কৃষ্ণচূড়া🍂 নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–০৬

0
164

কৃষ্ণচূড়া🍂
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৬

বেশ কিছুদিন পার হয়ে গিয়েছে,,,,আরাবীর পদন্নোতি বেশ ভালোভাবেই ঘটেছে,,সিনেমা জগতে অবশেষে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করতে সক্ষম আরাবি,আর সেটাও সম্পূর্ন নিজের চেষ্টায়,,,,
কাব্যর সাথে নতুন ফিল্মের শুভ মহরত ও সম্পূর্ন হয়েছে। ক্যামেরার সামনে আবারো একটি নতুন মুখ আনলেন সুপারস্টার কাব্য রেয়ান এমন শিরোনামে ছেয়ে গেছে সব গুলো পত্রিকার পৃষ্ঠা,,, পাশাপাশি প্রত্যেক টা টিভি চ্যানেল। সবাই বেশ সাদরেই গ্রহন করেছেন এই নায়িকাকে।

বাড়িতে টেলিভিশন না থাকলেও যে এমন খবর দৃষ্টি গোচর হয়নি ছবির এমন টা নয়। কিন্তু এ নিয়ে উচ্ছ্বাসের বদলে তার মনে এক রাশ ভয় ভীড় করে। আচ্ছা কখনও এমন তো হবেনা যে টাকা পেয়ে তার ছোট বোন তাদেরই চিনতে অস্বীকার করবে।হতেও পারে,,,কিংবা নাও হতে পারে।
হলেই বা,,,,এরকম টা করে আরাবি যদি খুশি থাকে তবে থাকবে না হয়,,,,,মাকে নিয়ে ছবির বাকি জীবন দিব্যি কেটে যাবে।

,,,,
,,,,,
,,,
,,,,
,,,,
,,,,
,,,,
,,,,
,,,

আগামীকাল থেকে সিনেমার শ্যুটিং শুরু হবে,,,,,
দুপুরবেলা একই রেস্টুরেন্টে ছোট্ট একটা গেট টুগেদার এর আয়োজন করা হয়েছে অত্র ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিজ এর পক্ষ থেকে।

সেখানেই উপস্থিত একে একে ফিল্মের হিরো হিরোইন থেকে শুরু করে বাকি সবাই। বেশ কদিন এদের সঙ্গ তে কেটে যাওয়ায় আরাবির মধ্যকার জড়তাও বেশ কেটে গিয়েছে।
সবার সাথে ভালোভাবে মিশতে পারলেও কাব্যর সাথে সম্পর্ক টা একি জায়গায় দাড়িয়ে আছে আরাবির। কাব্য নিজে থেকে একটা বাড়তি কথাও বলেনা আরবির সঙ্গে,,,,মাঝে মাঝে দু একটা এডভাইস দেয়াই অতিরক্ত তার কাছে।

সব সময় একটা সানগ্লাস ক্যারি করে বলে কোন দিকে তাকিয়ে থাকে বুঝে উঠতে পারেনা আরাবি। তাই কাব্য কে নিয়ে অত না ঘেটে নিজের কাজে মন দেয় সে,বাকিদের সাথে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। আজ তাদের পরিচালক মিস্টার ইরফান রাহমানের আসার কথা। আজই সিঙ্গাপুর থেকে ফিরছেন তিনি,,,,যার দরুন মহরতের সময়টাতেও তার দেখা মেলেনি।

সবার কথার মাঝে কাব্য চুপচাপ বসে আছে,হু হা ছাড়া তার মুখ থেকে তেমন কিছু বের হচ্ছেনা,,এহেন কার্যে আরাবি বেশ বিরক্ত,,,তার মত সুন্দরী মেয়ের সাথে কথা বলতে সবাই হুমড়ি খাচ্ছে আর সেখানে এ কিনা নিরামিষ তাও এক্সট্রিম পর্যায়ে।

আরাবির ভাবনায় ছেদ ঘটলো পাশে বসে থাকা মিউজিক ডিরেক্টরের আওয়াজে,,

— স্যার ইরফান স্যার চলে এসছেন।

কথাটি কাব্যর উদ্দেশ্যে ছুড়েছিলেন তিনি। কাব্য চুপ থাকলেও লোকটার চোখ অনুসরন করে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরলো আরাবি সহ বাকিরাও।

বুটের ঠকঠক আওয়াজ তুলে প্রবেশ ঘটলো ইরফানের,,,,,
আরাবির ভাবনা অনুযায়ী কোনও পৌড় নন,,বরং একজন যুবক,কাব্যর মতোই বলিষ্ঠ যুবক।
দেখতে যথারীতি যথেষ্ট সুদর্শন ও বটে।

আরাবি কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সোজা হয়ে বসলো। এখন হিরোইন সে,এভাবে হাবলার মত কাজ কর্ম মানানসই নয়।

ইরফান এগিয়ে এসে করমর্দন করলো সবার সাথে,,,,কাব্যর দিকে হাসি হাসি মুখ করে গিয়ে বাহু বরাবর মৃদূ এক ঘুষি বসিয়ে দিলো।

