#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ৩৬
“উপস্থিত মানব-মানবির এতো এতো সমালোচনা, অপমান অপ’দ’স্ত সহ্য করতে পারলো না ঐশী। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। মরে গেলেও সে এই লোক কে বিয়ে করবে না, কখনো না। কয়বার বিয়ে করবে? তার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে তার রাফিন ভাইয়ের সাথে । এই মানুষ’টা কে ছাড়া যে সে কল্পনা করতে পারে না অন্য কাউকে। সেখানে অন্য কাউকে বিয়ে হাস্যকর!”
“শফিকুল সাহেব বেশ চিন্তিতো হয়ে পড়লো।এখন কি ভাবে এই কথাটা বলবে তার মেয়ে বিবাহিত। তাহলে যে এই মানুষ গুলো আরো চেপে বসবে। উনি বারবার রাফিনের দিকে তাকাচ্ছে।”
“আকস্মিক ছাদের দিকে দৌড় দিলো ঐশী। এরিমধ্য রাফিন পিছন থেকে হাত ধরে ফেললো। নিজের কাছে এনে, মানুষজন লাজ লজ্জা ভুলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তার মায়াবিনী কে। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে ঐশীর ঘাড়ে। অসহায় ক্ষিণ কন্ঠে বললো,
” আমাকে ক্ষমা করো মায়াবিনী! আমি… আমি পারিনি স্বামি হয়ে স্ত্রী প্রতি নিজ দায়িত্ব পালন করতে। আমি একজন ব্যার্থ হাসবেন্ড। আমার জন্য সব,,,, আমার জন্য তোমাকে এত এত অপমান, অপদস্ত হতে হয়েছে। আমি আমার স্ত্রী’কে সুরক্ষিত রাখতে পারিনি। কিন্তু, আর না চলো আমর সাথে। এখান থেকে তোমাকে নিয়ে যাবো। প্লিজ! চলো?আমরা এখানে আর এক মুহূর্ত থাকবো না।”
“উপস্থিত সবার চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে। কামাল চৌধুরী ও ভীষন অবাক হচ্ছে ছেলের এমন আচরণে। তা তাদের মুখ দেখেই বুঝা চাচ্ছে। এরি মধ্যে সায়েমের “মা” হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,
“সত্যি এই মেয়ে’র চরিত্রে সমস্যা! ছিঃ! ছিঃ! এই মেয়ে আসলে কয়েকজনে সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।এমন একটা ন’ষ্টা দু’শ্চরিত্রা, ক্যা’রেক্ট’র’লে’স মেয়েকে আমার ছেলের বউ করবো! না কখনো না।”
“তার কথা শেষ হবার আগেই কামাল চৌধুরী ক্রোধিতো কণ্ঠে বলে উঠলো,
“রাফিননননন!”
“রাফিন ঐশী’কে ছেড়ে দিয়ে একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরলো। তারপরে তাকালো বাবার দিকে। কামাল চৌধুরী রেগে গিয়ে ছেলের গালে কষিয়ে দুইটা থা’প্প’ড় দিলেন৷ এই প্রথম উনি ছেলের গায়ে হাত তুললেন। তারপর ক্রোধিত কন্ঠে বললো,
” এসব কোন ধরনের অসভ্যতা রাফিন? ছিঃ! এমন আচরণ আমি তোমার থেকে আশা করিনি রাফিন। বড়া সমাজে আমার মানসম্মত নষ্ট করলে। তুমি আমার ছেলে হয়ে এমন একটা কাজ কি করে করলে। অসভ্য বে’য়া’দ’ব ছেলে।”
” নিজের বউ কে জড়িয়ে ধরলে আমি যদি বে’য়া’দব অ’স’ভ্য হই আব্বু। তাহলে এই সমাজের প্রত্যেকটা পুরুষ বে’য়া’দব অ’স’ভ্য। গম্ভীর কণ্ঠে বললো রাফিন।”
“রাফিনের কথাটা যেন প্রত্যেক সদস্যকে অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছে দিয়েছে। কামাল চৌধুরী নিজের ঠিকঠাক চশমাটা ঠেলে ঠিক করছে। সানজিদা শেখ নিজেও বেশ অবাক হয়েছে। নিজের মেয়ে বিয়ে করেছে অথচ মা হয়ে তিনি জানেন না।উনি বিস্মিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কি সত্যি বলছো বাবা?”
