#পূর্ণ__তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২০)
আমি সেই অবহেলা,আমি সেই নতমুখ,নিরবে ফিরে যাওয়া অভিমান,ভেঁজা চোখ।আমাকে গ্রহন করো!
উৎসব থেকে ফিরে যাওয়া আমি সেই প্রত্যাখ্যান। আমি সেই অনিচ্ছা নির্বাসন বুকে নেয়া ঘোলাটে চাঁদ। আমাকে কি আর দুঃখ দেখাবে?
(রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্)
স্বপ্নের মত সুন্দর পৃথিবী এখন কেমন নিরস,রঙহীন।চারপাশটা বিষাদে ভর্তি। তন্ময়ের বুক হাহাকার করছে। শুভ্র সকাল টা মনে হচ্ছে অবসাদ আর ক্লান্তিতে মোঁড়ানো। তন্ময় দুহাত পকেট গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। প্রকৃতি দেখছে হয়তো! নয়তো মন খারাপের সুতো টানছে। সকাল বেলা তিথির মা এলো,আর এখন ব্যাগ গোছাচ্ছে তিথি। তার মানে সেই ঠিক, তিথি চলে যাচ্ছে।থাকতে চাইছেনা এখানে। তন্ময় নিজেকেই প্রশ্ন করলো,
” ঝোঁকের বশে মনের কথা জানানোর খুব কি প্রয়োজন ছিলো তন্ময়? না হলে অন্তত আরো কটা দিন তিথি এখানে থাকতো,তোর চোখের সামনে, বুকের খুব কাছে। সকাল সন্ধ্যে দু চোখ ভরে দেখে তৃষ্ণা মেটাতি! এরপর? তিথি যদি আর সম্পর্কটাই না রাখতে চায়? বাঁচতে পারবিতো? পারবিতো নিঃশ্বাস নিতে?
প্রশ্ন গুলোর উত্তর অনেকক্ষন হাঁতড়েও ব্যার্থ হলো তন্ময়।নিতে পারলোনা আর,বারান্দার সাদা টাইলস যুক্ত মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে পরলো। চোখ জ্বলছে খুব।হৃদপিণ্ড শূন্য লাগছে।লাগছে অস্থির। ভালোবাসার জালে নিজেই নিজেকে এমন ভাবে প্যাঁচালো ,না পারছে মুক্ত হতে আর না পারছে ঝুঁলে থাকতে।এ কেমন শাস্তি ভগবান! এ কেমন বিড়ম্বনা!
_______
টেবিলের ওপর ধোঁয়া ওঠা দুধ চা।প্রিচে দু রকমের বিস্কিট স্বাজানো। অন্য লাল সিরামিকের প্রিচটাতে দুটো স্যান্ডউইচ। একটা অর্ধেক খাওয়া পরে আছে। অন্যটা আস্ত।
নির্মলা চায়ের কাপ টা তুলে এগিয়ে দিলেন সুচিত্রার দিকে।হেসে বললেন,
‘ দিদি চা খাচ্ছেন না কেন?নিন। জার্নি করেছেন না, চা-টা খান,শরীর ঝরঝরে লাগবে।
সুচিত্রা মৃদূ হেসে কাপ হাতে নিলো। পাতলা ঠোঁটের চুমুক বসালো কাপের এক কোনে। এই প্রথম সুচিত্রার সঙ্গে আলাপ নির্মলার।মহিলাটিকে বেশ মনে ধরেছে তার।কি সুন্দর সাবলীল! মেয়ের মতোই চটপটে কথাবার্তা। জড়োতা নেই জ্বিভে। সুচিত্রা চা খাওয়ার মাঝে ঘরের চারপাশ দেখে বললেন,
‘ আপনি বোধ হয় অনেক গোছালো দিদি! ভীষণ সুন্দর স্বাজিয়েছেন বাড়িটা।
‘ তা একটু গোছাই।আবার সময় কাটাতেও বলতে পারেন।তুষার কে স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা ছাড়া আমার আর কোনও কাজ থাকেনা। মাঝে মাঝে মনে হয় শখের বশে হলেও চাকরি বাকরি করি, এমন ভাবতে ভাবতে দিন পার করলাম।চাকরি আর হলোনা। এখন তো বয়স পেরিয়েছে। হাটুর ব্যাথায় দাঁড়াতেই পারিনা। তবে আপনাকে দেখে বেশ ভালো লাগলো কিন্তু, তিথির মুখে আপনার অনেক কথা শুনেছিলাম। ইচ্ছে ছিলো আলাপ করার।এত তাড়াতাড়ি হবে বুঝতে পারিনি।
সুচিত্রা প্রসস্থ হেসে বললেন,
‘ আসলে সোনু ফোনে এত তাড়া দিলো, আমি ভাবলাম কি না কি ঘটেছে!তাই চলে এলাম।আর আজ শুক্রবারতো স্কুল নেই ওইজন্যে সুবিধে হয়েছে।
‘ তা এসে ভালো করেছেন।কদিন থেকে তারপর যাবেন কিন্তু…
সুচিত্রা ব্যাস্ত কন্ঠে বললেন,
‘ না না, দিদি তা পারবোনা। টেইলার্স টা খুলতে হবে। নাহলে সমস্যায় পরে যাবো। বোঝেনই তো! একার ঘাঁড়ে এত চাপ!
