ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ১৯

0
158

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ১৯

-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

– রাফিন চোখ সরালো না, না আছে কোন প্রতিক্রিয়া। একধ্যানে তাকিয়েই আছে তার মায়াবিনীর চোখের দিকে। এই মেয়েটা কে রাফিনের কাছে মায়া পরী মনে হচ্ছে। যার মায়ার যাদু দিয়ে ভস্ম করে ফেলতে পারে যে কাউকে।
মিনিট দুইএক পড়ে রাফিন ও ভাবে চেয়েই বললো-

“দেখছি! পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর মানুষটাকে। মানুষ এত ভয়ংকর সুন্দরী হবার কি প্রয়োজন ছিলো? এই সুন্দরীর রুপের আগুনে আমার চোখ যে ঝলসে যাচ্ছে!

বাট ট্রাস্ট মি! তবুও চোখ সরাতেই মনে চাচ্ছে না। যত দেখছি ততই নতুন মনে হচ্ছে।

-বলছে আপনাকে? পৃথিবীতে অহরহ আমার থেকেও বেশি সুন্দর মানুষ আছে।
তারা আমার থেকেও বেশি সুন্দর!

-রাফিন হাসলো। মুখের হাসি বজায় রেখেই বললো-

হোক সুন্দর। কিন্তু আমার চোখে তো তুমিই সবচেয়ে বেশি সুন্দর। তুমি দেখতে যদি কুৎসিত বা অসুন্দর ও হতে, তবুও আমার চোখে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা একমাত্র শুধুই তুমি।
হাজারো সৌন্দর্যের ভিড়ে এই দু’টো চোখ শুধু তোমাকেই খুঁজবে।
” তোমাকে দেখা’র তৃষ্ণা আমার ইহকালেও মিটবে না মায়াবিনী!

ঐশী বেশ কৌতূহল হয়ে জিজ্ঞেস করলো –

কেনো?

কারণ, ভালোবাসার মানেই সুন্দর! স্পর্শের বাইরে থেকেও যাকে চাওয়া হয় সেটাই ভালোবাসা!
দিনের পর দিন, বছরের পর বছর যাকে দেখার জন্য মুগ্ধতা কাজ করে সেটাই ভালোবাসা!
দিন শেষে, সেই নির্দিষ্ট একজনকে চাওয়ার নাম-ই ভালোবাসা!

-আর তুমিই আমার সেই নির্দিষ্ট একজন। যাকে যতই দেখি ততবারই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই। এই সুন্দর কোনো গাঙের রং না।
যাকে তুমি ভালোবাসবে তার গাঁয়ের রং “নট ম্যাটার”। সে যেমনই হোক তোমার কাছে সেই মানুষটাই সেরা। তোমার এই অগোছালো তুমিটা কে আমি বড্ড ভালবাসি। আমার কাছে তোমাকে ম্যাচিউরিটি দেখাতে হবে না । আমি তোমার হৃদয়ের থাকা শৈশব বিকাল হতে চাই মায়াবী পরী। দিনশেষে একজন নিজের মানুষ সবার বড্ড প্রয়োজন। আমি তোমার সেই নিজের, একন্তই কাছের মানুষ হতে চাই। যাকে তুমি মন খুলে অনায়াসে সব বলতে পারবে।

এই মানুষটা কে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। মুগ্ধতা চোখে মুখে ছড়িয়ে গেলো ঐশীর। অপলক নয়নে দৃষ্টি রাফিনকে ঘিরে। এই মানুষটা কে যত দেখে তত ভালো লাগে। এর কথা যতশুনে তত শুনতে ইচ্ছে করে। ঐশী রাফিনের হাতটা ছুঁয়ে দিলো।
রাফিন মুচকি হেসে হাতটা মুঠোয় নিয়ে আগলে ধরলো।

-আপনাকে যত দেখি ততবারই প্রেমে পড়ে যা-ই। আপনার কথা সারাক্ষণ শুনতে ইচ্ছে করে। মানুষ এত মিষ্টি করে কি ভাবে কথা বলে রাফিন ভাই?
মনে চাচ্ছে আপনাকে দিয়ে সারাদিন কথা বলাই। আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি।

আচ্ছা একটা কথা বলেন তো?

