কৃষ্ণচূড়া🍂 #নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–০৪

0
114

#কৃষ্ণচূড়া🍂
#নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৪

কংগ্রাচুলেশন মিস আরাবি!

রাজীবের অভিবাদন এ সৌজন্যমূলক হাসি হাসলো আরাবি।

— ধন্যবাদ।

— কেমন লাগছে বলুন?এতো বড় একটা প্রোডাকশন এ কাজ পেয়ে যাচ্ছেন,রাতারাতি স্টার হয়ে যাবেন কিন্তু।

— অভিনত্রী হওয়াটা আমার প্যাশন ছিলো,,,,এতো চেষ্টার পর সফল হয়েছি আনন্দ তো হচ্ছেই।

— হ্যা সে আপনার চোখ মুখ দেখেই আন্দাজ করতে পারছি আমি।

— আব,,স্যার বলছিলাম যে……

— হ্যা বলুন??

— স্যার আমি কি একবার কাব্য স্যারের সাথে দেখা করতে পারি। না মানে ওনাকে সামনে থেকে দেখার খুব ইচ্ছে আমার।

— সেতো আজ হোক কাল দেখতেই পারবেন,,,,একই ফিল্মে কাজ করবেন যেহেতু,,,,,তবে আজ হচ্ছেনা কারণ স্যার আজ এখানে আসেইনি। আসলে দেখতে পারতেন,,,,উনি ওনার দরকারি একটা কাজে বেরিয়েছেন

—- ওহ আচ্ছা,,,,,

— হ্যা,,,অবশ্য কাল আসতে হবে আপনার,,,, কাল ই দেখে নেবেন না হয়।

— ঠিক আছে,,,,

বেশ উৎফুল্ল মন নিয়ে বেরিয়ে এলো আরাবি,,,অবশেষে চান্স পেয়েছে সে,,,,টিভি স্ক্রিনে এবার তাকেও দেখাবে,,প্রত্যেক টা সিনেমা হলে তার অভিনীত সিনেমা চালু হবে,,ব্যানার হবে,সাইনবোর্ড হবে,, বড় পর্দার নায়িকা হবে সে,,,,,

উফফ! আনন্দ আজ বর্ষন লাগিয়েছে আকাশ থেকে।

🍂

🍂

মাত্রই রেস্টুরেন্টের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এসেছে কাব্য,,,,পার্কিং সাইডে গিয়ে গাড়িতে উঠতে যেতেই বাইরে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে সেদিকে ফিরলো,,,,

কিছু একটা ভেবে নিয়ে গাড়ির খুলে রাখা দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে হাটা ধরলো সামনের দিকে।

— স্যার?

ড্রাইভারের কথায় পাত্তা না দিয়ে একিভাবে হেটে বেরিয়ে গেলো কাব্য,,,,

কি সুন্দর বৃষ্টির ফোটা গুলো সারিবদ্ধ ভাবে গড়িয়ে গড়িয়ে পরছে,,,,আদৌ এর শুরু টা খুজে পেয়েছে কেউ,,,,

আজ খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে নিজেকে একটু ভেজাতে,,,অনেক বছর ধরে ভেজা হয়না যে।

ধড়ফড় করে পাশে এসে দাড়ালো ড্রাইভার হেনাল। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। যার মানে তার স্যার কাব্য রেয়ান গাড়িতে উঠবে কিনা মনে মনে সেই উত্তর এর আশাবাদী তিনি।

পকেট থেকে ওয়ালেট আর ফোন টা ড্রাইভারের হাতে তুলে দিলো কাব্য,,,,,মুখ ঢেকে রাখা মাস্ক টা খুললোনা,,,এটা খুলে দিলে মুশকিলে পরে যাবে সে,,,,আর যাই হোক হিরো তো আর স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারেনা,,,,ফ্যান ফলোয়ার পাশাপাশি মিডিয়ার লোকজন একবার হাতের কাছে পেলেই হুমড়ি খেয়ে পরে। তাই সেফটির জন্য এটা খুব দরকারি ও বটে।

