#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ৩৯
“রাত শেষ হয়ে আবার ও নতুন একটি সকাল উঁকি দিলো ধরণীর বুকে। সেই সাথে বেড়ে যায় মানুষের ব্যস্ততা। শুধু প্রিয়জনদের একটু ভালো রাখার জন্য কতো’ই না সংগ্রাম করতে হয়। ভোরের আলো ফুটতেই হোস্টেল থেকে,দুজন হাতের উপরে হাত রেখে বেরিয়ে পড়লো তাদের নতুন সংসারে। ফ্ল্যাটে এসে সাথে নিয়ে আসা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে আবার ও রওয়ানা দিলো মার্কেটের উদ্দেশ্য। শুধু একটা বাসা হলেই তো আর সংসার হয় না, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও দরকার।
“মেয়েদের দায়িত্ববোধ শিখাতে হয় না। পরিস্থিতি’র চাপে পরলে তারা এমনিতেই দায়িত্ববান হয়ে যায়। দিনশেষে প্রিয় মানুষটার একটু যত্ন, একটু স্বচ্ছ ভালোবাসা পাবার লোভে সব রকমের পরিস্থিতি হাসি মুখে মানিয়ে নিতে পারে তারা।”
“ভালোবাসা’র মানুষের কাছে নিজেকে কখনো লুকানো যায় না। আপনাকে কেউ সত্যিকার অর্থে ভালোবাসলে আপনার চোখ, মুখ দেখে’ই সে বুঝতে পারবে আপনি কেমন আছেন।
রাফিন মুখে কিছু না বললেও ঐশী বুঝতে পারে মানুষ টা ভিতরে ভিতরে বেশ চিন্তিতো। বেকার লাইফে কত বড় দায়িত্ব কাঁধে তার, এখানে চিন্তিতো হওয়া কী স্বাভাবিক নয়।৷ হ্যাঁ এটা খুবই স্বাভাবিক! আজ শুধু তার জন্য পরিবার পরিজন সব কিছু ছেড়ে এই অচেনা, অপরিচিত শহরে আসতেও দ্বিতৃয় বার ভাবেনি মানুষটা। রাফিনের এমন পবিত্র ভালোবাসা দেখে হৃদয় থেকে আবারো গভীর ভালোবাসা বেড়ে গেলো, ভীষণ খুশী সে,তার জীবনে কোনো আক্ষেপ নেই, ভীষণ লাকী সে। ততক্ষণাৎ রাফিনের কত কষ্ট করতে হবে ভাবতেই, ঐশী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। এই মানুষটার সাথে সব রকমের পরিস্থিতি মানিয়ে নিতেই হবে তাকে। তাতে তার যতো কষ্ট’ই হোক। এক ধ্যানে গভীর চিন্তা করছে ঐশী। রাফিনে’র ডাকে ভাবনার ছেঁদ কাটে। রাফিন ঐশী’র দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
“কি ভাবছো ভাবুক রানী? চলো অন্য দোকানে গিয়ে বাকি জিনিস কিনতে হবে।”
ঐশী নিজেকে সামলে নিয়ে রাফিনের সাথে হাঁটা শুরু করলো। এখন অযথা এতো টাকা নষ্ট করা মানে’ই হয় না। যেটা যেটা খুব দরকার এই গুলো কিনতে চাচ্ছে ঐশী। কিন্তু রাফিন এটা সেটা কিনতে চাচ্ছে। ঐশী বারবার নিষেধ করছে, এতো কিছু প্রয়োজন নেই আপাতত। রাফিন চুপ হয়ে গেলো, কথা বাড়ালো না। ইচ্ছে থাকলেও সব ইচ্ছে পূর্ণ হয় না, যদি পকেটে টাকা না থাকে। টাকা না থাকলে কতশত ইচ্ছে কে বিসর্জন দিতে হয়, তা শুধু শূন্য পকেটে থাকা লোক গুলো বুঝে এই মানুষদের ভয়াবহ কষ্ট। আবেগে তো আর জীবন চলে না।জরুরী জিনিসপত্র গুলো দুজন মিলে কিনে নিলো। আপাতত একটা নরমাল খাট কিনলো, এবং বিছানার জন্য যাবতীয় জিনিস, আরো কিনলো একটা টেবিল, দু’টো চেয়ার, রান্না করার জন্য কিছু হাঁড়িপাতিল ইত্যাদি। আর কয়েক দিনের জন্য যাবতীয় বাজার ও করে নিলো। এসব কিনতে কিনতে দুপুর প্রায় শেষ হতে চলছে। দু’জন মিলে একসাথে দুপুরের খাবার’টা আজ ও হোস্টেলে খেয়ে নিলো।”
হঠাৎ রাফিন ঐশী কে বললো,