নির্মলা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘ একার ঘাঁড়ে কেন? তিথির বাবা?
সুচিত্রা ধাক্কা খেলেন।কি জবাব দেবে এখন? সুচিত্রার উদাস মুখ দেখে নির্মলা নিজের মত বুঝে নিলেন।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
‘ বুঝেছি।কিছু মনে করবেন না,এরকম আজকাল প্রায় সংসারেই হয়।
সুচিত্রা কথার অর্থ না বুঝে চোখ সরু করে তাকালেন। নির্মলা সামান্য হেসে বললেন,
‘ আপনারা বোধ হয় আলাদা থাকেন!
সুচিত্রা অবাক হয়ে বললেন,
‘ কি করে বুঝলেন?
‘ আন্দাজ করেছি।আপনার সিঁথিতে সিঁদুর দেখে অন্য কিছু ভাবার তো উপায় নেই।তাই।তবে আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম,যদি কিছু মনে না করেন..
‘ জ্বি বলুন না…
নির্মলা কিছুক্ষন ইতস্তত করলেন।সুচিত্রা বুঝতে পেরে আশ্বস্ত করে বললেন,
‘ এত চিন্তার কিছু নেই দিদি আপনি বলুন।
নির্মলা তাও কিছুটা সময় নিয়ে বললেন,
‘ আসলে আমার ছেলেটা মানে তন্ময় তিথিকে ভীষণ পছন্দ করে, যদি আপনার মেয়েকে আমার মেয়ে হিসেবে দিতেন ধন্য হতাম দিদি। আমার ঘরে সব আছে শুধু একটা মেয়ে নেই,সেই অভাব টা পূরন করতে চাইছি, আমাকে কি ফিরিয়ে দেবেন?
সুচিত্রা হতবিহ্বল হয়ে বসে রইলেন খানিকক্ষন। তিথির জীবনের কালো অধ্যায় সম্পর্কে কি অবগত নয় তন্ময়ের মা? হলে নিশ্চয়ই এমন প্রস্তাব দিতেন না। কিন্তু এখন? মুখের ওপর না বলবে কি করে?
সুচিত্রাকে নিশ্চুপ দেখে নির্মলা আবার বললেন,
‘ আসলে সময় করে আমিই যেতাম আপনার বাড়িতে,আপনি এলেন দেখে আর চেঁপে রাখতে পারলাম না।
সুচিত্রা তবুও কথা বললেন না।সে ভাবতে ব্যাস্ত।এত ভালো ঘর,এত ভালো মা,এত ভালো ছেলে এরকম একটা পরিবার তো যে কেউ চাইবে তার মেয়ের জন্যে।কিন্তু সে পেয়েও হাত ছাড়া করছে? তিথির সবটা জেনে তন্ময় মেনে নিলেও কি নির্মলা মানবেন? কেউ কি জেনেশুনে মেনে নেয়? আর তিথি? ওকি মানবে?
