#হে_সখা
#অক্ষরময়ী
চতুর্থ পর্ব
আজকাল আম্বিয়া খাতুনের দিন কাটে ভীষণ ব্যস্ততায়। ঘর গুছিয়ে প্রতিদিন কিছু কেনাকাটার জন্য মার্কেটে যেতেই হয়। তাই সকাল সকাল ঘরের রান্না শেষ করে বাকি কাজ গুছিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। আজকেও সকালে উঠে রান্নাঘরে নাস্তার প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন। গুলিস্তাকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে বললেন,
– এতো সকালে নিচে নামতে গেলে কেনো? আরেকটু বিশ্রাম নিতে। কালকে কতো রাতে বাড়ি ফিরলাম।
– ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
– ঘুম ভালো হয়নি? নতুন জায়গা তো। নিজের ঘর ছেড়ে নতুন জায়গায় এডজাস্ট হতে একটু সময় লাগবে। এতোদিনের অভ্যাস বলে কথা!
কথা বলতে বলতে গুলিস্তা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে আসছে দেখে আম্বিয়া বেগম এগিয়ে এসে বললেন,
– এদিকে কোথায় আসছো? রান্না আমি সামলে নিচ্ছি। তুমি ডাইনিং এ বসো।
একটা চেয়ার টেনে গুলিস্তাকে বসিয়ে দিলেন। মেয়েটা আবার মাথায় ঘোমটা দিয়েছে। দেখতে একদম নতুন বউ লাগছে। অবশ্য নতুন বউ-ই তো। আম্বিয়া খাতুন ওর মাথার ঘোমটা নামিয়ে দিয়ে বললেন,
– ওতো ঘোমটা দিয়ে চলতে হবে না। এটা এখন থেকে তোমার নিজের বাড়ি। যেভাবে স্বস্তি পাও সেভাবে চলবে। ওতো ফর্মালিটি করে চলতে হবে না।
গুলিস্তা অভ্যাস অনুযায়ী মাথা দুলিয়ে সায় দিলো। আম্বিয়া খাতুনের ভীষণ মনে ধরেছে মেয়েটাকে। যাকে একবার মন থেকে ভালো লেগে যায়, পরবর্তীতে তার সবকিছু এমনিতেই ভালো লাগতে থাকে। এজন্যই সামনে-পিছনে কোনো কিছু বিবেচনা না করে এক দেখায় ছেলের বিয়ে দিয়ে গুলিস্তাকে নিয়ে এলেন। উনার একটা মেয়ের ভীষণ শখ ছিলো। রেহবারের পর যখন আবার সন্তানসম্ভাবা হলেন, ভীষন করে চেয়েছিলেন যেনো একটা মেয়ে হয়। কিন্তু জন্ম নিলো রাহিল। পরবর্তীতে আবার সন্তান নিতে চাইলে স্বামী সায় দেয়নি। গুলিস্তাকে পেয়ে উনার সেই শখের তরীতে হাওয়া লেগেছে। মনে হচ্ছে উনার ঘর আলো করে মেয়ে এসেছে। কিন্তু মেয়েটা সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে। যেনো রাজ্যের উদাসীনতা তার চোখে মুখে লেপ্টে আছে। এইটুকু বয়সে প্রজাপতির মতো চঞ্চল হওয়ার কথা। আম্বিয়া খাতুন এই বয়সে এসেও মনকে প্রফুল্ল রাখতে কতো ছেলে মানুষী করেন! ছেলের এমন হুট করে বিয়ে দেওয়াটাও উনার কাছে একটা এডভেঞ্জার ছিলো। এখন উনি রান্নার ফাঁকে গুলিস্তার সাথে গল্প করছেন, গুলিস্তা শুধু আগ্রহ নিয়ে শুনে যাচ্ছে।
নাস্তার পর্ব শেষে ছুটা বুয়া এসে বাকি কাজগুলো করতে শুরু করলো। এই ফাঁকে আম্বিয়া খাতুন গুলিস্তাকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখালেন। বাড়িটা শহরের খুব কাছেও না, আবার খুব বেশি দূরেও নয়। এমন জায়গা দেখে বাড়ি করেছিলেন রাতুল আহসান। ঢাকা নিবাসী রাতুল, যুবক বয়সে চাকরী সুবাদে এসেছিলেন এই সিলেট শহরে। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষটি ধুলোবাড়ির শহরে আর ফিরে যাননি। স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকলেন কয়েক বছর। তারপর ধীরে ধীরে তৈরী করলেন নিজস্ব নীড়। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সুখেই দিন কাটিয়েছিলেন। বার্ধ্যকের কারনে একদিন সাদরে মৃত্যু গ্রহণ করে পাড়ি জমালেন পরপারে। বাড়ির শেষ সীমানায় উনাকে দাফন করা হয়েছে। স্বামীর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন আম্বিয়া খাতুন।
– আমার বড় ছেলেটাও হয়েছে বাবার মতো। বাড়ি ছেড়ে, সিলেট ছেড়ে কোথাও যাবে না। ঢাকায় নামকরা একটা কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পেয়েও গেলো না। এখানে ছোট করে নিজের ব্যবসা শুরু করলো। আমি তো ভয়ে ছিলাম ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা? ওর বাবার পেনশনের প্রায় পুরো টাকাই তুলে দিয়েছিলাম ওর হাতে। সেই কোম্পানি লসের মুখ দেখলে আমরা একদম পথে বসে যেতাম। কিন্তু বছর শেষ হওয়ার আগেই রেহবার ওর কোম্পানিকে মোটামুটি একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে গেলো। এখন আর দুশ্চিন্তা হয় না। আমি জানি ও পারবে।
তখন শহরে বাইরে জমির দাম ছিলো ভীষণ কম। রাতুল আহসান নিজের জমানো টাকা দিয়ে খুব সহজে অনেকখানি জমি কিনতে পেরেছিলেন। সেখানে ছোট করেই একটা দোতলা বাড়ি তুলে বাকি অংশে গাছপালা লাগিয়ে তৈরি করলেন বন্য আবহ। দোতলা বাড়িটিতে চারটি শোবার ঘর আছে। উপর তলায় তিনটে আর নিচতলায় একটি। আম্বিয়া খাতুন গুলিস্তাকে সবকিছু দেখালেন।
– এই কয়েকদিনে সবকিছু বুঝে নেও। আমি চলে যাওয়ার পর সবকিছু তোমাকেই সামলাতে হবে। এখানে আমাদের নিকট আত্মীয় কেউ নেই। একাই চলতে হয়।
গুলিস্তা অবাক হয়ে বললো,
– কোথায় যাবেন?
গুলিস্তা দেখতে যেমন আদুরে বাচ্চার মতো, ওর কন্ঠও তেমন আদুরে শোনালো আম্বিয়া খাতুনের কানে। সেই কন্ঠে মন খারাপের আভাস পেয়ে তিনি হালকা হেসে গুলিস্তার হাত দুটো নিজের হাতে ধরে বললেন,
– তোমাকে হয়তো কেউ জানানোর সুযোগ পায়নি। আমি আর রাহিল এই সপ্তাহেই ফ্লোরিডা যাচ্ছি। মূলত এই কারনেই রেহবারের সাথে তোমার বিয়ে এতো তড়িঘড়ি করে দেওয়া হলো। ছেলেটাকে একা রেখে যেতে মন টানছিলো না। ওদিকে আবার রাহিল আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। রেহবারকে বললাম আমাদের সাথে যেতে কিন্তু কোম্পানি ফেলে এভাবে হঠাৎ করে অন্য দেশে পাড়ি জমানো সহজ কথা না। তাই ওকে থেকে যেতে হলো।
– ফ্লোরিডা? সে তো অনেকদূর। ওখানে কেনো যাবেন?
গুলিস্তার কথায় আম্বিয়া বেগম হেসে ফেললেন। মেয়েটা ভীষণ সরল। মাত্র একদিনেই এতো আপন হয়ে গেলো যে এখন ওকে রেখে চলে যেতে হবে ভাবতেই আম্বিয়া খাতুনের কষ্ট হচ্ছে। তিনি ঠিক করলেন এই কয়েকদিন যতোটুকু সম্ভব গুলিস্তাকে নিজের কাছাকাছি রাখবেন। ছেলে তার বউয়ের সাথে সময় কাটানোর আরও অনেক সময় পাবেন কিন্তু তিনি তার মেয়ে স্বরূপ এই আদুরে বাচ্চাটাকে বেশিদিন কাছে রাখতে পারবেন না।
– ফ্লোরিডায় আমার বড় ভাই থাকেন। উনার ওখানকার সিটিজনশীপ আছে। ফ্লোরিডার একটি ভার্সিটিতে রাহিলের মাস্টার্স পড়ার সুযোগ হয়েছে। সেই সাথে ওর মামা যেখানে জব করে সেখানে ওর জবের বন্দোবস্তও করে ফেলেছেন। এতো বড় সুযোগ রাহিল হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। আবার আমাকে ছাড়া থাকাও নাকি ওর পক্ষে সম্ভব না। ছেলেটা আমার ভীষণ মা নেওটা। ছোট ছেলে তো, সারাক্ষণ নিজের সাথে রেখে ওর অভ্যাস বিগড়ে দিয়েছি। এখন এই বয়সে এসেও মা ছাড়া কিছু বুঝে না। এখন আপাতত আমরা দুজন যাচ্ছি। রেহবার এদিকটা সামলে নিক, তারপর তোমাদের দুজনকেও নিয়ে যাবো।
রেহবার-গুলিস্তার সারাদিনে খুব একটা দেখা হলো না। খাবার টেবিলে সামনাসামনি হয়েছিলো এরপর রেহবার চলে গেছে তার অফিসে। রাহিল ছুটোছুটি করছে বাইরে। আম্বিয়া খাতুন গুলিস্তাকে নিয়ে মার্কেটে গেলেন। দু হাত ভরে নিজের পছন্দ মতো শপিং করেও তিনি হাঁপিয়ে উঠছেন না। বারবার গুলিস্তাকে বলছেন আর কি নেওয়া বাকি আছে? এখুনি মনে করো। আর কিছু লাগবে না বলার পরেও তিনি নিজে খুঁজে খুঁজে কিনেই যাচ্ছেন। গুলিস্তাকে জামা কাপড় চুজ করতে বলেছিলেন কিন্তু গুলিস্তা কিছু ডিসাইড করতে পারছিলো না। আম্বিয়া খাতুন বেশ আগ্রহ নিয়ে কয়েকটা সালোয়ার কামিজ কিনলেন। লাগেজ ভরা শাড়ি আছে, তা সত্ত্বেও কিনলেন আরোও কিছু শাড়ি। গুলিস্তা একবার বারণ করতে গিয়েছিলো, আম্বিয়া খাতুন বললেন,
– ওগুলো তো বগুড়ায় কেনা শাড়ি। এখান থেকে কয়েকটা শাড়ি কিনে দেই। তবেই না শ্বশুরবাড়ির শাড়ির ফিল আসবে। তাছাড়া এখনি যা কেনার কিনে নেও। পুরুষ মানুষের উপর ভরসা করে থাকলে তোমার আর শপিং করা হবে না। একা একা কেনাকাটা করবা সেই সম্ভাবনাও শুণ্য।
কাপড় কেনা শেষে টয়লেট্রিজ, বিউটি প্রোডাক্টসসহ যাবতীয় কেনাকাটা শেষ করে সন্ধ্যা পেরিয়ে ওরা বাড়ি ফিরলো।
রেহবার ঘরে ফিরে দেখলো সোফা সেট শপিং ব্যাগে ঢেকে গেছে। মায়ের ছেলেমানুষির নমুনা দেখে খানিকটা হেসে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। খেতে বসে মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– শপিং করেছো দেখলাম। শপিংমলে অন্যদের জন্য কিছু রেখে এসেছো নাকি সব তুলে নিয়ে এসেছো?
