#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_৮
Tahrim Muntahana
রাত সাড়ে আটটার মতো বাজে। ব্যস্ত শহরের মানুষ কাজ থেকে নিজ নিজ ভবনে ফিরছে। ক্লান্তিতে যেন শরীর চলে না। তেমনি ক্লান্ত শরীর নিয়ে গাড়িতে বসে আছে হৃদান। সে এখন আদর দের বাড়ির সামনে। ভেতরে যাবে কি যাবে না ভাবতে ভাবতেই আধা ঘন্টা কেটে গেছে। হৃদান চৌধুরীর এমন দিন এসে গেছে যে অন্যের বাড়িতে চুরি করে ঢুকতে হবে! আর কত কি দেখবে সে! অনেক কিছুই দেখার বাকি। ভেবেই মুচকি হেসে গাড়ি থেকে বের হলো। দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে ভাবতে লাগলো এখন কি করবে। তখনই চোখ পড়লো আদরের বেলকনির দিকে। ঘরে লাইট জ্বলছে। এগিয়ে গেলো সেদিকে। মনে পড়লো আতইয়াব বাড়িতে নেই। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই তাহলে। ঘুরে সদর দরজার দিকে পা বাড়ালো। প্রেমে পড়ে হৃদান চৌধুরী এখন ভয় ও পাচ্ছে!
নিজ ঘরে একদম বিছানার মধ্যখানে দু’পা ভাজ করে বসে আছে আদর। সে ভাবছে। ভাবনায় অনেক কিছু। সামনে রয়েছে একটা ডায়েরী। বহু পুরোনো ডায়েরী এটা বুঝার উপায় নেই। কারণ সে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলো। ডায়েরীটা খুলবে ভাব তখনই কলিং বেল বেজে উঠলো। চমকে উঠলো আদর। মনে হচ্ছে সে চুরি করে ধরা পড়েছে! তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেললো ডায়েরীটি। আদর ভেবেই নিয়েছে আতইয়াব এসেছে। আর আতইয়াব বাড়ি ফিরে সর্বপ্রথম তার রুমেই উঁকি মারে। বই নিয়ে পড়তে বসলো। কাল ভার্সিটিতে টেক্সট এক্সাম আছে। সে আবার ওতটাও ভদ্র স্টুডেন্ট না বাট ভালো স্টুডেন্ট। পাশ করতে যতটুকু লাগে তত টুকুই পড়তে চায় সে বাট তার লক্ষ্য যে বিশাল। তাই তো তার অতি বুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্ক টা এসব ঘাস টাস পড়ে অতিষ্ঠ! চোখ মুখ কুচকে পড়তে লাগলো।
রান্না করছিলো তারিম। আদর চেয়েছিলো তাকে সাহায্য করতে কিন্তু সে দেয়নি। মাত্র তিনজনের রান্না সে একাই করে নিতে পারবে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে তার বুকটা ধড়ফড় করে উঠে। সেও ভেবেছে আতইয়াব এসেছে। মানুষটাকে কতদিন পর দেখবে। আচ্ছা তাকে দেখে প্রতিক্রিয়া কেমন হবে মানুষটার। মলিন নাকি উজ্জ্বল? ভাবতে ভাবতে কখন দরজার সামনে এসে দাড়িয়েছে টের ই পায়নি। আবার কলিং বেল বাজতেই তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিলো। দরজার বাইরে হৃদান কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে যার পর নাই অবাক হলো সে। হৃদান কিছুই বললো না শুধু মুচকি হাসি উপহার দিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। তারিম হালকা হাসলো। পরক্ষণেই আতইয়াবের কথা মনে হতেই ভয় হলো তার। যদি দেখে হৃদান চৌধুরী তার ই বাসায় এসে তার ই বোনের সাথে প্রেমালাপ করছে নিশ্চিত আগে শাস্তিটা তার ঘাড়েই পড়বে! রান্না ঘরের দিকে ছুটলো। রান্নাটা আবার তার সাথে যেন রাগ না করে!
