ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ৪৬

0
119

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ৪৬

সময় চলছে তার নিজ গতিতে, শীতকাল চলে গিয়ে প্রকৃতি’তে নেমে এসেছে বসন্ত-কাল।আরো কয়েকটা মাস অতিবাহিত হয়েছে জীবন থেকে। এরিমধ্যে ঐশীর রেজাল্ট দিয়ে দিয়েছে জিপিএ (৪.৪৫) পেয়েছে, এতেই সে বেজায় খুশী।বন্ধু মহলের সবাই মোটামুটি ভালো ফলাফল পেয়েছে। সবাই এডমিশন ও নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে,হয়তো আর এক সাথে পথ চলা হবে না আগের মতো। ঐশী পলিটিকাল সায়েন্সে অনার্স করার জন্য ভর্তি হয়েছে, ঢাকা একটা ইউনিভার্সিটিতে। সীমিত উপার্জনে এতটা খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে রাফিনের জন্য। মাস শেষে যে টাকাটা আসে পুরো মাস কমপ্লিট করতে, মাস শেষের দিনগুলো টানাটানি অবস্থা হয়ে যায়। তবুও রাফিন বুঝতে দেয়না তার মায়াবিনী কে,তাদের সংসারে অর্থের অভাব হলেও, ভালোবাসার চাদরে সংসারটা কোণায় কোণায় পরিপূর্ণ।দিনশেষে ফেরার সময় বউয়ের জন্য একটা ফুল, তার পছন্দের যেকোনো একটা খাবার সঙ্গে নিতে কখনো ভুল হয় না রাফিনের। বিকেলের আঁচটা কমে গিয়ে সন্ধ্যার কালো আঁধার নেমেছে প্রকৃতি জুড়ে। রাফিনের ডিউটি শেষ, প্রতিদিনে ন্যায় হাতের ব্যাগটা নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছে রাফিন। আজ বেতন পেয়েছে, ঐশীর পছন্দের মাছ-মাংস, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিলো। প্রতিদিন বাজার করার সময় রাফিন খুব করে অনুভব করে তাদের একটা ফ্রিজ খুবই প্রয়োজন। ফ্রিজ থাকলে নিত্য বাজার করার ঝামেলা হতো না,বেতন পেয়ে বেশি করে মাছ-মাংস কিনে রাখা যেতো। কিন্তু টাকা জমানো আর হয়ে উঠেনা,মাস শেষ করতেই কষ্ট হয়, সেখানে এতগুলো টাকা দিয়ে ফ্রিজ কেনাও সম্ভব হয়ে উঠেনি এখনো। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসলো রাফিনের বুক চি’রে, “তার অর্ধাঙ্গিনী কে সে আদৌও সুখী রাখতে পারিনি” এটা ভেবে নিজের ভিতরটায় ভীষণ কষ্ট অনুভব হয়,যদিও ঐশী কখনো কোনো আক্ষেপ করেনি। তবুও রাফিনের খুব করে ইচ্ছে হয়, যদি আরো একটু সুখী রাখতে পারতাম তাকে, তাহলে এতো কষ্ট করতে হতোনা ঐশীর। সব কেনা-কাটা শেষ করে ক্লান্ত দেহ’টা নিয়ে বাইকে বসলো। হুট করেই মাথায় একটা আইডিয়া আসলো, তার বাইকটা বিক্রি করলে কেমন হয়? এতে কিছু টাকা ও হাতে আসবে,আর ফ্রিজ ও কেনা যাবে।শূন্য হাতে থাকলে চারদিকে’র চিন্তা মাথা চাপা দেয়, কখন জানি কোন বিপদ আসে। তবে ফাইনাল ডিসিশন নিয়েই নিলো বাইকটা বিক্রি করেই দিবে। যদিও এটা তার খুব শখের ছিলো।পুরুষ মানুষ তাদের প্রিয়জনের সুখের কথা চিন্তা করে, নিজের সবরকমের শখ আহ্লাদ অনায়াসে বিসর্জন দিতে পারে।এর বিনিময়ে তারা শুধু একটু ভালোবাসা চায়,একটা মেয়ের স্বচ্ছ ভালোবাসা পেলে, তার হাসির জন্য নিজের জা’নটা ও দিতে পারে। একমাত্র “ভালোবাসা”ই হচ্ছে পুরুষ মানুষের দুর্বলতা!
রাফিন ফোন ঘেঁটে কয়েকজন পরিচিত লোকে জানিয়ে দিলো, তার বাইকটি বিক্রি করতে চাচ্ছে। সব কথা বাহিরে বসেই সেরে নিলো, কারণ ঐশী’কে জানালে কখনো বিক্রি করতে দিবে না, তাতে তাদের যত কষ্ট হোক। রাফিন আর দেরী করলো না, দ্রুত চলে গেলো। “কারণ কেউ একজন তার পথ চেয়ে অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে, ফিরতে একটু দেরী হলে তার ও ভীষণ চিন্তা হয়।” যার নিজস্ব এমন একটা মানুষ আছে, সেইতো সবথেকে সুখী মানব-মানবী।
.
.
পরদিন সকালে রাফিন অফিসে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়েছে।সকালে’র কোচিং শেষ করেতেই অফিসে’র এক কলিগের ফোন আসলো।তিনি জানিয়েছেন, বাইকটা তিনি নিতে চাচ্ছে। দরে-দামে বুনে গেলো, সে আজই নিবে বলে জানিয়ে দিলো। তাই আর অফিসে গেলো না রাফিন। কিছুসময়ের মধ্যে লোকটি নির্ধারিত জায়গায় উপস্থিত হলো। টাকা’টা বুঝে নিয়ে রাফিন হাসি মুখে নিজের কাছে অতি যত্নে রাখা চাবিটা দিয়ে দিলো। লোকটা কিছুসময় রাফিনকে পর্যবেক্ষণ করে কৌতূহল হয়ে প্রশ্ন করলো,

