ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #Writer_Sumaiya_Afrin_Oishi #পার্টঃ২৩

0
192

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#Writer_Sumaiya_Afrin_Oishi

#পার্টঃ২৩

নিস্তব্ধ রাত কোলাহল পূর্ণ শহরের যান্ত্রিক আওয়াজ নেই আর। শহরটা ও যেন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। নিকষ কালো আঁধার রজনী, জনমানবশূন্য ফাঁকা রাস্তায় এক যুবক ফুল স্পিটে বাইক চালাচ্ছে। কারো ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিতে এই গভীর রজনী, শান্তির নিদ্রা ও বাঁধা দিতে পারেনি।
ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়?

ঘড়ির কাঁটায় বারোটা ছুঁই ছুঁই।
শেখ বাড়ির সবাই যে যার রুমে ঘুমানোর প্রস্ততি নিচ্ছে।
হঠাৎ এমন সময় বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো।

সানজিদা শেখ বিচলিত হয়ে স্বামিকে প্রশ্ন করলো।

‘এত রাতে কে আসছে তিহানের আব্বু’?

শফিকুল শেখ ও ঈষৎ চিন্তিতো মুখ করে বললো,
কোনো বিপদ হলো না তো কারো! আল্লাহ হেফাজত করুন!
আমিন!
চশমাটা চোখে পড়তে পড়তে সানজিদা শেখকে উদ্দেশ্য করে বললো,
আচ্ছা চলো গিয়েতো দেখি এত রাতে কে আসলো।

🌸দরজা খুলে দিতেই, অপর প্রান্তের মানুষটাকে দেখে কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ পড়লো শফিকুল সাহেবের।

উনি বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো,
আরে সাইফ বাবা! তুমি এত রাতে আমার বাসায় যে?
কোনো সমস্যা বাবা?

সাইফ তার ভুবন বুলানো হাসি উপহার দিয়ে, করুন মুখ করে বললো,
মহা-বিপদ হয়ে গেছে আঙ্কেল।
ভেতরে তো আসতে দিবেন নাকি?
না-কি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবো?

শফিকুল সাহেব সরে দাঁড়ালো, উনি এখনো বুঝতেই পারছেন না আসলে হচ্ছেটা কি?
সাইফ কাউকে পাওা না দিয়ে হুড়মুড় করে ভিতরে চলে গেলো।
সোফায় গিয়ে আয়েশ করে বসলো।

এরিমধ্য চৈতী ও ঐশী রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। এত রাতে সাইফকে দেখে দুই বোনই অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছে গেছে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু ফলাফল শূন্যের কোঠায়।

এদিকে চৈতী ভীষণ ঘাবড়ে গেছে, মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছে, যদি বাবা-মা কে বলে দেয়।
চৈতী সাইফকে বিয়ের প্রপোজাল করেছে, তাহলে মানসম্মান সব শেষ।
চৈতী দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো, বসার ঘরে যাবার আর সাহস হলো না।

সাইফ কিঞ্চিৎ কেশে গলা পরিষ্কার করে শফিকুল সাহেবকে বললো,
আরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন আঙ্কেল? আন্টি আপনি ও বসুন।

রিকোয়েস্ট স্বরে বললো সাইফ, মনে হচ্ছে এটা তার বাড়ি। আর উনারা মেহমান।

-শফিকুল শেখ, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বসে পড়লো। তার পাশে সানজিদা শেখ ও বসে পড়লো।

-আরে চৈতী তুমি ওখানে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি যুকি দিচ্ছো কেন?
এখানে আসো আসো?
চৈতী হকচকিয়ে উঠলো। ঠায় দাঁড়িয়েই রইলো।

সাইফ বিষয়টি পাওা না দিয়ে, গলা পরিষ্কার করে বলতে লাগলো,

-” আঙ্কেল আমি আপনার মেয়ে কে খুব ভালোবাসি! বিয়ে করতে চাই চৈতী কে। আমি ও বাসায় বলছি উনারা বলছে সকালে আসবে। কিন্তু আমি অপেক্ষা করতে পারছিলাম না বলে এখনই চলে আসছি। একদম না বলবেন না কিন্তু আঙ্কেল!
ওহ সরি! সরি! আই মিন শশুর মশাই!
শশুর তো পিতার সমতুল্য তাই আপনাকে “বাবা” বলে ডাকবো।
মেয়ের জামাই তো ছেলের মতোই তাই বাবাই বেস্ট”।
কি বলেন বাবা?

