#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_২_৩
#জান্নাত _সুলতানা
-“যা বলেছিলাম তা করেছিস রাহান ।
-“জী ভাই, মাইশা প্রায় এক সাপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম আছে ফুফির বাসায়। ওর মা এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে ভাবিকে বিয়ে দিতে চাইছিল। আর …
বলে থেমে গেলো রাহান
সাদনান রাহানের পানে দৃষ্টি দিলো
-“থেমে গেলি ক্যান, বল আর কি ?
রাহান আমতা আমতা করে বলল
-“আসলে ভাই ওই মহিলা মাইশার সাথে আপনার বিয়ে দিতে চায়। তাই ….
-“তাই প্রিয়তা কে বিয়ে দিয়ে পথের কাটা ছাফ করতে চেয়েছে।
রাহানকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বলে উঠলো সাদনান
-“হে ভাই ওনি হয়তো কোনো ভাবে টের পেয়েছেন আপনি ভাবিকে ভালোবাসেন। তাই শফিক চাচাকে ফুসলিয়ে ভাবিকে বিয়ে দিতে রাজি করিয়েছেন। আচ্ছা ভাই আমি এটা বোঝতে পারছি না শফিক চাচাতো আপনাকে কথা…
রাহানের কথা সম্পূর্ণ করতে দিলো না সাদনান
-“তোরা সবাই বাবার কাছে পার্টি অফিস যা। আমি ঘন্টা খানেক বাদে পৌঁছে যাব।
সাদনান কথা সমাপ্ত করেই বাইক স্টাট দিয়ে বাজারের পথে চলে গেলো।
রাহান সবাইকে নিয়ে পার্টি অফিস চলে গেলো।
—————————–
-“উফ, আমার যে কি খুশি লাগছে সারু। আমি পড়া লেখা করবো। ”
সারাকে জড়িয়ে ধরে বলল প্রিয়তা
সারাও খুশি হলো কিন্তু প্রিয়তাকে ক্ষেপানোর জন্য বলল
-“পড়া লেখার জন্য নাকী অন্য কেউর জন্য খুশি সেটা আমি ভালো করেই জানি, হুু।”
-“কি বলতে চাইছিস তুই?”
ভ্রুু কুঁচকে প্রশ্ন করলো প্রিয়তা
-“আমার ভাইকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে না। ”
-“হুু, তোর ভাই বুঝলেতো।”
-“না বুঝলে কি আর বিয়ে ভেঙ্গে দিতো। ”
-“সেতো আমি ছোটো বলে। ”
সারা মুখ ভেংচি কেটে বলল
-“হুু, সময় এ বলে দিবে। ”
-“হুম। ”
সারা কিছু মনে করবার মতো হঠাৎ এ বলে উঠলো
-“শুন মা তোকে আমার সাথে যেতে বলেছে। তোকে নাকি অনেক দিন হয় দেখে না। ”
-“আচ্ছা কলেজ থেকে ফিরার সময় বাবাকে বলে দেখি। ”
কথা বলতে বলতে দুজনেই ক্লাস এ চলে এলো।
শফিক সওদাগরের আর আজ্জম মির্জা শৈশব থেকেই দুজনে এক সঙ্গে বেশ ভাব। তাই দুই পরিবারের মঝে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক।
—————————–
-” আসসালামু আলাইকুম চাচা। ”
হঠাৎ কারোর কন্ঠ শুনে পিছনে ফিরেই বেশ অবাক হলেন। তবে নিজেকে সামলে সালামের উত্তর করলেন
-” ওয়ালাইকুম আসসালাম, বসো বাবা। তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে? ”
-“জী চাচা ভালো। ”
-“তা হঠাৎ কিছু কি হয়েছে? ”
-“জী, চাচা অনেক কিছুই হয়ে যতো যদি না আমি কিছু করতাম। কেনো করলেন এমন? ”
শফিক মাথা নিচু করে নিলেন। কিভাবে তিনি একজকে কথা দিয়ে তার খেলাফ করতে পারেন।
বেশ অপরাধী গলায় বল্লেন
