কৃষ্ণচূড়া🍂 #নুসরাত সুলতানা সেজুথি সূচনা পর্ব

0
303

তো আপনি নায়িকা হতে চান??
সামনের চেয়ারে বসে থাকা একজন মধ্যবয়সী লোকের ছুড়ে দেয়া প্রশ্নে ঈষৎ হ্যাবোধক মাথা নাড়লো আরাবী…..!!

লোকটার নাম মঞ্জু মিয়া,,,দেখতে কিছুটা বাংলা সিনেমার ভিলেন কাবিলার মত,,,চোখ গুলো কেমন হলুদ বর্নের ঘোলাটে। তার ওপরে মুখে পান গুজে একটু পরপর পিক ফেলছে,,,তার পাশে রেখে দেয়া নীল রংয়ের একটি জারের মধ্যে….!!

সিনেমা জগতে যেখানে প্রতিনিয়ত সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি সেখানে এরকম একটা লোক কি করে এই স্টুডিও তে কাজ করার সুযোগ পেলো বুঝে উঠতে পারলোনা আরাবী।

এই নিয়ে চারবার সে অত্র স্টুডিও তে নিজের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় তোলা ছবি জমা দিয়ে গিয়েছে,,,এবারও তাই,তবে প্রত্যেক বারের মতো এবার নিরাশ হবে নাকি আশানুরূপ ফলাফল পাবে সে ব্যাপারে জ্ঞ্যাত নয় সে।

— বয়স কতো আপনার?

— আঠেরো….হতে আর চার মাস বাকি

— হুম,,,

আরাবীর কথায় মাথা নাড়লো মঞ্জু মিয়া,
টেবিলের ওপর রেখে দেয়া আরাবীর ছবি গুলো কিঞ্চিৎ নেড়ে চেড়ে দেখে বলে উঠলেন,,,

— সবই তো ঠিকঠাক আছে,,,জমা দিয়ে যান,,,আপনাকে ডাকা হবে।

— সত্যিই আমাকে ডাকা হবেতো?

আরাবীর উদগ্রীবতা দেখে বেশ পুলকিত বোধ করলেন মঞ্জু মিয়া,,,এক পার্শ্বিক ভাবে ঠোট বিস্তৃত করে বললেন

— হতেও পারে,আবার নাও হতে পারে,,,সব টাই ওপর মহলের সিদ্ধান্ত,,,দেখুন আপনার লাক ফেভার করে কিনা।

এমন কথায় আশ্বস্ত হতে পারলোনা আরাবী,,,চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বাইরে যাবার জন্যে উদ্যত হলো সে।
মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো,,

— ও গড এবার যেনো সিলেক্ট হই,প্লিজ গড।

আরাবীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের এক হাসি খেলে গেলো মঞ্জু মিয়ার মুখে,সেদিক তাকিয়ে গলার ক্ষীন আওয়াজ তুলে বলে উঠলো..

— আজকাল কার ছেলেমেয়েরাও না,,, একটু হলেই ইন্ডাস্ট্রিতে নাম লেখাতে চলে আসে,,,পড়াশুনা করার বয়স তো পড়াশুনা করনা,,,সিনেমায় এসে লাফালাফি করার দরকার কি,,,
হাহ! ঘুঘু দেখেছে ফাঁদ তো আর দেখেনি।
তবেই না বুঝতো কত ধানে কত চাল হয়।

মঞ্জু মিয়ার বকবকানির ইতি ঘটলো ডান পাশে শব্দ করে বেজে ওঠা ফোনের রিংটোনে,,,
হাত বাড়িয়ে ফোন নিয়ে চোখ বোলাতেই চেহারার রং পাল্টে গেলো তার,,,স্ক্রিনে তার বস কাব্য রেয়ানের নাম জ্বলজ্বল করছে।
মুখে রাখা পানের পরিশিষ্ট ফেলে দিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো মঞ্জু মিয়া।

— আসসালামু আলাইকুম স্যার,,,,

ওপাশ থেকে কি বললো শোনা না গেলেও মঞ্জু মিয়ার চিন্তিত মুখ টা স্পষ্ট ভাবে ভেসে উঠলো,

— ইয়ে স্যার আসলে আমি এক্ষুনি করে দিচ্ছি।
না না স্যার এবারের মত আমার চাকরি টা খাবেন না,স্যার প্লিজ স্যার আমাকে যাস্ট দশ মিনিট সময় দিন আমি করে দিচ্ছি।প্লিজ।স্যার লাস্ট বারের মত।

