পূর্ণ__তিথি লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি (১৫)

0
209

#পূর্ণ__তিথি
লেখনীতে:নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(১৫)

সারাদিনের ক্লান্তি ঠিকড়ে পরছে ফর্সা -গোলগোল মুখটায়। কপালের সামনের চুল, ঘামে স্নান সেড়েছে। শরীরের সাথে সুতির ব্লাউজটা লেপ্টে আছে একপ্রকার। সুনিপুণ হাতে সেলাই মেশিনে কাজ করছেন সুচিত্রা। সামনে ঈদ।অনেক গুলো পোশাক তৈরি হতে এখনও বাকি। পাশের মেশিনে কাজ করছেন একজন মহিলা কর্মচারি।এই দুজন মিলেই পুরো দোকানের ভার সামলান। তাই চাপটাও কম নয়। হঠাৎ বাইক থামানোর শব্দ এলো কানে। মনে হলো একেবারে মুখের সামনেই কেউ একজন বাইক থামালো। সুচিত্রা চোখ তুলে চাইলেন। দোকানের বাইরে আদিত্যকে দেখেই ক্লান্ত মুখ নির্নিমেষ হয়ে এলো শক্ত,কঠোর। উঠে এলেন বসা থেকে। আদিত্য কেন এসেছে অজানা নয়। কিন্তু এসব আলোচনা কর্মচারির সামনে করা যুতসই হবেনা। তাই দোকান থেকে বেরিয়ে পরলেন সুচিত্রা।ততক্ষনে বাইক থেকে নেমে এগিয়ে এসেছে আদিত্য। কাছে এসে কিছু বলার আগেই সুচিত্রা তপ্ত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লেন,

‘ কেন এসেছো?

আদিত্য থমকালো।সেকেন্ড খানেক চুপ থেকে বলল,

‘ কেমন আছেন কাকিমা?

সুচিত্রা বড় স্থির কন্ঠে বললেন,

‘ খুব ভালো।খারাপ থাকার কথা ছিলো কি?

আদিত্য মৃদু হেসে বলল,

‘ না তা নয়।

‘ কেন এসেছো এখানে?

‘ আসলে সকালে আপনার স্কুলে গেলাম,আপনি দেখা করেননি..তাই…

সুচিত্রা মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

‘ দেখা করিনি না,দেখা করতে চাইনি।তোমার তো বোঝার কথা আদিত্য।তাও নির্লজ্জর মত চলে এলে?

” নির্লজ্জ্ব “শব্দটা গায়ের চাঁমড়া পুড়িয়ে দিলো আদিত্যর। মুখটা ঢেকে এলো ঘুটঘুটে অন্ধকারে। অথচ উত্তরে ঠান্ডা স্বরে বলল,

‘ আসতেতো হতোই। আমি যে তিথিকে…

‘ ঠকিয়েছো!

পুরো কথাটা এবারও বলতে দিলেননা সুচিত্রা। আদিত্য ফাঁকা ঢোক গিলে বলল,

‘ ঠকাইনি। বিশ্বাস করুন…

সুচিত্রা হেসে ফেললেন।এই হাসিতে বিদ্রুপ স্পষ্ট। বললেন

‘ তিন বছর আমার মেয়েকে বউ করার স্বপ্ন দেখিয়ে তাকে মিথ্যে বিয়ে করে বোঁকা বানিয়ে, তার গর্ভে সন্তান দিয়ে অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে সেড়েছো। ফুলসজ্জ্বার পরেরদিন এসে বলছো তুমি তিথিকে ঠকাওনি? হাস্যকর লাগছেনা আদিত্য?

আদিত্য মলিন কন্ঠে বলল,

‘ আমি জানি কাকিমা,আপনি যা বলছেন তাতে আমি দোষী।কিন্তু আমার কিচ্ছু করার ছিলোনা।যারা জন্ম দিলো, আঠাশ বছর যারা মানুষ করলো, যে বাবা নিজের পরিশ্রম ঢেলে আমায় এত বড় করলেন সেই অসুস্থ বাবার মুখের ওপর না বলতে আমি পারিনি। আমার জ্বিভ আমাকে স্বায় দেয়নি।

‘ তাই তুমি আমার মেয়েকে না বললে তাইনা? বলিহারি তোমার বাবাকেও, ভালো নাটক জানেন কিন্তু। হয়তো খুব সিনেমাও দেখেন, তাইতো বিষয় টা কাজে লাগাতে পেরেছেন । এতে আমি তার দোষ দেখছিনা,কারন আমি জানিনা উনি তোমার সন্তানের কথা জানতেন কিনা।কিন্তু তুমিতো জানতে আদিত্য, তারপরেও এমন বেঈমানি করতে তোমার বিবেক তোমায় স্বায় দিলো?

