#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১০ (বোনাস-২)
Tahrim Muntahana
রাত ১০ টা বাজে। রেস্টুরেন্টের এই আলোকসজ্জা যেন চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মনের মধ্যে শান্তি, আনন্দ না থাকলে পরিবেশ যতই আনন্দঘন হোক সবকিছুই বিষাদ লাগে। তেমনি রেস্টুরেন্টে বসে থাকা সবার মনেই বিষাদ ঘেরা। আদর সেই যে কান্না শুরু করেছে আর থামার নাম ই নেই। হৃদানের কাছে নিজ পৃথিবীটা এলোমেলো লাগছে। উলোটপালট করে দিতে ইচ্ছে করছে সবকিছু। যার কান্না তার হৃদয়টাকে ক্ষত বিক্ষত করে দেয়, নিরব রক্তক্ষরণ হয় সেই মেয়েটি প্রায় ২০ মিনিট ধরে তার বুকে কাঁদছে। আর তাকে সেটি মানতে হচ্ছে। কিন্তু এখন সে মানতে পারছে না। এখন মনে হচ্ছে সে নিজেই মারা যাচ্ছে। আর আতইয়াব! সে তো এখন থেকেই নিরব কেঁদে যাচ্ছে। তার যে বোনের চোখে এক ফোঁটা পানি সহ্য হয় না। কিন্তু তার বোনকে সে কিছুই বলতে পারছে না। তার কাছে সবকিছুই ধোঁয়াশা লাগছে। হৃদান ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
স্টপ ক্রায় আদর। কিছু বলছি না বরে সুযোগ পেয়ে গেছো। থামতে বলেছি আমি। তোমার কান্নায় আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় আদুপরী। কেন কাঁদছো। প্লিজ সে। আ’ম ওয়েটিং।
ধমক শুনে আদর কান্না থামিয়ে দিলেও কান্নার ধাঁচে এখনো তার শরীর মৃদ কাঁপছে। হৃদানের দিকে একপলক তাকিয়ে সামনে তাকালো সে। হাসান শিকদারকে দেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। সামনে গিয়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। রাগ হচ্ছে তার এখন। তবুও শান্ত সুরে বলে উঠলো,
আমার বাবা কোথায় মি. শিকদার?
আতইয়াব চমকে উঠলো। ঘামতে শুরু করলো সে। কি বলছে আদর? বাবা কোথায় মানে? ও কি সব জেনে গেছে? কিভাবে জানলো? কি হবে সামনে? আদরের কথায় হৃদান ও চমকালো। আদরের বাবা! আদরের কোনো দিক খেয়াল নেই। ঠাস করে চড় বসাতে নিলেই হৃদান হাত ধরে ফেললো। এই মুহূর্তে তার বড় ছোটর খেয়াল নেই। যে তার অপরাধী তাদের সে একটুও ক্ষমা করে না। আদরের আচরণে সবাই বিশাল অবাক হচ্ছে। আদরের এমন ব্যবহার কেউ নিতে পারছে না। হৃদান আদরের হাত আলতো ভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
এই হাত পবিত্র! আমার হৃদয়ের ফুল তুমি। এই হাত দিয়ে অপবিত্রতায় স্পর্শ করা নিষেধ।
আদর মায়াবী চোখে তাকিয়ে রইলো আদর। হৃদান আরেকটু কাছে এসে বললো,
কে তোমার বাবা?
সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদর বলে উঠলো,
কমিশনার আহনাফ চৌধুরী!
হৃদান দু’পা পিছিয়ে গেলো। কি বলছে আদর। তার সুপারহিরোর মেয়ে আদর? কি করে সম্ভব! হৃদানের অবাক হওয়া দেখে আদর মুচকি হাসলো,
হ্যা আপনার সুপারহিরো আমার বাবা। একজন সৎ পুলিশ কমিশনার।
আতইয়াব আর নিতে পারছে না। আদর কে হারিয়ে ফেলার ভয় তার হৃদয়কে প্রচন্ড ভাবে গ্রাস করছে। তারিম আতইয়াবের একটি হাত শক্ত করে ধরে রইলো। আতইয়াব যেন ভরসা পেলো। এই হাতটা যেন তাকে বলছে, ‘রিলেক্স, কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো!’ আতইয়াবের এমন অবস্থা দেখে আদর হৃদান কে ছেড়ে তার দিকে এগিয়ে গেলো। আতইয়াব করুণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদর আতইয়াবের গালে হাত দিয়ে আবেগি কন্ঠে বলল,
ভয় নেই। বোন টা ডক্টর আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজের। হারাবো না। ভাই-বোনের সম্পর্ক আজীবনের! হৃদয়ের সাথে মিশে থাকে না?
