ভলোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #পার্টঃ৬ #writer_sumaiya_afrin_oishi

0
178

#ভলোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#পার্টঃ৬
#writer_sumaiya_afrin_oishi

‘উনি ধমক দিয়ে রাগী গলায় বললো ‘”এই মেয়ে তোমার ননস্টপ বকব’কা’নী বন্ধ করবে? না হয় কিন্তু তোমাকে এখানে’ই ফেলে দিবো। তার পর এখানে বসে বসে তুমি ফুটবল টিম বানানোর চিন্তা ভাবনা করো।”

“আমি কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললাম- না না আমাকে ফেলে দিবেন না প্লিজ! বাইক থামান আমি এখন থেকে একাই যেতে পাড়বো। আমি কি ইচ্ছা করে আপনার বাইকে উঠছি। আপনি ধমক দিয়ে উঠিয়ে, এখন আবার ফেলে দিতে চাচ্ছেন? নিশ্চয়ই আপনি প্রতি’শো’ধ নিতে চাইছেন। দেখুন আমি আপনাকে রাতে ইচ্ছে করে ফেলে দেইনি। বিশ্বাস করুন।

“ইডিয়েট একদম সাইলেন্ট! আর একটা কথা বললেই ফেলে দিবো তোমাকে। এখন আমি যা বলবো তাই শুনবে,আর চুপচাপ করে বসো। আমার ঘাড় শক্ত করে ধরো। আমি তোমাকে ফেলে দিবো না। তোমাকে ফেলে দিলে তোমার পুলিশ ডা’কা’ত ভাই আমাকে আবার জেলে দিয়ে দিবে। আমি বাবা জেলের ভাত খেতে চাই না।
তোমার কিছু হলে তোমার শ্বশুরের ছেলের কি হবে তুমি বুঝতে পারছো ব্যাপার টা? সে তো তার বউয়ে চিন্তায় স্টো’ক করে ফেলবে! তখন কি হবে?

“শুনুন আমারা মোটেও ডা’কা’ত না বলে দিলাম। আমার কি বিয়ে হইছে না-কি? আমার চিন্তা সে কি ভাবে করবে? আমাকে কি ঐ ব্যাটা চিনে নাকি? আমি ম*রলেও যানবে না বুঝলেন, তার কপালে বউ ও জুটবে না। বিধবা হয়ে ঘুর ঘুর করবে।”

“উনি হঠাৎ মাঝরাস্তায় ব্রেক করলেন বাইক। আমি টাল সামলাতে না পরে উনার গায়ের উপরে ধা’ম করে পড়ে গেলাম।”

উনি আমার দিকে ঘুরে অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। তার পর মৃদু ধমকের সুরে বললো,

“চুপ একদম বাজে বকবে না। ”

মাথা ঝাকিয়ে নিজেকে সামলে নিলো, ঘোর লাগা দৃষ্টি রেখে, নেশালো কন্ঠ বললো,

” যে মানুষ টা তোমাকে দূর থেকে এতদিন আগলে রেখেছে, তুমি না থাকলে সে কিভাবে বাঁচবে পিচ্চি?
তুমি নিজেও জানোনা তুমি কারো বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ! কেউ তোমাকে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে! যার হৃদয়ে প্রত্যেকটি হার্টবিট তোমার নাম জপে! তোমার ভালোবাসা নামক প্রিয় অসুখে অসুস্থ হয়ে দিন দিন তোমাতে আকৃষ্ট হচ্ছে!”

“সে খেয়াল কি তুমি রাখ রঙ্গনা মেয়ে?”

“কি নেশালো কন্ঠ, এমন করে কেউ বলে। এত আফিমের চেয়েও নেশালো কন্ঠ! যা হৃদয় ছুঁয়ে যায়! কেমন যেন অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে আমার কিশোরীর মনে! উনার কথা বলার ধরন, পোশাক , সবকিছু পরিপাটি, শ্যামবর্নের মানুষ যে এত সুন্দর হয়, উনাকে না দেখলে বুঝাতাম ই না। সব মিলিয়ে প্রেমে পড়ার মতো, আমার কিশোরীর মনে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। উনাকে যত দেখি তত মুগ্ধ হই। কই এর আগে তো এমন হয়নি কখনো? তাহলে কি উনাকে আমি ভালোবাসে ফেলেছি? নাকি এইটা ভালো -লাগা? আমার ছোট্ট মনে এসবের উত্তর একদম ই জানা নেই!
যখন মনে পড়ে উনি অন্য কাউকে ভালোবাসে তখনই মনে কালোছায়া এসে হা’না দেয়! আমার ছোট্ট হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব করি।”

“উনি যখন অন্য কাউকে ভালোবাসে, তাহলে আমার সাথে এভাবে কথা বলে কেন? উনি কি বুঝে না, উনার এমন কথায় আমার কিশোরী মনে অন্য রকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়! উনার একটু ধমকে আমার হৃদয়টা বিষাদে ভরে যায়! এসবের উওর একদমই জানা নেই । আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে এসবের সঠিক উত্তর দিতে পারবে কি?”

