#ভলোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ১১
কাক ডাকা ভোর! পাখির কিচির মিচির শব্দ জানান দিয়েছে সকল হয়েছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে দরজা ধাক্কাচ্ছে চৈতী।
কিরে আর কত ঘুৃমাবি?
উঠ এখন? সকাল হয়ে গেছে সেই কখন৷ উঠে পড়তে বস। লেখা পড়া নেই, এত ঘুম কিসের তোর?
সকালে উঠে মানুষ একটু হাঁটা চলা করে, ব্যায়ম করবি, তার পড়ে পড়তে বসবি, তা না এই মেয়ে দরজা লক করে, এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। বিজ্ঞদের মতো একটার পরে একটা উপদেশ বানী বলেই যাচ্ছে চৈতী।
“ঐশীর ঘুম ঘুম চোখে কপাল কুঁচকে ফেললো। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলো, বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে ভিতরে ঢুকে পড়লো চৈতী। হাতে একটি বই, কোমরে হাত দিয়ে মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো –
“আমি তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি বলতো? এত ঘুম আসে কোথাথেকে তোর? ক দিন পড়ে যে পরিক্ষা তোর সে খেয়াল কি আছে? কই উঠে পড়তে বসবি তা না, কয়টা বাজে জানিস সাতটা বেজে গেছে। তোর জন্য আমি দশমিনিট পড়তে পারিনি। কত পড়া বাকি আমার। হতাশ হয়ে বললো শেষ কথাটা।
“আচ্ছা আপু বলতো আমার ঘুমের সাথে তোমার এত কি শ’ত্রু’তা? আর মাএ সাতটা বাজে তাতেই তোমার কাছে তো দুপুর হয়ে গেছে।
সারাদিন এত বই নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান কেমনে করে মানুষ?
আরে বাবা মেয়েদের এত লেখা পড়ার কি আছে?
শুধু ঠেলে ঠুলে ফেল ঠেকালেই তো হলো, এত পড়ার কি আছে বুঝিনা? দেখো গিয়ে তোমাকে বিয়ে করার জন্য কোন এক বিসিএস ক্যাডার তিন পায় খা’ড়া।”
” সো আপু চি’ল!”
“তুমি মেয়ে মানুষ ঘুরবে, খাবে,আড্ডা দিবে, মাঝে মাঝে ঢং করে বিভিন্ন ছবি তুলবা, ফেসবুকে চালাবে, দুই চারটা প্রেম করবা! আর বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিবে! তুমি ক্যান শুধু শুধু সারাদিন লেখা-পড়া নিয়ে ডুবে থাকো? এত টেনশনের কিছু নাই।
সো চিল আপু!
নিজেও চিল করো, আর আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দেও। এসব বই টই নিয়ে তোমার রুমে যাও।
এতক্ষণ একা একা একদমে কথাগুলো বলছিলো ঐশী। চৈতীর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলো, সানজিদা শেখ খুন্তি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দরজা ঘেঁষে।”
“মাকে দেখেই মুখটা চুপসে গেছে ঐশীর। শুকনো একটা ঢোক গিললো।”
“তুই ও এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করিস। তোর জন্য ও কোন রিকশা ওয়ালা অপেক্ষা করে আছে। ব্যাপারটা খুব সুন্দর না কি বলিস?
আমিও তোর আব্বুকে কোন ভালো রিকশা ওয়ালারর খোঁজ নিতে বলি? দাঁত দাঁতে চেপে বললো সানজিদা শেখ।”
“এরি মধ্যে ডাইনিং থেকে ডাক পড়ে তার। মাএ পাঁচ মিনিটে ফ্রেশহয়ে নাস্তা খেতে আয়। চোখ রাঙিয়ে বলে চলে গেলো সানজিদা শেখ। ”
“মাকে যেতে দেখে সত্বির নিঃশ্বাস ছাড়লো ঐশী।
মনে মনে চৈতীর চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো।”
_____________________________
🌸 নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখলো চৈতী বই নিয়ে বিড়বিড় করছে। আর নাস্তা খাচ্ছিলো। তা দেখে বিরক্তি নিয়ে বসে পড়লো পাশের চেয়ারে।
ঐশী কে দেখা মাএই চৈতী আড় চোখ তাকাচ্ছে আর৷ মিটমিট করে হাসছে।
“যার অর্থ খুন্তির বাড়ি টা কেমন লাগলো, সকাল,সকাল!”
