#পূর্ন__তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২৬)
বিয়ের চার বছর পর জানলাম আমার বরের প্রাক্তন প্রেমিকার কথা। মেয়েটির নাম পূজা। কলেজ থেকে প্রেম তাদের। শুনেছি মেয়েটি নিঁচু জাত হওয়ায় আমার শ্বাশুড়ি তাদের বিষয়টা মেনে নেননি ।ওদিকে মেয়ের বাবাও মেয়েকে জোর করে অন্য জায়গায় বিয়ে দেন।আর সীমান্তর বিয়ে হয় আমার সাথে। তারপর আর যোগাযোগ ছিলো কিনা আমি জানিনা।তবে আজ বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি, সীমান্ত রাতের বেলা বারান্দায় গিয়ে ফিসফিস করে ফোনে কথা বলে। বারবার রুমের দিকে তাকায়।আমি এলাম কিনা,শুনে ফেললাম কিনা হয়ত সেই ভয়ে ! কাল রাতে ওকে হাতে-নাতে ধরেছি। কিন্ত এতে তার এক ফোটাও আফসোস নেই।উল্টে সে গলাবাজি করছিল। আর এক পর্যায়ে তো এই প্রথম আমাকে চড়ও মেরে দিলো!
সুস্মিতা ছলছল চোখে কথাগুলো বলে থামলো। পুতুল হা করে শুনছে। সুস্মিতা বিরতি নিতেই উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘ সীমান্ত দা এমন? দেখেতো মনেই হয়নি!
সুস্মিতা উত্তর দিলোনা।পুতুল মেকি হেসে বলল,
‘ তোমার আমার কপাল দেখি একইরকম সুস্মি দি!
সুস্মিতা প্রসারিত হেসে বলল,
‘ মোটেইনা বৌদি। একরকম কিভাবে হলো? তুমিতো সব জেনেশুনে দাদাকে বিয়ে করেছো,অার আমিতো জানতামই না কিছু।দ্বিতীয়ত, দাদাকে আমরা জোর করে বিয়ে করিয়েছি। সীমান্তকেতো তা করা হয়নি। দাদা তোমাকে এখনও মেনেই নেয়নি আর সীমান্ত ফুলসজ্জার দিন থেকে আমায় ছুঁয়ে আসছে। আমিতো গুনাক্ষরেও টের পায়নি আমি ছাড়া ওর জীবনে অন্য কেউ ছিলো। এত ভালো ব্যাবহার, ভালোবাসা! সব মিথ্যে ছিলো তাহলে..
সুস্মিতার চোখ থেকে জল গঁড়াতেই পুতুল ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘ কেঁদোনা।কাঁদলে কি সব সমাধান হবে? বাবা একটা ব্যাবস্থা করবেন চিন্তা কোরোনা।
সুস্মিতা তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো, বলল,
” বাবা যাই করুন না কেন, জোর করে কাউকে দিয়ে সংসার করানো যায়না।আর না যায় কারো মনে ঠাই পাওয়া।
পুতুলের ছোট্ট মস্তিষ্কে কথাটা আঘাত হানলো খুব। সমস্ত স্নায়ুতন্ত্রে বাজতে থাকলো শব্দগুলো।
‘ জোর করে কাউকে দিয়ে সংসার হয়না!
..
আদিত্য বাড়িতে এসেছে। এদিক ওদিক বিন্দুমাত্র না দেখে সোজা নিজের ঘরে হেটে গেলো সে। সুস্মিতা পুতুল দুজনেই ঘরের সামনে দিয়ে হেটে যেতে দেখলো তাকে। কিন্তু আদিত্য দেখেনি। দাদাকে দেখে সুস্মিতা নঁড়চড়ে বসে বলল,
‘ শুনলাম দাদা আজকাল বাইরে থাকে?
পুতুল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সুস্মিতা নিজেও লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
‘ কি যে শুরু হয়েছে সংসারে!শান্তি আনতে গিয়ে অশান্তি নেমে এলো।
কথাটা খুব গায়ে লাগলো পুতুলের। শুধু দাঁত খিঁচে সহ্য করলো সে। একটুও প্রত্যত্তর না করে বলল,
‘ ঘরে যাচ্ছি!
এই শব্দটুকু ব্যাতীত বাড়তি একটা কথাও বললনা পুতুল।লম্বা পা ফেলে নিজের ঘরে গিয়ে দোর চাপালো। সুস্মিতা বুঝলো কিনা কে জানে? হয়ত বোঝেনি। বিছানা ছেড়ে উঠে আদিত্যর ঘরের দিকে এগোলো সে।
..
