাবে ও কি বলল জানো?
‘ কি?
‘ বলল, তোমাদের যখন এতোই ভালোবাসা তাহলে তোমরা পালিয়ে যাচ্ছোনা কেন?
আমি ওকে জানালাম আদি যেতে রাজি নয়।ও শুনে বলল,
‘ তার মানে তো পরিষ্কার,নিশ্চয়ই আদি তোমাকে চাইছেনা। শোনো বিয়ের আগে সবারই এরকম একটু আধটু থাকে। তাই বলে কি বিয়ে ভেঙে দেবো নাকি? তার চেয়ে বরং তুমিই নিজেকে ওর জীবন থেকে সরিয়ে নাও।
আমি তাও মিনতি করি,ওকে বোঝানোর চেষ্টা করি।ও শুনতে চায়না।উল্টে আমাকে বলে,
‘ আমিতো বিয়ে করবোই তোমার ক্ষমতা থাকলে তুমি আটকাও।
কথাটা বলেই পুতুল লাইন কেটে দেয় ।বারবার ডায়াল করেও পাইনি আমি। বন্ধ করে রেখেছিলো ফোন।
তন্ময় রাগে স্টিয়ারিংয়ে ঘুষি মেরে বলল,
‘ আনবিলিভ-এবল।একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের প্রতি এরকম আচরন কিভাবে করে? সব জেনেশুনেও বিয়ের পিরিতে বসে গেলো? আর আজ তোমাকে কল করে অপমান ও করলো।যতটুকু বুঝলাম নিশ্চয়ই তোমাকে ব্লেম দিচ্ছিলো কোনো কিছু নিয়ে?
তিথি মাথা নেঁড়ে বলল,
‘ হু।সাবধান করছিলো আদিত্যর ধারে কাছে না যেতে।
তন্ময় মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ মেয়ে মানুষ সত্যিই কয়েক ধরনের হয়
।এই মেয়েটাকে ঠিক কিসের সাথে তুলনা করবো আ’ম কনফিউজড।
তিথির গাল বেয়ে চোখের জল গলা অব্দি পৌছালো। তন্ময় মৃদূ হেসে পানিটা বাম হাতে মুছে দিয়ে বলল,
‘ ভুলে যাও ওসব। ভেবে নাওযে এরকম কিছু ঘটেইনি।কেউ আমাদের গায়ে কাঁদা ছুড়লে আমরা কি সেই কাঁদা গায়ে মেখে বসে থাকবো? জলে ধুঁয়ে পরিষ্কার করবোনা নিজেকে?
তিথি “হ্যা বোধক মাথা দোলালো।
তন্ময় হেসে বলল,
‘ তবে? বোঁকার মত কান্নার কি মানে? তিথি না অনেক বুদ্ধিমতি?
তিথি এর উত্তর দিলোনা। তবে নিজের গালে রাখা তন্ময়ের হাতটা ছুঁয়ে বলল,
‘ তোমার কাছে আর কদিন থাকলে আমার মন মস্তিষ্ক সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। কনভেন্স করার অসাধারণ ক্ষমতা তোমার।
তন্ময় হাসলো।সোজা হয়ে বসে বলল,
” চলো শপিং করি।শুনেছি শপিং করলে মেয়েদের মন ভালো হয়।মায়ের জন্যে শাড়ি কিনবো,তুষারের জন্যে জামা অার…
তন্ময় চুপ হয়ে গেলো। পরমুহূর্তে ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ এই ওর সাইজের প্যান্ট পাবোতো? ওর যা হাতির মত শরীর!
তিথি হেসে ফেলল। চোখ মুছে বলল,
‘ তন্ময়? তুষার ততটাও মোটা নয়।তাছাড়া বাচ্চারা একটু নাদুস-নুদুস না হলে আদর করতে ভালো লাগেনা।
তন্ময় ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
‘ তাই? তাহলে তুমি এরম পাটকাঠি কেন? একটু খেয়ে দেয়ে মোটা হও!