আদিত্য চুপ হয়ে গেলো।সুচিত্রা আবার বললেন,

‘ যেদিন প্রথম এসে আমার পা ছুঁয়ে প্রনাম করে বলেছিলে
“কাকিমা, আমি আপনার মেয়েকে চাই,বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়।ধরে নিয়েছিলাম এই ছেলের মত ভালো,হীরের টুকরো ছেলে দুটি নেই।কিন্তু আজ বলছি, তোমার মত জঘন্য, নোংরা,দ্বিতীয় টি নেই।

আদিত্য ধরা কন্ঠে বলল,

‘ আপনি আমায় যা খুশি বলুন কাকিমা। শুধু একবার বলে দিন না তিথি কোথায়?

এই প্রশ্নের অপেক্ষায় ছিলেন সুচিত্রা। থমথমে মুখে বললেন

‘ তিথি কোথায় তা দিয়ে তোমার কি দরকার আদিত্য? নতুন করে আমার মেয়েটাকে জ্বালাতে চাইছো?

আদিত্য করুন কন্ঠে বলল,
‘ কাকিমা এভাবে বলবেন না। অনুরোধ! ।আমার সত্যিই জানা দরকার তিথি কোথায়? ওকি এখনও হাসপাতালে? ওকি খুব অসুস্থ?

সুচিত্রা হেসে বলেন,

‘ অসুস্থ কি বলছো? মেয়েটাকে তো ভেতর থেকে মেরেই ফেললে।শ্রাদ্ধ্যটা বাকি এখন।

আদিত্য এবার হাত জোঁড় করে বলল,

‘ কাকিমা, আপনার আমার ওপর যত রাগ ক্ষোভ আছে ঝাড়ুন,যা খুশি বলুন। শুধু একবার বলে দিন কোথায় তিথি? ওর সাথে যে আমার দেখা করা খুব দরকার।

সুচিত্রা মুখটা কঠিন করে বললেন,

‘ না।আমি আমার মেয়ের সন্ধান তোমাকে দেবোনা।

এটকু বলে কন্ঠ ভেঙে এলো সুচিত্রার।ডুকরে কেঁদে বললেন,

‘ আমার মেয়েটার কি হাল করেছো তুমি!বাচ্চাটাতো মরেই গেছে কিন্তু আমার মেয়েটা মরতে মরতে প্রানে বাঁচলো! এত কিছুর পরে আবার তার খোঁজ করছো।আমাকে অনুরোধ করছো তার হদিস বলতে? কেন? জেনেশুনে আমার মেয়েকে মারবো অামি?

‘ বাচ্চাটা মরে গেছে ” এতটুকু শুনেই কান ঝাঁ-ঝাঁ করে উঠলো আদিত্যর।শেষ কথাগুলো অার পৌঁছায়নি সেখানে। ছোট ছোট চোখ দুটো ভরে উঠলো জলে। আজ এই সন্তানের মৃত্যুর জন্যে সেই কি দ্বায়ী?
বুকে পাথর চাঁপা দিয়ে তিথিকে এবোরশনের কথা বলেছিলো ঠিকই,কিন্তু সেতো নিশ্চিত ছিলো, তিথি তার ভালোবাসার চিহ্নকে নিশ্চিহ্ন করবেনা। তবে এসব কেন হলো ঈশ্বর!

আদিত্যর ধ্যান কাটলো সুচিত্রার ডাকে।সুচিত্রা কাঠ গলায় বললেন,

‘ দেখো আদিত্য! বিয়ে করেছো। তিথিকে না খুঁজে বউ নিয়ে সংসারি হও। দয়া করো বাবা! আমার মেয়ের চাঁপা ক্ষত আর খুঁচিওনা।

আদিত্য নিশ্চুপ।সুচিত্রা আবার বললেন,

‘ এত বড় ক্ষতি করলে আমার মেয়ের, তাও তোমার বিবেকে বাঁধছেনা ওর কথা জিজ্ঞেস করতে? এতটুকু লজ্জ্বাও লাগছেনা?

