#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#পার্টঃ_৫
#writer_sumaiya_afrin_oishi
“বাহিরে শীতল হাওয়া বইছে! নতুন রূপে সেজেছে প্রকৃতি! জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে সামনের দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছি আমি! হিমশীতল বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে শরীর! সেই সাথে মাথার চুল গুলো তালে তালে দুলছে! মনে হচ্ছে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে নৃত্য কন্যারা নৃত্য করছ!”
“আনমনে ভাবতে লাগলাম একটু আগের হয়ে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা” ঃ
ফ্লাসব্যাক- :
“দরজা হালকা খোলা তা দেখে নক না করেই ভিতর চলে গেলাম আমি। উদ্দেশ্য কফির সাথে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিবো। আমার ফেবারিট আইসক্রিম দিবার জন্য। আমি যখনই দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে যাবো, মনে হলো একটা বিকট শব্দ রুমের মধ্যে। আমি আস্তে আস্তে ভিতরে একটু ফাঁকা জায়গা দিয়ে ডুকে দেখলাম রাফিন ভাই, খালি গায়ে, পড়েন একটা ট্রাউজার, মনে হচ্ছে মাএ ই সাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। চুল দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে, উদাম শরীরে বুকের লোম গুলো ও পানিত লেপ্টে আছে। জিম করা বডি খালি গায়ে আরো সুন্দর লাগছে মানুষ টিকে! দরজা ঘেঁষে ধাম মে*রে কোমরে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে।”
“আমার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দিবে! সাথে অবাক ও হয়েছে, মনে হয় আমাকে একদম এখানে আশা করেনি। ”
“আমি একটা ঢোক গিলে মনে মনে বললাম, হায়রে খাইছেরে মনে হয় দরজার সাথে লেগে পড়ে গেছে। ইশ যদি নক করে ডুকতাম। তা যাই হোক এই ব্যাটা দরজার সামনে কি করছিলো?
এতে আমার কোন দোষ নেই , উনি যদি দরজার কাছে না থাকতো তাইলে কি পড়তো নাকি?
ঐশী তুই একদম ভয় পাবি না এই ব্যাটা কে! সব দোষ উনার। তোর এখানে কোন দোষ নেই হুহহ। সব দোষ এই মিঃ খাম্বাটার।”
“আমি গলা খাঁকারি দিয়ে, কৌতুহল দৃষ্টিতে চেয়ে, একদম না জানার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম –
“আরে রাফিন ভাই যে, কি ব্যাপার স্যাপার বুঝলাম না, আপনি এই খানে বসে আছেন কেন? রুমে এত জায়গা থাকতে এখানে ই বসতে হবে আপাকে?
আর কোমরে কি হইছে হাত দিয়ে বসে আছেন যে?
নিশ্চয়ই কোন বাজে সপ্ন দেখেছেন? তা না ঘুমিয়ে ই দিনের বেলা সপ্ন দেখেছেন? আল্লাহ্ কি সাংঘাতিক ব্যাপার বলুন তো? আপনার সাথে নিশ্চয়ই কোন ভূত আছে!”
“উনি আগের ন্যায়ই আমার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে গম্ভির কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো –
” তুমি কিছু জানো না? ওহ্ রিয়েলি! আর তুমি আমার রুমে আসছো কেন? কারো রুমে ডুকতে হলে নক করে ডুকতে হয় জানো না? দিলে তো আমার কোমরটার বারোটা বাজিয়ে। এখনো বিয়ে স্বাদি করিনাই। এখন আমার ভাঙ্গা কোমর দেখে, আমার শ্বশুর কি তার মেয়ে কে আমার হাতে তুলে দিবে? এটা কি করলে তুমি ঐশী! আমার সাথে তোমার কিসের শ’ত্রু’তা? আমি অবাক হবার ভান করে বললাম,
“আমি কি করে জানবো রাফিন ভাই? আপনি পড়ে গেলেন কি ভাবে? আমি তো এবার শিওর আপনাকে ভূতে আচার মারছে! আল্লাহ গো এই বাসায় ভূত আছে? আমি আন্টি কে এখনই একটা হুজুর ডাকতে বলবো!”
“আন্টিইইইইইই”
“উনি ফট করে উঠে আমার মুখ চেপে ধরলো।”
এই মেয়ে এই চেচাচ্ছো কেন?
“তুমি আম্মুকে ডাকো কেন? বাসার সবাই শুনলে কি ভাববে বলতো? মিনিমাম কমনসেন্স নেই মাথায়?
কি হলো কথা বলো না কেন?