“তুমি একটু সময় এখানে বসো জান। আমার গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস কিনতে হবে। আমি যাবো আর আসবো, বেশী সময় নিবো না। কথা”টা বলে দ্রুত উঠে চলে গেলো।”
ঐশী পিছন থেকে ক্ষীণ চেঁচিয়ো বললো,
“আপনার কী এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কেনা বাকি একটু শুনি? সবইতো ঠিকঠাক কেনাকাটা কমপ্লিট। শুনুন অযথা একটা টাকা ও নষ্ট করবেন না।”
রাফিনের কান অবধি যেন ঐশী’র কথা পৌঁছলো না। সে কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেলো। ঐশী খানিক বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ হেলান দিয়ে বসে রইলো হোস্টেলে রাখা একটা চেয়ারের উপরে। বিশ মিনিটের মধ্যে’ই রাফিন চলে আসলো। বাট হাতে কিছু’ই দেখা গেলো না। ঐশী এভার কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন জুড়ে দিলো,
“কী কিনলেন? কিছু’ই তো দেখি না।”
রাফিন হেসে বললো,
” তুমি না মানা করলে, আমি তো আবার বউয়ের কথা উপেক্ষা করতে পারি না।একমাত্র বউয়ের বাধ্যগত জামাই আমি।”
“হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। চলুন। এবার বাসায় যাওয়া উচিত।”
“আচ্ছা চলুন। বউ পাখি! ”
________________
“বাসায় এসে দু’জন মিলে হাতে হাতে সব কিছু গুছিয়ে নিলো। সব কিছু গুছিয়ে নিতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। এই ঠান্ডা’র মধ্যে ও দুজনার গোসল করা প্রয়োজন। সারাদিন ব্যস্ততার জন্য গোসল করা হয়নি আজ, আরো রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে দু’জনার পোশাকে ধুলোবালিতে অবস্থা নাজেহাল। ঐশী আর দেরী না করে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তখন’ই রাফিন বাঁধা দিয়ে বললো,
” এ্যাই বউ! দাঁড়াও একটু অপেক্ষা করো।বলেই কিছু একটা খুঁজতে লাগলো।”
ঐশী ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো, রাফিন কে কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্ন করলো,
“কী খুঁজছেন এভাবে?”
“যেটা খুঁজছি পাচ্ছি না তো। এখানেই তো রাখলাম।”
ততক্ষণাৎ রাফিন আবার বললো,
“এইতো পেয়ে গেছি।”
হাতে একটা শপিং ব্যাগ। হাসিমুখে ঐশীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“এটাই খুঁজেছি। নেও। বলেই ব্যাগটা ঐশী’র হাতে ধরিয়ে দিলো।”
ঐশী ভীষণ কৌতূহল হয়ে ব্যাগটা খুলে দেখতে পেলো, নীল রঙের সুন্দর একটি শাড়ী। হঠাৎ মুখশ্রী গম্ভীর করে বললো,
“আপনি তখন এটা কিনার জন্য গিয়েছিলেন তাই না। এটা কেনাটা কী খুব বেশী জরুরী ছিলো। শুধু শুধু এভাবে টাকা গুলো নষ্ট কেনো করেন? কালকে কতগুলো জামা কাপড় আনলেন। আজকে আবার শাড়ী”টা আনলেন কিসের জন্য।”
“ঐশীর গম্ভীর কণ্ঠ শুনে, রাফিনের হাসি মুখটা চুপসে গেলো। অসহায় কন্ঠে বললো,
” এভাবে বলছো কেনো? আমি বেকার বলে কী আমার ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো ও পূরণ করতে পারবো না। বউয়ের জন্য একটা শাড়ী কেনার অধিকার কী আমার নেই? আমি এতোটা ও ফ’কি’র নয় যে বউয়ের জন্য একটা শাড়ী, সামান্য কিছু উপহার দিতে পারবো না। আজ আমি অস্বচ্ছল, আর্থিক ভাবে অসম্পূর্ণ বলে তুমিও আমাকে দয়া দেখাচ্ছো ঐশী!”
