#ভালোবাসা_নামক_প্রিয়_অসুখ
#writer_sumaiya_afrin_oishi
#পার্টঃ৪৮
সময় যেন উড়ে উড়ে চলছে! নতুন বাসা,নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে চলে গিয়েছে আরো কয়েকটা মাস। এখনকার দিন গুলো কোনো ঝামেলা ছাড়া’ই দু’জনার ভালোবাসা’ময় দুষ্ট-মিষ্টি খুনসুটি’তে বেশ যাচ্ছে। দু’জন দু’জনার প্রতি অগাধ ভালোবাসা, আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ তাদের ছোট্ট সংসারে। কিছুদিন আগে ঐশী’রও ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস করে সে। সবকিছু সামলাতে রাফিনের আগের তুলনায় অনেকটাই চাপ কমে গিয়েছে। আগের প্রতি মাসে’র বাসা ভাড়া’র জন্য যে টাকা’টা খরচ হতো তা দিয়ে পুরো মাসে’র সংসার খরচ চলে যাচ্ছে দিব্যি । এতে বেশ সুবিধা হয়েছে রাফিনের, মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে ঐশী’র প্রতি। কিছুদিন আগে রাফিন জবটা ছেড়ে দিয়েছে, শুধু কোচিং টিউশনি গুলো কন্টিনিউ করাচ্ছে। কেননা তার মেডিক্যালের এবার ফাইনাল। নিজের পড়াশোনার ব্যাপক চাপ বেড়েছে এখন। সারাদিন অফিসে থাকলে নিজের আর তেমন পড়াশোনা বা ক্লাস করার সময় হয়ে উঠে না বললেই চলে। তাই বাধ্য হয়ে এবং ঐশী’র জোড়াজুড়ি’তে অবশেষে ছেড়ে’ই দিলো জব’টা। যেহেতু জবটা ছেড়ে দিয়েছে রাফিন, বিলাসিতা না থাকলেও তাও আর চলতে অতো’টা কষ্ট হয় না। তবুও ঐশী আগের তুলনায় বেশ হিসেবি হয়ে গিয়েছে,অহেতুক এক পয়সাও খরচ করে না।
সন্ধ্যার আভা ডুবে গিয়ে ধীরে ধীরে অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছে গোটা প্রকৃতি জুড়ে। এই সময়টা রাফিন বাসায় থাকে না। রাতে”র দুইটা টিউশনি শেষ করে, বাসায় ফিরতে আটটা কিংবা নয়টা বেজে যায়। ঐশী রাতের রান্না শেষ করে সুয়ে সুয়ে বোনের সাথে ফোনালাপ করছে। চৈতী’র শরীরটা ইদানিং ভালো যাচ্ছে না। খাওয়া-ধাওয়া’য় অনীহা যার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিছু সময় দু’বোন কথা বলে, অবশেষে একে-অপরকে বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে দিলো। কিছু সময় পর-ই রাফিনের কন্ঠ শুনে হাসি মুখে দরজা খুলে দিলো ঐশী। রাফিন ও মুচকি হেসে ভিতরে এসে ঐশী’কে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।এটা যেন একটা পারমানেন্ট রুটিন হয়ে গিয়েছে তাদের, দিনশেষে প্রিয় মানুষের আলিঙ্গন, কানের কাছে ফিসফিস করে “ভালোবাসি” বলার মতো শ্রেষ্ঠ অনুভূতি হয়তো দ্বিতৃয় আর নেই। এতে ভালোবাসা বাড়ে সয় কমে না। দিনশেষে প্রিয় মানুষের বুকে ঠাঁ’ই মিললে,তার আদুরে স্পর্শে সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। কিয়াৎক্ষণ পরে ঐশী লাজুক হেসে কোমল-কন্ঠে বললো,
“দুপুরে’তো ব্যস্ততা’র জন্য খেতে পারেন’নি ঠিক ভাবে। ফ্রেশ হয়ে আসুন এখন,আমি খাবার দিচ্ছি।”
রাফিন আচ্ছা বলে চলে গেলো ফ্রেশ হতে, সে-ও ভীষণ ক্ষুদার্ত। প্রিয় মানুষ গুলো বোধ হয় এমনই হয়, না বলা কথা গুলো অনায়াসে বুঝে যায়। ঐশী তড়িঘড়ি করে নিচে পাটি বিছিয়ে খাবার সাজালো, ভুনা-খিচুড়ি, চিংড়ি, গরুর গোশ, বেগুন ভাজি করেছে আজ।
কিছু সময়ের মধ্যে রাফিন এসে গিয়েছে, খাবার দেখে সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছে সে। অধর কোণে মিষ্টি হাসি’র রেখে দেখা গেলো। কেননা আজকে তার ফেবারিট খাবার গুলো রান্না করেছে ঐশী। ঐশী মুগ্ধ নয়নে দেখছে তার শ্যামসুন্দর পুরুষটি’র সেই হাসি। এই তৃপ্তির হাসিটা দেখার জন্য’ইতো আজকে’র আয়োজন। রাফিন দ্রুত ঐশী’র পাশ ঘেঁসে পাটিতে গোল হয়ে বসে, মৃদু হেসে জিজ্ঞেস বললো,
“আজকে এতো আয়োজন কেনো ম্যাডাম? কোনো বিশেষ দিন নাকি?”
ঐশী ঈষৎ হেসে, ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় নাকি সবকিছুতে হুম। মাঝে মাঝে প্রিয়জনের পছন্দ অনুযায়ী সব রান্না করে সারপ্রাইজ দিলে বিষয়’টা মন্দ হয় না। কি বলেন?”
বিনিময়ে রাফিন হাসলো,সঙ্গী’র ছোট্ট ছোট্ট কেয়ারিং গুলো অপর প্রান্তের মানুষটি’র ভালোলাগা অনুভূতি গুলো হৃদয় জুড়ে শিহরণ বয়ে আনে। রাফিন যে খুশী হয়েছে তা তার মুখের হাসি দেখেই বুঝা যায়। তার অর্ধাঙ্গিনী তার জন্য মনে করে কিছু করছে, এইটুকুতে’ই ভীষণ আনন্দ উপভোগ করছে তার ভিতরে’র সত্বা’টা। পরক্ষণেই রাফিন বায়না জুড়ে বললো,
“প্রিয় খাবার গুলো, প্রিয়জনে’র হাতে খেলে খাবার আরো টেস্ট হবে। খাইয়ে দেও বউ!”
ঐশী মৃদু হেসে বিনাবাক্যে পরম যত্ন করে খায়িয়ে দিচ্ছে রাফিন কে, আর নিজেও খাচ্ছে। খাওয়া ধাওয়া শেষ করে রাফিন বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। ঐশী এঁটো থালাবাসন ধুয়ে রাফিনের পাশে এসে বসলো। কিছুক্ষণ পরে রাফিন হুট করে উঠে বসে বললো,
” আচ্ছা চলো জান তোমাকে নিয়ে খোলা মাঠে একটু ঘুরে আসি। আজকে জোসনা রাত, তোমাকে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করি।”
ঐশী’তো মহা খুশী, মুহূর্তে’ই রাফিনের কপালে চুমু খেলো। উচ্ছাস নিয়ে বললো,
“চলুন। চলুন। অনেক সময় কিন্তু থাকতে হবে বলে দিলাম।”
রাফিন মৃদু হেসে আচ্ছা বলে, দু’জন হাতে হাত রেখে বেরিয়ে পড়লো। কিছু ক্ষণ হেঁটে একটা বড় খোলা মাঠে এসে দাঁড়ালো দু’জন। শহরটা এই সময় বড্ড শান্ত, মানুষ জনের কোলাহল মুক্ত। প্রিয় মানুষের সাথে একান্ত সময় কাটানোর জন্য সুন্দর মনোরম পরিবেশ।
.
.
পরদিন সকালে উঠে দু’জন নামাজ আদায় করে নিলো। রাফিন নামাজ পড়ে আবারো সুয়ে ছিলো, ঐশী গিয়ে রাফিন’কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাফিনে’র খোলা পিঠে অনেক গুলো চুমু খেলো। সকাল সকাল বউয়ে’র এমন আদর-যত্ন মোটেও সুবিধাজনক মনে হলো না রাফিনের কাছে। নিশ্চয়ই এর পিছনে বড় ধরনের বায়না রয়েছে। রাফিন ঐশী’র দিকে ঘুরে সন্দেহজনক ভাবে তাকালো। কিছুসময় পর্যবেক্ষণ করে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
“কি ব্যাপার বউ? সকাল সকাল বউয়ের এমন রোমান্টিকতার পিছনে কারণ কি?
ঐশী এবার রাফিনে’র গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
“আচ্ছা শুনুন? একটা কথা বলি। রাগ করবেন না বলুন?”
“আচ্ছা বলো না শুনি।”
“আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আপনি অনুমতি দিলে আমিও কয়েকটা টিউশনি করাতাম আরকি।”
রাফিনে’র হাসিখুশি মুখশ্রী’তে মুহূর্তে’ই গম্ভীর’তার ছাপ স্পষ্ট। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“এসব কেমন সিদ্ধান্ত ঐশী? আমার কি এতোটা খারাপ দিন এসেছে, যে তোমাকে দিয়ে এখন রোজগার করতে হবে! তোমার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলো? শোনো ঐশী, দরকার হলে আমি আবার চাকরি’তে জয়েন্ট করবো। তাতেও না পোষালো আরো পরিশ্রম করবো। তবুও তোমাকে দিয়ে কিছু করাবো না। এসব সিদ্ধান্ত বাদ। তুমি বাচ্চা মেয়ে নিজের পড়ালেখায় মন দেও।”
“আরে আপনি এভাবে রিয়েক্ট করছেন কেনো? আমি কি অন্য কোথাও গিয়ে পড়াতে চাচ্ছি? এখানে’ই কয়েকটা বাচ্চা আছে তাদের কথা বলছি। কারণ কয়েকজন আমাকে বলছে পড়ানোর কথা, কয়েকদিন আগেই বলে ছিলো।”
“ওসব চিন্তা বাদ দেও ঐশী,তোমার এতো কষ্ট করতে হবে না। সংসার চালানো’র দায়িত্ব আমার। তোমার এসব ভাবতে হবে না একদম।”
ঐশী রাফিনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“এইটুকু’তে কষ্টে’র কি আছে হুম? আমিতো সারাদিন’ই
ফ্রি থাকি। আপনিতো আর বাসায় থাকেননা সব সময়, একা একা বোরিং লাগে খুব। ওদের পড়ালে সময়টা ও ভালো ভাবে কেটে যেতো। প্লিজ না করবেন না।”
“রাফিন নিরুওর।”
ঐশী পুনরায় আবার বললো,
“আচ্ছা সংসার চালানো দায়িত্ব শুধু পুরুষের একার নাকি? এমনতো ধরা বাঁ’ধা নিয়ম নেই যে পুরুষের রোজগারেই চলতে হবে’ই, না হয় অমঙ্গল হবে! এমনতো না! তাছাড়া আপনি যদি আমার সব রকমের খারাপ সময় সবকিছু করতে পারেন, তো সঙ্গী হিসেবে আমি কেনো আপনার খারাপ সময় পাশে থাকতে পারবো না। জানি আপনার খারাপ লাগছে, কাজ করতে আমার কষ্ট হবে ভেবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি আপনার জন্য সব কিছু করতে পারি। সেখানে এটা কিছুই না,এটা শুধু জাস্ট সময় কাটানোর জন্য।”
মলিন কন্ঠে রাফিন বললো,
“দেখো ঐশী তোমার যা ইচ্ছে করো! আজকাল বড্ড যুক্তিবাদী হয়ে গিয়েছো তুমি। আমি কিছু বললে, এক একটা লজিক দাঁড় করিয়ে দেও। আজকাল কথায় তোমার সাথে পারা যায় না। বলেই থমথম মুডে বিছনা থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
ঐশী রাফিনের যাওয়ার দিকে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।
.
