ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ #writer_sumaiya_afrin_oishi #পার্টঃ৫০ (অন্তিম পর্বে’র শেষ অংশ)

0
400

#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পার্টঃ৫০ (অন্তিম পর্বে’র শেষ অংশ)

“আমার বিশ্বাসের জয় হয়েছে ঐশী! আল্লাহ আমাদের কথা ঠিক শুনেছে। তুমি মা হতে চলছো ঐশী! আর আমি আমি “বাবা!”

ঐশী যেন নিজের কান’কে বিশ্বাস করতে পারছে না। উওেজনায় শরীরে মৃদু কম্পন সৃষ্টি হলো। কণ্ঠ নালি থেকে কোনো বাক্য বের হচ্ছে না। বহু কষ্টে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,

“আপনি আপনি কী বললেন রাফিন? সত্যি বলছেন? আমি মা হতে চলছি।”

রাফিন আবারও পুনরায় ঐশী’কে জড়িয়ে ধরলো। গম্ভীর’র মুখ’টা হাস্যজ্বল হয়ে গিয়েছে। তার মায়াবিনী’র কপালে, চোখে, মুখে অজস্র চুমু খেলো। অতি আনন্দে কেঁদে দিলো ঐশী। ঐশী’র চোখে’র পানিটুকু যত্ন করে মুছে দিলো রাফিন। ঐশী’কে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে, নিচু হয়ে ঐশী’র কোলে মাথা রাখলো রাফিন। পরক্ষণে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

“জানো মায়াবিনী আমিও আল্লাহ’র কাছে প্রতিনিয়ত বলতাম আমাদের একটা বাচ্চা হোক। আজ আমি ভীষণ ভীষণ খুশী মায়াবিনী! বাবা হবার অনুভূতি এতো স্নিগ্ধ, এতো আনন্দে’র কেনো? সৃষ্টি-কর্তা’র কাছে একটা’ই প্রার্থণা সব পুরুষ এই অনুভূতি অনুভব করুক! যারা নিসন্তান তাদের একটা সন্তান হোক। আমিন!
আজ আমার জীবন পরিপূর্ণ মায়াবিনী! সৃষ্টি কর্তা’র নিকট এর থেকে দামি আর কোনো কিছু চাওয়ার নেই আমার। তুমি, তোমরা, তোমাদে’র নিয়ে আমি অনেকটা বছর বাঁচতে চাই।”

থামলো রাফিন। চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে লাগলো তার মায়াবিনী’কে। অতি আনন্দে ঐশী কিছু বলতেই পারছে না, সে বাকরুদ্ধ। চোখ জুড়ে এখনো আনন্দে’র অশ্রু বইছে। বুকে ধড়াস ধড়াস কম্পন হচ্ছে।
.
.
তাহাজ্জুদ নামাজে’র কান্না কখনো বিফলে যায়না, কক্ষণো না। সৃষ্টিকর্তা’র নিকট গভীর ভাবে কিছু চাইলে তিনি কাউকে নিরাশ করে না। হয়তো সাময়িক সময়ে’র জন্য ধৈর্যের পরিক্ষা নেন তিনি।ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে উনি বেস্ট জিনিসটাই দেয়।
ঐশী মা হতে চলছে সুসংবাদ’টা কিছুসময়ে’র মধ্যে সবার নিকট পৌঁছে গেলো। জান্নাতি মেহমানে’র আগমনে’র উদ্দেশ্য সবাই একটু বেশী’ই খুশী। কেননা অনেক সাধনার পড়ে পেতে চলছে একটা সন্তান! অনাগত সন্তান আসা’র উপলক্ষে খুশী হয়ে রাফিন এতিম ও পথ শিশুদের নিজ হাতে খাবার বিলাল।৷ বাড়িতেও ছোটখাটো একটা আয়োজন করা হলো।বাড়ি’র সকলে’ই খুব কেয়ার করছে ঐশী’কে। রাফিন আগের তুলনায় আরো অধিক যত্নশীল হয়ে গিয়েছে। হসপিটাল থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দ্রুত বাসায় আসে। বাকি’টা টাইম তার মায়াবিনী’কে ই দেয়। কেননা এই সময় মেয়ে’রা একাকিত্ব অনুভব করে, একা থাকলে টেনশন বাড়ে। তাই রাফিন তার সাধ্যে’র চেয়েও বেশী চেষ্টা করছে তার মায়াবিনী ‘কে ভালো রাখার।
এভাবেই যাচ্ছে দিন, দিন গিয়ে মাসে পরিণত হচ্ছে।
.
.
মা হওয়া এতো সহজ নয়! মা হতে হলে নিজেকে বিলীন করে মা হতে হয়। নরমাল ডেলিভারি কিংবা সিজারিয়ান ডেলিভারি দু’টো ক্ষেতরে’ই মা’কে জীবনে’র সাথে লড়াই করতে হয়। তবুও সব মেয়ে মা’ হতে চায়।
যতদিন যাচ্ছে ঐশী বিভিন্ন রোগেশোকে ভুগছেন। এদিকে ডেলিভারি’র সময়ও ঘনিয়ে আসছে, সাথে সাথে সমস্যা গুলোও তড়তড় করে বাড়ছে। ভরা পেট নিয়ে চলতেই কষ্ট হচ্ছে এখন। শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে, এতো এতো সমস্যা’য় ভুগেও নিজের অনাগত সন্তানে’র মঙ্গল কামনা করছে। সব মায়েদের’ই একটা কথা-“যত কষ্ট আমার হোক আমার সন্তান ভালো থাকুক!” হ্যাঁ এরাই হলো মা।