রাফিন কিছু বলার আগেই ঐশী’র বন্ধু মহলের সবাই সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বললো,
“হ্যাঁ আন্টি! রাফিন ভাই সব সত্যি বলছে। আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম বিয়েতে।”
“নাজমা কামাল আগেই জানতেন স্বামির ভয়ে উনি চুপ করেই আছেন। কিন্তু সানজিদা শেখ ভীষণ খুশী হয়েছে নিউজটা শুনে। খারাপ পরিস্থিতি’র মধ্যেও মুখশ্রী জ্বলজ্বল করছে। এরি মধ্যে এক মহিলা ফোড়ন কেটে বলে উঠলো,
” তোমরা যে বিয়া করছো তার প্রমান কি? আমরা বিশ্বাস করি না, এই বিয়ে আমরা মানি না। হতেও পারে তোমরা মিথ্যা বলছো এই মাইয়া,,,,,,,,,,,,
“রাফিন আর বলতে দিলোনা তার মধ্যে রাগান্বিত কন্ঠে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
“অনেক হয়েছে আর না। আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে না, আর না মানতে হবে। শুধু আমি মানলেই যথেষ্ট। আমার বউয়ের দিকে আঙুল তুলে কথা বলার অধিকার আমি কাউকে দেইনি।”
কামাল চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“এসব কি বলছো রাফিন? সত্যি’ই তুৃমি বিয়ে করছো।”
রাফিনের সোজা সাপটা জবাব,
“হ্যাঁ আব্বু।”
হঠাৎ কামাল চৌধুরী ক্রোধিতো হয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বললো,
“এ বিয়ে আমি মানি না! যে ছেলে আমার মান সম্মান নষ্ট করে একা একা বিয়ে করতে পারে এমন ছেলের আমার দরকার নেই। এই মেয়ে কে আমার ছেলের বউ হিসেবে মানবো না কোনো দিন। আমার সমাজে একটা নাম-ডাক আছে। এই মেয়ে’কে নিয়ে আমার বাড়ি যেন না দেখি। তোমার কোনো জায়গা নেই আমার বাড়ি।”
“কামাল চৌধুরী’র কথাটা যেন তীরের মতো বিঁধলো ঐশীর বুকে। সময়ের সাথে সাথে সবাই বদলে যায়। স্বার্থে আঘাত লাগলে সবার আসল চেহারা দেখা যায়। চেনা মানুষের অচেনা রুপের মতো ভয়ংকর অনুভূতি আর কিছু হতে’ই পারে না। রাফিন ও বেশ অবাক হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তার বাবা এমন একটা কথা বলবে কল্পনার বাহিরে ছিলো তার। রাফিন ঐশীর ধরা হাতটি আরো শক্ত করে হাতের মুঠায় নিয়ে নিলো। তারপরে বাবা’র দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষীণ কন্ঠে জবাব দিলো,
” ভুল বললেন আপনি। ছেলে হিসেবে অবশ্য’ই আমি আমার দায়িত্ব ঠিক পালন করেছি। ভুলে গেলেন আপনি। আমি ভুলিনি কিন্তু আপনার কথা। সেইদিনের প্রত্যেকটা শব্দ আমার কানে বাজে। আমি একটা পবিত্র সম্পর্ক চেয়ে ছিলাম আপনার কাছে, কিন্তু আপনি আমাকে উল্টো অপমান করেছেন। আপনাদের মতো কিছু বাবা-মা , গার্ডিয়ানে জন্য ছেলে-মেয়েরা বিপথে চলে যায়, হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। যখন তারা মুখ ফুটে পবিত্র সম্পর্ক চায়, তখন আপনারা বিভিন্ন অযুহাত, ডালপালা মেলে ধরেন। আপনাদের কাছে হারাম কাজের সাপোর্ট মিলে কিন্তু ভালো কাজের কদর নেই। আপনি ভাবলেন কি করে? যে বাড়ি আমার স্ত্রী’কে আমার অর্ধাঙ্গিনী’র যোগ্য সম্মান নেই। সেই বাড়ি আমি তাকে নিয়ে যাবো। এই হাতটা মাঝপথে ছেড়ে দিবার জন্য ধরিনি। সারাজীবন নিজের কাছে যত্ন করে, আগলে রাখার জন্য ধরেছি। একসাথে সাথে এখনো কতশত পথ চলা বাকি। সেখানে এই হাত কি করে ছেড়ে দেই বাবা? সারা দুনিয়ায় মানুষ যদি তার বিপক্ষে চলে যায়, আমার বিশ্বাস তার প্রতি এক বিন্দু নষ্ট হবে না। সে আমার কাছে স্বচ্ছ চকচকে আয়নার মতো পরিষ্কার, পবিত্র । কারণ, সে আমার অর্ধাঙ্গিনী! আমার মায়াবিনী!”
