ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ৪৯

0
208

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ৪৯

“বাবা” শব্দ’টা অতি ছোট্ট, কিন্তু এর বিশালতা খোলা আকাশে মতো সীমাহীন! বাবা মানেই শান্তি’, বাবা মানেই সাহস, বাবা মানেই অনুপ্রেরণা আর সীমাহীন ভালোবাসা’র উৎস! সেই বাবা’র নামে’র সাথে “ম’র’হু’ম” কিংবা “আমার বাবা বেঁচে নেই” বাক্যগুলো সন্তানে’র জন্য কতটা ভারী, যন্ত্রণাদায় তা শুধু তারাই অনুধাবণ করতে পারে যাদের “বাবা” নামক বিশাল বটবৃক্ষের ছায়া’টা মাথার উপরে থাকে না।
ঐশী নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এই বুঝি দ’মটা বেরিয়ে যাবে। ঐশী’র চিৎকার করা কান্না শুনে পাশের রুমের কিছু মানুষ চিন্তিতো হয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছে, কি হয়েছে?

ঐশী কান্নারত করুণ কন্ঠে বললো,

“আ-আমার বা-বাবা…. কিন্তু ঐশী বলতে পারলো না। সে মানতেই পারছে না তার বাবা আর পৃথিবীতে নেই। বাবা বলে আর ডাকা হবে না। বাবা”র জন্য কিনে আনা পাঞ্জাবি’টা বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো ঐশী। এই পাঞ্জাবি’টা আর বাবা’কে দেওয়া হবে না। মানুষটা যে সবার মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে চলে গিয়েছে, তার কাছে। উপস্থিতি মানব-মানবী বুঝতে পেরেছে ব্যাপরটা। এরি মধ্যে রাফিন কল দিয়েছে, এক মহিলা রিসিভ করে ঐশীর কানের কাছে ধরলো। রাফিনের কণ্ঠ কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে’ই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

” রাফিন আপনি,,,,, বলতে পারলো না জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়লো। ঐশী’র করুণ অবস্থা দেখে সবার চোখে জল চিকচিক করছে। মহিলা রাফিনকে নিউজটা দিয়ে ফোন কেটে ঐশী’র চোখে মুখে পানির ছিঁটা দিচ্ছে বারংবার।

এদিকে রাফিন ভার্সিটির সামনে “থ” মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। সুস্থ মানুষটা’র এমন আকস্মিক মৃ’ত্যু যেন মানতে পারছে না রাফিন। “ভালো মানুষেরা বোধ হয় বেশী দিন পৃথিবীতে থাকে না। তাদের দ্বারা কোনো পাপ কাজ হওয়ার আগেই আল্লাহ মৃ’ত্যু নামক উপহারটা দিয়ে দেয়!” এটাই ভাবছে রাফিন। এই মানুষটার মৃ’ত্যুর খবরটা শুনে ভীষণ কষ্ট অনুভব করছে রাফিন। কিয়াৎক্ষণ পরে হুস ফিরতেই দ্রুত বাসায় চলে গেলো। মানতে পারছি না! তবে এই চিরন্তন সত্যি’টা মানতে’ই হবে। না জানি ঐশী’র কতটা কষ্ট হচ্ছে ভাবতেই রাফিনে’র শরীর শিহরিত হয়ে উঠলো।
.
.
বাসায় এসে ঐশী’র নিস্তব্ধ হওয়া চেহারাটা দেখে বুকটা ভারী হয়ে গেলো রাফিনের। মেয়েটা’র কোনো রেসপন্স নেই, মনে হচ্ছে অতী শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে! রাফিন ঐশী’কে কোনো রকম শান্তনা দিবা’র মতো ভাষা খুঁজে পেলো না। কিইবা বলবে? এই মূহুর্তে সেই অনুভূতি শূন্য। বারংবার নিজের বাবা’র মুখ’টা ভেসে আসছে চোখে’র সামনে। মানুষটার সাথে সাময়িক সময়ের জন্য অভিমান করলেও বড্ড মায়া তার জন্য। মনে মনে সৃষ্টিকর্তা’র নিকট বাবা’র সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করলো। রাফিন আর সময়ের অপচয় করলো না। নিজেও রেডি হয়ে ঐশী’কে নিজ হাতে রেডি করিয়ে দিয়ে, বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে।
.
.
দীর্ঘ দিন পরে আজ নিজ বাড়িতে পা রাখলো ঐশী। বাবা নিশ্চয়ই ভীষণ খুশী হতো আজ। অথচ মানুষটা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। বাসায় লোকজনে ভরপুর। বাসা’র ভিতর থেকে মা-বোনের কান্না’র চিৎকার শুনে পা থেমে গেলো ঐশী’র। রাফিন ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো। বাবা’র চিরতরে ঘুমন্ত মুখটা দেখে পাথরে’র ভাবটা সরে গেলো। বাবা’র মুখের উপরে হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে বললো,