-“দেখো বাবা তোমার সাথে আমার মেয়ের যায় না। তুমি কোথায় আর আমার সম্পর্কে তো তোমরা জানো। ”
সাদনান কিছু টা অবাক করা কন্ঠে বলল
-“আপনি এসব কি বলছেন? আপনি আমার বাবার সাথে সেই ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে থেকেছেন তার পরও কি করে এসব বলতে পারছেন? তাছাড়া আমি যখন দেড়বছর আগে আপনাকে বলেছিলাম তখন আপনি বলেছিলেন প্রিয়তা ছোট একটু বড় হয়ে নিক আপনি নিজে তাকে আমার সাথে বিয়ে দিবেন। আর এখন অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে চাইছেন।”
-“প্রিয়তার ফুফি চাইছে মাইশার বিয়েটা তোমার সাথে দিতে। মাইশা নাকি তোমাকে পছন্দ করে। ”
-“চাচা অপনি নিজে একবার মাইশাকে জিজ্ঞেস করবেন। আর হে, আমি চাইলে আপনার মেয়েকে দেড়বছর আগেই বিয়ে করতে পারতাম । কিন্তু কিছু করেনি কারণ আমি চাইতাম আপনার মেয়ে আমায় ভালোবেসে গ্রহন করুক। আর কাল আমি আপনার মেয়ের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
আমার আর কিচ্ছু চাই না। আমি দুই একদিনের মাঝে আবার ঢাকা বেক করবো। ফিরে এসে বাবাকে আপনার কাছে আসতে বলবো।”
শফিককে কিছু বলতে না দিয়ে সাদনান বসা ছেরে উঠে চলে এলো। বাহিরে এসেই দেখলো সারা আর প্রিয়তা দুজনেই হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে।
-“তোরা এখানে? ”
সারাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নটা করলো সাদনান
হঠাৎ সাদনানকে দেখে দুজনেই কিছু টা চমকে উঠলো। সাথে ভয়ও পেলো সারার হাত চেপে ধরলো প্রিয়তা। কাল রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছে। কি হয়েছিল হঠাৎ কি করে এতো সাহস কোথা থেকে এসছিল কে জানে। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে সারা বলে উঠলো
-“আসলে হয়েছে কি ভাই মা প্রিয়তাকে নিয়ে যেতে বলেছে। তাই চাচার কাছে বলতে এসছি।
আমতা আমতা করে বলেই দিলো।সাদনান একবার আঁড়চোখে প্রিয়তার পানে তাকায় যে এখন বাম হাত দিয়ে নেভি রং এর কলেজ ড্রেসটা খামচে ধরে। নিচের দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা ওকে দেখলেই ভয় পায়। কাল হঠাৎ,, থাক এসব কথা সাদনান এসব ভাবনা সাইডে রেখে সারার দিকে শান্ত দৃষ্টি দিয়ে বলল
-“তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাবি।”
বলেই বাইকে উঠে ধুলো উড়িয়ে চলে গেলো।
ওরা দুজনেও হোটেলের ভিতর এলো
শফিক সাদনানের বলা কথা গুলো ভাবছে ওনি জানেন সাদনান একবার যখন বলেই দিয়েছে তখন সাদনানের কথার নড়চড় হবে না। তিনি নিজেও চায় না নড়চড় হোক। এসব ভাবনার মাঝে কানে ভেসে এলো তার একমাত্র রাজকন্যার কন্ঠ
-“বাবা?”
শফিক মেয়ের পানে তাকায়। তারপর নিজে উঠে মেয়েকে নিজের এক বাহুতে পুরে নিলো আর সারার হাত ধরে দু’জন কে নিয়ে বসে বলল
-“কলেজ কেমন কাটলো?
