ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ২০

0
159

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ২০

আজ সকাল সকাল বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো ঐশী ও মিতু। যেহেতু কয়েকদিন পড়ে ফাইনাল এক্সাম তাই ক্লাস হচ্ছে না এখন, তবে কোচিং হয়। কোচিং ক্লাস শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি। বন্ধু মহল সবাই মিলে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

যাই বলিস না কেন দোস্ত রাফিন ভাই কিন্তু বেশ রোমান্টিক!
আমিতো শিহরিত!
বাব্বাহ্ একদম সিনেমার নায়কদের মতো কত সুন্দর করে প্রপোস করলো।
ঐশী কে উদ্দেশ্য করে রিয়া বললো। সাথে তার ভুবন বুলানো হাসি। এই মেয়েটা সারাক্ষণ মজা নিবে। বন্ধু মহলের ননস্টপ বকবকানিতে এই ব্যক্তিই সেরা।

-মিতু ভাব নিয়ে বললো দেখতে হবে না ভাইটা কার।

এদের কথা শুনে ঐশী লাজুক হাসলো শুধু, কিছু বললো না।

ইসশশশশ বোনু তুই জিতছো! এমন সুন্দর মনের একটা মানুষ পেলি। এত এত ফেইক মানুষদের মধ্যে এমন উদার মনের মানুষ ক’জন হতে পারে। এত যত্ন ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে সবাই পারে না। এই মানুষটা কে অবহেলা করিস না কখনো। নিজ দায়িত্বে আগলে রাখিস সারাজীবন। দেখিস তুই হবি সবথেকে ভাগ্যবতী মেয়ে।
ঐশী রে মাঝে মাঝে তোর প্রতি আমার হিংসা হয়! আহ্ আমার ক্রাশ এখন দুলাভাই।
রিয়া মুখটা দুঃখী দুঃখী করে বললো শেষ কথাটা।

তোর লজ্জা লাগা দরকার আমাদের হবু দুলাভাই এর দিকে নজর দিস! আমি সিঙ্গেল আছি, তুই চাইলে আমার দিকে নজর দিতে পারিস। আমি মাইন্ড করবো না মোটেও। শেওড়া গাছের পেত’নী দেখে আবার অন্য মানুষ ভয় টয় পেয়ে হা’র্ট অ্যা’টাক হয়ে যাবে। আমরা তো দেখি, তাই অভ্যাস হয়ে গেছে। অতটা ভয় পাবো না।
দুষ্টমির স্বরে ওদের কথার মধ্যে রবিন বললো।

কথা বলতে যতটুকু দেরী রবিনে পিঠে ধুপধাপ কি’ল পড়তে মোটেও দেরী হলো না। রিয়া চেচিয়ে বললো-

নিজেকে কখনো আয়নায় দেখছিস বাঁ’দর!
আমার মতো এওতো কিউট ইনসেন্ট মেয়েকে তুই পে’ত্নি বলিস?
জানিস আমি যার দিকে একবার তাকাই সে আমার প্রেমে পড়ে যায়।
রিয়ার কথা শুনে বন্ধু মহলে হাসির ধুম পড়ে গেলো। শুধু আলিফের এই দিকে কোন হেলদোল নেই। বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছে মিতুর দিকে। বিষয়টি চোখ এড়ালো না ঐশীর।
রবিন উচ্চ স্বরে হেঁসে বললো –

হিরো আলমতো আমাদের রিয়ার বিগ ফ্যান! কি বলিস ঐশী ?
জান্নাত এদের মধ্যে ফোঁড়ন কেটে আফসোস হবার বান করে বললো –

রবীন্দ্রনাথ বেঁচারা মা’রা গেলো! ইসশশ আজ যদি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতো, তারা যত নোবেল ছিলো সে গুলো রিয়ার দিকে ছুঁড়ে মা’র’তো!

জান্নাতের কথা শুনে আরো একদফা অট্টহাসিতে মুখরিত পরিবেশ। এদিকে রিয়া দাঁত কট মট করে তাকানো আগেই জান্নাত উঠে দৌড়ে ক্লাসের মধ্যে ঢুকে পড়লো। বাকি সবাই ও জান্নাতের পিছনে পিছনে ছুটছে, শুধু আলিফ মাঠের মধ্যে চুপচাপ বসে আছে।
ক্লাস রুমে এখনো কেউ আসেনি। ফের আবার সবাই আলিফের কাছে এসে বসলো।
সবাই এবার চুপচাপ নীরব পরিবেশে।

-কেউ একজন তোমাকে খুব মিস করে যা তুমি বুঝতেও পারো না।
কেউ একজন তোমার অপেক্ষায় সময় পার করে দেয় তাও তোমার বুঝে আসে না।।

কেউ একজন তোমাকে নীরব মনে অনুভব করে যায় সেটাও বুঝতে পারো না।
কেউ একজন আছে মনে মনে তোমার সাথে রাগ করে অভিমানের নীল জমিয়ে রাখে তাও তুমি বুঝো না।