দরজায় টোকা পড়তেই আদর একপলক তাকালো দরজার দিকে। তারপর বইতে নজর দিয়ে ভেতরে আসার অনুমতি দিলো। হৃদান চুপিসারে ভেতরে ঢুকে আদরের পাশে বসে পড়লো। আদর তখনো পড়ছে। উদ্দেশ্যে ভাইয়ার সাথে কথা বলবে না। হৃদান অপলক দেখছে আদর কে। যত দেখে তত যেন স্বাদ মেটে না। কেন এত আকর্ষণ ওই মুখটাই? এত মায়া লাগে কেন তার! এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে হৃদান। আরো একটু কাছে আসলো সে। আদরের শরীরের সাথে তার শরীর ছুঁইছুঁই। আদর হটাৎ থেমে গেলো। তার মন বলছে পেছনের মানুষটা তার ভাইয়া না। অন্য কেউ! আর সে এখন অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে এক্সপেক্ট করছে। কিন্তু আদও কি সম্ভব এটা! ধপ করে পেছনে ফিরে হৃদান কে নিজের এত কাছে দেখেই আদরের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে শকড পেয়েছে অনেকটা। হৃদান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। আদরের গোলগোল চোখটা তার কাছে বিশাল সমুদ্র মনে হচ্ছে। সমুদ্রে মানুষ ডুব দেয় শরীর ভেজাতে, সে ওই গভীর চোখে ডুব দেবে মন ভেজাতে, ভালোবাসা কুড়াতে। আদর তাকিয়ে আছে হৃদানের দুষ্টুমিতে ভরা ঠোঁটের হাসিটার দিকে। এই হাসিটা তার খুব প্রিয়। গভীরতা মিশে আছে অনল ভাবে। এই হাসিটা তাকে নতুন ভাবে প্রেমে পড়তে বাধ্য করছে। চোখ ফিরিয়ে নিলো আদর। আকস্মিক জোরে চিৎকার দিতে যাবে হৃদান আদরের একদম কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো। আদর থেমে গেলো। তার শরীর কাঁপছে। হৃদপিন্ড দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। হৃদান উপলব্ধি করতে পেরেছে আদরের অস্বস্তি টা। যা তার মনে দারুণ আলোডন সৃষ্টি করছে। কই সে তো কম মেয়েকে দেখেনি। একবার হঠাৎ চোখ গেলেও দু’বার ফিরে তাকাতো না; মেয়েদের তো কাছেই ঘেসতে দিতো না। মেয়েরাও ভয় পেয়ে কাছে আসতো না; দূর থেকেই প্রেম নিবেদন করতো। আদর আর তারিম এই দুইজন মেয়ের দিকে হৃদান বহুবার তাকিয়েছে। একজন কে বোনের নজরে; আরেকজন কে ভালোবাসার নজরে দেখেছে সে। তার জীবনে ৪ জন মেয়ের প্রভাব স্পষ্ট। তার মধ্যে দুজন আদর তারিম! হৃদান আদরের ঠোঁটের উপর হাত রেখে বলল,
‘ডন্ট সাউন্ড আন্ডাবাচ্চা। ইটস মি!’
আদর স্বাভাবিক হয়ে হালকা চেচিয়ে বলে উঠলো,
‘আপনি! আপনি এখানে কি করছেন? কেন এসেছেন? কি দরকার? হঠাৎ কি মনে হলো আমাদের বাসায় আসতে হলো? এই আপনার মতলব টা কি বলুন তো! ইউ আর চেন্জ! আপনাকে এমন দেখে আমার নিজেকে ভিনগ্রহের প্রাণী না না এলিয়েন মনে হচ্ছে। কেন এমন করছেন? আপনার সাথে এসব যায় না! আপনি হৃদান চৌধুরী! গম্ভীর, নিষ্ঠুর, দয়াহীন, ক্যাবলাব্রিটিশ হৃদান চৌধুরী! আপনি এমন সাধারণ পাবলিকের মতো আচরণ করছেন কেন?’