আদিত্য জানলা মুখি হয়ে বসেছিলো। দরজায় টোকা পরতেই ঘুরে তাকালো। গলা উঁচিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ কে?
ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
‘ আমি দাদা! সুস্মি..
বোনের স্বর শুনে হাতের সিগারেট জানলা থেকে ছুঁড়ে বাইরে ফেলল আদিত্য। উঠে গিয়ে দরজার সিটকিনি টেনে নামালো। সুস্মিতা ভেতরে ঢুকতেই সিগারেটের কঁড়া গন্ধে গা গুলিয়ে এলো তার। নাক মুখ চেঁপে ধরলো হাত দিয়ে,
‘ ইয়াক! আবার ছাইপাশ গিলেছিস?
আদিত্য উত্তর না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগোলো।পারফিউম নিয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে বলল,
‘ তোর এটা নাক, নাকি বাঁশঝাঁড়? গন্ধ নিতে পারিস না বলে বাইরে ফেলেছি।তাও গন্ধ পেলি?
সুস্মিতা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে বলল,
‘ না আর আসছেনা।
‘ কখন এলি তুই?
‘ এইতো দুপুর বেলা এসছি। তোর সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছে করছিলো। মায়ের কাছে শুনলাম তুই নাকি এখন বাড়িতে খুব একটা থাকিস না?
আদিত্য বিছানার ওপর পা ঝুলিয়ে বসে বলল
‘ বাড়িতে কিছু থাকলে থাকতাম।কিছু নেই, তাই আর থাকিনা।
সুস্মিতা দাদার পাশে বসে নম্র কন্ঠে বলল,
‘ তুই আমার ওপর রেগে আছিস নারে?
আদিত্য তাকালো।ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ কিছু করেছিস রাগে করার মতো?
সুস্মিতা নিঁচে নামিয়ে নিলো চোখ।অনুশোচনা করে বলল
‘ করেছি মনে হয়। সেদিন যদি আমি তোর পাশে থেকে তোকে সাপোর্ট করতাম,বাবা মাকে বোঝাতাম তাহলে আজ হয়ত তুই তিথি মেয়েটাকে পেতি।
আদিত্য বোনের চোখে চোখ মেলালো।অপরাধবোধ সত্যিই আছে কিনা চেষ্টা চালালো বোঝার। পরমুহূর্তে স্মিত হেসে বলল,
‘ তোর ওপর রাগ রেখে লাভ কি? তিথি কি আসবে?
সুস্মিতা অবাক হয়ে বলল,
‘ তার মানে? তুই এই যে বাইরে থাকিস,তিথির কাছে নয়?
আদিত্য এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। সুস্মিতা খানিক ভঁড়কালো। হাসির মত কি বলল সে? আদিত্য হাসি থামিয়ে ভারী নিঃশ্বাস ছাঁড়লো, বলল,
‘ নারে! তার জীবনে আমার আর জায়গা নেই। বহু বার গিয়েছি আর বহু বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরেছি।
সুস্মিতার সত্যিই বিস্ময় অনুভূত হয়। এ ঘরের প্রত্যেকটা সদস্য তাহলে এতদিন ভুল বুঝে মেয়েটাকে গাল মন্দ করলো?
দাদার কাঁধে হাত রাখতেই আদিত্য মলিন হেসে বলল,
‘ এর জন্য আমিই দ্বায়ী।সেদিন যদি এক্টু ঝুঁকি নিতাম,তিথির হাত শক্ত করে ধরতাম, তাহলে আর এমন হতোনা বল! বাবাতো সুস্থ হলেন, কিন্তু আমি হারালাম সব!
সুস্মিতা খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘ তোর কি মনে হয়? বাবা সত্যিই অসুস্থ ছিলেন?.
আদিত্য চকিতে বোনের দিকে ফিরল।সুস্মিতা ক্ষীন হেসে বলল,
‘ তোর মনে আছে? যেদিন বাবা তিথিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন? বাড়িতে? তোদের সম্পর্কের একটা শেষ ফয়সালা করতে? সেদিন বাবা ভীষণ অসুস্থ ছিলেন।বুকের ব্যাথায় উঠতেও পারছিলেন না। খুব সম্ভবত তুই বাবার ওই ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়েই তিথিকে না বলেছিলি,কিন্তু একটা ব্যাপার ভেবেছিস কি? অত অসুস্থতার মধ্যেও বাবা তিথিকে দিয়ে কথা নিয়েছেন,ও যেন তোর কোনো রকম কোনো ক্ষতির কারন না হয়! তোদের একসাথে তোলা ছবিগুলো যেন কারোর হাতে না দেয়।একটা অসুস্থ মানুষ এতটা হুশিয়ার হতে পারে কতটুকু অসুস্থ থাকলে, ভেবেছিস কখনও?