আতইয়াব ঝটপট আকড়ে ধরলো আদরের হাত। চোখ তার পানিতে টইটম্বুর। আদর আবার হৃদানের কাছে ফেরত এলো। হৃদান হিসেব মেলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত।
সব জানতে পারবেন আগে এর স্টুপিডের কাছে শুনুন আমার বাবা কোথায়?
হৃদান আদরের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আজ সেই বাচ্চা আদর কে কতটা ম্যাচিউর লাগছে! হাসান শিকদারকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই একজন গার্ডকে ইশারা করলো। গার্ডটি হাতে করে একট ব্যাগ হৃদানের কাছে নিয়ে এলো। নিচু হয়ে গার্ডটি ব্যাগ থেকে ছুরি, রিভলবার, প্লাস, চিমটা আরো কিছু সরঞ্জাম ফ্লোরে সাজিয়ে রাখলো। হাসান শিকদার সহ উপস্থিত সকলেই আতকে উঠলো ; হৃদানের লোক ছাড়া। হৃদান বাঁকা হাসলো। আদর এত কিছুর পরেও স্ট্রং থাকার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। উপরের কঠিন সত্তাটাকে ছুড়ে ফেলে ভেতরের নরম সত্তাটা বের হয়ে আসতে চায়ছে। এত অস্ত্র দেখে তার ভেতর টাও কেঁপে উঠছে। হৃদান আদরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আদর ভড়কে গেলো। হৃদান ঠিক ধরতে পেরেছে আদরের মনের অবস্থা। গার্ডকে সম্মতি দিয়ে আদরের কাছে চলে গেলো। গার্ডটি বাঁকা হাসলো। এসব করতে করতে সে এমন পরিস্থিতিতে চলে এসেছে তার এসব না করলে শান্তি লাগে না। গার্ডটি এগিয়ে যাবে আদর থামিয়ে দিলো। তখনি দরজায় নক পড়লো। আদর গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ভেতরে ঢুকলো পান্চু। হাতে ডায়েরী! হ্যাঁ এটাই আদরের সেই ডায়েরী ; যা আতইয়াবের ভয়ে লুকিয়ে রেখেছিলো। আদর এবার গার্ডকে তার কাজ করতে বললো। আদর পান্চুকে কিছু বলবে পেছন ফিরে দেখে পান্চু নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে পান্চু পিয়াসের পেছনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। পান্চুর কাজে আদরের এই পরিস্থিতি তেও হাসি পেলো। হেসেই দিলো। আদরের হাসিতে পান্চু অপমানিত হলেও গায়ে নিলো না। গায়ে নিয়ে বেশী বাহাদুরি করতে গেলে নিজের ইজ্জত সে নিজের হাতেই শেষ করবে। কখন যে প্যান্টে হিসু করে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে কে জানে। পান্চুর ভাবভঙ্গি দেখে আদর জোরেই হাসলো। পান্চুর কাছে মনে হচ্ছে আদর তাকে বিদ্রুপ করছে। নাহ এ মেনে নেওয়া যায় না! সে কি ভিতু নাকি; খুব সাহসী সে। আজ এই অপমানের নিরব জবাব সে তার সাহস দেখিয়েই দিবে। পিয়াসের পেছন থেকে সরে গিয়ে পাশে দাড়ালো। অন্যান্য গার্ডদের মতোই বুক ফুলিয়ে দাড়ালো। নিজেকে সাহসী প্রমাণ করার একটা পথ আরকি। যখন আদরের দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদী হাসি ফিরিয়ে দিবে ঠিক তখন মি. হাসান ঘর কাঁপানো চিৎকার করে উঠে। আর পান্চু! ভয় পেয়ে আল্লাহ গো বলেই পিয়াসের পেছনে গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে গেলো। তার এত সাহসী হওয়ার কাজ নাই! আগে জীবন পরে ইজ্জত! এখানে তার বিয়ে করা বা না করা বউ নেই যে ইজ্জত ধরেই রাখতে হবে নাহলে সারাজীবন খোটা দিবে!