এত গুলা কথা বলেও আদর হাপিয়ে যায় নি। কারণ সে এর থেকেও বেশী কথা বলে। কিন্তু এতগুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে হৃদানের মাথা আউট। এ মেয়ে তো হাই লেভেলের বাঁচাল! তারউপর কি বললো? ক্যাবলাব্রিটিশ? লাইক সিরিয়াসলি? ক্যাবলাব্রিটিশ কি? ভ্রু কুচকে বলল,
‘এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করছো কেন? কুল কুল আমি আছি তো। অনেকটা সময় থাকছি!’
আদর এবার আরো চমকে গেলো।অনেকক্ষণ থাকছে মানে। এই লোকটা পাগল হয়ে গেছে? আদর আঙুল উঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগেই হৃদান আঙুল ধরে আদর কে ঘুরিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। আদর ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট ও করেনা। সে জানে এই শক্তিশালী ক্যাবলাব্রিটিশের হাত থেকে ছাড়া তখনই পাবে যখন সে চাইবে। চুপ করে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হৃদান হেসে বলল,
‘আমি আমার মেডিসিনের কাছে এসেছি। নিজের অসুখ সারতে। যেই সেই অসুখ না। বিশাল অসুখ বাঁধা বেঁধেছে। শরীরে না! এই যে দেখো এই খানে!’
বুকের বাম পাশটা দেখিয়ে বলে আদরের দিকে চাইতেই দেখলো আদর হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদান একটু শব্দ করে হেসে উঠলো। খানিকটা সময় হেসে আবার বলল,
‘হৃদান চৌধুরী গম্ভীর, নিষ্ঠুর, দয়াহীন পৃথিবীর সবার কাছে থাকলেও তিনজন মানুষের কাছে হৃদান চৌধুরী খুব সফট, দায়িত্বশীল, কেয়ারফুলি, পাগল! এক আমার জানু পিয়াস, দুই আমার বোন তারিম, তিন আমার পাথর হৃদয় কে এক নিমিষেই ভেঙে দেওয়ার ঝড় তুমি! হ্যা হৃদান চৌধুরীর নিষ্ঠুর হৃদয়েও ভালোবাসার মতো সুক্ষ্ম অনুভূতিটা জন্মেছে। তীব্র ভাবেই গ্রাস করেছে হৃদান চৌধুরীকে। হৃদান চৌধুরীর পাথর হৃদয়টা কে আদর নামক ভালোবাসার ঝড় টা ভেঙে নতুনত্বের আভাস দিয়েছে। ভালোবাসা শিখিয়েছে! তাই তো হৃদান চৌধুরী আজ তার শত্রু আতইয়াব তাযিন ইততেয়াজের বাড়িতে এসেছে তার অনুপস্থিতে চুরি করে। যা হৃদান চৌধুরীর সাথে একদম যায় না।’
আদর গালে হাত দিয়ে একভাবে হৃদানের কথা শুনে যাচ্ছে। তার কাছে সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। হাজার মেয়ের ক্রাশ তাকে ভালোবাসার কথা বলছে! তার চেয়ে বড় কথা, দয়াহীন নিষ্ঠুর এক মানুষ ভালোবাসার বুলি আওড়াচ্ছে! আদর অবাক হয়েই বলে উঠলো,
‘আমাকে একটা চিমটি দেন তো। আচ্ছা আমি কি স্বপ্ন দেখছি? আপনি তো মানুষ ভালো না। ব্রিটিশদের মতো ক্যাবলা দেখতে লাগে। আপনার সাথে আমি প্রেম করবো না। ব্রেকআপ!’
হৃদান হো হো করে হেসে দিলো। এখন সে বুঝেছে ক্যাবলাব্রিটিশের মানে। আর সে প্রেম করলো কখন!এই মেয়ে প্রেম শরু আগেই ব্রেকআপ করছে! পরে কি করবে? নাহ সে প্রেম করবে না; ভালোবাসবে! আদর নিজের কথায় নিজেই হেসে দিলো। সে ও পাগল হয়ে গেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হঠাৎ করে পেয়ে গেলে মাথা ঠিক থাকার কথা? হৃদান আদর কে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় পা তুলে বসলো। আদর গম্ভীর মুখে বুকে হাত গুজে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
‘দেট মিনস আপনি প্রেমে পড়েছেন আমার? উমমম আচ্ছা ভেবে দেখবো!’