প্রিয়তা চট করে বলল
-“ভালো বাবা।”
শফিক সারার দিকে তাকায়
-“তা কি মনে করে দুই মা আজ এক সঙ্গে? ”
শফিক মিয়া জানেন দুজনেই নিশ্চয়ই কোনো মতলব নিয়ে তবে এসছে তাই সোজাসাপটা প্রশ্ন করলো
সারার আমতা আমতা করে বলল
-“চাচা আসলে মা বলছিল প্রিয়তাকে আজ আমার সাথে নিয়ে যেতে। ”
বলে মাথা নিচু করে নিলো। শফিক মেয়ের পানে দৃষ্টি দেয় যে আপাতত বাবার দিকে অনুমতির আসায় তাকিয়ে। শফিক মেয়ের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল
-“আমার মা যদি চায় তবেই । ”
সারা খুশি হলো সাথে প্রিয়তাও কিন্তু বাবা সামনে বলে তা প্রকাশ কলো না। শফিক মিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে হাটা ধরলো দুজনে।
——————-
একজন প্রেমিক তার প্রিয়তমাকে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ধরে রয়েছে যেনো ছেড়ে দিলে পালিয়ে যাবে? হে যাবেইতো আজ তো তাদের শেষ দেখা। আর বুকে লেপ্টে থাকা রমনীটা সে তো একটু পর পর ফুফিয়ে উঠছে হয়তো কান্না করছে প্রিয় মানুষটার থেকে দূরে যেতে হবে বলে। বেশ অনেক টা সময় পর পুরুষটা তার বুকে লেপ্টে থাকা রমনীটা গালে আলতো করে ধরে মুখটা উঁচু করে অধর জোড়া ছোঁয়ে দিল রমনীটার কপালে।প্রিয় পুরুষটার ছোঁয়া যেনো কান্না গুলো আরো বেশি করে বাহিরে বেড়িয়ে আসতে চাইলো কি? হয়তো তাই। তবে রমনিটা নিজেকে সামলে নিয়ে মানবটাকে প্রশ্ন করলো
-“কবে যাবেন মা আর মামার কাছে আয়ান ভাই?
-“যাবো খুব শীগগির জান। বাবা আর রাহাত ভাই দেশে আসবে এ মাসের মধ্যে। আর কটা দিন কষ্ট কর জান।”
আয়ান উত্তর দিয়ে আবারও জড়িয়ে নিলো তার প্রিয়তমাকে।
-“মাইশা তোর হলো?
রুমের বাইরে থেকে মিষ্টি কন্ঠে কেউ প্রশ্ন করলো
মাইশা ছিটকে দূরে সরে এলো। চোখের পানিটুকু মুছে পিছনে ফিরে দেখলো বাহিরে থাকা মানুষটা গড়ে প্রবেশ করেছে।
-“হে আয়না আপু শেষ। চলো। ”
আয়না ভাইয়ের পানে দৃষ্টি দিলো একাবার তার পর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল
-“মন খারাপ করে না সোনা। তোর ফুফা আর তোর রাহাত ভাই দেশে ফিরলে তোদের বাসায় যাবো আমরা। এখন চল তোর ডাইনি মা সেই সকাল থেকে ফোন করে করে আমায় জ্বালিয়ে মারছে তোকে কখন পাটাবো। এখনো পাটাইনি জানলে আমার আর রক্ষে নেই। ”
আয়নার কথায় ফিক করে হেসে দিল মাইশা। এটা দেখে আয়না বলল
-“এই তো আমার লক্ষি বোন। আর কান্না কাটি নয়। আয়ান যা যা গাড়ি বেড় কর। আমরা আসছি। ”
আয়ান একবার মাইশার দিকে তাকিয়ে গড় ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।আয়ান চলে যেতে মাইশা আয়নাকে জড়িয়ে ধরলো।
-“ইনিয়া কই আপু? ওকে তো দেখছি না।
-“ও ঘুমিয়ে আছে। ভালোই হয়েছে। নয়তো তুই যেতে পারতিস না। আবার তোর সাথে যাওয়ার জন্য বায়না ধরতো।”
মাইশা মুচকি হেসে বলল
-“হুম, ঠিক বলছো। আচ্ছা চলো।”
-“হুম। ”
বলেই আয়না মাইশাকে নিয়ে নিচে এলো।
-“সাবধানে যাস বোন। রাস্তা কেউ কিছু দিলে ভুলেও নিবি না সোনা।”
আয়নার কথায় আয়ান বেশ বিরক্ত হলো। তবে মাইশা বেশ মনোযোগ সহকারে কথা গুলো শুনছে। কারণ এটা ওর কাছে নতুন নয়। মাইশা চট্টগ্রাম এলেই আয়না প্রতি বার এসব বলে তাই মাইশার আর এখন বিরক্ত হয় না।
-“আপু তোমার হয়েছে? ও বাচ্চা নয় অনার্স এ পড়ে।তাই তুমি এসব বন্ধ করো। ”
তার পর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল
-“এই তুই আসবি নাকি আমি তোর ব্যাগ নিয়েই স্টেশনে গিয়ে রেখে আসবো?
