শেষ_ভালোবাসা পর্ব : ১৪ লেখা : মেঘপরী

0
180

#শেষ_ভালোবাসা
পর্ব : ১৪
লেখা : মেঘপরী
.
অত্রের মা এসে আভাকে বললো অত্র কোথায় ওকে দেখছি না যে?

অত্রের মায়ের প্রশ্ন শুনে আভা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না আভা ভাবতে ভাবতেই অত্রের মা আবার প্রশ্ন করে,
– কি রে চুপ করে আছিস কেনো?
– আসলে মা আপনার ছেলে সকালে উঠে কোথায় যেনো গেছে আমাকে কিছু বলে যায়নি..
– কি বলিস ও তো কখনো এরকম করে না আর যতো ইম্পোরট্যান্ট কাজই থাকুক না কেনো ও ঠিকই আমাকে বলে যায়।
আচ্ছা ঠিক আছে তুই খেতে আয় অত্র আসলে জিজ্ঞেস করা যাবে যে কোথায় গিয়েছিলো।

এটা বলে অত্রের মা নিচে চলে যায়..

খাবার টেবিলে বসে আভার গলা দিয়ে খাবারই নামছে না তবুও কোনো মতে অল্প একটু খেয়ে উপরে চলে আসে।
আভা কিছুতেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছে না অত্র কেনো ওর সাথে এমন করলো।
.
এদিকে সারাদিন চলে গিয়ে রাত হয়ে যায় তবুও অত্র বাসায় ফিরে না।
অত্রর মা এসে আভাবে বলে মা অত্র তোকে ফোন করেছিলো নাকি? ও তো সারাদিন বাসায় ফিরলো না কল দিচ্ছি ফোন বন্ধ বলছে… আমার খুব চিন্তা হচ্ছে রে.. ওর কোনো সমস্যা হয় নি তো?
মায়ের কথা শুনে প্রথমে আমার এটা নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা না থাকলেও এখন বেশ চিন্তা হচ্ছে। আমি কোনো রকম মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘুমাতে পাঠালাম।

আর আমি সারারাত একটুও ঘুমাতে পারলাম না। এখন শুধু অত্রের কথা মনে পরছে। আসলেও তো এভাবে নিজের জিদ ধরে রেখে অত্রের জীবন নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই আমার নেই।আমি অত্রের বিয়ে করা বউ।আর বিয়ে হলো একটা পবিত্র বন্ধন যেটা আল্লাহ নিজে তৈরি করে দিয়েছেন তাই সে চাইলেই এই পবিত্র সম্পর্কে অস্বীকার করতে পারে না।আর আমার উপর অত্রর সব অধিকারই রয়েছে।
সকাল হয়ে গেলো এখনও অত্র বাসায় ফেরেনি । এখন আমার নিজেরই অনুশোচনা হচ্ছে আর একটা হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে….

– আমার নিজের ভুলের জন্য আমি রাজ্যকে হারিয়েছিলাম, এখন এই ভুলের জন্য অত্র আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে না তো…না এটা কিছুতেই হতে পারে না আমার আগের ভুলটা শুধরানোর সুযোগ আমি পাইনি কিন্তু আমার এই ভুলটা আমি ঠিকই শুধরে নিবো যে ভাবে হোক অত্রকে আমি ফিরে আনবোই। আমার মনের কোথাও একখানে আমি অত্রর জন্য ভালোবাসা অনুভব করতে পারছি অত্র ঠিকই বলেছিলো সবার জীবনের প্রথম ভালোবাসা অনেকাংশে পূর্নতা পায় না কিন্তু শেষ ভালোবাসা সারাজীবন রয়ে যায়…হ্যা আমিও শেষ বারের মতো অত্রকে ভালোবাসতে চাই।

এদিকে বাসার সবাই চিন্তিত সবাই অত্রকে একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অত্রের নাম্বার বন্ধ।

অন্যদিকে আভার করুন অবস্থা সে অত্রকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারছে না। বার বার শুধু অত্রের সঙ্গে কাটানো মূহুর্তগুলো মনে পরছে। আর সে এটাও বুঝতে পারছে অত্রকে ছাড়া এক মূহুর্ত থাকা তার পক্ষে সম্ভব না। তাই সে কান্না করছে আর বলছে
– প্লিজ অত্র একটা বার আমার কাছে ফিরে এসো আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমার সব কথা রাখবো।