ধীর পায়ে এগিয়ে উন্মুক্ত ফ্লোরে দাড়ালো কাব্য,,,,,,নিচের দিক টা পাকাপোক্ত থাকলেও মাথার ওপরে ফাকা হওয়ায় বৃষ্টির ফোটা গুলো সরাসরি গায়ে এসে পরছে তার।

কাব্যর এহেন কান্ডে হেনাল অবাক হয়ে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে।

— স্যারের কি জ্বর বাধানোর শখ জাগলো নাকি,,,রাজীব স্যার শুনলে তো আমাকে ঝাড়বে।

চোখ মুখ শক্ত রেখে সমানে ভিজে যাচ্ছে কাব্য,,,,তবে স্থির ভাবে দাড়িয়ে অাছে সে,,,,,বৃষ্টির পানিতে সোজা ভাবে দাড় করানো চুল গুলো কপালে গড়িয়ে পরছে আর এক হাতের আঙুল গুলো দিয়ে ক্ষনে ক্ষনে সেগুলো কে ওপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কাব্য।
.

🍁
.

হুট করে কাব্যর চোখ পরলো রাস্তার অপর দিকে নিজ বরাবর। সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে একটা সৌজন্যে বর্ধক গাছ,,,,তবে কাব্যর দৃষ্টি গাছ টির দিকে নয়,,,,,,গাছের নিচে মাত্রই এসে দাড়ানো সাদা থ্রিপিস পরিহিতা এক যুবতির দিকে।

বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে হয়তো,,,,কিন্তু তাও ভিজে একেবারে জুবুথুবু অবস্থা। গায়ের জামাটা ভিজে লেপ্টে আছে,,,,,যার হাত থেকে বাঁচতে মেয়েটা লম্বা চুল গুলো সামনে এনে রেখেছে সাথে গায়ের সাথে একেবারে জরিয়ে ওড়না পরেছে,,,,

এই মুহুর্তে মেয়েটাকে কাব্যর কাছে বৃষ্টিতে ফুটন্ত একঝাক কদমের মত মনে হচ্ছে। কি প্রাকৃতিক রুপে রুপশ্রীতো মুখখানি।

এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকায় মুখের ভঙ্গি পাল্টে কিঞ্চিৎ ঠোট এলানো হাসি ভর করেছে কাব্যর মুখে,,,,


বৃষ্টি থেমে যেতেই মেয়েটি দৌড়ে চলে গেলো গাছের নিচ থেকে। আচমকা এমন হওয়ায় উদগ্রিব হয়ে চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুজতে শুরু করলো কাব্য,,,,,

—- বলছিলাম কি স্যার,,,,এবার চলুন না। জ্বর বাধবে যে।

হেনালের কথায় নিজেকে স্বাভাবিক করে গাড়ির দিকে হাটা ধরলো কাব্য,,,,,
এতো তাড়াতাড়ি কোথায় চলে গেলো মেয়েটি বোধগম্য হয়নি তার। যেতে যেতে একবার ফিরে তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসে ভেজা শরীরটাকে সিটের সাথে এলিয়ে দিলো। আবেশে চোখ বন্ধ করতেই মুখের সামনে একটু আগের ভেজা সাদাপরীর মুখ টা আকাশের সুখতারার মত ভেসে উঠলো।
চট করে চোখ খুলে ফেললো কাব্য,,,,,,

— কোথাকার কোন মেয়েকে দেখেছি আর একেবারে মাথার মধ্যে ঢুকে গিয়েছে??ইউজলেস!

🍁

🍁

খুশিতে লাফাতে লাফাতে বাসায় ঢুকলো আরাবি।
নূবায়রা মেয়েকে দেখতেই ভ্রু ক্রুটি করে জিজ্ঞাসা করে উঠলেন…

— বাঁদরের মতোন লাফাচ্ছিস কেনো?

