#ভলোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ১২
বায়! বলে ছেলেটা আর এক মুহূর্ত দেরী করলো না। হনহন করে চলে গেলো। ঐশী ছেলেটার যাওয়ার দিকে বোকার মতো চেয়ে রইলো, কি হচ্ছে সবটা যেন ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।
এতকিছু না ভেবে নোটটা ব্যাগে ভরে নিতে যাবে, তখনই নোটের ভিতর থেকে একটা চিরকুট পরলো নিচে। চিরকুটটা হাতে নিয়ে দেখলো কিছু লেখা আছে। –
“প্রিয়-ঐশী”
“তুমি আসলেই একরাশ মায়ার অধিকারিণী”! তোমার ঝলমলো হাসিটা আমার দেখা সেরা সৌন্দর্য! জানিনা তোমাকে কেন এতটা ভালো লাগে? তোমার খিলখিল হাসি, মায়াভরা চোখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি। বলতে পারো প্রথম দেখাতেই ক্রাশ! নিজের এসব অনুভূতি নিয়ে আমি নিজেই কনফিউজ। তবে কথাগুলো তোমাকে না জানিয়ে পারলাম না!
~”আলভি”
ঐশী প্রচুর বিরক্ত হলো লেখাটা পড়ে। আবার কষ্ট ও হচ্ছে। এই মুহূর্তে রাফিনকে তার খুব মনে পড়ছে। সাথে সাথে বুকটা হুহু করে কেঁদে উঠলো। মানুষটার সাথে কত দিন কথা হয়না। দেখতে ও পায়না। কত দিন দেখা হয়নি সেই হাসি মুখটা। ঐ হাসি মুখটা, শ্যামসুন্দর পুরুষটি কে দেখার তৃষ্ণা যে বড্ড বেশি।
“তার কি আর সময় আছে আমার জন্য।
সে-তো তার জীবন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। আমাকে কেন সময় দিবে? তার সবটা জুড়ে তো অন্য কেউ।
এসব ভাবতে ভাবতেই অবাধ্য চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।
সাথে সাথে মুছে ফেললো কেউ দেখার আগে।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আর কাঁদবে না। মোটেও কাঁদবে না ঐ লোকটার জন্য।
কেন সে কাঁদবে? যে মানুষটার পুরো টা জুড়ে অন্য কারো বসবাস। সেখানে তো আমার কান্না বেমানান।
মুখে এসব বললেও, মন কি আর এইসব কথা মানে।
অবাধ্য মন তো নিজের খেয়ে অন্যের জন্য কাঁদে। ”
“আসলেই মানুষ খুবই অদ্ভুত! আমাদের যারা গুরুত্ব দেয়, ভালোবাসে তাদেরকে আমরা গুরুত্ব দেইনা। আমরা তাদের কে গুরুত্ব দেই , সবটা দিয়ে ভালোবাসতে চাই, নিষিদ্ধ মানুষকে। ঐশীর কাছে এই মুহূর্তে এমনটাই মনে হয়।
সে-তো তার রাফিন ভাই কে ভালোবাসে কই সে তো তাকে ইগনোর করে, হয়তো তার কখনো মনেও পরেনা আমার কথা।”
“নিজের ভাবনায় এতটা মগ্ন, সামনে যে এক জোড়া চোখ তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি ণিক্ষেপ করে আছে, সেইদিকে কোন হুস নেই এই অবুঝ কিশোরীর!
সেতো আপন ভাবনায় বিভোর।”
“এরি মধ্যে একটা বাইক এসে ঐশী কে পিছন থেকে ধা”ক্কা দিলো। আকষ্মিক এমন ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার পাশে পড়ে গেলো। পায়ে চোট লেগেছে, মৃদু চিৎকার করে পিছনে ঘুরেতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।”
বেমালুম ভুলে গেছে পায়ের ব্যথার কথা। এই সময় এই জায়গায় এই মানুষটাকে মোটেও আশা করেনি ঐশী।
নিজের স্বপ্ন, বা দেখার ভুল ভেবে, বলে উঠলো –
“আপনি কি আমার দিনের বেলায় ও স্বপ্নে আসবেন রাফিন ভাই?”আমি আপনাকে যত ভুলতে চাই ততো বেশিই আপনাকে মনে পরে রাফিন ভাই। আমার কিশোরী মনে যে উথাল পাথাল ঢেউ বয়ে যায় প্রতিনিয়ত আপনাকে ভেবে। আপনার তো কিছু আসে যায় না তাতে। আপনি জানেন কি?
আমি প্রতি মুহূর্তে আপনার ভালোবাসা নামক প্রিয় অসুখে ভুগছি! দিন দিন যে আমি আপনাতে ই আাক্রান্ত হচ্ছি। এই যে দেখুন দিনের বেলা ও আপনাকে স্বপ্নে দেখি। আপনার অস্হিত্ব আমার চারপাশে অনুভব করি!
শুধু আপনাকে বুঝাতে পরবো না আমি। আর না আপনি কখনো বুঝতে চাইছেন?”
“এত আবেগমাখা মোহনীয় কন্ঠ শুনে কি আর রাগ করে থাকতে পারে প্রেমিক পুরুষটি?
হয়তো অন্য কেউ পারে। কিন্তু রাফিন পারেনি।
তার সব রাগ হাওয়ায় উড়ে গেছে, তার প্রেয়সীর কন্ঠ শুনে। তার মায়াবী মুখ টা দেখে।
ঘোরলাগা দৃষ্টিতে অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো।
এই মুখটার মধ্যেই বোধহয় সমস্ত মায়া আল্লাহ নিজ হাতে দিয়ে দিয়েছে।
এইমুখটা দেখার জন্য ই তো পরিক্ষা শেষ হতেই ছুটে চলে আসছে।
সমস্ত ক্লান্তি শেষ হয়ে গেছে মুহূর্তেই। এই মেয়েটাই যে তার মানসিক শান্তি! তা হারে হারে টের পেয়েছে রাফিন।”
“যখন ঐশী আলভির সাথে কথা বলছিলো, ঠিক তখনই রাফিন ঢাকা থেকে আসছে।
তার মায়াবিনীর মুখটা দেখার জন্যই ছুটে আসছে ঢাকা থেকে বরিশাল।
বাড়িতে ও যায়নি তার মায়াবিনী কে আগে দেখবে বলে।
একটু চোখের পিপাসা মিটাবে বলেই তো এত কষ্ট করে বাইক চালিয়ে এত দূরে আসা।”
“রাফিন জানে এখন ঐশী কে কোচিং এ পাবে। তাইতো সবার আগে এখানেই আসছে।
যখনই বাইক থামিয়ে কোচিং এর কাছে আসছে তক্ষণই চোখ দুটো আটকে গেলো সামনে দৃশ্যটা দেখে।
বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো।
না চাইতে ও বুকের বাঁ পাশে চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে!
তার মায়াবিনী অন্য কারো সাথে কথা বলে?
ভাবতেই রাগ হচ্ছে খুব। কোনো প্রেমিক পুরুষ ই তো চায়না তার প্রেয়সী অন্য কারো সাথে কথা বলুক।
না চাইতেও হাজার চিন্তা মাথা চাপা দিলো।
যদিও জানে তার মায়াবিনী শুধু মাএ তার। তবুও প্রেমিক মন অল্পতেই রাজ্যের ভাবনা এসে যায়।
শুধু মাএ তাকে হারানোর ভয় হয়।
রাগ, অভিমান, কষ্ট মিশ্র অনুভূতি হলো রাফিনের।
তাইতো এতক্ষণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।
যখন দেখলো তার মায়াবিনী রাজ্যের ভাবনায় মগ্ন, আশপাশের খেয়ালই নেই, কোন এক চিরকুট পড়ে কান্না করে, তখন ই রাগটা তীর তীর করে ভেরে গেলো। তাইতো বাইক দিয়ে ধা’ক্কা দিলো।
যক্ষই তার মায়াবিনীর মুখে তার জন্য ভালোবাসার কথা শুনলো। তার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখলো।
শুনতে পেলো প্রিয় মানুষটার আক্ষেপ!
একরাশ মুগ্ধতা এনে দিলো মনে।
এতক্ষণের সব রাগ, অভিমান এই একটু কথায় যেন শেষ হয়ে গেলো।”
সমস্ত শান্তি যেন এই মেয়েটা। তার কিশোর বয়সের ভালোবাসা।
যে বয়সে হাজার মেয়েকে ইমপ্রেস করার কথা।
সেই বয়সে এই মেয়েটাতেই আঁটকে গেলো চোখ!
মানসিক শান্তির জন্য টাকা পয়সা, বাড়ি-গাড়ির প্রয়োজন হয়না। দিনশেষে নিদিষ্ট একটা ভালোবাসার মানুষ থাকলেই, তাতেই মানসিক শান্তি মিলে। যে মানুষটা একান্তই নিজের! ”
“মনে মনে বললো, আর কষ্ট দেওয়া যাবে না – খুব শিগ্রই আমি আমার মনের কথা বলে দিবো মায়াবী পরী! আমার এত দিনের জমানো সমস্ত অনুভূতি যে শুধু তোমাকে নিয়ে।”
“কে বলছে আমি বুঝতে পারবো না? স্বাভাবিক ভাবেই বললো রাফিন।”
“হঠাৎ এমন কথায় ঘাবড়ে যায় ঐশী। চমকে গিয়ে আশেপাশে তাকালো। বুঝার চেষ্টা করছে এটা সত্যি না তার কোন ভুল।”
ঐশী কে এমন অস্হির হতে দেখে হালকা করে কাঁধে হাত রাখলো রাফিন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো –
“আমি তোমার কোন স্বপ্ন বা কল্পনাতে আসিনি।
দেখ আমি বাস্তবে তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।”
“ঐশী বুঝতে পারলো এটা সত্যিই তার রাফিন ভাই দাঁড়িয়ে আছে।।
হঠাৎ একরাশ লজ্জা এসে ভিড় জমালো তার মুখশ্রিতে। একটু আগের কথা ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো ঐশী।”
“ছিঃ! রাফিন ভাই কি ভাবলো। আমি সারাদিন তার কথা ভাবি। এখন মুখদেখানোই তো দায়।
মনে হয় এখনই মাটির ভিতরে ঢুকে যাই।
এই লোকটা এখানে কেন?
দেখেতো মনে হচ্ছে মাএই আসছে ঢাকা থেকে।
কাঁধে ব্যাগ, মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ক্লান্ত।” কথা ঘুরাতে ঐশী বলে উঠলো –
“আপনি কখন আসলেন রাফিন ভাই? আপনি কি চোখে দেখেন না?
আমাকে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন যে?
এত বড় রোডেও আপনার জায়গা হয়না বুঝি?
চোখ কি আলমারিতে রেখে আসছেন?
‘উনার কোন ভাবান্তর নেই। মনে হচ্ছে কোন কথাই কানে যাচ্ছে না।
আমি আবার বলে উঠলাম – রাফিন ভাইইই
কি দেখছেন?
তোমাকে! উনার সোজাসাপটা উত্তর।
“স্যরি! কিছু বললেন?”
উনি চমকে উঠলো। আমতা আমতা করে বললো,
না মানে! মাএ’ই আসলাম। তোমাকে এখানে দেখেই বাইক থামালাম। না আসলে তো দেখতাম’ই না, কারো লাভ লেটার রাস্তায় বসে পড়ে, চোখের জল নাকের জল এক করে কান্না করতে পারে কেউ। শেষের কথা গুলো ব্যাঙ্গকরে বললো রাফিন ।”
“দেখুন আমি মোটেও কান্না করিনি। আমার মাথা ব্যথা করে তাই চোখ দিয়ে পানি পরছে । ইনিয়ে বিনিয়ে বললো ঐশী।
“আর একমিনিট আপনি তাইলে এতক্ষণ এখানেই ছিলেন? লুকিয়ে লুকিয়ে মানুষের লাভ লেটার দেখেন?
তাতে আপনার কি ? আমি আলভির সাথেই প্রেম করবো। আমার বয়- ফ্রেন্ড বুঝলেন!”
“সুন্দর তাইনা!” বলে শয়তানি হাসি দিলো ঐশী।
“উনি হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললো- ঐশী আমি এখন অনেক টায়ার্ড। মাএ’ই আসছি ঢাকা থেকে। বাসায়ও যাইনি। আমার রেস্ট প্রয়োজন। বাসায় যাবো আমি এখনই। তোমার ননস্টপ বকবক বন্ধ করে বাইকে উঠো?”
“আমি আপনার সাথে যাবো না। মিতু আসলে দুজন একসাথে যাবো।”
আপনি যান আপনাকে কে না করছ? নিশ্চয়ই আগে আপনার গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে আসছেন।
এজন্যই তো বাসায় না গিয়ে এখানে আগে আসছেন। বলে মুখ বাঁকালো ঐশী।”
“তোমাকে আমি যা বলছি তাই করো ঐশী?
আমাকে রাগিয়ো না। তাহলে কিন্তু তোমার অবস্থা খারাপ হবে বলে দিলাম। আর মিতু বাসায় গেছে আমি যেতে বলছি।উনি দাঁতে দাঁতে চেপে কথা গুলো বললো।”
“আজব লোক রেগে গিয়ে বলে রাগীয়ো না। আমি আর কথা না বাড়িয়ে উঠে বসলাম উনার পিছনে। একে রাগিয়ে লাভ নেই। এমনিতেই খুব ক্লান্ত লোকটা।”
__________________
🌸 উনি আমাকে নামিয়ে দিলো গেটের সামনে।বাইকে বসে একটা কথা ও বলেনি। আমি আর কিছু না বলেই ভিতরে যাবার জন্য পা- বাড়ালাম। উনি পিছন থেকে জড়ানো কন্ঠে বললো-
“”সবারই নিজের ও নিজেস্ব একান্ত ও ব্যক্তিগত কিছু সম্পদ থাকে ঐশী! সেই সম্পদের প্রায়োরেটি নিজের জীবনের থেকে ও বেশি হয়। আর সেটাকে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখার মধ্যেই থাকে সবথেকে বেশি প্রশান্তি ও স্বার্থকতা।”
কথা গুলো বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না রাফিন।
ঐশী অপলক নয়নে চেয়ে রইলো রাফিনের যাবার পানে।
এই লোকটা বড়ই অদ্ভুত।
একটা লোকের মাঝে এত গুলো রুপ আসে কি ভাবে?
কখনো কোমল কখনো রাগী,
সেকেন্ডে সেকেন্ডে রূপ বদলায়। আর উনি কি বললো ও গুলো।
“ব্যক্তিগত সম্পদ! ”
রাফিনের এসব কথা মাথার উপর দিয়ে গেলো ঐশীর।
সে আর ভাবলো না। চলে গেলো ভিতরে।
চলবে……..
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ!]
(রিচেক দেইনা লিখে। ভুল ক্রটি হলে ক্ষমা করে দিবেন।
আর কেমন হয়েছে অবশ্যই মতামত জানাবেন।)