#হৃদয়_জুড়ে_শুধু_আপনি
#পর্ব_৯
#জান্নাত_সুলতানা
“আমি ঢাকা যাচ্ছি কবে ফিরবো জানিনা”
ব্যাস ছোট্ট একটা বার্তা। লেখাটা পড়েই চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো মেয়েটার।
লোকটা এতোটা পাষাণ ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এভাবে চলে গেলো।
———————————–
প্রিয়তার ছোট্ট মোটো ফোনটা বাজচ্ছে। সকালের নাস্তা খেয়ে কলেজে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে তখনি ফোনটা বেজে উঠলো প্রিয়তা বেশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা তুলে কলটা সারা করেছে।
-“হ্যা। আমি রেডি। হুম। তুই বেড় হয়ে দাঁড়া। ”
বলেই কলটা কাটলো।
-“তোর হলো প্রিয়তা?”
রুমে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস করলো মাইশা।
-“হ্যা, আপু চলো।”
বলেই ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে দুজন সুফিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো। মাইশার ভার্সিটি আর প্রিয়তাদের কলেজ একসঙ্গে। সারাদের বাড়ি আগে তার পর প্রিয়তাদের বাড়ি।কলেজও বেশি দূরে নয়। হেঁটে যেতে পনেরো-ষোলো মিনিট এর মতো লাগে। প্রিয়তা মাইশা এসে সারাকে নিয়ে তিনজনে মিলে হাঁটতে হাঁটতে কলেজে পৌঁছে গেলো।
————————-
-“ভাই ভাবি কলেজ ভেতর ঢুকে গেছে।”
রাহান কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলছে। ওপাশের ব্যাক্তিটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
-“ঠিক আছে। এখন তুই তোর বাবার কাছে যা। আর শোন আমার বোনকে ভালোবাসলেই হবে না। ভরনপোষণ, সুখে রাখার মতো সামর্থ্যও থাকা লাগবে।”
রাহান অবাকের চরম পর্যায় । মুখ হা হয়ে গেলো।
তবে আমতা আমতা করে বলল
-“ভাই আপ,,,
রাহানের কথা
সাদনান সম্পূর্ণ করতে দিলো না। তার আগে নিজেই বলে উঠলো
-“আমি সব জানি। কি ভেবেছিস আমার বোনের সঙ্গে প্রেম করবি আর আমি কিছু জানবো না?তাহলে ভুল ভেবেছিস। তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি মির্জা সাদনান শাহরিয়ার ।”
কথা সমাপ্ত করে খট করে লাইনটা কেটে দিলো। এতোখন গম্ভীর হয়ে কথা বললেও লাইনাটা কেটেই সাদনান হো হা করে হেসে দিলো।
আর ভাবে যদি রাহানের মুখটা এখন সরাসরি দেখতে পাওয়া যেতো। বেচারা না জানি এখন কি অবস্থা হয়েছে।
আর এদিকে রাহান মুখ এখনো হা হয়ে আছে। ভাবছে ভাই আবার আমায় ভুল বুঝলো না তো?