এক তো দরজার সাথে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে, আবার বলো ভূতে ধরছে আমাকে! ফাজি*ল কোথাকার! মাথায় সারা দিন দুষ্ট বুদ্ধি নিয়ে ঘুর ঘুর করো?”
উমমম। উমমম।
“উনি আমার এত কাছে আসার ফলে তার শরীরের গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে এসে পড়! শরীরে কেমন যেন অন্য রকম একটা অনুভূতি হচ্ছে! ভয়ে লজ্জা মিশ্র অনুভূতি!”
“হাত সরিয়ে দিয়ে উনি দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো ওহ্ স্যরি! আচ্ছা আমার রুমে কি কাজ তোমার বলো?”
“মুখের উপর দিয়ে হাত সরানোর পড়ে আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম। মনে হচ্ছে আর একটু হলেই আমি ম*রে যেতাম!”
তারপর রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বললাম, –
“আমি মোটেও আপনার রুমে আসিনি। আমার তো খেয়ে ধে’য়ে কাজ নাই আপনার রুমি আসতেই হবে। আন্টি আপনার জন্য কফি দিয়ে বলছে আপানাকে দিতে। উনি রান্না করে, তাই আমি আসছি।”
“আর আপনার দরজাটা খোলাই ছিলো তাই নক করিনি। তার আগে আপনি বলুন দরজার সামনে আপনি কি করছিলেন?”
“উনি আমাকে চোখ মেরে বললো আমি তো তোমার অপেক্ষায় চেয়ে ছিলাম দরজার দিকে! কখন তুমি আমার জন্য কফি নিয়ে আসবে, আর দরজাটা খুলে দিব তাই দাঁড়িয়ে ছিলাম, বুঝেছো না আর বলতে হবে?”
“কিহহহহ? আপমি জানেন কি ভাবে আমি আসবো রুমে? ”
“উনি একটা টি-শার্ট পড়তে পড়তে স্বাভাবিক ভাবেই বললো – হৃদয়ের টান! আমি বুঝবোনা তো কে বুঝবে শুনি? শ্বশুরের মেয়ের খবর আমার ই তো জানতে হবে রাগীনি কন্যা!
ইডিয়েট আমি দরজা লাগাতে আসছিলাম।”
“উনার ঐ সব অদ্ভুত কথা আমার মাথার উপর দিয়ে গেলো! আমি আহম্মকের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি!”
“উনি বুকে হাত দিয়ে বললো -ও ভাবে চেয়ে থেকে না মেয়ে, বুকে লাগে!”
“আমাকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি খিলখিল করে হাসতে থাকে! ইসস কি ভুবন ভুলানো হাসি! হাসলে মানুষটাকে কি সুন্দর লাগে ! বাম গালে ছোট্ট একটা টোল পড়ে! তাতে হাসিটা আরো আকর্ষণীয়! এত সুন্দর হাসি শ্যামসুন্দর পুরুষটির। উনার ভালোবাসা মানুষটি কি লাকী! প্রতিদিন এই হাসিটা দেখবে।”
“আনমনে বলে উঠলাম -সুন্দর শ্যামসুন্দর পুরুষ!”
“উনি হঠাৎ হাসি থামিয়ে দিয়ে বললো- কি সুন্দর?”
” উনার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে, আমি আমতা আমতা করে বললাম –
“আ-আসলে আ- আমি না মানে আপনাকে হাসলে সুন্দর লাগে রাফিন ভাই! তাই বলছিলাম।”
“উনি কতক্ষন আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো-
আমি তো তোমার মতো অত সুন্দর না তাও আমাকে সুন্দর বলছো? কালো মানুষ তো তাই শান্তনা দিলো সুন্দরীরা! সুন্দরীর প্রশংসা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হলো!”
“বাবাহ ঐশী! তুমি সুযোগ পেলেই তো- কাজে লাগিয়ে দিলে তাই না?”
“আমি রাগ দেখিয়ে বললাম- আমি মোটেও মিথ্যে বলিনি। আর আপনি মোটে ও কালো নন। আপনি শ্যামলা শ্যামসুন্দর পুরুষ! আর আপনি নিজেও জানেন না, আপনাকে হাসলে কত কিউট লাগে। এমনিতেই আপনি কিউট আছেন। হাসলে আর কিউরেটর ডিব্বা লাগে। ইস কি গুলুমুলু আলু,হাসি! তাইতো মেয়েরা ক্রাশ খাচ্ছে আপনাকে দেখে!”