হৃদান মুচকি হেসে তাকিয়েই আছে। আদরের একেক সময় একেক ভঙ্গিমা তাকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করে। সে এখন অকারণেই হাসে। যার মুখে কখনো হাসি দেখা যেত না সে এখন অকারণেই হাসে। ভালোবাসা কতটা পরিবর্তন আনে! অন্য কোনো মেয়ে থাকলে হয়তো ভাবার সময় ই নিতো না। সাথে সাথে হ্যাঁ করে দিতো। আর এই মেয়ে ভালোবেসেও বলছে ভেবে দেখবে। এই মেয়ে সাধারণ কোনো মেয়ে না! সাধারণের মাঝে অসাধারণ! আদর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
‘আচ্ছা শুনুন ক্যাবলাব্রিটিশ! আমাকে গ্রান্টলি প্রপোজ করতে হবে। এমন ভাবে করতে হবে যেন আমি অবাক হয়ে যাই। তখন যদি মনে হয় ইউ সিলেক্টেড তখন ভেবে দেখবো!’
হৃদান এই কথাটা শুনেও হাসলো। সিলেক্টের পরেও সে বলছে ভেবে দেখবে। পাগল মেয়ে! আবার কলিং বেলর শব্দ আসতেই আদর লাফিয়ে উঠলো। ভয়ে তার মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। আদরের এমন অবস্থা দেখে হৃদান নিজেও ভয় পেলো। ধড়াস ধড়াস শব্দ করে দরজা ধাকাচ্ছে তারিম। সে তো রিতীমতো কাঁপছে। আস্তে আস্তে বলে উঠলো,
‘আদু, ভাইয়া বের হও। জম এসে গেছে। তোমরা দুজন তো সাপ নেওল! এখন কি হবে। আগে ই তো জনাব আদুর ঘরে আসবে।’
হৃদান ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
‘দরজা খুলে দাও। কিছুই হবে না। তোমরা অযহত ভয় পাচ্ছো। ওই ইবলিশ টাকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।’
ইবলিশ কথাটা শুনেই আদর চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আর তারিম ফিক করে হেসে দিলো। আদর হৃদানের শক্ত পেশীতে কয়েকটা কিল ঘুসি দিলেও হৃদান কে সরাতে পারলো না। তার কাছে মালিশ মনে হচ্ছিলো। তারিম গিয়ে সদর দরজা খুলে দিলো। আতইয়াব তারিম কে দেখেই চওড়া হাসলো। মন বলছে সে খুব খুশি। তারিম পাত্তা দিলো না। মুখ গম্ভীর করে দরজা থেকে সরে দাড়ালো। আতইয়াব ভ্রু কুচকে ভেতরে ঢুকলো। তারিম শব্দ করে দরজা লাগিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরলো। আদরের রুমের দিকে যেতে নিবে তারিম চেচিয়ে বলে উঠলো,
‘ওইদিকে কোথায় যাচ্ছেন। ফ্রেশ হোন। আদর পড়ছে। কাল এক্সাম!’
আতইয়াব থেমে গিয়ে বলল,
‘তোর এক্সাম নেই? নাকি বিয়ে হয়েছে বলে ভেবেছিস গুছিয়ে সংসার করবো পড়াশোনা বাদ। তাহলে বলবো ইউ ফেইল। ঘরে গিয়ে পড়তে বস যা।’
তারিম মুখ ভেঙচি দিয়ে ঘরে চলে গেলো। আতইয়াব মুচকি হাসলো। তার শান্তি শান্তি লাগছে। আর আদরের ঘরে গেলো না। নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। অনেক ক্লান্ত সে। রেস্ট দরকার!