আচ্ছা সে সব পরে দেখা যাবে ভাই ফিরে আসলে। এখন বাবার সাথে অফিস জয়েন করা যাক।
ভাবতে ভাবতে বাসা দিকে হাঁটা ধরলো।
রাহানের সারাকে ভালো লাগলেও তা কখনো প্রকাশ করেনি। সব সময় মেয়েটার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে চাইত।কারন একটাই সাদনান যদি কখনো জানতে পারে তবে হয়তো রাহানকে ভুল বুঝবে। সে জন্য রাহান কখনো সারার সামনে যেতো না। আড়ালে থেকে দেখতো। তবে সারা এসব কিছু জানতো না। কিন্তু হুট করে একদিন সারা রাহানকে অবাক করে দিয়ে প্রস্তাব দেয়। রাহান সে দিন অনেক খুশি হয়েছিল। হবে নায়ে বা ক্যান নিজের ভালোবাসার মানুষটা যদি বলে সেও তাকে ভালোবাসে তো এর চায় খুশি আর কি হতে পাড়ে। কিন্তু সাদনানের কথা মাথা আসতেই সেই খুশি দীর্ঘ হলো না। না চাইতেও মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। সে বার সাদনান অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পড়তো আর সারা সবে মাধ্যমিক দিয়েছিল। তার পর দেখতে দেখতে সারার রেজাল্ট দিলো। রাহানের ভার্সিটিতে ভর্তি হলো সারা। এর পর থেকে মেয়েটা ওকে রোজ জ্বালাতন করতো। এর মধ্যে রাহান ফাইনাল ইয়ার শেষ করে। কিন্তু মেয়েটার পাগলামি দিন কি দিন বাড়ছিলবই কমছিল না।একটা সময় রাহান মন আর বিবেকের সাথে যোদ্ধ করে সারাকে আর ফিরিয়ে দিতে পারে নি। ভালোবাসার মানুষটা যদি সারাখন বলে ভালোবাসি ভালোবাসি কার মন চাইবে না একটু ভালোবাসতে।রাহান ও পাড়েনি ভালো না বেসে থাকতে। সারাকে পড়ে রাহান বলেছিল সারার আগে থেকে রাহান তাকে ভালোবাসতো। এই কথা শুনার পর সারা এক সাপ্তাহ রাহানের সাথে কথা বলেনি।ক্যান বলবে? ভালোবাসার পরেও তাকে বার বার ফিরিয়ে দিতো এই সিনিয়র ভাই বেশ অভিমান হয়েছিলো ছোট মেয়েটার মনে। কিন্তু রাহান ঠিক তার প্রিয়তমার অভিমান ভাঙ্গিয়ে নিয়েছিলো। তবে মনে একটা ভয় সব সময় থাকতো সাদনান ভাই মেনে নিবে তো?রাহানরা যে গরিব বা মাধ্যবিত তেমনও নয়। বেশ বড় লোক বাবার নিজস্ব ব্যবসা আছে। তবে সাদনানদের তুলনায় খুবই সামান্য। সামান্য তো হবে কোথায় এমপি আর কোথায় একজন ব্যবসায়ি। সাদনানের সঙ্গে সেই ছোট্ট বেলা থেকে থাকে রাহান। তবুও মনে একটা সংশয় থাকতো। তবে সারা সব সময় রাহানকে অভয় দিতো যে তার ভাই ঠিক মেনে নিবে। কারণ সাদনান তার বোনকে অনেক ভালোবাসে।
রাহান আজ অনেক খুশি। সাদনান ভাই যেহেতু জানে খুব শীগগির বাবা মাকে নিয়ে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে বউ করে নিয়ে আসবে।রাহানের বিশ্বাস ওর বাবা মা কখনো ছেলের পছন্দ দ্বিমত করবে না। বরং আরো খুশি হবে।রাহানের এক বোন বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামীর সঙ্গে লন্ডন থাকে।
—————————
-“ওনি আমাকে কিছু না বলে কি করে চলে যেতে পাড়লো আপু?”