—- কিরে,,,, কিরকম কি চলছে।

ইরফান কে দেখে উঠে দাড়ালো কাব্য,,,হাল্কা ঠোঁট প্রসস্থ করে হাসলো সে।

— ভালো আছি,,,,

— বুকে আয় ব্যাটা।

দুজনার আলিঙ্গন শেষে কাব্যর পাশের চেয়ার টেনে বসে পরলো ইরফান। হুট করে আরাবির দিকে চোখ পরতেই স্থির করে নিলো নিজের দৃষ্টি।

এটারই যেন অপেক্ষায় ছিলো কাব্য,,,মুখের ভঙ্গিমা তার কিঞ্চিৎ পাল্টে গেলেও বুঝতে দিলোনা কাউকে।

আরাবি হাতে রাখা থাই স্যুপে রাখা চামচ নেড়েচেড়ে দেখছে।

— ইনিই কি সিনেমার হিরোইন মিস আরাবি রাহমান?

ইরফানের আওয়াজে মাথা তুললো আরাবি,,,,এতে যেন আরো জমে গেলো ইরফান।

— হ্যা ইনিই আরাবি…( কাব্য)

জবাব পেয়ে মুখে হাসি এনে এক হাত ওর দিকে এগিয়ে দিলো ইরফান।

— হ্যালো মিস,,,আমি ইরফান রাহমান।

— আমি আরাবি রাহমান।

— বাহ আমাদের টাইটেলে বেশ মিল আছেতো।

জবাবে হাসলো আরাবি,,,,কানের পাশে চুল গুলো গুজে নিয়ে আবারো ইরফানের দিকে তাকালো,,,,একিভাবে চেয়ে আছে ইরফান।

ইরফানের হাতের সাথে মেলানো হাত টা ছাড়াতে হালকা চেষ্টা করলো আরাবি,,,,,যার দরুন হাতটা আরো একটু চেপে ধরলো ইরফান। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মৃদু ভাবে স্লাইড করে গেলো একবার আরাবির কব্জির ওপর দিকটায়।
ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগলেও চুপ থাকল আরাবি।

গলা খাকাড়ি দিয়ে একবার কেশে নিলো কাব্য,,,,যার দরুন
একটু তাড়া নিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো ইরফান।

— এবার তাহলে কাজের কথায় আসি আমরা।

কাব্যর কথায় সম্মতিসূচক মাথা ঝাকালো সকলে।
কিন্তু ক্ষনে ক্ষনে ইরফানের দৃষ্টি,,, গতি ঘুরিয়ে নিচ্ছে আরাবির দিকে। ব্যাপারটা আরাবির ও চোখ এড়ালো নাহ,,,,,
,,,
,,,,,
,,,,,,,,
,,,,,,,
,,,,
,,,,,
,,,,,
,,,,

— কিরে এত বড় টিফিন ক্যারিয়ার??? এত খাবার আরাবি খেতে পারবে??

— পারবে মানে? অবশ্যই পারবে,কতদিন আমার হাতে তৈরি খাবার খায়না ও,,,,,একবার পেলে দেখো চেটেপুটে সব ছাফ করে দেবে।

— ঠিক আছে,,,আজ রোদ উঠেছে,,,স্ক্রুটার নিয়ে যেতে পারিস তো….

— নাহ থাক,,,,আরাবি ওটা একদম পছন্দ করেনা,,,আমি বরং সি এন জি নিয়ে নেবো।
আসি তাহলে,,,

— সাবধানে যাস।
মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে হাসি মুখে বেরিয়ে পরলো ছবি,গন্তব্য আরাবির শ্যুটিং স্পট।
,,,
,,,,,
,,,,,,
,,,,
,,,,,
,,,,
,,,,
,,,

প্রথম শ্যুট শেষ,,,,,, আরাবির কাজে প্রত্যেকেই বেশ সন্তুষ্ট।
নতুন হিসেবে একবার দেখিয়ে দেয়াতেই খুব ভালো পারফমেন্স ছিলো এমনটাই বক্তব্য সবার,,,,,হেলদোল নেই কাব্যর মাঝে,,,,,,এত প্রশংসা আসেনা তার।

ইরফান ক্ষনে ক্ষনে আরাবির পাশ ঘেষার চেষ্টা করছে,,,,,,বলা যায় আরাবির একটু বেশিই খেয়াল রাখছেন তিনি। যেটা দরকার নেই সেটাও এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে,,,,,
আরাবি বুঝতে পারলেও ঠোঁট বাকিয়ে হাসি ছাড়া অন্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেনা।

লাঞ্চ ব্রেক শুরু হয়েছে,,,,,,ইরফান, আরাবি কাব্য এরা এক সাথেই আছে লাঞ্চের জন্যে,,,কাব্যর পাশে দাড়িয়ে আছে রাজীব,,,,

— দাড়িয়ে দাড়িয়েই খাবার খাবে নাকি রাজীব।

— না মানে স্যার….

