ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ১৮

0
159

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ১৮

চৈতী আমি আপনাকে দাঁড়াতে বলছিলাম! এভাবে চলে আসলেন যে?
শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে খুব শান্ত ভাবে কথাটি বললো সাইফ।
চৈতী কিছুটা রেগে গেলো। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এই মানুষটা কে নিয়ে মহা বিপদে চৈতী। সেদিনের পর থেকে যেন আরো পাগ’লামি বেড়ে গেয়িছে সাইফের ।যার কথায় একন্তই অধিকার বোধ। সব জায়গায় এই মানুষটার অস্তিত্ব। মনে হচ্ছে ছায়ার মতো থাকে। অনেকেই বিষয়টা ভালো চোখে দেখছে না। বিভিন্ন সমালোচনা করছে।

আজকে যখন চৈতী ক্লাস শেষে করে বের হয়েছিল। তখনই সাইফের উপস্থিতি, মনে হচ্ছিলো যেন চৈতীর জন্যই অপেক্ষা করছিলো।
হাত ঘড়িতে একবার টাইম দেখে নিয়ে চৈতী কে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে সাইফ জিজ্ঞেস করলো _

আপনার ক্লাস শেষ চৈতী? এখন তো নিশ্চয়ই বাসায় যাবেন? যদি অন্য কোথাও যাবার প্লান করে থাকেন তা হলে তা মাথা থেকে ফেলে দিন। আপাতত আপনার রেস্ট প্রয়োজন। অনেক টায়ার্ড মনে হচ্ছে আপনাকে।
গেটের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করুন কিছু সময়।
আমি পার্কিং প্লেস থেকে বাইক নিয়ে আসছি।
আপনাকে পোঁছে দিবো।
খবরদার ভুলেও একা যাবেন না, আর না কারো সাথে।
আপনাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছি না আপাতত।
যদি আমার কথার অবাধ্য হন তার পরিনতি হবে কিন্তু আপনার জন্য খুবই ভয়াবহ।
মাইন্ড ইট!
চৈতীকে কিছু না বলেতে দিয়ে দ্রুত পায়ে জায়গা ত্যাগ করলো সাইফ।
মনে হচ্ছ আদেশ না হুমকি দিয়ে গেলো।

এদিকে চৈতী রাগে জ্বলে যাচ্ছে। আশেপাশে কেউ কেউ আড় চোখে তাকাচ্ছে, অনেকে কানা ফুঁসা শুরু করে দিয়েছে ইতমধ্যে।
চৈতীর ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়েতো বলেই দিয়েছে –
তোমাকে তো খুব ভালো মেয়ে মনে করছিলাম চৈতী।
শেষ পযর্ন্ত স্যারে সাথেই জল এতদূর গড়িয়ে গেলো।
তাহলে এতদিন লোকের মুখের কথাই ঠিক ছিলো।
আজতো নিজ চোখেই দেখলাম।
বাবা স্যারতো ভিষণ কেয়ারিং। এই গম্ভীর স্যারটা কে পটালে কি ভাবে?
আমাদের ও বলো?
আমাদের তো তোমার থেকে কিছু টিপস শিখে রাখা উচিত।
দেখি আমরাও কোনো টিচারকে পটাতে পারি কি-না!

কিছুটা ব্যাঙ্গ করে বললো কথাগুলো।

চৈতী রেগে গিয়ে বললো –
অনেক বলছো বাজে কথা বন্ধ করো তোমার?
কারো সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে মনগড়া ইতিহাস রচনা করে দিলে?
লোকে কি বলে বলুক- আই ডোন্ট কেয়ার!
আমি নিজেই জানি আমি কেমন।
নেক্সট টাইম কিছু বলার সুযোগ খুঁজতে এসো না।
তাহলে কিন্তু তোমাকে ছেড়ে কথা বলবো না গট ইট!
বলেই হনহন করে হাঁটা শুরু করলো গেটের দিকে।

যখনই রিক্সায়,উঠতে নিবে তখনই হুট করে পিছন থেকে সাইফ কথাগুলো

-এমনিতেই আজে সাইফের জন্য মেয়েটা কথা শুনাতে আসলো। এখন এখানে সাইফের উপস্থিতি যেন রাগের পরিমাণটা বাড়িয়ে দিলো দ্বিগুন।
পাবলিক প্লেস তাই সিনক্রিয়েট করতে চায় না চৈতী।
দাঁতে দাঁতে চেপে নিচু স্বরে বললো-

আপনার সব কথা শুনতে আমি বাধ্য না স্যার। আমার উপরে কোনো রাইট নেই আপনার। লাইফটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত, আর এটা পরিচালনার দায়িত্বও একান্তই আমার। আমি কখন কি করবো? কোথায় থাকবো সব কিছুর কৈফিয়ত আপনাকে দিতে বাধ্য না।
আমার সেফটি আমি নিজেই সামলে নিতে পারবো।
কারো করুণা বা দয়া করতে হবেনা।
আপনার মধ্যে মেবি লজ্জা বলতে কিছু নেই।
আপনার লজ্জা করে না স্যার?
একজন টিচার হয়ে স্টুডেন্টের পিছনে ঘুরঘুর করেন?
জানেন আপনার জন্য বাজে সিচুয়েশন ফেস করতে হয় আমার। লোকে নানান কথা বলে বানোয়াট।
আপনি তো ছেলে আপনাকে কেউ কিছু বলবে না।
কিন্তু একটা মেয়েকে এই সুশীল সমাজ নোংরা কথা বলতে একচুল ছাড় দেয়-না।
দেখুন স্যার আপনি আমার পিছু পিছু না ঘুরে অন্য,,,,,,,,

স্টপ চৈতী! রাখো তোমার লজিক। অবশ্যই আমি তোমার থেকে জ্ঞান নিতে আসিনি। আর লোকে কে কি বললো তাতে আমার যায় আসে না।
আর কি স্যার স্যার করো? তোমার জন্যই তো মূলত এই ভার্সিটিতে আসছি। তুমি কেমন মেয়ে বলোতো?

হুমায়ূন আহমেদ স্যার বলেছিলেন –
মেয়েদের তৃতীয় নয়ন থাকে ! এই নয়নে সে প্রেমে পড়া বিষয়টি চট করে বুঝে ফেলে।

কই! তোমারে তো কোটি বছর যাবত বুঝানোর চেষ্টা করতেছি, তুমি বোঝ না কেন? তোমার তৃতীয় নয়নে কী ধুলোবালি ঢুকছে?
বলো আমাকে?
সমস্যাটা কোথায়?
চোখে তো চশমা পড় তুমি ধুলোবালি তো ঢুকার চান্স নেই।
হয়তো অন্য কোনো সমস্যা।
চলো তোমাকে আজ চোখের ডক্টর দেখিয়ে আসি।

-সাইফের এমন কথায় চৈতী হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। মানুষ সিরিয়াস কথায় এমন মজা করতে পারে চৈতীর জানা ছিলো না।
চৈতী কিছু সময় নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সাইফের দিকে।

– এভাবে তাকিয়ে কি দেখো?
পড়েও দেখতে পারবে তো আমাকে, আমি তো ব্যক্তিগত ভাবে তোমারই।
পাবলিক প্লেসে এভাবে দেখে কেউ?
দেখো মানুষ জন তাকিয়ে আছে।
এখন চলো তো আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে, আজ একসাথে রেস্টুরেন্টে খেয়ে আসি।
তুমি চাইলে কিন্তু নিজ হাতে খাইয়ে দিতে পারো, আমি মোটেও মাইন্ড করবো না।
দুষ্ট হেঁসে বললো সাইফ।

-সাইফের এমন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেলো চৈতী। সাথে ভিষণ হাসি ও পেলো। ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিলো।
-মুখটা গম্ভীর করে রাগি ফেস করে চৈতী বললো –

-স্যার আপনি মাঝরাস্তায় জোকিং শুরু করছেন আমার সাথে?

-তুমি কি আমার বান্ধুবী লাগো যে তোমার সাথে মজা করবো? আজব তোমার সাথে কি আমার জোকিং করার সম্পর্ক নাকি মিস চৈতী?
তোমার সাথে তো আমার পেয়ার মহাব্বতের সম্পর্ক!
সাইফের সোজা সাপটা জবাব।

-চৈতী প্রত্যুওর কিছু না করে সোজা উল্টো পথে হাঁটা দিলো।
এই লোকের সাথে কথা বলাই বেকার মনে হচ্ছে চৈতীর কাছে।

-সাইফ চটজলদি চৈতীর হাত ধরলো।
চৈতী আকস্মিক সাইফের এমন কাজে ভড়কে গেলো। পা-জোড়া থেমো গেলো অটোমেটিক।

-“জানেন তো আপনাকে বুঝার দুঃসাহস কিংবা যোগ্যতা আমার সম্ভবত হয়ে উঠেনি।
আপনি বড্ড রহস্যময়ী নারী। আমি একটা জিনিস বুঝিনা যার কন্ঠ এতটা সু-মধুর সে এতটা রহস্যময়ী হয় কি করে?
কেমন জানি দার্শনিক টাইপের বড় অদ্ভুত আপনি।
আজকালের মেয়েরা এমন হয় জানা ছিলো না, বন্ধু বিহীন ভালো লাগেনা আড্ডা দিতে।
কে না চায়, কেউ একজন আসুক আপন ভেবে আগলে রাখুক, যত্ন করে ভালোবাসুক।
কিন্তু আপনি চান না।
এই চাওয়া – না-চাওয়ার দোলনায় আমি আপনাকে বলতে পারিনা।
আপনাকে আমি ভিষণ পছন্দ করি! অনেক বেশি ভালোবাসি। তাইতো বেহায়ার মতো, আপনার পিছু পিছু ঘুরঘুর করছি। ভালোবাসা আসলেই মানুষকে বেহায়া বানিয়ে দেয় নিজের আত্মসম্মাব বোধ ও ভুলে যায়। শুধু মাএ মানুষটাকে পাবার লোভে। বেহায়া সেই মানুষটা হয় যে তার প্রিয় মানুষটাকে খুব করে পেতে চায়।

সাইফে কন্ঠে ছিলো আক্ষেপ, একরাশ চাপা কষ্ট।

____________________________
🌸 হিমশীতল বাতাস বইছে। সূর্যের লাল আভা ছেয়ে গেছে ধরণীতে। জনসমাগমের গুনগুন কোলাহলে পরিবেশটা আমোদিত। আকাশের সিঁধুর রাঙা মেঘের আনাগোনার ফাঁকে ফাঁকে উড়ে চলছে পাখির ঝাঁক।
নদীর পানি ছুটে চলছে। ছোট ছোট সারি সারি নৌকা হেলেদুলে চলছে।
এমন একটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে প্রিয় মানুষের হাতের উপর হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটছে ঐশী । দারুণ একটা ওয়েদার উপভোগ করছে একজোড়া কাঁপল।
নদীর পাড়ে একটি বটগাছের নিচে বসে পড়লো দু’জন।
নদীর কাছে বসে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষন করছে ঐশী।

ঐশীর বারবার চোখ ঠেকছে নদীর উপর দিয়ে খোলা আকাশের বুকে উড়ে বেড়াচ্ছে এক জোড়া পাখি।
ঐশী দৃশ্যটা দেখে মুচকি হাসলো।
মনে মনে ভাবলো ওরাও বোধ হয় তাদের মতো প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে ঘুড়তে বের হচ্ছে।

পাশে ফিরে তাকাতেই দেখলো রাফিন গালে হাত দিয়ে অতী মনোযোগী হয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে।

-তার প্রসারীত ঠোঁটে প্রাস্তভাগে লেগে থাকা হাসিটা রাফিনের দৃষ্টি আঁটকে রইলো কেবল।
সে মুগ্ধ নয়নে দেখে যাচ্ছে মায়াবী পরী কে।

-ঐশী হেঁসে আশপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো –

-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

চলবে………

(কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here