ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ৩৪

0
166

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ৩৪

“শেখ বাড়ি আজ বাহারি আলোক সজ্জায় সজ্জিত। পুরো বাড়ি জুড়ে জ্বল-জ্বল করছে কৃত্রিম আলোকসজ্জায়। কেননা আজ চৈতীর বিয়ে।”

” গতোকাল গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান কোনো ঝামেলা ছাড়া’ই সম্পূর্ণ হয়েছে। হলুদ অনুষ্ঠানে সায়েম ও এসেছিলো।সায়েম কে দেখে রাফিনের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠলো। হুট করে সায়েম এসেই রাফিনের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলো। রাফিন সৌজন্যতার ক্ষাতির ভদ্র বিহেভিয়ার করেছে ঠিকই। তবে সায়েম যতক্ষণ ছিলো ঐশী কে একপ্রকার চোখে চোখে রেখেছিলো রাফিন। যাই হোক এসব লোকদের মোটেও বিশ্বাস করে না রাফিন। ঐশী নিজেও বেশ সতর্ক ছিলো। তবে রাফিন খেয়াল করলো সায়েম কারো সাথেই কোনো বাজে বিহেভিয়ার করেনি। একদম ভদ্রলোকের মতো ছিলো। এমনকি কোনো মেয়ের দিকেও চোখ তুলে তাকায়নি। সাইফ বেশ খুশী হয়েছে ভাইয়ের এমন পরিবর্তনে। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান পর্ব কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষ হয়েছে।”

“পুরো বাড়ি কোলাহলে পরিপূর্ণ।গ্যাঞ্জম পার্টির সবাই এসেছে বিয়ের তিনদিন আগেই। তারা বেশ এনজয় করছে, তাদের সাথে যোগ দিয়েছে বিয়ে উপলক্ষে আসা ইয়াং জেনারেশন। সবাই বেশ আনন্দ করছে। শফিকুল সাহেব ভীষণ ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। তিহান ও বড় ভাই হিসেবে নিজ হাতে সব দায়িত্ব পালন করছে। বোনের বিয়েতে কোনো প্রকার ত্রুটি রাখতে চান’না তিহান। নিমন্ত্রণ জানানো অনেক অতিথি ইতোমধ্যে উপস্থিত হয়েছে।”

“চৈতী কে পার্লারের মেয়ে’রা সাজিয়ে দিচ্ছে। সে খানেই খানিক মন খারাপ করে বসে রইলো ঐশী, সাথে রয়েছে মিতু, রিয়া, জান্নাত। আজ তার আপু সারাজীবন এর জন্য বাড়ি থেকে বিদায় নিবে। চাইলেও আর আঁটকে রাখা যাবে না। আজ যে তার আপু অন্য কারো অধিকার হয়ে যাবে। চাইলেও তারা আর অধিকার খাটাতে পারবে না। এই বোনের সাথে কত খুনসুটি দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া করছে দু’জন মিলে। আজ সব কিছু ছে’ড়ে ছু’ড়ে অন্য বাড়িতে চলে যাবে। সেই বাড়িই হবে তার আসল ঠিকানা। সব স্মৃতি’রা যেন মাথা চাপা দিলো ঐশী’র স্মৃতিচারণে। কোথাথেকে যেন গায়বী আয়োজ শুনতে পেলো ঐশী,

“তুই চাইলেও আর আগলে রাখতে পারবি না ঐশী! সে অন্য কারো, পুরোটা জুড়ে অন্য কারো রাজাত্ব চলবে। সে মাএ তোদের বাড়ির অতিথি ছিলো। আজ চলে যাবে তার আসল ঠিকানায়!”

ঐশীর চোখ জুড়ে অশ্রু টলটল করছে, চোখের কার্নিশ বেয়ে দু’ফোঁটা নোনা জল গড়িয়ে পড়লো। দ্রুত জলটুকো মুছে ফেললো সবার অগোচরে। চৈতী’র পাশে গিয়ে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে মলিন হেসে বললো,

“বউ সাজে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপু। কারো নজর না লাগুক।”

বলেই জড়িয়ে ধরে বোনের কপালে চুমু খেলো ঐশী। এদের কথার মধ্যে জান্নাত বললো,

“এটা কি হলো ঐশী? কারো নজর না লাগুক মানে কি ভাই। বলবি, দুলাভাই এর যেন নজর আঁটকে যায়, বাকি কারো নজর না লাগুক।”

“জান্নাতে কথায় হাসলো সবাই। সানজিদা শেখ দূর থেকে তার মেয়ে’র দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখে’র জল মুছছে। মেয়ের কাছে গেলেই তার বুকটা হুহু করে কেঁদে উঠে। তার মেয়েটা যে আজ পরের ঘরে চলে যাবে, তার ঘর শূন্য করে!”

