শেষ_ভালোবাসা পর্ব : ১১ লেখা : মেঘপরী .

0
101

#শেষ_ভালোবাসা
পর্ব : ১১
লেখা : মেঘপরী
.
বাসায় এসে আভার মনটা খুবই ফুরফুরে লাগছে।

.
অত্র আসতেই আভা বললো,
– অনেক অনেক thanks এরকম একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য,
– শুনুন ম্যাম এসব ছোটখাট বিষয়ে thanks বলবে না শুনতে পর পর লাগে
– আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না
– মনে থাকে যেনো
– হুম, আপনাকে একটা কথা বলি?
– বলো এতে আবার অনুমতি নেওয়ার কি আছে

– অনেক দিন বাবা মাকে দেখি না। চলেন না কাল বাবা মার সাথে দেখা করে আসি।
– আচ্ছা একটা কথা বলো তো বৌভাতের দিন যখন তোমাকে আমাকে নিতে আসছিলো সেদিন তুমি তোমাদের বাসায় যেতে রাজি হওনি কেনো?
– আমি তো তখন রাগ করেছিলাম আপনার সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়ার জন্য?
– তাহলে এখন রাগ নেই তাদের উপর..?
– উফ আপনি খুব বেশি কথা বলেন কিন্তু.. এখন তো আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু।
– হুম বুঝলাম, তোমাকে নিয়ে যেতে পারি এক শর্তে
-এখানে আবার শর্ত কিসের আচ্ছা বলুন কি শর্ত? অবাক হয়ে,
– আমাকে আজ থেকে তুমি করে বলতে হবে.. রাজি?
-কিইইইই.. এটা কোনো শর্ত হলো নাকি.. আমার আনইজি ফিল হবে, আমি তুমি করে বলতে পারবো না আপনিই ঠিক আছে,
– দেখো তুমি তো মাত্রই বললে যে আমি তোমার ভালো বন্ধু। তো বন্ধুকে কেউ আপনি করে বলে..?
– কেউ না বলেও আমি বলি,
– আমার শর্ত আমি জানিয়ে দিয়েছি এখন মানা না মানা তোমার ব্যাপার তুমিই ভেবে দেখো কি করবে..
– আপনি তো দেখছি খুব জেদি। আচ্ছা পরে বলন, আগে ওখানে সবার সাথে দেখা করে আসি.
– কবে যাবে?
– আপনার তো অফিস আছে,
– সমস্যা নেই, অফিসে এখন তেমন কাজের চাপ নেই, ১-২ দিন না গেলে কোনো ক্ষতি হবে না
পরেরদিন
সকালে ওরা রওনা দিলো আভার বাড়ির উদ্দেশ্য….
বাসায় পৌছাতে দুপুর হয়ে গেলো।
আভার বাবা মা তো ওদের দেখে অবাক এর থেকে বেশি আবাক হলো আভার এমন হাসিমাখা মুখ দেখে।
আভার মা এসে আভাকে জড়িয়ে ধরলো সারা মুখে চুমো দিতে থাকলো..
-কেমন আছিস মা?
-দেখতেই তো পাচ্ছো ভালো আছি🙂
তোরা আসবি একবার তো ফোন করেও বললি না…
– তোমাদের একটু সারপ্রাইজ দিলাম😊
অত্র আভার বাবা মাকে সালাম করলো..
জামাই বাবা তুমি ভেতরে এসে বসো(আভার বাবা বলল)

অত্র আাভা ভেতরে ঢুকে
– আম্মু ভাই ভাবি কোথায়?
– তোর ভাইয়া অফিসে আর ভাবি তার রুমে,
বলতে বলতে আভার ভাবি এসে হাজির
– কি ব্যাপার আভা হঠাৎ করে একেবারে অমাবস্যার চাঁদের মতো জামাই নিয়ে হাজির,
– হ্যা তোমাদের কথা খুব মনে পরছিলো
– আভা তুই অত্রকে নিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবারের ব্যবস্থা করছি
– বৌমা এসো আমাকে একটু হেল্প করো
– আচ্ছা মা
এই প্রথম অত্র আভার রুমে আসলো..অাভার রুমটি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিলো
-কি দেখছেন এভাবে?
-তোমার রুমে এই প্রথম আসলাম.. এতো অগোছালো কেনো? শুনেছি মেয়েরা নাকি অনেক পরিপাটি থাকে আর তুমি?
-অাপনার তো কিছুই অজানা নয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাটা বলল আভা।
তারপর ওরা ফ্রেশ হয়ে নেয়..
কিছুক্ষন পরে আবার ভাবি ওদের খাওয়ার জন্য ডাকে তাই ওরা নিচে চলে যায় খাওয়া জন্য

সবাই একসাথে বসে হাসি মজা করতে করতে দুপুরের খাবার শেষ করে
তারপর আভার বাবা বলে
– তোমরা অনেক পথ জার্নি করে এসেছো এখন একটু ঘুমিয়ে নাও তাহলে ভালো লাগবে
– আচ্ছা ঠিক আছে,
তারপর অত্র আর আভা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।
বিকালের দিকে আভার ঘুম ভেঙ্গে যায় অত্রর দিকে তাকিয়ে দেখে অত্র এখনও ঘুমাচ্ছে তাই আর না ডেকে একা একাই নিচে চলে যায়,
অনেক দিন পর নিজের বাসায় এসে বেশ ভালোই লাগছে আভার তাই মায়ের কাছে গিয়ে বসে গল্প করছিলো ।
এদিকে অত্র ঘুম থেকে উঠে আভাকে না পেয়ে নিচে আসে..
আভার বাবা তখন ড্রয়িং রুমে বসে বই পড়ছিলো আর আভার ভাবি কিচেনে চা বানাচ্ছিলো।