“আর রইলো আপনার সমাজ। হাহাহা!”
“এই সমাজ কি দিয়েছে আপনাকে? কি পেয়েছেন আপনার এই সমাজের মানুষের কাছ থেকে? কখনো কি একগুচ্ছ ফুল দিয়ে বলেছে তোমার দিনটা শুভ হোক। কখনো কি জিজ্ঞেস করেছে, আজ খাওনি কেন? আপনার মন খারাপের সময় এই সমাজের মানুষ গুলো জানতে চায়, কেমন আছো তুমি?
এই সমাজ দিতে জানে কষ্ট,ম’র’ণ ব্যাদি যন্ত্রণা। সত্যি মিথ্যা যাচাই না করে একটা মেয়েকে নিয়ে বানোয়াট কাহিনী উপহার দিতে পারে। এই সমাজ শুধু মেয়েদের হেয় করতে চায়। অথচ আসল অপরাধী বুক ফুলিয়ে বাঁচে। তাহলে এই সমাজ দিয়ে লাভ কি আমার?
এই সমাজের মানুষ গুলো স্বার্থের জন্য আপনার পিছনে ঘুরবে। যতক্ষণ আপনার কাছে টাকা থাকবে। টাকার কাছে সত্যি ও মিথ্যা হয়ে যায়,এই সমাজের কাছে। অথচ এই সমাজের জন্য মানুষ কতশত ইচ্ছে কে বিসর্জন দিয়ে নিঃস্ব হয়ে দুমড়ে মুচড়ে ম’রতে ম’রতে বাঁচে। আমি বাবা এতো উদার মনের মানুষ না, যেখানে আমার অর্ধাঙ্গিনী’র যোগ্য সম্মান নেই ।সেখানে চাইনা আমি এই সমাজ।”
“ঐশী বিস্মিত চোখে দেখছে তার রাফিন ভাই কে।এই পরিস্হিতিতে ও তার মনে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। কামাল চৌধুরী রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে ছেলের দিকে। নাজমা কামাল চোখে জল ফেলছে। বাবা ছেলে কোন যু’দ্ধে মে’তেছে।এর শেষ কোথায় আদৌও জানা নেই তার। বাপ -ছেলে দু’জনই জে’দি। উনি চোখের কোণের জল’টুকো মুছে, রাফিনের এক হাত ধরে শান্ত কন্ঠে বললে,
“চুপ কর বাবা! বাবার মুখে মুখে তর্ক করতে নেই । এই লোক সমাজে বাবা-ছেলে সিনক্রিয়েট করিস না বাবা।”
মায়ের কথা ফেলতে পারলো না রাফিন, মুহূর্তে’ই চুপ হয়ে গেলো।
“হ্যাঁ রাফিন ঐশীকে বিয়ে করবে বলে একান্তই বাবার সাথে কথা বলে ছিলো। কামাল চৌধুরী ছেলের মুখে বিয়ের কথা শুনে গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলো,
“বিয়ে করবে মানে। বিয়ে করে বউ কে খাওয়াবে কি। নিজেই বাবার ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছো, বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবে। আগে প্রতিষ্ঠিতো হও। নিজের পায়ে দাঁড়াও তখন মেয়ের অভাব হবে না।এমন কত মেয়ে আসবে যাবে।”
“নিজেই বাবার ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছো, বিয়ে করে বউকে কি খাওয়াবে? কথাটা যেন রাফিনের বুকে আঘাত হানলো। রাফিন গম্ভীর কণ্ঠে শুধু বলে ছিলো,
“আমার যা বলার বলে দিয়েছি বাবা। বিয়ে করলে ঐশী’কেই করবো।”
“বলেই নিঃশব্দে রুম থেকে বেরিয়ে আসছিলো রাফিন। কামাল চৌধুরী ও এই বিষয়টা আর পাওা দেয়নি। ছোটবেলা থেকে আত্মসম্মান-মর্যাদা, ব্যক্তিত্ববান রাফিন। বাবার এমন কথা শুনার পর থেকে বাবা’র থেকে একটা পয়সাও নেয়নি। নিজের সমস্ত খরচ নিজেই বহন করে।”
