পূর্ন__তিথি নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি (০৬)

0
181

#পূর্ন__তিথি
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(০৬)

বৃষ্টি পায়চারি করছে।দাঁত দিয়ে নখ খুঁটে ভাবছে কিছু।তিথি পা দুলিয়ে বসে আছে বিছানায়। ভ্রু কুঁচকে দেখছে দিদিকে। বৃষ্টির এতক্ষনের গভীর মনোযোগ ভঙ্গ হলো তিথির ব্যাস্ত আওয়াজে,

‘ কি রে দিদি? কিছু বল?

বৃষ্টি থামলো।তিথির দিকে তাকিয়ে বুকের সাথে দুহাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে ভাবুক ভঙিতে বলল,

‘ আমার মনে হয় ছেলেটা তোকে পছন্দ করে।

তিথি কথাটার মধ্যে নতুনত্ব খুঁজে পেলোনা।একটু আগেই আদিত্য তাকে বলে দিয়েছে এটা। তাই নিরস মুখে চেয়ে থাকলো। বৃষ্টি কে সব বললেও,এইমাত্র যে আদিত্যের সাথে কথা বলে এসছে সেটা আর বলেনি। তাহলে আকাশ পাতাল ভেবে বসবে । তিথির মতে তার মা একদম ঠিক নাম রেখেছে দিদির।বৃষ্টি! বৃষ্টির যেমন কয়েক রুপ থাকে, কখনও গুঁড়ি বৃষ্টি, কখন মুষলধার, তার দিদির ও ঠিক তাই।এই ভীষণ ভালো,খুব ভালো।হঠাৎই রুপ বদলে যায়।মন পাল্টায়।কখন কি হয় তিথি আজও বুঝে উঠলোনা। দেখা গেলো সব বলার পর হিতে বিপরীত করে বসলো তার সাথে।

তিথির ভাবনার ফাঁকে বৃষ্টি এসে পাশে বসলো,বলল,

ছেলেটাকে কেমন দেখতে?

তিথি গালে হাত দিয়ে হাটুর ওপর ঝুঁকে গেলো। বলল,

‘ ভালোই। ফর্সা, মাথা ভরা চুল, মোটা মোটা ভ্রু, তবে ঠোঁট দুটো খুব কালো। মনে হয় প্রচুর স্মোক করে। আর জানিস কত্ত লম্বা,একেবারে উটের মতন।

তিথির বর্ননা শুনে বৃষ্টি হাসলো, ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

‘ বাহ! ক’দিনে অনেক কিছু খেয়াল করেছিস।

তিথি অপ্রস্তুত কন্ঠে বলল,

‘ না মানে… ওই…

‘ থাক। আর লোকাতে হবেনা। আমি ছেলেটাকে দেখবো একবার।

তিথি অবাক হয়ে বলল,

‘ তুই দেখে কি করবি?

বৃষ্টি ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

‘ কেন? দেখলে সমস্যা আছে? একটা ছেলে আমার বোন কে এভাবে ফলো করছে,আবার তাকে বখাটে ছেলেদের হাত থেকেও বাঁচালো। অার তাকে আমি দিদি হয়ে দেখতে পারিনা?

তিথি ছোট করে বলল,

‘ না তা পারিস।কিন্তু….

‘ কোনো কিন্তু নয়। চল।

তিথি আবার অবাক হয়ে বলল,

‘ এখন কোথায় যাবো? এখন কি ওই ছেলেটা আছে নাকি? তাছাড়া ও কোথায় থাকে আমি নিজেই জানিনা।

বৃষ্টি আহত স্বরে বলল,
‘ তাহলে? দেখা হবেনা?

তিথি একটু ভেবে বলল,

‘ বিকেলে দেখাবো। রুস্তমের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন কোচিং-এ যাবো আমার সাথে যাস।

বৃষ্টি বাধ্য মেয়ের মত স্বায় দিলো,,

‘ আচ্ছা। তাই করি নাহয়।
একি নাম, দেখার যে ভীষণ ইচ্ছে!

তিথি বৃষ্টির দিকে তাকালো কথাটায়। মন খারাপ করে বলল,

‘ দিদি! জিজুর কথা মনে করিয়ে দিলাম তাইনা?