আদিতু ভ্রু কুঁচকে, চোখ সরু করে চেয়ে থাকলো।সুস্মিতা আর কিছু বলেনি।ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পরে সে। পেছনে তাকালে হয়ত দেখতো,কতটা অস্থিরতায় ভুগছিলো আদিত্য নামক মানুষটি।
___
এই নে,ধর, ভালো করে সেলাই করবি। সুতোর গায়ে সুই গাঁথা আছে। একটুও যেন ছেঁড়া দেখা না যায়।তোর শ্বশুর ছেঁড়া বালিশে মাথা দিতে চাননা।
শকুন্তলার কথায় পুতুল এক পাশে ঘাঁড় নাড়লো শুধু। মুখে কথা নেই তেমন। না আছে শ্বাশুড়িকে দেখা মাত্র সেই মুচকি হাসিটুকু। চুপচাপ হাতে কোলবালিশের ছেঁড়া কভার হাতে নিলো সে। সুইতে সুতো গেথে শুরু করলো সেলাই। শকুন্তলা দাঁড়িয়েই ছিলেন দরজার কাছে। ভ্রু কুঁচকে দেখছিলেন পুতুলের কান্ড। মেয়েটার কিছু একটা হয়েছে মনে হচ্ছে। এতটা চুপচাপ তো স্বামীর কাছে মা’র খেয়েও থাকতোনা। জিজ্ঞেস করলেও যে পুতুল বলবেনা সেটা সে জানে। তাই না ঘাঁটিয়ে পুতুলের নিকট এগিয়ে এলো আবার। উঁচু স্বরে বললেন,
‘ এই তুই সারাক্ষন ঘরের মধ্যে কি করিস? বাইরে বার হচ্ছিস না যে বরং?
পুতুল চোখ তুলে তাকালো। মিন-মিনে স্বরে বলল,
‘ এমনিই। রান্না শেষ তাই..
‘ রান্না করতে তোকে বাইরে যেতে কে বলেছে? আমি কি কাজই করাই খালি তোকে দিয়ে? এটা বলতে চাস?
পুতুল ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,
‘ না, তা কখন বললাম?
‘ তুই কি বলবি জানি, ওঠ এখান থেকে.. সুস্মি এসছে, গিয়ে ওর সাথে কথা বল।
পুতুল অসহায় কন্ঠে বলল,
‘ আমার এখন ভালো লাগছনা মা,পরে যাব।
‘ ভালো তো সুস্মিরও লাগছেনা।তাই বলে কি ও তোর মতো ঘরে ঘাপটি মেরে বসে থাকে? যা বলছি কর ..!
শকুন্তলার গরম চোখ দেখে নিভে গেলো পুতুল। বিছানা ছেড়ে উঠে সুস্মিতার ঘরের দিকে এগোলো। ঘরে ঢুকতেই দেখলো সুস্মি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল হাত খোপা করছে। পুতুল কে দেখে মৃদু হেসে বলল,
‘ আরে বৌদি! ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? এসো ভেতরে..
পুতুল আস্তে করে বলল,
‘ না মানে, মা পাঠালেন,তোমার সাথে গল্প করতে,
সুস্মি বলল,
‘ হ্যা তো বোসোনা, আমি স্নানে যাচ্ছিলাম।এসে গল্প করব। তুমি বরং আমার মেয়েটাকে দেখো, ওর আবার ঘুমের মধ্যে খাট ছেড়ে পরার অভ্যেস আছে। মাকে ডাকতেই যাচ্ছিলাম,এর আগে তুমি এলে যখন..
দেখবে একটু ওকে?
পুতুল এবারো ঘাড় কাত করে স্বায় জানালো।
সুস্মিতা বলল
,’ ঠিক আছে থাকো , আমার বেশিক্ষন লাগবেনা।
হাতে গামছা,শাড়ি- ব্লাউজ সমেত ওয়াশরুমে গেল সুস্মিতা। পুতুল আবার সেলাই দিতে শুরু করলো। কিন্তু বারবার অন্যমনস্কতায় সুচ ফুটছে হাতে। ওয়াশ রুম থেকে জল ঢালার শব্দ আসছে। আসছে সুস্মিতার ঘুমন্ত মেয়ের ভারি নিঃশ্বাস এর শব্দ। সব মিলিয়ে কেমন অস্বস্তি লাগছে। মনে হচ্ছে শান্তি নেই এখানে।পুতুল উঠে গিয়ে বসলো বসার ঘরের সোফায়।
খানিক বাদে সুস্মিতার মেয়ের ঘুম ছুটে গেলো। মাকে আশেপাশে না পেয়ে গলা ফাঁটিয়ে কান্না জুড়ে দিলো সে। বাচ্চার কান্নার শব্দ শুনে সুস্মিতা ওয়াশরুমের ভেতর থেকে আদুরে স্বরে চিল্লিয়ে বলল,
‘ বাবা কাদেনা,মা আসছি। মামুনি কই তোমার? বৌদি ওকে একটু কোলে নাওনা!