“ওহ আচ্ছা তাই বুঝি! তা তুমি ক্র,,,,,,,,,
“আমি আর উনাকে কথা বলতে না দিয়ে, হাতের কাফির মগটা দিয়ে বললাম- নিন আপনার কফি, আমি এখন যাই।”
ইশশশশ!
একটু বেশিই বলে ফেললাম।
আমারে আর পায় কে দিলাম এক ভোঁ দৌড়।
“উনি পিছন থেকে ডেকে বললো – আরে ঐশী এটা কফি দিলে না ঠান্ডা শরবত। আর একটা দিয়ে যাও না!”
“আমি ও জোরে বললাম আমি আর দিতে পারবো না নিয়ে নিন।
“তার পরে উনি আর কি বললো জানিনা। আমি মিতুর রুমে আসলাম।”
“রাফিন বিড় বিড় করে বললো – আমার এই আমিটার দায়িত্ব ও তো তোমাকে নিতে হবে মায়াবীনি! তোমার চোখের মায়ায় ডুবেছি সেই কিশোর বয়সে! শিউলি ফুলের গাছের নিচে, খালি পায়ে হাঁটা! খিলখিল হাসি, আমার কানে আজও বাজে! তোমার হাতে ঠান্ডা কফি তো আমি খাবোই। এতে যে মিশে আছে তোমার হাতের ছোয়া! এ কফি আমার কাছে অমৃত! বলতে বলতে চলে গেলো বারান্দায়।”
______________________
❤️ “হঠাৎ মুঠো ফোনের যান্ত্রিক আওয়াজে ভাবনা থেকে ফিরে আসলাম আমি। হ্যাঁ আপু ফোন করেছে। আপুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে , চুপচাপ মিতুর পাশে সুয়ে পড়লাম আমি।”
“সকাল ১০টায় নাস্তা করে, সবার থেকে বিদায় নিয়ে, বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম আমরা গ্যাঞ্জাম পার্টির সবাই, কোন গ্যাঞ্জাম ছাড়াই।
গাড়ির জন্য ওয়েট করছিলাম রাস্তার পাশে।
হঠাৎ পিছন থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেলাম।”
“এখন রিক্সা পাবে না। বাইকে উঠে পড়, আমি পৌঁছে দেই তোমাকে?
হ্যাঁ আর কেউ না রাফিন ভাই।
“আমি উনার দিকে চেয়ে দেখলাম উনি একদম হিরো সেজে বসে আছে। পড়েন নীল কালার জিন্স, কালো শার্ট, চোখে সানগ্লাস, চুল গুলো জেল দিয়ে পিছনে রাখা, কিছু চুল কপালে পড়ে আছে। ইশশ কি কিউট! এত সেজেগুজে আসার কি দরকার তোর ব্যাটা। মেয়েদের ইমপ্রেস করার ধান্দা সব!”
“আমি যাবো না রাফিন ভাই। রিক্সা এসে যাবে। আপনি বরং আপনার কাজে যান।”
“উনি মৃদু ধমক দিয়ে বললো – তোমার থেকে আমি অনুমতি নিচ্ছি না, অর্ডার করছি তোমাকে! উঠতে বলছি তুমি উঠবে, তাড়াতাড়ি করো।”
“কন্ঠে কেমন যেন অধিকার বোধ। কেন জানি খুব ভালো লাগলো কথাটা। তাই আর ফেলতে পারলাম না, বিনা বাক্যে উঠে পড়লাম।”
“উনি আর একটা কথা ও না বলে বাইক স্টাট দিলো।”
“আরে আরে এত জোরে কেউ বাইক চালায়। রাফিন ভাই এক্সিডে*ন্ট হয়ে যাবে কিন্তু। আমি এখনো বিয়ে সাদি করি নাই। আমি যদি বাইক দিয়ে পড়ে যাই, একদম ম*রে যাবো! তারপর আমার জামাই বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবে। আরে আমার বুঝি আর বাচ্চা কাচ্চা, নাত নাতনির মুখ দেখা হবে না। কোথায় ভাবলাম ফুটবল টিম বানাবো! ২০৫০ সালের সালের ফুটবল বিশ্ব কাপের খেলা আমার বাচ্চারা খেলবে!”
বিশ্ব কা,,,,
“আমি আর বলতে পারলাম না উনি দিল এক ধমক।” রাগী গলায় বললো,,,,,,,,,,,,,
#চলবে……..
[বিঃ দ্রঃ কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]
(কেমন হয়েছে অবশ্যই মতামত জানাবেন। দয়া করে পেজটি ফলো করে দিবেন!