______________________
হঠাৎ করে এক বৃদ্ধা মহিলা আফসোসের সুরে বলে উঠলো,
“এই মাইয়া পোলাডারে তা’বি’জ করছে। আহারে কামাল শেষমেশ তোমার পোলার কপাল’ডা পো”ড়’লে। এই ন’ষ্টা মাইয়া নিয়া আ’জীবন কেমন থাকবো। ক’ল’ঙ্কি’নী মাইয়া জানি কোনহানকার। দেখবা কয়দিন পরে আবার অন্য বে’ডা’র লগে ভা’ই’গা(পালিয়ে) যাইবে।”
“বৃদ্ধা মহিলার সাথে সুর দিয়ে অন্য এক মহিলা পান চিবানোর লাল দাঁত বের করে বললো,
” আরে আপা বাদ দে’ন, কি যে কন’। মাইয়ার বাপ-মা যেমন হইবো পোলা মাইয়া তো এমন হইবো’ই। এই মাইয়ার মা’য় তো ভা’ই’গা (পালিয়ে) আইয়া একলা একলা বিয়া করছে। মাইয়ার স্বভাব চরিত্র তো মা’র নাহান হ’ই’ছে। এদের র’ক্তে ভে’জা’ল আছে।”
“সানজিদা শেখ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখে’র জল ফেলছে। শেষ বয়সে এসে এসব কথা শুনতে হবে কখনো কল্পনা ও করেনি তিনি। একেক জন এক এক মন্তব্য, হাসি ঠাট্টা করে’ই যাচ্ছে। এদের থামানো যেন যাচ্ছে’ই না। এমন ভাব নিয়ে বলছে, যেন তারা সব সত্যিই বলছে। এদের এমন কথা শুনে ঐশী রোবটের মতো স্হির অনুভূতি’হীন হয়ে সবটা দেখছে। চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। কোনো অন্যায়, দোষ না করেও সে দোষী,সমাজের মানুষের কাছে ন’ষ্টা মেয়ে। নিয়তি তাকে নিয়ে কোন খেলায় মেতেছে! এর পরিনতি কি হবে জানা নেই ঐশীর। তার জন্য তার বাবা-মা সবার কাছে অপমানিত হচ্ছে। বাবা-মায়ের নিচু মাথা দেখার মতো কষ্ট, এই অনুভূতি মতো ভয়া’বহ যন্ত্রণা সন্তানের কাছে হয়তো আর দ্বিতৃয় নেই। যে মানুষ গুলো তার পরিবারের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেতো না, তারাও আজ দু’টো বাক্য বলছে হেসে হেসে। হায়রে মানুষ! হায়রে প্রতিবেশী! সুযোগ যেন লুফে নিচ্ছে।
” হঠাৎ তিহান হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,
“খবরদার আর একবার যদি আমার পরিবারে দিকে আঙুল তুলে কথা বলার মতো দুঃসাহস দেখান, খোদার ক’স’ম খু’ন করে ফেলবো।” আমার বাবা-মা ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কোনো পা’প কাজ তো করেনি। তারা আরো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের হাত ধরে সারা জীবন হাসি মুখে কাটিয়ে দিয়েছে। ” আরে এই বুড়ো বয়সে এসেও পরনিন্দা করে বেড়ান। ছিঃ! বৃদ্ধা মহিলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তিহান আবার বললো,