বৃষ্টি অদ্ভূত ভাবে তাকালো। কিছুক্ষন চেয়ে থেকে হঠাৎ শব্দ করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে বলল,

‘ তুই আসলেই বোকা সোনু! এতদিনে আমাকে চিনলিনা?

তিথি বুঝলোনা।বোকা চাউনিতে চেয়ে থাকলো। বৃষ্টি একটা লম্বা শ্বাস টেনে বলল,

‘ জীবনে সব থেকে দরকারি বস্তু কি জানিস? টাকা। টাকা থাকলে সবাই তোকে দিনে দুবার সালাম ঠুকবে। টাকা নেই, মনে করবি এই সমাজে তুই থেকেও নেই।
দ্যাখ না, মায়ের কথা যদি বলি, বিয়েতো পারিবারিক ভাবেই হয় বাবার সাথে।যতদিন বাবার সাথে ছিলো মা,নানু বাড়ি থেকে শুরু করে দাদু বাড়ি সবাই মায়ের গুনগানে পঞ্চমুখ থাকতো। ফোন করে জল খেয়েছে কিনা তাও জিজ্ঞেস করতো মামু। অথচ যেই এখন অকূল পাথারে পরলো,বাবার থেকে আলাদা হলো? তাদের কিন্তু আর ডেকেও পাওয়া যায়না।
আমি আদিত্যকে ছাড়ছি বলে মা আমার সাথে কথা বলেনা। কারন আদিত্য ভালো ভদ্র ছেলে।কিন্তু ভদ্রতা কি জলে গুলে খাবো? ওর অবস্থা এখন এতোটাই খারাপ, আমার চাহিদা গুলো পূরন করতে কখনওই পারতোনা। বিলাসিতা বাদ দে,রোজকার দরকারি জিনিস,আমার পড়াশোনার খরচা, সংসার খরচা এসব সামলাতে গিয়ে উল্টে দেখা যেত সংসারে ঝগড়া ঝামেলা বাড়তো।কলহ হতো। কথায় বলেনা” অভাব যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায়।ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালায়?
এমন কিছু হওয়ার আগেই আমি নিজেকে মুক্ত করতে চাইছি। একবার ওয়েল সেটেল হলে এমন ভদ্র অাদিত্যের আর অভাব হবেনা রে! অভাব হবেনা।

তিথি হা করে তাকিয়ে বোনের কথা শুনছিলো৷বিস্মিত হলো বোনের চিন্তাধারা দেখে। একটা কথা বলতে ইচ্ছে হলো,

‘ এমন চিন্তা করলে বছর বছর জামাই পাল্টাতে হবে দিদি।

কিন্তু মুখের ওপর কথাটা বলার সাহস কূলোলো না। বললেই তার দিদি চটে যাবে। মুখের ওপর সত্যি কথা গুলো সহ্য করতে পারে ক’জন? এসেছে দুদিনের জন্যে,ঝামেলা করেই বা কি লাভ? কিছু অপ্রিয় সত্যি লুকিয়ে রাখা ভালো। ভালো মাঝে মাঝে চুপ করে থাকা। বোবার যে কোনো শত্রু থাকেনা।

বৃষ্টি তিথিকে নিশ্চুপ দেখে কপাল কোঁচকালো,

‘ কি রে! তোর আবার কি হলো? ঐ ছেলের কথা ভাবছিস?

তিথি মৃদূ হেসে মাথা নেড়ে” না বোঝালো।বৃষ্টি খোঁচা মেরে বলল,

‘ আরে জানি জানি।এখন এমন হবে।হতেই থাকবে। সারাদিন ওর কথা ভাববি।কখন ভাববি নিজেও বুঝবিনা।মাঝে মাঝে একা একা হাসবি।

তিথি মিনমিনে স্বরে বলল,

‘ হ্যা তোর তো এই বিষয়ে পি এইচ ডি করা। খুব ভালো জানবি।

কথাটা ঠিক শুনতে পেলোনা বৃষ্টি।তবে তিথি কিছু একটা বলেছে বুঝলো সেটুকু।নিশ্চিত হতে জিজ্ঞেস করল,

‘ কিছু বললি?