____________________
অনেকক্ষণ হলো ভার্সিটি এসেছে আদর, তারিম। দুজনে সুবাহ’র জন্য অপেক্ষা করছে গেটের সামনে। তারিম এখন সব সত্য জেনে গেছে। তাই আর কোনো পিছুটান নেই। শুধু আতইয়াব ছাড়া। সে আতইয়াবের সাথে কথা বলেনা, যা বলে মুখটা গম্ভীর করে বলে। গাড়ি থেকে নেমেই সুবাহ দৌড়ে গিয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। কতদিন পর দেখা ওদের। ওরাও হালকা ইমোশনাল হয়ে গেছে। ফালাহ এসেই তারিমের মাথায় টোকা দিয়ে আদর কে জড়িয়ে ধরে। তারিম চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে ফালাহ’র দিকে। এতদিন সম্পর্কটা ইতস্ততার মধ্যে ছিলো এখন সব ঠিক। তারিম নিজেও ধুম করে ফালাহ’র পিঠে কিল বসিয়ে দিলো। ফালাহ চোখ মুখ কুচকে নিলো। বেশ ব্যাথা পেয়েছে। তারিম রেগে বলল,
‘বেশ হয়েছে আমার মাথায় আরো টোকা দিবে? তলে তলে প্রেম করে বেড়াও মি. ফালাহ অথচ আমরা জানিনা। আর তুই সুবাহ বেস্ট ফ্রেন্ডকেও বলতে পারলি না।’
তারিমের কথায় আদর বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
‘নিজে যে তলে তলে ভাইয়াকে ভালোবেসে গেছো জানিয়েছিলে আমাদের? ওদের ব্লেম করিস কোনো আক্কেলে? তোরা যদি আগেই সব বলতি, লুকোচুরি না করে এত নাটক হতো না। আবার কিছু লুকিয়ে দেখিস এই আদর কে আর পাবি না।’
ওরা তিনজন ই মাথা নিচু করে কানে ধরে সরি বলে উঠলো। আদর খিলখিল করে হেসে উঠলো। সাথে ওরাও। কত ভালো লাগছে এবার। ফালাহ ওদের থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বের হলো। আজ আতইয়াবের সাথে কথা বলতে হবে। কতদিন দুই বন্ধু কথা বলেনি। আদর ওরা কথা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে গেলো। পথিমধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হলো। সামনে এসে দাড়িয়েছে সিনিয়র! তার মধ্যে রকিব নামের ছেলেটি আদর কে পছন্দ করে। অনেক দিন ধরে ঘুরছে বাট আদর পাত্তা দেয়নি। ওরা একটুও বিচলিত হয়নি। এই ভার্সিটিতে আদর-তারিম-সুবাহ কে সবাই চিনে। আর ওদের কে কেউ কিছু বলার সাহস ও পায় না। শুধু ওরাই একটু ডিসট্রাব করে। আদর ঝামেলা চায় না বলে আতইয়াব কে কিছু বলে না। আদর ভ্রু কুচকে বলল,
‘আজ এক্সাম আছে, মাথা নষ্ট করলে খুব খারাপ হবে। এমন কেলানি দিবো বিয়ের শখ মিটে যাবে।’
আর কেউ কিছু বলার সাহস পেলো না। উল্টো ঘুরে চলে গেলো। রকিব যদিও কিছু বলতে চেয়েছিলো তারিম সুবাহ’র চোখ রাঙানি দেখে ভো দৌড়। তিনজন জোরে হেসে উঠলো। এ নাকি আবার প্রেম করবে। মাথা না ঘামিয়ে হলের দিকে চলল। আজ পরীক্ষা দিয়ে তিন বান্ধুবী ঘুরবে। অনেকদিন হলো ঘুরাঘুরি হয়না। পরীক্ষা শেষ। সবার পরীক্ষা আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো হয়েছে। তিনজন গেটের কাছে আসতেই অবাক হলো। স্টুডেন্ট রা ভিড় করে দাড়িয়ে আছে এক জায়গায়। ওদের ও কৌতুহল হলো। এগিয়ে গেলো দ্রুত পায়ে। ভিড় ঠেলে সামনে যেতেই আদরের চক্ষু চড়ক গাছ। হৃদান চৌধুরী দাড়িয়ে আছে। কয়েকহাত দূরে গার্ড রা সারিবদ্ধ ভাবে দাড়ানো। হৃদানে সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে ভার্সাটির সিনিয়র হিয়া। মেয়েটা অভার স্টাইলিশ। হৃদান বলতে পাগল। ভার্সিটির সবাই ই জানে এটা। হৃদান বিরক্তি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মেয়েদের সাথে যেমন সে কথা বলে না তেমনি অসম্মান ও করেনা। তাই এখনো হিয়া অক্ষত অবস্থায় দাড়িয়ে আছে। আর হিয়া সে তো ভাবছে হৃদান তাকে সুযোগ দিচ্ছে। আদরের রাগ উঠে গেলো। হিয়া এখন হৃদানের গায়ে পড়ার চেষ্টা করছে। হৃদানের রাগে চোখ লাল হয়ে গেছে। আদর আকাশ সমান রাগ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে হিয়ার হাত ধরে পেছনে টান দিলো। ছিটকে পিছিয়ে গেলো হিয়া। হৃদান আদরের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে আদরের অপেক্ষায় করছিলো। আর এমন কিছু হওয়ার আশায় করছিলো। এমন ধাক্কা দেওয়ায় হিয়া রেগে গেলো আদরের উপর। তেড়ে আসতে নিবে তার আগেই হৃদান চিৎকার করে বলে উঠলো,
‘স্টপ। ডন্ট ক্রস ইউর লিমিট। এতক্ষণ কিছু বলিনি বলে ভেবে বসার কিছুই হয়নি আর কিছু বলবও না। ওর দিকে আরেকটু এগোলো পা কেটে রেখে দিবো।’
হিয়া থেমে গেলো। এগোনোর সাহস আর হলো না। তাকে যে এখনো কিছু করেনি সেই অনেক। বাট সবাই অবাক হয়ে দেখছে। আদরের রাগ এখনো কমে নি। তেড়ে গিয়ে হিয়াকে কিছু বলতে নিবে হৃদান আটকে দেয় আদর কে। হাত পা ছুটোছুটি করতে থাকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। হৃদান না পেরে আদর কে পাজাকোলে তুলে নিয়ে গাড়ির দিকে অগ্রসর হয়। আদর তখনো চেচিয়েই যাচ্ছে,
‘তোর ভাগ্য ভালো আমি আগে আসেনি। নাহলে আজ তোর মরন আমার হাতেই হতো। তোর কত্ত বড় সাহস তুই আমার ক্যাবলাব্রিটিশের দিকে নজর দিস। এই মানুষটা একান্তই আমার। এরপর যদি তোকে হৃদানের আশেপাশে দেখি তোর গলা কেটে খেলা দেখাবো বাচ্চাদের।’
হৃদান হাসছে আর হাটছে। আদর তার মনের কথা অজান্তেই বলে দিয়েছে সেটা নিজেই টের পায়নি। তারিম সুবাহ হিয়ার কাছে গিয়ে হো হো করে হেসে দেয়। জ্বলে উঠে হিয়া। দুজনে দৌড়ে গিয়ে হৃদানের গাড়িতে উঠে বসে। এই হিয়াকে বিশ্বাস নেই। কখন কি করে দেয়। গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্টার্ট দেয় হৃদান। কি প্ল্যান করেছিলো কি হলো! সবটা ওই মেয়ের জন্য শেষ হয়ে গেলো। তবুও হুট করেই সে তার জীবনের সেরা প্রাপ্তিটা পেয়েছে। গাড়িতে বসে তখনও আদর রাগে ফুসছিলো। হৃদানের মনে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো। সে স্বার্থক! সে পেয়ে গেছে! আচ্ছা আদও কি সে পেয়েছে? তার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে? সে অপূর্ণতার ভালোবাসাকে বরণ করতে পারবে না! যে মানুষটা তার সে তার ই থাকবে। যো কিছুই করা লাগে সে তার ই থাকবে! একান্তই তার!
চলবে…?
(মানুষ মাত্রই ভুল! ক্ষমা মহৎ গুন! ভুল-ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ রইলো। কালকে ধামাক্কা কিছু থাকছে হয়তো! শুকরিয়া!)