“এ্যাই বুড়ি ম’রা’র ভয় নেই। আপনি যে এতো কথা শুনিয়েছেন, আপনার ছেলে যার ঘরে বউ, তিনটা সন্তান রেখে এক মহিলার সাথে জগোন্য কাজ করতে গিয়ে এলাকাবাসীর কাছে ধরা পড়ছে বাজে ভাবে। তার মা হয়েও এতো কথা আসে কি করে মুখে। মহিলার মুখটা চুপসে গিয়েছে মুহূর্তে’ই।”
“লজ্জা করা উচিত আপনাদের। যারা যারা এতো সময় ধরে একের পর এক বানোয়াট কাহিনী বলে গিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের কৃতকর্মের কথা জানা আছে। সম্মান করি আপনাদের তাই চুপ করে ছিলাম, আসলে আপনারা সম্মান পাবার যোগ্য না।”তিহানে হুংকার যেন দেয়ালে দেয়ালে ভারি খাচ্ছে। ভয়াবহ রেগে আছে তিহান। চোখ মুখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুনের লাভা বেরিয়ে আসছে। সায়েম বারবার ঢোক গিলছে।ভয়ার্ত মুখ’টা যেন আরো ফেকাশে বর্ণ ধারণ করলো।”
“তিহান’কে দেখে ভরসা পেলো সবাই। তিহান একটু আগেই এসেছে। চৈতী’র কাছ থেকে সবটা শুনে রাগে তার শরীর ফুঁসে উঠছে যেন। সবাই কে খু’ন করতে ইচ্ছে করছে। ঐশী গিয়ে ভাই’কে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে দিলো। মুহুর্তেই তিহান শান্ত হয়ে গেলো।বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বললো,
“ভয় পাসনা সোনা বোন আমার! আমার পিচ্চি বুড়ি কাঁদিস না প্লিজ! আমি এসে গিয়েছি পা’গ’লী। আমার বোনের দিকে যারা হাত বাড়িয়েছে তার হাত আমি চিরকালের জন্য অক্ষম করে দিবো৷ যাতে আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো’র সাহস না পায়।
” অন্য এক মহিলা তাছিল্য করে হেসে বলে উঠলো,
“হইছে আর বড় বড় কথা কইও না। নিজের বোন তো এক বেডার লগে এক রুমে ধরা পড়ছে। তাও আমরা নিজের চোখে এক সাথে দেখছি এগো। এগোর আবার বড় কতা(কথা)।” বলে মুখ বাঁকালো।
“রাফিন ক্রোধিত কন্ঠে বললো,
“মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলুন। আপনি আমার মায়ের বয়সী বলে বেঁচে গিয়েছেন। না হয় ঐ মুখ এতো ক্ষণে আস্ত থাকতো না।”
বলেই রাফিন দ্রুত এসে তিহান কে বললো,
“ভাইয়া কথা পরে বলো। আগে তোমার রুম খুলে দেও। তিহান রাফিন কে রুমের চাবি দিয়ে দিলো। রাফিন সোজা তিহানের রুমে চলে গেলো কিছু আনার জন্য।”
এদিকে সবাই বেশ কৌতূহল হয়ে তাকিয়ে আছে। কেউ কেউ মাথা নিচু করে বেড়িয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালো। তিহান আবারো ক্রোধিতো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে উচ্চ স্বরে বললো,
“এক পাও নাড়বেন না কেউ। এতক্ষণ তো সিনেমা দেখছিলেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে । কেউ কেউ তামাশা করছিলেন। তো এখন সিনেমার বাকি অংশটুকু দেখে যান।”