“তুমি এতো স্বাভাবিক আচরণ কি করে করছো রাফিন? এতো শখের জিনিস’টা আমাকে দিয়ে দিচ্ছো,অথচ তোমার মধ্যে বিন্দু মাএ আক্ষেপ দেখছি না আমি, তোমার কি মোটেও খারাপ লাগছে না?”

রাফিন মৃদু হেসে বললো,

“পৃথিবীর সব থেকে মূল্যবান,এবং আমার ভীষণ শখের মানুষটা আমার ঘরে রয়েছে , যে আমার জীবন’টা চাঁদের মতো আলোকিতো করে দিয়েছে । যে খানে সে রয়েছে, সেখানে এইসব খুবই নগন্য, তুচ্ছ শখের জিনিস। এসবের জন্য আমার বিন্দু-মাএ অনুশোচনা কিংবা আক্ষেপ নেই শাওন ।”

রাফিনের কথা বোধগম্য হতে সময় লাগলো শাওনের , পরক্ষণে বুঝতে পেরে হেসে বললো,

“ভাবি’কে ভীষণ ভালোবাসো বুঝি?”

“কতটা ভালোবাসি জানি না, তবে তাকে ছাড়া নিজেকে ও কল্পনা করতে পারি না। দিনশেষে তার হাসি মুখটা আমাকে ভীষণ শান্তি এনে দেয়। যা অন্য কোথাও খুঁজে পাইনা।”

আরো কিছু টুকটাক কথা বলে লোকটি বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে যাচ্ছে। রাফিন তার যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। নিজেও খুশী মনে মার্কেটে চলে গেলো। যাক অবশেষে একটা ব্যবস্হা হয়েই গেলো। ভাবতেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো রাফিন।
.
.
রৌদ্রস্নাত প্রকৃতি! দুপুর বারোটার দাপুটে সূর্যে দিগ্বিদিক সোনালী আলোকচ্ছ তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে দূর থেকে দূরন্তে। রাফিনের শরীরের শার্ট’টা ঘামে ভিজে গিয়েছে, শ্যামলা পুরুষটির চেহারায় কালচে আভা পড়েছে। ক্লান্ত পায়ে হেঁটে কলিং বেল চাপ দিলো।ঐশী রান্না করছিলো,এই অসময় কে আসলো? চিন্ততো মুখ নিয়ে দরজা খুলো অবাক হয়ে গেলো। এই সময়টায় কখনো রাফিন বাসায় আসে না, ঐশী ততক্ষণাৎ ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“সে কি আপনি এখন বাসায় যে!কি হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার। কি হয়েছে বলুন আমাকে?

রাফিন মিষ্টি হেসে ঐশীর গাল টেনে বললো,

“এতো ব্যস্ত হতে হবে না বউ। আমি ঠিক আছি, আর না কোনো সমস্যা হয়েছে। আজকে অফিসে যাইনি।”

“ওহ আচ্ছা। চলুন ভিতরে চলুন।”

বলেই সদর দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে ঐশী। রাফিন থামিয়ে দিয়ে বললো,

“দরজা লাগানো লাগবে না। একটা লোক আসবে এক্ষণই।”

ঐশী কিছু বলার আগেই দেখতে পেলো, একটা লোক ভ্যানে করে মাঝারি আকারের একটা ফ্রিজ নিয়ে আসছে তাদের বাসায়। ঐশী কৌতূহল হয়ে প্রশ্ন করলো,

“আপনি ফ্রিজ কিনলেন কি করে? মানে এতো টাকা কই পেলেন আজকে?”