ফোন নামিয়ে রেখে গলার টাই টা একটু ঢিলে করে নিলো মঞ্জু মিয়া,যাক এবারের মতো চাকরীচ্যুতি থেকে বাঁচা গেছে,,,এই বস কে কনভেন্স করতে জান বেরিয়ে যায় তার,,,যা বলবে তাই করবে,,,কারো কথাই মাথায় নেবেনা।
সুপারস্টার রা কি করে এতো রুড হয় ভেবে পায়না মঞ্জু মিয়া
যাক গে এবার নিজের কাজে মন দেয়া যাক,নাহলে আর রক্ষে থাকবে না তার,,,

🍁
🍁

🍁
🍁

🍁
🍁

তুই আবারো স্টুডিও তে ছবি জমা দিতে গিয়েছিলি?

— হ্যা,,,

— আরাবী তুই কিন্তু বড্ড বার বেড়েছিস,,,আমার কোনও কথাই কানে নিচ্ছিস না,,,তোকে বলেছি না মাথা থেকে এসব নায়িকা হওয়ার ভূত ঝেড়ে ফ্যাল।

— ভূত না আপু,,এটা আমার স্বপ্ন,,, আর যখন তোমার কথা শুনছিইনা তখন তুমিই বা কেনো বারবার এক কথা বলছো। আমাকে আমার মতো ছেড়ে দাওনা,

— ছেড়ে দিয়েছিলাম বলেই আজ এই অবস্থা তোর,,,এখনও সময় আছে পড়াশুনায় মন দে,,,

— উফ,,,বারবার এই মাম্মি টাইপ কথা বার্তা বলোনা তো,,,,ভালো লাগেনা,,,
আমিতো আমার স্বপ্ন পূরন করবোই,,তাতে যা কিছু হয়ে যাক,,,

— এই স্বপ্নই একদিন তোকে শেষ না করলে হয়,,,

কথাটা বলেই মায়ের রুমের দিকে হাটা ধরলো আরাবীর বড় বোন ছবি। ২১ বছরের যুবতী সে,,, বয়স অনুযায়ী একটু বেশিই ম্যাচিউর্ড । এইমুহুর্তে রাগে সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে তার,,,,
ছোট বেলা থেকে এতোটা আদর দেয়া সাথে শাসন না করাতে আজ আরাবীর এই পরিনতি,,,এতো করে বুঝিয়েও লাভ হচ্ছেনা,,,

ধুপ করে গিয়ে বিছানার ওপর বসে পরলো ছবি।
পাশেই সেলাই মেশিন চালিয়ে কিছু একটা সেলাই করছেন ছবি আর আরাবীর মা নূবায়রা বেগম।

মেয়ে আসার শব্দ পেয়ে কাজ থামিয়ে সেদিকে তাকালেন নূবায়রা।
ছবির চেহারা দেখেই উনি বুঝে গিয়েছেন এই মুহুর্তে ছবি রেগে আছে।

— কিছু হয়েছে রে মা? এতো রেগে আছিস যে,,আরাবী আসেনি এখনও??

— এসেছে।
— কোথায় ছিলো এতোক্ষন?

— কোথায় আবার রেয়ান স্টুডিওতে গিয়েছিলো,,, ছবি জমা করতে,,,সেই একই কথা তার,,,, নায়িকা হবো নায়িকা হবো…..!!
একটু তো বোঝাও মা,,এসব ইন্ডাস্ট্রি ভালো জায়গা নয়,,

— বোঝায়নি আমি? বোঝাতে বোঝাতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছি,,,,লাভের লাভ কিছু হয়েছে কি?? তাছাড়া তোর কথাই তো কানে নিচ্ছেনা আবার আমার কথা শুনবে?

— তাও হাল ছাড়লে চলবে না মা,,,ও এখন বাইরের জাকজমক নিয়েই মেতে আছে,,,,ওকে কিছু বলতেও পারিনা আমি,,,, বড্ড কষ্ট হয় আমার,,,কেনো বোঝেনা ও,,,,, আমরা আপাত দৃষ্টিতে যা দেখি তা একরকম হয়না,,,

— নিজের ভালো পাগলেও বোঝে,সেখানে আজ বাদে কাল তো ভার্সিটি উঠবে। আর কতো ভাবে বোঝাবো ওকে।

— জানিনা,,, দেখি শেষ বারের মতো যদি কিছু লাভ হয়।

— হুম,,,দেখ চেষ্টা করে যদি পারিস। তবে আজ যদি তোর বাবা….