— উফ মা,,আমি লাফাবোনা তো কে লাফাবে??? আজ যে আমি ভীষণ খুশি,,,,কেনো বলোতো??

— কেন আবার,,,সিনেমায় চান্স পেয়েছেন আপনি,,,,

— বুঝে ফেলেছো??
খুশি হওনি?

— হয়েছি….

— মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ চিন্তায় আছো।

— তাতো থাকবোই,,ছবিটা জ্বর বাধিয়ে বসেছে।

— সেকি?? আপুর জ্বর এসছে?

— আসবেই তো,,,কাল রাতেও ভিজেছে,আজকেও ভিজতে ভিজতে এসেছে। জ্বর উঠবেনা তো কি করবে।

— ছাতা ছাড়া তো আপু বের হয়না৷,, ভিজলো কি করে,,,

— ওর ছাতা কাল ই ভেঙে গিয়েছিলো,,

— সরো সরো আপুকে দেখে আসি।

বাইরে থেকে ভেতরের ঘরে এসে দাড়ালো আরাবি,,,ছবি চোখ বন্ধ করে গায়ে কাথা মুড়িয়ে আধশোয়া হয়ে আছে বিছানার ওপর।

আরাবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুললো। ঠান্ডা জ্বড়ানো গলায় বলে উঠলো

— এসে গিয়েছিস?

কথাটা শেষ করার আগেই অনবরত হাঁচিতে হেলে পরলো ছবি।

— এ বাবা আপু,,,গলাও বসে গিয়েছে তোমার? দেখি দেখি জ্বর কতোটা,,,,
হাত উঠিয়ে ছবির কপালে ঠেকালো আরাবি,,,

বাপ রে অনেকটাই গরম।কি যে করোনা তুমি কেনো এতো ভিজতে গেলে,,ওষুধ খেয়েছো?

— নাহ,মা আনতে যাচ্ছে,,, আমাকে নিয়ে ভাবিস না,,,ওষুধ খেলেই ফিট হয়ে যাব। তোর কি খবর বল?

— আমিতো সিলেক্ট হয়েছি,,,অবশ্য আমি জানতাম অডিশন নিতে যখন ডেকেছে এবার আমার হিরোইন হওয়া কনফার্ম,,,জানো? কাব্য রেয়ানের আপ কামিং ফিল্মে আমাকে নেয়ার কথা চলছে,,,,,কাল ওনার সাথে দেখা হবে,তারপর সব ঠিকঠাক লাগলে ছবি সাইন করাবে,,,,,

— এরই মধ্যে নেবে তোকে,,,,তুইতো একেবারে নতুন।

— উনি তো এরকম ই করে,প্রত্যেক বছর একটা করে নতুন মুখ নিয়ে কাজ করে,,,,,,এই জন্যেই না ওনার সিনেমা এত হিট,কোনও একঘেয়ে ভাব নেই। অবশ্য উনি এমনিতেই সুপারস্টার,,,,,

— ছাড় ওসব,,বাইরে যা বৃষ্টি! ভিজে যাসনি?? কিভাবে এলি?

— আরে কাব্য রেয়ানের পি এ মিস্টার রাজীব আমাকে গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে গেছে,,,,,,দেখছোনা আমি একবারে শুকনো কাঠের মতোন মরমর করছি।

বোনের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো ছবি,,,,মেয়েটাকে এত্ত খুশি এই প্রথম দেখছে সে,,,মানুষের স্বপ্ন পূরন হলে তার কতোই না আনন্দ হয়।

আমারও তো কত স্বপ্ন ছিলো,সেসব পূরন হলে আমিও কি এতোটাই খুশি হতাম?

চলবে,,,,

কাব্য কাকে দেখেছে আন্দাজ করতে পেরেছেন নিশ্চয়ই?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here