বিকেলে মাইশা আর প্রিয়তা ছাঁদে বসে গল্প করছিল তখন হটাৎ প্রিয়তা কথা টা বলে।
মাইশা বেশ অবাক হলো। চাইলো প্রিয়তার পানে। ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না তার ছোট্ট বোনটা কি বলল।হাত রাখলো প্রিয়তার কাঁধে আলতো করে চোখের পানি মুছে দেয়
-“কি হয়েছে বল আপুকে।”
বোনের আশকারা পেয়ে যেনো আরো আহ্লাদি হলো মেয়েটা। জড়িয়ে ধরলো মাইশাকে কাঁদল মন মতো। মাইশাও বাঁধা দিলো না কাঁদুক তার বোনটা। কাঁদলে মানুষের মন দুঃখ হালকা হয়।তাই বাঁধা দিল না। বেশ অনেক টা সময় নিয়ে শান্ত হলো প্রিয়তা। তার পর আলগোছে বোনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আস্তে আস্তে ওই দিন রাতের পর থেকে কাল রাতের কথাও সব খুলে বলে। কথা গুলো বলতে বলতে আবারও কেঁদে উঠলো প্রিয়তা। মাইশা বোনকে তুলে দোলনা হতে কোল থেকে। আবারও আলতো হাতে চোখের জল মুছে দেয়। বেশ শান্ত কন্ঠে বুঝায়
-“দেখ তুই যেমন অনাকাঙ্খিত র্স্পশে মেনে নিতে পারিসনি। তেমন সাদনান ভাইও ইচ্ছে করে করেনি এমনটা। তোর যেমন ভয় হ’য়ে ছিল। ওনি ঠিক অনুতপ্ত হয়েছে।ওনাকে তুই বাজে কথা না বললেও পারতি।আর ওনি তো তোকে ভালোবাসে। বিয়ে তো করতোই।
আর বিয়ে যখন হয়ে গেছে ওনি বেশি দিন তোর থেকে দূরে থাকবে না।”
প্রিয়তা শুনলো বোনের কথা তবে কিছু বলল না। এর মধ্যে মাইশার ফোনটা বাজলো স্কিন এ জলজল করছে “আয়ান ভাই” মাইশার ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলে।
প্রিয়তা চাইলো বোনের পানে। তার পর ইশারায় ফোন রিসিভ করতে বলে। নিজেও আলগোছে ছাঁদ হতে নামে।
মাইশা ফোন রিসিভ করে কথা বলে নিজের ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে। মাইশা প্রিয়তার ব্যপারে সব বলেছে আয়ানকে। আয়ান মাইশাকে জানায়
-“ওকে নিয়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে এসো মনটা ভালো হয়ে যাবে।”
বাধ্য মেয়ের মতো শুনলো
-“মনজুর জাঁহাপনা। ”
আয়ান মুচকি হাসলো
-“জী বেগম, এখন যান। আর হ্যা বেশি দেড়ি করবে না। একদম ছেলেদের সাথে কথা বলবা না। সাথে রাহানকে নিয়ে যাবা। আমি কল করে বলে দেবো ও এসে নিয়ে যাবে তোমাদের। ”
মাইশাও হাসলো শব্দহীন।
-“আচ্ছা। ”
-“ভালোবাসি। ”
মাইশা আবারও বলল
-“আচ্ছা। ‘
আয়ান এবার রেগে গেলো
-“কি কখন থেকে আচ্ছা আচ্ছা করছিস। যা বলেছি তার উত্তর দে।”
-“ভালোবাসি।”
বলে কল কাটলো মাইশা। আয়ান এমনি কখনো আপনি কখনো তুই কখনো তুমি। বেশ লাগে মাইশার আয়ানের এই ছোট ছোট ভালোবাসা গুলো। এসব ভাবতে ভাবতে মাইশা পা টিপে টিপে নিচে গিয়ে প্রিয়তাকে বলল
-“রেডি হয়ে নে। আমরা এখন বের হবো। ”
প্রিয়তা যেতে চায়নি তবে রাহান সারাও এসে গেছে তাই আর না করেনি রেডি হয়ে চারজন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো।
—————————-
-“ভাই আপনি নিজেই মাইশাকে বলতে পারতেন।”
আয়ান ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। ওপাশের ব্যাক্তিটা হাসলো। তবে হাসিটাতে যেনো উজ্জ্বলতা নেই কেমন মরা মরা।
-“হুম পারতাম।তবে তোমার বউ আমার বউকে ফুরত করে সব বলে দিতো। যে আমি বলেছি ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি তোমার বউকে ভালো করে চিনি।আচ্ছা ধন্যবাদ উপকার করার জন্য। ”
সাদনানের কথার আয়ান বল
-“কি বলছেন ভাই এতোটুকু তো করতেই পারি। আপনি তো তার চেয়ে বড় উপকার আমার করেছেন।”
#চলবে…..
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ]