ভলোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ৮

0
167

#ভলোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ৮

🌸 মেসেজের টুংটাং শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ঐশীর। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুমঘুম চোখে ফোন হাতে নিয়ে কপাল কুঁচকে ফেললো ঐশী।
আবার সেই অপরিচিত লোকটির মেসেজ।

❤️
“প্রিয় মায়াবিনী ”

“আজ খুব কুয়াশা তাইনা! এই শীতল হাওয়ায় কি ইচ্ছে হচ্ছে জানো? তোমার প্রতি ইচ্ছে যে অগণিত আমার। সব ইচ্ছে বলতে নেই, তাই আমি ও বলবো না। কারণ, আমার মায়াবিনী লজ্জা পাবে যে! বরং কিছু ইচ্ছেরা একান্তই আমার হোক। আমি না হয় কল্পনায় সে ইচ্ছেদের তোমায় জানিয়ে , তোমার লজ্জা রাঙা কোমল মুখ খানি ছুঁয়ে দিবো! একটা কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে শুভেচ্ছা মায়াবিনী”
খুব শিগ্রই আমাদের দেখা হবে রঙ্গনা। আমার এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলছে।

“ইতি অচেনা অতিথি ”

এ আর নতুন কি প্রতিদিন’ই কয়েকবার আসে এই অচেনা অতিথির মেসেজ। আগে নাম্বার ব্লোক করতো, সিম চেন্জ করেছে, কেন জানি পেয়ে যায় নাম্বার এই মানুষ’টা। তাই এখন আর এসব নিয়ে ঘাটে না। আগে বিরক্ত হলে ও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। যাক বাবা দেখা দিবে তাইলে। এ-ই লোকটা দেখার যে খুব কৌতুহল তার। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলছে।
কিছু একটা ভেবে কেন জানি একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে ঐশী ।
মনে মনে ধন্যবাদ দিলো অচেনা অতিথি কে। কেননা, আজকে কলেজে যেতে হবে। ঘুম না ভাঙলে লেট হতো যেতে। অনেক দিন ছুটি থাকার ফলে যাও হয়না। আজ থেকে আবার আগের জীবন। কলেজ কোচিং, বন্ধু মহলের সাথে আড্ডা, একসাথে ফুসকা খাও ভাবতেই ভালো লাগে ঐশীর। ঈদ ঈদ ফিলিংস হচ্ছে মনে।

🌸 রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছে মিতু, আর তার পাশেই ঐশী। মিতুকে চুপচাপ থাকতে দেখে, আগবাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

“কিরে এমন চুপচাপ থাকবি? কথা বলছিস না যে? তোর কি মন খারাপ?”

“না রে কিছু ভালো লাগছে না! এমনি কিছু হয়নি। আপু চলে গেছে তো তাই খারাপ লাগছে! মন খারাপ করে বললো মিতু।”

“কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেছে কলেজ ক্যামপাসে। গ্যাঞ্জাম পার্টির চার সদস্য আগেই হাজির। তারা মাঠের মধ্যে বসে নিজেদের কথায় মগ্ন। মিতু, ঐশী পৌঁছাতেই ফেরেন্ডদের মাঝে আনন্দের ধুম পড়ে গেছে। সবাই অনেক দিন পড়ে একাএিত হয়ে ভিষণ খুশি। এই আনন্দের ফলে ক্লাস করার কথা বেমালুম ভুলেই গেছে সকলে। মুহূর্তেই হৈচৈ পড়ে গেছে। ছোট খাটো একটা জটলা পাকিয়ে ফেলছে সকলে। দূর থেকে কেউ দেখলে মনে করবে ঝগড়া লেগেছে বোধ হয়। অথচ তারা লাফালাফি, ঝাঁপাঝাপি, করে নিজেদের খুশি উদযাপন করছে।”

“এরি মধ্যে আলিফ মিতুর দিকে চেয়ে তার বিখ্যাত ডায়লোগ শুরু করে দিয়েছে –
“মিতু পড়েছে আসিয়া, আজকের দিন চলিবে হাসিয়া হাসিয়া”।

“তুই আবার কান্না করে দিন পাড় করলি কবে? রিয়া বিস্মিত হয়ে বললো।”

“আমি কান্না করবো কেন রে। যার জীবনে চারটা গার্লফেরেন্ড আছে সে কান্না করবে কোন দুঃখে। আমিতো মিতুকে ইমপ্রেস করতে চাচ্ছি”! বলে চোখ টিপলো আলিফ

রিয়া ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বললো, কিহহহ সত্যি?

আরে ইয়ার কুল কুল, মজা করছি।

“হ আমি মনে হয় সিরিয়াস বলছি, তোর মতো বা*দাইমা মিতু কে ইমপ্রেস করবি, আর ও পটে যাবে। মুখ বাঁকিয়ে বললো রিয়া।”

জান্নাত ওদের ধমক দিয়ে থামালো। এদিকে ঐশী মাঠের মধ্যে সুয়ে পড়লো। তা দেখে সবাই ওর পাশে বসে আড্ডা দিতে ব্যস্ত।

“রবিন গিয়ে ঐশীর পাশ ঘেঁষে ফিসফিস করে বললো –

“এখন যদি তোর দুই হাতে দুইটা ভাঙা থালা থাকতো বুঝলি, একদম ভরপুর ইনকাম হতো। তা দিয়ে আজকে আমাদের ফুসকা খাও হয়ে যেতো”।

ঐশীর প্রথম দিকে একটু সময় লাগলো বুঝতে। আসলে রবিন কোন ইঙ্গিত দিয়েছে। বুঝে উঠতেই রবিন উঠে দৌঁড় লাগালো । ঐশী তবু ও হাল ছাড়েনি। সে ও পিছনে পিছনে ছুটছে। পুরো কলেজ মাতিয়ে তুলছে এই সদস্যগুলো। এদের সাথে থেকে মিতুর এতক্ষণের মন খারাপ হাওয়ায় মিলে গেলো। আর যাই হোক গ্যাঞ্জাম পার্টির সাথে থাকলে মন খারাপ, ডিপ্রেশনের ছিটে ফোঁটাও থাকবে না কারো। একটুকরো স্বর্গীয় সুখ যেন বন্ধুদের মাঝে।”

“সারাদিন হাসি আনন্দ, খাওয়া ধাওয়া করে কলেজর সময় শেষ হয়ে গেছে। আজ ক্লাস না করলে ও কোচিং করলো সবাই। কোচিং করে বিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছে যার যার নিজ ভবনে।”

______________________

হঠাৎ করে রাস্তার বিপরীত সাইডে চোখ আটকে গেলো ঐশীর। কেন যেন বুকের বাঁ পাশটা মোচড় দিয়ে উঠলো, বুকের ভিতরে চিন চিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। হয়তে এখনই জল গড়িয়ে পড়বে। তার রাফিন ভাই একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়ে টা মুখ ফুলিয়ে আছে। হয়তো অভিমান করেছে তার প্রেয়সী, তার অভিমান ভাঙতে ব্যস্ত সে। হয়তো এই তার ভালোবাসার মানুষ টি। এমনটা ই তো হওয়ার কথা ছিলো? তা হলে আমার কেন খারাপ লাগে। এ কোন অনুভূতি! তাহলে কি আমি ভালোবাসি রাফিন ভাই কে? হয়তো এটাই একতরফা ভালোবাসা, তা হলে তো কষ্ট পেতেই হবে। এ কি নিদারুণ ব্যথা যা ছেয়ে গেছে তার হৃদয়ে। এসব ভাবতে ভাবতে পা বাড়ালো সামনের দিকে। না এ দৃশ্য সহ্য করার মতো না! তা হলে যে আমি এখানেই শ্বাঃস আটকে ম*রে যাবো!”