সাইফের কথা শুনে বিস্মিত নয়নে তাকালো শফিকুল সাহেব।
চৈতী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কাচুমাচু করছে।

-ঐশী মুচকি মুচকি হাসছে। তা দেখে সানজিদা শেখ চোখ রাঙিয়ে তাকালো মেয়ের দিকে।
সাইফ ফের আবার বললো,

-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন বাবা। আমি কিন্তু আপনার মেয়েকে সত্যিই খুব ভালোবাসি।
দেখলেন তো ভালোবাসার টানে এই রাতেই চলে আসছি।
বিয়ার চিন্তায় ঘুমই আসছিলো না! আমি খুব সুখে রাখবো আপনার মেয়েকে। এত এত সুখে রাখবো যে, আপনার মেয়ের মুখে শুধু সাইফ সাইফ করবে।

সাইফের কথা শুনে সানজিদা শেখ খুক খুক করে কেশে উঠলো। চৈতী চোখ রাঙিয়ে তাকালো সাইফের দিকে।
তারপর নিঃশব্দে দ্রুত রুমে চলে আসলো।
এমন একটা কান্ড ঘটাবে তা কল্পনার বাইরে ছিলো চৈতীর।

-শফিকুল সাহেব গম্ভীর মুখ করে বললো,

-সাইফ বাবা তুমি কি অসুস্থ? জ্বরের ঘোরে উল্টা-পাল্টা বকছো?

– আমি একদম ঠিক আছি বাবা!
এই আমাকে ছুঁয়ে দেখুন না আমি একদম ফিটফাট বলে হাত বাড়িয়ে দিলো সাইফ।

-শফিকুল সাহেব, সানজিদা শেখের দিকে এক- পলক তাকালো। না চাইতেও এক বার ছুঁয়ে দিলো হাতটা।

না জ্বর তো নেই বাবা। আমরা না হয় কালকে এসব আলোচনা করবো। এখন তো অনেক রাত ঘুমানো উচিত।

-অবশ্যই বাবা! আপনি ঠিকি বলছেন আপাতত আমি গেস্ট রুমে থাকি। আমার তো আবার বিয়ের চিন্তায় ঘুম আসবে না। আপনারা বরং ঘুমান। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো সাইফ।

– তা শালিকা গেস্ট রুমটা কোন দিকে?

– ঐশী উৎফুল্ল হয়ে বললো,

-ঐ যে সামনের রুমটা দুলাভাই।
সাইফ মুচকি হেসে চলে গেলো।

শফিকুল শেখ হতাশ হয়ে বসে সাইফের যাওয়ার দিকে দৃষ্টি বুলালো।

সানজিদা শেখ করুন মুখ করে বললো,
-হ্যাঁ গো তিহানের আব্বু? ছেলেটা পাগল টাগল হয়েছে নাকি?
আহারে ভাই ও বেঁচে নেই। ভাবির কি হবে? দুইটা ছেলে তাও বড় ছেলে টাই পাগল হয়ে গেলো।
-শফিকুল সাহেব ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো তাকে।
-তোমার বাজে বকা বন্ধ করো তো সাজু? কি সব আবল-তাবল বলছো।
চলো ঘুমাই। এসব সকালে দেখা যাবে। বলতে বলতে উঠে দাঁড়ালো তিনি।

-সাইফ রুমে এসেই চৈতী কে ফোন দিলো। চৈতী যেন ফোনের অপেক্ষায়ই ছিলো। রিং হতেই রিসিভ করলো।

-তা হবু বউ বিয়ের জন্য রেডি তো?
প্রিপারেশন কেমন?
আমার কিন্তু সব প্লান শেষ। আপাতত ঘুমটাই আসছে না, তোমার চিন্তা করতে করতে।

-আপনার বাজে বকবকানি বন্ধ করুন তো? আপনার মাথায় কি প্রবলেম? কোনো কমনসেন্স আছে? এত রাতে কেউ আসে?
নির্লজ্জ লোক কোথাকার!