এভাবে তিন দিন পার হয়ে যায় তবুও অত্রের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না হঠাৎ দুপুরের দিকে আভার ফোনে একটা অননোন নাম্বার থেকে কল আসে। আভা কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে
– হ্যালো আপনি কি আভা বলছেন?
– জ্বি..আপনি কে?
– আপনি আমাকে চিনবেন না আমি অত্রের বন্ধু শুভ বলছি.. আদ্রিতার কাছ থেকে আপনার নাম্বারটা নিলাম।আসলে ভাবি অত্র
– কি হয়েছে অত্রের? কোথায় আছে ও? ও ঠিক আছে তো? ওর কিছু হয়নি তো?
– আরে ভাবি এতো ভয় পাবেন না ওর কিছু হয়নি। আপনাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে যে এতিমখানাটা আছে অত্র ওখানেই আছে। আমাদের কারো কথা শুনছে না তাই প্লিজ আপনি আসুন…।
– ওকে আমি এক্ষুনি আসছি

ফোনটা কেটে দিয়েই আভা বাসা থেকে বেড় হয়ে যায় তারপর একটা ট্যাক্সি নিয়ে ঐ এতিমখানায় চলে যায় গিয়ে দেখে সেখানে কোনো মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে কিন্তু কিসের মিলাদ সেটা বুঝতে পারছে না হঠাৎ এতিমখানার একটা
গাছের নিচে আভা অত্রকে দেখে ছুটে গিয়ে অত্রের সামন দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকে।
হঠাৎ কেউ সামনে এসে দাঁড়াতেই অত্র মুখ তুলে তাকায় কিন্তু আভাকে দেখে আবার মুখটা নামিয়ে নেয়,

– তুমি এখানে আর বাসার সবাই তোমার জন্য কত টেনশন করছে যানো?
– আমার মতো একটা চরিত্রহীনের জন্য এতো টেনশন করার কি আছে? আর তুমি এখানে এসেছো কেনো?
– এতো কথা না বলে এখন চলো আমার সাথে বাসায় সবাই তোমার জন্য টেনশন করছে
– না আমি বাসায় যাবো না।আমি চাই না আমার মুখ দেখে কেউ মরে যাক বা বাসা ছেরে চলে যাক।
– দেখো এতো কথা শুনতে চাইনি যেটা বলেছি সেটা করো চলো আমার সাথে..বলেই অাভা অত্রর হাত ধরে টানতে থাকে..
এমন সময় একটা হুজুর এসে অত্রকে বললো
-চলুন মিলাদের সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে এবার মিলাদ শুরু হবে সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ।
– আচ্ছা চলুন এটা বলে অত্র ঐ লোকটার সাথে চলে গেলো আভাও অত্রের পিছে পিছে গিয়ে মিলাদে বসা লোকদের থেকে একটু দূরে দাঁড়ালো মিলাদে বসে হুজুরটা অত্রকে জিজ্ঞেস করলো মিলাদটা কার নামে হবে..?
– রাজ্য
দূর থেকে নামটা শুনেই আভা চমকে ওঠে আর ভাবে অত্র রাজ্যের জন্য মিলাদ কেনো দিচ্ছে? মিলাদ শেষ হলে অত্র আবার সেই গাছের কাছে গিয়ে বসে।
আভা গিয়ে জিজ্ঞেস করে..
– তুমি রাজ্যের নামে মিলাদ কেনো দিলে?
– আজ রাজ্যের মৃত্যু বার্ষিকি কেনো তোমার মনে নেই? তুমিই তো আমাকে বলেছিলে।
অত্রের উত্তর শুনে আভা থমকে যায়…
– আজ রাজ্যের মৃত্যু বার্ষিকি অথচ অত্রর কথা ভেবে ভেবে আমি এটা কিভাবে ভুলে গেলাম?
-তুমি যাকে ভালোবেসেছিলে এখন সে তোমার অতীত। আর আমি তোমার বর্তমান। আমি চেয়েছিলাম তোমার অতীতের সকল কষ্ট দূর করে তোমার পাশে থেকে তোমায় নিয়ে সুন্দর একটা সংসার সাজিয়ে দিতে অবশ্য তুমি এসব বুঝবে না,
তাই এখান থেকে চলে যাও
– আমিতো একা যাবো বলে আসিনি তোমাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। মা তোমার জন্য টেনশন করে করে অসুস্থ হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি বাসায় চলো।
– কি মা অসুস্থ?
– হুম, কোনো ছেলে যদি এতোদিন ফোন বন্ধ করে নিখোঁজ হয়ে থাকে তাহলে তার মা অসুস্থ হবে না এখন এতো কথা না বলে তাড়াতাড়ি বাসায় চলো। আমি তোমাকে নিতে এসেছি আমি চাই তুমি এখনি আমার সাথে বাড়ি ফিরে যাবে।

– আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি
– আসছি নয় এখনই আমার সাথে যেতে হবে
– আরে তুমি গাড়ির কাছে যাও আমি চাবি নিয়ে আসছি
-আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর ওরা ওখান থেকে সোজা বাসায় চলে আসে
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here