এরি মধ্যে বাহির থেকে শব্দ হৈচৈ পড়লো “বর এসেছে! বর এসেছে!”

“শব্দ’টা কানে আসতেই চৈতী নড়েচড়ে বসলো। একদিকে তার আনন্দ হচ্ছে, সারাজীবনের জন্য প্রিয় মানুষটাকে পবিত্র বন্ধনে আপন করে পেতে চলছে। অপর দিকে বাবা-মা পরিবারের কথা ভাবতেই বুকটা ভারি হয়ে আসছে তার। চোখের কার্নিশ বেয়ে টপটপ করে অশ্রু গুলো গড়িয়ে পরছে ”

” রিয়া সহ বাকি সবাই ছুটলো গেটের কাছে। সাথে ঐশী কে নিয়ে এসেছে। পথের মধ্যে’ই রাফিন কে দেখা গেলো। তিহানের সাথে সেও এটা সেটা করছে, তাই ব্যস্ততার কারনে কথা হয়নি ঐশীর সাথে। ঐশী’র দিকে চোখ পরতেই মূহুর্তে”র মধ্যে হার্ড-বিট যেন থেমে গেলো রাফিনের। ঐশী কালো রঙের একটা শাড়ি পড়েছে, অবশ্য শাড়ী’টা রাফিন’ই পছন্দ করে দিয়েছে ফর্সা শরীরে যেন শাড়ি’টা খুব বেশিই মানিয়েছে। সাথে চুল গুলো খোলা, হালকা সাজে যেন অপরুপা লাগছে। রাফিন থমকে গিয়ে স্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো তার মায়াবিনী’র মুখশ্রী’র পানে। অন্য দিকে কোনো খেয়াল’ই নেই তার। রাফিন কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঐশী’র ভীষণ লজ্জা করছে। রিয়া, জন্নাত,মিতু মুখ টিপে হাসছে আর ঐশী”কে খোঁচাচ্ছে। একটা সময় ঐশী কে রেখেই তারা গেট ধরবে বলে চলে গেলো। ঐশী রাফিনের কাছে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে কিয়াৎক্ষণ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কেউ দেখলে কি ভাববে বলুন তো।”

“রাফিনের ধ্যান ভাঙলো আশপাশের দৃষ্টি বুলালো, আবারো ঐশীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো, আমি আমার বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। অন্য কেউ কি ভাবলো না ভাবলো, আই ডোন্ট কেয়ার! তার আগে তুমি বলো,

“আমাকে কি মা’রার প্লান করছো?

“ঐশী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, মানে এসব কি বলছেন?”

রাফিন মৃদু হেসে বললো,

“তোমাকে তো ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।! যা দেখে আমি হার্ডের রোগী হয়ে যাচ্ছি জান!”

“অদ্ভুত সুন্দর আবার ভয়ংকর হয় নাকি? ঐশী বললো।”

রাফিন বুকে হাত বেঁধে আশেপাশে আবারো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মোহনীয় কন্ঠে বললো,

“একটা মেয়েকে যখন বাড়াবাড়ি রকমের সুন্দর লাগে, মেয়েটিকে দেখে ছেলেটির হার্ড অস্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু করে। অথচ ছেলেটি চাইলেও তখন ছুঁয়ে দিতে পারে না তার রূপবতী কে। ভালোবেসে বুকে টেনে নিয়ে তার কপালে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে না পারে। ভিতরে তোলপাড় করা এমন তিব্র ইচ্ছে কে যখন সামলে রাখতে হয় তখন মেয়েটার এমন সৌন্দর্য ছেলেটার কাছে ভয়ংকর ঠেকায় বউ!

ঐশী খানিক লজ্জা পেলো, রাফিনে দিক থেকে দৃষ্টি নামিয়ে বললো,

“আপনি দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছেন রাফিন ভাই। ”

রাফিন ঐশীর পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালো, কপালে পরে থাকা ছোট চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দিয়ে সবার অগোচরে কানের নিচে টুপ করে একটা চুমু খেলো। তারপর ফিসফিস করে বললো,

“বউয়ের কাছে নির্লজ্জ না হলে তোমার ফুটবল টিম বানাবো কি করে বউ! আমাকেই তো সাহায্য করতে হবে!”

রাফিনের এমন কথায় বিষম খেলো ঐশী। গোল গোল চোখ করে তাকালো রাফিনের দিকে। ঐশী’র এমন অপ্রস্তুত লজ্জা মিশ্রিত মুখ দেখে হেসে ফেলে রাফিন।

‘”দূর থেকে একজোড়া হিংস্র চোখ তাদের দিকে তাকিয়ে, কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।”

হঠাৎ রাফিন মুখশ্রী জুড়ে গম্ভীরতা টেনে বলে উঠলো,

“তোমার সৌন্দর্য শুধু মাএ আমি দেখবো। আমার নামে সাজবে তুমি। আমি দেখে ফেলছি, এখন যাও সুন্দর করে হিজাব বেঁধে তারপর বাহিরে এসো। আর হ্যাঁ, আজকে একটু সাবধানে থেকো বউ পাখি !”

ঐশী যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এখানে থাকলে আরো কী জানি লজ্জায় পরতে হয় তাকে কে জানে। দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। হুট করে রাফিন পিছন থেকে হাত ধরে টান দিলো। আকস্মিক ধা’ক্কা’য় ঐশী হুমড়ি খেয়ে গিয়ে রাফিনের বুকে মাথা বিঁধলো। রাফিন শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। পিছন থেকে রবিন চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“এই না এখন না!”

“আকস্মিক কণ্ঠ স্বর শুনতে পেয়ে দু’জন ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালো। রবিন আবারো মুচকি হেসে রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

” আমি কিছু দেখিনি ভাইয়া।”

“ঐশী রাফিনের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে এক প্রকার দৌড়ে নিজের রুমের দিকে গেলো। রাফিন ফাঁকা ঢোক গিললো, কি সাংঘাতিক লোক ভাই এরা! আমি কি জিজ্ঞেস করছি তুমি দেখছো কিনা।”

“রাফিন পাংশুটে মুখ করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কাজে অযুহাত দেখিয়ে চলে গেলো। রবিন এদের যাওয়ার দিকে ভাবুক হয়ে বলে উঠলো,

“এ মা এদের আবার কি হলো? আমি আবার কি করলাম!”
________________________

-বর-পক্ষ , কনে পক্ষের লোক ইতোমধ্যে সবাই চলে এসেছে। বাহিরে কোলাহলে পরিপূর্ণ পরিবেশ।বাসা একদম ফাঁকা শুধুমাএ কয়েকজন বয়স্ক মহিলারা আছে। চৈতী-দের বিয়ে পড়ানো হবে এখন তাই সবাই স্টেজের কাছে গিয়েছে। সবাই’ই এখন ভীষণ ব্যস্ত। ঐশী তাড়াহুড়ো করে রুমে এসে হিজাব বাঁধার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেহেতু বাসায় তেমন কেউ নেই তাই আর দরজা লক করার প্রয়োজন মনে করলো না। এমনিতে চাপানো।”

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দরজা’র দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করেতেই অপরপ্রান্তে থাকা লোকটি দেখে ঘাবড়ে যায়। ফাঁকা ঢোক গিলে, চোখে মুখে কাঠিন্য ভাব এনে লোকটির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

“আপনি এখানে কেনো? কোনো কিছু দরকার। কিছু লাগবে?”

অপর প্রান্তে থাকা লোকটি হিংস্র চোখে তাকালো ঐশীর শরীরে দিকে। মুহূর্তে’ই লোভনীয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, মুখে শ’য়’তা’নী হাসি টেনে বললো,

“তোমাকে চাই সে’ক্সি! শাড়িতে তোমায় আরো হ’ট লাগছে! আমার তো…. বলেই জিব্বাহ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো।”

“এমন বিশ্রি বাক্য কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই শরীর ঘিনঘিন করে উঠলো ঐশী’র। মুহূর্তে’ই ক্রোধিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছু বলার আগেই দরজা লক করতে চাইছে লোকটি। ঐশী’র যেনো গা হিম হয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে আসছে, বড্ড জলতেষ্টা পেয়েছে তার। নিজেকে কিছু’টা স্বাভাবিক করে, লোকটির পিছন বরাবর জোরে লা’থি মারলো। লোকটা কিছু’টা ছিটকে দূরে সরে গেলো। ব্যথা পেয়ে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো। ঐশী এই ফাঁকে যেইনা দরজা দিয়ে বাহিরের জন্য পা বাড়াবে, মুহূর্তেই হিংস্র বাঘের মতো শক্ত পুরুষালী হাত দিয়ে, ঐশী’র হাত ধরে টান দিলো লোকটি। ঐশী থুবড়ে গিয়ে ফ্লোরে পরে গেলো। কপাল কে’টে খানিকটা র’ক্ত বেরিয়ে আসলো। লোকটি গিয়ে ঐশী’কে টেনেহিঁচড়ে তুললো। দু’জনার মাঝে বেশ ধস্তাধস্তি চলছে। পুরুষের শক্তি’র সাথে পেরে উঠলো না ঐশী। ক্লান্ত হয়ে শরীরের ভার ছেড়ে দিলো।

চলবে………….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here