” সবকিছু পড়ে বলছি সোনা। তুমি চাচাকে কিছু খেতে দেও।”

লোকটাকে উদ্দেশ্য করে পুনরায় আবার বললো,

“ভিতরে আসুন চাচা।”
.
দুপুরে খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো রাফিন। ঐশী বেশ উসখুস করছে রাফিনে’র থেকে উওর শোনার জন্য। ঐশী’র আর ধৈর্য ধারণ করার মতো ক্ষমতা আর অবশিষ্ট রইলো না। রাফিন কিছু বলছে না দেখে নিজেই আবারও বললো,

“আচ্ছা এখন তো বলুন। যতক্ষণ না শুনছি, ততক্ষণে শান্তি পাচ্ছি না, মনের মধ্যে খুঁতখুঁত করছে। বলেই ফিক করে একঝলক হাসলো।”

রাফিন বিষয়টা লুকালো না, আজ হোক দু’দিন পড়ে হোক জানবেই ঐশী,তক্ষণ হয়তো আরো কষ্ট পাবে। রাফিন গলা খাঁকারি দিয়ে, আমতা আমতা করে বললো,

-“আসলে মানে হয়েছে কি? মানে আমার বাইকটা বিক্রি করে দিয়েছি। অযথা ওটা রেখে কি করবো, বিশেষ কোনো কাজে লাগছে না পুরাণো হয়ে যাচ্ছে , তাই ভালো দামে বিক্রি করে ফেললাম আজ।”

ঐশী দরফরিয়ে সোয়া থেকে উঠে বসলো, আতঙ্কিত হয়ে বললো,

“কিহ্! বিক্রি করার আগে একটি বার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না। এটা কি করলেন আপনি? বিশেষ কোনো কাজে লাগছে না কে বললো? আমি জানি আপনার বাইক ভীষণ পছন্দের। ফ্রিজ কেনাটা কি এতো বেশী প্রয়োজন ছিলো,যার জন্য নিজের অতী শখের জিনিস’টা বিক্রি করে দিলেন। এই ফ্রিজ দিয়ে আমি করবো’টা কী!এইটা ফ্রিজ হলো না, এক একটা দীর্ঘশ্বাসের কারণ হলো! আপনার কাজে আমি মোটেও সন্তুষ্ট হইনি। কাজটা একদম ঠিক করেননি আপনি।” ঐশীর চোখ দু’টো ঝাপসা হয়ে গেলো, আজ তার জন্য লোকটার কতটা সেক্রিফাইস করতে হচ্ছে, সারাটা দিন পরিশ্রম করতে হয়। নিজের কান্না লুকানোর জন্য রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো ঐশী। রাফিন ও পিছু পিছু চলে গেলো, ঐশীর হাত ধরে নিজের কাছে এনে চোখে’র পানিটুকু গড়িয়ে পড়ার আগেই যত্ন করে মুছে দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

“তুমি আমার অনেক শখের বউ!তুমি ব্যতিতো দ্বিতৃৃয় কোনো শখের জিনিস আমার নেই, যেটা আমার লাগবেই। কিন্তু তোমাকে আমার সারাজীবন লাগবেই। তোমার চোখের পানি আমি একদম সহ্য করতে পারিনা,বুকের ভিতরটা র’ক্ত স্রোত ভয়ে যায়। প্লিজ কাঁদবে না আর, এই বছরটা শেষ হলে তোমার হাসবেন্ড একজন ডক্টর হবে, ইনশাআল্লাহ! তখন আর এমন দিন থাকবে না আমাদের। টাকা হলে আবার কিনে নিবো, তবুও তুমি মন খারাপ করো না। তাছাড়া সংসার জীবনে সবকিছুরই প্রয়োজন আছে।”

ঐশী মলিন কন্ঠে বললো,

“ফ্রিজ’টা খুব বেশী প্রয়োজন তো আর ছিলোনা। এমনটা নয় যে এটা লাগবেই, না হলে চলবে’ই না। সারাটাদিন কতটা পরিশ্রম করেন আপনি, বাইকটা ছিলো তাও যাতায়াতের জন্য কোনো সমস্যা হতো না। একটা মানুষ কতদিক সামলাতে পারে, আপনি ও তো মানুষ রোবট তো আর নয়!”