-আপনাকে আমি বিয়ে করবো না। এসব বিয়ের প্রপোজান ক্যান্সেল।
চৈতী দাঁতে চেপে চেপে কথা গুলো বললো।

-রাখো তোমার লাজলজ্জা তোমার কাছে। তুমি সরাসরি বিয়ের প্রপোজাল করলে, আমার তো খুশিতে ঘুম আসছিলো না। আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। তাইতো চলে আসছি।
তোমার ডাক কি করে উপেক্ষা করি বলো?
তুমি যে আমার রক্ত মিশে গেছো! এতদিন আমার মৃ’ত্যু যন্ত্রণা হতো। বুকের বাম-পাশটা খালি খালি লাগতো।
আমি তো এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম।
তোমাকে ফিরিয়ে দিবার মতো দুঃসাহস আমার নেই।

-সাইফ ইনসেন্স ফেস করে বললো।

-চৈতীর মুখটা চুপসে গেলো। দীর্ঘ-শ্বাস ফেললো।
দুজনের মাঝে নিরবতা পিনপতন নীরবতা বিধ্যমান।
নিরবতা ভেঙে সাইফ বললো,

-একটা কথা কি জানো চৈতী?

-জ্বি বলুন? কি কথা? না বললে জানবো কি করে?

“যে মানুষটা কে আপনি সত্যিকারে ভালোবাসেন, তার কাছে নিজেকে লুকিয়ে রাখা খুব কঠিন”।

আপনি মানুষটির সুখের জন্য আপনার ভালো লাগা, ভালোবাসাটুকু নিজের ভিতর আড়াল করে বাইরেরটা যতই কঠিন করে রাখুন না কেন হঠাৎ যদি কোনো দিন সেই মানুষটা আপনাকে পিছু ডাকে তবে, আপনি পিছু ফিরে তাকাবেন-ই।

কেননা আপনি যে তাকে সত্যিই ভালোবাসেন। ভালোবাসার মানুষটির সুখের জন্য সব করা যায়, নিজের আবেগও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
কিন্তু ভালোবাসার মানুষটির কন্ঠ স্বর কখনো উপেক্ষা করা যায় না!

তাই আমি ও পারিনি। কখনো সম্ভব হবে না, আপনাকে কতটা ভালোবাসি আমি আর উপর আল্লাহ ভালো জানে। আপনি যদি উপলব্ধি করতে পারতেন আমার ভালোবাসা তা হলে কিছু হলেও বুঝতেন।
-আপনি বিহীন জীবন কতটা কষ্টের।
” আপনি-ময় জীবন হাজার অনুভূতির কারণ!
– বায় দ্য ওয়ে, অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ুন। বিয়ের পরে না-হয় বাকি কথা বলবো।
আবার না ঘুমিয়ে আমার কথা চিন্তা করতে হবে না।

রাখছি বায়!
আল্লাহ হাফেজ বাটারফ্লাই!

একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ফোন কেটে দিলো সাইফ।

মানুষটা কি অদ্ভুত!
আপনাকে বুঝবার মতো শক্তি মেবি আমার নেই স্যার। তবে কথা দিচ্ছি আমি আর আপনাকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিবো না, কক্ষনো না।
কোনো কষ্ট আপনাকে ছুঁতে পারবে না।

– দুই রুমে দুইজন আশপাশ করছে। ইট পাটকেলের দেয়ালটা তাদের দুজনের ভালোবাসার হয়তো অনুভব করছে। কারো চোখে ঘুম নেই। মুখে অমায়িক হাসি। দু’চোখ ভর্তি স্বপ্ন। স্বঃস্তির নিঃশ্বাসে চোখ দুটো ভিজে গেলো চৈতীর।
এখন শুধু বাবার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা।
ভালোবাসা কেমন অদ্ভুত তাইনা?
কারো আছে স্বর্গীয় সুখ আবার কারো জীবনে হয়ে উঠে অভিশপ্ত।