কেউ একজন তো আছে যে তোমার একটা ফোন অথবা মেসেজের অপেক্ষায় মাঝে মাঝেই ফোন হাতে নিয়ে এক একটা দীর্ঘশ্বাঃস ফেলে।

হঠাৎ করে আলিফের এমন কথা শুনে সবাই ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কেমন নীরব পরিবেশে কথা গুলো যেন প্রত্যেকের কানে বাজছে। কথাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুকভরা একরাশ কষ্ট। না পাওয়া কিছু আক্ষেপ, নীরব অভিমান। অন্য সময় হলে সবাই ঠাট্টা করতো, হেঁসে উড়িয়ে দিতো। আজকে সবাই বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। কেউ আর কিছু বলছে না।

আলিফ মিতুর দিকে চেয়ে আনমনে বলছিলো কথাগুলো। আশপাশে নীরব দেখে চারপাশে দৃষ্টি বুলালো আলিফ। সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হকচকিয়ে যায় আলিফ।
আমতা আমতা করে বললো

কিরে এ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
কি দেখছিস অমন করে?

দেখিনি কিছু শুনেছি শুধু! এভাবে নিজে নিজে কষ্ট না পেয়ে বলে দিতেই তো পারিস। ঐশী স্বাভাবিক ভাবেই বললো।

আ আসলে তোরা কি ভাবছিস ঐরকম কিছু না। আমি আসলে কবিতা চর্চা করছিলাম আরকি। চল যাই স্যার আসছে মেবি।
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো আলিফ।

খাইনা তো সুজি!
কিছু হলেও বুঝি!
এত ন্যাকামো করতে হবে না আর, আমরা আমরাই তো। চালিয়ে যা মামা!
রবিন শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।

ঐশী উঠে দাঁড়ালো। মিতুকে চোখের ইশারায় কাছে ডাকলো।
কিছু একটা বললো। মিতু লাজুক হাসলো।

রিয়া, জান্নাত, রবিন চলতো আমর কিছু নোট লিখে দিবি। মূলত উদ্দেশ্য হলো মিতু, আলিফ কে একা থাকতে দেওয়া। কেউ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।
-মিতু মুচকি হাসলো। কৃতজ্ঞতার চোখে তাকালো। কিছু মানুষকে মুখে কিছু বলতে হয়না। এরা কি ভাবে যেন সবকিছু বুঝতে পারে। এই যে মনের না বলা অপ্রকাশ্য কথাগুলো, ইচ্ছে গুলো মুখে তাদের বলতে হয়না। এই মানুষ গুলো জীবনে বিশেষ পাওয়া।

– মিতু গিয়ে আলিফের কাছ ঘেঁষে বসলো। আলিফ কিছুটা সরে দূরে বসলো।

কিরে এভাবে দূরে যাচ্ছিস কেন?
সারাজীবন তো আমার কাছাকাছিই থাকতে হবে। আগে থেকে অভ্যাস কর।

-মানে কি বলছিস তুই?

ন্যাকা সাজিস ক্যান? বলতে তো পারিস।

কি বলবো?

ভালোবাসি!

কি হয়েছে তোর? পা’গল টাগল হয়েছিস নাকি?

হিম পা’গল তোর জন্য। তোর ভালোবাসা আমাকে পা’গল করে দিয়েছে আলিফ। ট্রাস্ট মি! আমি তোর জন্য পাগল। তুই তো মুখে বলবি না। আমি বললাম খবরদার আমাকে ফিরিয়ে দিবি না!

I Love you Alif?
আমি তোকে ভিষণ ভালোবাসি!
বিয়ে করবি আমায়?

আমি মধ্যবিও, বেকার। তোদের মতো এত টাকা-পয়সা নেই। তোকে এত বিলাসিতা দিতে পারবো না।
থাকতে পারবি আমার কাছে সারাজীবন?

“তুই শুধু ভালোবেসে আঁগলে রাখিস। আমি কথা দিচ্ছে সারাজীবন রয়ে যাবো তোর হয়ে। শুধু আমাকে একটু কেয়ার করিস। দিন শেষে আমার কাছে ফিরে আসিস। আমার খারাপ কিংবা ভালো সময় মাথার উপরে ছায়া হয়ে পাশে থাকিস”!

-জানি না তোকে বিলাসিতা দিতে পারবো কিনা। তবে আমি আমার সাধ্য মতে চেষ্টা করবো তোকে ভালো রাখার। আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে পারবো। ভালোবেসে মুড়িয়ে নিবো আমার মনের ঘরে! এখানে ই তুই থাকবি আমার মনের রানী হয়ে!


– এইটাই তো আমার জন্য বড় পাওয়া। বল না ভালোবাসি!।

ভালোবাসি পা’গলী!

আগে বলিসনি কেন?

যদি ফিরিয়ে দিতি।
ভয় হচ্ছিলো খুব, যদি আমাকে ভুল বুঝতি। সুন্দর বন্ধুত্বটা হারিয়ে যেত। তার থেকে বরং আমার অনুভূতি আমার মধ্যে থাক।
তবে তোর জন্য রোজ অপেক্ষায় ছিলাম।
তোকে বুঝাতে পারবো না মিতু। আমি আজকে কতটা খুশি।
খুব খুব বেশি খুশী হয়েছি আমি।
বল আজকের দিনের জন্য তুই কি চাস?