— থামো মা,,,ওই লোকটার কথা বলবেনা তো,,,আজ আমাদের কপালে যা দূর্গতি সব ওই বাজে লোকটার জন্যেই। কোনও দিনও ভালো হবেনা ওনার কোনও দিনও নাহ।

🍁

🍁

🍁

🍁

রেয়ান ভিলা,,,
বিস্তর এক আঙিনা জুড়ে দাড়িয়ে আছে রাজপ্রাসাদ সমতুল্য বিশালাকার এই বাড়িটি ,,

আর এই বিশাল বাড়িটির সব থেকে বড় এবং চাকচিক্য পূর্ন রুমটির বারান্দায় দাড়িয়ে আছে ২৯ বছর বয়সী একজন সুঠামদেহী সুশ্রী পুরুষ।

পুরো নাম কাব্য রেয়ান। পেশায় একজন চিত্রনায়ক তিনি। বর্তমান সুপারস্টার দের তালিকার শীর্ষে তার নাম টাই সবার প্রথমে আসে।

একটু পর পর হাতে থাকা ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে সে। তার স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়ে আছে বাড়ির আঙিনার শেষের মাথায় সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে।
গাছটিকে নিজের জীবনের সাথে বড্ড সাদৃশ্য পূর্ন মনে হয় তার কাছে,আর তাই তার দিন শুরু হয় এই রঙীন ফুলে ভরতি কৃষ্ণচূড়া গাছটির প্রতি দৃষ্টি নিহিতের মাধ্যমে।

রুমের চারদেয়াল জুড়ে কাব্য রেয়ানের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির ছবি টাঙানো রয়েছে,,,দরজার মুখোমুখি রাখা বিছানার পেছনের দেয়ালে লাগানো রয়েছে অত্র রুমের সব থেকে বড় সাইজের ছবি টি। যার বিস্তৃতি পুরো দেয়াল ছড়িয়ে।

খানিক বাদেই রুমের দরজায় কড়া নাড়লো রাজীব। রাজীব কাব্য রেয়ানের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট, যাকে বলে একেবারে ডান হাত। যার দরুন কাব্যর থেকে একটু বেশিই সমীহ পেয়ে থাকেন তিনি।

মিডিয়া জগত থেকে শুরু করে এর বাইরে যা কিছুর খবরা খবর সবটা রাজীবের থেকেই নিয়ে থাকে কাব্য,,,

— আসবো স্যার,,,

রাজীবের গলার স্বর শুনে ফিরে তাকালোনা কাব্য,বরং একই ভাবে দাড়িয়ে থেকে গম্ভীর এক তরঙ্গ মিশ্রিত আওয়াজ তুলে বলে উঠলো

— এসো….

অনুমতি নিয়ে ভেতরে এসে দাড়ালো রাজীব। অত্র কক্ষে এলে চোখ জুড়িয়ে আসে তার,,,কি সুন্দর করে সাজানো সব কিছু,,,কোথাও বেমানান কিছু নেই বরং প্রত্যেকটা জিনিসই যেমন ব্যায়বহুল তেমনি পার্ফেক্ট। তার স্যার মিঃ কাব্য রেয়ানের মতোই পার্ফেক্ট। একেবারে সুরুচিসম্পন্ন।

কথায় বলা হয় পরিবেশ প্রশান্তির কারন। অত্র রুম টাও ঠিক তাই,,বাইরে থেকে ঘেমে নেয়ে ক্লান্ত হয়ে ফিরলেও রুমে ঢুকতেই মন টা কেমন ফুরফুরে হয়ে গেলো রাজীবের।

বারান্দা থেকে ভেতরে এসে দাড়ালো কাব্য,,,হাতে থাকা গ্লাস টা রুমের কর্নারে রাখা কাচের টেবিলের ওপর বেশ শব্দ করে রেখে দিলো,,
একটু পরেই কোনও একজন সার্ভেন্ট এসে নিয়ে যাবে এটাকে,,,,,, একই গ্লাস দ্বিতীয় বার ব্যাবহার করেনা না তিনি।
রাজীবের দিকে নির্জীব দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো…

— আপডেট বলো…..!!

চলবে,,

#কৃষ্ণচূড়া🍂
#নুসরাত সুলতানা সেজুথি
সূচনা পর্ব

কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here