পূর্ন__তিথি লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি (১৯)

0
149

#পূর্ন__তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৯)

ঘড়ির কাটায় তখন সাঁড়ে এগারোটা।আদিত্যর পাশ থেকে আস্তে করে উঠলো পুতুল। পা টিপে টিপে গিয়ে দরজা খুললো। আদিত্যর ভারী নিঃশ্বাস তখন লুটোপুটি খাচ্ছে ঘরের মধ্যে। পুতুল বের হবার আগে একবার আদিত্যর দিকে তাকালো। আদিত্য নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে দেখে মুখ ফুলিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বেরিয়ে পরলো রুম ছেড়ে।

এত রাতে দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ছুটে গেলো সমিরনের।ঘুমুঘুমু চোখ নিয়ে উঠতে গেলেই হাতটা চেপে ধরলেন শকুন্তলা।সমিরন ভ্রু কুঁচকে বললেন,

‘ কি হলো?

শকুন্তলা ব্যাস্ত কন্ঠে বললেন,
‘ তোমার যেতে হবেনা।আমি যাচ্ছি।তুমি ঘুমাও।

সমিরন আর কথা তুললেন না।কাঁত হয়ে শুয়ে পরলেন আগের মত।শকুন্তলা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। পুতুল কে দেখে একবার স্বামীর দিকে চোখ বুলিয়ে ঘরের বাইরে এসে দরজা চাঁপিয়ে দিলেন। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ কি রে? সব ঠিকঠাক আছেতো?

পুতুল মুখ কালো করে মাথা নাঁড়লো।যার অর্থ “না।

শকুন্তলা অবাক হয়ে বললেন,

‘ আদি তোকে ছোঁয়নি?

‘নাহ!

শকুন্তলা কিছুক্ষন থম মেরে থেকে বললেন,

‘ কি যা তা বলছিস? তোকে এত সুন্দর করে স্বাজালাম,তারওপরে আদি তো মদ খেয়ে এসছিলো,ওর তো হুশ থাকার কথা না।

পুতুল গুমোট স্বরে বলল,

‘ হুশ নেই দেখেই কিছু হয়নি। উনি ঘুমিয়ে পরেছেন।

শকুন্তলা কপাল চাঁপড়ে বললেন,

‘ হায় ভগবান! তাহলে এখন?

পুতুল উত্তর দিলোনা।দুজনেই খানিকক্ষন মন দিয়ে ভাবলো। শকুন্তলা হঠাৎ উদ্বেগ নিয়ে বললেন,

‘ শোন,তুই এক কাজ কর, তুই গিয়ে আদির পাশে চুপচাপ শুয়ে থাক।সকালে যখন ওর ঘুম ভাঙবে ও যেন বুঝতে পারে যে ও তোকে ছুঁয়েছে।ভুল করে হলেও ছুঁয়েছে।

পুতুল বোঁকা বোঁকা কন্ঠে বলল,

‘ কিন্তু এতে কি হবে মা?

শকুন্তলা বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘ লজ্জ্বা শরমের মাথা খেয়ে কি সব আমিই বলে দেবো? তোর মাথায় বুদ্ধি নেই?যা বলছি কর গিয়ে।কাল সকাল হলেই বুঝবি কি হবে!

পুতুল বাধ্য মেয়ের মত মাথা নেঁড়ে বলল,

‘ ঠিক আছে।

____

ঠিক এক ঘন্টা পর অর্থাৎ সাঁড়ে বারোটার দিকে আদিত্যর ঘুম ভাঙলো।মাথাটা কয়েকশ গুন ভারি মনে হচ্ছে। চোখ ব্যাথা করছে।ওই অবস্থায় উঠে বসলো সে। গায়ের ওপর মোটা কাঁথা দেখে খানিকটা অবাক হলো। এখানে কি করে এলো সে? যতটুকু মনে পড়ছে হাসিব কল করার পর ওদের বাসায় যায়,তারপর মদ খায় অতিরিক্ত। রঞ্জন অনেকবার মানা করলেও শোনেনি।তবে কি রঞ্জনই দিয়ে গিয়েছে বাড়িতে।ইশ! নিশ্চয়ই বাবা ওকে কথা শুনিয়েছেন? মুখ থেকে ‘চ’ বর্গীয় আওয়াজ করে পাশ ফিরলো আদিত্য।চমকে উঠলো সাথে সাথে।পুতুল ঘুমিয়ে আছে। এর থেকেও বড় ঝটকা খেলো যখন খেয়াল করলো পুতুলের গা সম্পূর্ন আবরনহীন।কোনো কাঁপড় নেই।এর মানে কি? আদিত্য ধড়ফড় করে নিজেকে দেখলো, একি তার কাঁপড় কোথায়? কাল রাতে নেশারঝোঁকে পুতুলের সাথে উল্টোপাল্টা কিছ হয়নিতো? কিন্তু এই মেয়ে এ ঘরে এলো কি করে?
আদিত্যর মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করে। ভয়ে গলা শুকিয়ে যায়। ততক্ষনে পুতুলের ঘুম ভেঙেছে।গায়ের সাথে চাঁদর জড়িয়ে উঠে বসেছে সেও। আদিত্য তখন গোঁম মেরে বসে ছিলো। পুতুল লম্বা হাই তুলে হেসে বলল,

‘ উঠেছেন কেন? জানেন তখন…

কথাটুকু শেষ করার আগেই বিপদজনক পরিবেশ উপহার দিয়ে ওর কোঁমড় বরাবর প্রকান্ড এক লাথি মারলো আদিত্য।খাট থেকে ছিটকে মাটিতে গিয়ে পরলো পুতুল।ব্যাথার সাথে সাথে হকচকালো। আদিত্য দাঁত খিঁচে বলল,

‘ তোকে আমি আমার বিছানায় উঠতে বারন করেছিলাম? করেছিলাম বারন? তাও কেন উঠেছিস বল?

পুতুল ভয়ে ভয়ে বলল,

‘ আআমি উঠিনি,আপনি নিজেই তো আমাকে বিছানায় শুইয়েছেন।

আদিত্য সন্দিহান কন্ঠে বলল,

‘ আমি?

আদিত্যর মুখ চোখ দেখে মনে হলো কিছুই মনে নেই তার।পুতুল একটু সাহস পেলো।দৃঢ়তা নিয়ে বলল,

‘ হ্যা আপনিই তো, আমিতো আমার ঘরে ছিলাম।আপনি আমায় ডাকলেন, আমি এলাম।তারপর আপনিই বললেন আজকের রাতটা এখানে শুতে।আমি তাই করলাম আর তারপর আপনিই আমার কাছে…

আদিত্য মাঝপথে ধমকে বলল,

” চুপ কর! মিথ্যেবাদি মেয়েছেলে। আমি এরকম করতেই পারিনা। তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুই মিথ্যে বলছিস।

পুতুল চুপসে গেলো। কোঁমড়ে কাঁথা পেচিয়েই আদিত্য নেমে দাঁড়ালো বিছানা থেকে । প্যান্ট পরলো তাড়াহুড়ো করে। শার্টের বোতাম আটকানোর সময় হঠাৎ মেঝেতে পরে থাকা সবুজ শাড়ির দিকে চোখ পরতেই ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ এই শাড়ি এখানে কি করে এলো? তুই পরেছিলি?

পুতুল কথা বললনা।আদিত্য আবার ধমকে বলল,

‘ বল তুই পরেছিলি?

কেঁপে উঠে এবার জোরে জোরে মাথা নেঁড়ে” হ্যা” জানালো পুতুল।আদিত্য চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে গিয়েই চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করালো ওকে। ব্যাথায় মুখ কুঁচকে নিলো পুতুল।আদিত্য শক্ত কন্ঠে বলল ,

‘ এই শাড়ি ছোঁয়ার সাহস কই পেলি? এই শাড়ি কার জানিস? তিথির। আমি এটা এর জন্যে কিনেছি।সামনে ওর জন্মদিন।তুই হাত দিলি কেন এই শাড়িতে?

তিথির নাম শুনে পুতুল ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,

‘ বেশ করেছি পরে।এই শাড়ি আপনি যার জন্যেই কিনুন না কেন,এখন এই শাড়িতে শুধু আমার অধিকার। আমি একশ বার পরব।

আদিত্য চট করে পুতুলের হাত পিঠের সাথে মুঁচড়ে ধরলো।ব্যাথায় ‘ আহ’ করে উঠলো পুতুল।

‘ বাবা মায়ের আস্কারায় সাহস আকাশ ছুঁয়েছে তাইনা? আমার ওপর তোর কোনো অধিকার নেই। বুঝিসনা তুই? এত অবুঝ তুই?

পুতুল এবার নম্র কন্ঠে বলল,

‘ কেন আপনি এমন করছেন? যা করেছেন, করেছেন। বিয়ের পর এবার তো ওসব বাদ দিন। তিথি তিথি করে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন।কি হয় ও আপনার? রক্ষিতা?

কথাটায় আদিত্য পুতুল কে ঘুরিয়েই কান বরাবর ঠাস করে এক চঁড় বসালো।কান টা ঝিঁমম করে উঠলো পুতুলের। এটুকুতেই ক্ষ্যান্ত হলোনা আদিত্য।গাল চেঁপে ধরে বলল,

‘ রক্ষিতা হলে তুই হবি। তাইতো বিয়ে করেছিস আমায় তাইনা? তার মানে আমি ঠিক শুনেছি তুই সব জেনেশুনে বিয়ে করেছিস আমাকে! রঞ্জনের থেকে নম্বর নিয়ে নিশ্চয়ই তোকে ফোন করেছিলো? কি বলেছিলো বল? তোকে সব জানিয়েছে? তারপরেও কেন করলি বিয়ে? বাবার স্বর্নের ব্যাবসা দেখে? গা ভর্তি গয়না পরবি বলে? এত লোভ তোর? ঘোঁচাচ্ছি তোর লোভ..

পুতুলের গাল ছেড়ে দিয়েই পুতুলের পেটের নিচে আবার একটা লাথি মারলো আদিত্য।সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে পরে গেলো পুতুল। মেঝের সাথে লেপ্টে গিয়ে দুহাতে পেট চেঁপে গোঁঙাতে থাকলো সমানে। এ পর্যায়ে আদিত্যর হয়তো মায়া লাগলো! রাগকে সংযত করে এগিয়ে এসে পাজাকোলে তুলে নিলো পুতুলকে। ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা হেটে গেলো পুতুলের ঘরের দিকে। খাটের ওপর ওকে ধঁড়াম করে ছুঁড়ে ফেলল। পেটের সাথে এবার পিঠেও ব্যাথা পেলো পুতুল। আদিত্য সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কঁড়া কন্ঠে বলল,

‘ সাবধান করে দিচ্ছি পুতুল। এরপর আমার সামনে এলে তুই শেষ।

পেছনে ব্যাথায় কাঁতরাতে থাকা পুতুলকে ফেলে রেখেই আদিত্য হনহন পায়ে বেরিয়ে গেলো।ঘর থেকেই নয়,সোজা সদর দরজা থেকে। ঘুমের মধ্যে বাইকের শব্দ পেয়ে তড়িঘড়ি করে উঠে জানলা দিয়ে উঁকি দিলেন শকুন্তলা। ঘুমে জুবুথুবু চোখে ঠিক বুঝলেন এটা তার গুনধর ছেলে আদিত্য। এত রাতে আদিত্যকে বেরয়ে যেতে দেখে চোখ দুটো কপালে উঠে এলো শকুন্তলার।কই যাচ্ছে ও? তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে নেমে ছুটে গেলেন আদিত্যর ঘরে। গিয়ে দেখলেন ঘরের সাথে সাথে বিছানাও ফাঁকা।বালিশ কাঁথা এলোমেলো পরে আছে।তাহলে পুতুল কোথায় গেলো? শকুন্তলা আবার ছুটলেন পুতুলের ঘরের দিকে। দরজা ঠেলে ঢুকতেই হোচট খেলেন ।বুক থেকে একটু ওপর দিকে চাঁদর প্যাঁচানো পুতুলের।পেট চেঁপে সমানে গড়াগড়ি দিচ্ছে বিছানায়। শকুন্তলা উদ্বিগ্ন হয়ে এগিয়ে এসে ওর পাশে বসলেন,

‘ কি রে, হলো কি তোর? ও পুতুল? এমন করছিস কেন?

এত ব্যাথাতেও শাশুড়ীর প্রতি রাগ কমলোনা পুতুলের।তীব্র জেদে মাথায় রাখা শকুন্তলার হাত টা ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিলো। কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,

‘ এই সব আপনার জন্যে হয়েছে।আপনার কথামতো কাজ করতে গিয়ে ওনার হাতে মার খেতে হলো আজ।

পুতুল কেঁদে ফেলল। শকুন্তলার মাথায় বাঁজ পরলো কথাটা শুনে। পরমুহুর্তে নাক মুখ কুঁচকে বললেন,

‘ আমার কথায় করেছিস?আদি যাওয়ার পর ওর ঘরে তোকে ঢুকতে আমি বলেছিলাম? নাকি বলেছিলাম আলমারি হাতাতে? নিজেই তো শাড়ি হাতে এসে বললি তোকে স্বাজিয়ে দিতে।এখন সব আমার দোষ হয়ে গেল? এইজন্যেই কারো ভালো করতে নেই।

শকুন্তলা মুখ ঝাঁমটা মেরে উঠে চলে যেতে নিলে পুতুল পেছন থেকে এক হাত টেনে ধরলো তার। শকুন্তলা ফিরে তাকালে অসহায় কন্ঠে বলল,

‘ তলপেটে লাথি মেরেছে মা, ব্যাথায় পেট ছিঁড়ে যাচ্ছে।কিছু করুন আমি মরে যাচ্ছি।

শকুন্তলার মায়া লাগলো। উদ্বেগ নিয়ে বললেন

‘ দাঁড়া দাঁড়া,আমি গরম জল নিয়ে আসি।সেক দিলে ভালো লাগবে।
বাপের মতই অমানুষ হয়েছে।তলপেটে লাথি মারে কেউ? দাঁমড়া ছেলের বুদ্ধি দিন দিন হাটুতে নামছে।

_______

কি রে তুই এত রাতে? কিছু হয়েছে?

রঞ্জনের প্রশ্নের উত্তর দিলোনা আদিত্য। হাত পা ছড়িয়ে বসে পরলো বাড়ির সামনে। রঞ্জন চিন্তিত কন্ঠে বলল,

‘ এই আদি কি হলো?

আদিত্য শুকনো ঢোক গিলে বলল,

‘ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি রে রঞ্জন। তুই বিশ্বাস কর আমি একদম ইচ্ছে করে করিনি।

রঞ্জন বুঝতে না পেরে বলল,

‘ মানে? কি করেছিস?

আদিত্য উদাস কন্ঠে বলল,

‘ আমি বোধ হয় নেশার ঘোরে পুতুলের সাথে….

এটকু বলতেই বুঝে নিলো রঞ্জন। ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেও বসলো আদিত্যর পাশে।সহজ কন্ঠে বলল,

‘ এতে ভুল কি আছে? পুতুল কে অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ে করেছিস। এসব স্বাভাবিক।

আদিত্য বিস্মিত হয়ে বলল,

‘ কি বলছিস? সব জেনেবুঝেও এমন কথা বলিস না রঞ্জন!

‘ কেন বলবনা? না, আমাকে বোঝা কেন বলবনা? আচ্ছা আদি তুই কি চাইছিস তুই নিজে জানিস?নাকি বুঝিস? যখন তোর হাতে সুযোগ ছিলো তিথিকে ঘরে তোলার তখন কাজে লাগাস নি আর এখন এরকম করছিস কেন? এখন আর উপায় নেই।ভালো এটাই তুই মাথা থেকে
তিথির চিন্তা ঝেড়ে ফেল।বিয়ে করেছিস যখন পুতুল কে মেনে নে।

আদিত্য কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,

‘ রঞ্জন আমার সাথে এক জায়গায় যাবি?

‘ কোথায়?