পিয়াসের পান্চুর দিকে কোন খেয়াল ই নেই। সে তাকিয়ে আছে তার বাম হাতের দিকে। যেখানে একটা মেয়ের হাত বিচরণ করছে। শুধু বিচরণ না চিমটি, খামচি যা পারছে দিয়ে যাচ্ছে। আর মেয়েটি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে হাসান শিকদারের নাকের উপর। পিয়াস নিজের কাজ শেষে আতইয়াবদের এখানেই দাড়িয়ে ছিলো। তার সম্পূর্ণ ধ্যান সামনের দিকে তাই পেছন বা সাইডে কে আছে দেখতে পায়নি। হাসান শিকদারের নাক যখন প্লাস দিয়ে চেপে ধরা হয় তখন সে চিৎকার করতে থাকে। সেই চিৎকারেই মেয়েটি উত্তেজিত হয়ে একের পর এক চিমটি খামচি দিয়ে যাচ্ছে। বলি শশুড়ের পোলার হাত পাইছে নাকি?আজব। কিন্তু পিয়াস অবাক হচ্ছে এটা ভেবে যে পান্চুর মতো একজন গার্ড এসবে ভয় পেয়ে কাঁপছে; মেয়েটি চোখ বড় বড় করে দেখছে। ভয়ের রেষমাত্র নেই! মেয়ের সাহসের উপর পিয়াস গভীর ভাবে ক্রাশ খেলো। মেয়েটি হলো রোহানি। সে একাই দাড়িয়ে ছিলো মাঝখানে দুজন চলে আসে। এতক্ষণে রোহানির খেয়াল হলো সে কি করছে। ফট করে পাশে তাকাতেই পিয়াস কে দেখে ভয় পেয়ে গেলো। হয়তো ভাবছে তাকে যদি মেরে দেয়। পিয়াস মুচকি হাসলো। মেয়েটিকে দেখে তার মা মা লাগছে না। কেমন অন্যকিছুর আভাস পাচ্ছে সে। তাহলে কি সে এই বছরেই হানিমুনে যেতে পারবে! কিয়া বাত হে! দিলটা খুশিতে ভরে গেলো!
হৃদান আদরের মাথাটা একদম বুকের সাথে চেপে রেখেছে। যেন বুকের মধ্যেই ঢুকিয়ে দিতে পারলে তার শান্তি। যত বার হাসান শিকদার চিৎকার করে উঠে ততবার আদর কেঁপে উঠে। হৃদান আদরের কাঁপুনিটা উপভোগ করে। তার শরীর ও মৃদু কাঁপে। এটা ভয়ে না প্রিয়জনের স্পর্শে!
হাসান শিকদার যন্ত্রণা আর সইতে পারলো না। সে স্বীকার করলে সহজ মৃত্য পাবে কিন্তু চুপ থাকলে এরা তাকে অমানুষিক কষ্ট দিয়ে মারবে। এর থেকে স্বীকার করায় উত্তম। চিৎকার করে বলে উঠলো সে বলতে রাজী। বাঁকা হাসলো হৃদান। আদর বুক থেকে মাথাটা উঠাতে চাইলেও হৃদান দিলো না। কারণ হাসান শিকদারের অবস্থা খুব খারাপ। রক্ত লেগে আছে সারা শরীর। দেখেই ভয় পাবে। অন্যদিকে পিয়াস পড়েছে চিপায়। একজন সামনে থেকে আরেকজন পেছন থেকে তার শরীরটাকে ঝাপটে আছে। না পারছে সরাতে, না পারছে কিছু বলতে। আতইয়াব শান্ত দৃষ্টিতে হৃদান-আদর কে দেখছে। তার বোন ওই হৃদানের বুকে সে মানতে পারছে না। তবুও কিছু বলতে না পারায় অসহায় লাগছে নিজেকে!
আহনাফ চৌধুরী কোথায় আছে ঠিক বলতে পারবো না বাট বেঁচে আছে উনি!
সবার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। বিশেষ করে আতইয়াব, হৃদান, আদরের। আতইয়াব এক ছুটে হাসান শিকদারের কাছে গিয়ে দাড়ালো। প্রশ্ন করতে লাগলো,
কোথায় উনি? বল কোথায় রেখেছিস উনাকে? সবটা বলবি? না হলে দ্বিগুন কষ্ট দিয়ে মারবো তোকে। তাও নিজের হাতে!