“ঐশী মুখ বাঁকিয়ে নিজের খাবার খেতে লাগলো। পাশেই সানজিদা শেখ দাঁড়িয়ে আছে। তাই কিছু বলতে পারছে না। আর এই সুযোগটা ই কাজে লাগলো চৈতী।”
“ওয়াও আম্মু আজকে পাউরুটি টা তো দারুণ হয়েছে!
তুমি তো বড় বড় শেফদের কে হারমানাবে। তোমার রান্না ও যেমন অসাধারণ! তুমি ও তেমন আমার অসাধারণ আম্মু!”
” পাউরুটি আমি বানাইনি। দোকান থেকে আনা। আমাকে এতো ইমপ্রেস করতে হবে না, রেজাল্ট যদি ভালো না হয়। তাইলে তো তোকে বিয়ে দিবো। শুধু শুধু তোর পিছনে টাকা নষ্ট করবো না। সানজিদা শেখ বললো।”
“তার কথার রেশ ধরে চৈতী সুর টেনে বললো – সেই টাকা দিয়ে না হয় আমাদের জিজু কে একটা নতুন রিক্সা কিনে দিব।”
“কি বলো আম্মু?”
“চৈতীর কথা শুনে কটমট করে তাকালো ঐশী । তা দেখে ভুবন ভুলানো হাসি হাসলো চৈতী। যা দেখে রাগটা দ্বিগুন চওড়া হয়ে উঠলো। মায়ের জন্য কিছু বলতে পারে না এখন। মাকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে নিজেই ফেঁ’সে গেল। মনে পড়লো পাউরুটি পাউরুটি বাসায় বানানো হয় না। দোকান থেকে ই আনা হয়।”
“এরি মধ্যে তিহান এসে ঐশীর মাথায় একটা চাটি দিয়ে বললো – কি হয়েছে বুড়ী?
মুখটা এমন ফুলিয়ে রাখছিস কেন?
“ভাই কে দেখে যেন ভরসা পেলো। এই ভাইয়াটা একটু বেশিই ভালো যেন ঐশীর কাছে। আগে যখন বাড়িতে থাকতো আম্মুর বকা ঝকা থেকে কত বার বাঁচিয়ে নিয়েছে। সকল দুষ্টমি বিনা বাক্যে মেনে নেয় তার ভাই।
এজন্যই তার কাছে সবার থেকে সেরা হচ্ছে তার ভাই।
ভাইয়েরা তো এমনি হয়,সকল বিপদে বোনদের ডাল হয়ে পাশে দাঁড়ায়।”
-জানিস ভাইয়া চৈতীপু আর আম্মু মিলে আমাকে নাকি রিকশা ওয়ালার কাছে বিয়ে দিবে। আমি ফেল করলে নাকি আর পড়াবে না। সেই টাকা দিয়ে আমার জামাই কে নাকি রিকশা কিনে দিবে। চৈতীপু বলে। মুখ গোমড়া করে বিচার দিলো ভাইয়ের কাছে।”
এদের কথা শুনে হো হা করে হেসে দিলো তিহান।
“তুমি হাসছো ভাইয়া?তুমি ও ওদের দলে চলে গেলে?আমাকে আর কেউ ভালোবাসেনা। থাকবো না আর এই বাড়িতে। বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ঐশী।”
“তিহান হাসি থামিয়ে বললো, এরে পাগলী ওরা বললেই হলো নাকি? তোকে রিকশা ওয়ালার কাছে কেন বিয়ে দিব?তোকে তো ডাক্তার ছেলের কাছে বিয়ে দিবো। এবার খুশি বোন হাস একটু?”
“তুমিও আমার সাথে মজা নিচ্ছো ভাইয়া?”
“আরে বোকা তুই কি ফেল করার স্টুডেন্ট নাকি? তুই ফেল কেন করবি? ভালো ভাবে লেখা পড়া করে দেখিয়ে দিবি ওদের তোর রেজাল্ট।
আর কে বললো তোকে আর পড়াশোনা করতে হবে না? তোদের এই থাকতে, তোদের কোন চিন্তা নেই বোন!”
“এইজন্যই আমি তোকে এত ভালোবাসি ভাইয়া। বলে জড়িয়ে ধরলো ঐশী তুমি চৈতীপু কে তো কিছু বললে না ভাইয়া? মুখ ফুলিয়ে বললো।”
” তিহান মেকি রাগ নিয়ে চৈতী বললো
তোর এত বড় সাহস চৈতী? আমার বোনকে এই কথা বলিস এত বড় সাহস তোর? একদম মেড়ে হাড্ডি গুড়ো করে দিবো তোর। ”
“হ তোর তো একটা ই বোন। আমি তো আর কেউ না। চৈতী অভিমান করে বললো।”
“তিহান দুই হাতে দুই বোন কে জড়িয়ে ধরে বললো-
তোরা দুই বোনই তো আমার কলিজা পাগলি! তোরা দুজন ই আমার কাছে সমান। তিন ভাইবোনই একসাথে হেসে উঠলো!”