‘ তন্ময়দের বাসায়।

রঞ্জন অবাক হয়ে বলল,

‘ ওখানে গিয়ে করবো কি?

‘ তিথিকে দেখবো।

আদিত্যর নির্লিপ্ত জবাবে রঞ্জন ধাক্কা খেলো।কাকে কি বোঝালো এতক্ষন? মুখ গোঁমড়া করে বলল,

‘ আমি যাবোনা।

আদিত্য মৃদূ স্বরে বলল,

‘ ঠিক আছে। আমি একাই যাচ্ছি।

আদিত্য উঠতে নিলেই রঞ্জন হাতটা চেঁপে ধরে বলল,

‘ এই আদি! কি লাভ গিয়ে? তন্ময় তো বাসায় একা থাকেনা ওর বাবা মা থাকলে? তারা খারাপ ভাববে তিথিকে।

আদিত্য একটু হেসে বলল,
‘ ভয় পাস না। আমি তন্ময়দের বাসার মধ্যে যাবোনা।নিঁচ থেকে দাঁড়িয়ে দেখবো তিথিকে।

রঞ্জন খানিক ভেবে বলল,

‘ কিন্তু বাসার ঠিকানা?

‘ আমি চিনি ওদের বাসা। তিথির সাথে যখন তন্ময়ের বন্ধুত্ব ছিলো তখন আমার সাথেও ভালো সম্পর্ক ছিলো। একবার গিয়েছিলাম খুলনাতে, তখন তন্ময়ের সাথে দেখা হয়, ওর গাড়ি খারাপ হওয়ায় ওকে ওদের বাসা অব্দি ছেড়ে আসি।সেই সূত্রেই…

রঞ্জন ছোট করে বলল,

‘ ওহ! একটু দাঁড়া,আসছি।

_____

গভীর রাত মানেই চারদিকে নেমে আসা স্তব্ধতা। গাছের ফাঁক গলে গলে চুঁয়ে পরছে অন্ধকার। কৃষ্ণ পক্ষের এক ফালি চাঁদটা ঢাকা পরেছে তুলোর মত সাদা মেঘের আবরনে।শীতের বাতাসে গায়ের লোম গুলো দাঁড়িয়ে পরেছে ঠান্ডায়।জানলার কাঁচে তখন কুয়াশা আর শিশিরের ঝাঁপটা। ঘুমন্ত মানুষ গুলোর ভারি নিঃশ্বাস আঁছড়ে পরছে দেয়ালে। নির্মলা তুষারকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমিয়েছেন। ঘরটা শান্ত,চুপচাপ হলেও ঘুম নেই তিথি আর তন্ময়ের চোখে।দেয়ালের এপার ওপার রুমে দুজনেই জেগে গুনছে নিস্তব্ধ প্রহরী। সেই দুপুরের পর আর তিথিকে দেখা হয়নি তন্ময়ের।অন্যান্য দিন অবলীলায় তিথির রুমে প্রবেশ করলেও আজ যেন শত বাঁধা,কুন্ঠাবোধ,গ্রাস করেছিলো মস্তিষ্ক। তাই দরজা অব্দি গিয়ে আর ভেতরে যাওয়া হয়নি।তিথিও বাইরে আসেনি।রাতের খাবার নির্মলা ওর ঘরে দিয়ে আসেন। কেন হচ্ছে এসব? একই বাড়িতে থেকে এমন লুকোচুরি খেলা কি সহ্য হয়? এর থেকেতো মনের কথা চেঁপে রাখাই শ্রেয়।

তিথি তখন বিছানায় আধশোয়া। রাতের কোলাহল শূন্যতায় ফোনের মেসেজ টোন টা একটু বেশিই ভারী শোনালো কানে। চোখ মুছে ফোনের ইনবক্স অন করলো তিথি।

তিথি একবার বারান্দায় আসবে? আমি নিঁচে অপেক্ষা করছি।
( আদিত্য)

তিথি মেসেজটা দেখে ফোনটা রেখে দিলো পাশে। যাওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই তার।কিছুক্ষন পর আবার মেসেজ টোন বাজলো,

‘ তুমি যতক্ষন না আসবে আমি কিন্তু বাড়ি ফিরবোনা তিথি।একবার এসো?

তিথি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই নিঁচে বাইক সমেত দেখলো রঞ্জন আর আদিত্যকে। তিথিকে দেখতেই উদগ্রীব পায়ে আরেকটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো আদিত্য। তিথি নিরস মুখে চেয়ে আছে। আদিত্য চিল্লিয়ে করুন কন্ঠে বলল,

তিথি আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।আমাকে ক্ষমা করবে?

তিথি উত্তর দিলোনা।ফোনে কিছু একটা টাইপ করে সেন্ড করলো আদিত্যর নম্বরে। একিভাবে মেসেজ টোন বাজতেই আদিত্য ধড়ফড় করে ফোন চেক করলো,

‘ ভদ্রলোকের বাসার সামনে এভাবে না চিৎকার করে বাড়ি ফিরে যান আদিত্য সাহা। আপনার মান সন্মানের পরোয়া না থাকলেও অন্যদের আছে।

আদিত্য কিছুক্ষন থম মেরে থাকলো মেসেজ টা দেখে। তিথি আর দাঁড়ায়নি।ঘরের মধ্যে চলে গেলো। রঞ্জন বুঝে নিলো হয়তো।এগিয়ে এসে ওর হাত টেনে বলল,

‘ চল। দেখা করার স্বাধ মিটেছে নিশ্চয়ই? এটা হবে আমি জানতাম।

আদিত্য তবুও দাঁড়িয়ে থাকে।একভাবে চেয়ে থাকলো তিথির রুমের দিকে। তিথি এতটা অবজ্ঞা করতে পারলো তাকে?

ওপর থেকে সব টা দেখলো তন্ময়। আদিত্যর বলা কথা শুনলেও তিথির দিক থেকে কোনো উত্তর কর্নকুহর হয়নি তার। হয়তো আদিত্যর ক্ষমা চাওয়ায় তিথি ক্ষমা করে দিয়েছে! হবেই বা না কেন? ভালোবাসে তো! তন্ময়ের ভার বুক আরও ভারি লাগলো
। কয়েকশ পাথর চাপার মত ব্যাথা অনুভব হলো। তিথি তো শুরু থেকেই আদিত্যর, তাহলে নতুন করে এত কষ্ট পাওয়ার মানে কি?
___

সকাল বেলা ডোরবেলের আওয়াজ শুনে খাবার টেবিল থেকে উঠতে নিলেন নির্মলা।তবে আটকে দিলো তন্ময়,

‘ আমি যাচ্ছি মা।তুমি বোসো।

নির্মলা বসলেন, তন্ময় যাওয়ার আগে একবার তিথির ঘরের দিকে চোখ বোলালো।মেয়েটা কি এখনও ওঠেনি ঘুম থেকে? মা ডাকতে যাচ্ছিলেন তবে তন্ময়ই বাঁধা দিলো। কিন্তু সেতো অনেকক্ষন আগে।এতক্ষনে তো উঠে পরার কথা!

ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে তন্ময় দরজার দিকে এগোয়।দরজা খুলতেই ওপাশে সুচিত্রাকে দেখে অবাক হলো তন্ময়। সুচিত্রা হেসে শুধালেন,

‘ কেমন আছো বাবা?

তন্ময় ভদ্র কন্ঠে উত্তর দেয়,

‘ এইতো ভালো।ভেতরে আসুননা…

সুচিত্রা ভেতরে এলেন। তন্ময় দরজা চাঁপালো।সুচিত্রা এদিক ওদিক চেয়ে বললেন,

‘ সোনু কোথায়?

‘ ওতো ঘুমুচ্ছে আন্টি।আপনি বসুন।

সুচিত্রা প্রসারিত হেসে বলল,

‘ না বাবা বসবো না, সোনু এত সকাল সকাল ডেকে পাঠালো কেন? তুমি কি কিছু জানো?

কথাটা শুনতেই তন্ময়ের মুখে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলো ।তিথি ডেকে পাঠিয়েছে? তবে কি ও চলে যেতে চাইছে এ বাড়ি থেকে?

চলবে।

রিচেক করিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here