কৃষ্ণচূড়া🍂 নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–১০

0
145

#কৃষ্ণচূড়া🍂
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–১০

চারিদিকে ঘুরে ঘুরে বাড়িটা দেখছে নূবায়রা। বেশ সাজানো গোছানো একটি ফ্ল্যাট এটি। ছবি ঠিক কোন কাজের জন্য এমন উপহার পেলো সেটি তার এখনও অজ্ঞাত।

আর যাই হোক ছবির ওপর অগাধ বিশ্বাস। আর তাই বিনা দ্বিধায় ছবির সাথে এই ফ্ল্যাটে চলে এসেছেন তিনি। কিন্তু একটা ব্যাপার নূবায়রার এখনও ভালোভাবে জানা হয়নি,,, আর সেটা হলো কি কাজে ছবিকে তিন মাস বাইরে থাকতে হবে??

জিজ্ঞেস করলেও মেয়েটা মুখ ফুটে কিছু বলছেনা। ভালো একটা চাকরী পেয়েছে আর সেখান থেকে অত্র ফ্ল্যাট প্রাপ্তি ছবির,,,, আপাতত এটুকুই জানতে পেরেছে নূবায়রা।

পুরোটা শুনে খুশি হলেও মেয়েকে ছেড়ে থাকার ব্যাপারটা মেনে নিতে নারাজ নূবায়রা। আরাবি ছোট থেকেই নূবায়রা কে তেমন কাছে পায়নি বলে কিঞ্চিৎ দুরুত্ব সৃষ্টি,,, যদিও সেটা আরাবির দিক থেকেই। কিন্তু ছবিকে নিজের মত করেই গড়ে নিয়েছেন নূবায়রা। যার দরুন ছবির মধ্যেও তার আদর্শই প্রতিফলিত।

চোখ বন্ধ করে ছবির যেকোনো সিদ্ধান্ত আজ অব্ধি মেনে নিয়েছেন নূবায়রা। ছবির দ্বারা কখনও কোনও ভুল কাজ সম্ভব নয় এতোটাই ভরসা নূবায়রার।

সেই যে দুদিন আগে তাকে এখানে পৌছে দিয়ে চলে গিয়েছে ছবি এখন অব্ধি আসেনি ,অবশ্য ফোন করে প্রত্যেকটা খবরই নিয়েছে মায়ের। ঠিক সময় মতো খাওয়া থেকে শুরু করে সবটাই। হয়তো মেয়ে তার ভীষণ ব্যাস্ত,,,, আর তাই আসতে পারছেনা।

সকাল সকাল হাতে এক কাপ চা নিয়ে এসব আকাশ কুসুম ভাবছিলেন নূবায়রা। জানলার এদিক টায় আসলে ঠান্ডা বাতাসে মন প্রান শীতল হয়ে আসে। আজ অনেক দিন বাদে পুরোনো কিছু প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে চোখের সামনে।

ছবির বাবাকে বিয়ের পর এরকমই একটি বিলাস বহুল ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছিলো তাকে। সারাদিন কেটে যেত ছবির বাবার আসার অপেক্ষায়। সপ্তাহে তিনটি দিন এসে এখানে থাকতেন তিনি। কতোইনা ভালোবাসা,, যত্ন তে ভরিয়ে রেখেছিলো তাকে।
অথচ সেই ভালোবাসার আড়ালের সত্যিটা জানতেই ওলট পালট হয়ে গিয়েছিলো তার সবকিছু।

দরজায় বেল বাজার শব্দে চোখ মুছে নিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেলেন নূবায়রা। হাতের চায়ের কাপ টা রেখে দিলেন টেবিলের ওপর। কিন্তু তিনি যাওয়ার আগেই দরজা খুলে দিলেন নিয়োগকৃত কাজের মেয়েটি।

পেপারওয়ালা এসেছেন। নিউজপেপার সাপ্লাই দিতে।

ছেলেটির থেকে পত্রিকা টি নিয়ে সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে দিলো মেয়েটি। আবারো চুপচাপ ব্যস্ত হয়ে পরলো তার নিজের কাজে।