“আব্বু…..! কথা বলো আব্বু! দেখো আব্বু আমি কতদিন পড়ে বাড়িতে এসেছি আব্বু, আর তুমি ঘুমিয়ে আছো!”

সানজিদা শেখ মেয়ে’ক জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো। অসহায় কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বললো,

“তোর আব্বু আর নেইরে ঐশী! আর কোনো দিন কথা বলবে না! আমাদের ফাঁকি দিয়ে এভাবে চলে গেলে কেনো তিহানে’র আব্বু? কান্নায় ভেঙে পড়লো উনি।

সদ্য বাবা হারনো দুই মেয়ে, স্বামী হারানো একজন স্ত্রী’র করুণ আর্তনাদ দেখে সবার চোখে পানি। রাফিনে’র পরিবারে’র সবাই’ই উপস্থিত আছে। কামাল চৌধুরী ও ভীষণ ভাবে অনুতপ্ত শফিকুল সাহেব’র এমন মৃ’ত্যু’তে। দূর থেকে ঐশী’র আর্তনাদ কর্ণকুহরে পৌঁছাতে এই গম্ভীর লোকটার চোখে’ও জল চিকচিক করছে। বন্ধু মহলে’র সবাই এসেছে। তাদের সাথে বাবা-মা ও, তারাও ভীষণ ভাবে শোকাহত শফিকুল সাহেবে’র আকস্মিক মৃ’ত্যুতে। তারা বিভিন্ন ভাবে এদের বুঝাচ্ছে, কিন্তু কে শুনে কার কথা। এদিকে তিহান এখনো আসতে পারেনি। আরো ঘন্টা খানিক সময় লাগবে আসতে। শফিকুল সাহেব কে চিরতরে গোসল করিয়ে, তিহানে’র আসার অপেক্ষা করছে সবাই।
.
.
তিহান এসে মা-বোনের করুণ চেহারা! বাবা’র সাদা কাপড়ে জড়ানো শরীর’টা দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো। পুরুষ মানুষ হলো চাপা স্বভাবে’র তারা এক বুক কষ্ট নিয়েও মেয়েদে’র মতো চিৎকার দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে পারেনা। তিহানে’র চোখ দু’টো অসম্ভব রকমে’র লাল রঙ ধারণ করেছে। চোখে’র কার্ণিশ বেয়ে অশ্রু গুলো পড়লো বাবা’কে জড়ানো সাদা কাপড়ে’র উপরে। পরক্ষণে’ই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে ফেললো। না সে কাঁদবে না! পুরুষদের কাঁদতে নেই, যত কষ্ট হোক ভেঙে পড়বে না সে! তার উপরে যে এখন মা-বোনের দায়িত্ব। বাবা তো এদে’র ভালো রাখার দায়িত্ব তাকে দিয়ে চিরদিনের জন্য অবসর নিয়ে’ছে। পরক্ষণে উঠে দাঁড়াল তিহান, দুই হাতে মা-বোনদে’র জড়িয়ে নিলো বুকে। এভাবে’ই সারাজীবন আগলে রাখার দায়িত্ব যে তার। তবুও যেন চোখে’র পানি মানছে না আজ,নিঃশব্দে অশ্রু কণা গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।
.
.
অবশেষে জানাজা নামাজ আদায় হয়ে গেলো। খাঁটিয়া ধরে কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছে শফিকুল সাহেব কে। তিহানে’র পা যেন চলছে না,অথচ প্রতিদিন কত মৃত্যু মানুষ দেখার অবস্থরতো সে। এই মানুষ’টাও বাবা’র মৃত্যুতে ভিতরে ভিতরে ভীষণ বাজে ভাবে ভে’ঙে পড়েছে। সানজিদা শেখ স্বামী’কে নিয়ে যাবার দিকে নিস্তব্ধ হয়ে, অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাকে ধরে রেখেছে নাজমা কামাল ও সাইফের মা। চৈতী ও ঐশী চিৎকার দিয়ে কান্না করছে তাদের কেউ থামাতে পারছে না। সেই মুহুর্তে এখানে উপস্থিত হলো কামাল চৌধুরী। চৈতী ও ঐশী’র মাথায় স্নেহময় হাত দিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

“এভাবে কাঁদলে তোমার বাবা’র আ’ত্মা কষ্ট পাবে মা! মানুষ চিরদিন কেউ পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে না। জন্ম নিলে মৃত্যু একদিন হবে’ই। যে চলে যায় সে আর কোনোদিন আসবে না এটাই নিয়ম।”

এরি মধ্যে চৈতী কান্নারত ভাঙা ভাঙা কন্ঠে অবুঝের মতো বললো,

“এতো তাড়াতাড়ি কেনো যেতে হবে আব্বুকে! আমাদের এতিম করে কেনো গেলো আঙ্কেল? আমরা আর কোনো দিন “বাবা” বলে ডাকতে পারবো না। কোনো দিন আর আমাদের ডাকে সাড়া দিবে না বাবা । আর কোনো দিন বাবা’র কাছে এটা সেটা বায়না ধরতে পারবো না!”

কামাল চৌধুরী’র গলা টাও ধরে আসলো, উনি মৃদু কন্ঠে বললো,
“এভাবে কাঁদলে তোদে’র বাবা কষ্ট পাবে মা! আজ থেকে তোরা আমার দুই’টা মেয়ে। আজ থেকে আমাকে তোরা বাবা বলে ডাকবি, আমি তোদের বাবা। বলে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরলো উনি।”

ঐশী তবুও ফুঁপিয়ে কাঁদছে, কামাল চৌধুরী পুনরায় আবার বললো,

“ঐশী মা আমাকে ক্ষমা করে দিস! তোর সাথে অনেক বড় অন্যয় করেছি। আসলে ঐরকম একটা পরিস্থিতিতে মাথা ঠিক ছিলো না। আমার অমন সিদ্ধান্তে’র জন্য আমি ভীষণ ভাবে অনুতপ্ত মা। বাবা হিসেবে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আজ থেকে তুই তোরা আমার মেয়ে মন থেকে বললাম। আর কখনো তোকে কান্না করতে দিবো না মা। আর কাঁদিস না মা! নিজেই অসুস্থ হয়ে যাবি তাইলে। ভাইয়ের জন্য কোরআন পাঠ করো, বিভিন্ন দোয়া ও নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থণা করো। যাতে ভাই’কে আল্লাহ্ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করে!”

কামাল চৌধুরী আরো অনেক ভাবে শান্ত করতে চাইছে দুই মেয়েকে। বাবা’র মতো স্নেহময় হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নাজমা কামালও বেশ খুশী হয়েছে, অবশেষে মেনে নিয়েছে ঐশী’কে। অথচ ভাই দেখতে পারলো না, চাপা কষ্ট নিয়ে বিদায় হলো মানুষটা। পরক্ষণে এটা ভাবতেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো নাজমা কামাল।

“কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না, ধুলোবালি কিংবা কেউ না কেউ যে করেই হোক তার অভাব পূর্ণ করে দেয় নিয়তি। আজ মেয়ে’র শ্বশুড় বাড়ি মেনে নিলো, হায় আফসোস! লোকটা চোখ বড়ে দেখতে পেলো না মেয়ের সুখ গুলো। এভাবে না হলেও পারতো! ভাবছে সানজিদা শেখ।”
.
.
শফিকুল সাহেবে’র চলে গিয়েছে আজ তিন তিনটা দিন গত হলো। বাড়ি ভর্তি মানুষ এলো তারাও আবার ফিরে গেলো। শুধু ফিরে গেলো না কেবল চিরতরে বিদায় নেওয়া মানুষটি’র শূন্য’তা আর হাহাকার! পরিবারের সবাই একেবারে ভেঙে পড়েছে। এদের দেখা শুনা বেশিই কামাল চৌধুরী ও নাজমা কামাল করছে। নিকটস্থ আত্মািয় রয়ে গিয়েছে আরো আছে বন্ধু মহলে’র সবাই। ঐশী সকালে উঠে বাবা’র কবরে’র কাছে এসেছে সাথে রাফিন ও আছে। বাবা’র কবরের কাছে আসতেই বুকটা ভারী হয়ে গিয়েছে ঐশী’র। কব’রে’র দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বাবা গত হলো কিন্তু রয়ে গেলো তার মনে আরো একটি প্রশ্ন। আচ্ছা! প্রিয় মানুষগুলোকে কী এমন চলে যেতে হয় চুপ করেই? এমন অপ্রত্যাশিত সময়ে, এমন নিরব ভাবে চলে যাওয়া কী ঠিক? নিজের ভাগের ভালোবাসাটাটুকুতো দেওয়া হলো না! বাবা’র জন্য প্রথম কেনা উপহারটা ও তো দেওয়া হলো না। জানতেই পারলো না তার মেয়ে’র প্রথম উপর্জন দিয়ে ভালোবেসে কিনেছিলো। নিয়ে গেলো না কিচ্ছুটি! কিচ্ছু না! শূন্য হাতে’ই চলে গেলো! এতো শত আফসোস কেনো? এতো আফসোস কই রাখবো বাবা তুমি তো নেই! আহা! ইশ! বাবা হারানো’র অনুভূতি এতো তিক্ত যন্ত্রণাময় কেনো? এতো ব্যথা কেনো!

______________________

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটা কথা বলেছিলেন,
“পৃথিবীতে কাহারো অভাবে অধিক দিন কিছু শূন্য থাকে না।”

সত্যি’ই তো! আজ অবধি দেখা যায় নাই, কেউ জীবন থেকে হারিয়ে গেলে কারো জীবন তার জন্য মণ্হর হয়ে গেছে! বরং সেই মানুষটা’র শূন্যস্হান কোনো না কোনো সময় ঠিক পূরণ হয়ে গেছে হয়ে-যায়। অধিক শোকও সৃষ্টি-কর্তা ভুলিয়ে দেয়। শফিকুল সাহেব’র মৃ’ত্যুর অনেকগুলো মাস গত হয়ে গিয়েছে। সবার জীবনের অনেকটা পরিবর্তন ঘটেছে। চৈতী’র ছেলে হয়েছে। রাফিনের মেডিক্যালের ফাইনাল এক্সাম শেষ, ঐশীসহ রাফিন এখন বাবা’র সাথেই থাকে তাদের বাড়িতে। বাবা-মায়ের সাথে রাগ কিংবা অভিমান দীর্ঘ দিন পুষে রাখা যায় না। তারা শতভুল কিংবা অন্যয় করলে, যখন ভুল বুঝতে পেরে, তাদের আদুরী স্নেহময় কন্ঠে একবার বুকে ডাকে, তখন সন্তানরা বুকে মাথা রাখতে বাধ্য হয়। অন্তরে’র অদ্ভুত টানটা তাদের কাছে নিয়ে আসবেই। তেমনি রাফিন ও পারেনি বাবা’র ডাক অগ্রহ্য করতে।
ঐশী অনেকটা ভেঙে পড়েছিলো, রাফিন সহ কামাল চৌধুরী নিজের মেয়ে’র মতো আগলে রেখেছে। মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছে,নিজে অফিসে না গিয়ে ঐশী’কে বিভিন্ন ভাবে মন ভালো করা’র চেষ্টা করছেন কামাল চৌধুরী। বাবা’র শোকটা ভুলে শ্বশুড় নামক নতুন একটা বাবা পেয়েছে সে। এই কয়েক মাসে, নিজের ব্যবহার, আচার আচরণের জন্য মনের অনেকটা জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে কামাল চৌধুরী। মানুষ সব সময় একরকম থাকে না, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়। কামাল চৌধুরীও এখন পএু বধুকে ছাড়া কিছু বুঝে না। সবসময় উঁচু গলায় মা বলে ডাকে।

গত এক মাস আগে তিহান ঘরোয়া ভাবে বিয়ে করেছে শুধু মাএ মায়ের জন্য। কেননা তিহান চাকরির জন্য তো আর বাড়ি থাকতে পারেনা। মেয়ে দু’টো তো পরের ঘরে। আর সানজিদা শেখ স্বামী’র ঘর বাড়ি ছেড়ে তিহানের সাথে থাকতে নারাজ। এখানে যে রয়েছে তার স্বামী’র সাথে কাটানো কত-শত স্মৃতি। তা ছেড়ে কী করে যাবে সে অন্য স্হানে! একটা নারী’ই পারে প্রিয়জনের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে পুরো জীবন পাড় করতে। তাই বাধ্য হয়ে মায়ের জন্য বিয়েটা করতেই হলো তিহানের । একা একজন মহিলা তো আর একটা বাসায় থাকতে পারে না। তাই সঙ্গী হিসেবে নিজের বউকে রেখে গেলো মায়ে’র কাছে।

কয়েকদিন আগে রাফিনে’র মেডিকেল রেজাল্ট দিয়েছে। মেডিকেলে’র মধ্যে সেকেন্ড হয়েছে সে। প্রথম হয়েছে মলি। আজ তাদের সম্মান প্রদর্শণের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশাল আয়োজন করেছে। বিকেলে তিন’টায় পরিবারসহ সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য আহবান জানালেন কলেজের প্রধান অধ্যাপক মহাশয়।
.
.
“বিকেল তিনটা অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। রাফিন, ঐশী ও সানজিদা শেখ এসেছেন অনুষ্ঠানে। ব্যস্ততা’র জন্য কামাল চৌধুরী আসতে পারেন’নি। দীর্ঘদিন পড়ে আজ সায়েমা ইতি ও মলি’র সাথে সানজিদা শেখের দেখা হয়েছে। দুই বোনে’র সে কি কান্না। এক পর্যায় রাফিনকে মঞ্চে যাবা’র জন্য অনুরোধ করা হলো।
রাফিন দুই হাতে মা ও স্ত্রী’র হাত ধরে মঞ্চে উপস্থিত হলো। সবার দৃষ্টি গভীর ভাবে তাদের দিকে স্হির।এক পর্যয়ে রাফিনকে প্রশ্ন করা হলো,

” আচ্ছা মিস্টার রাফিন চৌধুরী! আপনার এই সফলতা’র পিছনে সব চেয়ে কার অবদান বেশী? এই সম্পর্কে আমাদের কিছু বলার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো!”

“রাফিন মুচকি হেসে মাইক্রোফোন হাতে নিলো। এই বিশেষ সফলতায় অতী আনন্দে তার হার্টবিট দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। টের পেলো তার হাত কাঁপছে, একবার মায়ে’র দিকে একবার অর্ধাঙ্গিনী’র মুখশ্রী’র পানে তাকালো। দুজনের মুখেই অমায়িক হাসি। রাফিন আগোছল ভাবে বলতে শুরু করলো,