— বসো,,,,

কাব্যর ইশারা অনুযায়ী পাশের চেয়ারে বসলো রাজীব,,,,

ব্যাপারটাতে ইরফান খানিকটা বিরক্ত সেটা তার মুখেই স্পষ্ট ছাপ ফেলেছে।

—- কর্মচারীও এখন মালিকের সাথে বসে খাবার খাবে নাকি রে কাব্য?

এহেন কথায় রাজীব অসহায় মুখ করে উঠে দাড়াতে উদ্যত হতে গেলেই ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো কাব্য,,,,,একিভাবে ইরফানের দিকে তাকিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে উঠলো….

— কর্মচারী যদি ভাবতাম তাহলে হয়তো চিন্তা টা তোর মতই করতাম,,,,,,কিন্তু কি বলতো রাজীব আমার ছোট ভাইয়ের মত,,,,,,ভাই ভাই একিসাথে খাবার শেয়ার তো করতেই পারে তাইনা???

কৃতজ্ঞতাসুচক দৃষ্টিতে কাব্যকে একবার দেখে নিলো রাজীব,,,,,,এরকম উদার মানসিকতার জন্যেই তার স্যার তার কাছে এতো প্রিয়।

আরাবি আপাতত চুপ করে আছে,ইরফানের যে নামি দামি লোক ছাড়া পছন্দ নয় ব্যাপারটা বোধগম্য হতে সময় লাগলোনা তার।

— ম্যাডাম আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসছেন??

ছেলেটার ডাকে আরাবি সহ বাকি সবাই সেদিকে মনোযোগ দিলো।

— আমার সাথে?? কে??

— বলেছেন উনি আপনার বড় বোন,,,ছবি রাহমান।

— ওহ গড আপু আবার কেনো আসতে গেলো,,,,
আরাবির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ছেলেটি আবারো বলে উঠলো,,,

— ওনাকে কি ডাকবো ম্যাডাম?

— আব,,,,,,না ডাকতে হবেনা। আমি যাচ্ছি,,,

আরাবি উঠে যাওয়াতে কিঞ্চিৎ ভ্রু সঙ্কুচিত হয়ে এলো কাব্যর। নিশ্চয়ই কোনও ব্যাপার আছে তাই বোন কে ডাকলোনা।
একবার দেখা দরকার।

🍁

🍁

🍁

— আপু??

আরাবি কে দেখেই খুশিতে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ছবি,,,,কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে খুশির বদলে বিরক্ত হলো আরাবি।

— আরে আপু ছাড়ো,আমার কস্টিউম নষ্ট হয়ে যাবে,,,,,এই যে দেখো চুলের সাইড টা খারাপ ও হয়ে গেলো বলতে না বলতেই,,,,
আরাবির বিরক্তি দেখে হাসলো ছবি,কিন্তু নিশব্দে,,,

— স্যরি রে বুঝতে পারিনি।

— আচ্ছা বাদ দাও,,,এখানে এলে হঠাৎ।

— তোকে দেখতে এসেছিলাম,,,,অনেক দিন দেখিনা তো।

— আরে আমাকে দেখতে হলে কি আর এখানে আসতে হয়,টিভির সামনে গেলেই তো আমাকে পাবে,,,,

— ওই দেখায় কি আর চোখ ভরে রে,,,,
যাগ গে ছাড় ওসব,,,দ্যাখ আমি তোর জন্য কি এনেছি?

— কি?

— নিজের হাতে রান্না করে এনেছি তোর জন্যে,,,,,রুই মাছের মাথা দিয়ে তোর প্রিয় ডাল করেছি আরো অনেক কিছু আছে,,,

ছবির কথায় অনেকটা জোরপূর্বক হাসি হাসলো আরাবি।

— আপু?? এসব খাবার খেলে আমার প্রেজটিস যা কামিয়েছি এ কদিনে সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে।

— খাবারের সাথে সন্মান যাওয়ার কি সংযোগ?

— আছে আপু,ওসব বুঝবেনা তুমি,,,,তুমি এসেছো তাতেই আমি খুশি হয়েছি,,,,এসব আর নিয়ে আসবেনা কখনও,,,,

আমার লাঞ্চ টাইম প্রায় শেষের দিকে আমি আসছি এখন,,,,

যাওয়ার পথে আরও একবার পিছু ফিরলো আরাবি,বোনের বিষন্ন চেহারা দেখে ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভেবে নিয়ে এগিয়ে এলো ছবির দিকে।

— ঠিক আছে দাও

হাসি মুখ করে বোনের হাতে টিফিন ক্যারিয়ার তুলে দিলো ছবি,,,
হাতে পেয়েই অনেকটা তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো আরাবি
আরাবি মুখে খুশি হয়েছে বললেও এক বিন্দু খুশির ঝলক ও ওর মুখে খুজে পায়নি ছবি।
মুখ কালো করে পেছন ঘুরে হাটা ধরলো ছবি।

হুট করে পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে ওঠায় পায়ের কদম থামিয়ে দিলো সে।

— এই যে মিস শুনছেন???

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here