সুচিত্রা চিন্তায় শুষ্ক ঠোঁট জ্বিভ দিয়ে ভেজালেন।নির্মলা বুঝতে পারলেন হয়তো।হেসে বললেন,
‘ আপনি এত ভাবছেন কেন দিদি? আমি কিন্তু এক্ষুনি আপনার উত্তর চাইছিনা।আপনি সময় নিন,তিথির মতামত জানুন তারপর আরামসে কথা বলব।
সুচিত্রা স্বস্তি পেয়ে বললেন,
‘ সেই ভালো।
______
” ও তিথি দি তুমি সত্যি চলে যাবে?
তিথি তুষারের গাল ছুঁয়ে বলল,
” যাবোতো,তুমি যাবে আমার সাথে?.
তুষার মন খারাপ করে বসে পরলো বিছানায়।
‘ যেতে তো চাই,কিন্তু স্কুলের জন্যে মা দেবেনা।
তিথি হেসে ওর পাশে এসে বসলো।মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ স্কুল ফাঁকি দিয়ে কোথাও যাওয়াও ঠিক নয়, যখন ছুটি পাবে আমাকে জানিও আমি নিজে এসে তোমায় নিয়ে যাবো।
তুষার ছোট ভ্রু দুটো কুঁচকে বলল,
‘ তোমায় কি করে জানাবো?
‘ কেন? তোমার দাদাকে জানাবে,তাহলেই আমি জানবো।
তুষার বোঁকা বোঁকা কন্ঠে বলল,
” দাদাকে জানালেই তুমি জানবে? তুমি আর দাদা একই?
তিথি থতমত খেয়ে বলল,
‘ না তা নয়।ওসব তুমি বুঝবেনা।
তিথি উঠে এসে ব্যাগের চেইন টানলো,হঠাৎ তুষার এসে ওর কোঁমড় জড়িয়ে আদুরে স্বরে বলল,
‘ ও তিথিদি, আর কদিন থাকোনা।প্লিজ!
তিথি হাসলো, হাটুমুঁড়ে বসে তুষারের নরম গালে চুঁমু খেয়ে বলল,
‘ আবার আসবো বাবু।
তুষার আনন্দে হাত পেতে বলল,
‘ প্রমিস?
তিথি একটু ভেবে হাতটা ধরে বলল,
‘ প্রমিস!
পরমুহূর্তে এদিক ওদিক তাকিয়ে চাপা স্বরে বলল,
‘ আচ্ছা তুষার ,তোমার দাদা কই?
তুষার নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,
‘ দাদাতো দাদার ঘরে।তুমি চলে যাবে না? তাই দাদারও মন খারাপ।
তিথি কপাল কুঁচকে বলল,
‘ তুমি কি করে জানলে?
‘ আমি সব জানি, সব বুঝি,
তিথি অবাক হয়ে বলল,
‘ তাই? কি কি বোঝো?
তুষার দুষ্টু হেসে বলল,
‘ তুমি আমার বউদি হবে…
তিথি হোচট খেলো। মুখ হা করে বলল ,
‘ এসব কে বলেছে?
‘ বলবনা।
কথাটা বলেই তুষার ছুটে বেরিয়ে গেলো ঘর ছেড়ে। তিথি তব্দা খেয়ে তাকিয়ে রইলো। পরমুহুর্তে তুষারের পাগলামিতে হাসি ফুটলো ঠোঁটে।ছেলেটাকে দেখলেই স্বপ্নর কথা আপনা-অাপনি মনে পড়ে।তিথি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ হাতে বের হলো রুম থেকে।
_____
তন্ময়..?
ডাক শুনে চোখ তুলল তন্ময়। চোখের চারপাশে কেউ লাল রঙ ঢেলেছে মনে হচ্ছে। নিদারুন ফুলে আছে। তিথিকে দেখে চোখের দৃষ্টি গাঢ় হলো তন্ময়ের। তিথির হাতে ব্যাগপ্যাক দেখে ভারি হলো দুঃখ দুঃখ অনুভূতি। তিথি একটু ঝুঁকে গিয়ে হাত বাড়ালো,উদ্বেগ হীন কন্ঠে বলল,
‘ উঠে এসো!
