শেষ_ভালোবাসা পর্ব : ৭ লেখা : মেঘপরী .

0
221

#শেষ_ভালোবাসা
পর্ব : ৭
লেখা : মেঘপরী
.
– আমিও একজনকে ভালোবাসি, ওর নাম ছিলো রাজ্য
– ছিলো মানে এখন নেই?
– না, আমার ভুলের জন্যই আমি ওকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি
– তোমার পুরো কাহিনীটা বলো তো
-হুম..বসুন এখানে বলছি আমার রাজ্যর কথা
(তারপর দুজনে বেলকনিতে মুখোমুখি বসলো)
-আপনি হয়তো জানেন আমার বাবা একজন সরকারী চাকরীজীবি, তাই প্রায় প্রায়ই বাবার টান্সফার হতো, আর আমরাও চলে যেতাম এক জেলা থেকে অন্য জেলায়, আমি যখন ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ি তখন আমরা খুলনাতে থাকতাম, আমরা যে এলাকায় থাকতাম ঐ এলাকার এক সুনামধন্য পরিবারের ছেলে ছিলো রাজ্য, ঐ এলাকার মার্কেটের বেশির ভাগ দোকানই ছিলো রাজ্যের বাবার,

একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফেরার সময় আমি রাজ্যদের একটা চুড়ির দোকানে যাই তখন রাজ্য আমাকে প্রথম দেখে আর প্রথম দেখায়ই ভালোবেসে ফেলে, তারপর থেকে আমি যেখানেই যেতাম আমার আগে পিছে ঘুরঘুর করতো সব সময় আমাকে ফলো করতো, কিন্তু আমি কখনোই ওকে পাত্তা দিতাম না, বরং ওর প্রতি আরো বিরক্ত হতাম, কারন আমি তখন প্রেম ভালোবাসায় একদম বিশ্বাস করতাম না,
আর বড়লোকের ছেলেদের তো আরো পছন্দ করতাম না, কারন আমার ধারনা ছিলো বড়লোকের ছেলে মেয়েরা শুধু টাইম পাস করার জন্য প্রেম করে,

এতোটুকু বলে আভা থেমে যায়, তাই অত্র জিজ্ঞেস করে
-তারপর কি হলো?
– তারপর রাজ্য কোনো ভাবে আমার নাম্বার জোগাড় করে, আর দিনের মধ্যে হাজার বার আমাকে ফোন দিয়ে ওর ভালোবাসা বুঝানোর চেষ্টা করে, আমি ওর অনেক গুলো নাম্বার ব্লকলিস্ট করি তারপরও ওর পাগলামি থামার কোনো কথাই নেই বরং আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়, এরকম ভাবেই কেটে যায় কয়েক মাস, আর এই কয়েক মাসে রাজ্যর পাগলামি গুলোও আমার প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে যায়, প্রথম প্রথম ওর পাগলামি গুলো আমার কাছে বিরক্ত লাগলেও ধিরে ধিরে ওগুলোই আমার অভ্যাস হয়ে যায়,

প্রতিদিন প্রপোজ করা, সব জায়গা ফলো করা, হাজার বার ফোন করা, ম্যাসেজ করা এগুলোই ছিলো রাজ্যের প্রতিদিনের রুটিন, পাগল একটা, এটুকু বলেই আভা হেসে ফেলে,

ওর হাসি দেখে রাজ্য জিজ্ঞেস করে
-তারপর কি হয় তুমি ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করেছিলে?
অত্রের প্রশ্ন শুনে আভা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়
– না
– তারপর কি হয়েছিলো?
তারপর একদিন রাতে রাজ্য আমাকে কল করে..
আমি রিসিভ করি না।
ও টেক্সট করে “প্লিজ আভার কল রিসিভ করো” আমিও আর ওকে ঘুরালাম না। কল রিসিভ করতেই…
-আচ্ছা আমি কি করলে তুমি বিশ্বাস করবে যে, আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি,
– শুনুন এসব ভালোবাসা টালোবাসা বলে দুনিয়াতে কিচ্ছু নেই,
– আছে, ভালোবাসা আছে বলেই এখনও দুনিয়াটা টিকে আছে, তুমি চাইলে আমার ভালোবাসার পরিক্ষা নিয়ে দেখতে পারো, আমার ভালোসার জন্য আমি জীবনও দিতে পারি,নিজের জীবনের থেকে বেশি তোমাকে ভালোবাসি। বিশ্বাস করো আভা।
– ওমা তাই নাকি.. এসব শুধু সিনেমাতেই হয় বাস্তবে না… আর এসব মুখে বলা যায়, কিন্তু করা এতো সহজ নয়,
– ওকে বিশ্বাস করলে না তো আমি আমাকে যখন আমি থাকবো না তখনই তুমি আমার ভালোবাসা বুঝবে।
love you Ava love you more then my life বলেই ফোন কেটে দিলো..

আমিও বল্লাম পাগল একটা.. এতোদিনে এটুকু বুঝতে পারেছিলাম রাজ্য ছারা আমি অচল ওকে কবে যে এই মনের ভালোবাসার আসনে বসিয়ে ফেলেছি নিজেই বুঝতে পারি নি।
আমিও মনে মনে ভেবে রেখেছি প্রতিদিনের মতো কাল সকালে রাজ্য ফুল নিয়ে আমাকে প্রপোজ করার আগেই আমি ওকে প্রপোজ করবো।আমার ভালোবাসার কথা ওকে যানাবো,…. আর দূরে দূরে রাখবো না আমার পাগলটাকে এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পরি..
তারপরের দিন আমি কলেজে যাওয়ার পথে রাজ্যর জন্য একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে ওয়েট করি কিন্তু ওকে কোথাও দেখতে পেলাম না..
সব খানে খুজেছি কিন্তু ওকে কোথাও দেখতে পেলাম না..আমার খুব রাগ হলো
.. আমি মনে মনে ভেবে নেই হয়তো কাল আমার কথায় ওর ভালোবাসা উড়ে গেছে তার জন্য হয়তো আজ আমার সামনে আসছে না ওকে সামনে পেলে ইচ্ছা মতো মারবো 😡😡
এভাবে কয়েকদিন কেটে যায় কিন্তু রাজ্য আর আমার সামনে আসে না, ধিরে ধিরে আমি ওর পাগলামি গুলোকে মিস করতে থাকি,
আস্তে আস্তে আমার খাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে যায়, যে আমি রাজ্য ফোন দিলেই বিরক্ত হতাম সেই আমিই ফোন আসলেই দৌড়ে যাই এটা ভেবে যে হয়তো রাজ্য ফোন দিয়েছে কিন্তু প্রতিবারই আমাকে নিরাশ হতে হয়।
তারপর আমি পাগলের মতো রাজ্যকে খুঁজতে থাকি কিন্তু কোথাও পাইনা,

এভাবে সাতটা দিন কেটে যায়।
একদিন আমি সেই দোকানে যাই যে দোকানে রাজ্য আমাকে প্রথম দেখেছি, কিন্তু ওখানে গিয়ে আমি অবাক হই কারন মার্কেটে রাজ্যদের যে কয়েকটা দোকান ছিলো সবগুলো বন্ধ, রাজ্যের বাবাকে এলাকার সবাই হাজী সাহেব নামে চিনে,
তাই আমি কোনো উপায় না পেয়ে
পাশের একটা দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করি
– আচ্ছা ভাইয়া হাজী সাহেবের সবগুলো দোকান আজ বন্ধ কেনো আমার প্রশ্ন শুনে লোকটা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায় তারপর বলে
– কেনো আপনি জানেন না?
-কেনো কি হয়েছে..?
-আরে হাজি সাহেরের একমাত্র ছেলে রাজ্য খুব ভালো ছিলো ছেলেটা যেমন সুদর্শন তেমনি মধুর ব্যবহার.. কিন্তু কেনো যে ছেলেটা সুইসাইড করতে গেলো বেচারা অকালে প্রানটা হারালো । ওর ব্যপারে শুনে খুব খারাপ লাগলো।কিন্তু মা তুমি কে?
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here