তিথির একটু আগের মন খারাপ নির্নিমেষ উবে গেলো। ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ আমি কি বাচ্চা?
‘ অবশ্যই।বাচারাও একটু হলে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদে। তুমিও তাই।
তিথি মুখ কুঁচকে তন্ময়ের বাহুর ওপর ঘুষি বসিয়ে দিলো। তন্ময়ের হাসি প্রসারিত হলো আরো। মনে মনে বলল,
” যাক! তিথিকে হাসিয়েছি। তিথির যতবার মন খারাপ হবে আমি ততবার ওকে হাসাবো।ওর হাসিমুখ দেখতে ক্লান্ত হবোনা একটুও।
_____
কাকতালীয় হলেও তন্ময় গাড়ি থামালো নিউমার্কেট এর উল্টোপাশের রাস্তায়। সিটবেল্ট খুলতে খুলতে ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘ নামো নামো, চলে এসেছি
‘ এখান থেকে কিনবে?
‘ হু। এখান থেকে শুরু করবো।
তন্ময় নামার পর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো তিথি। রাস্তাটা অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ব্যাস্ত আজ।গাড়ি ঘোড়া,তেমন একটা নেই।তিথি রাস্তা পার হতে জানে। কিন্তু পা বাড়ানোর আগেই ওর হাত টা শক্ত করে ধরলো তন্ময়।তিথি অবাক হয়ে তন্ময়ের ধরে রাখা হাতের দিকে একবার তাকিয়ে তন্ময়ের দিকে চাইলো।তন্ময় চেয়ে আছে সামনে। নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,
‘ ছোট বেলায় মা হাত ধরে রাস্তা পার করত।বড় হয়ে আমি মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার করি।অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। কিছু মনে করলেও আমার কিচ্ছু করার নেই তিথি।রাস্তা তোমাকে আমার হাত ধরেই পার হতে হবে
তন্ময়ের কথায় তিথি মুচকি হাসলো।কথা বাড়ালোনা।তন্ময় এগোতে নিলো।হুট করে তিথির অন্য হাতটা খপ করে টেনে ধরলো কেউ একজন।তিথি চমকে গিয়ে সেদিকে ফিরলো। দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখতেই স্তব্ধ হয়ে এলো তাৎক্ষণিক। বিস্মিত কন্ঠে বলল,
‘ আদি!
নামটা শুনে তড়িৎ গতিতে ঘাঁড় ফিরিয়ে পেছনে তাকালো তন্ময়।আদিত্য একা নয় সাথে রঞ্জনও দাঁড়িয়ে আছে। মুখমণ্ডল জুঁড়ে ঘাঁবড়ে যাওয়ার ছাপ।আগত বিগড়ে যাওয়া পরিস্থিতি সামলাতে না পারার ভয় মনে।
আদিত্য চোয়াল শক্ত করে চেয়ে আছে তিথির দিকে।তিথি হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।আদিত্য খোঁচানোর উদ্দেশ্যে বলল,
‘ আমার ধরে রাখা হাত ছাড়াতে চাইছো? কই অন্য হাতটাও তো অন্য কারোর দখলে। সেটাতো ছাড়াতে দেখছিনা!
তিথি বুঝে নিলো আদিত্যর কথার ইঙ্গিত। তন্ময় সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলো তিথির হাত। তবে বিমুঢ় হলো তিথির উত্তরে। তিথি কাঠ গলায় আদিত্যকে বলল,
‘ তন্ময়ের হাত ধরা আর তোমার হাত ধরার মধ্যে অনেক তফাৎ। আমি যাকে ঘৃনা করি তাকে স্পর্শ করাতো দূর আমার ধারে কাছেও ঘিষতে দেইনা।
আদিত্য ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
‘ তাহলে যাকে ভালোবাসো তাকেই ছুঁতে দাও নিজেকে?এতোই সস্তা করে ফেললে?