এখন রাত এগারো’টা প্রায়, ঐশী সুয়ে আছে। আজকে খুব খারাপ লাগছে তার। হাত-পা ফুলে গিয়েছে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি দ’মটা বেরিয়ে যাচ্ছে।সে খুব করে চায় তার রাফিনে’র সাথে হাজার বছর বাঁচতে, কিন্তু বারংবার মন বলছে সে আর বাঁচবে না। ঘন্টা খানিক সময় ধরে রাফিন’কে জড়িয়ে ধরে সুয়ে আছে। খুব কাছ থেকে অনুভব করছে তাকে। রাফিনও কিছু বলছে না ঐশী’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ করে রাফিনে”র বুকে তরল কিছু অনুভব করতেই, দেখতে পেলো ঐশী নিঃশব্দে কাঁদছে। রাফিন অস্হি’র হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে সোনা?কাঁদছো কেনো?পেইন হচ্ছে? কি হয়েছে প্লিজ বলো আমাকে? কোথাও খারাপ লাগছে? এ্যাই ঐশী জান! বলো?”

ঐশী নিরুওর। সে কেঁদেই চলছে। রাফিন সোয়া থেকে উঠতে চাইলো কিন্তু ঐশী ছাড়লো না। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাফিনে’র চোখে’র দিকে তাকিয়ে কান্না’রত অবস্থায় ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রাফিন!আমি মনে হয় বাঁচব না বেশী সময়। আচ্ছা একটা কথা বলি?”

মলিন কন্ঠে বললো রাফিন –

” বলো?”

” আচ্ছা আমি যদি ম’রে যাই, তার পরদিনটা তোমার জন্য কেমন হবে? আমার কথা মনে পড়বে রাফিন? ভোরবেলা বিছানার বাম পাশের জায়গাটা যখন খালি দেখবে, কষ্ট হবে? সকালের নাস্তাটা যখন আমি ছাড়া বাড়ির অন্য কেউ বানাবে, দুঃখ লাগবে তোমার? লাঞ্চ আওয়ারে যখন আমার নাম্বারে ফোন করবে অথচ ফোনটা আর কেউ রিসিভ করবে না, তখন মনের মধ্যে হু হু করে উঠবে? রাতে খাবার টেবিলে তোমার পাশের চেয়ারটা যখন শূন্য পড়ে থাকবে, খাবার গলা দিয়ে নামবে? মধ্যরাতে বুকে আঁকড়ে ধরার জন্য যখন আমায় আর পাবে না, বুক ফেটে কান্না আসবে? প্রিয়, আমি মরে গেলে ভুলে যাবে না তো আমায়? না-কি আমি মরে গেলে তোমার পুরুষত্ব একলা বিছানায় ভালো থাকবে না বলে চট করেই অন্য কোনো নতুন দেহের সন্ধানে মত্ত্ব হবে?

রাফিন করুন কন্ঠে বললো,

“এসব কি বলছো বউ? আমার আমার কষ্ট হচ্ছে ঐশী, ভীষণ কষ্ট হয়! তোমার কিছু হবে না সোনা। আমি আছি তো।”

ঐশী শুনলো না যেন কিছু। সে পুনরায় আবার বললো,

“শোনো প্রিয় শ্যামসুন্দর মানব! তোমার জন্য অনেক মায়া এই বক্ষ মাঝে লালন করেছি বহুকাল ধরে। এই মায়া মৃত্যুর পরেও কমবে না যে। শোন, আমি মরে গেলে চট করেই অন্য কাউকে বিয়ে কোরো না যেন! ভালোবাসি তো তোমাকে। তাই, তোমার পাশে আমার জায়গাটা কাউকে দিতে হবে ভাবলেই কলিজায় কামড় পড়ে। আমার অবর্তমানে আমায় কিন্তু এখনকার মতোই ভালোবেসে যেও। আমি ম’রে গেলে আমার সন্তানটা’কে আঁকড়ে ধরে বাকি’টা টা জীবন পাড় করে দিও।তাকে মানুষে’র মতো মানুষ করিও। খবরদার অন্য কোনো নারী’কে কখনো স্পর্শ করো না যেন! তুমি একান্তই আমার হয়ে থেকো। পরপাড়ে যেন তোমার দেখা পাই। আমি আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।”

আস্তে আস্তে কন্ঠ স্বর নেতিয়ে আসলো ঐশী’র। থামলো সে, জোরে জোরে শ্বাঃস নিচ্ছে। প্রিয় মানুষে”র এমন অসহায়ত্ব কথা, এমন অসহ্য কষ্ট দেখে অপর মানুষ’টা কি করে ঠিক থাকে?মুহূর্তে’ই রাফিনে’র পুরো মাথা’টা এলোমেলো হয়ে গেলো। ঐশী’র বুকে মুখ লুকিয়ে কেঁদে দিলো সে।
হ্যাঁ পুরুষ মানুষ ও কাঁদে । সেই নারী’ই পুরুষের কান্না দেখতে পায়, যে নারী’কে পুরুষ মানুষ’টা নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।”

কিয়াৎ ক্ষণ পড়ে মৃদু কন্ঠে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে রাফিন বললো,

“তোমাকে কোথাও যেতো দিবো না মায়াবিনী! তোমাকে ছাড়া দ’ম নিতে কষ্ট হয় আমার । আর সেখানে অন্য নারী! প্রশ্ন’ই আসে না। পুনরায় যদি এমন কিছু বলো, দেখবে তখন আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তোমার কিচ্ছু হবে না,কিচ্ছু না! আমি সব সময় তোমার সাথে আছি।”

রাফিন’কে কাঁদতে দেখে ক্ষীণ কন্ঠে ঐশী বললো,

“কাঁদছো কেনো রাফিন? প্লিজ বাচ্চামো করো কেনো? আমি আর বলবো না। স্যরি তার জন্য। আর হ্যাঁ এভাবে ডক্টর’দের কাঁদতে নেই। তুমি জানো না? থামাও কান্না প্লিজ! আমার কষ্ট হচ্ছে রাফিন!” বলতে বলতে রাফিনে’র চোখে’র জলটুকু মুছে দিলো ঐশী।

রাফিন ঐশী’র হাতে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

“আমার যদি সাধ্য থাকতো ঐশী। তবে বিশ্বাস করো! তোমার সমস্ত কষ্ট গুলো নিজের করে নিতাম।”

রাফিনের কণ্ঠে ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব, প্রিয় মানুষটাকে হারানো ভয়।পরমুহূর্তেই থামলো রাফিন, না তাকে এভাবে ভে’ঙে পড়লে চলবে না। বিছানা ছেড়ে গিয়ে ঐশী’কে হালকা ডোজের একটা ঘুমের ইনজেকশন পুষ করে দিলো। নিজেও পাশে সুয়ে ঐশী’র চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। কিছু সময়ে’র মধ্যে’ই ঘুমিয়ে পড়লো ঐশী। গভীর রাতে রাফিন উঠে গিয়ে, অজু করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নিলো। অতঃপর মোনাজাতে আল্লাহর নিকট কেঁদে কেঁদে প্রিয়জনে’র সুস্থ’তা কামনা করছে।

কোনো কিছু’র শব্দ কর্ণকুহরে পৌঁছাতে ঘুম ভেঙে যায় ঐশী’র। হাত দিয়ে হাতড়িয়ে রাফিনকে পাশে না পেয়ে, রুমে’র চারপাশে নিবু নিবু দৃষ্টি বুলালো। মৃদু আলোতে হঠাৎ জায়নামাজে রাফিন’কে দেখতে পেলো। সমস্ত হৃদয় জুড়ে ভালোলাগার শিহরণ বয়ে। সব পুরুষ পারে না প্রিয়জনে’র জন্য সৃষ্টিকর্তা’র নিকট প্রার্থনা করতে। সে এতো ভাগ্যবতী কেনো? ভাবতেই স্বস্তি’তে আবার চোখ দু’টো ভিজে গেলো।
.
.
চলে গেলো কয়েক সপ্তাহ ঐশী’র শারীরিক কন্ডিশন বেশ খারাপ। তাই আজ রাত আটা’য় সিজার করা’র জন্য হসপিটালে নিয়ে আসা হলো। সাথে রয়েছে দুই পরিবারে’র সবাই, ও বন্ধু মহল।
রাত আট’টা। অটি রেডি করা হয়েছে বলে, রাফিনকে জানিয়ে গেলো একজন নার্স। রাফিন নিজে’ই সিজার করবে, দেরী না করে অটিতে নিয়ে গেলো ঐশী’কে। রাফিন’কে সাহায্য করা’র জন্য শুধু দুজন নার্স’কে রাখলো।
.
এদিকে সবাই’ই চিন্তিতো মুখ করে করিডরে’র বাহিরে বসে আছে।হঠাৎ বাচ্চা’র কান্না’র শব্দ শুনে সবাই স্বস্তি’র শ্বাঃস ছাড়লেও, সানজিদা শেখ চিন্তি’তো। তার মেয়ে কেমন আছে? শুনতে না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই তার।
.
অপারেশন সাকসেস! অবশেষে ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তানে’র জননী হলো ঐশী।রাফিন নিজেই প্রথম মেয়ে’কে কোলে নিয়ে, পরম মমতায় বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। কপালে চুমু খেলো, তারপর কানে নিজে’ই আযান দিলো। নার্স দু’জন অবাক হয়ে দেখছিলো এমন মুগ্ধ’কর দৃশ্য। তাদের কাজ শেষ হতেই ইশারায় বাহিরে বের হতে বললো রাফিন। নার্স দু’জন মুচকি হেসে চলে গেলো। নার্স থেকে খবর পেলো- কন্যা সন্তান হয়েছে। তা শুনে সবাই ভীষণ ভীষণ খুশী।

এদিকে পরক্ষণেই রাফিন এক হাতে মেয়ে, অন্য হাতে তার মায়াবিনী’কে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমু খেলো ঐশী’কে। তার চিন্তিতো মুখশ্রী’তে একপশলা উজ্জ্বল হাসি। ঐশী অচেনা অবস্থায়, তাই দেখতে পেলো না তার শ্যাম সুন্দর পুরুষ’টি স্নিগ্ধ অনুভূতি।
.
.
সবাই’কে নিয়ে দিব্যি দিন যাচ্ছে ঐশী’র। কামাল চৌধুরী নাতনী’র নাম রেখেছে- “রাইসা মনি”।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো চারটা বছর।রাইসা এখন অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে।গুটি গুটি পায়ে হেঁটে পুরো বাড়ি’তে রাজ্যত্ব করছে। আধো আধো কন্ঠে কথা বলে সবার মন যেন কেঁড়ে নিচ্ছে। বয়সে’র তুলনায় মেয়েটা একটু বেশী’ই চঞ্চল।

জুম্মা’র নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছিলো রাফিন। রাইসা ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে এসে বাবা’র হাত ধরে ফেলল। রাফিন মৃদু হেসে কোলে নিয়ে আদর করছে। রাইসা মৃদু হেসে, আদুরে কন্ঠে আবদার করলো,

” বাবাই তুমি তই(কই) দাচ্ছো(যাচ্ছো)? আমিও তোমাল সাথে যাবো।”

“আম্মু আমি মসজিদে যাচ্ছি। ঐখানে মেয়ে’রা যায় না আম্মু। তুমি তোমার আম্মুর কাছে যাও সোনা মা আমার ।”

“আত্তা! আমাল জন্য অনেক চককেট আনিও।”

রাফিন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বললো,

“তুমি গিয়ে আল্লাহর কাছে বলো তোমার চকলেট লাগবে! দেখবে আল্লাহ তোমাকে অনেক গুলো চকলেট দিবে। তোমার যখনই কোনো কিছু প্রয়োজন হবে, তখনই আল্লাহ কাছে চাইবে। তুমি যা চাইবে তার থেকেও উপরওয়ালা তোমাকে বেশী দিবে। মনে থাকবে আম্মু?

ছোট্ট মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। বাবা’র কপালে চুমু খেয়ে, দৌড়ে রুমে গেলো। দূরে দাঁড়িয়ে বাবা-মেয়ের ভালোবাসা উপভোগ করছে ঐশী। রাফিনের এই ছোট ছোট শিক্ষা গুলো ভীষণ ভালো লাগে ঐশী’র। বাচ্চা’দের ছোট বেলা থেকে যেমন শিক্ষা দেওয়া হবে তারা তাই’ই শিখবে। এতে করে বড় হলে কোনো কিছু না পেলে হতাশ হবেনা। বরং সৃষ্টিকর্তা নিকট সাহায্য চাইবে। রাফিন ঐশী’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো।
.
প্রিয়জনে’র সাথে কেটে গেলো অনেক গুলে রঙিন বসন্ত। আবার বসন্তে’র সাজে সেজেছে প্রকৃতি। বসন্ত’কে রঙিন করতে’ই যেন ফুটে উঠেছে থোকা থোকা লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া। ক্যালেন্ডারে’র পাতায় আজ ফেব্রুয়ারি’র ১৪ তারিখ। আজই সূচনা হয়েছে বসন্তে’র।
খুব ভোরে রাফিন হসপিটাল গিয়েছে ইমারজেন্সি ফোন পেয়ে। সকালে’র কাজ-বাজ শেষ করে অবসর সময় ঐশী’র প্রিয় একটা উপন্যাসে’র বই পড়ছিলো। বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা উল্টাতেই, রাফিনের দেওয়া চিরকুট গুলো চোখে পড়লো। মুচকি হেসে চিঠি গুলো আবারও পড়লো।
অনেক শখের জিনিস গুলোও একটা সময় পুরোনো হয়ে যায়। শুধু পুরনো হয় না প্রেম, চিঠির কাগজ গুলো পুরনো হয়ে গিয়েছে, কিন্তু চিঠির লেখা প্রত্যেকটা শব্দ আজও জীবন্ত। ঐশী বারংবার হাত বুলিয়ে দিচ্ছে লেখার উপরে ,মনে হচ্ছে চিঠির প্রত্যেকটা শব্দে আজও এক গভীর মায়া লেপ্টে আছে। মুহুর্তে’ই চোখে’র সামনে ভাসছে, রাফিনের সাথে কাটানো বিশেষ দিন গুলো। ঐশী চোখ বন্ধ করে যেন সব কিছু অনুভব করছে, আর মুচকি মুচকি হাসছে।

রাইসা দাদির রুম থেকে মায়ের কাছে আসলো। কিন্তু ঐশী টের পেলো না, সেতো পুরনো দিন গুলোর মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে। ছোট্ট রাইসা মা’য়ের দিকে চোখ গোল গোল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর মা’কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে প্রশ্ন করলো,

“আম্মি তুমি হাসছো কেনো?”