বলেই সায়েমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মুহূর্তে’ই সায়েম কাঁপতে শুরু করলো যেনো। এরি মধ্যে রাফিন হাতে করে তিহানের লেপটপ নিয়ে আসলো। বিয়ের লাইটিং করার সময় রাফিন’ই তিহান কে বলে ছিলো সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা সেট করতে। যাতে কেউ গ’ন্ড’গো’ল করে এড়িয়ে না যেতে পারে। অবশ্য ঐশী’র জন্যই ভয়ে ছিলো রাফিন। ভাগ্যের কি পরিহাস আজ ঠিকি কাজে লেগে গেলো।
রাফিন সবার সামনে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ চালু করে দিলো। সাথে তাদের বিয়ের কাবীননামা’র ডকুমেন্ট দেখিয়েছে। সবটা দেখে সবাই হতবাক। কেউ কেউ মনে মনে ভয় পেয়ে গিয়েছে। এতক্ষণে জোড় গলায় কথা বলা লোক গুলোর মাথাটা উঁচু হয়ে গিয়েছে। রাফিনের মুখ রক্তিম বর্ণে হয়ে গিয়েছে, সায়েম কে গিয়ে ইচ্ছে মতো মারতে শুরু করলো। দাঁত চেপে বললো,
“জা’নো’য়া’রের বাচ্চা তুই এই এই হাত দিয়ে আমার মায়াবিনী কে ছুঁয়েছিস, এই হাত দিয়ে আঘাত করেছিস। বলেই হাত ধরে মোচড় দিলো। কেন এতো দিন নাটক করলি সবার সাথে। কেন এমন’টা করলি বল?”
সায়েম ব্যথা পেয়ে চিৎকার আর্তনাদ করে উঠলো,
“প্লিজ ভাই আমাকে ছেড়ে দেও। আর একটা সুযোগ দেও। আমি ভুল করেছি। আসলে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম। এই মেয়ের জন্য আমার গায়ে হাত তুলেছে সাইফ ভাই। সেদিন তুমি ও মা’রছিলে অপমান করছিলে তাই এমনটা করে ফেলছি। দয়াকরে আর একবার সুযোগ দেও। ”
রাফিন দ্বিগুন চেঁচিয়ে বললো, তুই কি ছেড়ে দিয়েছিলি আমার ঐশী কে। তোর জন্য হ্যাঁ শুধু তোর জন্য আমার মায়াবিনী এতো এতো কথা শুনছে,অপমানিত হয়েছে । তোকে একবার ছেড়ে দিয়ে চরম ভুল করেছি।কিন্তু আর না তোদের মতো কু’ওার স্বভাব কখনো বদলাবে না। যত লেজ ধরে টানবে কখনো তা সোজা হবে না। চরিএ’হী’ন কখনো ভালো হয় না। বলেই ঐশী’কে কাছে ডেকে রাফিন বললো,
জু’তা খুলো ঐশী। ওর এই জগোন্য মুখে জু’তো’পে’টা করবে। রাফিন ভয়াবহ রেগে আছে। ঐশী ভয়ে ভয়ে চারপাশ তাকাচ্ছে। এরি মধ্যে একটা মহিলা উৎসাহ সুরে ঐশী কে বললো,
“ভয় পাস না মা। এই পোলার মুখে জুতা দিয়ে পি’ষে দে। আমার আগে’ই বিশ্বাস হয় নাই এদের কথা। তুমি তো খুব ভালো মাইয়া আছিলা। এমন কাজ তুমি করতে পারো না জানতাম আমি।”
মহিলার এমন লেকচার শুনে তিহানের রাগটা দ্বিগুন বেড়ে গেলো। ক্ষীণ চেঁচিয়ে বললো,
