#কৃষ্ণচূড়া🍂
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–০৯
অতি আশ্চর্যকিত হয়ে তাকিয়ে আছে ছবি…..কাব্যর ছুড়ে দেয়া প্রথম শর্তে মাথা ভো ভো করে ঘুরছে তার।
বুকের মধ্যে বারবার অজানা সঙ্কায় ঢিপঢিপ করে তরঙ্গ তুলছে।
ছবির চমকিত হওয়ার পরিমান টা আন্দাজ করতে সক্ষম কাব্য,কিন্তু এতে কোনও দিরুক্তি প্রকাশ পেলোনা তার দিক থেকে।
ডান হাত টা সোফার হাতলে প্রসস্থ করে মেলে দিলো কাব্য,,,,আপাতত ছবির উত্তরের অপেক্ষায় সে।
— মিস্টার রেয়ান আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন??
— আপনার তাই মনে হয়??
— এরকম ভাবতে আপনিই বাধ্য করছেন আমাকে। ফিল্মের হিরোইন হবো আমি? এ অসম্ভব।
— সম্ভব অসম্ভবের কথা তো আমি ভাববো মিস ছবি,আপনার তো শুধু শর্তে হ্যা বোধক কিংবা না বোধক উত্তর দিতে হবে।
—মিডিয়াতে নাম লেখানোর কথা আমি আমার দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি আর না ভাববো,,,আর তাই উত্তর না আর না ই হবে।
— তার মানে আপনি রাজী নন??
— কক্ষনও নাহ।
— সেটা তো আপনার মর্জি,,,,যেহেতু আপনি রাজী নন
তবে এবার আপনি আসুন,,আমাকে বেরোতে হবে,,,আরাবি রাহমান কে বরং আপনি নিজেই খুজে নেবেন। কে জানে এই দু সপ্তাহ নাগাদ কি হালে আছেন উনি,,,প্রার্থনা করবো যাই ঘটুক খারাপ কিছু যেন না হয়।
কথাটা বলে কাব্য বাকা চোখে একবার দেখে নিলো ছবিকে। কোন কথায় কাজ হতে পারে না পারে এটুকু আন্দাজ তার মগজে আছে।
কাব্যর কথায় বুকটা মুচড়ে এলো ছবির। সত্যিই তো আজ পনেরো টা দিন আরাবির কোনও খোজ নেই। কাব্যর সাহায্য না পেলে বোন কে কি করে খুজে পাবে সে ?? পুলিশ কে দিয়ে কাজ হবেনা সেটার প্রমান তো সেদিনই পেয়েছে।
এত নিষ্ঠুর একটা সমাজে কেউ এমনি এমনি তাকে সাহায্য করবে এরকম টা ভাবাও যে বোকামি ছিলো। কাব্যর দিক থেকে তো সে সম্পুর্ন ঠিক।
কিন্তু আর যাই হোক ফিল্মের হিরোইন হবে সে?? যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, প্রেস ক্যামেরা এতদিন তার ঘৃন্য জিনিস গুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিলো এখন কিনা সেখানেই নিজেকে তালিকাভুক্ত করতে হবে? এ ও ছিলো কপালে….
হোক,,,,বোন কে খুজে পেতে যদি এই সামান্য সেক্রিফাইজ টুকু করতে হয় তবে তাই হোক।
— মিস ছবি? ….
কাব্যকে কিছু বলতে নেয়ার আগেই ওপাশ থেকে ছবি…ফট করে বলে উঠলো…
— আমি রাজি….
— আরেক বার শুনি…
— আমি রাজি…
— দ্যাটস গ্রেট….
খুব তাড়াতাড়ি ভালো সিদ্ধান্ত নিলেন,,,,আসলে কি বলুন তো এতে কিন্ত আপনারই লাভ হবে,,,,কাজ ভালো করলে নাম প্রতিপত্তি টাকা কোনও কিছুর ই অভাব থাকবেনা আপনার। ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট আই মিন…..??
— আমি এসবের কিছুই চাইনা মিস্টার রেয়ান। আমার বোন কে ফিরে পেলেই আমার চলবে।
আমি রাজি আপনার শর্তে,,,,এবার নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন আমায়??
— এতো তাড়া কিসের মিস ছবি?? সবে তো একটা শর্ত বলেছি। বাকি দুটোও শুনে নিন আগে।
—
আশা করি বাকি গুলো এর থেকে অনেকটাই সহজ হবে আমার জন্যে।
— সেটাতো শুনলেই বুঝবেন,,,
আমার দ্বিতীয় শর্ত হলো….
আজ থেকে…. উম না,, আজকের দিনটা ছাড় দিলাম,,,আগামীকাল থেকে আপনি আমার বাড়িতে থাকবেন।
কাব্যর এহেন কথায় বিষ্মিত ভাবে ছবি মুখ খুলতে যাওয়ার আগেই হাত উচু করে থামিয়ে দিলো কাব্য।
— আগে পুরোটা শুনুন তারপর না হয় বলবেন।
আপনি এখানে থাকবেন,,,তো আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন আপনার মা কে নিয়ে?? কোনও ব্যাপার নয় প্রয়োজন পরলে ওনাকে আমার অন্যত্র ফ্ল্যাটে থাকার ব্যাবস্থা করে দেয়া হবে,এবং সেখানে ওনার সব রকম কেয়ার ও নেয়া হবে।
এবার আসি তৃতীয় শর্তে,,,
আমার তৃতীয় শর্ত হলো মিস আরাবি কে যতদিন না খুজে পাওয়া যাচ্ছে ততদিন আপনি আমার কথা মত চলবেন,,,আপনার শিডিউল আমি বানিয়ে দেবো মানে আপনার দৈণিক প্রায় প্রত্যেক টা কাজের ওপর শুধুমাত্র আমার নিয়ন্ত্রণ থাকবে,,,,আমি যা করতে বলবো আপনি ঠিক সেগুলোই করবেন।
কাব্যর শর্তাবলী তে কাঠ হয়ে এলো ছবির মুখমন্ডল।শক্ত গলায় বলে উঠলো
— এসব ঠিক কি ধরনের শর্ত মিস্টার রেয়ান? আপনার কি মনে হচ্ছেনা আপনি পাগলের প্রলাপ বকছেন?
আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছি বলে তার সুযোগ নিচ্ছেন আপনি?
— সুযোগ?? এখানে কিসের সুযোগ দেখলেন আপনি ? শর্তের কোথাও কি আমার সাথে আপনাকে বিছানায় যাওয়ার কথা বলেছি আমি?
— মিস্টার রেয়ান………
—- চেঁচামেচি আমার পছন্দ নয় ইউ নো?
কাব্য রেয়ানের ওপর কেউ কখনও গলাবাজি করেনা,,,,তাই এসব সাহসিকতা আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই,,৷
আমিতো আমার কথায় অনড় থাকবো মিস ছবি,,,,, শর্ত আমার,কিন্তু সিদ্ধান্ত আপনার…
বোন কে চান… নাকি চান না।
ভেবে দেখুন।
অসহায় ভাবে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে ছবি,,,কিন্তু ছবির এমন দৃষ্টি তোয়াক্কা না করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো কাব্য।
— মিস ছবি একই বাড়িতে থাকা মানে শয্যাসঙ্গি হওয়া নয়,,,,সো এইসব ইউজলেস ব্যাপার নিয়ে ভাববেন না। তাছাড়া সুপারস্টার কাব্য রেয়ানের টেস্ট এতোটাও খারাপ নয়।
কথা টা বলে উঠে দাড়ালো কাব্য,,, , কাব্যর এমন অপমান মুলক কথায় নিশব্দে কেদে উঠলো ছবি। আজ এতোটা অপমানিত হওয়াও লেখা ছিলো তার কপালে,,,
“আরাবি এ কোন পরীক্ষায় ফেলে গেলি আমাকে…..!!
গলা খাকাড়ি দিয়ে রাজীব কে ডেকে উঠলো কাব্য। মিনিট খানাকের মধ্যেই রাজীব বাইরের ঘর থেকে ধড়ফড়িয়ে এসে দাড়ালো।
— রাজীব,,,,মিস ছবিকে ওনার বাসায় পৌছে দিয়ে এসো।
— ওকে স্যার,,,
নরম পায়ে হেটে বাসা থেকে বেরোচ্ছে ছবি,,,,এই মুহুর্তে মস্তিষ্ক অকেজো অকেজো লাগছে নিজের কাছে।
চুপচাপ রাজীবের পিছু নিয়ে হেটে চলছে সে।
এমতাবস্থায় হঠাৎ পেছন থেকে ডেকে উঠলো কাব্য।
— মিস ছবি…..
পিছু ফিরে কাব্যর দিকে তাকালো ছবি।কাব্যর নিষ্প্রান দৃষ্টির কাছে তার ভেজা চোখ গুলোর আর্জি বড্ড ফিকে মনে হচ্ছে।
— বলুন।
— এসব কথা খোলাখুলি আপনার মাকে জানানোর দরকার নেই। উনি খারাপ ভাববেন,,
এমন কথায় কিছুটা হাসি পেলো ছবির,,,জখম বানিয়ে এখন দরদ দেখাচ্ছে,,কি অদ্ভুত মানুষ।
— সেসব নিয়ে আপনার ভাবতে হবেনা।
— বেশ। ভাবছিনা,,,
তবে হ্যা,,,আপনার উত্তর হ্যা হলে কাল ই এখানে দেখতে চাই আপনাকে।
ভালো করে ভেবে নেবেন,,,,তবে এটুকু মাথায় রাখবেন আপনার ভাবতে যতটা দেরী,,আরাবিকে খুজে পেতেও ঠিক ততটাই দেরি।
জবাবে কিছুক্ষন চুপ থাকলো ছবি,,,,কিছু একটা ভেবে নিয়ে
চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠলো….
— আমার সিদ্ধান্ত নেয়া শেষ মিস্টার রেয়ান,,,,আমি আপনার সব শর্ত মানবো….
— আর ইউ সিরিয়াস?
— হুম।
— দ্যাটস গুড।
কথাটা বলে রাজীবের দিকে তাকালো কাব্য,,,কিছু একটা ইশারা করতেই রাজীব নিশব্দে সিড়ি বেয়ে ওপরের দিকে চলে গেলো।
খানিক বাদেই নেমে এলো রাজিব,তবে এবার তার হাতে কাগজের ন্যায় কিছু একটা দেখতে পেলো ছবি।
কাগজ টা এগিয়ে কাব্যর হাতে তুলে দিলো রাজীব। ছবি কপাল কুচকে কাব্যর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে,,,,,,,,
— নিন….সাইন করুন,,,আর অবশ্যই পড়ে নেবেন।
— কি এটা??
—- তেমন কিছুনা…
যাস্ট ছোট্ট একটা এগ্রিমেন্ট,,,
নিজেই পড়ে নিন।
— কাব্যর হাত থেকে কাগজ টা নিয়ে পড়তে আরম্ভ করলো ছবি,এতক্ষন তার উদ্দেশ্যে কাব্যর ছুড়ে দেয়া শর্ত গুলোই একে একে উল্লেখ করা আছে এখানে।
পুরোটা পরে অবাক হয়ে কাব্যর দিকে তাকালো ছবি।
— পড়ে নিয়েছেন?? আশা করি বুঝেও ফেলেছেন?যা যা বলেছি সেগুলোই লেখা আছে এখানে, বাড়তি কিছু নেই।
এবার আপনি একটা ছোট্ট সাইন করে দেবেন।ব্যাস এইটুকুই।
— মানে কি এসবের?? কি লাভ এগুলো করে ??
— লাভ লোকসান টা আপনার না জানলেও চলবে
। কি জানেন তো মিস ছবি,,,আমাকে আমার সোসাইটি তে সবাই মিস্টার পার্ফেক্ট বলে সন্মোধন করে ,,ইচ এন্ড এভ্রি থিংক অফ মাই ওয়ার্ক ইজ হ্যাভ টু বি পার্ফেক্ট।
আপনাকে শুধু মৌখিক কিছু কথা বলার জন্যে বলিনি আমি,,,,,এটা আমার কাজের শিওরিটির ছোটখাটো একটা দলিল,,,, আগেই তৈরি করে রেখাছিলাম আমি। পরে ছোট বোনের মত যদি পাল্টি খেয়ে নেন,,,,এই ফিল্মের মত বাকিটাও যে গচ্ছা যাবে আমার।
— ওহ তার মানে আপনি ভেবেই নিয়েছিলেন আমি আপনার কাছে আসবো? আর তারপর এইভাবে আমাকে ট্রাপে ফেলবেন??
— ট্রাপ?? এখানে ট্রাপের কি দেখলেন?? আমি আপনাকে সাহায্য করছি তাতে কোনও বিনিময় থাকবেনা এতোটাও মহান নই আমি।,,,
আর এটাতো যাস্ট সিম্পল একটা ব্যাপার।
একচুয়েলি,,,,এগুলোকে বলা হয় কৌশল। কাজ হাসিল করার কৌশল,,,,
আপনার কি মনে হয়? থানায় যাবেন আমার নামে কমপ্লেইন দেবেন আর আমি জানবোনা??? সেদিন নিরুপায় হয়ে ফিরে গিয়ে ড্রিবলিং করতে করতে আপনাকে আমার কাছে আসতে হবে এটা আমার আন্দাজে ছিলো। আর এই কাগজ টা তারই পূর্বপ্রস্তুতি।
এনি ওয়ে,, জেন নিলেন সব কিছু??
মিস আরাবিকে না পাওয়া অব্ধি,,,আর আপনাকে নিয়োগ করা আমার ফিল্মের কাজ শেষ না হওয়া অব্ধি আপনি আমার অনুমতি ছাড়া এক পা ও এদিক ওদিক যেতে পারবেন না।
— আর কিছু??
— হ্যা আর একটা কথা,,,আমি যতদূর শুনেছিলাম গতবার আরাবির সাথে ফ্ল্যাটে আপনারা শিফট করেননি শুধুমাত্র সেটি আমি দিয়েছিলাম বলে।
সেই মোতাবেক বোধ করি এবারও আপনার মা নড়ে বসতে পারেন,,,আর তাই আপনার জন্যে ভালো হবে ওনাকে সত্যিটা না জানানো।
— তবে??
— সেসব অবশ্যই আপনার চিন্তা। আমার নয়।
— আমার মা আমার সাথে এখানে থাকলে কি খুব অসুবিধে?
— ,অবশ্যই,,, আমার বাড়িতে আপনাকে রাখার যে কারণ তার সাথে আপনার মায়ের কোন সংযোগ নেই,,,এন্ড অলসো ইট ইজ দ্যা কোশ্চেন অফ মাই কমফরটিভলিটি।
জবাবে মৃদূ ভাবে মাথা ঝাকালো ছবি। কথা বলার বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছেনা সে। নিজের এহেন কাজের ভবিষ্যত পাশাপাশি বোনের বর্তমান পরিস্থিতি ভাবতেই অবশ হয়ে আসছে সমগ্র শরীর।,,হাতে রাখা কাগজে সই করে দিয়ে সেটিকে আস্তে করে সেন্টার টেবিলের ওপরে পেপার ওয়েটের নিচ চাপা দিয়ে চুপচাপ হাটা দিলো নিজ গন্তব্যের উদ্দ্যেশ্যে।
কাল থেকে যে গন্তব্য বদলে যাবে অন্য কোনো নতুন ঠিকানা পাওয়াতে।
।
।
।
কি ঘটবে ভবিষ্যতে?? আরাবি কোথায় গেলো?? আর কাব্যর মনেই বা কি চলছে ছবিকে নিয়ে? আরাবির হারানোর পেছনে কাব্যর কি সত্যিই হাত নেই?? ছবিও কি এখন সেই পথেই হাটছে??
চলবে।