ভাইয়ের কথা শুনে রাহিল ফিক করে হেসে ফেললো। আম্বিয়া বেগম দুই ছেলের দিকে কটমটে দৃষ্টি দিয়ে বললেন,
– কার্ডের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলো বলে সব নিয়ে আসতে পারলাম না। আমার তো ইচ্ছে ছিলো সবগুলো নিয়ে আসি।
– ইশ্! আমাকে কল দিলে না কেনো, মা? আমার কার্ড নিয়ে হাজির হয়ে যেতাম। ভাই স্বল্প খরচে বিয়ে করে নিলো। এইটুকু জরিমানা তো করাই যায়।
মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে রাহিলও দুষ্টামি করতে পিছপা হলো না।
রুমে ফিরে গিয়ে গুলিস্তা চর্তুদিকে ছড়ানো ব্যাগের মধ্যে বসে সেসব গুছানো শুরু করলো। কিন্তু সবকিছু তার কাছে এলোমেলো মনে হচ্ছে। আম্বিয়া বেগম সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঘুমাতে গেছেন। উনাকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আবার ঘরে ব্যাগ ছড়িয়ে রাখলে রেহবার বিরক্ত হতে পারে। রেহবার স্টাডি রুম থেকে ফিরে এসে দেখলো একগাদা জিনিসপত্রের মাঝে খেই হারিয়ে বসে আছে গুলিস্তা। সালোয়ার কামিজ গায়ে ওকে হাইস্কুল পড়ুয়া এক কিশোরী মনে হচ্ছে। আদতে সে কিশোরী-ই বটে। আঠারো পেরিয়েছে সবে মাত্র।
সোফা থেকে কয়েকটা ব্যাগ উঠিয়ে রেহবার বসার জায়গা করে নিলো। গুলিস্তা ফ্লোরে বসে ছিলো। ওকে উঠিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসে পরলো।
– মা মাঝেমধ্যে কীসব বাচ্চামী করে বসে! এতো কেনাকাটা কেউ একসাথে করে।
এই বলে রেহবার নিজেও কাপড় গুছানো শুরু করলো। তা দেখে গুলিস্তা বললো,
– আমি গুছিয়ে নিচ্ছি। আপনি রেস্ট নিন।
– একা গুছাতে গেলে রাত পেরিয়ে যাবে। বউ রেখে আমার আবার ঘুম আসবে না।
গুলিস্তাকে চোখ বড় বড় করে তাকাতে দেখে রেহবার শব্দ করে হেসে ফেললো। তা দেখে গুলিস্তা দ্রুত হাত চালিয়ে কাপড় গুছাতে শুরু করলো।
পরবর্তী কয়েকটা দিন আম্বিয়া খাতুন গুলিস্তাকে ছেলের পছন্দের সাথে পরিচয় করালেন। রেহবার কি খেতে পছন্দ করে, কেমন পোষাক পরে, কি কি পছন্দ করে, কোনগুলো অপছন্দ ইত্যাদি খুটিনাটি বিষয়গুলো জানিয়ে দিলেন। যাতে রেহবারকে বুঝতে গুলিস্তার সুবিধা হয়। এমনিতেই গুলিস্তা খুব ভালো ছাত্রী ছিলো। সে খুব দ্রুত সবকিছু আয়ত্ব করে ফেললো।
গুলিস্তার বিয়ের সপ্তম দিনে রাহিল ও আম্বিয়ার খাতুনের ফ্লাইট। সকাল বেলা সবকিছু গুছিয়ে লাগেজ রেডি করে সকলে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলো। আম্বিয়া খাতুন স্বামীর স্মৃতি বিজরিত বাড়িটির দিকে বারবার ফিরে তাকাচ্ছেন। এইতো সেদিন এই বাড়িতে ছোট রেহবারকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেন। ছেলেটা গুটিগুটি পায়ে হাটতে শিখলো। সিঁড়ি থেকে পরে ব্যথা পেতে পারে, তাই নিচতলার রুমে শিফট করলেন। তারপর আর উপরের রুমে ফিরে যাননি। রাহিল জন্ম নিলো। রাতুল আহসান মারা গেলেন। আম্বিয়া খাতুনের পুরো জীবনটাই যেনো এই বাড়িতে পরে আছে। তিনি যথেষ্ট শক্ত মনের মানুষ। বাস্তবিকতা মেনে নিয়ে চলতে পছন্দ করেন। কিন্তু বিদায় বেলায় স্মৃতিরা যে এত পোড়াবে এটা ভাবতেই পারেননি। এই বয়সে এসে চোখের কোণে দ্রুত জল জমে যায়। গাড়িতে বসে তিনি নীরবে জল ফেলতে লাগলেন। পেছনের সিটে গুলিস্তা বসেছিলো আম্বিয়া খাতুনের সাথে। উনাকে কাঁদতে দেখে গুলিস্তা উনার বাহুতে হাত পেচিয়ে ধরে বাহুতে মুখ গুজে দিলো। আম্বিয়া খাতুনও মেয়ে সমান গুলিস্তাকে পরম স্নেহে আগলে বসে রইলেন।
প্লেনে উঠার আগে রেহবারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– যাবার বেলায় এতো কষ্ট লাগবে কে জানতো? এখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেছি বুঝলি। ওখানে গিয়েও যদি মন ভালো না হয়, বাড়ির জন্য এভাবেই মন পুড়ে তাহলে আমি এই বাদরটাকে ওখানে রেখে চলে আসবো। তুই শুধু আমাকে টিকিটের টাকা পাঠিয়ে দিবি।
রেহবার মায়ের বাচ্চামী দেখে আবার হেসে ফেললো। তারপর সম্মতি জানিয়ে মায়ের মাথায় আলতো করে চুমু খেলো। আজ থেকে মায়ের শিশুসুলভ কাজকর্মগুলো ভীষণ মিস করবে। এই প্রথম মা-ভাইকে রেখে এতোদিনের জন্য আলাদা থাকতে যাচ্ছে। কেমন কাটবে তার আসন্ন দিনগুলো?
গুলিস্তাকে জড়িয়ে ধরে আম্বিয়া বেগম হাপুশ নয়নে কাঁদতে শুরু করলেন। গুলিস্তা শুধু নির্বিকার চেয়ে রইলো। আম্বিয়া বেগম বললেন,
– তুমি আমাকে রোজ ভিডিও কল দিবে।
রাহিল ভাইকে বললো,
– এদিকে সবকিছু গুছিয়ে তুমি দ্রুত চলে এসো। তোমাকে রেখে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
রাতের আঁধারে একটি বিমান আম্বিয়া খাতুন ও রাহিলকে নিয়ে উড়াল দিলো। রেহবারের বুকের ভেতরটা ভীষণ ফাঁকা লাগছে। মনে হচ্ছে তার হৃদপিন্ডটা কেউ ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সে হাত বাড়িয়ে গুলিস্তার হাতটি শক্ত করে ধরে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।
বাড়ি ফিরে সেদিন রেহবার আর অফিস গেলো না। দিনের বাকিটা সময় বাগানে ঝুলানো বারান্দায় সে আর গুলিস্তা বসে রইলো। এক হাতে গুলিস্তার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বললো,
– বাড়িটা কেমন ফাঁকা লাগছে, ফুল। রাহিল সারাক্ষণ মায়ের সাথে খুটসুটি করতো। উল্টাপাল্টা কাজ করে মাকে জ্বালাতো। সেই নিয়ে মা ওকে রাতদিন বকাবকি করতো। আর এখন দেখো বাড়িটা কেমন নিশ্চুপ।
(চলবে…)