আদিত্য ফিচেল কন্ঠে বলল,

‘ হ্যা লাগা উচিত।আমার সত্যিই লজ্জ্বা লাগা উচিত। তাইনা কাকিমা?

সুচিত্রা শক্ত, শান্ত কন্ঠে বললেন,

‘ উচিত। কারন আমিতো মানুষ, তাই এখনও তোমার সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলছি,এখানে অন্য কেউ হলে, হয়তো এতক্ষনে দু চারটে থাপ্পড় খেয়ে ফেলতে!

আদিত্য অপমান বোধ করলোনা। বড় শান্ত তার দৃষ্টি। সুচিত্রা ক্ষিপ্ত চোখ নিক্ষেপ করে চলে গেলেন ভেতরে।আদিত্য খানিকক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকলো।বুকের ভেতর হাসফাস লাগছে খুব। এখনও কানে বাঁজছে, “বাচ্চাটা আর নেই….

_______

এক ঘন্টা হয়নি তন্ময় তার মা আর ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছে। দিপ্তি রয়ের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে আবার ডোর বেল বাঁজায় কিছুটা অবাক লাগলো তিথির।এমনিতে অচেনা, অপরিচিত জায়গা। এভাবে দরজা খোলা কি ঠিক হবে? আজকাল দূর্ঘটনা তো কম ঘটছেনা। তন্ময় বলেছিলো বাড়িটা বেশ দূরে।আসতে যেতেই এক ঘন্টা।ও নিশ্চয়ই আসবেনা এখন।তাহলে?

ডোরবেল আবার বাজলো।ওপাশের ব্যাক্তিটি রীতিমতো ব্যাস্ত হাতে ধাক্কা দিলো দরজায়। তিথি দ্বিধাদন্দ নিয়ে হেটে গেলো দরজার দিকে। কান টা দরজার সাথে লাগিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘ কে?

‘ আমি, আমি..

স্বরটা পরিচিত। তন্ময় এসেছে তার মানে। দ্রুত হাতে দরজা খুললো তিথি। তন্ময় ভেতরে এসে হাপানোর মত শ্বাস টেনে ধপ করে বসে পরলো সোফায়। তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘ তুমি এত তাড়াতাড়ি কি করে এলে?

তন্ময়ের নিরুৎসাহিত উত্তর,

‘কেন? গাড়ি চালিয়ে।

‘ তুমি যে বললে তোমার ঐ আন্টিদের বাসা বেশ দূরে।

তন্ময় ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

‘ হ্যা,কিন্তু আজকে কে যেন বাড়িটা দঁড়ি দিয়ে টেনে কাছে রেখে গিয়েছে।তাই দেরি হয়নি।

তিথি বুঝলো তন্ময় ইয়ার্কি মারছে। মুখ কুঁচকে বলল,

‘ মিথ্যুক!

তন্ময় মুচকি হাসলো। উদ্বেগ হীন কন্ঠে বলল,

‘ ফ্রিজে ঠান্ডা জল রাখা আছে,আমাকে এক গ্লাস জল দিতেন যদি, খুবই উপকৃত হতাম।

তিথি মৃদূ হেসে বলল,

‘ বসুন।দিচ্ছি।

একটু বাদে তিথি গ্লাসে পানি এনে এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘ নাও।

তন্ময় ফোন ঘাটছিলো।আওয়াজ পেয়ে তাকালো। এক মুহুর্তের জন্যে থমকালো তার হৃদস্পন্দন। এক ঘোলাটে প্রত্যাশিত দৃশ্য ভেসে উঠলো সামনে,

” জামদানি নীল শাড়ি পরেছে তিথি। কোঁকড়া চুল কোমড় অব্দি ছড়ানো।মাঝের সিঁথি ভর্তি টকটকে লাল সিঁদুরে। কপালে লাল টিপ।যে হাতে গ্লাস বাড়িয়েঁছে সে হাতে শাখা, পলার সাথে স্বর্নের এক গোছা চুড়ি। কি সুন্দর বউ বউ লাগছে! কার বউ? হ্যা আমার। আমার বউ…তিথি তন্ময়ের স্ত্রী? এরকম টা হলে ক্ষতি কি ছিলো?