তিথি মেকি হাসি দিয়ে মাথা দোলালো দুদিকে।যার অর্থ সে বলেনি।

বৃষ্টি একটু দম নিয়ে বলল,

‘ তাহলে বিকেল হোক। তোর নতুন কৃষ্ণকে দেখি,কেমন দেখতে?

তিথি মুখ কুঁচকে বলল,

‘ ধ্যাত! তুইও না। এইটুকুতে কৃষ্ণ বানিয়ে দিলি। যাক গে,তুই বসে বসে ওসব ভাবতে থাক। আমি যাই খেতে,পেটে ইঁদুর ছুটছে আমার। সকালে না খেয়ে গেছিলাম কলেজে।
তুই খেলে আয়।

তিথি উঠে গেলো।বৃষ্টি বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পরলো। বলল,

‘ আমার পেট ভরাই আছে।বাইরে গেছিলাম না? একজন খাইয়েছে।

বৃষ্টি দুষ্টু হাসলো। তিথি ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেললো। দিদি আর পাল্টাবে বলে মনে হয়না।
আদিত্য দাদা কেঁদে কেঁদে মরছে বউকে ফিরে পেতে,আর ইনি অন্য ছেলে নিয়ে ঘুরছে। ফিরে তাকিয়ে বলল,

‘ বাইরে যাচ্ছিস যে,বাবা দেখলে কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে। একেতো মিথ্যে বলে এসে এতদিন আছিস।দ্বিতীয় ত মায়ের কাছে এসছিস।তুইতো মায়ের ঘাড়ে দোষ টা দিয়ে বেঁচে যাবি…।কিন্তু বাবা তো মাকে কথা শোনাবে আবার।

তিথির কথায় বৃষ্টির হাসি উবে গেলো। দ্রুত উঠে বসে তেঁতে বলল,

‘ কি বলতে চাস তুই? আমি মিথ্যে বলে বাবার কাছে মাকে খারাপ বানাই?

তিথি ঠোঁট কামড়ালো। হতাশ চোখে তাকালো দিদির দিকে। এখন সে মুখ খুললেই ঝগড়া বাঁধবে তাতে ভুল নেই। পরিস্থিতি সামলাতে বলল,

‘ আমি সেটা বলিনি।আমি বলেছি আমি ভাত খাবো।

কথাটা বলেই তিথি রান্নাঘরে চলে গেলো। প্রসঙ্গ পাল্টালো তিথি। বৃষ্টি পরিষ্কার বুঝলো সেটা। বিরক্তি নিয়ে চেয়ে থেকে ধড়াম করে শুয়ে পরলো আবার।

______

বিকেলের প্রথম দিক। ঘড়ির কাটায় চারটে বেজে কুঁড়ি মিনিট। তিথি তাড়াহুড়ো করে বই ঢোকাচ্ছে কাঁধ ব্যাগে।ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দেরি হলো আজকে। তার ওপরে বৃষ্টি সেই যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে এখনও নড়ছেনা। এইতো এখান থেকে এখানে।এইটুকু রাস্তায় এত স্বাজগোজের কি হলো ভেবে পেলোনা তিথি। আগের দুবারের মতোই বিরক্তি নিয়ে ডাকলো,

‘ দিদি হলো তোর? আয় না এখন।

বৃষ্টি লিপস্টিকের ঢাকনা লাগাতে লাগাতে বলল,

‘ হয়ে গেছে। আসছি।

স্বপ্ন মাঠে খেলতে গিয়েছে। তিথি তালা মারলো দরজায়। এক পাশের কাঁধে ব্যাগ অন্য পাশে মোটা বেনুনি টা ঝুলছে। বৃষ্টির খোলা চুল। উড়ছে বাতাসে।হাটছে আর ফোন টিপছে। বাড়ির রাস্তাটা পিচের হলেও সরু অনেক।এক সাথে দুজনের বেশি আটেনা। তার ওপর বাশ ঝাঁড় আর ফসলি ধানের ক্ষেত। তিথির প্রশান্ত লাগছে খুব। রাস্তার আইল ধরে কিছু নতুন নতুন ফুল ফুটেছে, ফুল ফসলের গন্ধ,নির্মল বাতাস, শুভ্র আকাশ।সব মিলিয়ে সুন্দর ঝরঝরে প্রকৃতি ।

একটা সময় রুস্তমের দোকানের কাছে এসে দাঁড়ালো তিথি।ওকে দাঁড়াতে দেখে বৃষ্টি ফোন থেকে মুখ তুলে বলল,

‘ কি হলো?

তিথি অবাক হলো।এইটুকু সময়ে বেমালুম ভুলে গেলো? কি করতে এলো তাহলে?

বৃষ্টি চেয়ে থাকলো। ওদিকে তিথিও উত্তর দিচ্ছেনা। বহু দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে অসহায় চোখে তাকালো বৃষ্টি। কি করতে এসছিলো যেন? কিছুতেই মনে পড়ছেনা। খানিকক্ষণ ভাবলো। হঠাৎ মনে পড়লো। সেতো আদিত্য নামের ছেলেটাকে দেখতে এসছিলো। জ্বিভ কেটে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,

‘ ওহ স্যরি। কই? কই ছেলেটা?

তিথি আগ্রহ হীন কন্ঠে বলল,

‘ জানিনা। নিজে খুঁজে নে।

‘ আহা রাগ করিস না। খুব গুরুত্বপূর্ণ চ্যাটে ছিলাম। বল কোথায় সেই ছেলে?

তিথির রাগ পরে গিয়েছে।নিজেকে স্বাভাবিক করে চোখ দিয়ে ইশারা করলো সামনে।বৃষ্টি তাকালো সেদিকে। রুস্তমের দোকানের সামনে ছোট ছোট বেঞ্চী পাতানো।আদিত্য, রঞ্জন দুজন বসা সেখানে।আরিফ নেই আজ। দুজনের হাতেই সিগারেট ধরানো। হাসি ঠাট্টায় মেতে আছে একবারে। বৃষ্টি ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে পর্যবেক্ষণ করলো।তিথির বর্ননার সাথে মেলালো দুজনকেই। প্রশ্ন করলো,

‘ওই ব্লু শার্ট পরা ডান পাশের ছেলেটা না?

তিথি মাথা নেড়ে হ্যা বোঝালো। বৃষ্টি উচ্ছ্বল কন্ঠে বলল,

‘ দেখতে তো ভালোই।

‘ হু। আমিতো বলিনি দেখতে খারাপ।আচ্ছা আমি এখন যাচ্ছি,তুই বাসায় যা।স্বপ্ন ঘরে তালা পেলে কোথায় যাবে?

বৃষ্টি প্রস্তাব টা নাকচ করে বলল,

‘ দাড়া। পরে যাস।

তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ কেন?

বৃষ্টি উত্তর দিলোনা প্রশ্নের। উল্টে তিথিকে চমকে দিয়ে স্বর উচু করে ডেকে উঠলো,

‘ এই যে,মিস্টার আদিত্য?

তিথি একেবারে হতভম্ব হলো সাথে সাথে। গোল চোখ করে বলল,

‘ এই দিদি ডাকছিস কেন ওনাকে?

বৃষ্টি তিথির কথায় পাত্তা দিলোনা। এমন ভাব করলো যেন শুনতেই পায়নি।আগের থেকেও জোরালো স্বরে ডাকলো,

‘ আদিত্য..?

নিজের নাম শুনে আদিত্য আশপাশে তাকালো। কে ডাকছে? একটা সময় সামনে তাকাতেই দেখলো একটু দূরে দাড়িয়ে আছে তিথি।সাথে অন্য একটি মেয়ে। তিথিকে দেখতেই আদিত্য হাতের সিগারেট ফেলে দিলো মাটিতে। রঞ্জন ও ফেলল আদিত্যের দেখাদেখি। বৃষ্টি এবার হাত নেঁড়ে ডাকলো,

‘ এদিকে আসুন।

তিথি কপাল চাঁপড়ালো,

‘ হায় ভগবান! এই মেয়েকে আমি কেন আনলাম?

আদিত্য প্রথমে বুঝে উঠলোনা মেয়েটা তাকেই ডাকছে কিনা! বিভ্রান্তি কাটাতে নিজেকে দেখিয়ে বলল,

‘ আমাকে ডাকছেন?

বৃষ্টি মাথা নাঁড়লো। রঞ্জন আদিত্যের কানের কাছে মুখ এনে বলল,

‘ বৌদি মনে হয় সাথে বড় বোন এনেছে।দুপুরে কি উল্টোপাল্টা কিছু বলেছিস?বললে এখনও সময় আছে চল ভাগি!

আদিত্য চোখ রাঙিয়ে বলল,

‘ চুপ কর ছাগল। দেখে আসি দাঁড়া।সমন্ধ পাঁকা করতেও তো আসতে পারে।

আদিত্য হেসে উঠে দাঁড়ালো।তিথি কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। বেনির গোছাটা হাতে পেঁচাচ্ছে। দিদির এমন ছলনা মেনে নিতে পারছেনা। বলল শুধু দেখবে,অথচ লাজ লজ্জ্বা ভুলে ডেকে পাঠালো।কি দরকার ছিলো ছেলেটাকে ডাকার? মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকলো অন্তত উল্টোপাল্টা কিছু না শোনায় দিদি। যে ঠোঁট কাটা মেয়ে!

আদিত্য এগিয়ে এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো। একবার আড়চোখে তাকালো তিথির দিকে।আদিত্য তাকাতেই তিথি চোখ সরিয়ে নিলো অন্যদিকে। ততক্ষনে বৃষ্টি পা থেকে মাথা অব্দি দেখে নিয়েছে আদিত্যকে। আদিত্য বৃষ্টির দিকে ফিরে বলল,

‘ বলুন।

বৃষ্টি মৃদূ হেসে বলল,

‘ আমি বৃষ্টি।তিথির দিদি।

আদিত্য হেসে ছোট করে বলল,

‘ ওহ আচ্ছা।

বৃষ্টি এবার তিথির দিকে তাকালো। বলল,

‘ সোনু তুই একটু ওদিকটায় গিয়ে দাঁড়াতো!

তিথি চোখ ছোট করে বলল,

‘ কেন?

বৃষ্টি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘ আমি বলেছি তাই।

তিথি লজ্জা পেলো। বড়দের কি শাসন সব সময় করতে হয়? বিশেষ করে অন্যদের সামনে? ছোটদেরও তো প্রেস্টিজ বলে কিছু থাকে নাকি? তিথি ঠোঁট উল্টে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো ওদের থেকে। আদিত্য মুচকি হাসলো। তবে অতি সন্তর্পণে। বৃষ্টি ভনিতা ছাড়াই সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়লো,

‘ আপনি কি তিথিকে ভালোবাসেন?

_______

মাত্রই স্কুল থেকে বের হলেন সুচিত্রা। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে আছে পুরো শরীর। আজ ছাতা আনতেও ভুলে গিয়েছেন।রোদ্দুর টা সোজা এসে লাগছে মাথার ওপর। এখন আবার টেইলার্সে যেতে হবে। খিদেও লেগেছে ভীষণ। বাসা থেকে খাবার এনেছিলো সাথে। কিন্তু ব্যাস্ততায় সময় মত খেতে না পারায় পঁচে গন্ধ বের হয়েছে তা দিয়ে। সুচিত্রা এলোমেলো পায়ে হাটছেন। ক্লান্ত লাগছে। পিপাসাও পেয়েছে।

আশপাশ দেখলেন একবার।দোকান গুলো এখনও খোলেনি। একটু পানি কিনে খাওয়া যেত অন্তত।
এভাবে হাটতে পা স্বায় দিলোনা। গিয়ে বসলেন একটা দোকানের বেঞ্চের ওপর। এখানে ছায়া পরেছে। ঠান্ডাও লাগছে কিছুটা। আরাম হচ্ছে।

কিছুক্ষন কেটে গেলো। একটা সময় দোকানের মালিক চলে এলো। দোকান খুলতে । সুচিত্রাকে বসতে দেখে হেসে বলল,

‘ আরে সুচিত্রা বৌদি? কি ব্যাপার? এখানে বসে
আছেন?