অত্রকে দেখে আভার বাবা বলে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?
না বাবা কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা আমি এলাম আপনাদের সাথে গল্প করতে,
– বেশ করেছো বসো এখানে চা খাবে তো?
– অবশ্যই
– আভার ভাবি দুজনের জন্য চা নিয়ে এলো,
তারপর চা খেতে খেতে গল্প করছিলো তার মধ্যে হঠাৎ আভার৷ বাবা বলে
– অত্র তোমাকে আভার ব্যাপারে কিছু কথা বলার ছিলো,
– আভা আর রাজ্যের ব্যাপারে তাই তো?
– তুমি কি ভাবে জানলে?
– আভা আমাকে সব বলেছে,
– তাহলে তো বুঝতেই পারছো ও কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে,
– (আভার বাবা) ঐ ঘটনার পর থেকে আমার মেয়েটা অনেক জেদি আর একরোখা হয়ে গেছে কারো কথা শুনতে চায় না তবে আজ ওকে দেখে মনে হলো ও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে,
– আপনারা এসব নিয়ে একদম টেনশন করবেন না, আমি ওকে একদম স্বাভাবিক করে তুলবো আর সব সময় ওর খেয়াল রাখবো ও অতীতে অনেক কষ্ট পেয়েছে আমি ওকে ভবিষ্যতে কোনো কষ্ট পেতে দিবো না আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেনো সুখি হতে পারি।
– আমরা তো সব সময়ই দোয়া করি কিন্তু এতোদিন ওকে নিয়ে একটু টেনশনে ছিলাম কিন্তু আজ তোমার কথা শুনে ভরসা পেলাম আমরা যোগ্য ছেলের হাতেই আমাদের মেয়েকে তুলে দিয়েছি
– দোয়া করবেন আমি যেনো আপনাদের ভরসার মান রাখতে পারি
.
এমন সময় আভা এসে বলে
– আমাকে রেখে এখানে কি নিয়ে মিটিং করা হচ্ছে শুনি?

– আপনিও এসে মিটিং এ জয়েন করুন মহারানী (অত্র)
– ( আভার ভাবি) তাহলে আমি আবার বাদ থাকবো কেনো,
– ননদ ভাবি সবাই আসুন

তারপর সবাই মিলে অনেক আড্ডা দেয় তারপর সন্ধ্যা হয়ে গলে আভার মা আর ভাবি রান্না ঘরে যায় আভা আর অত্র ওদের রুমে চলে আসে

রাতে আভার ভাইয়া ফিরলে ওদের দেখে খুব খুশি হয়, তারপর রাতে খাবার টেবিলে সবাই অনেক গল্প করে আভার পরিবর্তন দেখে সবাই খুব খুশি হয় আর ওর এই পরিবর্তনের পেছনে যে পুরোটাই অত্রের অবদান সেটাও সবাই বুঝতে পারে,

খাওয়া শেষে আভা বলে
– আম্মু আব্বু, আমরা কালই চলে যাবো
– (আভার মা) আজই তো আসলি আবার কালই চলে যাবি?
– হ্যা মা কালই যেতে হবে
-আপনারা মন খারাপ করবেন না এবারে হুট করে এসেছি এর পরে যখন আসবো তখন হাতে সময় নিয়ে আসবো,(অত্র)
– ( আভার ভাইয়া) ঠিক আছে মনে যেনো থাকে এরপরের বার অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে আসবে,
রাতে অত্র আর আভা গল্প করছিলো এরি মধ্যে অত্র বল্ল আচ্ছা রাজ্যর কোনো ছবি আছে তোমার কাছে.?..
-হুম আছে তো
-কই আমাকে দেখাবে?
-ওর ছবি আমার এই হৃদয়ে আছে আর সারাজীবন এখানেই থাকবে.।

পরের দিন সকালে সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বের হয় বিয়ের দিন আভার কান্না না পেলেও আজ সবাইকে ছেড়ে যেতে আভার ভিষণ কান্না পাচ্ছে আভার চোখের পানি অত্রের চোখ এড়ায়নি।
.
এভাবে দিন চলতে থাকে…
.
অত্র ঠিক করে আভাকে আজ প্রপোজ করবে নতুন ভাবে ভালোবাসাময় জীবন শুরু করবে.. এতোদিনে অত্র আভাকে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। আভাও অত্রর প্রতি খুবই কেয়ারিং। অাভা এখন অত্রকে তুমি করে বলে। আবার সকালে অত্রর নাস্তা রেডি করা অত্র কি পোশাক পরবে এসব কিছুই আভা ঠিক করে দেয়।
ঠিক যেমন একটা বউ তার বরের জন্য করে।
সন্ধ্যায় অত্র তারাতারি বাসায় চলে আসে। আভা তখন কিচেনে রাতের খাবার তৈরি করছিলো।
অত্র চুপিচুপি সবার দৃষ্টির এড়িয়ে আদ্রিতাকে নিয়ে সাদে যায়।
আদ্রিয়া আর অত্র খুব সুন্দর করে সাদ সাজায়।
রাতে সবাই খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে যায়।
অত্র আভার জন্য রুমে অপেক্ষা করছিলো।
কিছুক্ষন পর আভা রুমে আসতেই অত্র বলে চোখ বন্ধ করো।
– কেনো?
-উফফ করোই না
-কিন্তু কেনো?
বুঝছি যা করার আমাকেই করতে হবে বলেই একটা রোমাল দিয়ে অত্র আভার চোখ বেধে দিলো
তারপর আভাকে পাজা কোলে নিয়ে হাটা শুরু করলো..
চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here