“ছিঃ! ছিঃ! এভাবে বলছেন কেনো? আমি এভাবে বলিনি। আমি তো বুঝাতে চেয়েছি,
শুধু শুধু টাকাটা নষ্ট না করে অন্য কাজে খরচ করতে পারতেন। মানে শাড়ী তো আর সব সময় পড়া হয় না। এগুলো পড়ে দিলেও হতো।”
“তুমি শুধু টাকা’টাই দেখলে, আমার ভালোবাসা’টা দেখলে না! শাড়ী’টা হয়তো দামী না, কিন্তু এটা আমি তোমার জন্য ভালোবেসে এনেছিলাম।”
ঐশী এভার ছলছল চোখে বললো,
“আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না, প্লিজ! রাফিন ভাই! আমি খুশী হয়নি তা কিন্তু নয়। জানেন আমি ভীষণ খুশী হয়েছি। আপনার দেওয়া প্রত্যেকটা জিনিস আমার কাছে ভীষণ দামী। আপনি কত টাকা দিয়ে কিনলেন এটা কোনো বিষয়’ই না,আপনি ভালোবেসে এনেছেন এইটাই মূল বিষয়। কারণ এতে জড়িয়ে রয়েছে আপনার ভালোবাসা। আর আপনার ভালোবাসা মূল্য আমার কাছে এক আকাশ সমান!
“টাকা পয়সা পাওয়া’র ভাগ্য তো ছোট ধরনের ভাগ্য! আর প্রিয় মানুষের ভালোবাসা পাওয়া’টা হলো বড় ধরনের ভাগ্য! আমি তো ভীষণ ভাগ্যবতী! আপনার মতো জীবনসঙ্গী পেয়েছি। আপনি এভাবে বললে আমার ভীষণ ভীষণ কষ্ট হয় রাফিন ভাই! নিজেকে অপ’রা’ধী মনে হয়।”
রাফিন ঐশী’কে নিজের বুকের সাথে মিলিয়ে নিয়ে বললো,
“হুঁস পাগ’লী! কাঁদবে না খবরদার! তোমার এসব টাকা’র চিন্তা করতে হবে না। আমি থাকতে তোমার এতো কিসের চিন্তা, চিন্তা করার জন্য আমি আছি। আমি তোমার বিষন্ন মুখ দেখতে চাইনা কখনো মায়াবিনী । তোমার মুখের হাসিটা’ই আমার ভালো থাকার কারণ। এই হাসি মখটা আজীবন দেখতে চাই।”
ঐশী আর কিছু বললো না। রাফিনের প্রশান্ত বুকের সাথে মাথাটা মিলিয়ে অনুভব করছে তার শ্যামসু্ন্দর পুরুষটি কে। এই বুকটাই তার একমাত্র নিরাপদ স্হান। রাফিন ফের আবার বললো,
“যাও এবার গোসল করে সুন্দর করে শাড়ী’টা পড়ে এসো। না পড়লে কিন্তু তোমার জামাই অনেক বেশী কষ্ট পাবে বউ!”
ঐশী মাথা তুলে তাকালো রাফিনের মুখশ্রী’র পানে। তারপরে বললো,
“শাড়ী তো আমি অবশ্যই পড়বো। আমার শ্যামসুন্দর কিউট জামাই কে আমি কী ভাবে কষ্ট দেই বলেন। তার আগে আপনি বলেন, আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কেনো রাফিন ভাই ?”
রাফিন মুচকি হেসে বললো,
“ভালোবাসা’র কোনো কারণ দেখে হয় না পাগ’লী। হঠাৎ করে হৃদয় থেকে একজনার প্রতী গভীর ভালোবাসা জন্মায় নিজের অজান্তেই। আর তুমি তো আমার বউ। বউতো ভালোবাসা জিনিস তাই ভালোবাসি! তুমি না ভাসলেও আমি বাসি!”
“আমিও আপনাকে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি!”