বাচ্চা মেয়েটা তবুও থামলোনা। সে কাঁদছে। একটা সময় হামাগুড়ি দিতে দিতে পৌছালো খাটের কিনারায়৷ একটু এগোতেই ধপাস করে পরলো পাঁকা মেঝের ওপর। আওয়াজ পেয়ে তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো সুস্মিতা। দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে কোলে তুললো।মেয়ে তখন কেঁদে কেটে অস্থির। মাথার এক পাশ ফুলে উঠেছে। সুস্মিতা পুরো ঘরে পুতুল কে পেলোনা। মেয়ের মাথায় হাত ডলতে ডলতে বের হলো রুম থেকে। বসার ঘরে পুতুল কে গভীর মনোযোগে সেলাই করতে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো। বাচ্চাটার কান্নার আওয়াজ শুনেও একবার গেলোনা? কেমন মেয়ে মানুষ?
পুতুল কে মনে মনে কঠিন কিছু বলার ইচ্ছে থাকলেও ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখলো সুস্মিতা৷ রান্নাঘরের দিকে এগোলো। শকুন্তলা কল তলা থেকে জল ভরে মাত্র রান্নাঘরে ঢুকলেন। সুস্মিতার কোলে নাতনীকে এভাবে কাঁদতে দেখে বললেন,
‘ কিরে ও কাঁদছে কেন? খাওয়াসনি ওকে?
সুস্মিতা উত্তর দিলোনা। শকুন্তলা ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘ হয়েছে কি? মুখ ভাঁড় কেন?
সুস্মিতা মুখ কালো করে বলল,
‘ কি অার হবে?স্নানে যাচ্ছিলাম,বৌদিকে বললাম ওকে একটু দেখতে, অথচ… মেয়েটা সেই খাট থেকে পরলোই
শকুন্তলা আঁতকে বললেন
‘ ওমা ব্যাথা পায়নি তো? শান বাধামো মেঝেতে পরেছে, কোথাও কেঁটে টেটে গেলো নাকি, দেখেছিস?
‘ দেখেছি। একটু ফুলে গিয়েছে।কিন্তু তুমি ভাবো, বৌদি কি করে এমন করতে পারলো? ছিলো তো বসার ঘরে, ওর কান্নার আওয়াজ শুনেও কি একবার ধরতে আসতে পারলোনা?
শকন্তলা অবাক হয়ে বললেন,
‘ সেকি! পুতুল বসার ঘরে থেকেও এলোনা?
সুস্মিতা তেঁতে বলল,
‘ উল্টো প্রশ্ন কেন করছো মা? আমি কি মিথ্যে বলছি?
‘ আহা আমি তা বলিনি।আসলে কি বলতো,পুতুলের ইদানীং কাল কি যেন হয়েছে!তেমন কথা বলেনা,চুপচাপ থাকে। জিজ্ঞেস করলেও ঠিক মতো উত্তর দেয়না।খাবার খায়না।ঘরে চুপ করে বসে থাকে।
সুস্মিতা বলল,
‘ হয়ত দাদাভাইয়ের…
শকুন্তলা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ না রে,এখানে আদিত্যর ভূমিকা নেই।কারন আদিত্য ওকে বিয়ের প্রথম দিন থেকেই মানেনি,তখন এমন মন খারাপ তো ওর ছিলোনা! যথেষ্ট শক্ত, হাসিখুশি থাকতো।আমার সাথে গল্প করতো।আজ প্রায় হপ্তাহ খানেক এরকম দেখছি..
সুস্মিতা খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল,’
জানিনা, আমি ভাবছি অন্য কথা.. জানিনা তোমার কেমন লাগবে শুনতে কিন্তু আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছে।
‘ কি কথা বল না! এত ভাবাভাবির কি আছে?
সুস্মিতার মেয়ে কাঁধেই ঘুমিয়ে পরেছে আবার। সুস্মিতা ওর পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
‘ মনে আছে সেবার,আমার ডেলিভারির সময়? রক্তের প্রয়োজন ছিলো।কোথাও পাওয়া যাচ্ছিলোনা। তুমি ছিলেনা সেখানে, কিন্তু দাদা আমার সামনে তিথির সাথে কথা বলছিলো ফোনে।এক পর্যায়ে ওকে যখন আমার অবস্থা জানালো, ও সেই বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলো খুলনা আসার জন্যে।আমাকে রক্ত দেবে বলে। নেহাত ও আসার আগেই রক্ত পেয়ে যাই তাই আর দরকার পরেনি।কিন্তু ও দেয়ার নিয়্যত তো করেছিলো মা!
শকুন্তলা কপাল কুঁচকে বললেন,
‘ হুম তো? তাতে কি হয়েছে?
সুস্মিতা জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
‘আজ বৌদির জায়গায় তিথি হলে কোনও দিনও আমার মেয়েটাকে এভাবে ফেলে রাখতে পারতোনা।
শকুন্তলা চোখ গোল করে চাইলেন। সুস্মিতা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ কথাটা শুনতে কেমন লাগছে জানিনা।তবে বলার জন্যে জ্বিভ নিশপিশ করছিলো।
শুনেছি ননদরা সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, বাপের বাড়ি এলে ভাইয়ের বউয়ের কাছে তাদের দাম থাকেনা।একটু একটু করে আমাকে বোঝানো হচ্ছে সেটা।
শুকুন্তলা ক্ষেপে বললেন,
‘ কি যা তা বকছিস? এরকম কোনও ব্যাপার নয়। শোন একটা পরিস্থিতি দিয়ে কাউকে বিচার করবিনা। পুতুল এরকম মেয়ে নয়।ওর মন যথেষ্ট ভালো।
‘ কি জানি! ভালো লাগছেনা। এসব বাদ দাও এখন।দেখোতো ও ঘুমিয়েছে কিনা!
শুকুন্তলা গলা বাড়িয়ে দেখলেন,নাতনীর চোখ দুটো বন্ধ। বললেন,
‘ হ্যা ঘুমিয়েছে।
‘ যাই, ওকে শুইয়ে দিয়ে আসি।
সুস্মিতা যেতে নিলে শকুন্তলা আটকে দিয়ে বললেন,
‘ তুই দিদিভাইকে আমার কাছে দে।আর চূলোয় ডাল বসিয়েছি একটু ফোড়ন ভেঁজে দে তাতে। চোখ জ্বালা করছে আমার, ডাক্তার ড্রপ দিয়েছিলো না? ওটা দেয়ার সময় হয়েছে।
‘ আচ্ছা যাও তাহলে…
শকুন্তলা নাতনীকে কাঁধে চঁড়িয়ে হেটে যেতে যেতে আবার ফিরে তাকালেন।সুস্মিতা অন্য চুলায় কঁড়াই বসিয়ে তেল ঢেলেছে তাতে।শকুন্তলা জিজ্ঞেস করলেন,
‘ হ্যা রে! জামাই বাবা ফোন করেনি?
সুস্মিতা তেলে পেয়াজ রসুন ছেঁড়ে দিয়ে বলল,
‘ ফোন বন্ধ করে রেখেছি।জানিনা।
‘ ওমা ফোন বন্ধ করে রাখলি কেন? দেখতি ফোন টোন করে কিনা!
‘ কি বলবে ফোন করে?
‘ হয়ত জরুরি কিছু…
সুস্মিতা ঘুরে তাকিয়ে বলল,
‘ জরুরি কিছু? তোমাদের ফোন তো বন্ধ ছিলোনা, করলে ওখানেও ফোন করতে পারতো! ছাড়ো তো মা ওসব..
শকুন্তলা চাঁপা স্বরে বললেন,
‘ তোর বাবা জামাইয়ের ওপর খুব চটে আছেন।লোক পাঠাতে চাইছিলেন ওকে মারতে।আমি বলে কয়ে আটকেছি। শত হলেও ঘরের জামাই। মান সন্মান আছে তার।
সুস্মিতা জবাব দিলোনা। ফোঁড়ন ডালে দিয়ে বলল,
‘ ওকে শুইয়ে দিয়ে এসো মা।
_____
দোকান থেকে পেয়াজ কিনেছে তিথি। সাদা পলিতে পেয়াজ গুলো। ডান হাতে ঝুলিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো যখন,তখন হুট করে একটা গাড়ির উৎক হর্ন কানে এলো। পেছনে তাকালো তিথি। ঠিক যা ভেবেছিলো তাই, তন্ময়ের গাড়ি এটা। ড্রাইভিং সিটেও নিশ্চয়ই সে- ই আছে? এই ছেলে যদি একটা কথা শোনে, ঠিক চলে এলো? তন্ময় গাড়ির জানলা দিয়ে মাথা বের করে বলল,
‘ জ্বালাতে আসিনি,শুভ সকাল জানাতে এসেছি।
তিথি মুখ কুঁচকে নিলো। দেখতে দেখতে তন্ময় বেরিয়ে এসে সামনে দাঁড়ালো ওর। এক হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
‘ খুশি হওনি তাইনা?