___________________

সকাল সকাল গম্ভীর মুখ করে রাখছে সানজিদা শেখ। শফিকুল সাহেব ঈষৎ চিন্তিত। তবে ছেলে হিসেবে সাইফকে ভীষণ পছন্দ উনার। দুই পরিবারের বনিবনা মিললেই তবেই একটা পাকা কথা বলবেন।
সাইফের কাছে তার মেয়ে যথেষ্ট সুখে থাকবে। পাগ’লামি হলেও সাইফের চোখে মেয়ের জন্য অপরিসীম ভালোবাসা দেখেছে উনি। পুরুষ মানুষ তো অন্য পুরুষের চোখের ভাষা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। উনার বিচক্ষণ চোখ ঠিক দেখতে পেয়েছে।

-কিচেনে বসে আনমনে আটা মাখছিলেন সানজিদা শেখ। হঠাৎ কোথাথেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলো সাইফ।

আম্মু আপনি গিয়ে রেস্ট করুন আমি আপনার সব কাজ করে দিচ্ছি। উনি থম খেয়ে গেলেন। আসলে উনি সাইফের কথাই ভাবছিলেন।

আরে বাবা তোমার কিছু করতে হবে না। তুমি গিয়ে বসে থাকো। আমতা আমতা করে বললো সানজিদা শেখ।

আপনি ইমপ্রেস হতে চাচ্ছেন না তাই না? তাইতো আমাকে করতে দিচ্ছেন না। মুখ গোমড়া করে বললো- সাইফ।

– সানজিদা শেখ পড়লেন মহা বিপদে এ কেমন পা’গলের পাল্লায় পড়লেন উনি। আমতা আমতা করে বললো,

-আআসলে সে রকম কিছুনা বাবা । বাড়ির জামাইকে দিয়ে কেউ কাজ করায় বলো?
তাই তো করতে দিচ্ছি না।

– সাইফের খুশি দেখে কে। এক গাল হেঁসে বললো।
তাইলে বিয়ে ফাইনাল শাশুড়ী আম্মা! আসুন আপনাকে একটু সালাম করি। আমি কিন্তু আমার বউ না নিয়ে যাচ্ছি না।

-আপনি রাজি না হলে কিন্তু আপনাদের বাড়িতে থেকে যাবো।

সানজিদা শেখ হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। বেজায় বিপদ। এখনকার ছেলেরা এত নির্লজ্জ মুখে লাগাম নেই। নিজের ছেলে একটা পা’জি।
এখন মেয়ের জামাই ও তেমন হবে। নিজেকে সামলে নিয়ে বললো।

সালাম করতে হবে না বাবা!কারো পায়ের নিচে মাথা নত করতে নেই। একমাত্র আল্লাহর কাছে মাথা নত করবে। তুমি যাও গিয়ে বসো।

সাইফ মুচকি হেসে তারাতাড়ি বের হয়ে আসলো। মনে মনে হাসলো। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,

একটু বেশি হয়ে গেলো না সাইফ?
এখন তো তারা মনে মনে আমাকে পা’গল ভাবলো।

-এদিকে চৈতী লজ্জায় রুম থেকে বের হয়নি। ঐশী মিটমিট হাসছে সাইফের কান্ড দেখে।
কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো – আর পটাতে হবে না দুলাভাই।
তারা এমনিই রাজি হয়ে গেছে।
আপনি এখন রিলাক্স করুন ভাইয়া। হা হা!
উওরে সাইফ মুচকি হাসলো।

-সকাল দশটা হঠাৎ করে,,,,,,,

চলবে…….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! যারা পেজটি ফলো করোনি এখনো, তারা ফলো করে দিয়ো🥱 গল্প কেমন হয় বলবে কিন্তু। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here