“দুজন দুই রুমের ওয়াশরুমে গেলো গোসল করা’র জন্য। রাফিনের গোসল শেষ, রুমে এসে দেখলো ঐশী এখনো বের হয়নি। এরি মধ্যে মাগরিবের আযান দিয়েছে, রাফিন জায়নামাজ ফ্লোরে বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ালো। এরি মধ্যে ঐশীও বেরিয়ে আসলো। রুমে রাফিন’কে দেখে নিঃশব্দে গেস্ট রুমে চলে গেলো। এই রুমটা একদম ফাঁকা, এখানে নিজেও নামাজ পড়ে নিলো। নামাজ শেষে চুল চিরুনী করছিলো ঐশী, হাতে ছোট্ট একটি আয়না। এখানে তো আর ড্রেসিং টেবিলে নেই তাদের। এসব দিয়ে’ই চলতে হবে এখন। রাফিন ঐশীকে খুঁজতে খুঁজতে গেস্ট রুমে এসেই তার চোখ দু’টো থমকে যায়। সদ্য গোসল করা, খোলা ভেজা চুল, নীল শাড়ী পরিহিতো মেয়েটাকে যেন আরো মায়াবী লাগছে। প্রিয় মানুষের এমন রুপ দেখে, স্বামী নামক প্রেমিক পুরুষটির হৃদয়ে ঝড় তুলে দিতে বাধ্য। রাফিন অপলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে তার মায়াবিনী’র পানে।
ঐশী হঠাৎ খেয়াল করে আয়নায় দেখতে পেলো, কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে তার দিকে স্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। ঐশী জানে এটা তার রাফিন ভাই। রাফিন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঐশী আনইজি ফিল করছে, আবার লজ্জা ও লাগছে। রাফিন আস্তে আস্তে ঐশী’র কাছে এসে থুতনিতে হাত দিয়ে বললো,
“মাশাআল্লাহ! আমার বউকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। তার এমন নিও নতুন রুপ আমাকে ভিতর থেকে এলোমেলো করে দেয়। যত দেখছি ততই মনে হচ্ছে এইতো প্রথম দেখছি তাকে। বলেই শীতল অধর ছুঁয়ে দিলো ঐশী’র কপালে।”
“প্রিয়জনার মুখ থেকে সব মেয়ে প্রশংসা শুনে চায়। এতে যেমন ভীষণ ভালোও লাগে আবার লজ্জা ও লাগে। ঐশী লাজুক হেসে বললো,
“আপনি একটু বেশীই বলেন। আমি এতো’টা সুন্দর নয়।”
“তুমি যেমনই হও আমার কাছে অপরুপা! দেখি চিরুনি দেও আমি চুল আঁচড়িয়ে দেই।”
রাফিন এমন ছোট ছোট যত্ন গুলো ভীষণ ভালো লাগে ঐশী’র । রাফিন সুন্দর করে চুল আঁচড়ি দিয়ে, পকট থেকে একটা বেলি ফুলের মালা চুলে পেঁচিয়ে দিলো। ঐশী বিস্মিত হলো,রাফিনের প্রত্যেকটা কাজ তাকে যেন অবাক করে। একটা মানুষ এতো যত্ন করে, নিখুঁত ভাবে কী ভাবে ভালোবাসে জানা নেই ঐশীর। ঐশী বিস্মিত কন্ঠ বললো,
“এই মালা’টা আবার কখন কিনলেন?”
“শাড়ীর সাথেই এনেছি। এবার চলো রুমে যাই।”
ঐশীর হাত ধরে বেড রুমে নিয়ে আসলো রাফিন। তারপরে খাটের উপরে বসিয়ে দিয়ে আঁচলে বাসার চাবিটা বেঁধে দিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
“আমি তোমাকে বড় কোনো ঘর দিতে পারিনি। আমাদের এই ছোট্ট সংসার’টা তোমাকে দিলাম। এই সংসারের একমাত্র রাণী আমার মায়াবিনী। তুমি আমার ঘরণী!”
“আমার বড় ঘর দরকার নেই। এই ছোট্ট সংসারে হয়তো বেশী কিছু জিনিসপএ নেই। তবে এই বাসা’টা ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। প্রত্যেকটা জিনিসে রয়েছে আপনার স্পর্শ। এই ছোট্ট সংসার’টাই আমার কাছে রাজমহল। আর এই রাজ্যের রাজা আপনি! আমি হলাম রাণী! বলেই রাফিনকে জড়িয়ে ধরলো। রাফিন ও পরম মমতায় তার বুকে জড়িয়ে নিলো তার অর্ধাঙ্গিনী কে।
চলবে..…….
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]
একবার অর্ধেকের বেশী লেখা ডিলিট হয়ে গিয়েছে। পরে আবার লিখে দিয়েছি, এজন্য বেশী বেশী রেসপন্স না করলে খবর আছে তোমাদের!