হকচকিয়ে গেলো ঐশী, এই মেয়ে’র জন্য আজকাল অকারণে হাসাও যায় না। তাহলেই মায়েদে’র মতো হাজার খানিক প্রশ্ন জুড়ে দেয়। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। ঐশী কথা ঘুরানো’র জন্য বললো,

“রাইসা মনি বিছানা থেকে ফোনটা নিয়ে আসো তো আম্মু। তোমার বাবা’ই কে কল দিবো।”

বাবা বলতে পা’গ’ল মেয়ে। আর কিছু না ভেবে দৌড়ে মোবাইল নিয়ে আসলো। ঐশী কয়েক বার ফোন দিলো কিন্তু রিসিভ হলো না। মন ক্ষুন্ন হয়ে গেলো, মা ও মেয়ে’র।

সকাল গিয়ে বিকাল হয়ে গেলো কিন্তু মানুষটা একটি বার কল দিলো না। অথচ আজ কত বড় বিশেষ একটা দিন । আজকের দিনটা প্রিয় মানুষের সাথে সবাই ই কাটাতে চায়। আর উনি একটা ফোন পর্যন্ত দিলো না।এইটা কোনো কথা? অভিমান হলো, ভীষণ অভিমান! তারপরও অপেক্ষা করছে রাফিনে’র জন্য।

আজ একটা ইমারজেন্সি রোগী ছিলো, মাএ’ই অটি থেকে বের হয়েছে রাফিন। এখনো অনেক ঝা’মে’লা আছে হসপিটালে।
একটু ফ্রেশ হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ঐশী’র অনেক গুলো ফোন কল। তা দেখে সারাদিন ক্লান্ত শরীরে এক পলাশ বৃষ্টি’র মতো ভালো লাগা’র শিহরণ বইলো। এর মধ্যে আরো একজন ইমারজেন্সি রোগী আসলো আর কল দেওয়া হলো না। তাড়াতাড়ি করে ছোট্ট একটি টেক্সট পাঠিয়ে দিলো।

“আমি ভীষণ ব্যস্ত আছি বউ! বাসায় ফিরতে আজ দেরী হবে।”

মেসেজটি যেন তেলের মধ্যে ঘি ঢালার মতো। ঐশী ফুঁসে উঠলো, কী এমন রাজকার্য পরিচালনা করছে মহাশয়! আজ শুধু বাসায় আসুক। একদম কথা বলবো না।
.
.
রাত এগারোটায় রুমে আসলো রাফিন। ঐশী গাল ফুলিয়ে বসে আছে। একটা কথাও বলছে না সে। কিসের জন্য এতো অভিমান হলো? ভেবে পেলো না রাফিন। ভাবুক হয়ে প্রশ্ন করলো,

“কী হয়েছে ঐশী? এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেনো?”

“নিরুওর ঐশী।”

রাফিন কাছে এসে হাত ধরে পুনরায় আবার বললো,

“কী হয়েছে এটা তো বলো? সারাদিন পরে বাসায় আসলাম, কই বউ একটু আদর টাদর করবে। আর মহারাণী কথাই বলছে না।”

মুখ খুললো ঐশী, ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,

“আসছেন কেনো বাসায় আপনি? হাসপাতালে’ই থেকে যেতেন। আপনার কোনো কান্ড জ্ঞান আছে?কান্ড জ্ঞানহীন লোক কোথাকার!”

“আজব তো! এভাবে চেঁচাচ্ছো কেনে ঐশী? আমি কী করলাম? আর আস্তে কথা বলো, বাসায় আরো লোক আছে। আমি চাই আমাদের মধ্যে’র সমস্যা গুলো আমারাই মিটিয়ে নিবো। সম্পর্কে’র মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি’র আগমন ঘটাতে নেই।”

ঐশী দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“আমি চেঁচাচ্ছি কি আর সাধে। সারাটা দিন আপনাকে এখন আর পাওয়াই যাচ্ছে না। আমাকে একটু ও সময় দিচ্ছে’ন না এখন আর। আজ বিশেষ একটা দিন তাও একটি বার আপনার দর্শণ মিললো না। এখন তো পুরনো হয়ে গিয়েছে, তাই ভালো লাগছে না আমাকে। আপনি কোনো নিয়ম-কানুন মানছেন না এখন। একটু ও ভালোবাসেন না আমাকে। বলেই রাফিনের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো ঐশী।

রাফিন ঐশীর কোমড় চেপে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

” এসব কী বলছো সোনা? তুমি সবসময়ই আমার কাছে নতুন। সেই প্রথম দিনে’র মতো। ইমারজেন্সি দুইটা অপারেশন করিয়েছি আজ। কিছুদিন ধরে হসপিটালে প্রচুর কাজ করতে হয়। এজন্য সময় দিতে পারছিনা জান। তুমি না বুঝলে কে বুজবে আমাকে বলো?
আর হ্যাঁ বিশেষ দিন’টা কি তোমার বলতো?”

“আজ কাল তো তোমার কিছু’ই মনে থাকেনা।কখন জানি আমাকে ভুলে যাও। আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে গেলো অথচ একবার মনে করে উইশ পর্যন্ত করলে না।”

রাফিন মৃদু হেসে ঐশী’কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

“এসব রোজ ডে, প্রপোজ ডে, চকলেট ডে, টেডি ডে, হাগ ডে, কিস ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে আমার এসব কিছু লাগে না। এতসব মনেও থাকে না। আমার সহজ স্বীকারোক্তি যাকে ভালোবাসি তাকে সবসময়ই ভালোবাসি! তোমার জন্য ক্যালেন্ডারে আলাদা কোন দিন দেখতে হয় না আমাকে।
আমার কাছে টাকা থাকলে আমি তোমাকে ফুল, চকলেট, টেডি আরও অনেক কিছুই উপহার দিতে পারি। এসবের জন্য আলাদা আলাদা দিন লাগে না। আমি বিধ্বস্ত হয়ে, হাজারটা মন খারাপ নিয়ে তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারলে তখন আমি হয়ে যাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। তোমার একটা অলিঙ্গন যেনো প্রশান্ত করে দেয় এলোমেলো, রুক্ষ এই আমিটাকে।
প্রিয়জনে’র পাশে থাকার জন্য প্রমিস করাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই যে পাশে আছি সেটা তাকে অনুভব করানো। আর সবচেয়ে সুন্দর হলো এইভাবে সারাজীবন পাশে থেকে যাওয়া। তার জন্য আলাদা কোন দিন বা মুহূর্তের প্রয়োজন নেই মায়াবিনী। শুধু আজকে’র দিন নয়, বছরের প্রত্যেকটা দিন তুমি আমার কাছে স্পেশাল। আমি যতোটা প্রকাশ করি তার থেকেও বেশি ভালোবাসি!
তাছাড়া কী জানো? আজকাল ভালোবাসা নিয়ে যতটা আদিখ্যেতা দেখানো হয় ততটা সম্মান আর গুরুত্ব দিয়ে সারাজীবন আগলে রাখতে পারলে ভালোবাসার জন্য ক্যালেন্ডারে অালাদা কোন দিন দেখতে হতো না। সবার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই হতো ভালোবাসাময়, স্নিগ্ধ এবং সুন্দর!”

থামলো রাফিন। ঐশী আর অভিমান করে থাকতে পারলো না। যতবার রাগ কিংবা অভিমান দেখাতে গিয়েছে এই মানুষটা ততবার, গভীর ভাবে তার ভালোবাসা উপলব্ধি করিয়েছে। তারপর ও ঐশী দমে গেলো না, পরক্ষণে আবার বললো,

“আজ যে বসন্ত ঋতু শুরু হলো। তার বেলায় কি হবে হ্যাঁ। সবাই কত স্পেশাল ভাবে এই দিনটা কাটায় প্রিয়জনে’র সাথে। আর তোমার মনেও থাকে না এসব। হার্ট’লেস, রসকষহীন মানুষ কোথাকার!”

রাফিন এবার ঐশী’র কোলে মাথা রেখে সুয়ে পড়লো। দুষ্ট হেঁসে বললো,

“যার ঘরে এমন একটা কোকিল রয়েছে, তার কাছে তো সব ঋতু’ই বসন্ত ঋতু জান।”

ঐশী কটমট করে তাকালো। রাফিন ঐশী’র চোখে চোখ রেখে নেশালো কন্ঠে আবার বললো,

“যখন তুমি হাসো,রোজ বসন্ত নেমে আসে আমার আঙ্গিনায়।তোমার হাসি মুখটা যেন আমার প্রতিটা দিনকেই করে তুলে রঙিন।
তোমার চোখে কাজল থাকা মানেই,রোজ আমার দুয়ারে প্রেমের আগমন।তোমার চোখের প্রেমে কাজলের মতোই আমি লেপ্টে থাকি।
তোমার চোখে তাকিয়ে,দ্বিধার দেয়াল ভেদ করে আমি অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে যাই।
তুমি নীল শাড়ি পরলেই পুরো শহরে লাগাতার হরতাল ডাকি!যাতে এই আমি ছাড়া তোমায় আর অন্য কেউ নীল শাড়িতে দেখতে না পারে!
রোজ বসন্ত আসে আমার হৃদয়ে,রোজ বৃষ্টি নামে,রোজ ভিজিয়ে যায় মন।তবুও তোমার প্রেমে আমি আজও সেই আগের মতোই মাতোয়ারা!
তোমার নির্লিপ্ত কণ্ঠস্বর যখন কানে বেজে ওঠে,তখন আমি সব ভুলে শুধু তোমাতে বিভোর থাকি।
তুমি কি জানো?
তুমি হাসলেই রোজ বসন্ত আসে হৃদয়ে!তোমার কাজল চোখে তাকিয়ে আমি বারবার নিজেকে ভুলে গিয়ে শুধু তোমাকেই মনে রাখি–শুধু তোমাকেই মনে রাখি। যেখানে নিজেকে’ই ভুলে বসে আছি,সেখানে এসব কী করে মনে থাকবে বলো?”