‘ কি হলো নাও?

তন্ময় চমকালো।ঘোর কাটলো তার। বুঝতে পারলো কল্পনায় লাফাচ্ছিলো এতক্ষন। ঠোঁট চেপে হাসলো নিজেই।ইশ! কি না কি ভেবে বসে ছিলো।পরমুহূর্তে
শুকনো ঢোক গিলে মনে মনে অনুরোধ করলো,

‘ এভাবে সারাজীবন তোমার হাতে জল খাওয়ার সুযোগ টা করে দাওনা তিথি।

তন্ময়ের এখনও কোনো সাড়া নেই। সে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে আছে। তিথি হাত নাড়লো ওর মুখের সামনে।স্বর উচু করে ডাকলো,

‘ এই তন্ময়!

তন্ময় হুশ ফিরে পাওয়ার মতন করে বলল,

‘ হ্যা..হ্যা..?

‘ হ্যা হ্যা কি? জল খাবে বললে,নিচ্ছোনা কেন?

তন্ময় ছোট করে বলল

‘ ওহ! দাও।

গ্লাসে চুমুক বসিয়েই ঢকঢক করে পুরো জলটা খেয়ে নিলো তন্ময়। গ্লাস ফাঁকা করে লম্বা এক নিঃশ্বাস ফেলল। পাশের ছোট টেবিলের ওপরে গ্লাস রেখে মাথাটাকে এলিয়ে দিলো সোফার হাতলের সাথে। উফ! চোখ বন্ধ করলেই একটু আগের কল্পনার তিথি ভাসছে। কি এক বিপর্যয়! এক তরফা ভালোবেসে সে শেষ। একেবারেই শেষ।

তিথি চিন্তিত মুখে বলল,’ তোমার কি শরীর খারাপ করছে?

তন্ময় নঁড়ে উঠলো। হেসে বলল,

‘ নাতো।

তিথি ছোট করে বলল,

‘ ওহহ!

তিথি চোখ অন্যদিকে সরাতেই তন্ময় কিছুক্ষন পিপাসু চোখে চেয়ে থাকলো। কালো আইরিশ গুলো অনড়, স্থির রাখলো তিথির শুকনো ছোট্ট মুখটার ওপর। তিথি তাকাতেই চোখ দুটো সরিয়ে অন্যদিকে ফিরলো। দুহাতের তালু ঘষে ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে মুচকি হাসলো।তিথির অদ্ভূত লাগলো তন্ময়ের কার্যক্রম। এভাবে হাসছে কেন ছেলেটা? কৌতুহলে প্রশ্নটা ছুড়েই দিলো,

‘ হাসছো কেন? কি হয়েছে?

তন্ময় তাকিয়ে মাথা নাঁড়লো দুদিকে।জানালো “কিছুনা।

ক্ষনিকের জন্যে কেউ আর কথা তুললনা।আলতো হাতে নিরবতার বাতাস ছুঁয়ে দিলো তাদের। দুজনেরই মস্তিষ্ক ব্যাকুল…একে অন্যের ভালোবাসা না পাওয়ার ক্রন্দনে।অথচ ঠোঁটে? কি প্রসারিত হাসি!

হঠাৎ তন্ময় উদ্ভাসিতমুখে বলে ওঠে,

‘ এই তুমি carrom খেলতে পারো?

প্রশ্নটায় খানিক ভঁড়কালো তিথি। সেকেন্ড খানেক চুপ থেকে বলল,

‘ পারি…

তন্ময় দুই ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

‘ খেলবে..?

তিথি হা করতে নেয়ার আগেই তন্ময় আঙুল উঁচিয়ে বলল,

‘ এই না, আমার প্রশ্নের অপশন শুধু দুটো।
এক,” হ্যা”।আর.. দুই, “খেলবো”….। এই বাইরে বলা যাবেনা।

তন্ময়ের কথায় হেসে ফেলল তিথি।

‘ আচ্ছা ঠিক আছে।

তন্ময় চোখ ঘুরিয়ে বলল,

‘ আচ্ছা ঠিক আছে? এইটা তো আউট অফ অপশন!