.
রাফিন বাহিরে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে, এদিকে ঐশী মলিন মুখ করে বসে রয়েছে বিছানায়। কারণ রাফিন তার সাথে আর একটা কথাও বলেনি। রেডি হয়ে রাফিন ঐশী’র পাশে এসে আবেগি কন্ঠে বললো,
” জানো বউ, প্রত্যেক’টা পুরুষ মানুষ’ই একটু মানসিক শান্তি খোঁজে। ঘরে বাইরে, প্রিয়জনের কাছে, হন্যে হয়ে কেবল একটুখানি মানসিক শান্তি’ই খোঁজে তারা। বিশ্বাস করো আর কিছু না! যদি একবার সেই শান্তি’র জায়গাটা খুঁজে পায়, যা কিছু হয়ে যাক তবে সে কিছুতেই ঐ জায়গাটা হারাতে চায় না। কেননা মানসিক শান্তি’র চেয়ে বড় আর কিছু নেই! একটা পুরুষের সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে, একটা স্নেহময় আদুরী হাত, এই মানসিক শান্তিটুকু খুব বেশি’ই দরকার। আর তুমিই আমার সেই মানসিক শান্তি বউ! কাজের অযুহাতে কখনো আমাকে এই শান্তিটুকু থেকে বঞ্চিত করোনা! দিনশেষে তোমাকে আমার বড্ড প্রয়োজন। আমি বাসায় থাকলে সেই সময়টা সব সময় তোমাকে পাশে চাই, তাছাড়া তুমি যা ইচ্ছে করিও। আমি না করবো না।”
স্বস্তি’তে চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল জমা হয়ে গিয়েছে ঐশীর। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবতী মনে হয়। এই মানুষটা প্রতি দিন দিন সম্মান ভালোবাসা বেড়েই চলেছে তার।
আরো কিছু সময় কথা বলে, বিদায় নিয়ে রাফিন বেড়িয়ে পড়লো কোচিং করানোর জন্য। দুইটা কোচিং শেষ করে অতঃপর নিজের ক্লাসে যাবে।
.
কলজের মাঠে এসে বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো মলি। হুট করে দৃষ্টি পড়লো দূরে থাকা রাফিনে’র দিকে, সেও এদিকে আসছে। মলি দ্রুত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। পরক্ষণেই উঠে রাফিনে’র বিপরীত দিকে হাঁটা শুরু করলো। রাফিনে’র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এড়ালো না বিষয়টা, মনে মনে সে ভীষণ খুশী হয়েছে মলি’র পরিবর্তনে। সেদিনের পর থেকে রাফিনে’র থেকে নিজেকে সব সময় দূরে রাখে। থাক না কিছু মানুষ তাদের মতো করে। ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমনতো নিয়ম নেই। নিজে’কে গুটিয়ে রেখে, কিছু মানুষকে দূর থেকে ভালোবাসতে হয়। যদি হয় অপর মানুষটা নিজের জন্য নিষিদ্ধ। এলোমেলো পায়ে হাঁটছে মলি, বুকটা ভারী হয়ে আসছে তার। ভালোবাসার মানুষটার থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা বড্ড কষ্টের। হঠাৎ আনমনে গেয়ে উঠলো,
“তুমি যাকে ভালোবাসো
স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো
তার জীবনে ঝড়
তোমার কথার শব্দ দূষণ
তোমার গলার স্বর
আমার দরজায় খিল দিয়েছি
আমার দারুন জ্বরু
তুমি অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধো ঘর।
তুমি অন্য কারোর ছন্দে বেঁধো গান…….
দুপুরে রান্না’র কাজে শ্বাশুড়ি কে সাহায্য করেছিলো চৈতী। হুট করে মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলো তার আগেই সাইফে’র মা ধরে ফেললো। ভাগ্য ভালো উনি পাশেই ছিলো। মেয়েটা দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, এখন আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। উনি বেশ ভয় পেয়ে গেলো। বারবার চৈতী’কে ডাকছে কিন্তু হুস নেই তার। একা মহিলা মানুষ কি করবে , সাইফ ও এই সময় ভার্সিটিতে। বাধ্য হয়ে সাইফকে ফোন দিলো। সাইফ দ্রুত এসে হসপিটালে নিয়ে গেলো। এখন জ্ঞান ফিরেছে চৈতীর, সাইফ চিন্তিতো মুখ করে চৈতী’র হাত ধরে বসে আছে। ডাক্তার টেস্ট করে চলে গেলো। কিছু সময় পরে বেরিয়ে আসলো ডক্টর । সাইফ অস্হির হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” ডক্টর কি হয়েছে আমার স্ত্রী’র। কোনো সমস্যা হয়েছে প্লিজ আমাকে বলুন।”
ডক্টর হাসি মুখে সাইফের হাতে রিপোর্ট দিয়ে বললো,
“অস্হির হবেন না মিস্টার সাইফ। আপনার স্ত্রী’র রেজাল্ট পজিটিভ, উনি মা হতে চলছে। খাওয়া ধাওয়া ঠিক মতো করেনি, যার ফলে দূর্বলতার কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। এমনিতেই এভরিথিং ইট’স ওকে। উনার খেয়াল রাখবেন, আপাতত কিছু ভিটামিন দিচ্ছি আমি। আরো কিছু উপদেশ দিয়ে চলে গেলো ডক্টর। ”
সাইফ রিপোর্ট হাতে নিয়ে, অতি খুশীতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বুকের ভিতরে ধড়াম ধড়াম শব্দ হচ্ছে। হার্ট দ্রুত চলছে তার। চৈতী ও ভীষণ খুশী সে মা হবে, ছোট্ট একটা প্রাণ তার ভিতরে। পরক্ষণে সায়িফ’কে পর্যবেক্ষণ করে মলিন কন্ঠে বললো,
“আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো সাইফ? আপনি খুশী হননি! ”
হুস ফিরলো সাইফের, দ্রুত চৈতী’র কাছে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখে মুখে চুমিতে ভরিয়ে দিলো। এরপর উচ্ছসিত কন্ঠে বললো,
“আমি আজ ভীষণ ভীষণ খুশী বউ। তোমাকে বুঝাতে পারবো না আমার অননুভূতি! ধন্যবাদ বউ! আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ একটা দিন উপহার হিসেবে দিবার জন্য। বাবা হবার অনুভূতি সত্যি ভীষণ স্নিগ্ধ! আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া! চৈতী’র পেটের উপরে হাত দিয়ে পুনরায় আবার বললো, তুমি দ্রুত চলে এসো বাবা কিংবা মা যেই হও। বাবা তোমার আগমনের অপেক্ষায় আছে। বলেই পেটের উপরে চুমু খেলো সাইফ।
চৈতী লাজুক হেসে বললো,
” ছাড়ুন এখন কেউ চলে আসবে, এটা হসপিটাল।”
“উঁহু ছাড়বো না।” বলে আরো শক্ত আলিঙ্গন করলো।
নতুন মেহমানের আগমনে সবাই ভীষণ খুশী। মুহূর্তে’ই ছড়িয়ে পড়লো খুশীর সংবাদটা। শফিকুল সাহেব তো খুশিতে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালো। ঐশী খাল মনি হবে, আনন্দে’র কেঁদে দিলো। সে এখনই নাম দাম ঠিক করে রাখলো। সে দিনই রাফিন কে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে বাবুর জন্য জামা-কাপড় কিনলো অনেক গুলো।
.
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো একটি মাস। টানা একমাস টিউশনি করিয়ে অবশেষে ঐশী আজ প্রাইভেটে’র টাকাটা হাতে পেলো। যদিও টাকা’টা খুবই সামান্য মাএ তিন হাজার। এতেই সে ভীষণ ভীষণ খুশী। নিজে কিছু করে, পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু অর্জন করা আসলেই আনন্দদায়ক। জীবনের প্রথম অর্জন সীমিত হলেও আনন্দটা হয় সীমাহীন। ঐশী বারবার টাকা গুনছে, প্রিয় মানুষটাকে কিছু সারপ্রাইজ দিতে মন যাচ্ছে তার। মন চাচ্ছে মানে এক্ষণ’ই কিনতে হবে, দেরী যেন সহ্য হচ্ছে না তার। সময়টা সকাল, এই সময়টা রাফিন বাসায় থাকে না। ঐশী জলদি রেডি হয়ে পাশের রুমের ছোট্ট একটি মেয়েকে সঙ্গে করে বেরিয়ে পড়লো। উদ্দেশ্য মার্কেটে যাবে, যেহেতু মার্কেট বাসার কাছেই তাই সাহস করে রাফিন কে ছাড়াই গেলো।
.
.
কয়েকটা দোকান ঘুরেও মনের মতো কিছু পাচ্ছে না। এবার একটা বড় দোকান থেকে এক কর্মচারি উচ্ছাস নিয়ে বললো,
” আরে আপা কি লাগবে? আমাদের দোকানে আসুন।”
ঐশী গিয়ে দোকানের চারপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“ভাইয়া আপনাদের দোকানে যত নরমাল রং উঠবে, এই ধরনের যতগুলো শার্ট এন্ড পাঞ্জাবি আছে সবগুলো প্যাক করুন ।
দোকানদার কাছে ঐশী’র স্বাভাবিক কথাটা যেন অস্বাভাবিক মনে হলো। এমন কাস্টমার বোধ হয় কখনো দেখেনি উনি, যেখানে সবাই এসে আরো বলে ভালো জিনিস দিতে। কেউ কেউ তো হুমকি দিয়ে বলে রং উঠলে খবর আছে! সেখানে এই মেয়ে রং উঠা নরমাল জিনিস চাচ্ছে। উনি এক বুক কৌতুহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
” সেকি আপা! এতো নরমাল রং উঠা শার্ট পাঞ্জাবি দিয়া করবেনটা কি? আমাদের দোকানের সব মা”ল ব্রান্ডের।”
ঐশী মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো,
“আপনি প্যাক করবেন, নাকি অন্য দোকানে যাবো?”
“স্যরি আপা!আপনি দাঁড়ান আমি সব গুলো এক্ষুনি প্যাক করছি।”
দোকানদার যেন একটা সুযোগ পেলে, খুঁজে খুঁজে সব গুলো এক জায়গা করলো। মনে মনে তো বেশ উচ্ছাস। কিন্তু উচ্ছাসটা আর থাকলো কই। ঐশী মৃদু হেসে বললো,
“এখন এগুলো সাইডে রেখে, ভালো শার্ট পাঞ্জাবি গুলো থেকে কিছু দেখান ভাই….।”
দোকানদারে’র মাথায় যেন আকাশ ভে’ঙে পড়লো! মুহূর্তে’ই হাসিখুশি মুখখানা চুপসে গেলো। এই মেয়েকে সে নাকি বোকা মনে করছিলো, এই মেয়েতো তাকেই বোকা বানালো। উনি গম্ভীর থমথমে কন্ঠে বললো,
” মাপ করেন আপা! আপনার কাছে কিছু বিক্রি করবো না। আপনি অন্য দোকানে যান।”
দোকানদারে’র কথায় অপমানিত হলো ঐশী। ক্রধিতো কন্ঠে বললো,
“কি আপনি আমাকে অপমান করলেন? আমার কাছে বিক্রি করবেন না এতো বড় অপমান! আমি তো আপনার দোকান থেকে’ই কিনবো। জানেন আমি কে? আমার সাথে ব্যবসা চলবে না হুহ। টাকা আয় করতে কষ্ট আছে আর সেই টাকা তো এমনিই আপনাদের দিবো না। ভালোই ভালো তাড়াতাড়ি দেখান।”
দোকানদার যেন পরলো মহা ঝামেলায়। বিরক্তি নিয়ে বললো,
“দেখুন আপা ঝামেলা করিয়েন না সকাল সকাল। যান তো।”
“কি আপনি আবার অপমান করলেন আমাকে। জানেন আমার ভাই একজন পুলিশ অফিসার, আমি তার বোন। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আইডিয়া আছে আপনার। আমি ভাইয়াকে বলে আপনার দোকান বন্ধ করিয়ে সোজা জেলে পাঠিয়ে দিতে পারি। এতে শুধু আমার একটা কল যথেষ্ট! আচ্ছা বিশ্বাস হচ্ছে না তো দাঁড়ান বলেই মোবাইল থেকে তিহানে’র একটা ছবি দেখালো।
দোকানদার একজন পুলিশের ছবি দেখে ভয় পেলো। মুখে হাসি টেনে বললো,
” আরে আপা আগে বলবেন না আপনার ভাই পুলিশ। দয়া করে কিছু বলবেন না! আমি এক্ষুণি আপনাকে দেখাচ্ছি।”
ঐশী বিজয়ী হাসি দিলো। ঐশী বেছে বেছে রাফিনের জন্য একটা শার্ট, আর বাবা’র জন্য একটা পাঞ্জাবি পছন্দ করে কিনলো। দোকানদার দামের থেকেও কম রাখলো। আরো দু’শো টাকা ফেরত দিয়ে দিলো নাস্তা খাবার জন্য। ঐশী’কে বারংবার না করলো যাতে কিছু না বলে। ঐশী শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো। দোকানদার হাসি মুখে পিছন থেকে হাঁক দিয়ে বললো,
“আপা আবার আইসেন।”
পরক্ষণে ঐশী”র মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ কাল ক্ষমতাশীলদের সব জায়গা এক্সটা আদর যত্ন। আর নিরীহ মানুষ গুলো এই সমাজের কাছে বারবার ঠকে যায়। ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো ঐশী।
.
.
ঐশী বাসায় এসে শার্ট ও পাঞ্জাবি টা তুলে রাখলো। রাফিনের বিশেষ কোনো দিনে সারপ্রাইজ দিবে বলে। পরদিন দুপুরের রান্না করছিলো ঐশী। হঠাৎ মুঠো ফোন’টা ভেজে উঠলো, ফোনে’র উপরে বোনের নামটা দেখে হাসিমুখে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশের কান্না মিশ্রিতো একটা কন্ঠ শুনে হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেলো।মূহুর্তে’ই স্তব্ধ হয়ে হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ঐশী। নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। কানে শুধু বোনের কান্না মিশ্রিতো কন্ঠে বলা কথা’টা বাজছে “বাবা আর বেঁচে নেইরে ঐশী! আমরা এতিম হয়ে গেলাম! মুহূর্তে’ই হৃদয়ে যেন র’ক্তে’র ধারা বয়ে যাচ্ছে।
[ কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]
চলবে……..
পাঠক মহল আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এতো লেট করে গল্প দিবার জন্য। আসলে আমি একটু ঝামেলা’র মধ্যে আছি, লেখার মতো সময় হয়ে উঠেনি। আশা করি আমার সমস্যা’টা বুঝবেন, কেউ রাগ করবেন না! আজ একা ধারে, কি লিখছি নিজেও জানি না। রিচেক করিনি ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!