তিথি স্তম্ভিত চোখে চেয়ে থাকলো। কি ইঙ্গিত দিলো আদিত্য? এতটা নোংরা কথা বলতে পারলো ও?
রঞ্জন বুঝলো আদিত্যর মাথা ঠিক নেই।তিথিকে অন্য কারো সাথে এভাবে দেখে নিতে পারেনি ছেলেটা।ওকে শান্ত করা প্রয়োজন। নাহলে কি থেকে কি বলে ফেলবে!উল্টে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। আদিত্যর কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ আদি এটা পাব্লিক প্লেস।এখানে সিনক্রিয়েট করিস না।চল।
আদিত্য ঝাঁড়া মেরে রঞ্জনের হাতটা সরিয়ে দিলো।তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ভদ্র লোকের পোশাক পরে, দামি গাড়ি চললেই যে ভদ্র হওয়া যায়না তার প্রমান তুমি তন্ময়। ব্যাবহার করা পন্য এত ভাল্লাগে বুঝি?
তন্ময় এতক্ষন শান্ত থাকলেও উত্তরে এবার ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল
‘ মুখ সামলে কথা বলুন মিস্টার আদিত্য সাহা।আর যাকে ভালোবাসেন তাকে নিয়ে এমন নোংরা মন্তব্য করতে আপনার মুখে বাঁধছেনা?
তিথি টলটলে জল চোখে নিয়ে বলল,
‘ তুমিওনা তন্ময়,এমন এমন প্রশ্ন করো!বাঁধলে কি আর বলতো?
যে যেমন তার ভাবনাও তো তেমন হবে।
আদিত্য আঙুল উঁচিয়ে শাসানোর ভঙিতে বলল,
‘ চুপ একদম চুপ।তোমরা মেয়েরা এরকমই তাইনা তিথি?একটা গেলে আরেকটা অপশন তৈরি থাকে তোমাদের। আমি তারপর তন্ময়,আমার আগেও কেউ ছিলো নাকি?
তিথি তেঁতে বলল,
‘ ব্যাস আদি,অনেক বলে ফেলেছো। মুখে লাগাম দিতে শেখো এবার।
‘ কি করবে না দিলে? আমি বিয়ে করেছি বলে , তুমি বিয়ের আগেই অন্য ছেলের হাত ধরে ঘোরাঘুরি করছো? অথচ মুখে লাগাম দেবো আমি? তা এতদিন কই ছিলে? তন্ময়ের বাসায়? নাকি ওর রুমেও?এতোটা নিঁচে নামিয়ে ফেলেছো নিজেকে? আর সহ্য হচ্ছেনা? শরীরের তৃষ্ণা কমানোর খুব তাড়া?
তন্ময় ধমকে বলল,
‘ আদিত্য! কিসব বলছেন আপনি? খবরদার আর একটা উল্টোপাল্টা কথাও বলবেন না।
রঞ্জন দিশেহারা।আদিত্যকে থামানোর এত চেষ্টা তার একটুও সফল হচ্ছেনা। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদিত্য ক্ষিপ্ত বাঘের মত তন্ময়ের কলার চেঁপে ধরলো। হকচকালো প্রত্যেকে।আদিত্য দাঁত চিবিয়ে বলল
‘ কি করবি তুই হ্যা? তুই তিথিকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কাজ করতে পারলে আমি বলতে কেন পারবোনা? বল?
তিথি আর নিতে পারলোনা। আদিত্যকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ভরা রাস্তায় ঠাস করে এক চঁড় মারলো ওর গালে। হতবিহ্বল আদিত্য বোবা বনে এলো।আশেপাশের লোকদের উৎসুক দৃষ্টি তখন তুঙ্গে।রঞ্জন -তন্ময় সবার চোখে মুখে বিস্ময়। তিথিকে নিয়ে এক আকাশ বিস্ময়।
চলবে,