তিথি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

‘ উফ! আচ্ছা খেলবো।

তন্ময় চট করে উঠে দাঁড়ালো। ব্যাস্ত কন্ঠে বলল,

‘ গ্রেট! তুমি অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি বোর্ড আর গুটি নিয়ে আসছি। ও হ্যা, আগে একটু ফ্রেশ হয়ে আসি?

তিথি ঘাঁড় কাত করে বলল,

‘ যাও।

______

ছোট সেন্টার টেবিলের ওপর বোর্ড পেতেছে তন্ময়।বোর্ডের চারপাশে ময়দা ছিটিয়ে গুটি গুলো ঢাললো ।এক পাশে নিজে বসলো আরাম করে। আর মুখোমুখি বসলো তিথি। তিথি ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ সেই কবে স্বপ্নর সাথে খেলেছি,প্রায় এক বছরের বেশি।তারপর আর খেলিনি।টোকা দিলে গুটি এগোবে কিনা সন্দেহ।

তন্ময় নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,

‘ নো প্রব্লেম! গুটি না এগোলে গুটির পেছনে সুতো লাগিয়ে দেবো। টান মারবে, দৌড়ে চলবে তখন।আর নাহলে আমি আছিনা,

তিথি হেসে ফেলল আবার। তন্ময় গুটি স্বাজিয়ে বলল,

‘ নাও মারো।প্রথমে তুমি।

তিথি কাঁপা কাঁপা আঙুল ভাঁজ করে টোকা দিলো সব থেকে বড় গুটিতে। কিন্তু বিপদজনক পরিবেশ উপহার দিয়ে গুটি ছিঁটকে তন্ময়ের নাকে গিয়ে লাগলো। হকচকালো দুজনেই। ” ওপ্স” বলে নাক চেঁপে ধরলো তন্ময়। তিথি ব্যাস্ত হয়ে বলল,

‘ আ’ম স্যরি।আমি ইচ্ছে করে করিনি, ব্যাথা লেগেছে?

তন্ময় তাকালো।তিথির চোখেমুখে লেপ্টে অাছে উদ্বেগ।এই উদ্বিগ্নতা কিসের? বন্ধুত্বের! তন্ময় হেসে বলল,

‘ ইটস ওকে। বড় বড় দেশে এমন ছোট ছোট ব্যাপার হতেই থাকে… স্যানোরিটা..

তিথি মুখ কুঁচকে নিলো।এমন সময়েও ফাজলামি কমেনা ছেলেটার। তন্ময় মেঝে থেকে গুটি তুলে বলল,

‘ বলেতোছিলে গুটি এগোবেনা, হাতে এত জোড় যে চাঁদের দেশে পাঠিয়েছো। আরেকটু হলে নাকটা গেছিলো।

তিথি মুখ কাচুমাচু করে পরমুহূর্তে ঠোঁট চেপে হাসলো।তাৎক্ষণিক এক অদ্ভূত কথা জিজ্ঞেস করলো তন্ময়,

‘ আচ্ছা তিথি,আমাকে নিয়ে তোমার কোনো প্রশ্ন নেই?

তিথি ভ্রু কোঁচকালো,

‘ কি প্রশ্ন?

তন্ময় গুটিতে টোকা দিতে দিতে বলল,

‘ এই যেমন ধরো, আমি একটা ইয়াং ছেলে অথচ এখনও সিঙ্গেল। এই ব্যাপারে!

তিথি বুঝতে না পেরে বলল,

‘ এ ব্যাপারে কি প্রশ্ন করবো?

‘ এনিথিং!তুমি আমার সব থেকে ভালো বন্ধু।অন্তত এইদিকটায় তোমার খেয়াল রাখা উচিত।কেন আমি এখনও একা,কেন কেউ আমার জীবনে এখনও নেই?

তিথি জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

‘ তাইতো! আসলে নিজের জীবনের টানাপোঁড়েন সামলাতে গিয়ে বাকিদের কথা ভুলে গেছি। আচ্ছা বলো তোমার কেন গার্লফেন্ড নেই?

তন্ময় একটু ভেবে বলল,

‘ জানিনা!

তিথি ঠোঁট কাঁমড়ে ভাবলো,পরবর্তী প্রশ্ন ছুঁড়লো,

‘ তোমার কাউকে ভালো লাগেনা?