সময় কাটাতে নূবায়রা পত্রিকা টি উঠিয়ে নিলেন তার হাতে,,,
অনেক বছর এসব পত্রিকা টত্রিকা ছুয়ে দেখা হয়নি। অথচ এক সময় পত্রিকা পড়া টা নেশার মত ছিলো তার নিকট। সবার আগেই পাতা উল্টে মোড় নিতো বিনোদন এর পৃষ্ঠাতে। ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে তখন কত শত আগ্রহ ছিলো তার মধ্যে।

পুরোনো অভ্যাসগত কারনে এবারো পাতা উল্টে বিনোদনের খবরা খবরে একবার চোখ বোলালেন নূবায়রা।

হুট করে তার চোখ পরলো অপর পাতায় বড় বড় করে ছাপানো একটি শিরোনামের দিকে।

“”” কাব্য রেয়ানের হাত ধরে সিনেমা জগতে অভিষেক ঘটলো আরেকটি নতুন মুখের।

শিরোনামের থেকেও তার নিচে ছাপানো ছবিটি দেখে চোখ ঘোলা হয়ে এলো নূবায়রার।

কাব্যর পাশেই হাসি মুখে বসে আছে ছবি। পড়নে তার ব্যায়বহুল একটি পোশাক।সাথে সুন্দর সাজসজ্জা। ঠিক যেরকম ভাবে একজন সিনেমার হিরোইন স্বজ্জিত হয়।
ওদের পেছনেই লেখা আছে শুভ মহরত….সিনেমার নামের পেছনে অভিনীতের শিরোনাম এ কাব্যর পাশাপাশি ছবির নামটাও জ্বলজ্বল করছে।
একে একে পুরো নিউজ পড়তেই গা কেপে উঠলো নূবায়রার।

এর মানে ছবি তাকে মিথ্যে বলেছে?? আসলে কোনও চাকরী বাকরী কিচ্ছু নয়,সিনেমায় নাম লিখিয়েছে ও?? এই ফ্ল্যাট?? এই ফ্ল্যাট কি তবে কাব্য রেয়ান দিয়েছে? কিন্তু ছবি এরকম কেনো করলো? ও নিজেই তো মিডিয়া জগত কে পছন্দ করেনা সেখানে নিজেই? আর মায়ের কাছে কখনওই মিথ্যে বলেনি যে মেয়ে সে আজ এসব.?

🍁

🍁

🍁

রেয়ান ভিলা তে এ নিয়ে দুদিন হয়ে এসছে ছবির। আসার পর থেকেই ফিল্মের কাজ নিয়ে ব্যাতিব্যস্ততা তার। যদিও সেসব তাড়া কাব্যর দিক থেকে,,,,

এদিকে মাকে ছেড়ে থাকাতে ভীষণ ছটফটাচ্ছে ছবি।সুযোগ ই মিলছে না মায়ের কাছে গিয়ে দেখা করে আসার। দুদিন ধরে সাজিয়ে গুছিয়ে তাকে নিয়ে কখনও এদিকে এই কাজে বের হচ্ছে কাব্য,নয়তো আবার অন্য কাজে। মনে হচ্ছে একটা যন্ত্র সে,,,যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সেভাবেই পরিচালিত হতে হবে তার।

নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ সব মিলিয়ে অস্বস্তি পুরোপুরি ভড় করেছে ছবির কাধে,,,তার ওপরে এখানে সকাল থেকে রাত,,,, তিনবেলাই শুকনো শুকনো খাবার গরুর মত চিবোতে হয়।

ছবির মন মানছেনা,,,,কবে এই ঝামেলা মিটবে আর কবে আরাবিকে ফিরে পাবে সেই চিন্তায় বিভোর সে। তবে এই দুদিনে কাব্যর সাথে তার যেটুকু কথা হয়েছে তাতে আরাবির খোজ পাওয়া নিয়ে ছবির প্রশ্ন আর জবাবে অপেক্ষা করতে বলা কাব্যর উত্তর।

কাল সিনেমার শুভ মহরত ছিলো, শ্যুটিং শুরু হতে আরো কয়েক দিন লেগে যাবে। কাল সুযোগ পেলে মায়ের সাথে একবার না হয় দেখা করে আসা যাবে……..
কথাটা ভেবে নিয়ে পাশের টেবিল ল্যাম্প টা অফ করে দিলো ছবি,,,,যত তাড়াতাড়ি ঘুমাবে সকাল তত তাড়াতাড়ি হবে,আর মাকেও তত তাড়াতাড়ি দেখতে পাবে।
গায়ের কম্বল টা আরেকটু টেনে নিয়ে উদ্যত হলো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাতে।

🍂

🍂

🍂

— ঘুমাবেন না স্যার…..