ঐশী লজ্জা পেলো এবার। মুখে কিছু বললো না, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার শ্যামসুন্দর মানুষটি’র দিকে। প্রতি নিয়ত যেন ভাবাচ্ছে তাকে, একটা পুরুষ কী করে এতো গভীর ভাবে ভালোবাসতে পারে? কিন্তু উত্তর’টা জানা হলো না আজও। রাফিন ঐশী’কে জড়িয়ে ধরে সুয়ে পড়লো।আবদার করে বললো,

“মাথাটায় একটু হাত বুলিয়ে দেও বউ! ভীষণ ক্লান্ত লাগছে, আমি ঘুমবো।”

ঐশী বিনাবাক্যে, যত্ন করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রাফিনে’র মাথায়। ক্লান্ত শরীর থাকায় কিছুক্ষণে’র মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লো রাফিন। ঐশী রাফিনকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো কিছুক্ষণ। হুট করে ঘুমন্ত রাফিনের কপালে অধর ছুঁয়ে দিলো।তারপরে লাইট অফ করে রাফিনের প্রশান্ত বুকে মাথা গুঁজে সুয়ে পড়লো। দিন শেষে এই বুক’টাতেই যেন পরম শান্তি।
.
আজ সাতদিনের জন্য রাফিন ঢাকা এসেছে জরুরি ট্রেনিং দিবার জন্য। তৃতীয় দিন হসপিটালের মধ্যে, হঠাৎ করে মলির সাথে দেখা হলো। মূলত মলিও এসেছে ট্রেনিং দিবার জন্য। মলি’র কোলে রয়েছে ছোট্ট একটি তিন বছরের ছেলে। দীর্ঘদিন পরে সামনাসামনি দেখা হলো তাদের। চেনা এই পরিচিত মুখটা দেখে মুহূর্তে’ই হৃদয়ে অজানা একটা ব্যথা অনুভব করছে মলি। তবুও হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছিস রাফিন?”

রাফিন হাসি মুখে জবাব দিলো। পুনরায় মলি’কেও জিজ্ঞেস করলো,
“তুই কেমন আছিস? আরো ভালো মন্দ খোঁজ নিলো। মায়ের জোড়াজুড়ি” তে চার বছর হয়েছে বিয়ে হয়েছে মলি’র। হাসবেন্ড ভার্সিটির শিক্ষক। সুখেই আছে মলি। তবে এখনো বুকের একটি কোণে রাফিনে’র জন্য শূন্যতা রয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ কথা বলে, মলি’র ছেলে’কে কোলে নিয়ে আদর করে দিলো রাফিন । ট্রেনিং শুরু হতে চলছে তাই রাফিন বিদায় নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো।

রাফিন এই প্রথম মলির সাথে ভালো ভাবে নিজ থেকে কথা বলেছে। মলি রাফিনে’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। মনে মনে মনে বললো,

“তোকে না পাওয়ার আক্ষেপ’টা আজন্ম কাল বুকের বাম পাশটায় রয়েই যাবে রাফিন।”
.
.
দীর্ঘ সাতদিন পরে আজ সন্ধ্যায় বাড়িতে এসেছে রাফিন। এসেই মেয়েকে আদর করতে ব্যস্ত। মেয়ে’র এতো দিনে’র জমানো কথা গুলো মনযোগ দিয়ে শুনছে। এদের বাবা-মেয়ে’র কাছে পাওাই পাচ্ছে না ঐশী। তাই রুম থেকে বেরিয়ে চাচি শ্বাশুড়ি ও শ্বাশুড়ি’র সাথে বসে বসে গল্প করছে।
গল্প গুজব করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেছে। সবাই মিলে এক সাথে ডিনার করলো। রাইসা মনি জেদ করলো দাদি মনি’র সাথে ঘুমাবে আজ। অগত্যা মেয়ে’কে রেখেই রাাফিন ও ঐশী নিজেদের রুমে আসলো। রাফিন নিজের ব্যাগ বের করে, একটা শাড়ী’র প্যাকে’ট হাতে দিলো ঐশী’র।

ঐশী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” এতো এতো ব্যস্ততার মধ্যে থেকে এটা কখন কিনলে?”

