#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_১৭
Tahrim Muntahana
গোধূলি বিকেল শুরু। সূর্যটা এখনো হালকা তেজ দিচ্ছে। এই গরমে সূর্যটা আকাশ ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাও করে না। মনে হয় আকাশ কে তার তেজ দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ভালোবাসায়। কিন্তু এই ভালোবাসা তো ক্ষণস্থায়ী। সূর্যকে আকাশের বুক থেকে চলে যেতেই হবে। চাঁদের আগমন ঘটবে আবার এই আকাশের বুকেই। সেই অভিযোগ; সূর্য যেন নিজের রাগ দিয়ে প্রকাশ করছে। যার ফল ভোগ করছে মানবজাতি। কিছু ভালোবাসার জন্য হয়তো অন্যকে ফল ভোগ করতে হয়। ভালোবেসে কষ্ট পেয়ে নিজেকে ধাবিয়ে রাখার চেষ্টায় কিভাবে অন্যের ক্ষতি হয় বুঝ ই আসে না। যার দৃষ্টান্তে স্থান পেয়েছে হিমেল খান!
পুরো বাড়িতে হইচই লাগিয়ে দিয়েছে হিমেল। নিজের ভেতরকার ক্রোধ দ্বারা বাড়িটা মুহূর্তেই নিরব নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। তার মুখে এখনো বিড়বিড় শব্দে শোনা যাচ্ছে,
আমি আদর কে চাই; আমার আদরকে এনে দাও; আমার আদরকেই লাগবে; আর কোনো মেয়ের জায়গা নেই আমার জীবনে; যে করেই হোক আমার আদরকে চাই ই চাই; খুন হয়ে হোক নাহয় খুন করে! আদরকে লাগবে!
হাইরে ভালোবাসা! এ যে কূলকিনারা মানে না, বাঁধা মানে না; কিন্তু অপাত্রে দান করলে দান টা তো ব্যর্থ হবেই। হিমেলের ভালোবাসাটাও ব্যর্থ। সে দুজন ভালোবাসার মানুষের মধ্যে এসে তাদের দুজনকে আলাদা করার চেষ্টায় আছে!
ফ্লাসবেক,
দুপুরের মাঝ সময়টাতে আদর বসেছিলো একটি পার্কে। পাশেই তারিম সুবাহ বসে গল্প করছে। ভার্সিটি শেষে একটু ঘুরতে এসেছে তারা। আদর এখন পুরোপুরি সুস্থ। আনমনে ভেবে চলছিলো হৃদানের কথা। দিন গুলো কিভাবে চলে যাচ্ছে। ঘুরতে যাওয়ার এক সপ্তাহ কেটে গেছে অথচ আদরের কাছে মুহূর্তগুলো এখনো জীবন্ত লাগে। অনুভূতিটা তো জীবন্তই! এই এক সপ্তাহে তেমন দেখা না হলেও হৃদান আদরের খেয়াল নিতে ভুলেনি। প্রচন্ড কাজের প্রেসার হৃদানের। নিউ ডিলটা নিয়েই কাজ করছে। কাজের মধ্যেও হঠাৎ হঠাৎ ফোন করে আদর কি করছে, ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা সব খোঁজ খবর নিয়ে আবার কাজে মনোযোগি হয়। হালকা রোমান্টিক কথা বলতেও ভুলে না। সত্যিই হৃদান চৌধুরী আজ ভয়ংকর পাগল প্রেমিক হয়ে গেছে। শুধুই আদরের! ভাবছিলো আর মুচকি হাসছিলো আদর। তারিম সুবাহ কয়েকটা বাচ্চাদের সাথে কথা বলছে কিছুটা দূরে। হঠাৎ নিজের সামনে পুরুষালি ছায়া দেখে বিচলিত হয় আদর। ছায়ার মানুষটা তার না! ফট করে মাথা তুলে অচেনা এক ছেলে কে ভ্রু কুচকায় আদর! কিছু বলে না। এটা যেহেতু পার্ক আসতেই পারে। অন্য মুখো হয়ে বসতেই আবার সেই লোকটা আদরের সামনে গিয়ে দাড়ায়। আদর এবার বুঝে যায় লোকটা তার কাছেই এসেছে। দাড়িয়ে যায় সে। কপাল কুচকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,
নিশ্চয় আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে। পার্কে একা সুন্দরী একটা মেয়ে বসে আছে লাইন মারায় যায়! তাই আপনিও ঠিক লাইন মারতে এসেছেন তাইতো? আগেই বলে দিচ্ছি কাজ হবে না ভাই। এই পৃথিবীতে একজন বাদে সব যুবকই আমার ভাই হয়। তাই ভাই বলছি কি প্লিজ লিভ। একবার যদি জানতে পারে আপনি তার সম্পদের উপর নজর দিয়েছে আল্লাহ মালুম কি হবে!