আতইয়াবের হিংস্র রূপ হৃদান কে চমকাতে বাধ্য করলো। হাসান শিকদার ভয়ে পেয়ে বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,
আমি জানিনা সে কোথায়। আহনাফ চৌধুরী ছিলেন একজন সৎ পুলিশ কমিশনার। আমার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায় সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছিলেন। তার থেকে বড় হলো চৌধুরী পরিবারের হঠাৎ করে গুম হওয়ার রহস্যের প্রায় শেষ মাথায় চলে গিয়েছিলেন তিনি। টাকার অফার করেও লাভ হয়নি। সে তার সিদ্ধান্তে অনড়। আমার নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে তাকে মারার দরকার ছিলো। প্ল্যান করে বাড়িতে হামলা করি। তার এক মেয়ে ছিলো। ভেবেছিলাম মেয়েকে হাতিয়ার করে কমিশনার মানাবো। নাহ তিনি সৎ ছিলেন ; যেকোনো পরিস্থিতিতেও সৎ ই থাকবেন। উনার চোখে সামনে শাট শাট গুলি করে উনার মিসেস কে মেরেছিলাম কিন্তু মেয়েকে বাঁচিয়ে নেয় উনি। পেছনের গুপ্ত দরজা দিয়ে বের হয় মেয়েকে কোথাও লুকিয়ে উল্টো দৌড়াতে শুরু করেন তিনি। গুলি করি টার্গেট করে। পিঠে একটা গুলি লাগলেও হঠাৎ একটা গাড়ি এসে তাকে তুলে নিয়ে চলে যায়। চারপাশে খুঁজেও তার মেয়েকে পায়নি।
হাসান শিকদারে কথা শুনে সবাই স্তব্ধ। নিয়ান নিজেও। সে জানতো তার বাবা খারাপ কিন্তু এতা খারাপ জানতো না। আতইয়াব বলে উঠলো,
পাবি কি করে। তখন সে আমার কাছে ছিলো। একদম আমার বুকে। তেরো বছর বয়সে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসি। সৎ মায়ের অত্যাচার, বাবার নিরব সমর্থন মানতে পারছিলাম না। আশ্রয় দেয় আহনাফ আংকেল। লুকিয়ে রেখেছিলো আমাকে। বেঁচে থাকার জন্য আমাকে তৈরী করছিলো। একদিন হঠাৎ করেই আংকেল ফোন দিয়ে বলে রাতে বাড়ির পেছনে থাকতে। আমিও তাই করি। আংকেল জানতো তার উপর হামলা হবে কিন্তু সেদিন ই যে হবে জানতো না। আমার কাছে আদর কে দিয়ে তোদের লক্ষ্য ভ্রষ্ট করতে উল্টোদিক দৌড়ায়। আমি ততক্ষণে বাগান পেরিয়ে গুপ্ত দরজা দিয়ে আদর কে নিজের বাড়িতে মানে গুপ্ত ঘরে লুকিয়ে রাখি। ওই জায়গার হদিস কেউ জানেনা। তারপর থেকেই শুরু হয় আমার লড়াই আর অপেক্ষা। আদর কে নিজের বোনের পরিচয়ে মানুষ করেছি। নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। সব আংকেলের জন্য। তিনি হয়তো সব জানতে পেরেছিলেন তাইতো তার সম্পত্তির ভাগ আদর আর আমাকে দিয়ে গিয়েছিলো। পরের ছেলেকে এতটা আপন করে নিয়েছিলো আমি বাবাকে ভাবতে পারিনি আর। কিন্তু তুই সব শেষ করে দিলি। কেড়ে নিলি আবার ভরসার হাতটাকে। শেষ করে দিবো একদম!
ছুরি হাতে এগিয়ে যাবে দুটো গার্ড অনেক কষ্টে আটকালো। হৃদান বলল,
চৌধুরী বাড়ির কি রহস্য?
সেটা আমি বলি?
হৃদানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে আদর কথাটি বলল। সবাই ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো। আদর স্বাভাবিক ভাবে বলে উঠলো,
বহু বছর আগে আপনার মা রিদিমা চৌধুরী আপনার বাবার সাথে প্রেম করতো। কিন্তু আপনার মায়ের পরিবারে প্রেম করে বিয়ের রিচুয়াল টা পুরোপুরি আউট ছিলো। মেনে নিতো না কেউ তাই তিনি পালিয়ে আসেন। সংসার শুরু হয়। আপনি এলেন। সুখেই কাটছিলো সংসার। কিন্তু রিদিমা চৌধুরীকে তার পরিবারের লোক মেনে নেয়নি। খানিকটা ডিপ্রেশনে ছিলেন এই বিষয়ে। এই সময় খুশীর সংবাদ নিয়ে এলো আপনার বোন। রিদিমা চৌধুরী আবার মা হতে চললেন কিন্তু বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় তিনি প্রাণ হারায়। ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে বাপ-ছেলে সারাদিন পড়ে থাকতেন। আরেকটা অবাক করার বিষয় হচ্ছে আপনার বাবা ভালোবাসার জন্য নিজের বিলাসী জীবন ত্যাগ করেছিলেন। আপনার মায়ের পরিবারের সাথে যে একবার বেইমানি করে তাদের বাঁচিয়ে রাখতেন না তারা সে যত ই আপন হোক না কেন । জমিদার লোক ছিলেন! তাই লুকিয়ে ছিলেন তারা। জমিয়ে রাখা সম্পত্তি থেকে একটু একটু খরচ করতেন আর হালকা কাজ করতেন। কিন্তু তারা জানতো না তাদের কে না পেয়ে একজন মানুষ দিন রাত এক করে ফেলছে। ভাইয়ের কলিজা ছিলেন তো রিদিমা চৌধুরী। কিন্তু যখন খুঁজে পেলেন তখন আপনার বাবাকে কে যেন মেরে ফেলেছে। আপনার বোনকে কে যেন চুরি করেছে আর বাকি রইলেন আপনি। আপনি তো চৌধুরীদের বিশাল সম্পত্তির একমাত্র মালিক। আপনাকে নিজেদের কাছে রেখে তারা সম্পত্তি নিতে চেয়েছিলো। তার আগেই আপনি সুপারহিরোর হাতে পড়েন। কয়েকটা মাসের সম্পর্ক উনার সাথে আপনার। তবুও বন্ডিং টা দারণ ছিলো। বাবা সব রহস্য বের করেই ফেলেছিলেন। পাবলিক করার আগেই ওরা বাবাকে সরিয়ে দিয়েছে!
আদরের কথা সবাই মুখে হাত দিয়ে অবাক হয়ে শুনছে। এতকিছু কি করে জানে সে। আদর মুচকি হাসলো ওদের দেখে আবার বলল,
আমি এতকিছু জানি কি করে? কারণ রিদিমা চৌধুরীই ছিলেন আহনাফ চৌধুরীর একমাত্র কলিজা। হ্যা আপনার সুপারহিরো আপনার মামা হোন! আর এই ডায়েরীটা এসবের সাক্ষী। বাবা যখন আতইয়াব ভাইয়ার কাছে আমাকে তুলে দেয় তখন এই ডায়েরী টা আমাকে দিয়েছিলো। বলেছিলো লুকিয়ে রাখতে। তাই ভাইয়ার থেকেও লুকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু এখানে সবকিছু সরাসরি না ইঙ্গিতে লিখা আছে। তাই তো আপনাকে প্রথম চিনতে পারেনি। সুপারহিরো বলায় চিনতে পারলাম।
হৃদান হাসান শিকদার কে নিয়ে যেতে বললো। একে লাগবে পরে। যাওয়ার সময় হাসান শিকদার বললো,
আমার ফোনের ম্যাসেজ বক্সে অনেক পুরো নো ম্যাসেজ আছে। তোমাদের উপকারে আসতে পারে।
সবাই ভ্রু কুচকালো। লোকটি তাদের সাহায্য করছে। আসলে হাসান শিকদার ভাবছে সব বললে হয়তো তাকে ছেড়ে দিবে। তা কি আদও সম্ভব! ফোনের ম্যাসেজ অপশন চেক করতে লাগলো। সবার নিচের ম্যাসেজটা ওপেন করতেই ওদের চোখ বড় বড় হয়ে এলো। কি হলো এটি? কে করতে পারে এমন? কিছুই ঢুকছে না!
চলবে..?
(মানুষ মাত্রই ভুল! ক্ষমা মহৎ গুন! ভুল-ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইলো। ছোট বলবেন না। বোনাস পার্ট এত বড় দেওয়া সম্ভব না। এতটুকুই অনেক কষ্টে লিখেছি। শুকরিয়া!)