” হ্যালো এভরিবডি! জানি না আমি কী করে কোথা থেকে শুরু করবো। কারণ অতী আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে আমি বাকরুদ্ধ! শব্দের ঝুলিতে যেন শব্দ শূন্য। এই দিনটার জন্য আমি, দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছি। আজকের দিনটা আমার জীবনের আরো একটি স্মরণীয় দিন হয়ে রয়ে যাবে।
তাই এই অনুভূতি প্রকাশ করতে আমি ভাষাহীন। মহান আল্লাহর কাছে লক্ষ লক্ষ শুকরিয়া তিনি আমাকে এই আনন্দানুভুতিতে সিক্ত করলেন! এবার আপনাদের প্রশ্নে আসি,
আমার যতটুকু অর্জন কিংবা সফলতা পিছনে প্রথমতো আমার মায়ের অবদান সব থেকে বেশী।( মায়ের কাঁধ হাত রেখে) এই মহীয়সী নারী’ই আমার মা! উনিই আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছে। এবার ঐশী’র দিকে তাকিয়ে বললো,

আর দ্বিতৃয় ব্যক্তি’টি হলো আমার অর্ধাঙ্গিনী! যে আমার জীর্ণশীর্ণ মনটার ভিতর একফালি নরম আবেগ বিদীর্ণ হয়ে ছুঁয়েছে। তার স্নেহময় ভালোবাসা রোদ হয়ে ধরা দিয়ে, ভিতরটা আলোকিত করে দিয়েছে। আমার খারাপ সময় কাঁধে ভরসার হাত দিয়ে আমাকে সাহস দিয়েছে , সফলতা’র অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমার সাথে সমান ভাবে জীবন যু’দ্ধে লড়াই করেছে।
এই নারী দু’জন আমার কাছে পৃথিবীর’র শ্রেষ্ঠ নারী! আসলে এদের নিয়ে যত বলবো ততই কম হয়ে যাবে। আমার স্বপ্ন পূরণের এই সফলতায় তারা সমান অংশীদার৷ তাদের সহযোগিতায় হয়তো আজ আমার নামের পাশে “ডক্টর” শব্দটা যুক্ত হয়েছে। তাই এদের হাতেই আমার ক্যারিয়ারের অর্জন , জীবনের সফলতা দেখতে চাই। আমার আনন্দগুলো তাদের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। এজন্যই আজকে এদেরকে মঞ্চে নিয়ে আসা হলো।”

থামলো রাফিন। সবার সামনে দুই হাতে দুজনকে জড়িয়ে ধরলো। উপস্থিত সবাই মুগ্ধ দেখছিলো এদের আনন্দময় মুহূর্ত। ইতোমধ্যে চারপাশ থেকে করতালি’র শব্দে মুখরিত পরিবেশ। সানজিদা শেখ ও ঐশী তো অতী আনন্দে কেঁদে দিয়েছে। মুখে হাসি, চোখে অশ্রু! এটাকেই বলে আনন্দময় কান্না! ঐশী নিজেকে আরো একবার পৃথিবীর’র সব থেকে ভাগ্যবতী নারী মনে হচ্ছে। তার হাসবেন্ড সবার সেরা! একজন দায়িত্ববান পুরুষ আসলেই সব জায়গায় সেরা। এরাই পারে একজন আদর্শ সন্তান হতে, একজন আদর্শ হাসবেন্ড হতে। একজন দায়িত্ববান পিতা হতে!

চলবে……..

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আজকের লেখাটার সময় আমি নিজেই আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছি। বাবা হারানো কষ্ট’টা অধিক শো’কে’র। আমাদের যাদের বাবা বেঁচে আছে তাদের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। যাদের বাবা বেঁচে নেই তাদের জন্য দোয়া রইলো, আল্লাহ যেন তাদের পরপারে ভালো রাখে। আর হ্যাঁ আমিও দোয়া যাচ্ছি আমার বাবার জন্য। এই মানুষটাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি!

কেমন হয়েছে জানাবেন সবাই। আর এক পর্বে শেষ হবে গল্প। রেসপন্স প্লিজ! মাএই লিখে দিয়েছি রিচেক করলে অনেক সময় লাগবে, তাই করিনি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here