আদরের কথায় লোকটির মুখ থেকে মুচকি হাসি সরে গম্ভীর হয়ে যায়। হটাৎ করেই নিচে বসে পড়ে। আবেগি কন্ঠে বলে উঠলো,
প্রথম দেখাই ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। আমি জানিনা কি আছে তোমার মধ্যে। তোমার ওই তেজী চাহনী ঘায়েল করে দিয়েছে আমায়। কম মেয়েকে দেখেনি কিন্তু কারো চোখ, চোখের চাহনী এতটা জীবন্ত লাগেনি। প্লিজ এক্সেপ্ট মি। আ’ম হিমেল খান। সান অফ হিয়ান খান। কোনো কিছুর কমতি নেই। টাকা, বাড়ি গাড়ি, যথেষ্ট সুদর্শন দেখতে আমি। রানি হয়ে থাকবে তুমি! আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ। প্লিজ!
আদর গাঢ় চাহনীতে তাকিয়ে আছে। ভেতরে কি চলছে বোঝা মুশকিল। হিমেল তখনো আদরের দিকে হাত বাড়িয়ে বসে আছে। চোখ বলে দিচ্ছে সে চায়ছে আদর তার হাত টা বাড়িয়ে দিক। কিন্তু আদর দু পা পিছিয়ে গেলো। হিমেল চমকে দাড়িয়ে গেলো। এই হিমেল খান কে রিজেক্ট করা পসিবল? আদর আবার তিন পা এগিয়ে এসে বলল,
আপনি হিয়ান খানের ছেলেই হোন বা প্রেসিডেন্টের ছেলেই হোন আই ডন্ট কেয়ার। আদর আহমেদ কে সস্তা ওই সব মেয়েদের খাতায় ফেলবেন না যারা আপনার টাকা রুপ থেকে আপনার জালে ফেঁসে যায়। আমাকে ভালোবাসেন অথচ খুঁজ নেন নি। আপনার কাছে আমি রানি হয়ে থাকবো আর দুজনের কাছে আমি রাজরানী হয়ে আছি! এক আমার ভাইয়া আর দুই আমার ভালোবাসার মানুষটা। আপনি যদি সাধারণ প্রেম নিবেদন করতেন আমি আপনাকে না বলে দিতাম এমনকি আপনাকে বন্ধু করে নিতাম। কারণ ভালোবাসায় কারো হাত থাকে না, হঠাৎ করেই হয়ে যায়। কিন্তু নাহ আপনি তো আমাকে টাকার লোভ দেখাচ্ছেন! তাই আপনাকে ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ার্নিং আমার সামনে আসবেন না ; নাহলে আপনার সাথে কিছু হলে আমি দায়ি না! গেট আউট!