রাফিন কানে হাত দিয়ে দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,

“আচ্ছা স্যরি বউ পাখি! আমার মারাত্মক ভুল হয়ে গিয়েছে। তুমি এমন মুখ ফুলিয়ে থেকো না বউ আমার! তুমি খুশী থাকলে’ই আমার ভালোলাগে! তোমার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসিটা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় সব বাঁধা অতিক্রম করতে। তেমনি তোমার এই মলিন মুখখানা আমার ভিতরটা পু’ড়ি’য়ে দেয়,তখন বুকটা ভারী মনে হয়। তুমি যদি এভাবে মন খারাপ করো, তাহলে আমাকে খারাপ সময় উৎসাহ,সাহস জুগিয়ে কে দিবে বউ! স্বামী-স্ত্রী হলো একে অপরের পরিপূরক, সংসার জীবনে একে অন্যকে ছাড়া চলে না।জানো তুমি যখন আমার কাঁধে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে বলো, “আপনি চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে, আমি আছি আপনার সাথে সব সময়!” এইটুকু ভরসা আমার সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে,আমি ভিতর থেকে অদ্ভুত শক্তি পাই। যখন বাহিরে বের হবার সময়, তুমি আমার কাঁধে ব্যাগটা তুলে দেও। তখন মনে হয় তুমি আমার সাথেই কাজের মধ্যে বের হয়েছো, আর আমার মনের মধ্যেই আছো। আমার কাজগুলো মনে হয় দু’জনেই এক সাথে অনায়াসে শেষ করে ফেলি।
আর বাসায় ফিরে এলেই প্রতিদিনের মতো তোমার হাসি মুখ, আমার এখানেই যেন সব সুখ প্রিয় মায়াবিনী!”

“ঐশী নিরুওর।”

রাফিন ইনসেন্স ফেস করে পুনরায় আবার বললো,

“কি হলো কথা বলবেই না? আচ্ছা বলো কি করলে রাগ কমবে তোমার? আমি তাই করবো,তবুও কথা বলো জান! তুমি এমন চুপ থাকলে আমার একদম ভালো লাগেনা। আর হ্যাঁ আবার বাইক ফিরিয়ে আনতে বলো না, তা কিন্তু পারবো না।”

ঐশী গম্ভীর হবার বান করে বললো,

-“সত্যি’তো যা বলবো তাই করবেন?”

“হ্যাঁ তিন সত্যি! তুমি বলবে আর আমি করবো না, এমন কাজ আছে নাকি।”

“আচ্ছা শুনুন। এই বাসাটা চেঞ্জ করুন যত দ্রুত পারেন।”

রাফিন কপালে কয়েকটা ভাজ পড়লো, চিন্তিতো হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কেনো এ বাসায় সমস্যা কি?”

“এতবড় বাসা আমাদের দরকার নেই। একদম একা একা আমার দ’ম বন্ধ হয়ে আসে। তার থেকে ভালো এক রুমের একটা ছোট্ট বাসা ঠিক করুন।”

রাফিন অসহায় কন্ঠে বললো,

“তা কি করে হয়। অমন ছোট্ট বাসায় থাকতে তোমার কষ্ট হবে সোনা। এমনিতেই সংসার জীবন তোমাকে বিলাসিতা দিতে পারিনি, এর থেকে আরো কষ্টে তোমাকে রাখতে পারবো না আমি। আমি জানি, তুমি নিশ্চয়ই টাকার চিন্তা করছো। সবকিছু আমি ম্যানেজ করতে পারবো বউ, তুমি এসব চিন্তা করো না।”