তন্ময় খানিক অবাক হলো। তিথির কন্ঠস্বর তো স্বাভাবিক। তিথির পেতে রাখা হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ চলে যাচ্ছো তাহলে?
তিথি মৃদূ স্বরে বলল,
‘ সারাজীবন থাকার জন্যে কি এসেছিলাম? এক না একদিন তো যেতেই হতো!
তন্ময় নির্দ্বিধায় বলে দিলো,
” সারাজীবনে এর জন্যে এলে কি খুব ক্ষতি হতো তিথি?
তিথির অদ্ভূত অনুভূতি হলো তখন। শুকনো ঢোক গিলে বলল,
‘ কাল অবনী ফোন করেছিলো,বলল সামনের মাসে প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষার ডেট পরবে। পড়াশোনাতো সিকেয় তুলেছিলাম। তাই বাড়ি ফিরে একটু পড়তে চাচ্ছি।পাশ মার্কস তো তুলতে হবে বলো!
তন্ময় কিছুক্ষন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকলো। হঠাৎ উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
‘ তার মানে তুমি আমার ওপর রাগ করে যাচ্ছোনা?
তিথি মুচকি হেসে দুদিকে মাথা নেঁড়ে “না” জানালো।তন্ময়ের কাঠ মুখে বিস্তর হাসি ফুটলো তাৎক্ষণিক।
তিথি ক্ষনিকের জন্যে চুপ থেকে বলল
‘ আমাকে ভালোবাসার ভুল করলে কিভাবে জানিনা।তবে ভালোবাসার অধিকার সবার আছে।তুমি কাকে ভালোবাসবে সেটা তোমার একান্ত ব্যক্তিগত। এখানে আমি নাক গলাবো না তন্ময়।
তন্ময় ব্যাস্ত কন্ঠে শুধালো,” আর তুমি? তুমি আমায় ভালোবাসবেনা তিথি?
তিথি খানিক্ষন নির্বাক চোখে চেয়ে থেকে বলল,
‘ এক ভুল কি বারবার করা সম্ভব তন্ময়? একজন কে ভুলে যত্র আরেকজন কে মনে জায়গা দেওয়া যায়? আদিত্যর প্রতিটি স্পর্শ আমার গায়ে স্পষ্ট। তুমি মেনে নিলেও আমি যে মেনে নিতে পারবোনা।আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী হবে আমার জীবনের প্রথম পুরুষ। সেই চাওয়া আমি রাখতে ব্যার্থ,আর কোনো সফলতা আমার প্রয়োজন নেই।
তিথির কথার ইঙ্গিতে এতক্ষনের হাসিটা আবার উবে গেলো তন্ময়ের। তিথি বলল,
‘ ভালো থেকো। আসি,সময় করে যেও বাড়িতে।
তিথি চলে যেতে নিলে পেছনে থেকে তন্ময় হাতটা টেনে ধরে বলল,
‘ আর যদি তোমার মনে কখনও জায়গা করে নিতে পারি? তখন?
তিথি ঘুরে তাকিয়ে বলল,
‘ সেদিনের অপেক্ষায় থাকলাম।
তন্ময় দৃঢ়তা নিয়ে বলল,
‘ বেশিদিন অপেক্ষায় রাখবোনা তোমায়।
তিথি প্রসঙ্গ পাল্টতে বলল,
‘ তুষার টা অনেক মন খারাপ করছে আমি যাওয়াতে।তুমি ওকে একটু বুঝিও।আর নিজেও এমন চেহারাটাকে বাংলার পাঁচ করে রেখোনা।পরীক্ষা শেষে এসে আবার ঘুরে যাবো।
উত্তরে তন্ময় শীতল কন্ঠে বলল,
‘ চোখ বন্ধ করে আমি তোমায় অনুভব করতে পারি তিথি।সেখানে তোমার উপস্থিতি অনুপস্থিতি মুখ্য নয়।হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি না থাকলেও বুকের ভেতর থেকে সেই পরিচিত শব্দে বাতাস ভারী হয়…ধুক ধুক…ধুক ধুক।
অদ্ভূত এক রহস্যময় শূন্যতায় সেই শব্দ ঘুঁচিয়ে দেয় আমার একাকিত্ব।
__________
সকাল বেলা বসার ঘরে এক ঝুম নিস্তব্ধতা। ঘরের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে পুতুল।আর বরাবরের মত বিচারের কাঠগঁড়ায় আদিত্য সাহা। সমিরনের সহ্য সীমার বাইরে চলে গিয়েছে ছেলে।কাল রাতে বাড়ি ফেরেনি। রঞ্জনের বাড়িতেও ছিলোনা,রঞ্জন নিজেও ছিলোনা বাড়িতে। কোথায় গেছিলো তবে? নিশ্চয়ই তিথিদের বাড়িতে। নষ্টা মেয়েমানুষের সাথে মিশে তার ছেলেও হারাচ্ছে চরিত্র। প্রকান্ড নীরবতা কাটাতে সমিরন থমথমে কন্ঠে বললেন,
‘ আমাকে শেষ বারের মত একটা কথা বলো আদি, তুমি শোধরাবে কি না?