হিমেলের চোখ মুখে রাগ ফুটে উঠলো। সামান্য একটা মেয়ে তাকে এত কথা শুনাচ্ছে। এত বড় সাহস তাকে রিজেক্ট করে। নিজেকে সংযত করে বাঁকা হেসে বলে উঠে,
আমার চোখ একবার যার উপর পড়েছে তাকে তো আমার হতেই হবে। আই লাইক ইউর এনগ্রি ফেচ। ইয়েস তোমাকে আমার হতেই হবে। এট এনি কস্ট। আগে তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে মারবো তারপর তোমাকে বউ করবো। তাও ১৫ দিনের মধ্যে। তোমাকে তো মিসেস হিমেল খান হতেই হবে।
হিমেল কথাটা বলেই হাটা ধরে। আর এক মুহূর্ত থাকলেই হয়তো কিছু ভুল করে ফেলতে পারে। যা সে চায়ছে না। আদর কে নিজের করে পাওয়ার জেদ চেপেছে মনে। আর আদর হিমেলের কথা শুনে ব্যাঙচি দিয়ে বলে উঠে,
দিবা স্বপ্ন কখনো পূরণ হয়না। আর আমার মানুষটার নাম শুনলে এখনি হিসু করে দিবি। থাক বললাম না তোর লজ্জা না থাকলেও আমার আছে। এরপর আমার সামনে পড়লে তোকে হিসু করিয়েই ছাড়বো।
হিমেল ততক্ষণে অনেক দূরে চলে গেছে তাই কথাটি তার শ্রবণ হয়নি। আদর নিজেও মাথা না ঘামিয়ে তারিমদের কাছে চলে যায়।
ফ্লাসবেক এন্ড। এরপরেই বাসায় এসে হিয়ান খান কে আদরের কথা বলায় রেগে যায় হিয়ান খান। আরো ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করাবে এসব বলতেই হিমেল নিজের রাগ ধমাতে না পেরে ভাঙচুর করে বাড়ি মাথায় তুলে। তার যেভাবেই হোক আদর কে চাই। উপর থেকে ভাইয়ের পাগলামি নিরবে দেখছিলো হিয়া। আদর কে তার চিনতে দেরী হয়নি। কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো। তার ভাই যে তাকে এতসুন্দর উপহার দিবে ভাবতে পারেনি। এবার সে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবে। ভাইকে দিয়ে হৃদানের জীবন থেকে আদর কে সরাবে আর সময় মতো হৃদানের জীবনে এন্ট্রি নিবে সে। খুশিতে নাচতে নাচতে নিজের ঘরে চলে গেলো। সে যেন হৃদান কে নিজের করে পেয়ে গেছে এমন!
_____________________
আতইয়াব তারিম বসে আছে মুখোমুখি। দুজনের মুখ এবং মনের ভাব সম্পূর্ণ আলাদা। আতইয়াব বসে অপলক দেখছে তারিম কে আর তারিম সে তো বিরক্ত নিয়ে বসে আছে। যথটা বিরক্ত হয়েছে বুঝাচ্ছে ততটাও বিরক্ত নয় সে।
পার্ক থেকে বের হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে উপস্থিত হয় আতইয়াব। তাকে দেখে তারিম লুকাতে চাইলেও লুকাতে পারেনা। আতইয়াব আজ প্রি-প্ল্যান ভালোভাবে করেই এসেছে। আজ সে তারিম কে ছাড়বে না। আদর নিজেও অবাক হয়েছে এই সময় ভাই কে দেখে। আতইয়াব কাউকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আদর সুবাহ কে নিজের গাড়িতে তুলে দিয়ে ড্রাইভার কে পৌঁছে দিতে বলেছে। আর তারিমের এক হাত শক্ত করে ধরে ছিলো যেন দৌড় না দিতে পারে। তারিম কে সে ভালোভাবেই চিনে। তারিম যেন দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে। মানুষটা তার ভালোবাসা। কি করে দূরে থাকে একমাত্র সেই জানে। এখন মানুষটা এত কাছে থাকলে যে সে সামলে উঠতে পারবে না। আর কত নাটক চালিয়ে যাবে সে। সে তো এতটাও কঠিন নয়। ভেতরটা খুব নরম।
আতইয়াব ঠুস করে ঘাসের উপর বসিয়ে দেয় তারিম কে। নিজেও পাশে বসে পড়ে। সেই থেকে দুজনের কারো মুখেই রা পযর্ন্ত নেই। তারিমের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। তাই কপট রেগে বলে উঠলো,
এসবের মানে কি মি. ইততেয়াজ। আমাকে আটকে রাখার রাইট কে দিয়েছে আপনাকে। হাত ছাড়ুন বলছি। ভালোবাসা দেখাতে আসছেন এখানে? আপনার ভালোবাসার নিকুচি করি। যেতে দেন আমাকে নাহলে চিৎকার করবো আমি।
আতইয়াবের শান্তশিষ্ট মুখটা হঠাৎ থমথমে হয়ে গেলো। রাগে আরো শক্ত করে ধরলো তারিমের হাত। ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিলো তারিম। টু শব্দ পযর্ন্ত করলো না। সে দেখতে চায় মানুষটা কি করে। আতইয়াবের তারিমের আরেকটু কাছে এগিয়ে এসে বলল,
ভুলে যেওনা ইউ আর মাই ওয়াইফ। তোমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে। তাই রাইট নিয়ে কথা বলোনা। আর আমাকে ইগনোর করছো কেন? আমার ভালোবাসাকে ইগনোর করার রাইট কে দিয়েছে তোমায়?