“আসার পথে চোখে পড়লো। তোমার গায়ে দারুণ লাগবে শাড়ী’টা তাই নিয়ে আসলাম।”

বিনিময় ঐশী এক ঝলক হাসলো। পরক্ষণে রাফিন নিজ হাতে শাড়ী’টা পড়িয়ে দিলো ঐশী’কে। চুল আঁচড়িয়ে খোঁপায় কয়েকটি গোলপ গুঁজে দিলো। আর চোখে গাঢ় কাজল। প্রিয়তমা’র এই সাঁজ একান্তই তার জন্য। নিজ হাতে সাজিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার মায়াবিনী’কে। ঐশী কিছু বলছে না, সে-ও মুগ্ধ হয়ে দেখছে তার প্রিয় মানুষ’টার ভালোবাসা’ময় পা’গ’লা’মি। হুট করে রাফিন ঐশী’কে পাঁজা কোলে নিয়ে ছাদে”র দিকে যাচ্ছে। এটা’র জন্য ঐশী মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। রাফিনে’র গলা জড়িয়ে ধরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
ঐশী’কে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাফিন ভ্রু কুঁচকে বললো,

“এমন করে কেনো তাকাও আড় চোখে? কেনো আমায় এমন ভয়ংকর মায়া’য় জড়াও? তোমার রুপে যে পা’গল করে দিচ্ছে এই আমিটাকে।”

ঐশী বেশ লজ্জা পেলো, লাজুক হেসে বললো,

“তুমি সব সময় একটু বেশী’ই বলো।”

“সে আর বলতে পারলাম কই?
তোমার রুপে’র প্রশংসা করার মতো দুঃসাহস কী আমার আছে? বলো,,,,,
যে রুপ স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে তোমাকে দিয়েছে, সে রুপে’র প্রশংসা করা’র মতো ভাষা যে এখনো সৃষ্টি হয়নি।
পিথাগোরাসের উপপাদ্য প্রমাণ করা যায়,তবে তোমার কাজল চোখের ভয়ংকর সে মায়ার রহস্য প্রমাণ করা আদৌ কারো পক্ষে সম্ভব কিনা-আমি জানি না।
শুধু বলবো;
কাজল চোখের মায়ায় আমি অনবরত ডুবে ডুবে জল খাচ্ছি!সাঁতার না জানা মানুষটাকে এবার অন্তত বাঁচাও তোমার ভালোবাসা দিয়ে।আমি যে বড্ড বেসামাল হয়ে গিয়েছি।”

ঐশী রাফিনে’র গলা’টা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মৃদু হেসে গভীর ভাবে চুমু খেলো রাফিনের কপালে। তারপরে কন্ঠে মাদকতা টেনে মৃদু স্বরে বললো,

“আমি সারাজীবন তোমাকে ভালোবাসতে চাই ঠিক এই ভাবে। ভালোবাসি শ্যামসুন্দর পুরুষ! ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে!
তুমি কী জানো?
ভালোবাসতে পারাটাও একটি অসুখ!
সে অসুখে শতসহস্র বার আমি পাড়তে চাই।
অমরাবতী’র রাজ্য ঘুরে স্বপ্নে’র মাঝেও যদি তুমি আমার পাশে ভালোবাসা হয়ে রও!
তবে সহস্র’বার আমি ডুব দিবো তোমা’র ভালোবাসায়!
তুমি কী জানো..?
তুমি আমার হুট করে বুকের বা-পাশে’র ব্যাথা!
আচ্ছা বলো তো…?
তুমি আমার মনে এ-কেমন রোগ!
ইহ-জন্মেও কমবে না আমার এই তীব্র অসুখ!
অথচ এই অসুখই আমার ভীষণ ভীষণ প্রিয়।
এজন্য’ই এই অসুখে’র নাম বোধহয়-#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ!”

____________________সমাপ্ত______________________

আসসালামু আলাইকুম পাঠক / পাঠিকা! দীর্ঘ কয়েক মাস পরে শেষ হলো গল্প’টা। জানি না আপনাদের কেমন লেগেছে। ভালো /খারাপ যেমনটাই আপনার কাছে মনে হচ্ছে, আজ অন্ততো আপনার অনুভূতি প্রকাশ করুন। আমি অপেক্ষায় আছি আপনাদের কমেন্টে’র জন্য। আর হ্যাঁ আমার জন্য সবাই বেশী বেশী দোয়া করবেন!কেননা ব্যক্তিগত জীবনে, আমার জীবনটা বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত। তাই আপনাদের দোয়া প্রার্থী! সবাই ভালো থাকবেন। আবারও দেখা হবে নতুন কোনো গল্পে। সবাইকে ভালোবাসা! 🥰😘

(বিঃদ্রঃ এই গল্প’টাই আমার জীবনের প্রথম প্রাপ্তি। তাই অনেক জায়গা অনেক ভুল রয়েছে। কেননা কোনো অবিজ্ঞতা ছাড়া’ই আবেগের বশে লিখে ফেলছি। প্রথম দিক’টা অতো ভালো হয়নি আমার যা মনে হয়। কোথায় কোথায় সমস্যা কিংবা ভুল হয়েছে তা অবশ্য’ই বলবেন কিন্তু। মার্জিত ভাবে আমার সকল ভুল গুলো ধরিয়ে দিবার জন্য আপনাদের অনুরোধ করা হলো! আমি নিজেকে সংশোধন করে নিবো। আল্লাহ হাফেজ!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here