কি কথা?

রাফিন ভাবুক হয়ে তাকালো ঐশীর দিকে।

আপনি এতদিন আমকে বলেননি কেন?

রাফিন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।

আরে এই যে আমাকে এত ভালোবাসেন সেটাই জিজ্ঞেস করছি। এত দিন আমাকে ইগনোর করলেন কেন?
জানেন আপনি অন্য কারো সাথে হেসে হেসে কথা বললে আমার খুব কষ্ট হতো।

ঐ দিন যখন ঐ মেয়েটার সাথে আপনাকে হেঁসে হেসে কথা বলতে দেখলাম। আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছিলো। বুকের ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণায় আমি ধম আঁটকে মা’রা যাচ্ছিলাম। আমার বুকে বড্ড ব্যথা অনুভব করি।

-প্রথমত তোমাকে ভালোবাসি এটা জানায়নি কারণ, তুমি অনেক ছোট ছিলে। আমি চাইনি আমাকে ভেবে ভেবে তোমার লেখাপড়ার ক্ষতি হোক, সুন্দর ক্যারিয়ার টা নষ্ট হোক। ঐটুকু বয়সে এত কিছু সামলাতে পারতে না তুমি। আমার বিশ্বাস ছিলো তুমি আমারই হবে। এবং আমাকেই ভালোবাসবে।
তোমার অগোচরে তোমাকে দূর থেকে আগলে রেখেছি।
তুমি আমার একন্তই নিজস্ব সম্পতি তাকে কাছথেকে হোক বা দূর থেকে হোক, নিজ দায়িত্বে যত্ন করে রেখেছি। আমার মায়াবিনীর খবর নিতে কখনো ভুলিনি।
ভুলবো কি করে বলো তো?
উনিতো আমার হৃদয়ের রানী। যার জায়গা দিয়েছি আমার হৃদয়ে। আমি কখনো তাকে ভুলে যাবার চেষ্টা ও করবো না। তাকে যে অসম্ভব ভালোবেসেছি।

আরো একটা কারণ রয়েছে সেটা হলো- তোমাকে হারানোর ভয়। যদি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিতে শূন্য হাতে। আমাকে প্রত্যাখান করতে। তার থেকে বরং তোমার অগোচরে দূর থেকে ভালোবাসটাই শ্রেয়। কারণ প্রিয় মানুষের প্রত্যাখান সহ্য করার ক্ষমতা যে আমার নেই।
আমি তোমাকে ইগনোর করতাম, যাতে তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো। তোমার ভাবনা জুড়ে হোক আমার বিচরণ!

যেদিন তোমার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনেছিলাম। তোমাকে বুঝাতে পারবো না কতটা খুশি হয়েছিলাম আমি। আমার মনে হয় এতটা হ্যাপি আমার লাইফে আর দ্বিতৃয় দিন আসেনি। তখনই আমি শুধু একটা কাঙ্খিত সময়টার জন্য অপেক্ষা করেছি।
আসলেই দীর্ঘ অপেক্ষার ফল অতি মিষ্টি হয়।

– যে কোনো সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি রাখতে নেই। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোন থার্ড পারসন রাখতে চাইনা, আমি ক্লিয়ার করতে চাই সব। তোমার মনের যেকোনো প্রশ্ন আমাকে অনায়াসে বলতে পারো। কোনো গিলটি ফিল করতে হবে না।

তোমার মনে প্রশ্ন হচ্ছে- ঐ দিনের ঐ মেয়েটা কে তাইতো?
আমার কলেজ ফ্রেন্ড। ঐ দিন হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো তাই কথা বললাম। আর তোমার বার্থডে তে পরিচয় করিয়ে দিবার মতো সময়টুকু হলো কই?
ও খুব ভালো মেয়ে। তোমার কথা সবাই ই জানতো।
শুধু মাএ তুমি ছারা।

ঐশী মনে মনে নিজেকে বকা দিচ্ছে।
ছিঃ! আমি কিনা অন্য কিছু ভাবলাম। ভাগ্যিস! মেয়েটা কে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। তা হলে কি একটা বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো।

আবার মন বলছে ঐশী তুই তো জানতি না। তোর কোনো দোষ নেই এখানে। উনিতো আগে বলেনি কিছু। এখানে এইটা ভাবা অস্বাভিক কিছু না। সো চিল! নো চাপ!