তিথি মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলে বলল,
‘ তোমার মনে হয়না তুমি পাগলামির সব সীমা অতিক্রম করছো?
তন্ময় নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,
‘ সীমা কেউ দেখিয়ে না দিলে, কি করে জানব তার মাত্রা কতটুকু!
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ কথার মারপ্যাঁচে ফেলার খুব দক্ষতা! তা এমন ভর দুপুরে হাজির হওয়ার কারন কি?
‘ কি কারন থাকবে আর? পুরোনো, নতুনত্বহীন সেই কারন।যেটা শুনলে তুমি হও বিব্রত,আর বললে আমি হই পুলকিত!
তিথি হেসে ফেলল এবার।
‘ তোমার সাথে কথায় পারা অসম্ভব। যতই মন খারাপ থাকুক হাসিয়ে ছাড়বে!
তন্ময় কপাল কুঁচকে বলল,
‘ মন খারাপ? কেন জানতে পারি?
তিথি উত্তর না দিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।তন্ময় নিজের মত ভাবলো তার কারন।ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ তিথি,বাবা মা সব সময় বেঁচে থাকেননা,আমিও বাবাকে হারিয়েছি কোনও একদিন।অনেকটা সময় পেরিয়েছে, এবার নিজেকে সামলাও।তুমি এত ভেঙে পরলে আন্টির কি হবে? কে সামলাবে তাকে?
তিথি তাকালো।শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ সেজন্যে নয়। আসলে সকালে আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে।
তন্ময় উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
‘ ও ওয়াও, তা কি এসছে রেজাল্ট?
তিথির লজ্জ্বা কয়েক-গুনে বেড়ে গেলো।মুখ ছোট করে বলল,
‘ এক সাব্জেক্টে ফেইল করেছি।
তন্ময় কিছুক্ষন চুপ করে চেয়ে থেকে বলল,
‘ তোমাদের সাব্জেক্ট মোট চারটে না?
তিথি মাথা নেড়ে ‘ হ্যা ‘জানালো।তন্ময় প্রফুল্ল হেসে বলল,
‘ তার মানে বাকি তিনটেতে পাশ করেছো? হাউ নাইস!
তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো।তন্ময় হাত টেনে বলল,
‘ চলো… চলো মিষ্টি কিনতে হবে।আমি অাজ নিজে গিয়ে আন্টিকে মিষ্টি খাইয়ে আসব।
তিথিকে টেনেটুনে গাড়ির দিকে নিয়ে গেলো তন্ময়।যেতে যেতে তিথি অবাক কন্ঠে বলতে থাকলো,
‘ কিন্তু তন্ময়, আমার তো রেজাল্টে ফেল এসছে।
‘ আহা ওঠোনা তুমি……
_____
ঘরের অতি নিকটে গাড়ির শব্দ পেয়ে কান সজাগ হলো সুচিত্রার। বসে বসে চাল বাঁচছিলেন কূঁলোতে।ঘাঁড় ঝুঁকিয়ে তাকালেন সদর দরজার দিকটায়। তন্ময়ের গাড়ি এসে ভিঁড়লো উঠোনে। প্রথমে বের হলো তন্ময়,এরপরে তিথি।সুচিত্রা বেশ অবাক হলেন। তিথিকে পাঠিয়েছিলো পেয়াজ কিনতে।তন্ময় এলো কোত্থেকে? চাল ভর্তি কূঁলোটা ঠেলে খাটের নিঁচে পাঠালেন সুচিত্রা ।থানের আঁচল বাঁধা ছিলো কোঁমড়ে।সব ঠিকঠাক করে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তন্ময়, তিথি ঘরের ভেতরে চলে এসছে। তন্ময়ের হাতে মিষ্টির প্যাকেট। সুচিত্রাকে দেখেই তন্ময় প্রনাম করলো।
‘ থাক বাবা! ভালো আছো?
তন্ময় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ ভালো আর থাকি কি করে আন্টি? ভালো থাকার রাস্তায় যদি প্রবেশ নিষেধ থাকে?
সুচিত্রা কথার ইঙ্গিত বুঝে তিথির দিকে তাকালেন।তিথি মুখ কাচুমাচু করে মাথা নামিয়ে নিলো।তন্ময় হেসে বলল,
‘ ওর দিকে এভাবে তাকাবেন না আন্টি। এই নিন, মিষ্টি ধরুন।আজকে মিষ্টিমুখ করার সময়।
সুচিত্রা বুঝে উঠলেন না।
‘ কিসের মিষ্টি বাবা!
‘ কেন? আপনি জানেন না? আজতো তিথির রেজাল্ট বেরিয়েছে!
সুচিত্রা অবাক হয়ে বললেন?
‘ তোর এজাল্ট বেরিয়েছে? কই আমাকে তো বললিনা!
তিথি আমতা-আমতা করে বলল,
‘ না মানে, মা আমি বলতাম তোমায়।
‘ তা কি এসছে রেজাল্ট?
তন্ময় বলে ওঠে,
‘ তিন তিনটে সাব্জেক্টে পাশ করেছে।ভাবা যায়!
সুচিত্রা চোখ সরু করে বললেন,
‘ কিন্তু ওদের বিষয় তো চারটা।কিরে তাইনা?
তিথি মাথা নাঁড়লো। আস্তে করে বলল,
‘ বাকিটাতে ফেল এসছে।
সুচিত্রা কিছু বলার আগেই তন্ময় তিথিকে বলল,
‘ তিথি আমায় এক কাপ চা খাওয়াবে?এক্ষুনি! প্লিজ!
তিথি একবার মায়ের দিকে তাকালো। এরপর তন্ময় কে বলল
‘ হু..বোসো…
তিথির রান্নাঘরে ঢোকা অব্দি চেয়ে ছিলো তন্ময়।তিথির অবয়ব অদৃশ্য হতেই সে সুচিত্রার দিকে তাকালো। সুচিত্রা কৌতুহলি দৃষ্টিতে দেখছেন। তন্ময় তড়িঘড়ি করে সুচিত্রাকে টেনে বসালো বিছানার ওপর। এরপর নিজে সুচিত্রার পায়ের কাছে বসতেই সুচিত্রা অপ্রস্তুত কন্ঠে বললেন,
‘ একি বাবা! এখানে বসলে যে?
তন্ময় মৃদূ হেসে বলল,
‘ সমস্যা নেই! ছেলেতো মায়ের পায়ের কাছেই বসবে। এখানেইতো স্বর্গ!
সুচিত্রা মুগ্ধ চোখে চেয়ে থাকলেন।তন্ময় অপ্রচলিত কন্ঠে বলল,
‘ আন্টি আপনি জানেন,যে বার আমার বাবা মারা গেলেন,সেবার আমার অনার্সের প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট খারাপ হয়,তুষার পি -এস-সি তে খারাপ করে।প্রায় এক মাস যাবত মা ঠিকঠাক কাজ করতে পারতেন না,ভুল হতো প্রচুর। কখনও চায়ে চিনির পরিবর্তে নুন দিয়ে ফেলতেন।কখনও রান্নায় তেলের জায়গায় জল। শুধু আমরা কেন? পৃথিবীর যে কোনো মানুষ, সামান্য ডিপ্রেশনের স্বীকার হলেই আশাহত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়।লক্ষ্য থেকে সরে যায়৷ সেখানে ভাবুন তো,তিথির কথা! এই চার মাসে ও কত কি হারিয়েছে! কতটা মানসিক অশান্তির আগুনে জ্বলেছে। প্রথমে আদিত্য,এরপর সন্তান,আর তারপর বাবা।সব প্রিয় মানুষ কে হারিয়েও পরীক্ষায় একটুর জন্যে ওর সফলতা হয়ত আসেনি।তাই বলে ও কি হেরে গিয়েছে? সব সময় সফলতাই কি মুখ্য?পেছনের লড়াই টা কিচ্ছুনা?
সুচিত্রা আধো স্বরে বললেন,
‘ না আসলে আমি তা বলতে চাইনি…
তন্ময় থামিয়ে দিয়ে নম্র কন্ঠে বলল,
‘ আন্টি,আমরা দুজনেই জানি তিথি পরীক্ষা দিয়েছে ঠিক কোন পরিস্থিতিতে!তাই ওর পাশ -ফেল কোনো ব্যাপারই নয়।এখানে ওর লড়াই করে টিকে থাকতে চাওয়ার প্রচেষ্টাই সব থেকে বড়। ও মন খারাপ করেছে ওর ব্যার্থতায়।এখন আপনিও যদি একিভাবে মুখ ছোট করেন তাহলে ও ওর ব্যার্থতাকেই বড় করে দেখবে। ওর এত, এত কষ্ট গুলো এক নিমিষেই তুচ্ছ হয়ে যাবে। হারিয়ে ফেলবে ওর শেষ হাসিটুকু। আমরা কি সেটা হতে দিতে পারি? পারিনা তো! তাই আমাদের সেই সব করতে হবে যাতে তিথি নিজেকে ভেঙে না ফেলে গোছাতে পারে।ওর সব কাজে ওর পাশে থেকে ওকে সাহস যোগাতে হবে।পরবর্তী পরিশ্রমের জন্যে ওকে মনোবল দিতে হবে। তবেই না তিথি পারবে নিজেকে সামলাতে। আরো উচ্ছ্বল হতে। ঠিক আগের মতো! ও এলে আপনি ওর সাথে খুব স্বাভাবিক ব্যাবহার করবেন আন্টি।যাতে ওর বিন্দুমাত্র মনে না হয় ওর রেজাল্ট ভালো হয়নি। এতেই ওর খুশি। এতেই ওর ভালো।
সুচিত্রা এক ধ্যানে তন্ময়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।মুখে শব্দ আসছেনা। ছেলেটা এত ভালো কেন? এত সুন্দর কেন তার চিন্তাধারা! বুঝে আসেনা।
তন্ময় আবার বলল,
‘ আমি জানি আন্টি, আপনি আমায় বিশ্বাস করলেও তাতে অবিশ্বাসের শতকরা দ্বিগুন।এটা অস্বাভাবিক নয়।ঘর পোঁড়া গরু যে সিঁদুরে মেঘ দেখলেও আঁতকে ওঠে।কিন্তু আমি তন্ময় আন্টি, আমি আদিত্য নই। আমি আমার মত।আমি অন্য কারোর মত হবোনা।হতে চাইনা। আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসতাম। সেই মৃত বাবার দিব্যি দিয়ে বলতে পারি, আমি কাউকে ঠকাতে শিখিনি।আর না কাউকে ঠকানোর ভাবনা ভাবছি। এক সন্তানের কাছে তার মৃত বাবা ঠিক কি? আশা করি আপনি, তিথি দুজনেই জানবেন।যদি ঠকানোর ভাবনা থাকত তবে নিশ্চয়ই মাকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতাম না? তাছাড়া আমি মায়ের কাছে কিচ্ছু আঁড়াল করিনি।তিথির শেষ থেকে শুরু সব জানিয়েছি।মা এরপরেও রাজি।তার সিদ্ধান্ত বদলায়নি।
তবুও আমি জোর করে আপনার বিশ্বাস চাইছিনা।মন থেকে বিশ্বাস এলেই আমাকে বিশ্বাস করুন না হয়! কিন্তু তিথির বেলায় আমার অনুরোধ টুকু রাখুন। ও অনেক স্ট্রং,আপনি আমাকে ওর পাশে না চাইলে, নিজে চেষ্টা করুন যাতে ওর এই স্ট্রংনেস সারাজীবন থাকে। অল্পতেই গুঁড়িয়ে না যায়। শত হলেও এই শক্ত মনোভাব টাই যে তিথির একমাত্র শক্তি।
তন্ময় থামলো।সুচিত্রা শুভ্র হেসে ওর চুলে হাত বোলালেন।বললেন,
‘ ভগবান তোমার মঙ্গল করবেন তন্ময়।তোমার মা ভাগ্যবতী এমন হিরের টুকরো ছেলে তার গর্ভে হয়েছে। আমার যে তাকে খুব হিংস হচ্ছে এখন!
তন্ময় হাসলো।শ্যামলা ছেলেটাকে তখন আকাশে জ্বলজ্বল করা শুকতারার মতন লাগছিলো।কি নিষ্পাপ! কি শান্ত! অদ্ভূত মায়াময়।
তিথি সবটা শুনেছে।চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ওভাবেই দরজা বরাবর সটান দাড়িয়ে আছে সে। দুচোখ জুড়ে শুধু মুগ্ধতা।এই ছেলেটা তার এত ভালো কেন চায়? কেন এত ভালো বাসে? এত কেন ভাবে তার জন্যে?কিভাবে এমন পরিষ্কার জলের মতন বুঝতে পারে তাকে? এর সাথে তার আগের জন্মের কোনো যোগসূত্র নেইতো!
চলবে,