ওয়াইফ! নামেই ওয়াইফ। কখনো সেই সম্মান টা দিয়েছেন? আর আমি আপনার ওয়াইফ দু একজন ছাড়া কেউ জানে না।তাই এত ওয়াইফ বলার কিছুই হয়নি। বাইরের একজন মানুষ আপনাকে আমার সাথে দেখলে অন্যকিছু ভাববে। ছাড়ুন আমার হাত। মনটা যেহেতু আমার সেহেতু আপনার ভালোবাসাকে ইগনোর করার রাইট আমার আছে। আর কাকে ভালোবাসা বলছেন? আপনার মন আছে? হৃদয় আছে? অনুভূতি আছে? যে অন্যের ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে, দুজন ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করে দেয় তার মনে আদও ভালোবাসা আছে?
তারিমের এমন কথায় আতইয়াব তারিমের হাত ছেড়ে দিলো। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে বলল,
ওও এই জন্য ইগনোর করছো। তোমার ভাইয়ের জন্য তুমি আমাকে ইগনোর করছো! আচ্ছা তুমি তোমার ভাইয়ের টা ভাবলে একবার আমার জায়গায় বসিয়ে দেখতো তো। আদরের জায়গায় বসাও। আমি একজন ভাই হয়ে কিভাবে ঝুঁকির মুখে বোনকে দিই বলো? আন্সার দাও?
তারিম নিজেকে শান্ত রাখলো। রেগে গেলে সমস্যাটা বাড়বে। তাই শান্তভাবে বুঝানোটাই ভালো। আতইয়াবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
তাহলে বলবো আপনি আমাকে ভুলে যান। কারণ হৃদান চৌধুরী ঝুঁকি নিয়ে থাকলে; হৃদযা চৌধুরীও ঝুঁকি নিয়ে থাকবে। হ্যাঁ একবার আমি হৃদযা চৌধুরী এক্সপোস হলে গার্ড ছাড়া বের হতেই পারবো না। শত্রুরা হামলে পড়ে কলিজাটা আলাদা করে নিবে। সেখানে যদি জানতে পারে হৃদযা চৌধুরী হাজবেন্ট আপনি। অবশ্যই আপনার জীবন ও ঝুঁকিতে থাকবে। আপনাকেও ওরা টার্গেট করবে। সাথে আদু কেও। আপনাদের দুজনের জীবন ঝুঁকিতে থাকবে আমাদের ভাই-বোনের সাথে জড়ালে তাই প্লিজ আপনারা দুজন আপনাদের মতো থাকুন আমি আমার ভাইকে নিয়ে ভালো থাকবো। সুন্দর দেখে বউ নিয়ে এসে সংসার করুন। ওকে এখন যাচ্ছি।
তারিমের কথাটা আতইয়াবের মনে ধাক্কা লাগলেও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রাগকেই প্রাধান্য দিলো সে। তেজী কন্ঠে বলে উঠলো,
তোমার কি আমাকে মেরুদন্ড হীন মনে হয়? নিজের বউ কে প্রটেক্ট করতে পারবো না? একবার তোমার দিকে তাকিয়ে দেখুক শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দিবো।
আতইয়াবের কথায় তারিম শব্দ করে হেসে দিলো। হটাৎ ই গর্জে উঠে বলল,
আমার ভাইকে আপনার মেরুদন্ডহীন মনে হয়? আমার ভাই তার বউকে প্রটেক্ট করতে পারবে না? যে খুনখারাপি থেকে দূরে থেকেছে সে নিজের ভালোবাসার জন্য খুন করতে পারবে অথচ যে এসবের সাথে জড়িত, এসব করতে হাত পা কাঁপেনা ; সে পারবে না? কোনটা মনে হয় আপনার? পাগলের মতো ভালোবাসে আমার ভাইটা। তার মতো নিষ্ঠুর একটা মানুষের হৃদয়ে আদর ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছে। আপনার কি মনে হয় ওদের ভালোবাসা এতটাই ঠুমকো? আপনি জানেন? আদরের হাত যে জায়গায় ছুরির আঘাত লেগেছে ; ঠিক সে জায়গাতেই আমার ভাই নিজের হাতে একেরপর এক ছুরি দিয়ে আঘাত করে গেছে। আদরের শরীর থেকে যতটা না রক্ত বের হয়েছে ঠিক তার চারগুন রক্ত আমার ভাইয়ের শরীর থেকে বের হয়েছে। এটা করেই ক্ষান্ত হয়নি। সে কেন প্রটেক্ট করতে পারলো না? কেন বাঁচাতে পারলো না তার ভালোবাসাকে সেজন্য নিজের দুই হাতে একের পর এক আঘাত করে গেছে। যেভাবে নিজেকে কষ্ট দেওয়া যায় সেভাবেই দিয়েছে শুধু মাত্র আদরের জন্য! আপনার কাছে এসব কি মনে হয়? এমনি এমনি? এসব পাগলামি আমার ভাই করেছে যন্ত্রণা থেকে। যে পাথর হৃদয়ে আদর ভালোবাসা নামক ঝড় তুলেছে সে হৃদয়টাই বারবার কাঁপে প্রেয়সীকে হারানোর ভয়ে। পাগল হয়ে যায় ভাইটা আমার। ছটফট করতে থাকে আদরকে হারানোর ভয়ে। এসবের সাক্ষী আমি নিজে। হ্যাঁ নিজেকে আঘাত করার পরে আধো আধো জ্ঞানে আদরের নামটাই জপতো আমার ভাই। ১০৪ ডিগ্রি জ্বরেও আদরের নাম মুখ থেকে সরাতে পারিনি। নিজেকেও এতটা ভালোবাসে না যতটা আদর কে ভালোবাসে। আর আপনি? আদর ও ঠিক ততটাই ভালোবাসে। ভাইয়া তো কিছু দিন হলো ভালোবাসে আর আদর! সে তো সেই ভার্সিটির প্রথম থেকে হৃদান চৌধুরীকে ভালোবেসে আসছে। একবার ভাবুন তো আদর যাকে এতটা ভরসা করে সেই ভরসা করা মানুষটাই তার ভালোবাসা বুঝে না ; আদর ঠিক আছে? কষ্ট হয়না ওর? আর সেদিন দোষটা ভাইয়ার ছিলো না। আহনাফ চৌধুরীর মেয়ের উপর এট্যাক হয়েছিলো আদরের উপর না; আপনি না বুঝেই এতসব করলেন। কিচ্ছু বলার নেই আপনাকে। আপনার বিবেক কে প্রশ্ন করে দেখুন কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। পেছন ডাকবেন না। আপনি যেদিন আসল আপনিকে ধরতে পারবেন সেদিন তারিম ঠিক ফিরে আসবে!
চোখের পানি মুছতে মুছতে হাটা ধরলো তারিম। আজ যদি আতইয়াব বুঝতে না পারে আর কখনো বুঝতে পারবে না। সেও আর ফিরবে না আতইয়াবের জীবনে। যে অন্যের ভালোবাসাকে সম্মান দিতে জানেনা সে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়। আতইয়াব মাথা নিচু করে থম মেরে বসে আছে। মাথায় কিলবিল করছে তারিমের কথা গুলো। বুকের ভেতর যন্ত্রণা হচ্ছে। তারিম কে ফেরানোর ইচ্ছে হলেও ফেরাতে পারছে না সে। কেউ যেন গলাটা চিপে ধরে আছে। কথা বের হচ্ছে না। তারিম কে পার্কের গেটের দিকে আসতে দেখেই একজন তাড়াতাড়ি সরে দাড়ালো সেখান থেকে। ওরা পার্কের গেটের সামনেই বসেছিলো। আর কি কথা বলছিলো সবটাই শোনা যাচ্ছিলো গেট থেকে। তারিম পার্ক থেকে বের হয়ে কোনদিক না তাকিয়ে রিকশা ডেকে; তাতে চেপে বসে। হাত দিয়ে ইশারা করে চলার জন্য। তার ও যে কষ্ট কম হচ্ছে না। সে তো ভালোবাসে!
এলোমেলো পায়ে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে চলছে আদর। হাটা দেখে মনে হচ্ছে খুব দুর্বল। শরীরের দুর্বলতা নাকি মনের দুর্বলতা! চোখদুটোতে নেমে এসেছে বারিধারা। থামার নাম নেই। চোখের পানি নির্লজ্জের মতো গালটাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। পানি মোছার যেন ইচ্ছেটাও আদরের মধ্যে নেই। তার কানেও তারিমের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। কৌতুহল বশত সে ড্রাইভার কে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে নেমে আসে গাড়ি থেকে। গেটে কাছে লুকিয়ে থেকে সবটা শুনতে পায়সে। সে জানে মানুষটা তাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু এতটা ভালোবাসে জানা ছিলো না। অথচ সে সেদিন ঘরে হৃদানকে কেমন করে বলল,
আমাকে যদি ভাইয়া আর আপনার মধ্যে যেকোনো একজন কে বেছে নিতে হয় আমি কিন্তু ভাইয়াকেই নিবো। যার জন্য বেঁচে আছি; যার ভালোবাসায় বড় হয়েছি তাকে ছাড়তে পারবো না। আমি আপনাকে আর ভাইয়াকে দুজনকেই চাই!
আদরের এই কথায় কোনো ভুল ছিলো কিনা আদর জানে না। ভুল কি ছিলো! এতবছরের ভালোবাসা তো মিথ্যে হতে পারেনা কয়েকমাসের ভালোবাসার কাছে। কিন্তু ভালোবাসা তো ভালোবাসায়! আচ্ছা তার এই কথাটাই কি হৃদানের মনে ভীতি সৃষ্টি করেছে? সে ভাইয়াকেই বেছে নিতো ভেবেই নিজেকে আঘাত করেছে হৃদান! সে তো অন্যভাবে বুঝাতে পারতো! তাহলে এমন করলো কেন? এসব ভাবতেই ডুকরে কেঁদে উঠলো আদর। বসে পড়লো রাস্তায়। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ নিজের ঠিক দুহাত সামনে একটা গাড়ি ব্রেক কষতেই ভয় পেয়ে যায় আদর। ঠাস করে পড়ে যায় রাস্তায়! এত স্ট্রেস না নিতে পেরে ততক্ষণাৎ জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে!
কে হতে পারে লোকটি? আতইয়াব কি বুঝবে? নাকি আগের মতোই তার ভাবনা নিয়ে থাকবে?
চলবে…?
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আপনাদের মতামত আশা করছি। নেক্সট নেক্সট না করে গল্প সম্পর্কে কিছুটা বলুন! শুকরিয়া!)