হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি #পর্ব_৫ #জান্নাত_সুলতানা

0
183

#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৫
#জান্নাত_সুলতানা

-“উফ, আমার যে কি খুশি লাগছে মাইশাপু। তোমার বিয়ে ভাবতে আমার খুশি লাগছে। ”

মাইশাকে এক বাহু জড়িয়ে ধরে বলল প্রিয়তা। মাইশাও বোনের গালে হাত রেখে মুচকি হাসলো।হ্যা, সুফিয়া বেগম রাজি হয়েছে। কথায় আছে না? মানুষ পরিবর্তনশীল। সুফিয়া বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। তিনি নিজেও কিশোরী বয়সে কোনো এক সুদর্শন পুরুষের প্রেম এ পড়েছিল। আর সেই সুদর্শন পুরুষটি ছিলেন সাদনানের বাবা আজ্জম মির্জা। আর আজ্জম মির্জা ভালোবাসতো সালেহা বেগমকে। সুফিয়া বেগম নিজের অনুভূতির কথা তার ভাই শফিক সওদাগরকে বলেছিলেন। তিনি তখন বলেছিল কিশোরী বয়সের আবেগ কয়দিন পর ভুলে যাবে। আর তার বন্ধুর ভালোবাসা সে তার কাছ থেকে কেরে নিতে পারবে না। যদি আজ্জম সালেহাকে ভালো না বাসতো তবে না হয় তিনি কিছু করতে পারতো। যেখানে আজ্জম অন্য কাউকে ভালোবাসেন। সেখানে শফিক কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। এভাবেই দিন যেতে লাগলো। আজ্জম আর সুফিয়ার বিয়ে হলো। তার পর দেখতে দেখতে সুফিয়া বেগমেরও বিয়ে হলো। কিন্তু সুফিয়া বেগম নিজের প্রথম অনুভূতিকে ভুলতে পাড়লো না।আর সাদনান আার প্রিয়তাকে আলাদা করে তিনি আজ্জম আর শফিকে বুঝাতে চেয়েছিল ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে না পেলে কেমন লাগে। ছেলে মেয়ের কষ্টে নিশ্চয়ই তারা বুঝতো ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারোর পাশে দেখলে কতোটা কষ্ট হয়। তাই তিনি শফিকে মিথ্যা বলেছিল যে মাইশা সাদনানকে ভালোবাসে । আর প্রিয়তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে নিজের মেয়েকে সাদনানের সাথে বিয়ে দিতে চাইছিল। তবে সাদনানের জন্য আর পাড়লো কোথায় ।কিন্তু এখন যখন নিজের মেয়ের ভালোবাসার মানুষ আছে। তাহলে তিনি কেন তার নিজের মেয়ের ভালোবাসা তার কাছ থেকে কেড়ে নিবেন। তিনি নিজে যে কষ্ট টা পেয়েছে তা কখনো তিনি তার মেয়েকে পেতে দিবে না। যদিও মাইশার বাবা মফিজুল ইসলাম অনেক ভালো মানুষ। তবুও প্রথম ভালোবাসা আজ্জম সুফিয়া বেগমের। নিজের মেয়ের প্রথম ভালোবাসা কিছুতেই তিনি হারাতে দিতে চায় না। তাইতো তিনি বিনাবাক্য রাজি হয়ে গিয়েছে।

——————-
আজ সবাই প্রিয়তাদের বাসায় রয়েছে। কাল মাইশা আর আয়ানের এনগেজমেন্ট করে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরবে । সামনে মাসে বিয়ের ডেট করবে।
সবাই কাজে ব্যাস্ত। রাত বারোটার দিকে কাজ কিছু
এগিয়ে রেখে সবাই খাবার খেয়ে ঘুমতে চলে গলো। সাদনান আর আয়ান এক রুমে থাকবে। আয়ান রুমে এসেই বেলকনিতে চলো গেলো। আর সাদনান নিজের ফোনটা নিয়ে ছাঁদের দিকে হাঁটা ধরলো।
আয়ান মাইশাকে ফোন দিলো রিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলটা রিসিভ হলো। যেনো এটার অপেক্ষাই ছিল। ওই পাশের রমনীটা। আয়ান মুচকি হাসলো।মেয়েটা ওকে ওর নিজের চাইতো ওকে বেশি ভালোবাসে। আয়ানের ভাবনার মাঝেই মাইশা মিষ্টি কন্ঠে” হ্যালো “বলল

আয়ান মুখে হাসি থাকলেও কন্ঠটা বেশ গম্ভীর টেনে বলে উঠলো
-” এতো রাতে জেগে আছিস কেন?”

মাইশার বেশ অভিমান হলো সেতো এই লোকটার জন্যই এখনো ঘুমাইনি। আর ওনিই কেমন করে কথা বলছে। মাইশা বল
-“আচ্ছা ঘুমিয়ে যাচ্ছি।”

আয়ান চট করেই বল
-“এই না না জান। এমন করে না। আমি তো জাস্ট এমনি জিজ্ঞেস করেছি।”

মাইশা কোনো কথাই শুনলো না খট করে লাইনটা কেটে দিয়ে একটা বিজয় হাসি দিলে। মনে মনে বল ” সারা রাত জেগে থাকো মাই ডিয়ার হবু জামাই। আমার সাথে এভাবে কথা বলার শাস্তি এটা।”মনে মনে কথা গুলো বলেই মাইশা সারার পাশে শুয়ে পড়লো।

সারা রাহানের সঙ্গে মেসেজিং করছিল। মাইশাকে হাসতে দেখে ফোনটা পাশে রেখে মাইশাকে প্রশ্ন করলো
-“কি ব্যাপার আপু তুমি হাসছো কেন?”

মাইশা এবার বেশ জুড়ে হেসে দিল। তার পর আস্তে আস্তে সারাকে সব বলতেই সারও দমফাটা হাসিতে লুটিয়ে পড়লো। মাইশা হাসি থামিয়ে বলল
-“তোর সাথেরটা কোথায় আমরা এতো জুড়ে জুড়ে কথা বলছি ওর কোনো সাড়াশব্দ নেই কেন?”

মাইশা এতোখন ভেবেছে প্রিয়তা হয়তো ওয়াশরুমে। সারা চোখ দিয়ে কিছু বুঝালো। মাইশা হয়তো বুঝলো। তার পর মুচকি হেসে বল
-“শুয়ে পর। ”

সারাও কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে আলগোছে বড় বাতি অফ করে লাল বাতির আলোর একটা ছোট্ট লাইট অন করে মাইশার পাশে শুয়ে পড়লো।

————————

-“আপনি জানতেন আয়ান ভাইয়ারা আজ আসবে?”

সাদনান ছাঁদে দাঁড়িয়ে পকেটে বাম হাতটা রেখে ডান হাতে ফোনে টিপছিল।সাদনান চোখ ঘুরিয়ে প্রিয়তার দিকে চাইলো একবার তার পর আবার আগের মতো করে ফোন দিকে দৃষ্টি রেখেই ছোট্ট করে উওর দিলো
-“হুম। ”

-“বাবাতো আমায় ওই দিন বলেছিল মাইশা আপু আপনাকে পছন্দ করে তাহলে? ”
প্রিয়তা ফের প্রশ্ন করে।

সাদনান ফোনটা পকেটে রাখলো। চট করে প্রিয়তাকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে মেয়েটার কাঁধে থুতনি ঠেকালো। নিজের হাত ধারা প্রিয়তার হাত আবধ্য করে নিয়ে আলগোছে প্রিয়তার পেটের উপর জায়গা করে নিল।প্রিয়তার ছোট্ট দেহখানা নিজের বুকের মাঝে পুড়ে নিলো। মেয়েটার মনে যেনো উতালপাতাল ঝর বইতে লাগলো। সাদনানের এইভাবে হুটহাট আক্রমনে শরীর থেকে আত্মা যেনো বেরিয়ে আসতে চায়। ওনি কি সেটা জানে? আর বুকের বাম পাশের লাল বস্তুুটা যে এতো জুড়ে জুড়ে লাফায় ওনি কি সেটাও শোনতে পায়? প্রিয়তার ভাবনার মধ্যেই সাদনান বলে উঠলো
-“আপনার এই ছোট্ট মাথা এসব ঢুকবে না। আপনাকে এতো সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আরো বড় হতে হবে। ”
প্রিয়তা চমকালো সাদনান ভাই কিসের উত্তরের কথা বল? আমার মনের প্রশ্নর উত্তর নাকি মুখে বলা প্রশ্ন?
প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান বেশ শান্ত কন্ঠে বল
-“দুটোই। ”

প্রিয়তা অবাক হলো। সাদনান ভাই কি তবে তার মনের কথা শুনতে পায়?

সাদনান নির্লিপ্ত ভাবে পিছন হতে উত্তর করলো
-“শুনতে না পাওয়ার কি আছি? আপনি তো বেশ জোড়েই বলেছেন।”

প্রিয়তা এবার অবাকের শেষ সীমান্ত অতিক্রম করলো কি বলে সাদনান ভাই? সে কখন জোড়ে কথা বলেছে আর এটাই বা শুনলো কি করে? প্রিয়তা আরো একটা জিনিস খেয়াল করলো সে কত সহজেই সাদনানের বুকের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। আগে তো এই মানবটাকে দেখলেই ভয় পেতো। আর এখন এই যে ও রাতে ছাঁদে আসে না। ভয় করে তাই। আসলেও লাইট নিয়ে আসে। কিন্তু এখন একদম ঘুটঘুটে আঁধারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।
আর এখন এই মানবটার সঙ্গে যেখানে ওর ভয়ে হুস হারানোর কথা সেখানে কি সুন্দর নির্লিপ্ত ভাবে প্রশ্ন করে যাচ্ছে। প্রিয়তা খেয়াল করে দেখেছে ইদানীং সাদনানের সন্নিকটে আসতে ভালো লাগে। সাদনান ভাই আসে পাসে থাকলে ভয়ও করে না। তবে কি ওনার প্রতি আমার ভয় আর ভালোলাগার অনুভূতি গুলো ভালোবাসায় রুপ নিল?
প্রিয়তা সাদনানের কাছ থেকে ছুটতে চাইলো তবে সাদনানের শক্ত হাতের অবস্থান নড়াতে পাড়লো না।

প্রিয়তা ছুটতে না পেরে আলগোছে প্রশ্ন করলো
-” আর কতো বড় হতে হবে আমার এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেতে হলে সাদনান ভাই? ”

হঠাৎ এ সাদনান প্রিয়তাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে বল
-“সব প্রশ্নের উত্তর দিবো। আপনি আগে বলুন কেন ওই ছেলেটার সাথে কথা বলছেন আপনি? কেন আমার কাছে বা আপনার বাবার কাছে জানাননি? ”
প্রিয়তা মাথা নত করে নিল।কি বলতো ও ছেলেটা তো এমনি জাস্ট কথা বলতে চাইতো। কিন্তু আজকের মতো এমন জগন্য কিছু হবে জানলে ও সবার আগে ওর নিজের বাবাকে জানাতো। প্রিয়তা কখনো বুঝতে পারেনি ছেলেটা এমন কিছু করবে।
-” বিশ্বাস করুন আমি কথা বলতে চাইনি ও সব সময় নিজ থেকে এসছে।”
প্রিয়তা কি নিজের হয়ে ছাফায় গাইলো? নাকি সামনের পুরুষটিকে নিজের প্রতি বিশ্বাস করাতে?
তবে সাদনান কোনো কিছু তোয়াক্কা করলো বলে মনে হলো কি? না সেতো ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
হঠাৎ সাদনান বলে উঠলো
-“আমি কি আপনাকে আমার কাছে বিশ্বাস অর্জন বা নিজের হয়ে ছাফায় করতে এসব বলেছি? আমি তো আপনাকে এটা বুঝতে চেয়েছি বাই এনি চান্স ও আপনার কোনো ক্ষতি করে দিতো? সেই জন্য আগে থেকে সতর্ক হওয়ার কথা বলেছি।”
প্রিয়তা বেশ অপমা বোধ করলো। ওনি কি বলতে চাইছেন?যে ওনি বিশ্বাস না করলে আমি মরে যাবো? মোটেও ওইরকম কিছু নয়। হুু, মনে মনে কথা গুলো বলে মুখ ভেংচি কাটলো।
যেটা দেখে সাদনান দুষ্ট হেসে বলল
-“কি যেনো বলছিলেন একটু আগে?হ্যা, মনে পরেছে। আপনাকে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আর কতো বড় হতে হবে? তাই তো?”
বলেই প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকালো।
প্রিয়তা আলগোছে বল
-“আমার তো আর কদিন পর আঠারো বছর হবে। আর কতো বড় হবো আমি?”
সাদনান ওর ফোনটা প্রিয়তার সামনে ধরলো যেখানো এমন কিছু ছিলো যেটা দেখে প্রিয়তার চোখ বড় বড় করে তাকায় সাদনানের দিকে ফের মেয়েটা মাথা নুয়াই লজ্জা। ছি: লোকটা কতোটা অসভ্য।কিসব দেখালো ওকে।আল্লাহ লোকটার কি লজ্জা নেই?এর পর থেকে কি করে ওনার সামনে দাঁড়াবে? প্রিয়তার এতো এতো ভাবনার মাঝে সাদনান বল

-” যখন আমাকে এবং আমার ভালোবাসাকে সালানোর মতো বড় হবেন। তখন নিজেই উত্তর গুলো পেয়ে যাবেন।”

#চলবে………

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here