“এদের ভাইবোনের খুনসুটি দুষ্ট, মিষ্টি ভালোবাসা দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো সানজিদা শেখের। তিনি এসে তিন সন্তানের কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো। আর বললো সারাজীবন এভাবে মিলেমিশে থাকিস তোরা।
আল্লাহ যেন তোদের সারাজীবন হাসিখুশী রাখে! কোন ঝড় যেন না আসে।”
“ওরা ও মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো। তার পড়ে বেরিয়ে পড়লো তিনজন একসাথে। তিহান যাবে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। তার ও ছুটি প্রায় শেষ।
চৈতী তার ভার্সিটিতে চলে গেলো।”
“এদিকে মিতুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ঐশী। এই মেয়েটা এখনো আসছে না কেন? বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ঐশী। অবশেষে দশ মিনিট পড়ে আসলো মিতু।”
“কিরে এত দেরি করলি কেনো আজ?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ঐশী।
“স্যরি ইয়ার!”
“আরে রাখ তোর ফর্মালিটি আগে বল? লেট কেন হলো দেখছিস কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। আমার পা ব্যথা হয়ে গেছে। ঐশী জাড়ি দিয়ে বললো।”
-আরে বোন গাড়ি পাইনি আমি হেঁটে হেঁটে আসছি তাই তো লেট হলো। আমার কি দোষ বল? মলিন মুখে বললো মিতু।
‘যাইহোক দেরি যখন করছিস, এখন রিক্সা ডাক তাড়াতাড়ি। আর ভাড়াটা কিন্তু আজ তুই দিবি। লেট করছিস এইটাই তোর শাস্তি। বাঁকা হেসে বললো ঐশী।”
‘মিতু মুখ বাঁকিয়ে বললো – ভাড়াটা আজ আমাকে দিতে হবে সেটা সোজা বললেই পারিস। পা ব্যথার অজুহাত দিচ্ছিস কেনো?’
-হয়েছে বুঝিছিস যখন আর কথা বলিস না চল। না হয় কিন্তু দেরি হয়ে যাবে।
“আচ্ছা চল।” বলে দুজন চলে গেলো কলেজে।
____________________
“কোলাহল মানুষজন যান্ত্রিক আওয়াজে ভরপুর শহরের রাস্তা। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ঐশী। কোচিং শেষ করে এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে গ্যাঞ্জাম পার্টির জন্য। পিছন থেকে অপরিচিত কন্ঠ শুনতে পেলো। বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে তাকালো। একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে অমায়িক হাসি।
হেই! আমি আলভি।
তো?
ঐশীর এমন জবাবে ছেলেটা ভড়কে গেলো। মুখে একটু হাসি টেনে বললো –
“আমি তোমাদের সাথেই কোচিং এ ভর্তি হয়েছি।
তাই ভাবলাম পরিচিত হই। তুমি ঐশী রাইট?
“হাতের একটা নোট দেখিয়ে দিয়ে বললো -এটা তোমার? তোমার বেঞ্জে পেলাম।”
-নোটটা দেখেই খুশি হয়ে গেলো ঐশী। একঝলক হাসি নিজের অজান্তেই ফুটে উঠলে। মুখে হাসি রেখেই বললো,
“ধন্যবাদ! আমার নোটটা আজকে খুব দরকার ছিলো। ভুল করে ফেলে রেখে আসছি।”
-আলভি নির্ববাাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। চোখে মুখে হাজার ও মুগ্ধতা দেখা গেলো। আনমনে বলে উঠলো –
“তোমার হাসির মাঝে পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য দেখা যায়! এভাবে সবসময় হাসলেই পার।”
“আলভির এমন কথায় ভড়কে গেলো ঐশী। মুখটা গম্ভীর করে বললো —
“স্যরি কিছু বললেন?”
“আলভি থমমত খেয়ে গেলো। মুখ ফসকে বলেছে কথাটা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো-
“না মানে এমনি কথার কথা ছিলো। ও কিছু না।
আজ আমি আসি, একটু তাড়া আছে।”
“বায়! ”
চলবে……..
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]
ভুল -ক্রটি হলে ক্ষমা করে দিবেন।
সবার আগে গল্প পড়তে চাইলে পেজে এড হবেন। আমি লিখে রিচেক দেইনা। তাই বানান ভুল হলে একটু বুঝে নিবেন।