আমার শুধু তোকে চাই।

আমিতো পুরোটা ই তোর।

এভাবে পূর্ণতা পেলো আরো একটি অপ্রকাশ্যিত ভালোবাসা।
আজ গ্যাঞ্জাম পার্টির সবার মুখে তৃপ্তির হাসি।

হয়েছে হয়েছে মামা! এখন চলো আমাদের সবাই কে ট্রিট দিতে হবে।
লুকিয়ে লুকিয়ে আমার বান্ধুবীর সাথে প্রেম করলে তো হবে না।
আলিফের কান টান দিয়ে বললো রবিন।
তার সাথে যোগ দিলো সবাই। সবার আবদার আজকে সবাই কে ট্রিট দিতে হবে আলিফের।

-সবাই মিলে ডিসিশন নিলো আজ কোচিং করবে না কেউ । আজ সারাদিন ঘোরাঘুরি করতে হবে। আলিফের পকেট ফাঁকা করে দিবে একদম।

________________________

-এদের প্লানে এক বালতি পানি ঢেলে কোথাথেকে এখানে উপস্থিত হলো রাফিন। রাফিন কে দেখে সকলের মুখটা চুপসে গেলো। রাফিন কে দেখে অন্য সময় হলে খুব খুশী হতো ঐশী।
তবে এই মুহূর্তে ভয় হচ্ছে। সকলের সামনে যদি৷ আগের মতো একটা ধমক দেয়, তাইলে এই বন্ধু জাতির মধ্যে মান-সম্মান আর থাকবে না।

– রাফিন সবার দিকে দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো। এক একজনের চেহারা বাংলা পাঁচের মতন। তা দেখে মনে মনে হাসলো। মুখে বললো –

কি হলো সবার?
এভাবে চোরের মতো মুখ করে আছিস কেন সবাই? চুরি টুরি করে ধরা খেয়েছিস নাকি?

রবিন আমতা আমতা করে বললো –
কি যে বলেন না ভাইয়া!

তা তোমরা কোচিং এ না গিয়ে এখানে কি বিষয় নিয়ে গবেষণা করছো?

এইতো এখনই যাবো। এই চল সবাই।
ঐশী অসহায় মুখ করে বললো।

রাফিন দিলো এক ধমক

অলরেডি দশ মিনিট লেট হয়ে গেছে। কখন যাবে শুনি?
সব কয়’টা ফাঁকিবাজ। এদের নাকি ক দিন পড়ে ফাইনাল এক্সাম।

-কেউ আর কথা না বলে সোজা কোচিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলো। আলিফ সবার উদ্দেশ্য মেকি হেসে ফিসফিস করে বললো – রাফিন ভাই কে একটা ধন্যবাদ দিতে হবে।
কি বলিস ঐশী?

আলিফের হাসি দেখে রিয়া কটমট করে তাকালো। যা অর্থ হলো আজকে বাঁচলি রাফিন ভাই এর জন্য। তবে ছুটির পড়ে কে ঠ্যাকাবে?

এদিকে ঐশীর অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!
“তুই বয়ফ্রেন্ড তুই বয়ফ্রেন্ডের মতো থাকবি!
কোথায় গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে ঘুরতে যাবি। হাত হাত ধরে হাঁটবি। সময় হলে হুটহাট ফুসকা খেতে নিয়ে যাবি।
সারাদিন ফোন দিয়ে কথা বলবি। ফোন রিসিভ করতে একটু দেরী হলে মিনিটে মিনিটে অজ্ঞান হয়ে কান্না শুরু করে দিবি। চাইলে রোমাঞ্চ করতে পারিস।
তা না করে তুই কেন পড়াশোনা নিয়ে এত মাতুব্বরী করিস?
তোর সমস্যা কি ভাই?
বল আমাকে?

মনে মনে রাফিনের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করেতে করতে ক্লাসরুমের সামনে এসে দাঁড়াতেই টাক’লা স্যার এসে ধমকালো।

তোদের সবসময় দেরী হয় কেন?
নেক্সট টাইম দেরী হলে একদম কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবো।
সারা দিন আড্ডা হৈচৈ কিসের এত?

-আরে টা’কলা থাম ভাই। কার সামনে কি বলিস?
নিশ্চয়ই আজ বউ এর সাথে ঝগড়া করে এসছে, এখন আমাদের সাথে সেই রাগ দেখাস ব্যাটা! মনে মনে স্যার কে হাজার গালি দিলো গ্যাঞ্জাম পার্টি।

ভাগ্যিস আজকে কান ধরতে হয়নি।
তাহলে আর মানইজ্জতের ছিঁটে ফোটাও থাকতো না।
সবাই এসে মুখ গোমড়া করে বসে রইলো।
এদের এমন অবস্থা দূর থেকে একজোড়া চোখ দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে।

চলবে…………….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here