সুচিত্রাও ক্লান্ত মুখে হাসি টেনে বললেন

‘ এমনি দাদা।একটু ক্লান্ত লাগছিলো।তাই।

লোকটা ঝাপ তুলছিলো দোকানের।।সুচিত্রার কথায় কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

‘ দেখেতো অসুস্থ অসুস্থ লাগছে। পানি খাবেন একটু?

সুচিত্রা হ্যা বোধক মাথা দোলালেন । শ্বাস উঠছে। কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে।

লোকটা ফ্রিজের ভেতর থেকে একটা ঠান্ডা পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিলো সুচিত্রার দিকে।

‘ নিন খান।ভালো লাগবে।

সুচিত্রা দ্রুত হাতে বোতলের ছিপি খুলে ঢকঢক করে পানি খেতে শুরু করে। প্রান জুড়িয়ে এলো এখন।মুখ মুছলেন শাড়ির আঁচলে।লোকটা দোকানের সামনে চিপসের প্যাকেটে গুলো ঝোলাচ্ছিলো তখন।

সুচিত্রা ব্যাগে হাত দিয়ে দেখলেন খুচরো নেই। দুটো একশ টাকার নোট পরে আছে। লোকটার দিকে চেয়ে বললেন,

‘ ভাংতি আছে দাদা??

‘ না বৌদি। মাত্র দোকান খুললাম,এখনও বেঁচাকেনা হয়নি। আপনার কাছে নেই?

‘ না।

লোকটা থামিয়ে দিয়ে বলল
‘ তাহলে এখন দিতে হবেনা বৌদি। পরে দিয়েন।আর কিছু খাবেন?

সুচিত্রা হেসে বললেন

‘ না দাদা। আমি এখন উঠি তবে। বাড়ি ফেরার সময় দিয়ে যাবো।

সুচিত্রা যাওয়ার জন্যে বসা থেকে উঠে দাড়ান।। হঠাৎ লোকটা বলে ওঠে,

‘ বিকাশ দাদার সাথে কি আজকের সম্পর্ক বলুন।সামান্য পনের টাকা কিভাবে নিতে পারি?আজ বরং থাক বৌদি? মাঝে মাঝে খাবার নিয়েন।সব মিলঝিল করে একবারে অন্য কখনোও দিয়েন।

স্বামীর নাম শুনে মুখ কালো হয়ে এলো সুচিত্রার। এই লোকের দৌলতে কোনো সুযোগ সুবিধা উপভোগ করা মানে, জেনে শুনে বিষপান করার মতন।সুচিত্রার মুখটা মুহুর্তেই শক্ত হয়ে এলো। লোকটার দিকে একশ টাকার নোট টা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ আপনি এটাই রাখুন।বাকি টাকা পরে নিয়ে যাবো।

লোকটা তাও আপত্তি করলো।অহেতুক বাড়াবাড়ি সহ্য করতে না পেরে সুচিত্রা টাকা বেঞ্চের ওপর রেখে বললেন,

‘ আসছি।

সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের টেইলার্সের দিকে হেটে গেলেন সুচিত্রা। লোকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো ততক্ষন।
সম্পূর্ণ বিষয় টা দূর থেকে দেখলেন বিকাশ। গাড়ির মধ্যে বসে।এত দূর থেকে কথাগুলো কানে না পৌছালেও অকারনেই অধিক রাগ লাগছে তার। সামান্য একজন দোকানদারের সাথে তার স্ত্রী হাসি ঠাট্টায় ফেটে পরছিলো? বিকাশ ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের গাঢ় হাসি টেনে বললেন,

‘এখনও নিজেকে শোধরালে না সুচি। সেই কুকুরের লেজই রয়ে গেলে!

চলবে,

কাল আদিত্য কে নিয়ে যে সাসপেন্স তৈরি হয়েছিলো আশা করি তা মিটলো? বাস্তবে যদি একই নাম অনেকের হতে পারে,গল্পে হলে সমস্যা কোথায়?🤔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here