আয়না আয়ানের দিকে কটমট করে তাকালো যেটার মানে আমি তোকে পরে দেখে নিবো। আর আয়ানের কথা শুনে চট করে গাড়ি দরজা খুলে আয়ানের পাশে বসে পড়লো। তার পর জানলা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আয়নাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-“আসি আপু।ইনিয়াকে দেখে রেখে। ”
মাইশার কথা শেষ আয়ান গাড়ি স্টাট দিয়ে চলে গেলো আয়নাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না।
————————————–
-“আপনার বিয়ে করার খুব শখ তাই না প্রিয়তা?”
প্রিয়তা বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো সারা ঘুমিয়ে আছে তাই প্রিয়তা একা। হঠাৎ এমন কথায় বেশ অবাক হলো সাথে ভয়। কারন এমন শান্ত ভাবে সাদনান তখনই কথা বলে যখন সাদনান রেগে থাকে। প্রিয়তার পিছনে ফিরতেও ভয় লাগছে। তবুও অনেক কষ্টে পিছনে ফিরতে দেখতে পেলো সাদনানের রাগী চেহেরা। এতে যেনো আরো এক দফা ভয় পেলো। প্রিয়তা কিছু বলার জন্য মুখ খোলবে কিন্তু সাদনান সেটা হতে দিল না তার আগেই তিরতির করে বলে উঠলো
-“আমি আপনার বিয়ে করার সখ মিটিয়ে দেবে আর কটা দিন অপেক্ষা করুন।এতো দিন আমি একা আগুনে পুড়েছি এখন থেকে আপনিও পুরবেন।”
#চলবে………
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]
#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৩
#জান্নাত_সুলতানা
-“সারা যাতো মা প্রিয়তা টাকে ডেকে নিয়ে আয়।দুপুর খাবার খেলো শুধু, বিকেলে কত করে বললাম তবুও নাস্তাটা খেলো না। কি হয়েছে কি জানি। ”
সারা চমকে উঠলো ভাইয়ের দিকে দৃষ্টি দিলো। সাদনান সোফায় বসে ফোন নিয়ে ব্যাস্ত। সারা ভাইয়ের পানে তাকি ভাবে ভাইয়া কিছু বলেনিত আমি যখন ঘুমি ছিলাম তখন? এই জন্যই কি প্রিয়তার চোখ মুখ ফোলা ছিল? হয়তো। সারার ভাবনার মাঝে সালেহা বেগম আবার বলে উঠলো
-“সারা তুই এখনো বসে আছিস। মেয়েটাকে ডেকে নিয়ে আয়। সেই দুপুরে খেয়েছে আর এখন রাত দশটার বেশি বাজে। জলদি ডেকে নিয়ে আয় মা।”
এর মধ্যে আজ্জম মির্জা নিজের কক্ষ হতে বেরিয়ে এলেন। তিনিও এসব শুনে সারাকে তাগাদা দিলেন প্রিয়তাকে ডাকার জন্য। সারা আর বিলম্ব না করে চট করে উপরে চলে গেলো। সার প্রিয়তাকে নিয়ে
এলেই সবাই খাবার খেতে বসে যায়। শুধু প্রিয়তা খাবার নাড়াচাড়া করছে এটা দেখে সালেহা বেগম বলল
-“কি হয়েছে তোর? খাবার না খেয়ে নাড়াচাড়া ক্যান করছিস?”
প্রিয়তা চমকালো, মাথা তুলে দেখলো সবার দৃষ্টি ওর দিকে শুধু সাদনান বাদে। প্রিয়তা মুখে মেকি হাসি টেনে আমতা আমতা করে বলল
-“খাচ্ছি তো। ”
-‘হুম। ”
খাবার খেয়ে সবাই গড়ে চলে গেলো। সারা রুমে ডুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে খাটে গিয়ে প্রিয়তার পাশে বসে বলল
-“কি হয়েছে তোর ভাইয়া কি কিছু বলেছে? ”
প্রিয়তা সারার দিকে ফিরে আচমকায় সারাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। যেনো এতখন কান্না গুলো আটকে ছিল এখন কারোর ছোঁয়ায় সব কান্না বেড়িয়ে আসতে চাইছে। সারার প্রিয়তার পিঠে হাত রাখলো। আস্তে করে বলল
-“কি হয়েছে বলবি না আমায়?”
-“বিশ্বাস কর সারু আমি নিজ ইচ্ছে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বাবা আর ফুফি মিলে জোড় করেছে। তুই তো জানিস ফুফি কেমন। প্লিজ ওনাকে বল না।”
-“আচ্ছা আচ্ছা বলবো তুই কান্না থামা প্লিজ। ”
সারা উঠে গিয়ে পাশের সেন্টার টেবিল থেকে পানি এনে প্রিয়তাকে খাইয়ে দিল। প্রিয়তা কিছুটা শান্ত হলো। সারা মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। প্রিয়তার মন ভালো করার জন্য সারা চট করে উঠে দরজা টা খোলে বেড়ি যেতে যেতে বলল
-“তুই বস আমি আসছি। ”
সারা বেশ অনেক টা সময় পর রুমে এলো হাতে দুটো শাড়ী নিয়ে। এটা দেখে প্রিয়তা খুশি হলো। কিন্তু বিকেলে সাদনানের বলা কথা গুলো মনে হতে মুখ মলিন করে বলল
-“এই রাতের বেলা তুই শাড়ী কেন এনেছিস?”
সারা প্রিয়তার কাছে এসে প্রিয়তাকে খাট থেকে তুলে শাড়ী সাথে সব যাবতীয় জিনিস দিয়ে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠাতে পাঠাতে বলল
-“এক টা তুই পরবি আর একটা আমি তার পর ছাঁদে গিয়ে লাইট দিয়ে ছবি তোলবো অনেক সুন্দর হবে যা জলদি করে সব পড়ে আয়। আমি শাড়ী পড়িয়ে দিবো। ”
প্রিয়তাকে আর কিছু বলল না। ওয়াশরুম থেকে সব পড়ে বেরিয়ে দেখল সারা শাড়ী পড়া শেষ। প্রিয়তা বেরোতেই সারা প্রিয়তাকে সুন্দর করে শাড়ী টা পড়িয়ে দিলো। তার পর হালকা করে সেজে দুজনে ছাদে চলে গেলো। তার পর দুজনে মিলে কিছু ছবি তোলবার পর সারা হঠাৎ করে বলল
-” তুই দুমিনিট দাঁড়া আমি নিচ থেকে একটা গল্পের বই নিয়ে আসি। ”
-“আচ্ছা। ”
সারা চলে যাওয়ার পর প্রিয়তা একটু সাইডের দিকে গিয়ে দাঁড়াল। বেশ অনেখন পরও যখন সারা আসছে না তখন প্রিয়তা পিছনে ফিরে দেখলো ওর পিছনে সাদনান দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা ভয় পেয়ে এক পা পিছিয়ে যেতে নিলেই সাদনান প্রিয়তার হাত ধরে এক ঝটকায় সাদনানের সামনে এনে দাঁড় করালো। প্রিয়তা সাদনানের চোখের দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিলো। কিছু তো আছে ওই চোখে কেমন নেশার মতো বেশিখন তাকিয়ে থাকা যায় না। প্রিয়তার ভাবনার মাঝে কোমরে শীতল হাতের র্স্পশে চমকে তাকালো সাদনানের দিকে সাদনানের কোনো হেলদোল নেই সে এক দৃষ্টিতে তাকি প্রিয়তার পানে। প্রিয়তার শরীরে যেনো হীম হয়ে এলে নড়াচড়া মতো শক্তিও পাচ্ছে না। সাদনান প্রিয়তার এতো কাছাকাছি এই প্রথম এসছে। হয়তো নিজের ভালোবাসার মানুষটার এই রুপ টাকে উপেক্ষা করতে পারছে না। তাইতো না চাইতো এতোটা কাছে চলে এসছে। প্রিয়তা ছোটার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু সাদনান সেতো তার প্রেয়সীর রুপে এতোটাই মগ্ন যে তার কোনো দিকে খেয়াল নেই।সাদনান কে মুখটা এগিয়ে আনতে দেখে প্রিয়তা সাদনানকে শরীরে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিলো। এতে যেনো সাদনানের হুুস এলো। সে পিছন ফিরে মাথার চুল খামচে ধরলো । আর ভিতু প্রিয়তা সেতু ভয়ে মাথা তোলেও তাকাচ্ছে না। সাদনান ভাই কি করতে যাচ্ছিল।আল্লাহ এই মানবটার সামনে কি করে যাবে এখন থেকে। ইস কি লজ্জা। আচ্ছা সাদনান ভাইকি রেগে গেলো তাকে এভাবে বাঁধা দেওয়াতে? এইজন্যই বোঝি তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না? প্রিয়তার এতো এতো প্রশ্নর ভাবনার ভিতর সাদনান বেশ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো
-“আজ যেটা করেছেন বিয়ের পর ভুলেও এমনটা করবেন না। সম্পূর্ণ আমার না হওয়া পযন্ত যেনো আর শাড়ীও পড়তে না দেখি।কথা গুলো আপনার মন এবং মস্তিস্কে গেথে নিন মিস প্রিয়তা সওদাগর। ”
————————————-
একজন প্রেমিকা তার ভালোবাসার মানুষটার সাঙ্গে ফোনে মনের কথা আদান-প্রদান করতে ব্যাস্ত। ঠিক তখনই রুমের দরজাটা খট করে খুলে কেউ রুমে এলো। ফোন হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রমনীটা ভয়ে স্তব্দ হয়ে গলো। থমথমে কন্ঠে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সামনে থাকা ব্যাক্তিটা তিরতির করে বলে উঠলো
-“তোর এতোখন লাগলো একটা বই নিয়ে যেতে?”
-“আসলে প্রিয়তা হয়েছে ক,,,,
-“তোর আর কিছু বলতে হবে না।আমি ঘুমবো। ”
বলে প্রিয়তা ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। সারা বই নিতে এসে যখনি গড় থেকে চলে যেতে পা বাড়াল ঠিক তখনই ওর হাতের ফোনটা বেজে উঠলো। স্কিন এ “আর” লেখাটা বেসে উঠতে হাত থেকে বইটা সেন্টার টেবিল রেখে বেশ খুশি মনে কলটা রিসিব করে ব্যাক্তিটার সঙ্গে আলাপ করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর ঔদিকে যে কাউকে অপেক্ষা প্রহরে রেখে এসছে সে কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে। হঠাৎ এ চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসাতে ভাবনার সুতু কাঠলো সারার। বোঝতে বাকি রইলো না প্রিয়তা লাইট অফ করে দিয়েছে। তড়িঘড়ি করে গিয়ে খাটে উঠে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে নেকা সুরে বলল
-“জান তুই এমনটা করতে পারলি? তুইতো জানিস আমার অন্ধকার ভয় করে।”
-“এই ছাড় ছাড়, তুই তোর রাহানকে গিয়ে জড়িয়ে ধর।আমাকে ধরবি না। যখন আমাকে একা একা ছাঁদে রেখে গড়ে এসে তোর রাহান এর সাথে কথা বলেছিস আমার কথা তখন মনে পড়েনি।”
বলতে বলতে উঠে বসে নিজেকে সারার বাহুডোর থেকে মুক্ত করে নিলো।সারাও ছেড়ে দিয়ে বেশ ভাব নিলো। যদিও তা অন্ধকারে প্রিয়তার চোখে ফুটলো না। তবে গলা বেশ গম্ভীর করে বলে উঠলো
-“একা নাকি কেউ ছিল? ”
প্রিয়তা চমকালো, হকচকিয়ে উঠলো। থমথমে গলা বলল
-“মানে?”
-“তুই জানিস না আমাদের বাড়িতে তো আবার ইয়া লম্বা হিরোর মতো একটা ভূত আছে। সেটার সাথে ছিলি আর কি।তবে কিছু করে না শুধু একটু আধটু ধমকায় এই যা। এর বেশি কিছু না।”
প্রিয়তা ভূতের কথা শুনে ভয় পেলোও। তবে পরে বোঝতে পেড়ে হু,হা করে হেসে দিল। সাথে সারাও।সারা মনে মনে ভাবছে যাকগে মনটাতো ভালো করতে পেড়েছে বোনের মতো বান্ধবির। এভাবে কথা বলতে বলতে এক পর্যায় দু’জনেই ঘুমের দেশ এ পাড়ি দিলো।কাল কি হবে জানতে পাড়লে হয়তো কেউ একজন না ঘুমিয়ে রাত পাড় করে দিতো।
—————-
-“আমার কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে। যদি তোর মামা এমপির ছেলের ব্যপারে কিছু জিজ্ঞেস করে। তা হলে তুই হে বলে দিবি। বুঝেছিস?”
মাইশা বেশ অবাক হলো তার মা এসব কি বলছে।কিছু না বোঝাতে মাইশা ফের তার মাকে প্রশ্ন করলো
-“কি বলছো মা আমি ঠিক বুঝিনি। ”
-“এতে না বোঝার কি আছে?তোর মামার সাথে কথা বল্লেই বোঝে যাবি। শুধু কিছু জিজ্ঞেস করলে হে বলে দিবি বাকিটা আমি সামলে নিবো। ”
কথাটা বলে সুফিয়া বেগম মাইশার গড়তেগ করলেন।আর মাইশা ভাবতে লাগলো তার মা কিসের কথা বলছে?কোনো ভাবে মামাকে সাদনান ভাইয়ের ব্যাপারে ভুল বোঝাতে চাইছে না তো? এমন হলে যে মামার সাথে এখনি আমার কথা বলতে হবে।
——————————–
-“মা ভাইয়া কোথায়?”
নাস্তার টেবিলে সাদনানকে দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলো সারা। সাদনানের মা মুখটা মলিন করে উওর করলো
-“সেই ভোরবেলায় ঢাকার উদ্দেশ্য বেড়িয়েছে। মিটিং আছে নাকি বলল। ”
প্রিয়তার মুখটা মলিন হয়ে এলো।
-“আচ্ছা তোরা খেয়ে নে ক্লাসের লেট হয়ে যাবে নয়তো।”
বলেই তিনি কিচেনে চলে গেলো। সারা আর প্রিয়তা অল্প খেয়ে। সালেহা বেগমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলেজের উদ্দেশে বেড়িয়ে পরলো।
———————–
-“কাল কি হয়েছিল ছাঁদে?”
হাঁটতে হাঁটতে আচমকাই প্রশ্ন করলো প্রিয়তা সারার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
-“তোর কি মনে হয় আমি তোর ভাইকে চলে যেতে বলেছি?
-“আমি এমনটা বলতে চাইনি। ভাইয়া তো এতো সকালে কোথাও যায় না। তাই ভাবছি তোর সাথে রাগ করে চলে যায়নি তো?”
প্রিয়তা বেশ চমকালো সত্যি এ তো সেতো এটা একবারও ভেবে দেখেনি।তবে কি কাল ওনাকে ধাক্কা দেওয়াতে ওনি আমার উপর রেগে আজ ভোরে ঢাকা চলে গিয়েছে? প্রিয়তা এসব ভাবনা বাদ দিয়ে সারাকে বলল
-“আমি কিছু বলেনি।আচ্ছা এসব বাদ দে এখন ক্লাস এ চল।
——————–
মাইশার আজ ক্লাস নেই তাই ভার্সিটিতে যায়নি।সোফায় বসে চিপস খেতে খেতে টিভি দেখছে তখনি বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। মাইশা ভাবছে তার মাতো ঘুমিয়ে আছে আর মামা আজ হোটেল যায়নি।আর প্রিয়তার তো এখন বাসায় ফিরার কথা না। তবে কে এলো এমন সময়? মাইশার ভাবনার মাঝেই মাইশার মা বেশ বিরক্ত নিয়ে রুম থেকে মাইশাকে ডেকে দেখতে বলল কে এসছে।
মাইশা সব ভাবনা বাদ দিয়ে দরজা টা খুলেই অবাক হলো সাথে খুশিও। তবে নিজেকে সামলে সামনের মানবীটাকে জড়িয়ে ধরে বলল
-“আপু তুমি? ”
———————
সাদনান মিটিং শেষ কুমিল্লা নিজ বাড়ি ফিরছে। সে ঢাকায় থাকলেও তার মনটা যে ছোট্ট প্রিয়তার কাছে রয়েছে। কাল একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে কি? হয়তো তাই। দিন দিন যেনো আরো দিশাহারা অবস্থা হয়ে যাচ্ছে কোনো কাজে মন বসে না। মেয়েটাকে শীগগির নিজের করে নিতে হবে।আর দূরে রাখা যাবে না। ফোনের রিংটোন এর শব্দে সাদনানের ভাবনাছেদ হলো। সাদনান ফোনটা পাশের সিট থেকে হাতে নিয়ে দেখলো রাহান কল দিয়েছে। সাদনান ভ্রুুজোড়া কুচকে নিলো। রাহান কেন কল দিয়েছে আবার কিছু হলো কি? ভাবতে ভাবতে কলটা রিসিভ করলো। কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ওপাশ থেকে কিছু শোনে চোয়াল শক্ত করে বলল
-“ঠিক আছে। ”
তার পর কলটা কেটে দাঁতে দাত পিষে বলে উঠলো
-“কেন বার বার আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করেন প্রিয়তা?
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]