“এরি মধ্যে পিছন থেকে নিজের নাম শুনতে পেলো ঐশী। সেই চির চেনা কন্ঠটি কানে বাজলো। পা জোড়া হঠাৎ ই থেমে গেলে।
হ্যাঁ তার রাফিন ভাই ই ডাকছে। কেন কাটা গায়ে লবণের ছিঁটা দিতে? হয়তো তার প্রেয়সীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে?
এসব চিন্তায় যখন মগ্ন তখন’ই ঘাড়ে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো সে! পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতো পেলো হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাফিন।

“কি ব্যাপার তোমাকে ডাকলাম যে শুনতে পাওনি? কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন করলো রাফিন।”

“ন- না আ,আসলে আমি শুনতে পায়নি, আআপনি এখানে কেন? আমতা আমতা করে বললো ঐশী। ”

“তুমি তুতলাচ্ছো যে কি হয়েছে? তোমাকে এত নারবাজ লাগছে কেন? শরীর খারাপ লাগছে তোমার? ব্যস্ত হয়ে বললো রাফিন।”

“মনের ব্যাথা যে বড় ব্যথা এই ব্যথার অসুখ যে একমাত্র আপনি রাফিন ভাই। আপনি কি বুঝেন না আপনাকে কোন মেয়ের সাথে আমি সহ্য করতে পারি না! আমার বুকে বড্ড ব্যথা অনুভব হয় রাফিন ভাই! আমার কিশোরী মন যে ধুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যায়, আমি যে আপনার ভালোবাসা নামক অসুখে ভুগছি! দিন দিন এই অসুখে আক্রন্তত হচ্ছে এই কিশোরীর মন! সেই খেয়াল কি আপনি রাখেন রাফিন ভাই?
মনে মনে বললো ঐশী।”

“নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে মুখে বললো- না আমি ঠিক আছি। আইএম অলওয়েজ ফাইন। তা এই সময় আপনি এখানে?”

“আমি তোমাকে নিতে আসলাম, দেখতে ইচ্ছে হলো তাই। সোজা সাপটা জবাব দিলো রাফিন।”

ঐশী বিস্মমিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
মানে?

“না আসলে মানে ঐ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম তো, এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে যাই। ঘুরিয়ে পেঁ’চিয়ে বললো রাফিন।

“বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন না আপনার সেই প্রেয়সীর সাথে? দেখলাম ই তো একটু আগে, ঐ কি সেই মেয়ে? যাক সুন্দর মানিয়েছে দুজন কে। মুখ কালো করে বললো ঐশী।”

“রাফিন ঐশীর কথা শুনে হো হো করে হাসতে লাগলো। মনে হয় কেউ কোন জোক্স শুনিয়েছে ওকে।”

“কি ব্যাপার আপনি এমন বিচ্ছিরী ভাবে হাসছেন কেন? কপাট রাগ দেখিয়ে বললো ঐশী।”

“কোনো মতে হাসি থামিয়ে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার মায়াবিনীর দিকে, আনমনে বললো কি বিচ্ছু মেয়েরে বাবা, নিজের জামাই কে অন্য মেয়ের পাশে নাকি বেশ মানিয়েছে বলে। কোথায় অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে থাকবে তা না। নিজেই জামাই কে দিয়ে দিচ্ছে অন্যর কাছে।”

কি হলো চুপ করে আছেন যে?

“হুস আসলো ঐশীর কথায় -শুকনো একটা ঢোক গিললো, অদ্ভুত দৃষ্টি রেখে রাফিন বললো, তুমি কি জেলাস ঐশী? তোমার চোখ মুখের এই অবস্থা কেন? বাব্বাহ্ এইটুকো মেয়ে এত জেলাসি। বাই এনি চান্স তুমি আমার জন্য কাঁন্নাকাটি করোনি তো? আমার কিউরিয়াস মাইন্ড একটা জিনিস জানতে চায়। এইটুকু মানুষ এত জেলাসি কি করে হয় ঐশী?
আচ্ছা ভিতরে ভিতরে এত না জ্বলে আমাকে ডিরেক্ট বললেই তো পাড়, “আই লাভ ইউ”! আমি তো তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না। আমি আবার বাচ্চা মানুষকে কষ্ট দেইনা। বাচ্চাদের মনে কষ্ট দিতে নেই। ওরা তো ফেরেশতার মতো।
বলেই শয়তানি হাসি দিলো রাফিন ভাই।

চলবে………..

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]

প্রিয় পাঠক মহল পেজে ফলো দিয়ো প্লিজ। আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবে? গঠন মূলক মন্তব্য আশা করি ❤️🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here