তন্ময় শীতল কন্ঠে বলল,

‘ যখন চোখে ভালোবাসার পর্দা টানা হয় তখন ভালো লাগা মুখ লুঁকোয়।

তিথি কপাল কুঁচকে বলল,

‘ বুঝলাম না।

‘ বুঝতে হবেনা।পরের প্রশ্ন?

তিথি আবার একটু ভেবে বলল,

‘ তা তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ?

তন্ময় সচেতন চোখে চাইলো। পরমুহুর্তে মৃদূ হেসে বলল,

‘ এই প্রশ্নের উত্তর টা থাক।

‘ কেন?

তন্ময় নম্র কন্ঠে বলল,

‘ প্লিজ?

তিথি বলল, ‘ বেশ! তাহলে বিয়ে কবে করবে?

‘ যেদিন সে চাইবে।

‘ কে?

‘ আমার কপাল।

তিথি হেসে বলল,

‘ এরেঞ্জ ম্যারেজ করবে নাকি লাভ ম্যারেজ?

তন্ময় উদ্বেগ হীন কন্ঠে বলল,

” সে চাইলে লাভ। সে চাইলে এরেঞ্জ।সে যা চাইবে আমিও তাই চাইবো।

তিথি আবার কপাল কুঁচকে বলল,

‘ এই সে টা কে?

‘ আমার কপাল।

তিথি বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ তুমিওনা….

তিথি একটু থেমে বলল,

‘ সত্যি বলতে তোমার জীবনে এখন কাউকে দরকার।তুমি যা অগোছালো, তোমাকে ঠিক করা প্রয়োজন । আন্টিতো তুষার কে নিয়েই কাহিল,ও যা দুষ্টু! জলদি কেউ প্রপোজ করলে তাকে এক্সেপ্ট করে নিও বুঝলে!পরে কিন্তু পস্তাবে। বেলা বারোটায় বাজারে গেলে পঁচা বেগুন ছাড়া কিছুই জুটবেনা কপালে।

জবাবে তন্ময় স্ফীত হেসে বলল

‘ আমাকে কেউ প্রোপোজ করবে? কেউ ভালোবাসবে আমায়?

তিথি সহজ কন্ঠে বলল,

‘ কেন বাসবেনা? সত্যি বলতে মেয়েরা তোমার মত ছেলেদেরই পছন্দ করে,যারা অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।নাহলে দেখো, আমার সাথে যা ঘটেছে অন্য কেউ হলে হয়তো সুইসাইড করতো, আর আমি তোমার সাথে বসে বসে cerrom খেলছি। মুখ কালো করে না থেকে হাসছি।এর পুরো কৃতিত্বই তো তোমার। তোমার মত এত ভালো মনের মানুষ পাওয়াও সেইসব মেয়েদের ভাগ্য।

তন্ময় ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো।পরমুহূর্তে সন্দেহি কন্ঠে বলল,

‘ যেকোন মেয়ে আমায় ভালোবাসবে বলছো?

তিথি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলল,

‘ অবশ্যই।

তন্ময় খানিকক্ষণ উশখুশ করলো।আস্তে করে বলল,

‘ তিথি! আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি হ্যা?

‘ আচ্ছা।

তন্ময় উঠে দাঁড়ালো।তিথির সামনে স্বাভাবিক পায়ে হেটে ওর চোখের আঁড়াল হতেই এক ছুটে চলে গেলো ঘরে। দরজা চাপিয়ে, তার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে জোড়ালো নিঃশ্বাস নিলো একবার। পরমুহুর্তে এসে উল্টো হয়ে শুয়ে পরলো বিছানায়। বালিশ টা বুকে চেঁপে ধরলো। খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

‘ আমাকে যে কোনো মেয়ে ভালোবাসবে? তার মানে তুমিও? এত কেন লজ্জ্বা লাগছে আমার? হায়! এই সুখ তুই রাখবি কই তন্ময়?মেয়েটা তোকে মেরেই ফেলবে।

চলবে,

গল্পটা একদিন পরপর দেই? আসলে এটার সাথে কারোর সত্যিকারের ইমোশোন জড়িয়ে থাকায়, প্লট স্বাজাতে একটু হিমসিম খেতে হয় আমাকে।একদিন পরপর দিলে সুবিধে হয় অনেক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here