— ঘুম আসছেনা।

— বলছিলাম কি স্যার,,,,এতো টা খাবেন না। এমনিতেই মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্যে হানিকারক,তার ওপর আপনি সকাল বিকেল পানির মত পান করতে থাকেন এটাকে। কিছু একটা খারাপ হলে??

রাজীবের কথায় কিঞ্চিৎ ধিক্কার মুলক হাসি হাসলো কাব্য।

— আমার সাথে খারাপ হতে আর কি বাকি আছে রাজীব?? যদি কিছু বাকি থেকে থাকে সেটা শুধু আমিই আছি।

— তবুও স্যার….

—-অনেক রাত হয়েছে,শুতে যাও।

— যাওয়ার আগে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো স্যার,যদি কিছু মনে না করেন….??

— বলো…

— এ অব্ধি যত মেয়েই আপনার হাত ধরে হিরোইন হয়ে এসেছে তাদের সবাইকে আপনি পুঙখানুপুঙখ ভাবে জাজ করেছেন,,,,প্রত্যেকটা ব্যাপারে তাদের যোগ্যতার মাপ নিয়েছেন। এরা আসলেই হিরোইন হওয়ার যোগ্যতা রাখে কিনা সব পরীক্ষাই নিয়েছেন আপনি।
শুধুমাত্র মিস ছবিকে….আপনি এত সহজেই নায়িকা বানালেন স্যার? ওনার মধ্য আদৌ অভিনয়ের ছিটেফোঁটাও আছে কিনা একবারও যাচাই করে নিলেন না….

—- তুমি কি আমার সিদ্ধান্তে সন্দেহ প্রকাশ করছো??

— না না স্যার,,কি বলছেন?? আমার আসলে এই ব্যাপার নিয়ে ভীষণ কৌতুহল হচ্ছিলো তাই জিজ্ঞেস না করে পারিনি।

— কিসের কৌতুহল?

— মিস ছবি আপনার মতানুযায়ী কাজ পারবেন তো.??

— রাজীব,,,আমার মত অনুযায়ী কাজের কাজ যদি কেউ পারে তবে সেটা এই ছবিই পারবে। দেখে নিও।

,,,,
,,,🍁

🍁

🍁

শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে খাবার টেবিলে এসে বসলো কাব্য।
ছবি,,, রাজীব আগে থেকেই আছে এখানে।
কাব্যকে দেখে ছবি চুপ থাকলেও রাজীব মুখ খুললো….

— গুড মর্নিং স্যার।

— হুম।

ছবির প্লেটের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলো কাব্য। পরোটা আর মাংস ভুনা খেয়ে যাচ্ছে ছবি। পাশে তাকিয়ে রাজীবের প্লেটেও একি খাবার দেখতে পেলো সে। রাজীব তার থেকেও বেশ আনন্দ নিয়ে খাচ্ছে।

খুব একটা না ভেবে নিজের প্লেটের ঢাকনা সরিয়ে তার রোজকার খাবার দেখতেই মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে এলো কাব্যর।

— এগুলো কি??

— স্যালাড স্যার,,,

— স্যালাড সেটা আমিও জানি। আমি বলতে চাইছি এসব আমার প্লেটে কেনো?

— তবে স্যার,আপনি তো রোজ সকালে এগুলোই খান।

— মানে কি?? রোজ খাই বলে আজকেও খেতে হবে?

— তাহলে স্যার,,?? আজকে খাবেন না?

রাজীবের প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়ে ছবির দিকে তাকালো কাব্য,,ছবিও একিভাবে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

— এই পরোটা, মাংস এসব কে করেছে রাজীব?

— ছবি ম্যাডাম বানিয়েছেন স্যার।

— ওহ।

— আসলে আমি এসব স্যালাড স্যুপ এসব খেতে পারিনা। আমার অভ্যেস নেই।তাই……

— বুঝতে পেরেছি,,,,আপনার যা ইচ্ছে আপনি খেতে পারেন,,,আই হ্যাভ নো প্রব্লেম। এমনিতেও আপনি একটা দেশলাইয়ের কাঠির সমান হবেন কিনা আই হ্যাভ ডাউট। সো ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু মেইনটেইন ইওর ফিগার।

জবাবে কাব্যর দৃষ্টি এড়িয়ে নিশব্দে মুখ ভ্যাঙচালো ছবি।
“””শুকনো বলে কথা শুনিয়ে দিলো আমাকে? আমি অতটাও রোগা নই।

— স্বার্থপর এর মত নিজের জন্যেই খাবার বানালো,,,,আমার জন্যে কেউ বানালো নাহ,,,নিজেরা এসব খাচ্ছে। আর আমি কিনা এই শুকনো শুকনো স্যালাড চিবিয়ে যাবো?

ছবির দিকে তাকিয়ে কথা গুলো মনে মনে আওড়াচ্ছে কাব্য।
এই মুহুর্তে তার খেতে ইচ্ছে করলেও কিন্তু না,,প্রেজটিজ ইজ প্রেস্টিজ!

,,,,
,,,,

প্লেটে অনবরত চামচ নেড়ে যাচ্ছে কাব্য।
খাবার চেয়ে নিতেও পারছেনা। ওদিকে রাজীব? কি আয়েশ করে খাবার খাচ্ছে,,,যেন লাইফে কোনও দিন পরোটা খায়নি….
এদিকে তার স্যার যে এসব দেখে খেতে পারছেনা সেসবে আদৌ খেয়াল আছে?? নাহ এতো দেখছি দুদিনেই পাল্টে যাচ্ছে।

কাব্যর উশখুশানি দেখে খাওয়া থামিয়ে মাথা তুলে তাকালো ছবি।

— আপনি কি খাবেন এগুলো,, ??

কাব্য কিছু বলার আগেই রাজীব বলে উঠলো. ।

— না না,স্যার এসব অয়েলি খাবার খান না। তাও আবার এতো সকাল বেলা স্যারের জন্যে এসব ঠিক ও হবেনা।

জবাবে ছবি মাথা ঝাকালেও রাজীবের দিকে দাত কড়মড় করে তাকালো কাব্য।

— আরে কে বলেছে আমি খাবোনা,,,এতো পাকামো কেন করতে যাও রাজীব,,,,এতো দেখছি রীতিমতো ঘর শত্রু বিভীষণ হয়ে যাচ্ছো ….আমাকে একবার বললেই আমি খেতাম।

কাব্যকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রাজীব।

— কিছু দরকার স্যার???

— নাহ তো। তুমি খাও,ভালো করে খাও। ওকে??

— ওকে স্যার।

জোরপূর্বক নিজের খাবারের এক টুকরো উঠিয়ে মুখে পুড়লো কাব্য। মুহুর্তেই তার মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো,,,কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে মুখে সিরিয়াস ভাব এনে চেচিয়ে উঠলো…..

— এই,, খাবারে এত লবন কে দিয়েছে? কে বানিয়েছে এটা?

— এটাতো সার্ভেন্ট বানিয়েছে স্যার। লবন বেশি দিয়েছে? দাড়ান এক্ষুনি ডাকছি। দু একটা ঝাড়ি খেলেই মন দিয়ে কাজ করবে।

— প্রয়োজন নেই। আমি এসব খাবোনা।

— তবে স্যার??

— আমি আজকে কিছুই খাবোনা।

কাব্য উঠে যেতে নিতেই থামিয়ে দিলো ছবি।

— না খেয়ে যাবেন? না খেয়ে যেতে নেই।আপনি একটু বসুন আমি বানিয়ে আনছি নতুন করে।

— না থাক,,,স্যালাড খেতে ইচ্ছে করছেনা এখন।

— তবে এগুলো খেয়ে দেখতে পারেন,,রান্না টা খুব একটা খারাপ হয়না আমার।

— এগুলো??

— একটা দিনই তো,,খেয়ে দেখুন না….তাছাড়া আমি অতটাও তেল ইউজ করিনি।

মুখে অনেকটা বিরক্তি ফুটিয়ে আবারও বসলো কাব্য,যেন এই খাবার তাকে জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে।

ছবির এগিয়ে দেয়া পরোটা ছিড়ে তাতে মাংসের টুকরো তুলে মুখে পুড়তেই মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে এলো কাব্যর।
কিন্তু কাউকে সেসব বুঝতে না দিয়ে চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো আবার।

কাব্যর খাওয়া দেখে রাজীব নিজের খাওয়া থামিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো,,,
এই ছবি ম্যাডামের রান্না পেলেই তার স্যার চেটেপুটে খায়।

— স্যারের জন্য যদি এরকম কাউকে পেতাম,,,,যে স্যার কে ভালো মন্দ রেধে রেধে খাওয়াবে। তবে তো সারাজীবন আমার স্যার পেট পুরে খেতে থাকতো।

— খাচ্ছোনা কেন রাজীব??

— হ্যা স্যার খাচ্ছিতো….

—- মিস ছবি??

— জ্বি….

— রাধুনী আপনি মন্দ নন,,, সকালের নাস্তা টা আপনার হাতের ই হোক না হয়???

— পরোটা খেয়েই রান্নার সার্টিফিকেট দেয়া ঠিক নয়।

কাব্য কিছু বলতে নেয়ার আগে আবারো ওপাশ থেকে রাজীব দাত কেলিয়ে বলতে শুরু করলো…

—- আরে ম্যাডাম,, স্যার শুধু এগুলো খেয়েই বলছেন না তো, ভেতরে অনেক গল্প আছে যেগুলো আপনি জানেন ই না। ওইদিন তো আপনার খাবার গুলো স্যার ই…

— রাজীব??? এত কথা বলতে কে বলেছে তোমায়? আমি বলেছি?? চুপচাপ খাও। ইডিয়ট।

কাব্যর ধমকে মুখ কালো করে মাথা নিচু করে ফেললো রাজীব।

— স্যরি স্যার।

— কিসের গল্প?? আর উনি কি বলছিলেন…

— ও কিছুনা। কাজের কথা শুনুন।
ইরফান কল করেছিলো আমাকে…ইরফান কে চিনেছেন তো….ফিল্ম ডিরেক্টর….

সন্ধ্যায় একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করা হয়েছে। তৈরি থাকবেন,,,

ইরফানের কথা শুনতেই মেজাজ টা বিগড়ে এলো ছবির। মহরতের দিন লোকটা ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়েছিলো তাকে।
তারওপরে চোখের দৃষ্টি গুলোও কেমন লোলুপতা মিশ্রিত। দেখলেই মনে হয় এক নম্বরের লুচু হবে।

ছবির দিক থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে কাব্য নিজেই বলে উঠলো?…

— মিস ছবি আপনি শুনতে পেয়েছেন??

— জ্বি হ্যা।
আমার একটা কথা ছিলো….

— বলুন।

— প্রোগ্রাম তো সন্ধ্যায়। আমি এখন একটু মায়ের কাছ থেকে ঘুরে আসি…??
দুদিন দেখিনি মাকে….

— বেশ যান,তবে টাইমলি চলে আসবেন ওকে??

— ধন্যবাদ।

— হুম। রাজীব??

— জ্বি স্যার,,

— ওনাকে পৌছে দিয়ে আসবে।

— না না আমি একাই চলে যাবো।

— আমি যেটা চাই সেটাই হবে। গট ইট..

জবাবে কোনও উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে নিলো ছবি। মাকে ম্যানেজ করতে কত্তগুলো মিথ্যে বলতে হয়েছে তাকে,,, এখন যদি রাজীব কে দেখে মা চিনে যায়?? সেদিন আরাবিকে নাকি এই লোকটাই বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো,,,মা কি দেখতে পেয়েছে?? যদি দেখে থাকে তবে তো সব বুঝে ফেলবে……

,,,,
,,,
,,,
,,,
,,,
,,,
,,,

ফ্লাটের সামনে এসে গাড়ি থামাতেই তড়িঘড়ি করে নেমে এলো ছবি,,,রাজিব কে কোনও কিছু না বলেই দ্রুত পায়ে হেটে ভেতরে চলে গেলো।

কলিং বেল বাজানোর সাথে সাথেই কাজের মেয়েটি এসে দরজা খুলে দিলো,,,

— মা কোথায়….

— ভেতরের ঘরে…

মৃদু পায়ে হেটে নূবায়রার ঘরে এসে দাড়ালো ছবি। নূবায়রার বাইরের দিকে মন মরা হয়ে তাকিয়ে আছে।
মায়ের এমন ভাড় মুখ দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো ছবি।

“””মা নিশ্চয়ই আবার আরাবিকে নিয়ে চিন্তা করছে….
কথাটা ভেবে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরলো ছবি।

প্রায় সাথে সাথেই ঝাড়া মেরে নিজের থেকে ছবিকে ছাড়িয়ে দিলো নূবায়রা। এমন কাজে কিছুটা অবাক হলো ছবি।পরক্ষনেই ভাবলো হয়তো এই দুদিন না আসাতে রাগ হয়েছে তার মায়ের।

— মা,,রাগ করেছো আমার সাথে,,কি করবো বলো কাজের এত চাপ ছিলো …প্রথম জয়েনিং তো তাই

ছবি কথাটা বলে শেষ না করতেই কষিয়ে এক থাপ্পড় বসালেন নূবায়রা।

— আর কত মিথ্যে বলবি তুই?? হ্যা?? কত মিথ্যে?? আর এসব কি?? কি মানে এসবের??

ছবির সামনে পত্রিকা টা মেলে ধরলো নূবায়রা।যেখানে ফিল্মে তার আগমন নিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে সংবাদ ছাপানো রয়েছে।

ছবি অপরাধীর মতো করে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে,,,তাহলে মা সব জানতে পেরে গিয়েছে???

— লজ্জ্বা করছেনা হ্যা?? একটুও লজ্জ্বা করছেনা??এভাবে মায়ের কাছে সব লুকিয়ে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলতে,,,এতো বিশ্বাসের এই মূল্য দিলি আমাকে,,,
নায়িকা হতে গিয়েছিস তাইনা?? সেটা তো বললেই হয় যে আরাবির জায়গায় নিজের নাম লেখানোর ছিলো তোর,,,টাকা পয়সার দরকার ছিলো তোরও। আমার কষ্টের টাকায় তোর নিজেরও চলছিলোনা।

— না মা এরকম টা নয় বিশ্বাস করো।

— তবে কি?? বল আমায় কি তবে?? আর কোথায় থাকছিস তুই?? কোথায়?? কার সাথে….কি হলো বল।

— কাব্য রেয়ানের বাড়িতে…

— কিহ?? ওই হিরোর বাড়িতে?? বাহ,,, এই তবে তোর আদর্শ ছিলো। হ্যারে সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছিস নিজের,,, ?? এই জন্যেই উনি তোকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন?? তাইনা?? পরপুরুষের সাথে এক ঘরে থাকছিস এখন??

— মা কি যা তা বলছো?? এরকম কিচ্ছু নয়। আগে আমার পুরো কথা তো শুনবে…. একটুও ভরসা নেই তোমার আমার প্রতি?

ছবির চোখের পানিতে কিছুটা নরম হয়ে এলেন নূবায়রা। সত্যিইতো তার মেয়ে তো এরকম নয়।

—তাহলে বল আমায়,,কি এমন হয়েছে যার জন্যে তোর এরকম কাজ বেছে নিতে হলো….
আর এবার যদি আমাকে সত্যিটা না বলেছিস আমি কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে এখান থেকে চলে যাবো,,আর কোনও দিন খুজে পাবিনা আমাকে।

কথাটা শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো ছবির। ধড়ফড় করে মাকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে

— না মা,,সব বলবো,,,তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা।

,,,,,
,,,,
,,,,,
,,,

ছবির মুখ থেকে পুরোটা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বিছানার ওপর ধপ করে বসে পরলেন নূবায়রা।
আর মায়ের পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসলো ছবি।

— হ্যারে মা,,,বোনের জন্য এরকম সিদ্ধান্ত নিতে একবারও ভাবলিনা??

— আমার এই সামান্য কাজে যদি আমি আমার বোনটাকে ফিরে পাই তবে এরকমটা আমি হাজার বার করতে রাজি মা।
শুধু আরাবি ফিরে আসুক।

— তুই সত্যিই বড্ড ভালোরে মা। আর আমি না জেনে তোকে কত্ত গুলো খারাপ কথা শুনিয়ে দিয়েছি।

— ,তুমি কথা শোনাবে তো কে শোনাবে,,,,

—- যদি ওই এগ্রিমেন্ট দিয়ে তোকে কোনও ভাবে ফাসিয়ে দেয়?

— মা পুরোটা আমি পড়েই নিয়েছি। এমনি এমনি কি সাইন করেছি নাকি,,,ওখানে শর্ত মোতাবেক কথাগুলোই লেখা ছিলো।

— তাও সাবধানে থাকিস মা। ভেবে চিন্তে এগোস।

— ঠিক আছে,,
এখন আর কেদোনা তো,,,,কখন এসেছি এখন অব্দি কিছু খেতে দাওনি,,,,
ক্ষুধা লেগেছে তো আমার।

মেয়ের কথা শুনে চোখ মুছে মৃদু হাসলেন নূবায়রা।

— তুই একটু বোস । আমি নিয়ে আসছি।

🍁

🍁

🍁

সন্ধ্যার গেট টুগেদার এর আয়োজনে সবাই উপস্থিত।
কাব্যর পাশ কাটিয়ে ছবির পাশে গিয়ে বসে পরলো ইরফান।
চোখ তার ছবির দিকে।
ক্রমাগত ছবির গায়ের সাথে নিজেকে ঘেষানোর চেষ্টায় -রত ইরফান।
ব্যাপারটা যতবার- ই ঘটছে ছবি নড়েচড়ে বসছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছেনা এতে।

কাব্যর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো কাব্য স্ক্রিপ্ট রাইটারের সাথে আলোচনায় ব্যাস্ত।

এদিকে ইরফান থামছেইনা। এক পর্যায়ে টেবিলের ওপর রাখা ছবির হাতের সাথে নিজের হাত ছোয়ালো ইরফান। মুহুর্তেই নিজের হাত সরিয়ে নিলো ছবি।
নাহ এবার আর পারা যাচ্ছেনা, যা করার তাকেই করতে হবে।

ইরফানের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো ছবি।

—- আপনি একটু সরে বসুন মিস্টার ইরফান। গায়ের ওপর হুমড়ি খেয়ে পরে যাচ্ছেন একেবারে। আমার অস্বস্তি হচ্ছে। এসব পছন্দ নয় আমার।

ছবির এমন কাঠকাঠ কথা যেন বজ্রপাতের মত আঘাত হানলো সবার মধ্যে। ইরফান একটু নয় বেশ অনেকটাই হতভম্ব ছবির এমন কথায়।
সবার দিকে অনেকটা চুরি করে ধরা পরে যাওয়ার মত মুখ করে তাকিয়ে চেয়ার টেনে ছবির থেকে সরে কাব্যর দিকে এগিয়ে বসলো সে।

কাব্য স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষন দেখে নিলো ছবিকে। সঠিক লোক কেই এবার বেছে নিয়েছে সে।

— দাবার চাল তো এবার শুরু হবে…..( কাব্য)

চলবে….

অনেক বড় করে দিয়েছি। আশা করি সবার মন,,, চোখ দুটোই জুড়াবে😇। এরপরেও যদি কেউ বলো যে পার্ট ছোট হয়ে গিয়েছে… কিংবা নাইস নেক্সট কমেন্ট করো তো বেহুস হওয়া ছাড়া উপায় থাকবেনা আমার🥴🥴🥴🥴🥴

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here