ঐশী এবার রাফিনের মলিন মুখটায় হাত বুলিয়ে বললো,

” আচ্ছা বলুন তো? বিয়ে, সংসার মানেই কি শুধুমাত্র একটি বিলাস বহুল ঘর, কিছু হাঁড়ি-পাতিল, দামী দামী আসবাপত্রের সমাহর! উঁহু মোটেও না। সংসার হচ্ছে, দুজন মানুষের মনের মিল আর সুখদুঃখে সারাজীবন এক সাথে পথচলার অঙ্গিকার।
আপনি আপনার স্ত্রীকে কত বড় বাড়ি,কত ভড়ি গয়না দিতে পারেন তার থেকেও বেশি জরুরি হলো, আপনি তাকে কতটা ভালোবাসা দিতে পারেন,তার সাথে কতটা সময় কাটাতে পারেন।
আর স্ত্রী হিসেবে আমি কতটা যোগ্য কিংবা কতটা নজরকঁড়া তার থেকে বেশী জরুরী হচ্ছে, আমি নিজের স্বামী প্রতি কতটা আন্তরিক, কতটা খেয়াল রাখতে পারি তার, এইসব বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা ভাতের অভাব কিংবা রুপের অভাবের চেয়ে কয়েক গুন সংসার ভেঙেছে, আন্তরিকতা আর ভালোবাসা’র অভাবে।জানেন ভাতের অভাব আর রুপের অভাব পুষিয়ে নেওয়া গেলেও, ভালোবাসা কিংবা আন্তরিকতার অভাব পোষাবার নয়।
দিনশেষে একটা সুন্দর সম্পর্কের জন্য দু’জনকে ছাড় দিতে হবে,দুজনার দু’জনের প্রতি আন্তরিকতা থাকতে। ভালোবাসা, ভালোলাগাটুকু একতরফা চললেও, সংসার জীবনে দু’জন দু’জনাকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে, তাহলেই কুঁড়ের ঘরটা ও দামী অট্টলিকা মনে হবে।”

রাফিন ঐশী’র কথা মন দিয়ে শুনলো, মৃদু হেসে নিজের বাহুডোরে আগলে নিয়ে বললো,

“বাহ্! আমার বউতো দেখছি অনেক কিছু বোঝে। খুব বেশিই বড় হয়ে গিয়েছো তুমি ঐশী। আগের ঐশী আর এই ঐশী সম্পুর্ন আলাদা নারী।”

“অবশ্যই আলাদা, আগে শুধু আব্বুর রাজকন্যা ছিলাম, বিয়ের পড়ে আপনার রাজ্যের রাণী হলাম। জানেন মেয়েদের হাতে ধরে কিছু শিখাতে হয় না। তারা বিয়ের পরে এমনিই দায়িত্বশীল হয়ে যায়। একটা মেয়ে শুধু একটু শান্তি চায়,এর জন্য দামী গাড়ি,বাড়ী দরকার পড়ে না, আভিজাত্য না থাকলেও দিন শেষে একটু ভালোবাসা পেলে, একটা পুরুষের সাথে সারাজীবন হাসি মুখে কাটিয়ে দিতে পারে। সঙ্গী’র জন্য নিজের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে, কুঁড়ের ঘরেও শান্তি খুঁজে নেয়। মেয়েরা তার প্রিয় মানুষের কাছে আহ্লাদী ন্যাকাও হয় বটে,তাদের একটু আদর যত্ন করলে সঙ্গী’র পিছু ছাড়ে না, শেষ নিশ্বাস অবধি তাকেই চাইবে। আর সেখানে আমি আপনার মতো একটা পুরুষ পেয়েছি, যার কাছে অসীম ভালোবাসা মেলে। বিশ্বাস করুন আপনার সাথে আমি খুব বেশি সুখী। এত বেশী সুখী যে কাউকে ভাষায় প্রকাশ করে বুঝতে পারবো না। আপনি পাশে থাকলে খোলা আকাশের নিচেও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি,কারণ আমাকে সুরক্ষিত করার জন্য আপনি আছেন। ”

রাফিন হেসে বললো,

“তুমি একটু বেশীই বলো। আমি আসলে এতটাও ভালো মানুষ নই।”

“আপনি কার কাছে কেমন, আই ডোন্ট কেয়ার! আমার চোখে দেখা শ্রষ্ঠ পুরুষ হলেন আপনি।তাছাড়া

“যে পুরুষ স্বামী হিসেবে তার স্ত্রীর নিকট বেশী প্রিয়, সে পুরুষ বান্দা হিসেবেও আল্লাহ’র নিকট অধিক প্রিয়!”

-হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

তার মানে কি বুঝতে পেরেছেন তো। আল্লাহর নিকট ও আপনি উওম। ঠিক আছে।

রাফিন ঐশীর চুলে মুখ ডুবিয়ে, কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো,

“এতেই তো আমার জীবন সার্থক বউ পাখি! ভালোবাসি বউ! অনেক বেশী ভালোবাসি তোমাকে!”
.
অবশেষে রাফিন কে রাজি করিয়ে, তবেই দম নিলো ঐশী। রাফিন ও কাজের ফাঁকে ফাঁকে এদিক সেদিক বাসার খোঁজ করতে লাগলো…..।

চলবে…….

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here