“একদম চুপ করুন আপনাদের ড্রামা। আর একটা কথা না বলে চলে যান সবাই এখান থেকে। কই এতোক্ষণ তো সিনামার শুটিং দেখছিলেন। বানিয়ে বানিয়ে আমার পরিবারের মাথা নিচু করে দিয়েছিলেন৷ আমার বোনকে বিনা দোষে “ন’ষ্টা মেয়ে” উপাধি দিয়েছিলেন। কই কেউ তো এমন উৎসাহ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটা কথা বললেননি, তামাশা দেখছিলেন। তাহলে এখন কেনো বলছেন। সবাই চলে যান, আপনাদের মতো মানুষদের দরকার নেই। আপনাদের জন্য যে টাকা খরচ করে খাবারের আয়োজন করেছি, সব খাবার নিজ হাতে এতিমখানায় দিয়ে আসবো। তাও ওরা দু’বেলা শান্তি মতো তৃপ্তি করে খেয়ে দোয়া করবে।”
তারপরে রাফিনের হাত থেকে সায়েম কে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
“শান্ত হও রাফিন। ওকে শায়েস্তা করার জন্য আমি আছি। ভুলে যেওনা কেউ আমি একজন আইনের লোক। আমার দায়িত্ব আমাকে পালন করতে দেও। এই হাত দিয়ে কতো অপরা’ধী কে শায়েস্তা করেছি, সেখানে একে শিক্ষা দেওয়া ব্যাপার না বলে’ই শক্ত হাত দিয়ে ইচ্ছে মতো মা’রছে সায়েম কে।
“কেউ আর বাঁধা দিচ্ছে না।কিন্তু মা তো মা’ই হয়। সন্তান যত খারাপ হয় হোক মায়ের কাছে হীরের চেয়েও দামী। সায়েমের আর্তনাদ করা চিৎকার সায়েমের মায়ের বুকে এসে লাগছে। উনি হাত পায়ে ধরে কান্না করতে করতে বলছে,
“আমার ছেলেকে আর মে’রো না বাবা। আমি তোমার পায়ে পড়ি বাবা। এভাবে মা’রলে ও ম’ম’রে যাবে।”
তিহান যেন থামছেই না। হঠাৎ সায়েমের মা চিৎকার দিয়ে হুমকি দিয়ে বললো,
“তিহান ভুলে যেওনা তোমার বড় বোন আমাদের বাড়িতে বিয়ে হতে চলছে। এই বিয়ে হবে না। যেখানে আমাদের সম্মান নেই। ”
তিহান থেমে গিয়ে ক্রোধিতো কন্ঠে বললো,
“এতো বড় ঘটনার পরেও আপনারা সম্মান আশা করেন। আপনাদের বাড়িতে আমার বোনের বিয়ে দিবো ভাবলেন কি করে? ”
শফিকুল শেখ তিহানকে শান্ত হতে বললো। চৈতী ও সাইফ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এরি মধ্যে সাইফের “মা” বললো,
“এরকম জঘোন্য কাজ যে করেছে সে অবশ্য’ই শাস্তি পাবে বাবা। আসল অপরাধী কে শাস্তি দিচ্ছো দেও। কিন্তু বিনা দোষে অন্য একজনের শাস্তি কেন অন্য জন ভোগ করবে। তোমার বোনকে আমার ছেলে ভীষণ ভালোবাসে। নিশ্চয়ই আমাদের বাড়ি ভালো থাকবে চৈতী। ওর গায়ে খারাপ ছায়ার একটা আঁচড় লাগবে না কথা দিচ্ছি আমি বাবা।”
” সুজন তার মা’কে সবটা খুলে বলেছিলো ফোনে। উনি তক্ষণই তড়িঘড়ি করে উপস্থিত হয়েছে ।
শফিকুল সাহেব নরম সুরে ছেলে কে বললো,
“আমি এমন ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করিনি তিহান। যে আমার মেয়েকে আগলে রাখতে পারবে না। অবশ্যই পারবে। আমার ভরসা আছে সাইফের প্রতি। এ বিয়ে নিশ্চয়ই হবে।”
“তিহান আর কিছু বললো না। একটু পরে পুলিশ এসে সায়েম কে নিয়ে গিয়েছে। তার সাথে বেরিয়ে গিয়েছে সায়েমের পরিবার। ”
“হঠাৎ তিহান শফিকুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাবা তুমি কেন মাথা নিচু করে এদের কথা শুনছিলে?”