হয়েছে মনে মনে আর ভাবতে হবে না ভাবুক রানী!
দুষ্ট হেঁসে বললো রাফিন।
ঐশী কিছুটা হকচকিয়ে গেলো।
আমতা আমতা করে বললো –

কিছু ভাবিনি তো।

ঐশীর চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাফিন বললো –
– তোমাকে দেখার পরে দ্বিতীয় কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর দূঃসাহস আমার হয়ে উঠেনি।

কথা না বললে তো জানতামই
না কেউ একজন আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করে।
মেয়েরা এওতো জেলাস আগে জানতাম না। হাহা

-হ্যাঁ! মেয়েরা ভিষণ জেলাস! তার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে। মেয়েরা সবকিছুর ভাগ দিলেও প্রিয়- মানুষটাকে কারো সাথে বিন্দুমাত্র শেয়ার করতে চায়না।
এই একটা মাএ জিনিসই মেয়েরা একান্ত নিজস্ব সম্পতি মনে করে। কিছুটা কঠোর ভাবে বললো ঐশী।

– তুমি না চাইলেও আমি একান্ত তোমারই আছি, তোমারই থাকবো। তুমি শুধু হাতটা শক্ত করে ধরে রেখো।

-আমাকে ভাঙতে চাইলে আমাকে ভালোবাসো! কেবল ভালোবাসার কাছেই আমি স্বেচ্ছায় আত্মসমার্পন করি।

ভালোবেসে বুকের উপরে দাঁড়িয়ে থেকলেও, আমি বোবা প্রাণীদের মতো সহ্য করে নিবো।
কিন্তু অবহেলা করো না! তোমার অবহেলা সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমার মোটেও নেই। প্রিয় মানুষদের অবহেলা মৃ’ত্যু যন্ত্রণার থেকেও ভয়ংকর। যা বেঁচে থেকেও মৃ’ত্যু যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।

-ছিঃ! এভাবে বলছেন কেন? আমি আপনাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি রাফিন ভাই।

-আপনি বিশলতা চাইলেন, আমি প্রিয় আকাশ লিখে দিলাম আপনার নামে। আপনি অসাধারণ এই আমাকে দেখলেন। আমি কাঁদা জলে ফোঁটা স্বচ্ছ কচুরিপানা দেখিয়ে দিলাম!

– আপনি বৃষ্টি চাইলেন।
আমি একমুঠো রোদ্দুর হয়ে, আপনার ভেজা চুলে আশ্রয় খুঁজলাম।
আপনি বলবেন আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবা বারণ!

আমি বললাম আমা ভিতর জুড়ে শুধু আপনিই, অন্য কারো সুযোগ কোথায় অকারণ?
যার স্মৃতি জুড়ে একজনের নামে শিহরণ বয়ে চলে। সে কিভাবে সেই মানুষটা কে অবহেলা করে?
আমি রোজ নিয়ম করে আপনাকে ভাবতে চাই।
আপনি আমার শখের ডায়েরি!
আমি হলাম সেই ডায়রির লেখিকা!
প্লিজ আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না! খুব বেশি ভালোবাসি আপনাকে রাফিন ভাই । বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ঐশী।

রাফিন কাছে টেনে নিলো প্রিয়তমাকে। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মোহনীয় কন্ঠে বললো-

“তোমাকে ছেড়ে দিবার সাধ্য আমার নেই। আমার ভালো থাকার আরেকে নাম তুমি মায়াবিনী!
যারা সত্যি ভালোবাসতে জানে এবং সম্পর্কের মূল্য বুঝ, তারা কখনোই কঠিন পরিস্থিতির কারণে প্রিয় মানুষটাকে ছেড়ে যায় না। উল্টো সবকিছু ত্যাগ করে দু’জন মানুষ মিলে সেই কঠিন পরিস্থিতিকে বদলে ফেলে। একসঙ্গে সারাজীবন থাকার জন্য যু’দ্ধ করে”।