বাইকের হর্নে ধ্যান ভাঙ্গে ঐশীর। রাফিন কপালে কয়েকটা সূক্ষ্ম ভাজ ফেলে, কিয়াৎক্ষন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে ঐশী কে পর্যবেক্ষন করে , চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো-

“তোমার কি শরীর খারাপ? মাথা ব্যাথা করছে? মুখটা এমন মলিন কেন? তারাতাড়ি উঠে বসো, বাসায় পৌঁছে দেই। গিয়ে রেস্ট নেও।”

আমি মুখে একটা কৃত্রিম হাসি টেনে বললাম –
না তেমম কিছু হয়নি, আমি ঠিক আছি। চলুন আমি বাসায় যাবো। আম্মু না হয় চিন্তা করবে। এতক্ষণে এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে।

“উনি আর কথা না বাড়িয়ে, বাইক স্টাট দিলো।”

বাড়ির গেটে নামিয়ে দিলো আনাকে। আমিও ভদ্রতার ক্ষাতিরে বললাম,

“ভিতরে চলুন?”

“আজকে না একদিন একেবারে জামাই হয়ে আসবো এই বাড়িতে মায়াবিনী!”মনে মনে বললো।মুখে বললো,

“না অন্য একদিন, আমি আজকে একটু বন্ধুদের সাথে “আড্ডা দিবো। ওরা এতক্ষণে এসে গেছে মেবি। আমার অলরেডি লেট হয়ে গেছে। তুমি ভিতরে যাও।”

আমি ছোট্ট করে বললাম- আচ্ছা। বলে গেটের দিকে পাড়ালাম।

উনি পিছন থেকে আবার ডেকে বললো – শোন?

জ্বি! বলুন?

সাবধানে থেকো! নিজের খেয়াল রেখ! বায়! বলে আর এক মিনিট ও ব্যায় না করে দ্রুত চলে গেল।

উনার এই ছোট্ট কথাটায় কেন যেন এত ক্ষণের মন খারাপ সব হাওয়ায় মিলে গেল। ভালো লাগা৷ শুরু হলো হৃদয়ের রন্ধে রন্ধে।

🌼🌺

“গোধূলির হলুদ আভা আকাশ থেকে মুছে গেছে। ধরনীর বুকে অন্ধকার এসে ছেয়ে গেছে। উওরের হাওয়ায় শীতলতার প্রখর ক্রমশ বেড়েই চলছে! কিছু সময় পড়ার টেবিলে বসে রইলো ঐশী। কেন যেন আজকে সারাদিন কোন কিছুর শূন্যতা অনুভব হচ্ছে তার কিশোরী মনে। আনমনে বসে বসে রাজ্যের চিন্তায় মগ্ন। এদিকে কোন ধ্যান নেই তার। সে তো তার উওর মিলাতে ব্যাস্ত।”

“চৈতী কিছু সময় এসে তার বোন কে পর্যবেক্ষন করলো। যে মেয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলে রাখে, ছুটাছুটি করে, তাকে এভাবে চুপচাপ থাকটা নিশ্চয়ই ভাবনার বিষয়।
এতটা উদাস কেউ যে তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে, সেদিকে কোন হুশ নেই ঐশীর।

“হঠাৎ ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে লাফিয়ে উঠে, পিছনে ঘুরে দেখলো চৈতী। চশমার মধ্যে দিয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে।”

“পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমি বললাম- আরে আপু ওভাবে তাকিয়ে কি দেখ? নিশ্চয়ই আমি আগে থেকে অনেক সুন্দর হয়েছে? ”

“চৈতী কপালে ভাজ ফেলে, টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে, চশমা ঠিক করতে করতে বললে-

“কি ব্যাপার বলতো তোর কি শরীর খারাপ? জ্বর ট্বর আসছে নাকি?, বলে কপালে হাত রাখলে।”
না শরীর তো ঠিক আছে, তাইলে কি হয়েছে রে? আবার প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি কারো হুম? শোন এসব প্রেমে ট্রেমে যাসনা খবরদার!

“শয়*তানের যখন বিনোদনের প্রয়োজন হয়, তখন মানুষ কে প্রেমের দিকে ফেলে দেয় বুঝলি!
প্রেম করলে লম্বা বাঁ*শ অনিবার্য!”

“আমারে বল বোন তোরে কোনো শয়তানে পেয়েছে নাকি? আমি কিন্তু শয়*তান ছাড়াতে পারি! দাঁড়া আমি তোকে একটু পানি পড়ে দিচ্ছি তিন চুমুকে খাবি।”

“আরে আপু তুমি আগে বলো তুমি পাগল টাগল হয়েছো নাকি? বুঝিনা বাপু এসব পাগল থাকতে পাবনার সিট খালি কেন?”

কি বললি তুই আমি পাগল? (কান টান দিয়ে)

“আহহহ আপু ছাড়ো লাগছে তো।”

লাগলে লাগুক তুই আমাকে পাগল কেন বলবি?

তুমি পাগল না হলে এসব উদ্ভুব কথা কি আর বলতে নাকি?

“শোন আমি মোটেও উদ্ভুব কথা বলি না, যা সত্যি তাই বললাম। বলে মুখ বাঁকালো চৈতী।”

চৈতী হচ্ছে খুব পড়ুয়া মেয়ে। এইবার অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে সারাদিন লেখা পড়া নিয়েই ব্যাস্ত। এইসব প্রেম ভালোবাসার ধারে কাছেও সে নেই। তার কাছে প্রেম ভালোবাসা মানেই , বাড়তি ঝামেলা। কেউ যদি তাকে প্রপোস করতে আসে, তখনই বলে,

“আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করি যদি উত্তর দিতে পারেন। তাইলে ভেবে দেখবো আপনি রিজেক্ট, না একসেপ্ট। তো যেহেতু ভালো স্টুডেন্ট, উচ্চতার গনিতের সূত্র ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, যা কেউ পাড়ে না। আর যদি হয় কমার্স বা মনবিকের স্টুডেন্ট তাইলে তো কোন কথা ই নেই। সাথে সাথে বলে এই সহজ প্রশ্নর উত্তর পারেন না তাইলে আপনিই বলুন, আপনি আমার যোগ্য না। সো আসতে পারেন।”

“আচ্ছা এখন সত্যি করে বলতো মুখটা এমন বাংলা পাঁচে মতো বানিয়ে আছিস ক্যান?
একদম সত্যি বলবি। তাছাড়া হিউম্যান সাইকোলজি বলে মিথ্যা বললে নাকি চুল পড়ে যায়! খবরদার, আমি চাইনা আমার বোনকে কেউ ন্যাড়া বলুক”

“চৈতীর এসব আজগুবি কথা শুনে মনে হচ্ছে একটা ধাক্কা দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে। কি একটা অবস্থা চুপচাপ থাকলেও দোষ, আবার হৈচৈ করলে ও বলে, মেয়েরা থাকতে হয় শান্ত শিষ্ট। কোন দিকে শান্তি নাই রে ভাই।”

“ঐশী বিরক্ত হয়ে মা কে বললো ‘ ঃআম্মুমুমুমুমু তোমার বড় মেয়ে সারাদিন লেখা পড়া করতে করতে মাথার তারছিড়ে গেছে। আব্বুকে, তিহান ভাই কে এক্ষণ’ই ফোন দেও। হসপিটাল এ নিতে হবে। না হয় পাবনা শিফট করতে হবে।”

“সানজিদা শেখ কিচেনে বসে হাগ ছেড়ে বকাবকি করতে লাগলো দুই মেয়ে কে। যত জ্বালা আমার এই দুইটা কে নিয়ে আর পারি না।সারাদিন দুই বোন টম জেরীনের মত করবে!”

______________

“রাতে সবাই মিলে ডিনার করে শুয়ে পড়লাম। অনেক দিন অনলাইনে যাও হয় না। ওয়াই-ফাই কানেক্টেড করার সাথে সাথে’ই গ্যাঞ্জাম পার্টির গ্রুপ কল। একে একে সবাই জয়েন্ট হলাম ভিডিও কলে। ওদের সাথে কথা বললে আর যাই হোক ডিপ্রেশন থাকে না। বন্ধু মহল মানেই তো হাসি আনন্দ, সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নেও। আমাদের গ্যাঞ্জাম পার্টিটা ও ঠিক এমন।”

“ওদের সাথে কথা শেষ করে নিউজফিড স্ক্রল করতে লাগলো ঐশী ।”হঠাৎ অপরিচিত নাম্বার থেকে ঐশীর ফোনে কল আসলো।”

“এত রাতে আবার অপরিচিত কল। রিসিভ করলাম না! তারপরেও তিনবার কল আসার পর আজগুবী চিন্তা ভাবনা করে কল রিসিভ করলাম।”

কল রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে,,,, ,,,,,,,

#চলবে………

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]

( প্রিয় পাঠক মহল পেজটা ফলো করে দিবেন দয়া করে!
আমার পেজের নাম- Sumaiya Afrin oishi – সুমাইয়া আফরিন ঐশী )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here