শফিকুল সাহেব চারপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত কন্ঠে বললো,
“বাবা সব কিছু ‘র যাকাত আছে। আর জ্ঞানের যাকাত হলো মুখ বুঝে মূর্খদের কথা হজম করা।” শুধু বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করলেই শিক্ষিতো হওয়া যায় না। যদি মনুষ্যত্ব বোধ না থাকে, মস্তিষ্ক কুৎসিত থাকে। সেই শিক্ষার কোনো মূল্য নেই। খামোখা এদের সাথে অহেতুক তর্ক করার মানেই হয় না।”
“কয়েকজন সম্মানিতো ব্যক্তি ছাড়া সবাই বিনাবাক্যে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যাচ্ছে।”
এরি’মধ্যে,কামাল চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে তার পরিবারের সবাই’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তোমরা কি যাবে নাকি দাঁড়িয়ে থাকবে?”
” কামাল চৌধুরী’র মুখে তর্ক করে না কেউ, সবাই বরাবর ভয় পায় তাকে। নাজমা কামাল ছেলের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখে’র পানি ফেলে যাবার জন্য পা বাড়ালো। স্বামি’র মুখের উপরে কথা বলতে ভয় পান তিনি। আরো আজ রেগে আছে তাই কিছু বললো না। কামাল চৌধুরী ফের আবার বললো,
“নাজমা তোমার ছেলেকে বলে দেও সে যেন আমার বাড়ি না যায়। যে ছেলে একা একা বিয়ে করতে পারে বাবা কে ছাড়া। তার প্রয়োজন নেই আমার বাড়ি। এ বিয়ে আমি মানি না।”
বলে হনহন করে চলে গেলো। চৌধুরী পরিবারের সবাই চলে গিয়েছে।
শুধু রয়ে গিয়েছে মিতু, ও রাফিন। রাফিন কিছু বললো না বাবা-র কথায়।
“ঐশী রাফিনের কাছে গিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“আপনিও তাদের সাথে চলে যান রাফিন ভাই। আমার জন্য আপনার পরিবারকে কষ্ট দিতে হবে না। আমি কখনো চাইনা আমার জন্য আপনি পরিবার হীন হয়ে আমাকে নিয়ে থাকেন। আমরা না-হয় দূর থেকে দুজনকে ভালোবেসে অনুভব করে যাবো।”
ঐশী’কে থামিয়ে দিয়ে রাফিন রাগান্বিত কন্ঠে আক্ষেপ করে বললো,
“হুঁশ চুপ! তুমি কি করে ভাবলে আমি ঐ বাড়িতে যাবো। যে বাড়িতে আমার অর্ধাঙ্গিনীর জায়গা নেই। সে বাড়ি আমার প্রয়োজন নেই। সারাজীবন তোমার হাত ধরে হাঁটতে চাই মায়াবিনী। ফের এমন কথা বললে কিন্তু খবর আছে। আমি এতোটা স্বার্থপর নই বউ!” ঐশী আর কিছু বললো না।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রাফিনের মুখশ্রী’র পানে। একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে এমন কথা বলতে পারে, ভাবছে ঐশী।
-পিছন থেকে একজন এলাকার মুরব্বি হাঁক ছেড়ে প্রতিবেশী উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
“তোমরা কিন্তু নিজেদের সন্তান ঠিক ভাবে মানুষ করতে পারো’নি। কিন্তু দেখছো “শফিকুল” তার সন্তান ঠিকই মানুষের মতো মানুষ করেছে। এমন সন্তান নিয়ে নিসন্দেহে গর্ব করা যায়।”
চলবে……………….
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]
(স্যরি লেট করার জন্য! আমি আর গল্প দিতেই চাইনি, বিভিন্ন সমালোচনা হয় তার জন্য। কিন্তু সত্যি আমি মুগ্ধ তোমাদের ভালোবাসা দেখে। এতো ভালোবাসা পাবার সত্যি’ই আমি যোগ্য না। কতোজন ভাইয়া এন্ড আপুরা ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে বুঝিয়েছে, অনুরোধ করেছে। তোমাদের ভালোবাসা আমি ফেলতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে সন্ধ্যা থেকে লিখে বিশাল বড় পর্ব দিয়েছি। অবশ্য’ই রেসপন্স করবে। সবাইকে ভালাবাসা! ভালোবাসা! ভালোবাসা! ❤️ আর হ্যাঁ রিচেক করিনি ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )