কৃষ্ণচূড়া🍂 নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–১৫

0
401

#কৃষ্ণচূড়া🍂
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–১৫

লজ্জ্বা, ভয় কৌতুহল সব মিলিয়ে এক মিশ্র অনুভূতি ঘিরে ধরেছে ছবিকে। কয়েক সেকেন্ড আগেও কাব্যর বুকের উষ্ণ ছোয়ায় মিশে ছিলো সে,,,, এরকম টা ভাবতেই শরীরের লোমগুলো দাড়িয়ে যাচ্ছে তার।

ছবির মুখের দিকে খানিক ক্ষন তাকিয়ে রইলো কাব্য। হাত দিয়ে ছবির নিচু করে রাখা থুতনীটা উচু করে ধরে নিজের দৃষ্টি স্থাপন করে বলে উঠলো….

— এবার পারবেন তো??
কাব্যর কথায় ধ্যান ভাঙলো ছবির।মুহুর্তেই কাব্যর থেকে কিছুটা সরে গিয়ে অন্য দিক তাকিয়ে দাড়িয়ে পরলো সে।

ছবির লজ্জ্বা পাওয়ার ব্যাপারটা বোধগম্য হলো কাব্যর।

— এভাবে জড়িয়ে ধরার জন্যে দুঃখিত। তবে এটা আপনার সংকোচ কাটানোর একটা পন্থা ছিলো।
আশা করছি এবার আর ততটা জড়তা থাকবেনা।

জবাবে নিশ্চুপ রইলো ছবি। হৃদপিণ্ড টা এখনও ধড়াস ধড়াস করে লাফাচ্ছে তার। এরকম কেনো হচ্ছে?? উহু জানা নেই তো।

আর কথা না বাড়িয়ে হাটা ধরলো কাব্য। আর কাব্যকে অনুসরণ করে ছবিও আগাতে শুরু করলো। শ্যুটিং স্পটের কাছে পৌছাতেই ইরফান কে নজরে এলো ছবির।
ইরফানের বিড়ালের ন্যায় সাদা বর্নীয় চোখের মনি গুলো। যার দরুন তার দৃষ্টি টাও অনেকটা ঘোলাটে লাগে ছবির কাছে।

এই লোকের সাথে আরাবির কি ভাবে সম্পর্ক থাকতে পারে ভাবতেই নাক মুখ কুচকে আসে তার।

কাব্য এসে ইরফানের পাশে দাড়ালো। ইরফান সহ সেটের সবার চোখে তাদের নিয়ে উৎকন্ঠা বিদ্যমান। কিন্তু সেসব নিয়ে আগ্রহ দেখালোনা কাব্য।
ক্যামেরা ম্যান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো….

— ক্যামেরা সেট করুন। শট নেয়া হবে।

কাব্যর কথা অনুযায়ী ক্যামেরা ম্যান লোকটির সাথে সাথে অন্যরাও তাদের কাজে তৎসই ব্যস্ত হয়ে পরলো। ইরফান একিভাবে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে।

সেদিকে চোখ পরতেই কাব্য মৃদু
হেসে উঠলো,,,

— এতক্ষন কি করলাম সেসব নিয়ে পরে ভাবিস। আপাতত শ্যুট তো নিয়েনে,,,,

হুশ ফিরতেই নিজেকে ঠিকঠাক করে নিলো ইরফান। ছবির দিকে একবার আড়চোখে তাকালো সে। ছবিকে বেশ স্বাভাবিক লাগছে। সত্যিই এতক্ষন কাব্য আর ছবির কীর্তিকলাপ জানা নিয়ে বেশ উদগ্রীব ছিলো সে। তাও সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সেট করে রাখা ক্যামেরার মনিটরের সামনে এসে বসে পরলো

যথারীতি ক্যামেরার ফোকাস পয়েন্টে দাড় করানো হলো ছবি আর কাব্যকে। নির্দেশ পরতেই একটা লম্বা নিঃশাস নিয়ে তড়িৎ গতিতে কাব্যকে জড়িয়ে ধরলো ছবি।

ব্যাপারটা এতোটাই দ্রুত ঘটে গিয়েছে যে,,, কাব্যর মনে হলো তার বুকে কোনও ভারী বস্তু আছড়ে এসে পরলো। অতঃপর ব্যালেন্স রাখতে না পারায় ছবিকে সহ কয়েক কদম পিছিয়ে গেলো সে।

মুহুর্তেই সব গোলমেল হয়ে গেলো। ছবি কাব্য দুজনেই দুজনের থেকে সরে দাড়ালো।শট এবারও পার্ফেক্ট হয়নি।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুখ টা কাচুমাচু বানিয়ে ফেললো ছবি। এবার নির্ঘাত কাব্য তাকে তুলে আছাড় মারবে।

হাত দিয়ে বুক ঘষছে কাব্য। আকষ্মিক ছবির এমন হুমড়ি খেয়ে পরায় বুকে খানিকটা লেগেছে তার।

— কিরে কাব্য? এসব কি শুরু হয়েছে। আজ সারাদিনে কি এই একটা শট-ই নিতে থাকবো আমরা?? কেমন হিরোইন তোর? একটা কাজ ও পারেনা ঠিক করে। এবারও বানচাল করে দিলো। দেখলি।

ইরফানের কথায় মেজাজ বিগড়ে গেলো ছবির।

— আমি কি তোর মতো নাকি? যাকে পাবো তার গায়েই ঢলে ঢলে পরবো।
ছবির মনে মনে বলা কথা গুলো শুনতে পায়নি কেউ। এদিক থেকে ব্যাপারটা ভালো হলেও কাব্যর প্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশ ভয় হচ্ছে ছবির।
কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে ইরফান কে উদ্দেশ্য করে কাব্য বলে উঠলো….

— এটা ওনার ফল্ট ছিলোনা। আমিই হুট করে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম।

— ওহ তাই বল। ( ইরফান)

— আবার স্টার্ট কর।

ছবি হা করে কাব্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।কাব্যের উত্তরে সে যে বিষ্মিত সেটা তার মুখেই স্পষ্ট।
কাব্য নিজেকে হালকা নিচু করে ছবির কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে উঠলো….

— এমন লম্ফঝম্প করলে রোমান্টিক সিন হবেনা। ধীরে কাজ করবেন। এবার আমার পার্ফেক্ট শট চাই কিন্তু ওকে?প্রত্যেকবার সাপোর্ট নেবোনা কিন্তু।

পুনরায় সসম্মতিসূচক মাথা দোলালো ছবি।

— মাথা তো দোলালেন। পারবেন কিনা কে জানে?? জোর করে সিনেমায় নিয়ে আসার মজা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি এখন।

রীতিমতো আবারও সেট হলো সব কিছু। এবারো নির্দেশ অনুযায়ী কাব্যর দিকে এগিয়ে গেলো ছবি। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে অবশেষে সিন অনুযায়ী তার স্টেপ এবার মিলেছে,,,,,, সাথে শিখে রাখা ডায়লগ গুলোও আওড়ে দিলো একে একে।
শট কাটতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে নিলো ছবি কাব্য দুজনেই। অবশেষে পার্ফেক্টলি শেষ হলো একটা সিন।

🍂

🍂

🍂

কিছুদিন পর🍁

“””” হাতে কফির মগ নিয়ে রেস্ট রুমে বসে আছে ইরফান। কিন্তু মনোযোগ তার পুরোপুরি ছবির দিকে। ছবি আজকে এসে থেকে ইরফানের দিকে যতবারই তাকাচ্ছে তত বারই মিটিমিটি হাসছে। ব্যাপারটা গোলমেল লাগছে ইরফানের। তার জানা মতে ছবি তো ওরকম নয়।
তবে কি সে ভুল ছিলো,,,পাখি কি তাহলে খাঁচায় বন্দি হতে শুরু করেছে??
হতেও পারে। আফটার অল তার মত এমন নাম খ্যাতি অর্জিত গুড লুকিং ছেলের থেকে কদিন আর দূরে থাকতে পারবে কোনও মেয়ে??

— কাব্য তুই বোধ হয়,, ঠিক-ই বলেছিলি।

সুযোগ পেয়ে সোফার কর্নারে দিকে আরেকটু এগিয়ে বসলো ইরফান।
যার পাশের সোফাতেই ছবি রয়েছে।
ইরফানের এগিয়ে আসা দেখে ভেতরে ভেতরে নার্ভাস লাগলেও মুখে ছাপ পরতে দিলোনা ছবি।

— মিস ছবি??

ইরফান ডেকে উঠতেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাসিমুখে ওর দিকে তাকালো ছবি।

— জ্বি?

— আপনাকে আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। অবশ্য আপনি নিসন্দেহে সুন্দরী একজন নারী।
কিন্তু আজ…..

— আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাইনা?

— হ্যা।

— ধন্যবাদ।

— আমার আপনাকে বেশ ভালো লাগে। কিছু মনে না করলে আমি কি আপনাকে তুমি বলে সন্মোধন করতে পারি?

— হ্যা হ্যা নিশ্চয়ই….আসলে আমিও ভেবে দেখলাম জানেন,,,আপনার মতোন এমন হ্যান্ডসাম একজন লোকের সাথে আমি শুধু শুধু ই এতোদিন মিসবিহেভ করেছি। বিশেষ করে সেদিন শ্যুটিং স্পটে আপনাকে ধাক্কা মারা আমার একদম উচিত হয়নি। আ’ম রেয়্যেলি ভেরী স্যরি।

— আরে না না,,ওসব আমি এক দম মনে রাখিনা। তোমার মত এতো সুন্দরী মেয়ে আমাকে একটা কেনো একশ টা ধাক্কা মারলেও আই ডোন্ট মাইন্ড।

— ওহ আচ্ছা আচ্ছা।সো নাইস অফ ইউ….

ইরফান পুনরায় কিছু বলতে নেয়ার আগেই রুমে কাব্য এসে ওর পাশে বসে পরলো।

বাইরের তপ্ত রোদে ঘেমে গিয়ে বেশ কাহিল অবস্থা তার।
কাব্য বসতেই ওর দিকে পানির বোতল এগিয়ে ধরলো ছবি।
সৌজন্যে সূচক হাসি হেসে বোতল নিয়ে ছিপি খুলে তাতে মুখ বসালো কাব্য।

খানিক বাদে নিয়োগকৃত স্টাফ এসে কফির মগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলো কাব্যর।

কাব্য আয়েশ করে চুমুক দিচ্ছে কাপে। সাথে উপভোগ করছে ইরফানের বিরক্তিতে কুচকে রাখা মুখটাকে।

একটু নয় বেশ অনেকটাই কাব্যর ওপর বিরক্ত ইরফান। আসার একটা টাইমিং এটা। আর একটু হলেই ছবিকে পটিয়ে ফেলেছিলো একেবারে,,,,কিন্তু মাঝপথে এই কাব্য পাকা ধানে মই দিয়ে দিলো?

কিন্তু এমন বিরক্তি তার দীর্ঘস্থায়ী হলোনা।
পাশ থেকে ছবির আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকালো ইরফান।

— মিস্টার রেয়ান। এখানে খাবারের রেস্টুরেন্ট কোথায়.??
আ’ম সো হাংরি,,

—- বাইরে যান,রাজীব দেখিয়ে দেবে।

— আপনি চলুন না আমার সাথে।

— মিস ছবি,,আমি খুবই ক্লান্ত,,,,একা যেতে হলে যান।নাহলে অর্ডার করে আনিয়ে নিন।

— না,,আমি ওখানে গিয়েই খাবো। কিন্তু একা একা বোরিং লাগবে আমার।

কথাটা বলে ইরফানের দিকে তাকালো ছবি। বেশ আহ্লাদী সুর করে বলে উঠলো….

— মিস্টার ইরফান,,,,কিছু মনে না করলে আপনি কি যাবেন আমার সাথে??

ছবির এমন কথায় হরেক রকম প্রজাপতি উড়ে গেলো ইরফানের মধ্যে দিয়ে । না বলতেই তার সুপ্ত ইচ্ছে পূরন হতে চলেছে।

— অবশ্যই।তুমি বলেছো আর আমি যাবোনা?

— তাহলে চলুন….

কাব্যর দিকে একবার আড়চোখে তাকালো ছবি। ঠোঁট চাপা হাসি নিয়ে কাব্য অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আর উচ্ছ্বসিত ভাবভঙ্গি নিয়ে ইরফান হাটা ধরলো ছবির সাথে সাথে।

ছবি আর ইরফান বেরিয়ে যেতেই পকেট থেকে ফোন বার করলো কাব্য।

,,,,,
,,,,,
,,,,
,,,,
,,,,,,,,,

পায়ের ওপর পা উঠিয়ে দুলিয়ে যাচ্ছে কাব্য। বাকা হাসি হেসে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনের দিকে। যেখানে স্পষ্ট ভেসে আছে সুস্বজ্জিত টেবিলে বসে ছবি আর ইরফানের খোশ গল্প করার দৃশ্যটি
একটা মুহুর্তও ইরফান নষ্ট করছেনা ছবির সাথে ভাব জমাতে।

কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে থেকে ফোনের স্ক্রিন অফ করে পাশে রেখে দিলো কাব্য।

— ফেসে যাচ্ছিস রে ইরফান। ইউ ফেল ইনটু আ ডিপ ট্রাপ!!

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here