কে কি বললো – আই ডোন্ট কেয়ার! তোমার জন্য আমি নিজের জীবন দিতেও দ্বিতৃয় বার ভাববো না।

আপনার জীবন না আপনাকে আমার ভিষণ প্রয়োজন রাফিন ভাই। এসব আর বলবেন না। আমার খারাপ লাগে।

রাফিন মুচকি হাসলো। হাসি বজায় রেখেই বললো- আচ্ছা বলবো না মহারানী!
তুমি আমার উপর বিশ্বাস রেখো। ভরসা রেখে, আমার বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ো, আমাকে আমার ভালোবাসা কে সন্দেহ করো না!
ব্যাস এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।
তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে দিলেও আমার থেকে তোমার ইহজন্মে মুক্তি মিলবে না!

ঐশী হেসে বললো –
আমি মুক্তি চাইনা! আমি বন্দি হতে চাই!

রাফিন আলতো হেসে দাঁড়ালো। ঐশী কে কিছু না বলে সামনে হাঁটা দিলো।

– ঐশী রাফিনের যাবার দিকে আহম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো। ভাবতে লাগলো লোকটার হুট করে হলো টা কি?

– মিনিট পাঁচের মধ্যে রাফিন চলে আসলো। ঐশী কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই একমুঠো কাঁচের চুরী দেখতে পেলো।
নীল রঙের রেশমি চুরী দেখেই খুশী হয়ে গেলো ঐশী। মুখে ভুবন বুলানো হাসির রেখা।
কেমন করে যেন এই মানুষটা তার সব পছন্দ গুলো ও বুঝে নিয়েছে।

– কেউ যদি তার হাতটা বাড়িয়ে দিতো আমার দিকে! অনুরোধের সুরে বললো রাফিন।

ঐশী বিনা বাক্যে এগিয়ে দিলো হাতটা।
রাফিন পরম যত্ন করে চুরী গুলো পড়িয়ে দিলো তার প্রিয়তমার হাতে।

নাউ পারফেক্ট!

সুন্দর লাগছে তোমাকে।

কেউ যদি ভালোবেসে পরম যত্ন করে পড়িয়ে দেয়। তাহলে সুন্দর না লেগে উপায় আছে বুঝি? ঐশী তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো।

এরি মধ্যে গ্যাঞ্জাম পার্টির সকলে এসে হাজির। তাদের সাথে আছে আরাফ। বিকেলে সবাই মিলে নদীর পাড়ে ঘুরতে আসছে। ওদের দুজনকে আলাদা ভাবে কথা বলার সুযোগ দিয়ে, ওরা নিজেরাই এতক্ষণ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করছে। বন্ধু মহল ঐশীর দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে।
মিতু এসে সুর টেনে বললো –

তা কেমন চলছে রোমিও- জুলিয়েটের প্রেম!

তা তোদের বলবো কেন? হুহ!

ঐশী মুখ ভেংচি কেঁটে বললো।

এরি মধ্যে রিয়া এসে বললো-
বাহ্ বলতে হবে রাফিন ভাই এর পছন্দ আছে।
আজ যদি আমাদের কেউ থাকতো তাইলে আমাদের ও কেউ চুরী গিফট করতো!

জান্নাত দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো –
আজ কেউ নেই বলে।

আদিত্য ভাইয়া তোকে চুরী দেয়না বুঝি?
পরের টা দেখলেই জ্বলে রে জান্নাত!

মিতুর এমন কথায় হেসে দিলো সবাই। সবাই মিলে আর কিছু সময় আড্ডা দিলো। রাফিন মিতু, রিয়া,জান্নাত কে চুরী কিনে দিলো। সবাই বেজায় খুশি।
হাসি আনন্দে কেটে গেলো আরো একটি দিন।

চলবে………….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here