আদিত্য উত্তর দিলোনা।উল্টে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
‘ আমার ঘুম পাচ্ছে,ঘরে যেতে পারি?
সমিরনের মেজাজ তেঁতে এলো। চিল্লিয়ে বললেন,
‘ এক থাপ্পড়ে তোমার ঘুম ঘুঁচিয়ে দেবো আমি। বেয়াদব কোথাকার!
আদিত্য তাও উত্তর দিলোনা। শক্ত চোয়াল অথচ শান্ত ভাবমূর্তি। শকুন্তলা বিরক্ত হয়ে বললেন
‘ তোর সমস্যা কোথায় বলবি আদি? একটা মেয়ের জন্যে ঘরে এত অশান্তি করছিস কেন? বউ আছে বউ নিয়ে থাকনা!
আদিত্য দাঁত চিবিয়ে বলল,
‘ আমার কেউ নেই।না বউ, না বাবা মা, অামি একা!
সমিরন সুর টনে বললেন,
‘ তাই নাকি? তা তোমার বাবা মাকে জ্যান্ত মেরে ফেললে বুঝি? বাহ, তোমার মত ছেলের থেকে এমনটাই আশা করা যায়।
‘ আপনাকে কে বলেছে আমার প্রতি আশা রাখতে বাবা?না রাখলেন,আমিতো জোর করিনি।
সমিরন ক্ষেপে বললেন,
‘ শুনলে তোমার ছেলের কথা শকুন্তলা? শুনলে? আমার খাচ্ছে আমার পরছে আর…
আদিত্য মাঝপথে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল,
‘ ব্যাস বাবা,অনেক দিয়েছেনে এই খোঁটা। থামুন এবার। মানছি আমার নিজের কোনো কাজ নেই কিন্তু তাই বলে ফ্রিতে আমায় খাওয়াননি আপনি, আপনার ব্যাবসা আমি আপনার থেকেও বেশি সামলেছি।কদিন গিয়েছেন কর্মচারিদের কাছে?কদিন তদারকি করেছেন তারা কি করছে না করছে? মাসের ৩০ দিন আমি সেখানে বসে থেকেছি।কে কোথা থেকে টাকা মারছে সব আমি দেখেছি, আপনার তখন পাত্তাও ছিলোনা।আপনার এত বড় ব্যাবসার এইটুকু হলেও কৃতিত্ব আমার আছে।বুঝেছেন? আর তাও যদি আপনি বলেন আমি আপনার ঘাঁড়ে খাচ্ছি তবে সে সমাধান ও আমি ভেবেছি।আমি হাসিবের সাথে পার্টনার শিপের ব্যাবসা করবো। আপনার ঘাঁড়ে পরে থাকার কোনো প্রয়োজন হবেনা তখন।
সমিরন ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘ কত টাকা পাবে মাসে?
‘ সাত হাজার!
সমিরন শব্দ করে হেসে বললেন,
‘ সাত হাজার? এটাতো তোমার সিগারেটের দামই তুলতে পারবেনা।বাইকের তেল পাবে কোত্থেকে?.
আদিত্য কাটকাট জবাব দিলো,
‘ সেটা আপনাকে ভাবতে হবেনা।আপাতত নিজের খাবো,তারপর নিজের ঠিকানাও জোঁগাড় করে নেবো।
আদিত্য ঘরের দিকে হেটে যেতে নিলে পেছন থেকে সমিরন বললেন,
‘ কুলাঙ্গার কোথাকার!বাপ -মায়ের মুখে মুখে তর্ক করছে।
আদিত্য দাঁড়িয়ে পরলো।কঁড়া কন্ঠে বলল
‘ কুলাঙ্গার বলবেন না বাবা, কারন তর্ক টা যদি এই ফালতু বিয়ের এক ঘন্টা আগেও করতাম, তাহলে আমার জীবন টা এভাবে এলোমেলো হতোনা।
সমিরন চেঁতে কিছু বলার আগেই আদিত্য ভেতরে চলে গেলো।তবে সামনে এসে দাঁড়ালো পুতুল।হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে, এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ জল টা খেয়ে নিন।
আদিত্য শক্ত মুখে চেয়ে থেকে গ্লাস টা হাতে নিলো।হুট করে গ্লাসের সবটুকু পানি ছুঁড়ে মারলো পুতুলের মুখে।গ্লাসটা আছঁড়ে ফেলল মেঝেতে।শব্দ পেয়ে শকুন্তলা বসার ঘর থেকে ছুটে এলেন।আদিত্য দাঁত চেঁপে বলল,
‘ তোকে আমার সামনে আসতে নিষেধ করেছিলাম না? আবার মার খাওয়ার শখ জেগেছে?
পুতুল শাড়ির আঁচলে মুখ মুছছিলো। আদিত্যর কথায় ফুঁসে উঠে বলল,
‘ কেন আসবোনা সামনে? আপনি বললেই হবে নাকি?
আদিত্য রাগে হাত উঁচু করতেই পুতুল এক পা পিছিয়ে গিয়ে বলল,
‘ মারুন না মারুন,আপনি আমার গায়ে হাত দিলে আমি কিন্তু পুলিশের কাছে যাব।আপনার নামে মামলা করবো। অতটাও অবলা ভাববেন না আমাকে।
আদিত্য অদ্ভূত ভাবে হেসে ফেলল। শকুন্তলাকে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
‘ দেখলে মা? তোমার পছন্দ করা মেয়ের কি সুন্দর বানী?
আদিত্য নিজের ঘরে ঢুকে পরলে শকুন্তলা এগিয়ে এসে পুতুলের মাথায় মৃদু থাপ্পড় মারলেন,
‘ তোকে এত কথা বলতে কে বলেছিলো? এমনিতেই ওর মেজাজ ভালোনা জানিসনা!
পুতুল মুখ কালো করে বলল,
‘ মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
শকুন্তলা বিরক্তি নিয়ে বললেন,
‘ যা রান্না চাপা গিয়ে। যত্তসব।
______
কপালে আড়াআড়ি হাত দিয়ে শুয়ে ছিলো আদিত্য।হঠাৎ ফোন বাজলে ধ্যান ভাঙলো। টেবিল থেকে ফোন হাঁতড়ে নিয়ে দেখলো হাসিবের কল।গলাটা একটু ঠিকঠাক করে কল রিসিভ করলো আদিত্য।
‘ বল।
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
‘ দোস্ত ভাবিকে দেখলাম মাত্র।
আদিত্য উঠে বসে বলল,
‘ তিথি?
‘ তো?
‘ কোথায় দেখেছিস?
‘ এইতো আমার সামনে দিয়ে গেলো।সঙ্গে তোর এক্স শ্বাশুড়ি মা ও আছে,বাড়ির রাস্তায় ঢুকলো মাত্র।তুইনা বলেছিলি ভাবি নেই বাড়িতে! তাই বললাম,
আদিত্য ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘ তুই ফোন রাখ,আমি আসছি।
আদিত্য লাইন কেটে মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলো।তিথি বাড়িতে এসেছে।এতদিনে ওর সাথে শান্তিতে দুটো কথা বলা যাবে। ওকে তো বোঝাতে হবে এই বিয়ে তার ইচ্ছাকৃত নয়। ভিত্তি হীন এই বিয়ে।তার কাছে কোনো মানেই নেই।
চলবে,